নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
আমি ঝন্ঝা, আমি ঘূর্ণি, আমি পথ-সমূখে যাহা পাই যাই চূর্ণি’। আমি নৃত্য-পাগল ছন্দ, আমি আপনার তালে নেচে যাই, আমি মুক্ত জীবনানন্দ। আমি হাম্বার, আমি ছায়ানট, আমি হিন্দোল, আমি চল-চঞ্চল, ঠমকি’ ছমকি’ পথে যেতে যেতে চকিতে চমকি’ ফিং দিয়া দিই তিন দোল; আমি চপলা-চপল হিন্দোল। আমি তাই করি ভাই যখন চাহে এ মন যা, করি শত্রুর সাথে গলাগলি, ধরি মৃত্যুর সাথে পান্জা, আমি উন্মাদ, আমি ঝন্ঝা! আমি মহামারী আমি ভীতি এ ধরিত্রীর; আমি শাসন-ত্রাসন, সংহার আমি উষ্ন চির-অধীর! বল বীর - আমি চির উন্নত শির!
বাংলাদেশের পয়েন্ট অফ ভিউতে একটি মহাগুরুত্বপূর্ণ বিষয় নিয়ে কিছু কথা বলা যাক। সেটি হচ্ছে ব্যবসা, ইংলিশে যাকে বলে বিজনেস, এবং হিন্দিতে ধান্ধা।
তবে তার আগে বলে ফেলি, আমি কোন বিজনেস টাইকুন নই, সাধারণ চাকরিজীবী। যা বলবো পাঠ্যপুস্তক এবং কিছু ব্যবসায়ী বন্ধুবান্ধবের অভিজ্ঞতার আলোকে বলবো। এবং অবশ্যই এমন কিছু পয়েন্ট নিয়েও আলোচনা করবো যা বইয়ে লেখা হয়না, কিন্তু বাস্তবে সেগুলোর গুরুত্ব অনেক বেশি। কারও দ্বিমত থাকলে তাঁরা এখানে সরাসরি কমেন্ট করুন। ভুল শুধরে নেব।
১. তা, ব্যবসা শুরু করতে হলে সবার আগে কী প্রয়োজন? থিওরি অনুযায়ী, মূলধন বা ক্যাপিটাল। টাকা নাই, তো মাল কিনবো কেমনে? মাল না কিনলে বেঁচবো কেমনে? সহজ হিসাব।
কিংবা আইডিয়া। কী নিয়ে ব্যবসা করবো - সেটাইতো আসল বিষয় হবার কথা।
এছাড়াও বইয়ে লেখা থাকবে লোকেশন, এক্সপিরিয়েন্স, নেটওয়ার্কিং, মার্কেটিং, SWOT analysis ইত্যাদি।
কিন্তু আমার মতে, ব্যবসা শুরু করার আগে এসব কিছুর আগে, এমনকি ক্যাপিটালের টাকা বা আইডিয়ার চাইতেও যা সবচেয়ে বেশি দরকার তা হচ্ছে মানসিক প্রস্তুতি। ব্যবসা মোটেও সহজ রাস্তা না। বিশেষ করে প্রাথমিক পর্যায়ে। অমানুষিক পরিশ্রমের মানসিক প্রস্তুতি না থাকলে ব্যবসায় না নামাই ভাল। একজন ব্যবসায়ীকে অবশ্যই মনে রাখতে হবে, প্রাথমিক পর্যায়ে তিনিই প্রতিদিন সকালে এসে দোকান (অফিস) খুলবেন, এবং সারাদিনের কর্মকান্ড শেষে সব কর্মচারী বিদায়ের পরে রাতে তাঁকেই দোকান বন্ধ করে বাড়ি যেতে হবে। বছরের পর বছর এই হবে তাঁর রুটিন। কারোর উপর চোখ বুজে দায়িত্ব সপা যাবেনা। শুনতে খারাপ লাগলেও মেনে নিতে হবে যে আমাদের দেশ চোরের খনি, সব সাফ করে দিবে। বিদেশের জন্যও কথাটি প্রযোজ্য। "টাকা পয়সা এবং বৌ কারোর হাতে ছেড়ে বিশ্বাস করবে না।" - কোন এক মহান মনীষীর কথা, আমার নয়। এই আপ্ত বাক্যটিই মেনে চলতে হবে।
