নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
আমি ঝন্ঝা, আমি ঘূর্ণি, আমি পথ-সমূখে যাহা পাই যাই চূর্ণি’। আমি নৃত্য-পাগল ছন্দ, আমি আপনার তালে নেচে যাই, আমি মুক্ত জীবনানন্দ। আমি হাম্বার, আমি ছায়ানট, আমি হিন্দোল, আমি চল-চঞ্চল, ঠমকি’ ছমকি’ পথে যেতে যেতে চকিতে চমকি’ ফিং দিয়া দিই তিন দোল; আমি চপলা-চপল হিন্দোল। আমি তাই করি ভাই যখন চাহে এ মন যা, করি শত্রুর সাথে গলাগলি, ধরি মৃত্যুর সাথে পান্জা, আমি উন্মাদ, আমি ঝন্ঝা! আমি মহামারী আমি ভীতি এ ধরিত্রীর; আমি শাসন-ত্রাসন, সংহার আমি উষ্ন চির-অধীর! বল বীর - আমি চির উন্নত শির!
আমাদের দেশের অবস্থা যেন এমন, ফুটবলের সাথে আমাদের বাল্যপ্রেম ছিল, এবং ক্রিকেটের সাথে আমাদের এরেঞ্জড ম্যারেজ হয়েছে। নাহলে দেখুন, বিশ্বকাপ ফুটবল নিয়ে আমাদের যে উন্মাদনা, ক্রিকেটে আমাদের নিজেদের দল খেলার পরেও উন্মাদনার ছিটে ফোটাও ম্যাচ করেনা। নাহলে ক্রিকেট বিশ্বকাপে কখনও দেখেছেন মাইল খানেক লম্বা জাতীয় পতাকা হাতে মিছিল বেরোতে? বাড়ির ছাদে ছাদে, গাড়িতে, এমনকি রিক্সায়ও পতাকা উড়তে?
সেই আশির দশকের একদম শেষের দিকে ৯০ বিশ্বকাপের ফাইনালের স্মৃতি হালকা হালকা মনে আছে। ম্যারাডোনার আর্জেন্টিনা যখন জার্মানির সাথে খেলায় একদম শেষ মুহূর্তে পেনাল্টি খেল। হায়রে খেলোয়াড়রাতো খেলোয়াড়, বাংলাদেশের দর্শকরা পর্যন্ত ক্রোধে ফেটে পড়লেন। সেই গভীর রাতেই মিছিল বেরোলো রাস্তায়, "আর্জেন্টিনাকে চ্যাম্পিয়ন, দিতে হবে দিতে হবে।"
"চোর রেফারির ফাঁসি চাই! ফাঁসি চাই, ফাঁসি চাই!"
পাড়ায় পাড়ায় কমিটি গঠন হলো। ফিফার কাছে পিটিশন পাঠানো হবে, আর্জেন্টিনাকে চ্যাম্পিয়ন ঘোষণা করতে হবে।
ক্রিকেট বিশ্বকাপে আমাদের নিজেদের দলের ভারতের কাছে হারে (রোহিত শর্মার নো বল এবং মাহমুদুল্লাহর বাউন্ডারিতে ক্যাচ) আম্পায়ারের জোচ্চুরি নিয়ে কয়টা মিছিল বেরিয়েছিল?
বয়স কম ছিল, সবে মাত্র ছয় হয়েছে, তখন এইসবের কিছুই বুঝিনা। শুধু স্মৃতিতে রেখে দিয়েছিলাম। বড় হবার পরে যখন বুঝলাম, মনে মনে বললাম "খাইছে রে!"
জ্বি, বাংলাদেশের মানুষ আসলেই উরাধুরা ভক্ত। আমরা যখন বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ি, তখন বিশ্বকাপ ফুটবল উপলক্ষে সংঘর্ষ এড়াতে দেশের সর্বোচ্চ বিদ্যাপীঠ বুয়েট বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছিল। মনে মনে বললাম, সিরিয়াসলি???? কতটা পাগল হলে পোলাপান অন্য দেশের জন্য নিজের ভাই ব্রাদারদের সাথে মারামারি ভাংচুর করে?
