নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

মঞ্জুর চৌধুরী

আমি ঝন্ঝা, আমি ঘূর্ণি, আমি পথ-সমূখে যাহা পাই যাই চূর্ণি’। আমি নৃত্য-পাগল ছন্দ, আমি আপনার তালে নেচে যাই, আমি মুক্ত জীবনানন্দ। আমি হাম্বার, আমি ছায়ানট, আমি হিন্দোল, আমি চল-চঞ্চল, ঠমকি’ ছমকি’ পথে যেতে যেতে চকিতে চমকি’ ফিং দিয়া দিই তিন দোল; আমি চপলা-চপল হিন্দোল। আমি তাই করি ভাই যখন চাহে এ মন যা, করি শত্রুর সাথে গলাগলি, ধরি মৃত্যুর সাথে পান্জা, আমি উন্মাদ, আমি ঝন্ঝা! আমি মহামারী আমি ভীতি এ ধরিত্রীর; আমি শাসন-ত্রাসন, সংহার আমি উষ্ন চির-অধীর! বল বীর - আমি চির উন্নত শির!

মঞ্জুর চৌধুরী › বিস্তারিত পোস্টঃ

মুক্তিযুদ্ধের উপন্যাস - এক নয় সাত এক

২৫ শে মার্চ, ২০১৪ রাত ৩:৫১

এক...

নয়...

সাত...

এক!

- মঞ্জুর চৌধুরী



ভূমিকা:

বোকারা সাহসী হয়ে থাকে। পৃথিবীর ইতিহাসে যাবতীয় সাহসী সিদ্ধান্তগুলো বোকাশ্রেণীর মানুষেরাই নিয়েছেন। আমাদের মুক্তিযুদ্ধের কথাই ধরা যাক। আজকে আমরা স্বাধীন হয়েছি, কিছু বোকা মুক্তিযোদ্ধা যুদ্ধ করেছিলেন বলেই। বুদ্ধিমানেরা সেদিন বিভিন্ন যুক্তি দিয়ে প্রমাণ করার চেষ্টা করেছিলেন যে শক্তিশালী পাক বাহিনীর বিরুদ্ধে মাথায় গামছা বেঁধে খালি হাতে লড়াই করা সম্ভব নয়। ইন্ডিয়া অস্ত্র দিবে? ট্রেনিংও দিবে? তাতে কি? সেসব মান্ধাতা আমলের অস্ত্র নিয়ে দুই এক সপ্তাহ 'লেফট রাইট লেফট' পিটি করে একটি সুসজ্জিত সেনাবাহিনীকে হারানো সম্ভব? নারে বাপু, ছেড়া কাঁথায় শুয়ে আমি লাখ টাকার স্বপ্ন দেখতে রাজি নই।

কথায় আছে বিশ্বাসে মেলায় বস্তু, তর্কে বহুদূর। যুক্তি দিয়ে সবকিছু ব্যখ্যা করা যায় না। মাঝে মাঝে আবেগকেও প্রশ্রয় দিতে হয়। সমাজে বুদ্ধিমানদের পাশাপাশি কিছু বোকারও প্রয়োজন আছে।

আমার ধারনা ছিল আমি যুক্তিবাদী ছেলে। পরে বুঝতে পারলাম ধারনা ভুল। নাহলে কোন সাহসে আমি মুক্তিযুদ্ধের উপর একটা গল্প লেখায় হাত দিলাম? মুক্তিযুদ্ধ কি ছেলেখেলা নাকি? যা খুশি বানিয়ে লিখে ফেললেইতো আর হলো না। আমাদের জাতীয় জীবনের সবচেয়ে গৌরবময় অধ্যায় একাত্তুরের সেই নয়টি মাস। রাজনীতিবিদদের মতন তাঁকে ইচ্ছেমত বিকৃত করলে চলবে?

লেখা শুরুর আগেই জানতাম প্রতিটা লাইনের জন্য আমার গবেষণার প্রয়োজন আছে। কিন্তু ডালাসে বসে আমি মুক্তিযুদ্ধের উপর গবেষণা কি করে করবো?