কোন কর্মচারী ছুটিতে গেছে, কিংবা অসুস্থ, আজকে আসতে পারবেনা - আমার প্রস্তুত থাকতে হবে যে যদি অন্য কোন কর্মচারী তাঁর বদলে কাজ না করে, তাহলে আমাকেই দোকানে আসতে হবে। কিচ্ছু যায় আসেনা যে আমার বাচ্চার জন্মদিন নাকি আমার বিবাহ বার্ষিকী। ব্যবসা না দাঁড়ালে রুজি রুটি বন্ধ। কাজেই ব্যবসায়িক প্রয়োজনে অনেক কিছুই আমাকে কোরবানি দিতে হবে।
একজন ব্যবসায়ীর ব্যক্তিগত জীবন বলে কিছু থাকেনা। শুরুর দিকেতো নয়ই। অনেককে চিনি, কোটি কোটি টাকা কামিয়ে ফেলেছে, কিন্তু বছরের পর বছর হয়ে গেছে, পারিবারিক ছুটি কাটাতে পারেনি। আপনাকে এমন প্রস্তুতিই নিতে হবে। যখন ব্যবসা পায়ের নিচে শক্ত মাটি পেয়ে যাবে, তখনই কেবল আপনি একটু দম নিতে পারবেন। নাহলে চাকরি করুন। আদরের নন্দ দুলালদের জন্য ব্যবসা নয়।
বলা ভাল, আন্ট্রাপ্রেনরশিপ নিয়ে কথা বলছি। বাপের অলরেডি দৌড়াতে থাকা ব্যবসা চালিয়ে নিতে অবশ্য এত পরিশ্রম না করলেও চলবে। কেবল স্টিয়ারিং ধরে থাকলেই চলবে।
২. কাস্টমার সার্ভিস। সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ পয়েন্ট। যেকোন বইয়ে, যেকোন থিওরিতে, যেকোন পন্ডিত এই পয়েন্ট বলবেই। জাপানে নাকি বলা হয়ে থাকে কাস্টমারই ঈশ্বর, তাঁদের কোন অবস্থাতেই অসন্তুষ্ট করা যাবেনা। পৃথিবীর সব জায়গাতেই ব্যবসায়ীরা কাস্টমারকে মাথায় তুলে রাখে। কেবল আমার দেশ বাংলাদেশ ছাড়া।
একটা কথা মনে রাখবেন, আপনি যেই হন না কেন, কাস্টমার ক্ষেপালে আপনাকে থালা হাতে রাস্তায় বসতে হবেই। আবার কাস্টমার খুশি থাকলে আপনার ফুটপাথ থেকে কোটিপতি হতেও সময় বেশি লাগবেনা।
থিওরি অনুযায়ী, একজন নিয়মিত বা পুরানো কাস্টমারকে বেঁধে রাখা একটা নতুন কাস্টমার জোগাড় করার চাইতে বহুগুন সাশ্রয়ী।
এবারে কেস স্টাডি।
আমার বিয়ের শাড়ি কিনতে আমার মা বাবা এবং আমার শ্বশুরবাড়ি গুষ্ঠি কলকাতা গিয়েছিল (আলাদা আলাদা ভাবে)। পার্কসিটিতে যাবার সাথে সাথেই দোকানদার এমনভাবে তাঁদের (দুই পক্ষকেই) অভ্যর্থনা জানালো যেন বহুদিনের চেনা। তারপরে জানতে চাইলো, "চা না কফি খাবেন?"
ইতস্তত করতে দেখে বলল, "চা কফি খেলে যে আমার দোকান থেকে কিছু কিনতেই হবে এমন কোন শর্ত নেই। শাড়ি দেখতে দেখতে চা খান, তারপর পছন্দ না হলে চলে যাবেন।"
এইবার বসতেই হলো। কথায় কথায় দোকানি বুঝে গেল বিয়ের শপিংয়ের ক্লায়েন্ট। জালে বড় মাছ ধরা পড়েছে। কাজেই সাথে সাথে নিজের দোকানের পিচ্চিকে বললেন, "এই যাতো, দিদিদের জন্য দাহি ফুচকা নিয়ে আয়।"
ব্যস। "ঝাঁকে ঝাঁকে জাটকা, কারেন্ট জালে আটকা" পড়লো। এইবার ওড়না কেনার সময়ে লোকটা তাঁর ডিজাইন দেখালো। পছন্দ হলো না।
"কেমন ওড়না চাইছেন দিদি?"
