নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

মঞ্জুর চৌধুরী

আমি ঝন্ঝা, আমি ঘূর্ণি, আমি পথ-সমূখে যাহা পাই যাই চূর্ণি’। আমি নৃত্য-পাগল ছন্দ, আমি আপনার তালে নেচে যাই, আমি মুক্ত জীবনানন্দ। আমি হাম্বার, আমি ছায়ানট, আমি হিন্দোল, আমি চল-চঞ্চল, ঠমকি’ ছমকি’ পথে যেতে যেতে চকিতে চমকি’ ফিং দিয়া দিই তিন দোল; আমি চপলা-চপল হিন্দোল। আমি তাই করি ভাই যখন চাহে এ মন যা, করি শত্রুর সাথে গলাগলি, ধরি মৃত্যুর সাথে পান্জা, আমি উন্মাদ, আমি ঝন্ঝা! আমি মহামারী আমি ভীতি এ ধরিত্রীর; আমি শাসন-ত্রাসন, সংহার আমি উষ্ন চির-অধীর! বল বীর - আমি চির উন্নত শির!

মঞ্জুর চৌধুরী › বিস্তারিত পোস্টঃ

"তুমি একটা ফুটবলদ।"

২৮ শে জুন, ২০১৮ সকাল ৭:৪৭

বন্ধুদের আড্ডায় বললাম, "জার্মান স্ট্রাইকাররা বেশ কিছুদিন ধরেই বাজে খেলছিল। ওরা যে ফার্স্ট রাউন্ডেই বাদ যাবে, সেটার একটা আশংকা কিন্তু ছিলই।"
এইসময়ে জব্বার ভাই (ছদ্মনাম) রক্তচক্ষু পাকিয়ে বললেন, "তুমি কোন টিমের সাপোর্টার?"
"ব্রাজিল।"
"আর তুমি?" পাশের জনের দিকে তাকিয়ে জানতে চাইলেন। "নিশ্চই 'আর্হেন্তিনা?'"
তিনি বহুদিন আগে থেকেই আর্জেন্টিনাকে আর্হেন্তিনা বলেন। মেক্সিকোকেও মেহিকো বলেন। তিনি বিশুদ্ধ ব্যাকরণের পূজারী। সঠিক উচ্চারনে দোষের কিছু নেই।
"না ভাই, সেনেগাল। আর পানামা আমার সেকেন্ড বেস্ট টিম।" বন্ধুর চটপট জবাব।
জব্বার ভাই বুঝলেন বন্ধু তাঁর সাথে ফাজলামি করতে চায়। তিনি সেদিকে পাত্তা না দিয়ে আমার দিকে তাকিয়ে ভরাট গলায় বললেন, "ফুটবলের মিয়া তুমি কী বুঝো?"
প্রিয় দলের অকস্মাৎ বিদায়ে তিনি কিঞ্চিৎ মদ্যপান করেছেন বুঝা যাচ্ছে। চোখ ঢুলুঢুলু, দাঁড়িয়ে থাকতে তাঁর কষ্ট হচ্ছে। কথাবার্তাও জড়িয়ে আসছে। বুঝতে পারছি, মস্তিষ্কও তার সাধারণ কার্যক্ষমতা হারিয়েছে। কী বলতে কী বলবেন কে জানে? তাছাড়া এই প্রশ্নেরই বা কী জবাব দিব?
শুধু বললাম, "যে বেশি গোল করে সেই জিতে।"
তিনি বুড়ো আঙ্গুল দেখিয়ে বললেন, "বুঝছি। তুমি আমার বাল বুঝো। তুমি হইতাছো গিয়া একটা ফুটবলদ। ক্লাব ফুটবল দেখো? লা লিগা, ইপিএল, বুন্দেজ লিগা?"
"না, অফিসের কাজের চাপে সেভাবে ফলো করা হয় না।"
"হ, চাইর বছর পরপর বিশ্বকাপ দেইখাই ফুটবল বুঝার ফাপড় লও। কইছি না তুমি একটা ফুটবলদ?"
তাঁর গলা ক্রমেই উদারা থেকে মুদারা হয়ে তারা স্কেলে পৌঁছে গেল। "বরুসিয়া ডর্টমুন্ড চিনো? ক্যুপ ড্য ফ্রাঁ? সিলভিও পায়োলা?"
"না ভাই। কারা এরা?"
আমার উত্তরে তিনি বিমলানন্দ পেলেন। বিজয়ের হাসি হেসে তৃপ্ত কণ্ঠে বললেন, "এই জ্ঞানটাও নাই তোমার? হাহাহা। কইছিলাম না, তুমি হইলা গিয়া একটা ফুটবলদ? রোনালদোর কয়টা পোলাপান জানো?"
"কোন রোনালদো? খ্রিষ্টান রোনালদো? নাকি মুসলিম রোনালদোর কথা জিগান?" পাশ থেকে বন্ধু প্রশ্ন করে বসলো। সে এখনও ফাজলামির আশা ছাড়েনি। সুযোগ পেয়েই দাঁত বসিয়ে দিয়েছে।