সাধারণ ট্রলিং পর্যন্ত ঠিক আছে। কিন্তু মারধর, আত্মহত্যা, ক্ষেত্রবিশেষে হত্যা এইসব কী ফাইজলামি? মনে আছে নব্বইয়ের দশকের এইরকমই খবর পেতাম নিয়মিত। পোলাপান ট্রলিং করছিল, খেপে গিয়ে কিছু একটা ছুড়ে মেরেছে, মাথায় আঘাত, এবং মৃত্যু!
আমি মূলত ব্রাজিলের সাপোর্টার। বাপ পছন্দ করতেন বলেই নয়, ৯৪ বিশ্বকাপে, যখন মোটামুটি খেলা বুঝতে শুরু করেছি, তখন দেখলাম এই একটা দল দুর্দান্ত খেলে (রোমারিও)। ওমা, ৯৮তেও দেখি এই দল দুর্দান্ত খেলে (রোনালদো), আর ২০০২ সালের কথাতো বাদই দিলাম। ঐ দলের ধারে কাছে দাঁড়াবার যোগ্যতা কারোর ছিল না। রোনালদো, রোনালদিনিও, রিভালদো, কার্লোস, কাফু.....। কোথায় যেন শুনেছিলাম বিশ্বের সর্বকালের সর্বসেরা ফুটবল দল ছিল ২০০২ বিশ্বকাপের এই দলটি।
কিন্তু টু বি অনেস্ট, এর পরের প্রতিটা বিশ্বকাপে ব্রাজিল বাজে খেলেছে। নিজেদের যে স্বকীয়তা, সাম্বা নাচের মতন জিঙ্গা ফুটবল, সেটাই অনুপস্থিত ছিল। এবং এর ফল পরপর সবকটা বিশ্বকাপেই অকাল প্রয়াণ।
আশা করি ব্রাজিল নিজেদের স্বকীয়তা এই বিশ্বকাপে ফিরিয়ে আনবে। ফিফা ranking এ বিশ্বের দ্বিতীয় সেরা দল তাঁরা, একটু আশাতো জাগতেই পারে।
ট্রলিং নিয়ে একটা ঘটনা বলে দেই চট করে।
আমার ছোটমামা উরাধুরা ব্রাজিল ফ্যান। সে বলতো, "আর্জেন্টিনার সাপোর্টার সব দেখবি রিকশাওয়ালা। চিনে খালি এক ম্যারাডোনাকে, ঐ ম্যারাডোনা নিয়েই ফাল পাড়ে।"
তখনও মেসির আগমন সেইরকম সাড়া জাগায়নি। রোনালদিনিও তখন দুনিয়া কাঁপিয়ে বেড়াচ্ছে।
তো ২০০৬ বিশ্বকাপে গানার সাথে খেলার সময়ে আমার বোন রীতিমতন ছোটলোকের মতন টিভি রিমোট নিয়ে হিন্দি সিরিয়াল দেখতে শুরু করলো। আমি আর ঝামেলা বাড়ালাম না। রাস্তায় নেমে গেলাম। কোন একটা টিভি শোরুমের বাইরে দাঁড়িয়ে গেলেই চলবে।
প্রিয় খেলোয়াড় রোনালদো যদি গোল স্কোর করতে পারে তাহলে সেটি বিশ্বকাপের ইতিহাসে নতুন রেকর্ড হবে। এবং দেখা গেল কয়েক মিনিটের মধ্যেই রোনালদো সেটা করেও ফেললেন। আমি আনন্দে হাতে তালি বাজাতে যাব, অমনি দেখি আমার সহদর্শকগণ একসাথে গালি দিয়ে উঠলেন। একদম রোনালদোর আম্মা, বোন, দাদি, নানী সবাইকে টেনে আনা সব গালি। আশেপাশে তাকিয়ে দেখি সব রিক্সাওয়ালা নিজের রিকশা ফুটপাথে পার্ক করে আমার সাথে খেলা দেখছেন। এরপর চুপচাপ খেলা হজম করে বাড়ি ফিরে এলাম। ছোট মামা ঘটনা শুনে খুব মজা পেলেন। দাঁত কেলিয়ে বললাম, "বলছিলাম না?"
