নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

মঞ্জুর চৌধুরী

আমি ঝন্ঝা, আমি ঘূর্ণি, আমি পথ-সমূখে যাহা পাই যাই চূর্ণি’। আমি নৃত্য-পাগল ছন্দ, আমি আপনার তালে নেচে যাই, আমি মুক্ত জীবনানন্দ। আমি হাম্বার, আমি ছায়ানট, আমি হিন্দোল, আমি চল-চঞ্চল, ঠমকি’ ছমকি’ পথে যেতে যেতে চকিতে চমকি’ ফিং দিয়া দিই তিন দোল; আমি চপলা-চপল হিন্দোল। আমি তাই করি ভাই যখন চাহে এ মন যা, করি শত্রুর সাথে গলাগলি, ধরি মৃত্যুর সাথে পান্জা, আমি উন্মাদ, আমি ঝন্ঝা! আমি মহামারী আমি ভীতি এ ধরিত্রীর; আমি শাসন-ত্রাসন, সংহার আমি উষ্ন চির-অধীর! বল বীর - আমি চির উন্নত শির!

মঞ্জুর চৌধুরী › বিস্তারিত পোস্টঃ

আমাদের মায়েরা কেন এমন হলেন না? কেনু? :(

০৫ ই অক্টোবর, ২০১৮ রাত ১১:৪৫

আমার ছেলের ক্লাসের সবকটা মেয়েকেই আমি নিজের ছেলের বৌয়ের দৃষ্টিতে দেখি। আর সবকটা ছেলেকে দুশমন। আমি জানি দুনিয়ায় একটাও প্রেমকাহিনী নাই, যেখানে কোন ভিলেন নাই।
এক বাঙালি পার্টিতে আমার ছেলে তাঁর চেয়ে বয়সে একটু ছোট ফুটফুটে এক বাঙালি মেয়ের সাথে খেলছিল। খেলছিল মানে ইমপ্রেস করার চেষ্টা করছিল। মেয়েটিকে দেখিয়ে এক্সট্রা ডিগবাজি খাওয়া, তাঁকে শুনিয়ে শুনিয়ে নার্সারি রাইম্স বলা ইত্যাদি ইত্যাদি। ঐ বয়সটাতো আমরাও পার করে এসেছি, এইসব লক্ষন আমার চোখ এড়াবে কিভাবে?
যাই হোক, সেই দুজনের মাঝেই একটা মোটা তাগড়া ছেলে বাচ্চা এসে মেয়েটার সাথে লাইন মারার চেষ্টা করলো। পাশে দাঁড়ানো এক বড় ভাইকে বললাম, "প্রত্যেকটা প্রেমকাহিনিতে কী এইরকম হারামজাদা কিসিমের ভিলেনের এন্ট্রি হতেই হবে? তুই ফাজিল তোর সাইজের বাচ্চাদের সাথে ঘুর। এখানে কী?"
আসলেই পাশে আরও কিছু ঐ সাইজের বাচ্চা খেলছিল। নো অফেন্স, কিন্তু সবচেয়ে রূপসী বাচ্চা সেটাই ছিল যেটার পেছনে আমার ছেলে ট্রাই মারছিল। এবং ঐ বদমাইশটাও এসে হাজির।
স্কুল জীবন থেকে দেখে এসেছি, ক্লাসে একটা বা দুইটা মেয়ের জন্যই আস্ত ক্লাসের ছেলেরা পাগল থাকতো। ভাইয়ে ভাইয়ে দ্বন্দ্ব, বন্ধুতে বন্ধুতে রেষারেষি সব ঐ মেয়েটিকে ঘিরেই। আজকে সেই মেয়েগুলি সম্পূর্ণ অচেনা যুবকদের বিয়ে করে দিব্যি সংসার চালিয়ে যাচ্ছে। মাঝে দিয়ে হারিয়ে গেল ছেলেগুলোর শৈশবের সোনালী সময়!
যাই হোক, আমার ছেলের হৃদয় দেয়া নেয়ার কাহিনী সংক্ষেপে লিপিবদ্ধ করে ফেলা যাক। নাহলে একদিন মস্তিষ্ক সব মুছে ফেলবে। বয়স হচ্ছে। হুমায়ূন আহমেদ বলে গিয়েছিলেন, বার্ধক্য গুণনাশীনি। এত বড় একজন সাহিত্যিক, তাঁর কথা কী মিথ্যা হবে?