"ব্রাজিলের ফেনোমেননকে আমরা আদর করে মুসলিম রোনালদো ডাকি। হিহিহি।"
জব্বার ভাই তাঁর টমেটোর মতন চোখ দুটি আরও পাকা টুসটুসিয়ে তাঁর দিকে তাকিয়ে আবার আমার দিকে ফিরে বললেন, "ক্রিস্টিয়ানো রোনালদোর কথা কইতাছি। তাঁর কয় বাচ্চা জানো? মেসির বৌয়ের নাম জানো? নেইমারের ট্রান্সফার ফী কত ছিল এইটা জানো?"
জব্বার ভাইয়ের চিৎকার চ্যাঁচামেচিতে লোকজন আমাদের দিকে কৌতূহলী হয়ে তাকিয়ে আছে। বুঝার চেষ্টা করছে ঘটনা কী ঘটছে।
আমি তখনও মনে মনে হাতড়ে বেড়াচ্ছি এসব তথ্যের সাথে খেলা বুঝার কী সম্পর্ক। জব্বার ভাই দরাজ হাসি হেসে বললেন, "কইছিলাম না তুমি একটা ফুটবলদ। লোথার ম্যাথিউস, রুডি ফলার, বাস্টিন শোয়েইন্সটেগা...."
"এইগুলি কমন পড়েছে ভাই!" সাথে সাথে উৎফুল কণ্ঠে হাত তুললাম। "এদের চিনতে পেরেছি। এরা হচ্ছেন জার্মান দলের...."
তাচ্ছিল্যের হাসি হেসে তিনি বললেন, "এগুলারেই চিনবা। কইছি না, তুমি একটা ফুটবলদ! ইন্টারন্যাশনাল টিম ছাড়া তোমার নলেজ আমার বাল। আগে ক্লাব ফুটবল ফলো করতে শিখ। কোন লীগের কী ফরম্যাট, কোন ক্লাব কোন স্ট্র্যাটেজিতে খেলে, কে কোন দলের কোচ, কে ম্যানেজার এইসব মুখস্ত করতে শিখ। তারপরে আইসো ফুটবল নিয়া কথা কইতে। বুঝলা?"
"জ্বি ভাই বুঝলাম। কিন্তু একটা প্রশ্ন ছিল।"
তিনি চলেই যাচ্ছিলেন। আমার কথায় থেমে আমার দিকে ফিরে জিজ্ঞাসু দৃষ্টিতে চাইলেন। আমি থেমে থেমে বললাম, "এই তামাম জ্ঞানর্জনের পরে কী ফুটবল খেলার নিয়ম বদলে যাবে? মানে তখনও কী যেই দল বেশি গোল দিবে সেই দল জিতবে? নাকি অন্য কিছু ঘটবে? যেমন আজকে জার্মানি নব্বই মিনিট পরে দুইটা গোল খেয়ে বিদায় নিল। আমি যদি আপনার মতন ফুটবল সাইক্লোপিডিয়া হইতাম, তাইলে কী ভিন্ন কিছু ঘটতো? বা ব্রাজিল যে ২-০ গোলে জিতে গ্রূপ চ্যাম্পিয়ন হয়ে দ্বিতীয় রাউন্ডে গেল। সেই উনিশশো বিরাশি সাল থেকেই প্রতিবার তাঁরা গ্রূপ চ্যাম্পিয়ন হয়েই দ্বিতীয় রাউন্ডে যাচ্ছে। এইবার কী ভিন্ন কিছু ঘটতো?"
তিনি বেশ কিছুক্ষন আমার দিকে স্থির দৃষ্টিতে তাকিয়ে রইলেন। এই দৃষ্টিতে একজন জেনারেল তাকায় তাঁর সিপাহীর দিকে যে মাত্রই কিছুক্ষন আগে বেইমানি করতে গিয়ে যে সিপাহী ধরা খেয়েছে।
এই দৃষ্টিতে তাকিয়েছিল অর্জুন রথের চাকা ভূমিতে আটকে যাওয়া কর্ণের দিকে। আর কিছুক্ষনের মধ্যেই শর নিক্ষেপে যার বুক এফোঁড় ওফোঁড় করা হবে।
এই দৃষ্টিতেই জল্লাদ তাকায় ফাঁসির আসামির দিকে। আর কিছুক্ষনের মধ্যেই লিভার টেনে যাকে দড়িতে লটকে দেয়া হবে।
এই দৃষ্টি বড্ড খুনে, বড্ড নিষ্ঠুর। সত্যযুগে এই দৃষ্টির অগ্নিতে ভস্মীভূত হতো অভিশপ্ত জনমন্ডলী।
বেশ অনেক্ষন এই দৃষ্টিতে আমার দিকে তাকিয়ে থেকে অবশেষে একটা ছোট্ট নিঃশ্বাস ফেলে জব্বার ভাই বললেন, "কইছিলাম না তুমি একটা ফুটবলদ। আর আমি হইতাছি গিয়া একটা আবাল! বালের ফুটবলই আর দেখুম না!"