অবশ্য এই ঘটনা কিছুই প্রমান করেনা।
আমার খালু, আমার আরও বন্ধুবান্ধব আছেন যারা আর্জেন্টিনার সমর্থক।
যাই হোক, মজা পেয়েছিলাম যেদিন আর্জেন্টিনা বাদ গিয়েছিল সেদিন মামার আচরণে। আর্জেন্টাইন কাউকে কাছেই ভিড়তে দেয় না। "দূর হ, শালা হারু পার্টি!"
এবং পরদিনই ব্রাজিলও বাদ পরে গিয়েছিল। আমার দৃঢ় বিশ্বাস ছিল আর্জেন্টাইনদের বদদোয়াতাই এই কান্ড হয়েছিল। হাহাহা।
ওদের মতন জিদানের সমর্থন বোধয় জিদানের বৌও কখনও করেনি।
দোয়া বদদোয়ার এই সংস্কৃতি আবহমান কাল ধরেই চলে আসছে। তাইতো দেখা যাচ্ছে কাপ কখনও ইতালি যাচ্ছে, তো কখনও স্পেন, তো কখনও জার্মানি।
আমরা নিজেরা নিজেরা মারামারি করেই সারা।
ভাল কথা, জার্মানির খেলাও কিন্তু আমার দারুন লাগে। যেকোন টুর্নামেন্টে ওদের জন্য সেমিফাইনালের জায়গাটা খালি করে বাকি তিন স্পটের জন্য বাকিরা খেললেই পারে। সেমিফাইনাল পর্যন্ত ওরা যাবে এইটা নিশ্চিত। তারপর কাপ জিতলে জিতলো, না জিতলে পরের ব্যাপার।
আর্জেন্টিনার একটা ব্যাপার আমি সত্যিই অবাক হই। ওরা কিন্তু সব টুর্নামেন্টেই অতিরিক্ত শক্তিশালী দল নিয়ে আসে। তারপর ভৌতিক কিছু একটা ঘটে যে কারনে তাঁরা নকআউট পর্বে বিদায় হয়ে যায়। (গতবারই ফাইনালে যেতে পেরেছিল, অনেক দিন পরে। এবং পুরোটাই একা মেসির কৃতিত্ব।) এখানে কী আসলেই বাঙালি ব্রাজিলিয়ানদের দোয়া-বদদোয়া জড়িত? ভূত এফ এম এবং ভৌতিস্ট দলকে তদন্তে পাঠাতে হবে।
বিশ্বকাপ এবং ব্রাজিলের যখন কথা উঠলোই, তখন সংক্ষেপে একটি গল্প শোনাই। বুঝতে পারবেন, কেন বিশ্বজুড়ে ব্রাজিলের এত কোটি কোটি সমর্থক।
বিশ্বকাপ ফাইনালে ব্রাজিল নিজেদের মাটিতে লাখো দর্শকের সামনে মুখ থুবড়ে পড়লো। একদম শেষ মুহূর্তের গোল হজমে কোটি কোটি মানুষের স্বপ্ন ভেঙে গেল। পুরো ব্রাজিল সেদিন কেঁদেছিল। একটি নয় বছরের শিশু সেদিন নিজের বাবাকে কাঁদতে দেখে বলেছিল, "আমি তোমার জন্য বিশ্বকাপ জয় করবো।"
