নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

মঞ্জুর চৌধুরী

আমি ঝন্ঝা, আমি ঘূর্ণি, আমি পথ-সমূখে যাহা পাই যাই চূর্ণি’। আমি নৃত্য-পাগল ছন্দ, আমি আপনার তালে নেচে যাই, আমি মুক্ত জীবনানন্দ। আমি হাম্বার, আমি ছায়ানট, আমি হিন্দোল, আমি চল-চঞ্চল, ঠমকি’ ছমকি’ পথে যেতে যেতে চকিতে চমকি’ ফিং দিয়া দিই তিন দোল; আমি চপলা-চপল হিন্দোল। আমি তাই করি ভাই যখন চাহে এ মন যা, করি শত্রুর সাথে গলাগলি, ধরি মৃত্যুর সাথে পান্জা, আমি উন্মাদ, আমি ঝন্ঝা! আমি মহামারী আমি ভীতি এ ধরিত্রীর; আমি শাসন-ত্রাসন, সংহার আমি উষ্ন চির-অধীর! বল বীর - আমি চির উন্নত শির!

মঞ্জুর চৌধুরী › বিস্তারিত পোস্টঃ

অপাত্রে যেন সেই দান না যায়

২৯ শে নভেম্বর, ২০১৭ রাত ১২:৫৭

দেশত্যাগী মানুষ প্রথমেই বিরাট অপরাধ বোধে ভোগে। নিজের দেশ থেকে, নিজের মা (দেশ মাতৃকার কথা বলছি, গর্ভধারিনী মা না), নিজের নাড়ি-শেকড় থেকে বিচ্ছিন্ন হওয়াটা মানব মস্তিষ্কের উপর তীব্র চাপ সৃষ্টি করে। তখন মানুষ দুই ধরনের আচরণ করে।
১. নিজেকে নির্দোষ প্রমানের জন্য সম্পূর্ণ দোষ অপর পক্ষের ঘাড়ে ঢালে।
"ঐ নরকে থাকার কোন উপায় আছে? পলিউশন, রাস্তাঘাটে ট্রাফিক জ্যাম, খাবারে ভেজাল, দুর্নীতি...উফ! সেদেশের ১০০% লোকই চোর! আমাদের ভাগ্য ভাল, আমরা সময়মতন চলে আসতে পেরেছি। আপনারাও চেষ্টা করুন ঐ নরক থেকে বেরিয়ে আসতে।"
২. অপরাধ পুষিয়ে দেবার জন্য জরিমানা প্রদান। মানে বিদেশে পার্মানেন্টলি থেকেও দেশের জন্য কিছু করা।
আমার অত্যন্ত সৌভাগ্য, আমি দ্বিতীয় ক্যাটাগরির মধ্যে পরে গেছি।
যেদিন প্রথম লস এঞ্জেলেসের মাটিতে পা দিয়েছিলাম, এই দেশের ঝকঝকে তকতকে রূপ দেখে প্রথমেই এর প্রেমে পরে গিয়েছিলাম। কোটি কোটি মানুষের অবস্থান এই দেশে, তারপরেও কোথাও কোন নোংরা আবর্জনা চোখে পরে না। বাতাসে ভাসেনা ডাস্টবিনের গন্ধ। রাস্তায় প্রচুর গাড়ি, কিন্তু তারপরেও কোথাও কোন বিশৃঙ্খলা নেই। একটা হর্নের শব্দ পর্যন্ত শোনা যায় না। ঢাকার রাস্তার কথাতো বাদই দিলাম, ছোট খাট শহরেও এই রূপ নেই।
এয়ারপোর্ট থেকে গাড়ি করে তখনও চাচার বাসায় পৌঁছিনি, তখনই মাথায় চিন্তা আসলো ওরা কি এমন ঘোড়ার আণ্ডাটা করছে যা আমরা করতে পারছি না।
উত্তর পেলাম সাথে সাথেই। নো পার্কিং লেখা স্থানে পার্ক করার জন্য চাচা পুলিশের কাছ থেকে টিকিট পেয়ে গেছেন। কোনই উপায় নাই। কোর্টে গিয়ে জরিমানা দিতে হবে। দেশ হলে অবশ্যই পাঁচ দশ টাকায় দফা রফা হতো। এই দেশের পুলিশ বা সরকারি কোন অফিসারকে ঘুষ সাধলে শ্রীঘরে রাত কাটানো নিশ্চিত।
বুঝে গেলাম, এই দেশ এ কারণেই এত সুন্দর কারন এরা সবাই আইনের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। যেখানে সেখানে ময়লা আবর্জনা ফেললে জরিমানা দুইশ থেকে শুরু করে দশ হাজার ডলার পর্যন্ত হয়ে থাকে। কার বুকে এত বড় কলিজা সে রাস্তায় চিপসের প্যাকেট ফেলে?