আমার সাহায্যে এগিয়ে এলেন আমার ইংল্যান্ড প্রবাসী ফুপাতো ভাই গালিব ভাইয়া। যখন যে তথ্যের জন্য আমি সাহায্য চেয়েছি, সে আমাকে তা দিয়ে সাহায্য করেছে। অশেষ কৃতজ্ঞতা তাঁর প্রতি।

আমার দুর্ভাগ্য, মুক্তিযুদ্ধের সবচেয়ে বড় গবেষক, যিনি নিজেই একজন চলমান মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘর, জনাব এমএমআর জালাল (আমাদের জালাল ফুপা, আমার ভাই তারেকের ফুপা শ্বশুর) আমার বাসা থেকে চল্লিশ পঞ্চাশ মিনিট দূরত্বে থাকা স্বত্বেও আমি স্কেডিউল জটিলতার কারনে তাঁর কাছে যেতে পারিনি। তাঁর সাহায্য পেলে এ উপন্যাস আরও সমৃদ্ধতর হবে সন্দেহ নেই।

বই, ব্লগ, ইন্টারনেট পেজ ইত্যাদি পড়তে পড়তে একটা ব্যপার খেয়াল করলাম, তখনকার দিনের প্রতিটা দিনের ঘটনাকে কেন্দ্র করে একেকটা আলাদা উপন্যাস লেখা সম্ভব। কিন্তু এত সময় কোথায়? সামর্থ্যও কি আছে?

গবেষণা এখনও চলছে, ইনশা আল্লাহ গবেষণা আরও চলবে। আমার ইচ্ছে আছে একাত্তুরের মার্চ থেকে ষোলই ডিসেম্বর পর্যন্ত সময়কালকে উপন্যাসের মধ্যে তুলে ধরা। আমি চেষ্টা করবো তিন কিস্তিতে উপন্যাস শেষ করতে। "অরুণাস্ত," যখন সূর্য ডোবে, যুদ্ধের প্রারম্ভ; "অমানিশা," যখন চারদিক ঘোর অন্ধকারে ঢাকা, যুদ্ধের মাঝামাঝি সময়, যখন পাক বাহিনীর অত্যাচার সর্বোচ্চ সীমায় পৌছেছে; এবং "অরুণোদয়" - সূর্যোদয়, যখন আমরা বিজয় লাভ করি। তিনটি আলাদা আলাদা উপন্যাস, আবার সবাই মিলে এক মহাকাব্য, এক নয় সাত এক - উনিশশো একাত্তর। আমি কেবল প্রথম কিস্তি লেখায় হাত দিলাম। শুধুমাত্র মার্চ মাসের বর্ণনা দেয়ার চেষ্টা করবো এই পর্বে। বিস্তারিত তথ্য মোটামুটি সংগ্রহ করেছি। গল্পটা ঠিকঠাক মত গুছিয়ে লিখতে পারলেই হয়।

আমাদের দেশে মুক্তিযুদ্ধের উপরে লেখা বইয়ের অভাব নেই। তবে সবচেয়ে বিরক্তিকর যা লাগে তা হচ্ছে, অধিকাংশ লেখকই গল্প বলতে গিয়ে এমনসব মশলাপাতি ব্যবহার করেছেন, যাতে বদহজম হয়ে যায়।

উদাহরণ দেয়া যাক।

এক বিখ্যাত লেখক তাঁর বইয়ে (বইটির ইতিমধ্যে পঞ্চাশটিরও বেশি সংস্করণ বেরিয়ে গেছে, নানান পুরষ্কারও পেয়েছে) পাকবাহিনীর অত্যাচারের বর্ণনা দিতে গিয়ে বলেছেন, পাক বাহিনী বাংলার যুবতী মেয়েদের ধরে ধরে নিয়ে ক্যাম্পে ছাদের সাথে উল্টো করে ঝুলিয়ে রেখেছিল।

পাকিস্তান মিলিটারী তখন একদল উন্মাদ ছাড়া আর কিছুই নয়। তারা এই কাজটি করতেই পারে। কিন্তু লেখক এর পরেই লিখেছেন, মেয়েদের সাথে থাকা বই খাতা পেন্সিল দেখলেই বুঝা যায় তারা স্কুল কলেজের মেয়ে। শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে যাবার সময়ে তাঁদের ধরে আনা হয়েছে।

লেখক পাঠকের আবেগ ছুঁতে একদম কোমর বেঁধে নেমেছিলেন। সাধারণ পাঠক হয়তো এই বর্ণনা পড়ে চোখের পানিও ফেলেছে। কিন্তু আমার আবেগ নষ্ট করে দিয়েছে এই বাড়তি মশলা যোগ।

একাত্তুর সালের এপ্রিল, মে মাসে আমাদের দেশে যা ঘটেছিল, তাকে এককথায় প্রকাশ করলে বলা যায় 'কেয়ামত।' কেয়ামতের দিনে কোন বঙ্গ ললনা বই খাতা পেনসিল হাতে পাঠশালায় যাবে, এতটা পাঠপ্রিয় জাতি আমরা নই।