ডিকো নামের ছেলেটি ছিল ফুটবলের উন্মাদ। বস্তির ছেলেদের সাথে কাপড় মুড়িয়ে বানানো ফুটবল নিয়ে তাঁরা "নো ড্রপ" (বল মাটিতে পড়বে না, শূন্যে থাকতে থাকতেই গোল করতে হবে) খেলা প্র্যাকটিস করে। বাড়িতে ফুটবলের ব্যাপারে মায়ের কড়া নিষেধাজ্ঞা। বাবা ছিলেন দারুন ফুটবলার, কিন্তু হাঁটুর ইনজুরি তাঁর ক্যারিয়ার শেষ করে দিয়েছিল। এবং এখন তিনি হাসপাতালে জেনেটরি (মেথর) করে বেড়ান। মায়ের বিশ্বাস, ফুটবলে কোন ভবিষ্যৎ নেই। পড়ালেখা না করলে সারাজীবনই গরিব থেকে যেতে হয়।
মা ঠিকা ঝিঁয়ের কাজ করেন। একদিন মায়ের সাথে এক ধনীর বাড়িতে সে গেল। সেখানে তাঁর সমবয়সী কিছু ধনীর দুলাল ফুটবল নিয়ে কথাবার্তা বলছিল। তাঁদের হাতে একটি ফুটবল টুর্নামেন্টের বিজ্ঞাপন, সান্তোস ক্লাবের কিংবদন্তি খেলোয়াড় আসবেন ট্যালেন্ট বাছাই করতে। তাঁরা সেই টুর্নামেন্টে অবশ্যই খেলবে। একজন বলছিল আমি অমুকের মতন হবো, আরেকজন বলছিল আমি তমুকের মতন হবো, তো ডিকো উত্তেজিত হয়ে বলল, "আমি পেলের মতন হবো!"
ছেলেরা অবাক হয়ে বলে, "পেলেটা আবার কে?"
ডিকো বলে, "অমুক দলের গোলকিপার।"
ওরা হেসে উড়িয়ে দিয়ে বলে, "আরে গাধা, ওর নাম বিলে। হাহাহা। আচ্ছা, ঠিকাছে, আমরা তোকে এখন থেকে পেলে ডাকবো। পে এ এ এ লে। হাহাহাহা।"
সবাই মজা নিচ্ছে দেখে ডিকোর মেজাজ খারাপ হয়ে গেল। সে মারামারি শুরু করে দিল। এই সময়ে তাঁর মা দৌড়ে এসে নিজের ছেলেকে সামলে নেন। কথা দেন এই ছেলে কখনই এই বাড়িতে পা দিবেনা।
যাবার সময়ে ডিকো টেবিল থেকে বিজ্ঞাপনটা নিতে ভুলল না।
নিজের বস্তির বন্ধুবান্ধব নিয়ে তাঁরা টুর্নামেন্টে নাম লেখায়। এই প্রথম তাঁরা আসল ফুটবলে ফুটবল খেলে, হাওয়া থাকায় বল শূন্যে ভাসে বেশি, গতিও বেশি। কিন্তু আশ্চর্য্য, তাঁরা অন্যান্য সব দলকে হারিয়ে ফাইনালে উঠেও গেল।
ফাইনালে তাঁদের প্রতিপক্ষ ঐ ধনীর দুলালদের টিম। ওরা ইতিমধ্যেই হাসি টিটকারি করে ওদের মোরাল ভেঙে দিয়েছে। ওদের টিটকারিতে বিরক্ত হয়ে পুরো টুর্নামেন্ট খালি পায়ে খেলে জিতে আসা ডিকোর দল ফাইনালে ওভার সাইজ বাতিল বুট পরে খেলতে নামে এবং ছয় শূন্য গোলে পিছিয়ে পরে। এদিকে ডিকোকে পেলে বললে যে খেপে এই বিষয়টাও তারা ভালই ব্যবহার করেছে। দর্শক, ভাষ্যকার সবাই ওকে পেলে বলে সম্বোধন করে, ও উত্তেজিত হয়ে উঠে, এবং যার ফল সে আরও খারাপ খেলে।