চিন্তা এলো আমাদের দেশকে কী এমন বানানো সম্ভব না? অবশ্যই সম্ভব। কিভাবে? সবাইকে সচেতন করে। কিভাবে সচেতন করা সম্ভব? লোকজনকে শিক্ষিত করে। মননশীল করে। আমরা বিশ্বাস করি, সৃষ্টিশীল কাজে যারা ব্যস্ত থাকেন, তাঁরা সাধারণত নিজের তাগিদেই ভাল মানুষ হয়ে থাকেন। সমাজের প্রতি তাঁদের একটি দায়বদ্ধতা জন্ম নেয়, তাঁরা চেষ্টা করেন নিজেদের বদলাতে, পরিবারের লোকজনদের বদলাতে এবং ধীরে ধীরে এভাবেই সমাজ বদলে যায়। এবং এভাবেই সেই ঘটনার প্রায় পাঁচ ছয় বছর পর ফেসবুকে জন্ম নিল ক্যানভাস নামের একটি গ্রূপ। যেখানে একদম স্কুল কলেজের ছাত্র ছাত্রী থেকে শুরু করে অতি সাধারণ গৃহিনী নারী পর্যন্ত সবার প্রতি আহ্বান করা হলো নিজের ভেতরের সৃষ্টিশীলতার আগুনে হাওয়া দিতে। দাউ দাউ করে জ্বলুক সে আগুন। ছড়িয়ে যাক দেশব্যাপী। হয়তো এক প্রজন্মে নয়, দুই তিন প্রজন্মের ব্যবধানে একদিন ঠিকই এই আগুনেই পুড়ে ছাই হবে যত সব বিশৃঙ্খলা। আমাদের দেশটি হবে সৃষ্টিশীল মানুষের দেশ। তখন আমাদের ঠ্যাকায় কার সাধ্যি?
এই গেল এক শাখার গল্প। এইবার আরেক শাখায় আসা যাক।
আমাদের দেশ হচ্ছে সমস্যার দেশ। পৃথিবীতে এমন কোন সমস্যা নেই যা আমাদের দেশে খুঁজলে পাওয়া যাবেনা। ক্ষুধা, দারিদ্র, অশিক্ষা, কুশিক্ষা, হানাহানি, রেষারেষি সব আছে আমাদের সাতান্ন হাজার বর্গমাইলের মধ্যেই। সব সমস্যার সমাধান আমরা একজন মানুষ এক নিমিষেই করে ফেলবো - সেটা একদমই সম্ভব না। তবে ভাগ করে করে করলে সেইসব সমাধান অবশ্যই সম্ভব। কেউ নিল শিক্ষার ভার, কেউ দেখলো দারিদ্র, কেউ চিকিৎসা। ফেয়ার এনাফ?
ধরা যাক, আমরা নিলাম দারিদ্রের। এবং আমার বিশ্বাস, গরিবকে দান করে দিলেই তাঁর দারিদ্র দূর হয়ে যাবেনা। আমি এক লাখ ক্যাশ টাকা কোন ফকিরকে দিয়ে দিলে প্রথমেই তার মাথা খারাপ হয়ে যাবে। এখানে ওখানে টাকা উড়িয়ে এক সপ্তাহের মধ্যেই সে আবারও রাস্তায় ফেরত এসে ভিক্ষা করবে। মানুষের দারিদ্রতা আসলে আর্থিক থেকেও বেশি মানসিক। আগে মানসিক দারিদ্রতা দূর করতে হবে। কিভাবে?
"আমার হয়তো টাকা পয়সা নেই, কিন্তু দুইটি হাত আছে, এবং সুস্থ একটি শরীর আছে। আমি প্রয়োজনে কুলিগিরি করেও টাকা কামাবো, তবু ভিক্ষা করবো না।" এই যার মানসিকতা, তাঁকে আমি মোটেও দরিদ্র বলবো না, সে আমাদের আরও কয়েক হাজার মানুষের চেয়ে ধনী। এই মানসিকতার লোকেরাই অন্ধ হবার পরেও পড়ালেখা করে, হাত পা না থাকার পরেও নিজের পথ ঠিকই খুঁজে নেয়। দেশ যদি এই মানসিকতার লোকে ভরে যায় - তাহলেও দারিদ্রতা দূর হয়ে যাবে। কিছু করতে হলে এদের জন্য করুন। দেশ পাল্টে যাবে।
একটি ইসলামিক উদাহরণ দেই। কোন এক সাহাবী বা কোন স্কলারের সাথে ঘটেছিল ঘটনাটি। ভুলে গেছি। তবে গল্পটা ইন্টারেস্টিং, এবং প্রাসঙ্গিক। নিজের ভাষায় লিখছি।
এই ফকির এসেছে তাঁর কাছে ভিক্ষা চাইতে। তিনি বললেন, "তোমাকে এক লাখ টাকা দেব, তোমার চোখ আমাকে দিয়ে দাও।"
ফকির বললো, "অসম্ভব!"
তিনি বললেন, "তোমাকে তিন লাখ টাকা দেব প্রতিটা হাতের জন্য, দিয়ে দাও।"
ফকির এইবারও বলল, "অসম্ভব!"
তিনি বললেন, "ঠিক আছে, তোমাকে পাঁচ লাখ টাকা দেব, তোমার প্রাণটা আমাকে দিয়ে দাও।"