হুমায়ূন আহমেদ তাঁর জোছনা ও জননীর গল্প উপন্যাসেও এই খটকার কথা উল্লেখ করে লিখেছিলেন, "জাতি হিসেবে আমরা অতিকথন পছন্দ করি।"

একজন মহিলা তাঁর শহীদ বাবার মৃত্যুর বর্ণনা দিয়েছেন এভাবে,

"আমার বাবাকে ওরা যখন বাড়ি থেকে ধরে নিয়ে যায়, আমি তখনও মায়ের পেটে। জানোয়ারেরা বাবাকে নদীর পাড়ে দাঁড় করিয়ে দিল। তাঁর চোখ বাঁধা, হাত পিছ মোড়া। ওরা বাবার পিঠে গুলি করতে চেয়েছিল, বাবা তখন বললেন, 'কাপুরুষের মত পিঠে গুলি করবি কেন? সাহস থাকে তোরা বুকে গুলি মার!'

তিনি ঘুরে দাঁড়ালেন, পাক মিলিটারির বুলেট বুক পেতে নিলেন।"

"আপনার বাবা সহ আর কয়জনকে ওরা ধরে নিয়ে গিয়েছিল?"

"গ্রামের আরও চারজন যুবককে। বাকিরা পালিয়েছিল।"

"তাঁদের কেউ বেঁচে ফিরেছিলেন?"

"না, কেউ না।"

"গুলি করার সময়ে মিলিটারিদের সাথে কোন গ্রামবাসী ছিল? রাজাকার বা এমনিই সাধারণ জনতা?"

"না, কোন রাজাকার তখনও ছিল না। আর গ্রামবাসী থাকবে কোন দুঃখে? পাগল হয়েছেন? সবাই তখন বাড়ি ছেড়ে বনে আশ্রয় নিয়েছে। আমার নিজের মাই আমার বড় বোনকে নিয়ে জঙ্গলে আশ্রয় নিয়েছিল। আমি তখনও মায়ের পেটে।"

"আপনার মা কি আপনার বাবার হত্যাদৃশ্য দেখেছিলেন? বা এমন কেউ যে দেখেছিল?"

"ওদের সামনে কে সাহস করে দাঁড়িয়ে থাকবে বলুন?"

"না, মানে, আপনার বাবার এই যে 'সাহস থাকলে বুকে গুলি কর' তথ্যটা আপনি কোত্থেকে জানলেন সেটা জানতে ইচ্ছে করছে।"

মহিলা থতমত খেয়ে গেলেন। সাথে সাথেই রেগে গেলেন।

"আপনি কি বলতে চাচ্ছেন আমি মিথ্যা বলছি?"

একজন মধ্যবয়ষ্ক পুরুষ, যিনি এক কন্যা সন্তানের জনক, যাঁর স্ত্রী গর্ভবতী, যিনি পরিবারের কথা ভেবেই কখনও যুদ্ধে যাননি, তিনি যদি মৃত্যুর সময়ে ভীত হয়েও থাকেন, তাতে লজ্জিত হবার কিছু নেই। মৃত্যু কোন আনন্দময় ঘটনা নয়। মানুষ নিজের মৃত্যুর সময়ে নিজের আপনজনদের দুরবস্থার কথা চিন্তা করে আরও বেশি ভয় পায়। কেয়ামত দেখে একজন সাধারণ গৃহস্থ যদি ঘাবড়ে গিয়ে থাকেন, তাহলে অবশ্যই তাঁকে কাপুরুষ বলা যাবে না। বরং কাপুরুষ তারাই যারা সাধারণ নিরীহ জনগনকে বাড়ি থেকে তুলে নিয়ে গুলি করে হত্যা করেছে। নিরস্ত্র অবস্থায় মৃত্যুতে অগৌরবের কিছু নেই। শুধু শুধু মসলাপাতি লাগিয়ে একে রংচঙ্গা না বানালেও হত। মশলা লাগানোর দায়িত্ব কেবল লেখকের উপরই ছেড়ে দেয়া উচিৎ, সত্য ঘটনা এমনিতেই আকর্ষনীয়। এতে বাড়তি রংয়ের প্রয়োজন নেই।