ছয় গোলে পিছিয়ে পরার পর তাঁর বাবার কথা মনে হয়, যিনি বলেছিলেন, "পুরো পৃথিবী যদি হাসাহাসিও করে, তবুও তুমি যা তাই থাকার চেষ্টা করবে।"
সে নিজের জুতা ছুড়ে ফেলে। এবং শুরু করে সাম্বা। দশ মিনিটের মধ্যে পাঁচটা গোল দিয়ে খেলায় উত্তেজনা ফিরিয়ে আনে। রেফারি শেষ বাঁশি বাজিয়ে দিলেও গ্যালারি ভর্তি দর্শক তখন পেলে পেলে রব তুলেছে। সান্তোসের সেই বিখ্যাত কিংবদন্তি ডিকোর বাবাকে নিজের কার্ড দিয়ে দেন।
এরপর ঘটনা নানান মোড় নেয়। ডিকো ফুটবল খেলা ছেড়ে দিয়ে বাবার সাথে হাসপাতালে রোগীর কমোড পরিষ্কার করতে শুরু করে। এবং তারপর কাহিনীর মার প্যাঁচে সে সান্তোসের দলে নাম লেখায়, এবং ব্যর্থ হতে হতে এক সময়ে সফল হয়ে মাত্র ষোল-সতেরো বছর বয়সে জাতীয় দলের হয়ে বিশ্বকাপ খেলতে ইউরোপে যায়।
পুরো টুর্নামেন্টে ব্রাজিল তখন আন্ডারডগ। কোয়ালিফাই করারই কথা ছিল না, ভাগ্যগুনে সুযোগ পেয়েছিল তাঁরা। এরমধ্যে প্র্যাকটিসের সময়ে ডিকো ইনজুরড হয়ে যায়, কোচ তাঁকে দেখতে পারেনা। কারন তিনি স্পষ্ট নিষেধ করে দিয়েছিলেন কোন অবস্থাতেই "জিঙ্গা" স্টাইলে খেলা চলবে না। এই জিঙ্গার জন্য ব্রাজিল ৫০ এ বিশ্বকাপ হেরেছে, ৫৪ তে সেমিফাইনালেরও আগে বিদায় নিয়েছে। সাংবাদিক, দর্শক সবাই জিঙ্গা স্টাইলকেই দুষছেন, এবং জিঙ্গা স্টাইলে খেলা খেলোয়াড়রা তখন ভয়াবহ ভিলেন। তাঁরা চান ইউরোপিয়ান স্টাইলে খেলতে। ওটাই আসল ফুটবল, এবং ওভাবে খেলেই সফলতা আসে।
ব্রাজিল মাঠে নামে, এবং রোবটের মতন খেলে খেলে কোন রকমে জিতে বা ড্র করে সামনে এগিয়ে যায়।
এদিকে দলের প্রধান প্রধান খেলোয়াড়রা ইনজুরড হওয়ায় ডিকো (এডসন নাসিমেন্তো) সুস্থ হবার আগেই দলে সুযোগ পেয়ে যায়। প্রথম ম্যাচটিতে সে তেমন কিছুই করতে পারেনা। ফ্রান্সের সাথে সেমিফাইনালে প্রথম ভাগেও ১-১ এ সমতা নিয়ে দল ড্রেসিংরুমে যায়। ডিকোর মন খারাপ, সে তাঁর সহখেলোয়াড়কে (ঐ ধনীর দুলাল, যে ওকে "পেলে" নাম দিয়েছিল, সেও তখন জাতীয় দলের খেলোয়াড়) বলে তুমিই বরং আমার হয়ে খেলে ফেলো। আমি তোমার মতন খেলতে পারিনা।
