নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

মঞ্জুর চৌধুরী

আমি ঝন্ঝা, আমি ঘূর্ণি, আমি পথ-সমূখে যাহা পাই যাই চূর্ণি’। আমি নৃত্য-পাগল ছন্দ, আমি আপনার তালে নেচে যাই, আমি মুক্ত জীবনানন্দ। আমি হাম্বার, আমি ছায়ানট, আমি হিন্দোল, আমি চল-চঞ্চল, ঠমকি’ ছমকি’ পথে যেতে যেতে চকিতে চমকি’ ফিং দিয়া দিই তিন দোল; আমি চপলা-চপল হিন্দোল। আমি তাই করি ভাই যখন চাহে এ মন যা, করি শত্রুর সাথে গলাগলি, ধরি মৃত্যুর সাথে পান্জা, আমি উন্মাদ, আমি ঝন্ঝা! আমি মহামারী আমি ভীতি এ ধরিত্রীর; আমি শাসন-ত্রাসন, সংহার আমি উষ্ন চির-অধীর! বল বীর - আমি চির উন্নত শির!

মঞ্জুর চৌধুরী › বিস্তারিত পোস্টঃ

ক্রস ফায়ার

০২ রা জুন, ২০১৮ ভোর ৪:৪৪

শুরুর দিকে বাংলাদেশে Rab দারুন জনপ্রিয়তা পেয়েছিল। এলাকার চিহ্নিত সন্ত্রাসীগুলোকে ধরে ধরে ক্রসফায়ারে মেরে ফেলছিল। বয়স কম ছিল, বুঝতাম কম, তাই এই ধরণের বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ডও ভাল লাগতো। চোখের সামনেইতো দেখছি যারা সন্ত্রাসী কর্মকান্ড করে বেড়ায়, যাদের মৃত্যুদন্ডই প্রাপ্য, খুন জখম করে যারা দিনের পর দিন পার পেয়ে গেছে, তাদেরই হত্যা করা হচ্ছে। গ্রেপ্তার করা হলে দেখা যেত মন্ত্রীর ফোন কলে মুক্তি পেয়ে যেত।
সেই সময়টাতেই দেখেছি এলাকার ছিচকা সন্ত্রাসী থেকে শুরু করে বস গড ফাদারগুলোর চেহারাতেও আইন শৃঙ্খলারক্ষাকারী বাহিনীর নামের আতঙ্ক।
প্রতিটা ক্রসফায়ার শেষে Rab তখন একটি অতি দুর্বল স্ক্রিপ্টের গল্প শোনাতো। মুখস্ত তোতাপাখির মতন বলে বেড়াতো, "আমরা অপরাধীকে নিয়ে অস্ত্র উদ্ধারে বেরিয়েছিলাম। আগে থেকেই ওঁৎপেতে থাকা সন্ত্রাসীরা আমাদের দেখে গুলি চালায়। আমরাও পাল্টা গুলি চালালে ক্রসফায়ারে অমুক নিহত হন।"
এমন ফাঁকা গল্প শুনে কতবার হেসেছি।
তারপর এখানে ওখানে অভিযোগ আসতে শুরু করলো Rab এর হাতে নির্দোষ ব্যক্তিও মরতে শুরু করেছে। তখনই প্রথম নড়েচড়ে বসলাম। আরে, এইটা কেমন কথা? নির্দোষ ব্যক্তি কেন মরবে?
আমার এক আত্মীয় পুলিশে ছিলেন। একবার থানায় দুইটি ছেলেকে খুনের স্বীকারোক্তিতে বাধ্য করা হচ্ছিল। বেদম প্রহারে ছেলে দুইটি স্বীকার করে নেয় তাঁরা খুন করেছিল। কোর্টে চালান করে দেয়া হয়, এবং তাঁদের ভাগ্যে কী ঘটেছিল কখনও খোঁজ নেয়া হয়নি। আমার বয়স তখন পাঁচ ছয় হবে। পুলিশ কর্মকর্তা সেই আত্মীয় জানিয়েছিলেন যে আসলে খুন করেছিল কোন এক মন্ত্রীর আত্মীয়। মন্ত্রীর হুকুমেই random যুবককে খুনি সাজিয়ে মামলার নিষ্পত্তির ব্যবস্থা করা হয়েছে। এবং যুবকগুলোও পুলিশি মার সহ্য করতে না পেরে দায় স্বীকার করে নিয়েছে।
