নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

মঞ্জুর চৌধুরী

আমি ঝন্ঝা, আমি ঘূর্ণি, আমি পথ-সমূখে যাহা পাই যাই চূর্ণি’। আমি নৃত্য-পাগল ছন্দ, আমি আপনার তালে নেচে যাই, আমি মুক্ত জীবনানন্দ। আমি হাম্বার, আমি ছায়ানট, আমি হিন্দোল, আমি চল-চঞ্চল, ঠমকি’ ছমকি’ পথে যেতে যেতে চকিতে চমকি’ ফিং দিয়া দিই তিন দোল; আমি চপলা-চপল হিন্দোল। আমি তাই করি ভাই যখন চাহে এ মন যা, করি শত্রুর সাথে গলাগলি, ধরি মৃত্যুর সাথে পান্জা, আমি উন্মাদ, আমি ঝন্ঝা! আমি মহামারী আমি ভীতি এ ধরিত্রীর; আমি শাসন-ত্রাসন, সংহার আমি উষ্ন চির-অধীর! বল বীর - আমি চির উন্নত শির!

মঞ্জুর চৌধুরী › বিস্তারিত পোস্টঃ

লন্ডন অ্যাটাক

২৩ শে মার্চ, ২০১৭ রাত ১০:৩৩

আমি না ইদানিং একটা খেলা খেলছি। মজার খেলা। তবে ভীষণ ইন্টারেস্টিং।
খেলাটা হচ্ছে, প্রতিদিন ঘুমাতে যাওয়ার আগে দুই পাতা কুরআন পড়ি। অর্থ সহ। শুরু করেছি একদম প্রথম থেকে, সূরা ফাতিহা এবং বাকারা। এখন পর্যন্ত মাত্র দুইশ আয়াতের খানিকটা বেশি পড়া হয়েছে।
খেলাটা কেন ইন্টারেস্টিং সেটা এখন বলি।
প্রতিদিন আমার সাথে ঘটে যাওয়া বিভিন্ন ঘটনা মাথায় থাকে। আমি চেষ্টা করি মাত্র দুই পৃষ্ঠার কুরআন পাঠ থেকে আমি কী সেটা সম্পর্কে কিছু নির্দেশনা পেতে পারি কিনা। এবং এখানেই বিস্ময়কর ব্যাপারটা ঘটে। আমি প্রতিবারই পাচ্ছি!
কয়েকটা উদাহরণ দিচ্ছি - ক্লিয়ার হবে।
ইসলামোফোবদের কথাবার্তায় মাঝে মাঝেই আমি বিমর্ষ হয়ে পড়ি। ওরা ভাল করেই জানে আমরা নবী এবং আল্লাহর ব্যাপারে কতটা স্পর্শকাতর, তারপরেও ইচ্ছা করে তারা বানিয়ে বানিয়ে সত্যের সাথে মিথ্যা জড়িয়ে এমনসব কথাবার্তা বলে, তখন তাদের এই ফাজলামিতে ভীষণ বিমর্ষ হয়ে পড়ি। আমার ঈশ্বরের কাছে তাদের মাথা নত করতেই হবে এমন কোন শর্ত আমি দেই না - তবে আমাদের বিশ্বাস নিয়ে ওদের এমন কদর্য আচরণ কেন আমি কিছুতেই বুঝতে পারিনা। এইটাতো তথাকথিত "মুক্তমনার" নিদর্শন হতে পারেনা!
এবং তখনই আমি বাকারার একটি আয়াত পেলাম, যেখানে আল্লাহ বলেছেন, তিনি তাদের গলায় বেড়ি বেঁধে রেখেছেন। ঢিল দিচ্ছেন বলে ওরা বুঝতে পারছে না। তবে যেদিন তিনি পাকড়াও করবেন, তখন আসমান জমিনের কেউ তাদের সাহায্য করতে পারবেনা।
মনে পড়ে গেল আমার নানুর বাসার হিংস্র জার্মান শেফার্ডের কথা। কুকুরটার ভয়ে আমরা সবাই গৃহবন্দী থাকতাম। প্রচন্ড আগ্রাসী এই কুকুরটা মামা এবং নানু ছাড়া কাউকে পরোয়া করতো না। নানু বাসার ছাদ থেকে লাফিয়ে প্রতিবেশীর ছাদে চলে যেত। ফল, প্রতিবেশীও আতঙ্কে গৃহবন্দী।
মামা "বুদ্ধি" করে কুকুরটার গলায় বেল্ট বেঁধে দিল। ঢিলা বেল্ট। সে বুঝতে পারলো না। একদিন অভ্যাসবশত লাফ দিল। দুই ছাদের মাঝামাঝি পর্যায়ে গিয়ে গলায় টান পড়লো। ফাঁসিতে মারা পড়লো আমাদের "ডন।"
