নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
আমি ঝন্ঝা, আমি ঘূর্ণি, আমি পথ-সমূখে যাহা পাই যাই চূর্ণি’। আমি নৃত্য-পাগল ছন্দ, আমি আপনার তালে নেচে যাই, আমি মুক্ত জীবনানন্দ। আমি হাম্বার, আমি ছায়ানট, আমি হিন্দোল, আমি চল-চঞ্চল, ঠমকি’ ছমকি’ পথে যেতে যেতে চকিতে চমকি’ ফিং দিয়া দিই তিন দোল; আমি চপলা-চপল হিন্দোল। আমি তাই করি ভাই যখন চাহে এ মন যা, করি শত্রুর সাথে গলাগলি, ধরি মৃত্যুর সাথে পান্জা, আমি উন্মাদ, আমি ঝন্ঝা! আমি মহামারী আমি ভীতি এ ধরিত্রীর; আমি শাসন-ত্রাসন, সংহার আমি উষ্ন চির-অধীর! বল বীর - আমি চির উন্নত শির!
ব্র্যাডম্যান বলতেন খেলাকে কখনও পেশা হিসেবে না নিতে। তাহলে সেটিকে উপভোগ করা যাবেনা।
তাঁর মতন খেলাকে আজ পর্যন্ত কেউ উপভোগ করতে পারেনি। ভবিষ্যতেও পারবে কিনা কে জানে! কুড়ি বছরেরও বেশি ক্রিকেট ক্যারিয়ারে ৯৯.৯৪ ব্যাটিং গড় যার, তাও এমন উইকেটে যখন বৃষ্টি হলে পিচ ঢাকাঢাকির কোন বালাই ছিল না। ছিল না মাথায় কোন হেলমেট। প্রতিটা দলেই ছিল ডেল স্টেইনের মতন আগুনে গতির ফাস্ট বোলার। "বডিলাইন সিরিজও" লিগ্যাল ছিল। তাঁকে ছাড়িয়ে যাওয়া কারোর পক্ষে আদৌ কখনও সম্ভব কিনা সেটা ভবিষ্যৎই বলবে। তবে তাঁর যুগের একটি ফ্যাক্ট তুলে ধরা যাক।
ক্রিকেট অস্ট্রেলিয়ার তখন এমন রমরমা অবস্থা নেই। খেলোয়াড়রা কেমন পারিশ্রমিক পেতেন জানিনা, তবে এইটা সত্য যে তাঁদের প্রত্যেকেরই আলাদা আলাদা জীবিকা ছিল। সেখান থেকেই ছুটি নিয়ে খেলতে যেতে হতো। তারপর খেলা শেষে আবার দৌড়ে সেই কাজ করতে যেতে হতো।
আইসিসির সহযোগী দেশগুলোর খেলোয়াড়দের এখনও এই কাজ করতে হয়। এই ব্যাপারে একটি ঘটনা শুনেছিলাম। শেয়ার করা যাক।
একজন কর্মচারী ছুটির দরখাস্ত করেছেন, বস তখন জিজ্ঞেস করলেন, "কেন ছুটি লাগবে?"
"স্যার, ওয়ার্ল্ডকাপ খেলতে যাব।"
বস ভুরু কুঁচকে জানতে চাইলেন, "কিসের ওয়ার্ল্ডকাপ?"
"স্যার ক্রিকেট।"
বস তখন দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে বললেন, "দেখো বাবাজি, এই ওয়ার্ল্ডকাপ খেলার চক্করে ঘরে যে চায়ের কাপটা আছে, সেটা কেন হারাতে চাও? যাও, ডেস্কে গিয়ে কাজ করো।"
বেচারা কর্মচারী দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে কাজে ফেরে। তাঁর আর বিশ্বকাপ খেলা হয়না।
যতদূর জানি, গাভাস্কারদের সময়ে ভারতীয় দল একটি টেস্ট ম্যাচ তিন-চারদিনে জিতে যাওয়ায় বোর্ড উল্টো তাঁদের বেতনের টাকা কেটে রেখেছিল।
"পুরো পাঁচদিনতো খেলোনি, তো সেই দিনের জন্য বাড়তি কিসের টাকা?"
যাই হোক, আমাদের শৈশবে আমাদের বোর্ডের অবস্থাও এমন ছিল। আমাদের ভবিষ্যৎও ছিল অন্ধকার। আমাদের সুপারস্টার আমিনুল ইসলাম বুল্বুল, নান্নু, আকরামরা বিদেশী দলের এ-বি টিমের সাথেও তুলোধুনো হতেন। কেনিয়া, হল্যান্ডের সাথে বিজয়কেও আমরা বিরাট এচিভমেন্ট মনে করতাম। শ্রীলংকা তখন অবিসংবাদিত বিশ্বচ্যাম্পিয়ন, আমরা তখনও ওয়ানডে স্ট্যাটাসই পাইনি। কে বলবে আজকে এই শ্রীলংকার সাথেই আমাদের দ্বৈরথ জমে উঠে?
তো, আমাদের শৈশবে যখন কোন শিক্ষিত বাড়ির সন্তান তাঁর বাবা মাকে বলতো বড় হয়ে ক্রিকেটার হতে চায় - তখন অবধারিতভাবেই প্রবল প্রতিরোধের মুখে পড়তো। "ক্রিকেটারদের কোন ভবিষ্যৎ আছে? জাতীয় দলের খেলোয়াড় হয়েই কে বা কি করে ফেলেন? আর ঘরোয়া খেলোয়াড় হলেতো কথাই নাই। এরচেয়ে পড়ায় মন দাও, পড়ালেখা করে ভাল চাকরি করে জীবন কাটাও।"
কথা সত্য। দেশের কতজন সিনিয়র খেলোয়াড় কত কষ্টে জীবন কাটান জানেন?