ডিজাইন বলা হলো।
"ঠিক আছে, আমি ওটা আপনাকে বানিয়ে দেব।"
"কিন্তু আমাদের হাতেতো সময় নেই।"
"কবে যাবেন ঢাকা?"
"আগামীকাল।"
"আপনার হোটেলের ঠিকানা দিয়ে যান, আমার কর্মচারী সকালে আপনার হোটেলে মাল পৌঁছে দিবে।"
একটু খটকাতো লাগেই। চেনা নেই, জানা নেই, বিদেশে এসে কাউকে ভরসা করে এডভান্স টাকা দিয়ে যাওয়া। কিন্তু সামান্য চা, দই ফুচকা এবং মিষ্টি কথার জাদুতে লোকটা ঠিকই ডিল সাইন করিয়ে নিল। এবং পরেরদিন ভোরে ঘুম ভাঙলো সেই দোকানের কর্মচারীর ডাকে। ওড়না নিয়ে হাজির হয়ে গেছে। ঠিক যেমনটা চাওয়া হয়েছিল, তেমন। একরাতেই বানানো শেষ!
একেই বলে কথার দাম। প্রতিটা ব্যবসায়ীর জন্য যা অবশ্য কর্তব্য।
এখন বলেন, কলকাতা গেলে এই দোকান ছাড়া আমরা আর অন্য কোথাও যাব? প্রায় প্রতিটা দোকানের এই অবস্থা।
এইবার দেশি দোকানের উদাহরণ দেই।
আমি বরাবরই পোশাকের ব্যাপারে খুবই উদাসীন (ছিলাম)। বিয়ের আগে ট্রাউজার আর টিশার্ট পড়ে বেরিয়ে যেতাম। পিৎজা হাট, কেএফসি এমনকি ওয়েস্টিনেও বহুবার গিয়েছি অমন অতি সাধারণ পোশাকে। বিয়ের পরে একবার বউকে আনতে গিয়েছিলাম তাঁর অফিস থেকে। আমাকে দেখে তাঁর নারী কলিগ বলেই ফেলল, "তোমার কাছে আরেকটু হ্যান্ডসাম হাসবেন্ড আশা করেছিলাম।"
ভদ্রমহিলা বোধয় ছোটবেলায় শেখ সাদির গল্পটি পড়েন নি।
তো যাই হোক, বিয়ের আগে আমি আর আমার হবু বৌ গুলশানের একটা দোকানে গিয়েছিলাম। একজনের জন্য গিফট কিনতে চাই। আমাদের গায়ে আটপৌরে পোশাক। একটা টাইটান ঘড়ি পছন্দ হলো। বললাম দেখাতে। দোকানদার প্রথমেই বললো, "এর দাম কিন্তু সাড়ে তিন হাজার টাকা।"
খুবই গায়ে লাগলো কথাটা।
দাঁতে দাঁত পিষে তবুও বের করতে বললাম। দেখলাম ঘড়ি। তিক্ত মনে কিনার প্রশ্নই আসেনা। তাছাড়া টাইটান ভালোও লাগেনা। বললাম যে পছন্দ হয় নি। লোকটা এমন ভাব দেখালো যে "আগেই বুঝেছিলাম, ওটা কেনা তোদের দ্বারা হবেনা।"
এরপর ঐ দোকানে কী থুথু ফেলতেও যাওয়া উচিৎ?
আমি তারপরেও গেলাম। বেশ কয়েক মাস পর। অ্যামেরিকা থেকে ফেরত গিয়ে। লোকটা তখনও একই দোকানে কাজ করে। আমি এইবারও একই ঘড়ি দেখতে চাইলাম। ব্যাটা দেখালো। এইবার কোন উচ্চবাচ্য নেই। আমার হাতের ঘড়িটা বোধয় নজরে পড়েছে। হাতের আইফোনটাও (তখন মাত্রই আইফোন ১ বেরিয়েছে, দেশে মার্কেট পেতে তখনও অনেক দেরি, নোকিয়া এন সিরিজ দেখলেই সবার মাথা নষ্ট হয়ে যায়, বেশির ভাগই আইফোন চোখেই দেখেনি) নিশ্চই চোখ এড়ায়নি।
বুঝে নিলাম এই ব্যাটাও ছোটবেলায় শেখ সাদির গল্প পড়েনি।
এবং পরেরবারও দেশে গিয়ে যখন আরও ফিটফাট হয়ে সেই দোকানে যেতে চাইলাম, দেখি দোকান বন্ধ হয়ে গেছে!