ফকির রেগে বলল, "ফাজলামি করেন?"
তিনি বললেন, "ফাজলামিতো তুমি করছো আমার সাথে। মিলিওনেয়ার হয়ে ঘুরছো, এদিকে আমার কাছে এসেছো ভিক্ষা চাইতে।"
আমার বাবা আমাদের গ্রামের এক ছেলের শিক্ষার ভার নিয়েছিলেন। স্কুল, কলেজ পড়াশোনা শেষ করে সে ব্যাচেলর্স পাশ করে ফেলল। সেই সময়ে বাবা মারা গেলেন। ছেলেটি এসে ঘ্যান ঘ্যান শুরু করলো তাকে মাস্টার্স পড়ার জন্য টাকা দিতে। তার বোনেরা অন্যের বাড়ির পুকুর ঘাটে গিয়ে গোসল করে, তার বাড়িতে টিউবয়েল দিতে। তার বাড়ির চালে ফুটা দিয়ে পানি পরে, নতুন চাল দিতে। যখন বলা হলো ব্যাচেলর্স পাশ করেছো, চাকরি নাও - তখন শুরু করলো তাকে চাকরি খুঁজে দিতে।
আমি দীর্ঘশ্বাস ফেলে উপলব্ধি করলাম, সেটি ছিল আমার পিতার রং ইনভেস্টমেন্ট।
আবার আরেকটি ছেলেকে চিনতাম। যে বাজারের ফুটপাথে সানগ্লাস বিক্রির ব্যবসা করতো। দুর্দান্ত সেলস স্কিলের এই ছেলেটিকে আব্বু একটি দেশি ওষুধ কোম্পানিতে চাকরি পাইয়ে দেয়ার কয়েক মাসের মধ্যেই সে নিজেকে প্রমান করে দেখালো। এখন অনেকদিন তাঁর কোন খোঁজ জানিনা। কিন্তু শেষবার যখন দেখেছিলাম, তাঁর জীবন মোটামুটি সেট হয়ে গেছে। একটা হালকা ধাক্কার দরকার ছিল, বাকিটা সেই স্টার্ট নিয়েছে।
মানুষের উপকার করুন। যেভাবে পারেন সেভাবে এগিয়ে আসুন। ক্যাশ সাহায্য পারছেন না দিতে, তাহলে এমন কিছু করুন যাতে অন্য কেউ তাঁর জন্য ক্যাশ সাহায্য নিয়ে এগিয়ে আসে।
সাথে এও খেয়াল রাখুন, অপাত্রে যেন সেই দান না যায়। হয়তো আপনার সামান্য সাহায্যে একজনের জীবন পাল্টে যেত, কিন্তু আপনি অপাত্রে সেই সাহায্য প্রদান করায় আসল লোকটি বঞ্চিত হলেন।
আজকে এখন আপাতত দেশের একটি সংগঠনের নাম বলছি যেখানে আমি তারেক রনিয়া তানভীর ভাই সহ ক্যানভাসের অনেকেই যুক্ত আছেন। রায়ের বাজার বস্তির মানুষদের নিয়ে কাজ করা সংগঠন স্পৃহা। নিজ চোখে গিয়ে দেখে আসুন ওদের কর্মকান্ড। দেখবেন আপনার দান করা একেকটি টাকা কিভাবে মানুষের জীবন পাল্টে দিচ্ছে।

বাংলাদেশ থেকে সাহায্য পাঠাতে ব্যবহার করুন:
bKash Merchant Wallet 01708405999
(please note that it is a Merchant account and not personal account)
Bank Name: Dutch Bangla Bank Limited
Branch: Ring road Branch
Account Name: Spreeha Bangladesh Foundation-General
A/C no: 148.110.24555
https://www.facebook.com/donate/1799651553666427/

মন্তব্য ৪ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (৪) মন্তব্য লিখুন

১| ২৯ শে নভেম্বর, ২০১৭ রাত ১:০৪

শাহিন-৯৯ বলেছেন: সুশিক্ষা ছাড়া কোনভাবেই এই জাতিরে মানুষ করা যাবে না।

০২ রা ডিসেম্বর, ২০১৭ রাত ১২:৫০

মঞ্জুর চৌধুরী বলেছেন: ঠিক ভাই

২| ২৯ শে নভেম্বর, ২০১৭ সকাল ৯:৪৪

রাজীব নুর বলেছেন: আপনি ঠিকই বলেছেন- আপনি ঠিকই বলেছেন-

০২ রা ডিসেম্বর, ২০১৭ রাত ১২:৫০

মঞ্জুর চৌধুরী বলেছেন: ধন্যবাদ

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.