আয়াতটি পড়ে ভয়ে শরীর কাটা দিয়ে উঠলো। এই ঢিল কী আমাকেও দেয়া হচ্ছে নাতো! যাদের দেয়া হচ্ছে, তাদের কী হবে?
রাগতো দূরের কথা - তাদের জন্য উল্টো করুণা হলো। ইশ! তারা যদি বুঝতো!
সেদিন আমরা খুব দামি এক সেট টেবল কিনে ফেললাম। দামি মানে আসলেই দামি। একতাড়া ডলার পকেট থেকে খসে গেল। অযথা এতগুলো টাকা খরচ করে ফেলায় মন খচখচ করতে লাগলো। আমার বৌ কিছুক্ষন পরপর বলছে, কাজটা উচিৎ হয় নাই। কাজটা মোটেও উচিৎ হয় নাই।
এবং সেই রাতেই পড়লাম, "আমাকে স্মরণ করো - তাহলে আমিও তোমাদের স্মরণ করবো। আমার শুকরিয়া আদায় করো - এবং আমার না শোকর হয়ো না।"
সাথে সাথে সব খচখচানি দূর হয়ে গেল।
আল্লাহর অনেক শুকরিয়া তিনি আমাদের সেই টেবল সেট কেনার সামর্থ্য দিয়েছেন। একটা সময়ে ঘরে কেবল ঘুমানোর ম্যাট্রেস ছাড়া কিছুই ছিল না। মাত্র নয় বছর আগের ঘটনা। সেই দিন আর নেই। সেই দিনে যেন ফেরত না নেন। আমিন।
আরেকবার মানুষ তর্ক করছিল কে "সহীহ" মুসলিম এবং কে নয়। এবং তখনই আমি চমৎকার আয়াতটি পড়লাম। "সৎকর্ম শুধু এই নয় যে, পূর্ব কিংবা পশ্চিমদিকে মুখ করবে (কাবার দিকে বা উল্টোদিকে), বরং বড় সৎকাজ হল এই যে, ঈমান আনবে আল্লাহর উপর কিয়ামত দিবসের উপর, ফেরেশতাদের উপর এবং সমস্ত নবী-রসূলগণের উপর, আর সম্পদ ব্যয় করবে তাঁরই মহব্বতে আত্নীয়-স্বজন, এতীম-মিসকীন, মুসাফির-ভিক্ষুক ও মুক্তিকামী ক্রীতদাসদের জন্যে। আর যারা নামায প্রতিষ্ঠা করে, যাকাত দান করে এবং যারা কথা দিয়ে কথা রাখবে এবং অভাবে, রোগে-শোকে ও যুদ্ধের সময় ধৈর্য্য ধারণকারী তারাই হল সত্যাশ্রয়ী, আর তারাই পরহেযগার।"
তো যা বলছিলাম। খেলাটা এখন পর্যন্ত দুর্দান্তভাবে জমে উঠেছে।
যেমন গতকাল লন্ডন অ্যাটাকের পর আমি কী পড়েছি জানেন? "বস্তুতঃ ফেতনা ফ্যাসাদ বা দাঙ্গা-হাঙ্গামা সৃষ্টি করা হত্যার চেয়েও কঠিন অপরাধ।"
ইন্টারেস্টিং না?
এখন যারা ইনিয়ে বিনিয়ে পশ্চিমা বিশ্বের দোষ খোঁজার চেষ্টা করছেন, "এই সন্ত্রাসী ঘটনার নিন্দা জানাই - কিন্তু/তবে ফিলিস্তিন, ইরাক, সিরিয়ার অবস্থানের পেছনে কে দায়ী?.........."
যেই দায়ী হোক, অন্তত নিহত হওয়া পথচারী বা পুলিশ অফিসারটি যে নয় - এইটা মাঠে ঘাস খাওয়া বলদও হাম্বা হাম্বা করে বলে দিতে পারবে। ইসলামে কোলাটেরাল ড্যামেজ বলে কোন টার্ম নেই। দরকার হলে নিজেরা মরে যাবে, তবু নির্দোষের রক্ত ঝরানো যাবেনা।
উদাহরণ লাগবে? উদাহরণ ছাড়াতো কেউ আবার কারোর কথা পাত্তা দেয় না।
উসমান (রাঃ) শহীদ হয়েছিলেন তখনকার ইরাক অঞ্চল থেকে আসা একদল উগ্রপন্থী, মূর্খ বিদ্রোহীদের (ইসলামের প্রথম জঙ্গি সংগঠন) হাতে। এরা ছিল নব্য মুসলমান, অবশ্যই জ্ঞানে-অভিজ্ঞতায় খালি কলসি এবং ভীষণ কট্টর। তারা কিনা সাহাবীদের ইসলামিক জ্ঞানে ভুল খুঁজে বেড়াতো।
যাই হোক। খলিফা উসমানকে (রাঃ) নিজেরই ঘরে ওরা ঘেরাও করে গৃহবন্দী করে রেখেছিল। আলী, সাদ, তালহা সহ অন্যান্য মেজর সাহাবীরা বলছিলেন খলিফা অনুমতি দিলেই ওদের প্যাদিয়ে দূর করা হবে।
