নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

মঞ্জুর চৌধুরী

আমি ঝন্ঝা, আমি ঘূর্ণি, আমি পথ-সমূখে যাহা পাই যাই চূর্ণি’। আমি নৃত্য-পাগল ছন্দ, আমি আপনার তালে নেচে যাই, আমি মুক্ত জীবনানন্দ। আমি হাম্বার, আমি ছায়ানট, আমি হিন্দোল, আমি চল-চঞ্চল, ঠমকি’ ছমকি’ পথে যেতে যেতে চকিতে চমকি’ ফিং দিয়া দিই তিন দোল; আমি চপলা-চপল হিন্দোল। আমি তাই করি ভাই যখন চাহে এ মন যা, করি শত্রুর সাথে গলাগলি, ধরি মৃত্যুর সাথে পান্জা, আমি উন্মাদ, আমি ঝন্ঝা! আমি মহামারী আমি ভীতি এ ধরিত্রীর; আমি শাসন-ত্রাসন, সংহার আমি উষ্ন চির-অধীর! বল বীর - আমি চির উন্নত শির!

মঞ্জুর চৌধুরী › বিস্তারিত পোস্টঃ

সুপ্রিমকোর্টের সামনের মূর্তি অপসারণ দাবী

১২ ই এপ্রিল, ২০১৭ রাত ১০:২৬

সুপ্রিমকোর্টের সামনের মূর্তি অপসারণ দাবী করেছে হেফাজতে ইসলাম। প্রধানমন্ত্রীরও সরাসরি সায় আছে। এই নিয়ে গালাগালি-মারামারি-কাটাকাটি লেগে গেছে।
সিরিয়াসলি!
বাঙালি শেষ কবে ভদ্রভাবে যুক্তিসহকারে আলোচনা করেছিল আমার স্মরণে নেই। জ্ঞান হবার পর থেকে কেবল দেখে আসছি লেখালেখির মধ্যেও গায়ের জোর টেনে আনার চেষ্টা হয় অহরহ। যুক্তিতর্কের ধারে কাছে দিয়ে কেউ যায়না। এইসব ব্যপারে এখন আমি এত বেশি বিরক্ত, এত বেশি বিরক্ত যে সময় নষ্ট করতেও মন চায়না।
প্রথম কথা, সুপ্রিমকোর্ট কোন ইসলামিক ইবাদতখানা না। মূর্তি স্থাপন কোন মসজিদের চত্ত্বরে ঘটেনি। ঈদগাহের মিম্বরে ঘটেনি। তারচেয়ে বড় কথা, এটি মূর্তি পূজার খাতিরেও স্থাপন করা হয়নি। প্রতি বছরের নির্দিষ্ট সময়ে ঐ মূর্তির পায়ের নিচে কেউ পুষ্পস্তবক অর্পণ বা মোমবাতি প্রজ্বলন করেনা। ওটার উপর পক্ষীকুল নিয়মিত বিষ্ঠা ত্যাগ করে - কেউ জিভ কেটে ওটা পরিষ্কার করতে করতে তওবা করেনা। অফিসে যাবার সময়ে কেউ ঐ মূর্তির পা ছুঁয়ে আশীর্বাদ নিয়ে যায় না। ওটা স্রেফ একটা ভাস্কর্য, যা সৌন্দর্য্য বর্ধনের উদ্দেশ্যে প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। ওটা আর গেটের দুপাশের ল্যাম্পপোস্ট, এবং পেছনের বাগানের গাছগাছালির মধ্যে কোনই পার্থক্য নেই। ব্যস!
"ইসলামিক দৃষ্টিকোণ থেকে মূর্তিস্থাপন হারাম।"