সেটাইতো হওয়া স্বাভাবিক।
মনে রাখবেন, প্রতিটা মানুষ আপনার পটেনশিয়াল (সম্ভাব্য) কাস্টমার। আজকে হয়তো তাঁর সামর্থ্য নাই - কিন্তু দশটা বছর পরে হলেও সে হয়তো আপনার দোকান থেকে মাল কিনবে। কারোর সাথেই দুর্ব্যবহার করবেন না। কারোর বাহ্যিক পোশাক আশাক দেখেতো অবশ্যই নয়।
তো যাই হোক, মূল টপিকে ফেরা যাক।
বিশ্বের সবচেয়ে বড় রিটেইল শপ ওয়ালমার্টের প্রতিষ্ঠাতা স্যাম ওয়াল্টন বিশ্বাস করতেন "কাস্টমার হচ্ছে এক নম্বর বস।"
অ্যামেরিকায় বিশ্বাস করা হয়, কাস্টমার ইজ অলওয়েজ রাইট।
কাস্টমারের অভিযোগ শোনার সাথে সাথে - সত্য হোক কী মিথ্যা সেটা পরে বিবেচনা করলেও চলবে, আগে সাথে সাথে মাফ চেয়ে নিন। "আপনার সাময়িক অসুবিধার জন্য আমরা আন্তরিকভাবে দুঃখিত। দেখি আমরা কী করতে পারি" বলে আগে কাস্টমারকে শান্ত করুন। যদি তর্ক করে কাস্টমারকে আরও খেপিয়ে তুলেন, তাহলেই সেরেছে।
নিরপেক্ষ তদন্ত করে দেখুন দোষ কার। নিজের দোষ হলে সাথে সাথে আবারও ক্ষমা চেয়ে নিন। উপরের কেসে যেমন, আমি যদি দোকানির অভদ্রতায় ক্ষিপ্ত হয়ে অভিযোগ করতাম, তাহলে আপনি মালিক হলে সাথে সাথে দোকানিকে মোটামুটি বকাঝকা দিয়ে ক্ষমা চাইয়ে আমার সামনে থেকে বিদায় করবেন। তারপর নিজে ডিলটার দায়িত্ব নিবেন। পারলে আমাকে স্পেশাল ডিসকাউন্ট ফিসকাউন্ট দেয়ার চেষ্টা নিবেন। নিশ্চিত করবেন আমাকে যেন কষ্ট করে প্রতিবার দেশে যাবার পর ফাজলামি করতে সেই দোকানে ফেরত আসতে না হয়।
কাস্টমারের মন জয়ের সর্বোচ্চ চেষ্টা করুন। কোন অবস্থাতেই তাঁকে বিক্ষিপ্ত মন নিয়ে দোকান থেকে যেতে দিবেন না। দরকার হলে দোকানের পক্ষ থেকে কমপ্লিমেন্টারি গিফট দিন। চা কফি খাওয়ান। বারবার আশ্বাস দিন এমন আর কখনই হবেনা।
এবং দোষ যদি কাস্টমারের হয়, যেমন সে বুঝতে ভুল করেছিল, বা অযাচিত ডিস্কাউন্ট দাবি করছে - তাহলে যথাসম্ভব নরম স্বরে, গলায় মধু ঢেলে তাঁকে বুঝান যে কোন অবস্থাতেই আপনার পক্ষে ওটা করা সম্ভব না যা সে দাবি করছে। খেয়াল রাখবেন, কোন অবস্থাতেই বলবেন না যে "আপনি অন্যায় দাবি করছেন," বা "আপনি ভুল" বা "অন্য কোথাও দেখেন, এখন বিদায় হন।"
বরং বলুন, "আমি আপনার পয়েন্ট বুঝতে পারছি, কিন্তু আমাদের পলিসি হচ্ছে...."