একাত্তুরের ঘটনা নিয়ে ডায়রি ধরনের যেসব বই বেরিয়েছে, আমার ধারণা তার বেশিরভাগই সেই দিনে লেখা হয়নি। স্বাধীনতার পরে, নানান ঘটনা স্মরণ করে দিন মিলিয়ে তা লেখা হয়েছে। কারন ডায়রিতে যেসব ঘটনার নিখুত বর্ণনা লেখক দিয়েছেন, সেই পরিস্থিতিতে একজন মানুষের পক্ষে অত্যন্ত ঠান্ডা মাথায় ডায়রি লেখা সম্ভব নয়। তথ্য সংগ্রহে সেইসব ডায়েরি অনেক বড় ভূমিকা রেখেছে। লেখক/লেখিকাদের প্রতি কৃতজ্ঞতা।

খুব ইচ্ছে ছিল রবীন্দ্রনাথ ত্রিবেদীর একাত্তুরের দশমাস বইটি সংগ্রহ করে পড়ার। ডালাসে বসে সেটা সম্ভব হয়নি। ইন্টারনেটে এর পিডিএফ কপি আমি খুঁজে পাইনি। কেউ যদি আমাকে পিডিএফ কপিটা দিতেন, অশেষ উপকার হতো।

অনেকের ধারণা আসতে পারে, হুজুগের বসেই উপন্যাসটি লিখতে বসা নয়তো? তাহলে আরেকটা ঘটনা বর্ণনা করা যাক।

একদিন এক স্বাস্থ্যবতী নেতৃ টেলিভিশন টকশোতে রেফারেন্স দিয়ে দিয়ে প্রমাণ করার চেষ্টা করেছিলেন, "জাহানারা ইমাম একাত্তুর সালে পাকিস্তান রেডিওতে কাজ করেছেন। নিয়মিত সরকারের বেতন নিয়েছেন। তিনি মানুষকে রাজাকার বলেন কোন অধিকারে?"

আমি ভিডিও দেখে হতভম্ব হয়ে গেলাম। বলেন কি এই মহিলা! যে মহিলা মৃত্যু নিশ্চিত জেনেও নিজের ছেলেকে একটি সুশিক্ষিত সেনাবাহিনীর বিরুদ্ধে যুদ্ধে যাবার অনুমতি দিতে পারেন, যাঁর বাড়ি থেকে তাঁর ছেলেকে মিলিটারী ধরে নিয়ে গুম করে ফেলে, যাঁর লাশ পর্যন্ত তাঁর দেখা হয়নি, কবর কোথায়, আদৌ কবর আছে কিনা যে মা জানেন না, তাঁর কোন অধিকার নেই রাজাকারদের বিচার চাওয়ার?

এই ব্যপারেই আমি একটা আর্টিকেল লিখলাম। "আমার ব্লগ ডট কমে" প্রকাশিত আর্টিকেলের নাম ছিল "রাজাকার ও কিছু প্রলাপ।"

সেখানে টাইগার নামের একজন ব্লগার মন্তব্য করেছেন, "আসলে একটা প্রলাপ। যে যার মতো করে যুক্তি দেয়। কিন্তু যুক্তির পিছনেও যুক্তি থাকে। এ দেশের যারা যুদ্ধে গিয়েছে তাদের মধ্যে কেউ সরাসরি যুদ্ধে শহিদ হয়েছে নতুবা জয়লাভ করে বাড়ী ফিরে এসেছে। যুদ্ধে যাওয়া কোন মুক্তি যোদ্ধাকে পাক বাহিনী ধরে নিয়ে গিয়ে হত্যা করেছে এমনটা ভাবা একটা প্রলাপ ছাড়া কিছু নয়। যদি সে যুদ্ধের মাঠে থাকে তাকে ঘরে পেল কি ভাবে? আর সে ঘরে থাকলে যুদ্ধে গেছে এ কথা মিথ্যা।।

টাইগার"

মন্তব্য পড়েও আমি হতভম্ব হয়ে গেলাম! জনাব টাইগার দেখি মুক্তিযুদ্ধ বলতে টিপু সুলতানের লড়াই মনে করেছেন। যেখানে একটা ময়দানে ইংরেজদের বিরুদ্ধে দেশী সিপাহীরা তলোয়ার হাতে লড়াই করতেন। গেরিলা যুদ্ধ সম্পর্কে তাঁর কোন ধারনাই নেই। "ব্লগার" হয়ে বিজ্ঞ মন্তব্য প্রদান করে চলেছেন!

