নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
আমি ঝন্ঝা, আমি ঘূর্ণি, আমি পথ-সমূখে যাহা পাই যাই চূর্ণি’। আমি নৃত্য-পাগল ছন্দ, আমি আপনার তালে নেচে যাই, আমি মুক্ত জীবনানন্দ। আমি হাম্বার, আমি ছায়ানট, আমি হিন্দোল, আমি চল-চঞ্চল, ঠমকি’ ছমকি’ পথে যেতে যেতে চকিতে চমকি’ ফিং দিয়া দিই তিন দোল; আমি চপলা-চপল হিন্দোল। আমি তাই করি ভাই যখন চাহে এ মন যা, করি শত্রুর সাথে গলাগলি, ধরি মৃত্যুর সাথে পান্জা, আমি উন্মাদ, আমি ঝন্ঝা! আমি মহামারী আমি ভীতি এ ধরিত্রীর; আমি শাসন-ত্রাসন, সংহার আমি উষ্ন চির-অধীর! বল বীর - আমি চির উন্নত শির!
ইদানিং অফিসে প্রচন্ড ব্যস্ততা যাচ্ছে। তাছাড়া আমার বাসাটাও অফিস থেকে ভালই দূরে। চল্লিশ মাইল ড্রাইভ করে অফিসে যেতে দেড় থেকে দুই ঘন্টা লেগে যায়। ফেরার সময়ও তেমনই দুই ঘন্টা রাস্তায় নষ্ট হয়। প্রায়ই এমন হচ্ছে যে বাসা থেকেই অফিসের কাজ করতে হয়। দেখা যায় ঘুমাতে ঘুমাতে মধ্যরাত পেরিয়ে যায়।
আবার সেই ভোর বেলা উঠে তৈরী হয়ে অফিসের জন্য দৌড়। আবারও দুই দুই চার ঘন্টা পথে নষ্ট।
কাজেই রাতের ঘুমটা আমার জন্য পৃথিবীর আর যেকোন কিছুর চেয়ে বেশি জরুরি বিষয়। লাখ টাকার বিনিময়েও আমি ঘুম হারাম করতে রাজি নই।
দেখা যায় প্রায়ই মধ্যরাতে আমার পুত্রধন ঘুম থেকে উঠে নিজের ঘুম ভাঙার সংবাদ জানাতে ব্যস্ত হয়ে পরে। বলা হয়নি, আমার আবার আমার ছেলেকে পাশে না নিয়ে শুলে ঘুম হয়না। অথচ অন্য কেউ আমার পাশে একটু জোরে নিঃশ্বাস ফেললেও ঘুম ভেঙে যায়। কেবল পুত্রই ব্যতিক্রম।
তো যা বলছিলাম, গতকালও এমনটা ঘটেছে। ঘুমাতে গেছি যখন ঘড়িতে রাত তখন সাড়ে বারোটা। বিছানায় শোয়ার সাথে সাথেই আমার ঘুম আসেনা। কাজেই ধরে নেয়া যাক ঘুম আসতে আসতে রাত একটা বেজে গেছে। এবং ঠিক আড়াইটার সময়ে (ঘড়ি দেখেছি) আমার রাজপুত্র সাহেব ঘুম থেকে উঠে ছোট ছোট পায়ের লাথি দিয়ে আমার এবং তাঁর মায়ের ঘুম তাড়াতে ব্যস্ত হয়ে গেল। কিছুতেই ঘুমাবে না, তাঁর সাথে খেলতে হবে।
তাঁর মা বুদ্ধিমতী নারী। চট করে পাশের ঘরে চলে গেল। আমি জানি বিছানা ছাড়লে আমার ঘুম পুরোপুরি চটে যাবে। কাজেই আমি নড়াচড়া না করে মটকা মেরে পরে থাকলাম।
পুত্র আশ্বস্ত হলো না, সে হাতড়িয়ে হাতড়িয়ে আমার চোখ খুঁজে বের করে টেনে খোলার চেষ্টা করতে লাগলো। তাঁর জীবনের তখন একমাত্র লক্ষ্য তাঁর বাবার ঘুম তাড়ানো।
বিরক্ত হলাম। ধমক দিলাম। অনুরোধ করলাম ঘুমাতে। শেষে দুইহাতে জোর করে জাপ্টে ধরে শুইয়ে দিলাম।
এতে হিতে বিপরীত হলো। সে তাড়স্বরে কান্না জুড়ে দিয়ে এলাকাবাসীকে জাগানোর মিশনে নেমে পড়লো।
আমি ঘড়িতে তাকিয়ে দেখি সাড়ে চারটা বাজে। আর কিছুক্ষনের মধ্যে উঠে অফিসের জন্য রওনা হতে হবে। মাত্র দেড় ঘন্টার ঘুম পকেটে নিয়ে পরের দিনের প্রস্তুতি নিতে হবে। অাহ্! জীবন!