আশি ঊর্ধ্ব বৃদ্ধ খলিফার একটাই কথা, "আমার হাতে কোন ভাইয়ের রক্ত ঝরবে না। হোক সে বিদ্রোহী।"
এবং যথাসময়ে জঙ্গিরা উসমানকে (রাঃ) "সহীহ মুসলিম নয়" অভিযোগে হত্যা করে পালিয়ে গেল।
এবং মুসলিম বিশ্ব ফুঁসে উঠলো।
সবাই খলিফা উসমানের রক্তের বদলা চায়।
আলী (রাঃ) হলেন নতুন খলিফা। কিন্তু আলী (রাঃ) কোন ব্যবস্থা নিলেন না। কেন?
"বিচার অবশ্যই করবো। কিন্তু যারা হত্যা করেছে আমাকে তাদের নাম দাও। দশ বারোজনের কারনে পুরো গোষ্ঠীর মৃত্যুদন্ড শরীয়ায় নেই।"
এই নিয়ে জল অনেক ঘোলা হলো। ব্যাটেল অফ জামাল নামের অত্যন্ত মর্মান্তিক যুদ্ধ সংগঠিত হলো। শহীদ হলেন তালহা (রাঃ), শহীদ হলেন জুবায়ের (রাঃ)। শহীদ হলেন আরও হাজারো সাহাবী।
কিন্তু বিদ্রোহী গোষ্ঠীর একটি নির্দোষকেও হত্যা করা হলো না।
কারন?
আলী (রাঃ) শৈশব থেকে নবীজির (সাঃ) বাড়িতে বড় হয়েছেন। তিনি জানেন একের দোষে গোষ্ঠীকে শাস্তি দেয়া নবীজির (সাঃ) নির্দেশ নয়। ইয়াসিরকে দুইভাগ করে হত্যা করা হলো, নৃশংসভাবে হত্যা করা হলো সুমাইয়াকেও। তারপরেও নবীজি (সাঃ) আবু জাহেলের অপরাধে তার গোষ্ঠীর কাউকে শাস্তি দেননি। আমরা খালিদ বিন ওয়ালিদকে সেই গোষ্ঠী থেকেই পেয়েছিলাম।
অতএব, ইনানো বিনানো বন্ধ করুন। আপনার সন্তানকে, আপনার বন্ধু বান্ধবকে জানান যে ইসলাম কোন অবস্থাতেই নিরীহ মানুষের রক্ত ঝরানো সাপোর্ট করেনা। "সমাজে অশান্তি সৃষ্টি করা, হত্যার চেয়েও জঘন্য অপরাধ।"
সেই মৃত অফিসারটি এবং তাঁর সাথে নিহত ব্যক্তিদের শেষকৃত্যানুষ্ঠানে যান। আপনার জেনুইন সমমর্মিতা প্রদর্শন করুন। আল্লাহর ওয়াস্তে মানুষের সাথে মানুষের মতন মিশতে শুরু করুন। ঈদের দিনে অফিসে মিষ্টি নিয়ে কলিগদের খাওয়ান। নিজের বাড়িতে দাওয়াত দিন। প্রতিবেশীর হক আদায় করুন। ছেলেমেয়েদের শেখান কিভাবে আপনার ধর্মই সবাইকে মিলেমিশে থাকতে শিখিয়েছে।
কে জানে, কথা বলতেই বলতেই একজন ভাবি জঙ্গিকে আপনি মানুষ বানিয়ে ফেলবেন!

মন্তব্য ৩ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (৩) মন্তব্য লিখুন

১| ২৩ শে মার্চ, ২০১৭ রাত ১১:৩১

তার ছিড়া আমি বলেছেন: ১০০ পার্সেন্ট ছহি কথ। ধন্যবাদ।

২| ২৪ শে মার্চ, ২০১৭ ভোর ৫:১২

বিচার মানি তালগাছ আমার বলেছেন: ভালো লিখেছেন। আমার এক ভারতীয় বন্ধু কোন এক ভারতীয় মুসলিম ডন(দাউদ ইব্রাহিম নাকি শাকিল) - এর ব্যপারে বলেছিল, তার সাথে অন্যায় করা হয়েছিল, তাই এমন হয়ে গিয়েছে। আমি তাকে বলি, তার সাথে অন্যায় হয়েছিল বলে, নিরীহ মানুষ হত্যার অধিকার তাকে দেয়া হয়নি। সে যা করছে তা ইসলামে সমর্থন যোগ্য নয়...

৩| ২৪ শে মার্চ, ২০১৭ ভোর ৬:৩২

অগ্নিবেশ বলেছেন: ভালো মুসলমানরা কেন খারাপ মুসলমানদের বকে দেয় না?

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.