উপন্যাসটিতে আমি সব ঘটনার বেশি বিস্তারিত বর্ণনায় যাবনা। শুধু ছুঁয়ে ছুঁয়ে যাবার চেষ্টা করব। বেশি বিস্তারিত লিখতে গেলে সেটি আর সুপাঠ্য উপন্যাস থাকবে না, ডকুমেন্টারি ধরণের আর্টিক্যাল হবে।

গল্পের প্রয়োজনে কিছু যোজন বিয়োজন হবে, পাঠক আশা করি সেসবকে উপেক্ষা করবেন। "জেনারেল টিক্কা খানের সেই সময়ে অরেঞ্জ জ্যুস খাবার ইচ্ছে হয়েছিল, এই তথ্য আপনি কোথায় পেয়েছেন? রেফারেন্স দেন!" জাতীয় কথা বাদ দিয়ে মূল ঘটনায় ফোকাস করার চেষ্টা করুন। মূল ঘটনা হচ্ছে, টিক্কা খান সেদিন পূর্ব পাকিস্তানে এসেছিলেন।

গল্প বর্ণনায় আমি চেষ্টা করবো চরিত্রকে দিয়ে কথা বলাতে। কিছু চরিত্র মুক্তিযুদ্ধের বিপক্ষে কথা বলবে, শেখ মুজিবের বিপক্ষে কথা বলবে, আবার কিছু চরিত্র শেখ মুজিবকে পূজা করবে। এখানে আমার কোন পক্ষপাতিত্ব থাকবে না। আমি শুধু গল্প বলার চেষ্টা করবো মাত্র। যাবতীয় দোষ উপন্যাসের চরিত্রের!

গল্পের সব চরিত্রই কাল্পনিক, আবার পুরোপুরি কাল্পনিকও হবে না। সব ঘটনাই সত্য ঘটনা থেকে অনুপ্রাণিত, লেখার সময়ে একটু এদিক সেদিক হতে পারে। চেষ্টা করবো মূল ঘটনাকে ঠিক রেখে যত কম সম্ভব মশলা মাখাতে। দিনের শেষে এটা কোন ইতিহাসের বই থাকবে না, স্রেফ একটা উপন্যাস হবে।

আমি নিজের জীবনের অভিজ্ঞতা যত স্বাচ্ছন্দের সাথে লিখি, বানিয়ে লিখতে গেলে ততটা স্বাচ্ছন্দ বোধ করিনা। এই গল্প লিখতে গিয়ে আমার সবচেয়ে বড় আফসোস যা হয়েছে তা হচ্ছে, একাত্তুর সালে আমার জন্ম না হওয়াটা। একদিক দিয়ে আমরা প্রচন্ড ভাগ্যবান যে মানুষের পৈশাচিকতা দেখার দুর্ভাগ্য থেকে আমরা বেঁচে গিয়েছি। কিন্তু যদি সেই সময়টা আমি দেখতে পারতাম, তাহলে আরও গুছিয়ে গল্পটা লিখতে পারতাম।

এইধরনের গল্প আরও সময় নিয়ে লেখা উচিৎ। কিন্তু ভেবে দেখলাম, এখনই লেখায় হাত না দিলে হয়তোবা আর কখনই লেখা হবেনা। ১৯৭১ নিয়ে গবেষণার কোনই শেষ নেই। তাছাড়া আজ বাংলাদেশে পচিশে মার্চ শুরু হয়ে গেছে। সেই ভয়াল কালো রাত। আগামীকাল ছাব্বিশে মার্চ। দেশের মহান এই দিনটিতে উপন্যাসে হাত না দিলে অপেক্ষার পালা আরও নয়মাস দীর্ঘ হবে। দরকার হয়ে দ্বিতীয় কিস্তিতে তখন হাত দেয়া যাবে।

বাংলাদেশের সবচেয়ে গৌরবময় ইতিহাস আমি ফুটিয়ে তুলতে চেষ্টা করতে যাচ্ছি। হাত কাঁপছে। হ্রদস্পন্দন এলোমেলো হয়ে যাচ্ছে। আমার চেষ্টা থাকবে নির্ভুলভাবে গল্প লেখার। আপনাদের চোখে ভুল ধরা পড়লে ক্ষমা করে দেবার অনুরোধ রইলো।

আরেকটা অনুরোধ, যদি কোন ঘটনায় ভুল পান, অথবা আরও বিস্তারিত তথ্য থাকে আপনাদের কাছে, তবে অবশ্যই আমাকে শুধরে দিতে ও জানাতে ভুলবেন না। Criticism is highly appreciated.

(প্রথম অধ্যায় "অরুণাস্ত"-এর প্রথম পর্ব আগামীকাল প্রকাশ করবো ইনশাআল্লাহ।)

মন্তব্য ০ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (০) মন্তব্য লিখুন

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.