সৈয়দ রাসেলের কথা মনে আছে? দুর্দান্ত ইকোনোমি রেট ছিল বলে যাকে সতীর্থরা ডাকতেন, "কিপ্টা রাসেল?" সেতো এই মাশরাফিদের সাথেই জাতীয় দলের জার্সি গায়ে খেলেছে। সে এখন কাপড়ের দোকানে বসে।
কে ভেবেছিল আমাদের দেশে একদিন বিপিএল হবে? কেবল বিপিএল খেলেই স্থানীয় খেলোয়াড়রা লাখ লাখ টাকা ব্যাংকে ভরবে?
আমাদের বাবা মারা রেজাল্ট খারাপ হলে সবার আগে শাস্তি দিতেন ক্রিকেট ব্যাটকে, তারপরে আমাদেরকে। "ঐ ব্যাটের জন্যই এই রেজাল্ট হয়েছে। এই ব্যাট আমি পুড়িয়ে দিব!"
এবং সেটাই করা হতো।
তা সেই কঠিন সময়েও, পরিবারের, সমাজের প্রবল বাঁধা ডিঙিয়ে যারা ভবিষ্যৎ অন্ধকার জেনেও স্রেফ খেলাকে ভালবেসে সাধনা করে গেছে, তারাই বতর্মানে মাশরাফি, মুশফিক, তামিম, সাকিব জেনারেশন। এর আগের জেনারেশন যেমন হাবিবুল বাশার, পাইলট, রফিকরা বুল্বুল আকরামদের থেকে টেনে দলকে যে অবস্থানে নিয়ে এসেছিলেন, এই মাশরাফিরা সেই দলকে এক ধাক্কায় অনেক উপরে নিয়ে গিয়েছেন স্রেফ খেলার প্রতি ভালবাসা থেকেই।
একটা সময়ে জাতীয় দলের খেলোয়াড়দের যারা তুচ্ছতাচ্ছিল্য করতেন, তাঁরাই এদের তারকাজ্ঞান করতে শুরু করলেন। এবং তারপরেই দেশের সংস্কৃতির বদল ঘটলো। তখন একটি জেনারেশন এলো যারা তারকাখ্যাতির জন্য ক্রিকেট খেলতে শুরু করলো। ট্যালেন্ট নিয়ে এসে ভাল খেলে, আধুনিক ফ্যাসিলিটি যোগ করে প্রতিভা আরও ধারালো হয়েছে, কিন্তু ঐ যে কোন কিছুর চিন্তা না করে স্রেফ খেলাকে ভালবেসে খেলার যে মানসিকতা - সেটাই যেন মিসিং এদের থেকে।
তারকা হলে প্রচুর নারী ভক্ত হবে, তাই খেলে যাও। তারকা হলে ব্যাংকে প্রচুর টাকা আসবে, খেলে যাও। এমন মানসিকতা না যে জীবনে যাই ঘটুক না কেন, আমাকে খেলতে হবে কারন আমি খেলতে ভালবাসি।
আজকে ভারতের কাছে বাংলাদেশের এই অসহায় আত্মসমর্পণ খুবই মর্মাহত করলো। ভারতের সাথে খেললে রিয়াদের ভাগ্য এতটা অপ্রসন্ন কেন হয় কেউ বলবেন? আর বাকি ব্যাটসম্যানরাই বা কেন এইরকম উইকেট বিলিয়ে দিয়ে এলেন? প্রতিপক্ষকে হারাতে চাইলে আগে তাঁকে অবশ্যই রেস্পেক্ট করতে হবে। শত্রুকে যেই মুহূর্তে তুচ্ছজ্ঞান করবে, সেই মুহূর্তেই তুমি যুদ্ধে হেরে যাবে। সহজ এই সূত্রটা একজনেরও মাথায় ছিল না? আর তরুণরা কবে নিজেদের দায়িত্ব বুঝে নিতে শিখবে?
সেই হিসেবে আফগানরা খেলছে দারুন! নিজেদের লিমিটেশন সম্পর্কে সচেতন, নিজেদের ক্ষমতার পরিপূর্ণ ব্যবহার। ঠিক আমরা যেমনটা খেলতাম ২০১৫-১৬ সালে, ঠিক যখন আমরা হাসতে হাসতে হারিয়ে দিতাম ভারত, পাকিস্তান দক্ষিণ আফ্রিকাকে। বাংলাদেশের মাটিতে বাংলাদেশের বিরুদ্ধে লড়তে যখন কলিজা শুকিয়ে যেত ক্রিকেট পরাশক্তিদের। হঠাৎ কী হলো আমাদের যে আমরা উল্টোপথে হাটতে শুরু করলাম? সিনিয়র খেলোয়াড় ছাড়া আমরা সেই নব্বই দশকের হরিণ শাবক হয়ে যাই যখন অন্যান্য দলের এ-বি টিমও হাসতে খেলতে আমাদের শিকার করতো।
এখন দেখলে মনে হয় কোথায় হারিয়ে গেল সেই দিনগুলো।
২| ২২ শে সেপ্টেম্বর, ২০১৮ সকাল ৮:২০
নজসু বলেছেন: সত্যি বলেছেন।
৩| ২২ শে সেপ্টেম্বর, ২০১৮ সকাল ৯:১৮
রাজীব নুর বলেছেন: আমি ঠিক করেছি আর খেলাই দেখব না।
শুধু মেজাজ খারাপ। রাতে না খেয়ে ঘুমাতে যেতে হয়।
©somewhere in net ltd.
১| ২২ শে সেপ্টেম্বর, ২০১৮ সকাল ৭:০১
সনেট কবি বলেছেন: ভাল বলেছেন।