আমার পুত্রের প্রথম হৃদয় বিনিময় ঘটনা ঘটে তাঁর জীবনের দ্বিতীয় রমজান মাসে। এক আরব রেস্টুরেন্টে ইফতার বাফেট খেতে গিয়েছিলাম, তাঁর বয়স তখন মাত্র একবছর হয়েছে।
ও হাই চেয়ারে বসে আছে। আমরা তাঁকে কাবাব খাওয়াচ্ছি। বাফেটের লাইনে পাঁচ ছয় বছরের এক মেয়েকে দেখে সে খাওয়াদাওয়া বাদ দিয়ে মাথা (ও পুরো শরীর) ঘুরিয়ে দেখতে লাগলো। এই দৃষ্টিকে "ড্যাব ড্যাব করে তাকিয়ে থাকা" বলে। প্রথম দেখাতেই ভালবেসে ফেলল। ভালবাসলে উপহার দিতে হয়, তাঁর কাছে তখন সবচেয়ে দামি উপহার তাঁর মুখের খাবার। সে সেটাই চাবানো বন্ধ করে হাতের মুঠোয় ভরে মেয়েটির দিকে এগিয়ে দিল।
মেয়েটি ঘেন্নায় এমন একটা দৃষ্টি দিল যে বেচারার হৃদয় ভেঙে গেল। আমার ছেলের কাছে যেটা ছিল হৃৎপিন্ড, মেয়েটির চোখে সেটাই ছিল চর্বিত চর্বন কাবাবের উচ্ছিষ্ট।
বুগলী না মাইয়া, বালুভাসার মূল্য তুই বুগলী না!
তারপরের ঘটনা ঘটেছিল আমাদের বাসার সামনের পার্কে।
এক স্প্যানিশ-ককেশিয়ান মিক্সড মেয়েকে দেখেও সে ভালবেসে ফেলেছিল। লাফালাফি করে যা বীরত্ব দেখানোর দেখিয়ে ফেলেছিল। সন্ধ্যা হয়ে যাওয়ায় আমি তাঁকে জোর করে কোলে তুলে বাড়িতে নিয়ে আসি। বেচারার প্রেম সেদিন মাঠেই মারা গিয়েছিল। এক্ষেত্রে ভিলেন আমি স্বয়ং। নো ওয়ান্ডার, "রাজীব" নামের বাংলা সিনেমায় এক কিংবদন্তি ভিলেন ছিলেন।
এরপরের ঘটনা এক বাঙালি অনুষ্ঠানে। এইবার দুই দুইটা বাঙালি মেয়ের সাথে।
ততদিনে সে বুঝেছে যে কাউকে পছন্দ করলে তাঁকে চুমু দিতে হয়। কারন সে এতদিন লক্ষ্য করেছে, বাবা মায়ের বয়সী যেই তাঁর কাছে আসে, সেই তাঁকে চুমু খায়। কাজেই এইটাই নিয়ম।
তো সে ঐ অনুষ্ঠানে গিয়ে তাঁর কাছাকাছি বয়সের দুইটা বাঙালি মেয়ের সাথে পরিচিত হয়েছে। দুইটাকেই চুমু খেয়েছে। এবং মেয়েগুলির মায়েরা উল্টো আমাকে ধরে জিজ্ঞেস করছে, "ভাই, ছেলে ঘরে সারাদিন কী দেখে যে সেটা বাইরে এসে এপ্লাই করে?"
এহেম। পুত্র বেইজ্জত করে ছাড়ে মাঝেমাঝে।
যাই হোক, সেদিন আমি নিজে একটা নতুন এবং ইন্টারেস্টিং ব্যাপার শিখলাম। সেই বয়সে মেয়েদের চুমু খেতে দেখে উল্টো মায়েরা খুব মজা পায়। খিকখিক করে হাসে।
বড় হবার পরে এই মায়েরাই মেয়েদের বাড়িতে কোন ছেলের ফোন আসলে দীর্ঘ ইন্টারভিউ শেষে সন্তুষ্ট হলে তবেই ফোন এগিয়ে দেন, এবং ক্ষেত্র বিশেষে পাশে দাঁড়িয়ে কথা শোনার চেষ্টা করেন, এবং মেয়ের চেহারার এক্সপ্রেশন বিশ্লেষণ করেন। :/