আমার সাবেক ভিপির কথা মনে পরে গেল।
আমি যখন আমার ছেলের জন্মের পরে অফিসের কলিগদের দেখাতে নিয়ে গিয়েছিলাম, তখন বেচারি বলেছিল, "আমিও আরেকটা বাচ্চা নিতাম - কিন্তু রাত জাগার স্মৃতির কথা মনে পড়লে আর সাহস পাই না।"
তো যা বলছিলাম, অনেকেরই এক অভিযোগ। বাচ্চারা বড্ড যন্ত্রনা করে। রাতে ঘুমাতে দেয়না। এইটা সেইটা বায়না করে। সুপার মার্কেট বা মলে মেঝেতে শুয়ে কান্না জুড়ে দিয়ে সিন্ ক্রিয়েট করে।
এবং আজকে সকালেই একটা খবর পড়লাম।
এক ভদ্রলোকের স্ত্রী ও দুই যমজ বাচ্চা নিয়ে অতি গোছানো সংসার। টুকটাক ঠুকাঠুকি বাদ দিলে সুখেরই সংসার বলা যায়। হঠাৎ সেদিন তাঁর এলাকায় কেমিকেল বোমা হামলা হলো। একটা কটু গন্ধ তিনি পেয়েছিলেন, নিজের দুই বাচ্চাকে কোলে তুলে স্ত্রীকে পাশে নিয়ে নিরাপদ আশ্রয়ের জন্য দৌড়াতে শুরু করতেই দেখেন কোলের বাচ্চা এবং স্ত্রী অচেতন হয়ে পড়েছেন। হাসপাতালে নিতে নিতেই সব শেষ। একটি সাজানো সংসার দুমড়ে মুচড়ে ভেঙে গুড়িয়ে যেতে একটি ঘন্টাও সময় লাগলো না।
বাপটা নিজেও অসুস্থ, শরীরে বিষ ছড়িয়ে আছে। চিকিৎসা চলছে তাঁকে সারিয়ে তোলার। তিনি বিহ্বলের মতন মৃত দুই সন্তানকে জড়িয়ে ধরে বিড়বিড় করছেন, "বিদায়, বিদায়।"
কোন এক আত্মীয় সেটা ভিডিও করে ইন্টারনেটেও ছেড়ে দিয়েছে।
বলছি সিরিয়ার কথা।
পুরো বিশ্ববাসী এই কেমিকেল হামলার জন্য বাশার আল আসাদের নিন্দা করলেও রাশিয়া তার হয়ে সাফাই গাইছে। ট্রাম্প বলেছে, কেউ সাথে থাকুক কী না থাকুক, অ্যামেরিকা একাই বাশার সরকারকে শায়েস্তা করে দিবে। আমরা ঐতিহাসিকভাবে জানি অ্যামেরিকার শায়েস্তা করার ধরণ সম্পর্কে। আরও অগণিত পিতা তাঁদের মৃত সন্তানদের কোলে নিয়ে বিড়বিড় করে বলবেন, "বিদায়, বিদায়!"
আমরা বুঝতেই পারিনা আমরা কী ভাগ্যবান যে আমাদের সন্তানরা গভীর রাতে জেগে উঠে আমাদের চোখের পাতা টেনে আমাদের ঘুম তাড়ায়! মলে, মলে, শপিং সেন্টারে কোন কিছুর জন্য বায়না ধরে মেঝেতে গড়াগড়ি খেতে খেতে "সিন্ ক্রিয়েট" করে। আলহামদুলিল্লাহ!
আমাদের সন্তানরা সেসব করতে পারে বলেই আমাদের জীবনটা এত সুখের!
©somewhere in net ltd.
১| ০৭ ই এপ্রিল, ২০১৭ সকাল ১০:০৭
মাহিরাহি বলেছেন: Salamah bin 'Ubaidullah bin Mihsan Al-Khatmi narrated from his father -and he was a Companion- who said:
"The Messenger of Allah (s.a.w) said: "Whoever among you wakes up in the morning secured in his dwelling, healthy in his body, having his food for the day, then it is as if the world has been gathered for him.'"
আমাদের জীবনটা আসলেই সুখের।