এইবার সেই ভিলেন নিজের চরিত্র বদল করলো। সেই ডিকোকে বুঝিয়ে দিল দুনিয়া যাই বলুক না কেন, ব্রাজিলিয়ানরা জিঙ্গা ছাড়া খেলতে পারবে না। এই মুহূর্তে জিততে হলে জিঙ্গার বিকল্প নেই।
ডিকো, যে ইতিমধ্যেই পেলে নামে পরিচিত হয়ে গেছে, এবং সবাই এই নামেই তাঁকে ডাকাডাকি করে হাসি তামাশা করে, দ্বিতীয় ভাগে এসে খেলা দেখিয়ে দিল। নিজে হ্যাট্রিক করলো এবং ফ্রান্সকে উড়িয়ে দিয়ে (৫-১) ফাইনালে দলকে নিয়ে গেল।
কোচ খুবই বিরক্ত হলেন তাঁর এই জিঙ্গা স্টাইলের ফুটবলে। ফাইনালের প্রস্তুতি হিসেবে কড়া ধমক দিলেন অবশ্যই দলকে ইউরোপিয়ান স্টাইলে খেলতে হবে। কারন ফাইনালের প্রতিপক্ষ স্বাগতিক সুইডেন দারুন দারুন স্ট্র্যাটেজি এপ্লাই করে জিতেই চলেছে। ওদের ঠ্যাকাতে হলে অবশ্যই ডিসিপ্লিন্ড থাকতে হবে। এইসব জংলী জিঙ্গা ফিঙ্গায় কিছু হবেনা।
হেভিলি আন্ডারডগ ব্রাজিল মনমরা হয়ে ব্রেকফাস্ট করছিল। এই সময়ে ডিকো তাঁদের নিয়ে "নো ড্রপ" খেলা খেলে। এবং কোচ এই প্রথমবারের মতন তাঁর দলকে এত প্রাণবন্ত অবস্থায় দেখেন। তিনি ড্রেসিং রুমে নির্দেষ দেন, "এতদিন যা শিখিয়েছি, সব ভুলে যাও। আমরা আমাদের মতোই খেলবো। ফল যা হবার হোক।"
ফাইনালে মহাপরাক্রমশালী সুইডিশরা প্রথম চার মিনিটেই গোল দিয়ে দেয়। সবাই তখন হিসেব কষছে ব্রাজিলকে কত বড় ব্যবধানে ওরা হারাবে। এবং তারপরই শুরু হলো ব্রাজিলের সাম্বা নৃত্য। গ্যারিঞ্চা, পেলে, ভাভা, মারিও জাগালো, দিদিরা একদম হেসে খেলে সুইডেনের জালে পাঁচ গোল ভরে প্রথমবারের মতন জুলে রিমে ট্রফি জিতে নেয়।
পেলের নিজের ভাষায়, "রেফারির শেষ বাঁশি শোনার পর আমি মাঠে অজ্ঞান হয়ে গিয়েছিলাম। যখন চোখ খুললাম, সবকিছু স্বপ্নের মতন মনে হচ্ছিল।.....আমার বাবা মা আমাকে স্বাগত জানাতে এসেছিলেন, এবং বাবা আট বছর আগে আমার প্রতিজ্ঞার কথা মনে করিয়ে দিয়েছিলেন, 'একদিন আমি তাঁর জন্য বিশ্বকাপ জিতবো।'"
ব্রাজিলের জিঙ্গা স্টাইলই এক সময়ে নাম পায়, "দ্য মোস্ট বিউটিফুল গেম!"
এরপরই পেলে আসল কথা বলেন, "It was our difference that made us beautiful."