কথা হচ্ছে, বাংলাদেশ কী কেবল মুসলমানদের বাসস্থান? দেশের আইন কী শরিয়া আইনে চলে? দেশের প্রধানমন্ত্রী কী মুসলিম জাহানের খলিফা? তিনি জুম্মাবারে নিয়মিত খুৎবা পাঠ করেন? অন্যান্য ধর্মের লোকেরা কী উদ্বাস্তু হিসেবে এদেশে এসেছে? ওদের কোনই অধিকার নাই এদেশে? আমার ধর্মে মূর্তি পূজা নিষেধ, আমি নিশ্চিত করবো আমি যেন মূর্তিপূজা না করি। অন্য কেউ সেটা করছে কিনা, তা নিয়ে আমার এত মাতবরি কেন? আমাকেতো কুরআনই নির্দেশ দিয়েছে ঐ মাতবরি না করতে। আয়াতুল কুরসীর ঠিক পরের আয়াতটিই বলছে "দ্বীনের ব্যাপারে কোন জবরদস্তি নেই......(সুরাহ বাকারা)।" আমি কী নিশ্চিত হয়ে গেছি যে আমি বেহেস্তে যাচ্ছিই? এই গ্যারান্টি আমি কার কাছ থেকে পেলাম? তাহলে নিজেকে নিয়ে চিন্তার পরিবর্তে অন্যের ব্যাপারে এত নাক গলানো কেন?
হ্যা, বাংলাদেশের সুপ্রিমকোর্ট প্রাঙ্গনে "গ্রীক" (শুনেছি ওটা নাকি গ্রীক মূর্তি, যদিও আমি শাড়ি পড়া গ্রিক দেবী দেখিনি কখনও - এবং এই ব্যাপারে আমার জ্ঞান মূর্খ্য শ্রেণীর, কাজেই পক্ষে বিপক্ষে কোনই দাবি নেই আমার) মূর্তি কেন, সেটা নিয়ে তর্ক হতে পারে। আমাদের ঐতিহ্য, আমাদের বৈচিত্র্য, আমাদের ঐতিহাসিক বীর সংখ্যা গ্রীকদের চেয়ে নেহায়েত কম নয়। আমাদের স্বতন্ত্রতাও অনেক প্রাচীন। তাহলে শুধুশুধু গ্রীসকে টানাটানি কেন সেটা নিয়ে তর্ক হলে শুনতে যৌক্তিক লাগতো।
এখন যারা এর বিরোধিতা করছেন, তাঁরা কোন মূখ্য কারনে প্রতিবাদ করছেন সেটাও যদি স্পষ্ট করে বলতেন, তাহলে ধন্য হতাম। কেবল "হেফাজত দাবি করেছে, কাজেই প্রতিবাদ করতে হবে" এই মানসিকতাও কোন সুস্থ যুক্তিতর্কের জন্য যথেষ্ট হতে পারেনা। বিশেষ করে কথায় কথায় আকারে প্রকারান্তরে ইসলামকে টেনে এনে গালিগালাজ না করে কোন সলিড কারন দেখান যে এই কারনে বাংলাদেশের সুপ্রিমকোর্ট প্রাঙ্গনে গ্রীক দেবীমূর্তির স্থাপনা জরুরি। দেখা যাচ্ছে বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই তর্কগুলো ইসলামকে কেন গালিগালাজ করা হলো - ইস্যুতে গিয়ে প্যাঁচিয়ে যাচ্ছে। মূল ইস্যু থেকে যা কয়েক লক্ষ মাইল দূরে।
হ্যা, এইটা কারন হিসেবে নেহায়েতই দুর্বল না যে, "দেশের "সব" ভাস্কর্যের অপসারণ দাবি - মেনে নেয়া যায় না।"
ঠিকইতো - শুধুশুধু সব ভাষ্কর্য সরানো হবে কেন? বিশেষ করে অপরাজেয় বাংলা বা এই ধরণের ভাস্কর্যগুলো - যা আমাদের ইতিহাসের, আমাদের মুক্তিযুদ্ধের, আমাদের স্বাধীনতার, আমাদের অস্তিত্বের, আমাদের স্বতন্ত্রতার সাক্ষ্য দেয়। ওসব সরানোর দাবি করলে বলতেই হবে যে ভাই বাংলাদেশ আপনার দেশ না। পছন্দের কোন দেশের এম্বেসির সামনে লাইনে দাঁড়ান।
এই দাবীকারীকে জিজ্ঞেস করতে মন চায়, সমস্যা কী তোমার? তোমাকে কী বাধ্য করা হচ্ছে সব ভাষ্কর্যের পূজা করতে? তাহলে তোমার এত আপত্তি কী?
"মূর্তি থাকলে ঘরে ফেরেস্তা ঢুকেনা।" - রাসূলের হাদিস।