তারপরেও চা কফি খাওয়ান, ফুচকা খাওয়ান এবং তাঁকে সাহায্য করতে না পারার জন্য আবারও মাফ চেয়ে নিন।
আমাদের ডালাসে একটা রেস্টুরেন্টে মারাত্মক বীফ বিরানি বানায়। একদম বাংলাদেশি স্টাইলের বিরানি। আমি একটা সময়ে প্রতিদিন বিরানি খেতাম।
এরপর তারা তেহারি বানানো শুরু করলো। স্বাভাবিকভাবেই তেহারি থেকে বিরানি বেশি চলে। তো বিরানি কিনতে গেলে আমাকে তেহারি খাওয়ানোর চেষ্টা করে। আমি অতি বিনয়ের সাথে না করি।
একদিন মালিক আমাকে ধরলো। সে তেহারিই খাওয়াবে। আমার মেজাজ গেল খারাপ হয়ে। আমি তেহারি খাবো না, তুমি ব্যাটা জোর করে তেহারি খাওয়াবার কে? বললাম, "বিরানি না থাকলে থাক। পরে এসে নেব।"
মালিক বলল, আরে না, "আছে। তেহারি ভাল হয়তো, তাই খেতে বলছিলাম।"
আমি টু গো (পার্সেল) অর্ডার নিয়ে এসে দেখি ব্যাটা তেহারি ধরিয়ে দিয়েছে। ফোনে বললাম, পরেরবার এমন করলে আমি কিন্তু আর জীবনেও আসবো না।
ক্ষমা টমা চেয়ে বলল আর হবেনা।
কয়েক সপ্তাহ পরে আবারও একই কাহিনী।
এইবার খেপে গিয়ে বললাম এই শেষবারের মতন বলছি, আরেকবার হলে আমি আর নাই।
তৃতীয়বার আমার বৌয়ের ক্ষেত্রে ঘটালো। সে ফোনে বিরক্ত হয়ে বলল, "আমাকে তেহারি কেন দেয়া হলো?"
কর্মচারীর উত্তর, "তেহারীই বিরানি, বিরানিই তেহারি। আপনি জানেন না।"
ব্যস! খেল খতম।
৩. নিজের কর্মচারীদের সম্মান করুন। তাঁরা আপনার কেনা গোলাম নয়। তাঁদের আপনি বেতন দেন, এবং বিনিময়ে তাঁরাও আপনার হয়ে কাজ করে। Give and take সম্পর্ক। কেউ কারোর চেয়ে বড় নয়। এমনকি যে চাপরাশি, আপনার টেবিল বা অফিস বাথরুম পরিষ্কার করে - সেও আপনার অফিসের একজন অ্যাসেট। তাঁদের মানুষ বলে গণ্য করুন। দিনে একবার হলেও তাঁদের খোঁজ খবর নিন। জিজ্ঞেস করুন পরিবার কেমন চলছে। কাজকর্ম কেমন যাচ্ছে। ওদের সম্মান করলে ওরাও আপনার জন্য জীবন দিয়ে দিবে। পরিশ্রমী কর্মচারীরা খোঁড়াতে থাকা ব্যবসায়ও দৌড়বিদ বানিয়ে দেয়।
৪. যেহেতু ব্যবসাই আপনার ব্ৰেড এন্ড বাটার, কাজেই ব্যবসা নিয়েই পড়াশোনা করুন। দেখুন বিশ্বের বড় বড় কোন কোন প্রতিষ্ঠান কিভাবে দাঁড়িয়েছে। কী কী টেকনিক, কী কী স্ট্র্যাটেজি ফলো করে। সব বইয়ে পাওয়া যায়। তারপর চিন্তা করুন, আপনার ব্যবসায় কিভাবে সেটা কাজে লাগানো যায়।