ব্রাজিলের এই জিঙ্গা স্টাইল ফুটবলই তাঁদের বিশ্বব্যাপী জনপ্রিয় করে তোলে। দলটি অমর হয়ে যায়। পেলে এরপর আরও দুইটা বিশ্বকাপ নিজের ঘরে তোলে। কিন্তু তিনি কখনই আটান্ন বিশ্বকাপকে ভুলতে পারবেন না। সেই টুর্নামেন্টই এডিসন নাসিমেন্তো ডিকোকে "পেলে" বানিয়েছিল।
ব্রাজিলের আসল পরিচয় তাঁদের জিঙ্গা স্টাইল ফুটবল। যদি তাঁরা সেভাবে খেলেও হারে, তবুও আক্ষেপ থাকে না।
ব্রাজিল সমর্থকদের জন্য পেলে মুভিটি দেখা অবশ্য কর্তব্য। যদি সমর্থক নাও হন, তারপরেও ভাল ছবি দেখতে চাইলে অবশ্যই পেলে দেখুন। সংলাপ, অভিনয় ইত্যাদি দুর্বল হলেও কাহিনী এবং মেকিংয়ের জোরে এই ছবি ভাল লাগতে বাধ্য। সাথে আবহ সংগীত দিয়েছেন আমাদের প্রিয় এ আর রেহমান ভাই। ভালতো লাগবেই।
ব্রাজিল সমর্থক হলে, টুর্নামেন্টের শেষে যখন দেখবেন ব্রাজিল চ্যাম্পিয়ন হয়, সেই একই অনুভূতি পাবেন যেমনটা ৯৪ এবং ২০০২ বিশ্বকাপে পেয়েছিলেন। আর্জেন্টিনার সমর্থকদের সেই অভিজ্ঞতা নেই, আফসোস। এই মুভিটি উল্টো তাঁদের দগদগে ক্ষতে আবারও লাল মরিচ ডলে দিবে।
ইয়ে, আমিও দেখি ট্রলিং শুরু করে দিলাম।
এখন কমেন্ট করুন, "তোরাতো সেভেন up!"
২| ২৪ শে মে, ২০১৮ রাত ১২:১২
অর্থনীতিবিদ বলেছেন: ব্রাজিল আর আর্জেন্টিনা দুই দেশই সমর্থকদের প্রবল ভালোবাসা আর আগ্রহ-উদ্দীপনা নিয়ে প্রতিটা বিশ্বকাপ শুরু করে। কিন্তু ২০০২ সালের পর থেকে ফাইনালে শেষ হাসি হাসে অন্য কোনো দল। ২০০৬, ২০১০, ১০১৪ প্রতিটা বিশ্বকাপে একই ঘটনার পুনরাবৃত্তি। দেখা যাক, ২০১৮ সালে রাশিয়ায় তাদের ভাগ্যে কি অপেক্ষা করছে।
২৪ শে মে, ২০১৮ রাত ২:০৯
মঞ্জুর চৌধুরী বলেছেন: দেখা যাক।
৩| ২৪ শে মে, ২০১৮ রাত ২:৪৬
বিচার মানি তালগাছ আমার বলেছেন: আর্জেন্টিনার বার বার ব্যর্থতার পর বিশ্বকাপ এখন আর সিরিয়াসলি নেই না। তার চেয়ে মেসির কারণে বার্সেলোনার সাফল্যেই পুলকিত হই...
২৪ শে মে, ২০১৮ ভোর ৪:৩৯
মঞ্জুর চৌধুরী বলেছেন: ভাল বলেছেন।
৪| ২৪ শে মে, ২০১৮ রাত ২:৫০
কিশোর মাইনু বলেছেন: "পেলে" ছবিটি কি ইউটিউবে আছে?!?!?
লিংক দেওয়া যাবে ভাই?!?!?
২৪ শে মে, ২০১৮ ভোর ৪:৩৯
মঞ্জুর চৌধুরী বলেছেন: netflix এ আছে। জানিনা ইউটিউবে আছে কিনা। ডাউনলোড করেও দেখতে পারেন।
৫| ২৪ শে মে, ২০১৮ সকাল ৯:৪০
রাজীব নুর বলেছেন: আর্জেন্টিনা ফাইনালে না গেলে আমার মন খারাপ হবে।
©somewhere in net ltd.
১| ২৩ শে মে, ২০১৮ রাত ১১:০৯
ব্লগার_প্রান্ত বলেছেন: যাক আমাদের আর্জেন্টাইন শিবিরের বাসিন্দারা আওয়াজ তুলছে!