যাই হোক, এরপরে আর প্রেমঘটিত ঘটনা ঘটেনি। ছেলে বোধয় ঐ বাঙালি মেয়েতেই স্থির হয়েছে। অথবা শিক্ষা পেয়ে গেছে। সেইদিন পার্টিতে ঐ মেয়ের সাথে প্রেমের চেষ্টা করতে গিয়ে মেয়েটির সাথে ধাক্কা লাগে, মেয়েটি মেঝেতে পরে যায়, এবং উঠেই কষিয়ে একটা চড় মারে।
দৃশ্যটি দেখে মেয়েটির মা এবং নানী দৌড়ে এসে মেয়েটিকে উল্টো শাসন করে বলেন, "কী দস্যি মেয়েরে বাবা! এমন কিউট ছেলেকে চড় মেরেছে! আদর করে দাও!"
এবং মা ও নানীর বকুনি খেয়ে মেয়েটি বাধ্য হয়ে আমার ছেলের গালে চুমু দিল। হয়তো বড় হলে আমার ছেলেটা বলতো, "অমন ক্ষতিপূরণ পেলে আরও কয়েকটা চড় খেতেও রাজি আছি।"
একবার সুইমিংপুলে তাঁর বয়সী এক বিকিনি পরা ককেশিয়ান মেয়ে তাঁর দিয়ে এগিয়ে এসে বলল, "আমার চশমাটা এগিয়ে দাও।"
আমার ছেলে ভদ্রছেলের মতন চশমা এগিয়ে দিয়ে নিজের সাঁতার নিয়ে ব্যস্ত হয়ে গেল।
আমার মন খুশিতে ভরে উঠলো। প্রথম কথা, নিজের বয়সী কোন মেয়েকে বিকিনিতে দেখতে তাঁর বাপকে অ্যামেরিকায় আসতে হয়েছে। সে এত সহজেই দেখা পেয়ে গেছে। তারপরেও বখাটে ছেলেদের মতন কোন আলগা রিয়েকশন নেই। দেশি বদমাইশ পোলা হলে বলতো, "চশমার সাথে সাথে আমার দিলটাও নিয়ে নাও!"
অথবা, "তুমি অনেক কিউট! এড মি প্লিজ।"
বাঙালি শ্বশুরের সামনে পুত্রবধূ বিকিনিতে ঘোরাফেরা করাটা আমাদের সংস্কৃতির সাথে যায় না। ছেলেটা বুঝেছে, কাজেই, বাদ। আলহামদুলিল্লাহ!
এই ঘটনায় আমার একটি জোকস মনে পরে গেল।
গ্রামের ছেলে ছদরুল বিদেশী বৌ বিয়ে করে দেশে ফিরেছে। গ্রামের মোড়ল তাঁকে দেখতে গিয়েছে।
মোড়ল বাড়িতে ফেরার পর মোড়লের স্ত্রী তাঁকে জিজ্ঞেস করলেন, "কেমন দেখলা বিলাতি মাইয়া?"
মোড়ল মন্ত্রমুগ্ধ স্বরে বললেন, "অসম্ভব সুন্দর! আর আদব লেহাজ, মাশাল্লাহ! গোসল শেষে শইলে গামছা প্যাঁচায়া ঘুরতে আছিল, আমারে দেইখা সাথে সাথেই সেই গামছা খুইলা মাথায় দিছে। সেই রকম আদব লেহাজ! মাশাল্লাহ!"
ইয়ে, মানে, একটু বোধয় দুষ্টু কথা বলে ফেলেছি।
তো যাই হোক, আজকে ছেলেকে ছাড়তে গেলাম স্কুলে, আমাকে দেখেই একটি মেয়ে দৌড়ে এলো ড্যাডি ড্যাডি বলে উঠলো।
এই মেয়েটা এর আগেও একদিন ড্যাডি ড্যাডি বলে আমার পা জড়িয়ে ধরেছিল। সাধে কি আর আমি আমার ছেলের ক্লাসের প্রতিটা মেয়েকে ছেলের বৌয়ের দৃষ্টিতে দেখি?
আমাকে দেখে বিচার দিল, "রিসালাত আমাকে ধাক্কা দিয়ে দূরে সরিয়ে দেয়।"