মন্তব্য ১৪ টি রেটিং +২/-০

মন্তব্য (১৪) মন্তব্য লিখুন

১| ২৮ শে জুন, ২০১৮ সকাল ৯:২৬

রাজীব নুর বলেছেন: নিজের জমিজমা বিক্রি করে সাড়ে ৫ কিলোমিটার দীর্ঘ জার্মান পতাকা বানিয়ে হেডাম (বাহাদুরি) দেখানো অতি হাস্যকর। মাগুরার আমজাদ হোসেন আস্ত একটা "সাইকো।" নিজের দেশের এক কিলোমিটার পতাকা বানিয়ে যদি দেখাতো লক্ষ লক্ষ মানুষ তাকে ভালবাসতো।

২৮ শে জুন, ২০১৮ রাত ১১:২৩

মঞ্জুর চৌধুরী বলেছেন: জমি বেঁচে নিজের দেশেরও পতাকা বানানো বলদামি ভাই। আজাইরা কারনে পয়সা নষ্ট। দেশের মানুষ তখনই ভালবাসতো যদি ফ্রুটফুল কিছু করতো দেশের মানুষের জন্য।

২| ২৮ শে জুন, ২০১৮ সকাল ১০:৫৬

ক্স বলেছেন: চরম হইছে! =p~

২৮ শে জুন, ২০১৮ রাত ১১:২৩

মঞ্জুর চৌধুরী বলেছেন: হাহাহা। ধন্যবাদ! :)

৩| ২৮ শে জুন, ২০১৮ সকাল ১১:২২

পদ্মপুকুর বলেছেন: ওয়াও! এইরাম ফুটবলদ হইবার মুঞ্চাই... =p~

২৮ শে জুন, ২০১৮ রাত ১১:২৩

মঞ্জুর চৌধুরী বলেছেন: হাহাহা

৪| ২৮ শে জুন, ২০১৮ সকাল ১১:৩৯

গরল বলেছেন: আমিও একটা ফুটবলদ আর তাই জার্মানিরে সাপোর্ট করছিলাম। তবে এখন মনে হচ্ছে ক্রোয়েশিয়াকে সাপোর্ট করতে হবে।

২৮ শে জুন, ২০১৮ রাত ১১:২৪

মঞ্জুর চৌধুরী বলেছেন: হাহাহা, বেলজিয়ামও কিন্তু ডার্কহর্স। :)

৫| ২৮ শে জুন, ২০১৮ দুপুর ১২:০০

সম্রাট ইজ বেস্ট বলেছেন: যাক, নতুন একটা শব্দ পেয়ে ভান্ডার সমৃদ্ধ করতে পারলাম! :)

২৮ শে জুন, ২০১৮ রাত ১১:২৫

মঞ্জুর চৌধুরী বলেছেন: আরেকটা দিলাম, "ক্লাবুল মাল" - যারা ক্লাব ফুটবল ফলো করিনা শুনলেই বলে "রাবিশ!" :)

৬| ২৮ শে জুন, ২০১৮ দুপুর ১২:০৫

মোঃ খুরশীদ আলম বলেছেন: আমাদের সমাজে এই ‘জব্বার ভাই’ রা কম নয়। নিজে যা বুঝে তাই সেরা, কারো কোন অভিমত, ব্যতিক্রমি চিন্তা থাকা যাবে না।
সমাজ যে কবে জব্বার ভাই মুক্ত হবে কে জানে।

২৮ শে জুন, ২০১৮ রাত ১১:২৬

মঞ্জুর চৌধুরী বলেছেন: ঘরে ঘরে এক কাহিনি :)

৭| ২৮ শে জুন, ২০১৮ দুপুর ১২:১২

মোস্তফা সোহেল বলেছেন: আমি নিজেই একজন ফুটবলদ।
লেখা ভাল লেগেছে ভাইয়া।

২৮ শে জুন, ২০১৮ রাত ১১:২৬

মঞ্জুর চৌধুরী বলেছেন: :) ধন্যবাদ। :)

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.