Rab এর কর্মকর্তাগণওতো বাংলাদেশী। তাঁদেরও ঐ মন্ত্রী এমপিদেরই নির্দেশ পালন করেন।
এক নিমিষেই আমার বয়স বেড়ে গেল। তখন থেকেই বুঝে গেলাম ক্রসফায়ার কোন অবস্থাতেই সমাধান নয়। যদি সন্ত্রাসী দোষীও হয়ে থাকে, তারপরেও তাকে ধরে এনে সুষ্ঠু তদন্ত করতে হবে, তার সাথে আর যে যে জড়িত সবাইকে কাঠ গড়ায় দাঁড় করাতে হবে। ধরে ধরে মেরে ফেললে সেই চেইনটাই নষ্ট হয়ে যায়।
বোলতার চাক ধ্বংস করতে হলে রানীকে হত্যা করতে হয়। আরও সহজ উদাহরণ দেই। বিষবৃক্ষের পাতা ছিড়ে ফেললে কিছুই হয়না। নতুন পাতা ঠিকই গজায়। শেকড়ে আঘাত করতে হয়, তো গিয়ে বৃক্ষের মূলোৎপাটন ঘটে।
গডফাদারদের আড়ালে রেখে চুনোপুঁটিদের হত্যা করে বেকুব জনসাধারণকে খুশি করা কোন সমাধান না। এই গডফাদারগুলিই আবার নতুন চুনোপুঁটি ধরে তাদের ব্যবসা ঠিকই চালু রাখবে।
এক বড় ভাই সেই শুরু থেকেই নিজের ফেসবুক ওয়ালে এই ক্রসফায়ারের বিরোধিতা করে আসছিলেন। দেখা যেত পাঁচ ছয়টা লাইক ছাড়া সেই পোস্ট কেউ পড়তো না। অনেকেই ধরে নিয়েছিল প্রবাসী বাঙালির আলগা মানবতাবাদী পোস্ট। দরদ উথলায় পড়ছে। আমার ভাগ্য ভাল আমি সেই পাঁচ ছয়জনের একজন ছিলাম। এবং আমিও প্রবাসী। না ভাই, আমাদের প্রবাসীদের আলগা দরদ উথলায় পড়েনা। আমরা সত্য মিথ্যার পার্থক্য সহজে করতে পারি। পয়েন্ট অফ ভিউর পরিবর্তনের কারণেই এমনটা ঘটে।
আজকেতো দেখাই গেল ক্রসফায়ারের ক্ষতিকর দিকটা।
আমাদের বিচার ব্যবস্থা ভাল নয়? সমাধান হচ্ছে বিচার ব্যবস্থাকে ঢেলে সাজানো। একটা দুর্বলতা ঢাকতে নিজেরা কেন বেআইনি পথ বেছে নিব?
এই যে একরাম নামের লোকটা মারা গেলেন, অডিও রেকর্ড শোনার পর এখন কী হাহাকার চারদিকে! বুঝতে পারছেন এখন যাদের আপনদের বিনা অপরাধে ক্রসফায়ারে হত্যা করা হয়, এবং আপনারা সবাই খুব ক্যাজুয়ালি বলে দেন "দুয়েকটা কোলাটেরোল ড্যামেজতো হবেই," বাস্তবে বিষয়টা কতটা নির্মম? এই যে মেয়েগুলি তাঁদের বাবা হারালো, এরা কী আর ফিরে পাবে তাঁকে? বাংলাদেশের মতন থার্ড ওয়ার্ল্ড কান্ট্রির থার্ডক্লাস সমাজ ব্যবস্থায় স্বামীহীন এক মহিলার দুই মেয়েকে নিয়ে একা সংসার করার যে দুর্বিষহ জীবন, এর দায়িত্ব কী মন্ত্রী নিবেন? যিনি কিছুদিন আগেই জাস্টিফাই করেছিলেন এই ক্রসফায়ার হত্যাকাণ্ডের? বিদেশ হলে বহু আগেই এমন মন্ত্রী পদত্যাগ করে ফেলতেন। আমাদের দেশের ইনাদের আবার লজ্জাশরম কম। কোন না কোন লেইম এক্সকিউজ দিয়ে গলাবাজি করবে, এবং সেটা শোনার জন্য প্রস্তুত থাকুন।
এই অডিও আজকে অসুস্থ করে দিল সবাইকে। চেনা জানা যেই শুনেছে সবাই ডিপ্রেশনে চলে গেছে।
আমরা একটা গ্রেট ডিপ্রেসড সমাজে বাস করছি।
আমাদের সদ্বুদ্ধির উদয় ঘটুক।