ঘুষের টাকায়, দূর্নীতির টাকায় দেশ ভরে যাচ্ছে, সরকারি বেসরকারি অফিসগুলোতে ঘুষ ছাড়া ফাইল নাড়ানো অসম্ভব একটি ব্যাপার, সন্ত্রাসী-গডফাদারদের দৌরাত্মে নিশ্বাস নেয়া দায়, খোলামেলা চাঁদাবাজি চলছে, মাদকের হাতে জিম্মি দেশের যুব সমাজ, রাস্তাঘাট নির্মাণের দুই মাসের মধ্যেই আবার ভেঙে যাচ্ছে, কোনরকম নোটিশ ছাড়াই ভবন ধসে পড়ছে - আমরা এইসব বাদ দিয়ে এমন সব মূর্তি/ভাষ্কর্যের পেছনে লেগে গেছি যার না কোন ভাল না কোন মন্দ করার ক্ষমতা আছে। ওসবের জন্য ফেরেশতা দেশে আসে, কিন্তু ভাস্কর্য থাকলে আসবেনা - এই দাবি করছেন আপনারা?
আমরা প্রায়োরিটি করতে শিখলাম না এখনও - আফসোস!
আন্দোলন করতে হয় তাহলে সচিবালয়ের সামনে দাঁড়িয়ে থাকুন। যেই ব্যাটা ঘুষ চাইবে, অমনি তার গোমর ফাঁস করে দিন মিডিয়ায়।
চাঁদাবাজ-সন্ত্রাসী পেলে গণপিটুনি দিন। যেই কন্ট্রাক্টর সিমেন্ট কম বালি বেশি থিওরিতে ইমারত বানায়, তাদের ধরে ধরে জেলে ঢোকান। পুলিশ ঘুষ চাইলে ভিডিও করে ফেসবুকে ছেড়ে দিন। ইভটিজারদের কানে ধরে এলাকা চক্করের ব্যবস্থা নিন।
গতবছর টিভিতে দেখলাম ঢাকায় বস্তিবাসী বৃদ্ধবৃদ্ধা মুড়ি আর পানি দিয়ে সেহেরি এবং ইফতার করে। বাংলাদেশের (রায়েরবাজার) বস্তির ছেলেমেয়েরা টার্ম অনুযায়ী খাবার খায়। যেই ছেলে সকালে ভাত খেয়েছে, সে তাঁর ছোটভাইয়ের খাবারের জন্য দুপুরে অভুক্ত থাকে, রাতে সে আর ছোট ভাই অভুক্ত থাকে যাতে মা বাবা ভাত খেতে পারে।
৯০% মুসলমানের দেশে কোন বৃদ্ধবৃদ্ধার স্রেফ মুড়ি আর পানি দিয়ে সেহেরি এবং ইফতার, এবং শিশুদের রোটেশন অনুযায়ী খাওয়া খাদ্য গ্রহণ আমার ধর্মীয় অনুভূতিতে সরাসরি আঘাত। আল্লাহর কাছে আমাকে এজন্য জবাবদিহি করতে হবে। আল্লাহ আমাকে জিজ্ঞেস করবেন, "আমি ক্ষুধার্ত অবস্থায় তোমার কাছে এসেছিলাম, তুমি খাওয়াওনি।" তখন কী জবাব দেব? "আমি সুপ্রিমকোর্টের মূর্তি অপসারণ আন্দোলনে ব্যস্ত ছিলাম - তাই খেয়াল করিনি"? এতে ক্ষুধার্তের ক্ষুধা মিটে যাবে?
রাসূল (সঃ) বলেছেন সেই ব্যক্তি বেহেস্তে যেতে পারবেনা যে নিজে পেট পুড়ে খেল এবং তাঁর প্রতিবেশী (হিন্দু মুসলিম বৌদ্ধ খ্রিষ্টান - যে কেউ হতে পারে) না খেয়ে ঘুমাতে গেল।
এইসব নিয়ে আন্দোলন করেন। দেখবেন, সবাই সম্মিলিতভাবেই দেশে ফেরেশতাদের আসা নিশ্চিত করবে।
তা না করে অতি অতি নগন্য ইস্যু নিয়ে শক্তি এবং সময় ক্ষয় কেন - এবং তারচেয়ে বড় কথা, সমাজে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি কেন সেটা আমাকে বুঝান।