আমি যেমন "ম্যানেজারিয়েল একাউন্টিংয়ের" একটি ছোট উদাহরণ দিব, যেহেতু আমি একাউন্ট্যান্ট।
ধরা যাক দুইটি দোকান পাশাপাশি অবস্থিত, এবং একই সাথে যাত্রা শুরু করেছে। একটির নাম "ইম্পেরিয়াল ফুড সেন্টার।" আরেকটার নাম "রয়েল ফাস্ট ফুড।"
এখন ইম্পেরিয়াল ফুড সেন্টার ব্যবসায়ের ক্ষেত্রে সহজ হিসাব নিকাশ করে। তাঁদের মালিক বেশি পরিশ্রম করতে চায়না। মাসের শুরুতে একটা হিসাব করেন, এবং মাসের শেষে তিনি আরেকটা হিসাব করে লাভ ক্ষতি নির্ণয় করেন। সব আয় এবং সব ব্যয়ের সরল হিসাব শেষে যখন তিনি দেখেন ব্যবসা লাভের মধ্যে আছে, তখন তিনি খুশি মনে বাড়িতে নিদ্রা যান।
রয়েলের মালিক আবার হিসাবের ক্ষেত্রে ম্যানেজারিয়েল একাউন্টিং ফলো করেন। তিনি প্রতিটা অ্যাসেটের হিসাব আলাদা আলাদা করে করেন। যেমন বার্গারের প্যাটির হিসাব আলাদা, বনের হিসাব আলাদা, সসের হিসাব আলাদা, ভেজিটেবলের হিসাব আলাদা। ইলেক্ট্রিসিটি-গ্যাস-কর্মচারী সবার আলাদা আলাদা একাউন্ট। এমনকি দিনকে তিনি বিভিন্ন ভাগে ভাগ করে সেটারও হিসাব তিনি আলাদা আলাদা করে নেন।
কাজেই মাসের শেষে তিনি জানেন কোন ক্ষেত্রে কত খরচ হচ্ছে, এবং কোন ক্ষেত্রে কত লাভ। যেমন, হিসাব অনুযায়ী সকাল নয়টা থেকে দশটা এবং দুপুর একটা থেকে বিকাল তিনটা এবং সন্ধ্যা ছয়টা থেকে রাত নয়টা পর্যন্ত তাঁর ব্যস্ত সময়। ঐ সময়ে কাস্টমারের ভিড় থাকে প্রচুর। কাজেই ঐ সময়ে তাঁর সব কর্মচারীকে কাজে থাকতে হবে। মাঝের ডাউন টাইমে কেউ ব্রেক নিতে চাইলে নিল, দোকান পরিষ্কার বা অন্যান্য কাজ করতে চাইলে করলো। আর যদি ঘন্টা হিসেবে পে করা হয় - তাহলে ঐ সময়ে সবাইকে কাজে না ডাকলেও চলবে।
তিনি সহজেই বুঝতে পারবেন কোন ধরণের বার্গার কাস্টমারের বেশি পছন্দ, কোনটা কম, কোনটা একদমই না। তাহলে সেই অনুযায়ী ব্যালেন্স করে আইটেম বাড়ানো কমানো বা ডিসকন্টিনিউ করা যাবে। তিনি বুঝতে পারবেন আরও আজাইরা খরচ কোথায় কোথায় হচ্ছে - তিনি সেগুলো কমিয়ে ব্যবসার লাভের দিকে বেশি ফোকাস করতে পারবেন। এমনকি তিনি এও জানেন সপ্তাহের কোন কোন দিন কোন কোন খাবার কত পরিমান বিক্রি হয়।
কী মনে হয়? কোন দোকান মালিককে দ্রুত সফল বানাবে?