মন্তব্য ৭ টি রেটিং +১/-০

মন্তব্য (৭) মন্তব্য লিখুন

১| ০২ রা জুন, ২০১৮ ভোর ৬:২২

স্বামী বিশুদ্ধানন্দ বলেছেন: আইন শৃঙ্খলারক্ষাকারী বাহিনী এবং বিচার ব্যবস্থা যদি ঠিকমতো কাজ করে তাহলে এই ক্রস ফায়ারের প্রয়োজন কেন পড়লো ? সরকারের এই দুটি অঙ্গের সীমাহীন দুর্নীতি এবং যথেচ্ছাচারের কারণেই মাদক ব্যবসায়ী সহ অপরাধীরা সকলের নাকের ডগায় তাদের কার্যকলাপ চালিয়ে যেতে পারছে | যাদের দায়িত্বজ্ঞানহীনতার কারণে দেশে অপরাধ নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যাচ্ছে তাদেরকে দিয়েই ক্রস ফায়ারের মতো একটি বিচারবহিৰ্ভূত হত্যাকান্ড করার মতো হটকারী পদক্ষেপ একটি গণতান্ত্রিক সরকার (!) কিভাবে নিতে পারে তা মোটেই বোধগম্য নয় |

শেষ পর্যন্ত এই ক্রসফায়ার আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর এক্সট্রা ইনকামের পথ হয়ে দাঁড়াবে | সরকার যদি আইনশৃঙ্খলা রক্ষাবাহিনীর কিছু সদস্যদের উপরি ইনকামের সুযোগের পথ করে দিতে চায় তবে কিছু বলার নেই |

২| ০২ রা জুন, ২০১৮ সকাল ৮:৪২

বিদ্রোহী ভৃগু বলেছেন: শুধু ডিপ্রেশন!

রীতিমতো আতংক ভর করার অবস্থা!

এ কোন মাৎসানায় সময়! আইন, আদালত, বিচার ব্যবস্থা মানুষের সর্বশেষ আশা ভরসা!
বিনা বিচারে এভাবে মেরে ফেলা যে প্রহসন তাতো দিবালোকের মতো ষ্পষ্ট!
মান্যবর স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী ইয়া বদির বিরুদ্ধে প্রমাণ খোঁজেন সাংবাদিক ভাইদের কাছে!
ওদিতে নিরাপদে ইয়াবা বদি পালীয়ে যায় দেশ ছেড়ে!
সাজাপ্রাপ্ত আসামী রাষ্ট্রপতির ক্ষমা পেয়ে যায় - অথচ মিথ্যা সাজানো মামলায় জমিন হয়না সাবেক প্রধানমন্ত্রীর!!!!!!!

এ স্বৈরাচারিতার শেষ কোথায়? যার শুরু আছে তার শেষও আছে। বাধ্যতামূলক!
কখন কোথায় কিভাবে? আমজনতা সেই অপেক্ষায়!

৩| ০২ রা জুন, ২০১৮ সকাল ৯:০২

রাজীব নুর বলেছেন: রক্ত চাই না আর
বন্ধ কর ক্রসফায়ার।

৪| ০২ রা জুন, ২০১৮ সকাল ৯:৫৪

রোহান খান বলেছেন: স্বামী বিশুদ্ধানন্দ বলেছে - " শেষ পর্যন্ত এই ক্রসফায়ার আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর এক্সট্রা ইনকামের পথ হয়ে দাঁড়াবে | সরকার যদি আইনশৃঙ্খলা রক্ষাবাহিনীর কিছু সদস্যদের উপরি ইনকামের সুযোগের পথ করে দিতে চায় তবে কিছু বলার নেই | "

গুরুত্বপুর্ণ কথা। জনগন এখন না বুজলে বুজবে কখন ? নিজের সাথে ঘটার জণ্য অপেক্ষায় থাকুন। ওরা ওত পেতে আছে, আসবেই হয় আজ বা কাল।

৫| ০২ রা জুন, ২০১৮ সকাল ১০:১১

দিলের্‌ আড্ডা বলেছেন: একদিন হয়তোবা ক্রসফায়ার বন্ধ হবে কিন্ত এই পরিবারগুলো কখনই ফিরে পাবে না তাদের প্রিয়জনজনকে। ভাবতেই খারাপ লাগতেছে। কেনো এমন সিদ্ধান্ত নিয়েছে প্রশাসন, সেটা তারাই ভালো জানে। কিন্ত এটাও সত্য যে তারা অপরাধ দমনে কার‌্যকর উদ্যোগ নিতে পারেনি।

৬| ০২ রা জুন, ২০১৮ সকাল ১০:৪৪

একদম_ঠোঁটকাটা বলেছেন: বর্তমান পরিস্থিতিতে দেশের গনমাধ্যম গুলিকে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা নিতে হবে।

৭| ০২ রা জুন, ২০১৮ দুপুর ২:১৮

কথার ফুলঝুরি! বলেছেন: যে দোষী তার বিচার হোক কিন্তু ক্রসফায়ার আর নয়

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.