এই অভিযোগ এর আগেও একবার আরেক মেয়ের পক্ষে টিচার করেছিলেন। মেয়েটিকে দেখার সাথে সাথেই আমি বুঝে গিয়েছিলাম ছেলে কেন এই কান্ড করেছে। মেয়েটির নাক থেকে ঘন সর্দি গড়িয়ে গড়িয়ে একেবারে ঠোঁট পর্যন্ত পড়ছিল। অমন মেয়ে সামনে আসলে শুচিবাই পিতামাতার সন্তান একটু ধাক্কাতো দিবেই। অবশ্য মুখে টিচারকে আশ্বস্ত করেছিলাম এই বলে যে আমি দেখবো।
আজকে যেই মেয়ে এসেছে এই মেয়ের কোন সর্দি নেই। পরিষ্কার নাক মুখ। একে ধাক্কা দেয়ার কোন কারন নেই। তাছাড়া আমি মাত্রই তাঁকে ছাড়লাম। কোন ধাক্কাধাক্কি করতে দেখলাম না। হুদাই এই মিথ্যা অভিযোগ কেন বুঝলাম না। টিচার বলল, "ও খেলতে যায় তাঁর সাথে, তখন মাঝে মাঝে রিসালাত ওকে পুশ করে।"
মেয়েটিও তখন দেখলাম আমার ছেলেকে বলছে, "You can't catch me. ইয়ে ইয়ে!"
কুচকুচে হোতা হ্যায় সিনেমাটা যারা দেখেছেন, কাজলের ন্যাকামি কণ্ঠে "রাহুল ইজ আ চিটার, ন্যা না না না না....." দৃশ্যের কথা মনে পরে গেল।
সাথে সাথে বুঝলাম। হয়তো মেয়েটা আসলেই আমার ছেলেকে ভালবেসে ফেলেছে। অপু বিশ্বাস যেমন সাকিবের ভালবাসা পেতে চেয়েছিল, সেভাবে সেও চায়। কিন্তু আমার মহা চরিত্রবান পুত্র মেয়েটিকে সরিয়ে দিয়ে বলে, "না না না, আমি পারবো না। আমি আমার দেহ মন সব আরেকজনকে সঁপে দিয়েছি। তুমি আমাকে ধোঁকা দিতে বাধ্য করোনা।"
কো ইন্সিডেন্স হচ্ছে, আজকেই ফেসবুকে নিউজ ফিডে বাংলা সিনেমার এই অসাধারন দৃশ্যটি দেখলাম। আহা! আমাদের মায়েরা যদি এমন উদার হতেন! মা শিখাচ্ছে, "মেয়েদের সাথে খেলতে হবে।" ছেলে মেয়ের হাত ধরে যেতে যেতে বলছে, "খেলা হপ্পে মামা! খেলা হপ্পে!"
https://www.facebook.com/2179156082305983/videos/vb.2179156082305983/790377237961138/?type=2&theater

মন্তব্য ৫ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (৫) মন্তব্য লিখুন

১| ০৬ ই অক্টোবর, ২০১৮ রাত ১২:০০

রাজীব নুর বলেছেন: মজার পোষ্ট।

২| ০৬ ই অক্টোবর, ২০১৮ সকাল ১০:০৯

মোঃ ফখরুল ইসলাম ফখরুল বলেছেন: বাইসরে বাইস B-))

৩| ০৬ ই অক্টোবর, ২০১৮ সকাল ১০:৪৯

রক বেনন বলেছেন: হা হা হা!! চমৎকার পোস্ট!!

৪| ০৬ ই অক্টোবর, ২০১৮ দুপুর ১২:৩৯

সনেট কবি বলেছেন: ভাল লিখেছেন।

৫| ০৭ ই অক্টোবর, ২০১৮ বিকাল ৪:৫০

নীল আকাশ বলেছেন: আপনার লেখার হাত দারুন! চমৎকার লেগেছে।
আপনার আরও লেখা পড়ার ইচ্ছে করছে..
শুভ কামনা রইল।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.