ছোট স্কেলে উদাহরণ দিলাম। এখন এটিকেই বড় স্কেলের ব্যবসার ক্ষেত্রে কল্পনা করুন।
মার্কেটিং, ম্যানেজমেন্ট, একাউন্টিং, ফাইন্যান্স, হিউম্যান রিসোর্স সব আপনাকে পড়তে হবে। পড়ালেখার সবচেয়ে ভাল গুন হচ্ছে এর কোন পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া নেই।
৫. সততা। এর উপরে কিছু নেই। মানুষকে ঠোকানোর চিন্তা করলে জীবনেও বেশিদূর এগুতে পারবেন না। ফরমালিন দিয়ে মাছ, মাংস, ফল বিক্রি করে ফেলছেন, কেমিকেল দিয়ে বিষাক্ত খাবার খাইয়ে দিচ্ছেন - খুব বেশি হলে এক দুই বছর। তারপরে ধরা আপনাকে পড়তেই হবে। বরং সৎভাবে ব্যবসা চালিয়ে যান, মানুষ যখন বুঝবে আপনার প্রোডাক্ট ভাল, তখন নিজেরাই দলবল নিয়ে এসে আপনার কাছ থেকে জিনিস কিনবে। টাকা পয়সা উপার্জন নিয়ে আপনাকে ভাবতে হবেনা।
আমার পরিচিত একজন ব্যবসা শুরু করতে চায়। আমার কাছে আইডিয়া শেয়ার করছিল। আমি বলেছিলাম যেহেতু ক্যাপিটাল কম, এবং প্রথম ব্যবসায় নামছে, এবং অবশ্যই কম রিস্ক নিতে চায় - কাজেই সে যেন শিওর শট ব্যবসা করে। যেখানে লাভ কম হলেও ক্ষতি হবেনা। যেমন চালের ব্যবসা। বাঙালি ভাত খাবেই। বন্দুক পিস্তল কামান দিয়েও আমাদের ভাত খাওয়া ঠ্যাকানো যাবেনা। কাজেই তাঁর ব্যবসা চলবেই।
ভাইর চোখমুখ সাথে সাথে উজ্জ্বল হয়ে উঠলো।
"আরে বাহ্! দারুন আইডিয়া দিয়েছিসতো! এক বস্তা চালের মধ্যে এক কেজি পাথর আরামসে মিশায় দিতে পারবো। কেউ কিচ্ছু টের পাবেনা।"
কিংবা আরেকবার পত্রিকায় পড়েছি, দেশের রপ্তানিকৃত চিংড়ির ভিতর গজাল ভরে তাদের ওজন বাড়ানো হয়েছিল। ফলে আস্ত শিপমেন্ট বাতিল হয়ে গিয়েছিল।
আরেকবার আমাদের এক বড় ভাই ফেসবুকে ছবি দিলেন, দেশি রুই কিনতে গিয়ে তিনি পেটের ভিতর কাটা ব্যাটারি পেলেন। সামান্য কয়েক পাউন্ড ওজন বাড়াবার জন্য ব্যবসায়ীরা এই কাজটা করে।
দেখুন, ঠগাঠগি করে এক দুই ক্ষেত্রে পার পেয়ে যাবেন। তারপর লংটার্ম যে ধরাটা খাবেন, হায় হায় করেও তখন কূল কিনারা পাবেন না। এরচেয়ে ভাল এইসব ধান্ধাবাজি বন্ধ করুন। সৎ উপায়ে ব্যবসা করার চিন্তা করুন। আজকে কম লাভ করলেও আজীবন লাভের মধ্যেই থাকবেন। আজকে টাটা/মারুতি চালালেও আগামী দশ বছরে ঠিকই বিএমডব্লিউর মালিক হবেন।
কেবল মনে রাখবেন, আপনি যদি ক্রেতা হতেন, তাহলে আপনি বিক্রেতার কাছ থেকে কী আশা করতেন? সেটাই আপনার ক্রেতাদের দিন। ইন শা আল্লাহ, আপনার ব্যবসা দাঁড়িয়ে যাবে।
প্রশ্ন উঠতেই পারে, আমি কেন ব্যবসায়ী হলাম না?
দেখুন ভাই, চাকরি করতে গিয়েই চুলে পাক ধরিয়ে ফেলেছি। ব্যবসায় নামলে চুলই থাকতো না। এত পরিশ্রম, এত টেনশন আমাকে দিয়ে হবেনা।
২১ শে জুলাই, ২০১৭ ভোর ৪:১৪
মঞ্জুর চৌধুরী বলেছেন: ধন্যবাদ!
২| ২৫ শে জুলাই, ২০১৭ দুপুর ১:৫৬
প্লাবন২০০৩ বলেছেন: বাহ্, অসাধারণ লিখেছেন। সত্যিই এক কথায় অসাধারণ। এরকম আরও লেখা পাবার অপেক্ষায় থাকলাম।
২৫ শে জুলাই, ২০১৭ রাত ৯:০৫
মঞ্জুর চৌধুরী বলেছেন: থ্যাংক ইউ।
©somewhere in net ltd.
১| ২১ শে জুলাই, ২০১৭ রাত ৩:২২
আমি সাব্বির বলেছেন: Great writings