মন্তব্য ৬ টি রেটিং +১/-০

মন্তব্য (৬) মন্তব্য লিখুন

১| ১২ ই এপ্রিল, ২০১৭ রাত ১০:৩২

রাফিন জয় বলেছেন: মন্তব্যটা দাদা লিঙ্কেই দিলাম, একটু ক্লিক করে নিবেন!

২| ১২ ই এপ্রিল, ২০১৭ রাত ১১:০৯

মিঃ আতিক বলেছেন: "চাঁদাবাজ-সন্ত্রাসী পেলে গণপিটুনি দিন। যেই কন্ট্রাক্টর সিমেন্ট কম বালি বেশি থিওরিতে ইমারত বানায়, তাদের ধরে ধরে জেলে ঢোকান। পুলিশ ঘুষ চাইলে ভিডিও করে ফেসবুকে ছেড়ে দিন। ইভটিজারদের কানে ধরে এলাকা চক্করের ব্যবস্থা নিন।"

যেহেতু আইডিয়া ভালো দিয়েছেন কাজটা আপনি শুরু করেন,

১৪ ই এপ্রিল, ২০১৭ রাত ২:৩০

মঞ্জুর চৌধুরী বলেছেন: আমি দেশে থাকিনা, থাকলে অবশ্যই করতাম। ফেসবুকে আমার গ্রুপের কোন মেয়েকে ইনবক্সে বা কমেন্টে টিজ করলে আমি ঠিকই দোষীর শাস্তির ব্যবস্থা করি। সেটা "কানে ধরে এলাকা চক্করের" কম নয়।

৩| ১৩ ই এপ্রিল, ২০১৭ রাত ১:২৪

সেলিম জাহাঙ্গীর বলেছেন: মূর্তি আর মূর্তি পূজা এক নয় এটি হেফাজতের মত ধর্মান্ধরা বুঝবে না। কারন তাদের যে মাদ্রাসা লাইনে লেখাপড়া। এই মাদ্রাসায় এইসব জ্ঞান দেওয়া হয়না। তাদের পড়ানো হয় হাদীস-কোরআন, ইজমা, কেয়াশ।
লেখক আপনি খুব সুন্দর বলেছেন সুপ্রিমকোর্ট কোন ইসলামিক ইবাদতখানা না। মূর্তি স্থাপন কোন মসজিদের চত্ত্বরে ঘটেনি। ঈদগাহের মিম্বরে ঘটেনি। তারচেয়ে বড় কথা, এটি মূর্তি পূজার খাতিরেও স্থাপন করা হয়নি। প্রতি বছরের নির্দিষ্ট সময়ে ঐ মূর্তির পায়ের নিচে কেউ পুষ্পস্তবক অর্পণ বা মোমবাতি প্রজ্বলন করেনা।
আমি আপনার সাতে একমত। তবে যিনারা এই মূর্তি অপসারনের কথা বলে তিনারাকি জানেন ইসলামে বলে, যতক্ষন কোন বস্তুকে পূজা না দেওয়া হবে ততক্ষন সেটি পূজা নয়। আমাদের প্রায় সকলের ঘরের শোকেসে ছোট ছোট নানান ধরনের পুতুলের প্রতিকৃতি আছে সেটি কোন মূর্তি পূজা নয়। কারন এটাকে কেউ দুধকলা এমনকি জবাফুল কিংবা ধুপও দিবে না। সোলামান (আ) তিনিও পূর্তি (ভাস্কর্য) তৈরী করতেন, করাতেন কোরআন তার জ্বলন্ত উদাহরণ। চলুন একটু দেখে নেয় কোরআনের সেই আয়অত।
সূরা সাবা ৩৭:১৩ আয়াতঃ يَعْمَلُونَ لَهُ مَا يَشَاءُ مِن مَّحَارِيبَ وَتَمَاثِيلَ وَجِفَانٍ كَالْجَوَابِ وَقُدُورٍ رَّاسِيَاتٍ اعْمَلُوا آلَ دَاوُودَ شُكْرًا وَقَلِيلٌ مِّنْ فَلَمَّا قَضَيْنَا عَلَيْهِ
অর্থঃ তারা সোলায়মানের ইচ্ছানুযায়ী দুর্গ, ভাস্কর্য, হাউযসদৃশ বৃহদাকার পাত্র এবং চুল্লির উপর স্থাপিত বিশাল ডেগ নির্মাণ করত। হে দাউদ পরিবার! কৃতজ্ঞতা সহকারে তোমরা কাজ করে যাও। আমার বান্দাদের মধ্যে অল্পসংখ্যকই কৃতজ্ঞ।

আল্লআহর হুকুমে দাউদ পরিবার এই কাজটি করতো। কিন্তু যারা নাবুজের দল তাদের কোরআনের এই আয়াতগুলোও চোখে পড়বে না। এবং চোখে পড়লেও তা মানবে না।

১৪ ই এপ্রিল, ২০১৭ রাত ২:৩০

মঞ্জুর চৌধুরী বলেছেন: ভাল বলেছেন। আমিও পড়েছিলাম এই বিষয়ে।

৪| ১৩ ই এপ্রিল, ২০১৭ দুপুর ২:০৪

ক্লে ডল বলেছেন: চমৎকার বলেছেন। প্রথম দুটি মন্তব্য থেকেই বুঝে নিন আমাদের বদ্ধতা কতখানি।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.