নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

মঞ্জুর চৌধুরী

আমি ঝন্ঝা, আমি ঘূর্ণি, আমি পথ-সমূখে যাহা পাই যাই চূর্ণি’। আমি নৃত্য-পাগল ছন্দ, আমি আপনার তালে নেচে যাই, আমি মুক্ত জীবনানন্দ। আমি হাম্বার, আমি ছায়ানট, আমি হিন্দোল, আমি চল-চঞ্চল, ঠমকি’ ছমকি’ পথে যেতে যেতে চকিতে চমকি’ ফিং দিয়া দিই তিন দোল; আমি চপলা-চপল হিন্দোল। আমি তাই করি ভাই যখন চাহে এ মন যা, করি শত্রুর সাথে গলাগলি, ধরি মৃত্যুর সাথে পান্জা, আমি উন্মাদ, আমি ঝন্ঝা! আমি মহামারী আমি ভীতি এ ধরিত্রীর; আমি শাসন-ত্রাসন, সংহার আমি উষ্ন চির-অধীর! বল বীর - আমি চির উন্নত শির!

মঞ্জুর চৌধুরী › বিস্তারিত পোস্টঃ

অরিত্রি হত্যা

০৫ ই ডিসেম্বর, ২০১৮ ভোর ৪:১১

আমাদের সময়ে সিলেটের সেরা স্কুল ছিল ব্লু বার্ড হাই স্কুল। এখনও সেরা আছে বোধয়। ক্লাস ফোর থেকে এসএসসি পর্যন্ত সেই স্কুলে পড়েছি আমি। সিলেটের অন্যান্য স্কুলের ছেলেমেয়েরা ব্লুবার্ডের ছাত্র শুনলে একটু সমীহের দৃষ্টিতে দেখতো। যেমনটা লোকে অক্সফোর্ড-হার্ভার্ড-ইয়েলের ছাত্র ছাত্রীদের দিকে তাকায়।
আমাদের স্কুলে তিনটা সেকশন ছিল। A, B এবং C.
বার্ষিক পরীক্ষায় যে ফার্স্ট হতো, সে পরের বছর পড়তো সেকশন A তে। সেকেন্ড হলে B তে এবং থার্ড হলে A, ফোর্থ হলে B. এইভাবে নির্দিষ্ট ক্রমিক সংখ্যা পর্যন্ত মেধাবী ছেলেমেয়েরা দুই সেকশনে ভাগ হয়ে যেত। C-তে পড়তো আমাদের টিচার এবং অভিভাবকদের ভাষায় সব "গাধাগর্ধবরা।" এরা ফাঁকিবাজ, এরা লেখাপড়া সম্পর্কে উদাসীন, এরা পড়ালেখা ছাড়া দুনিয়ার অন্য যেকোন বিষয় সম্পর্কে ইন্টারেস্টেড। A, B সেকশনের ছাত্রছাত্রীরা এদের তাচ্ছিল্যের দৃষ্টিতে দেখতো। ধরেই নিত ওরা সব রাজা বাদশাহ ধরনের এলিটশ্রেণীর ছাত্রছাত্রী এবং C সেকশনের পোলাপান নাঙ্গা প্রজা।
আমার সৌভাগ্য ছিল এই যে আমি তিন সেকশনেই পড়েছি। তিন সেকশনের পড়ার পার্থক্য বোঝার মতন অভিজ্ঞতা আমার আছে। একটা বর্ণও শুনে বা বানিয়ে লিখতে হচ্ছে না।
তা A এবং B সেকশনের টিচারগন ছিলেন কোমলমতি। স্কুলের সবচেয়ে কড়া এবং জাদরেল টিচাররা নিয়োগ পেতেন সেকশন C-র জন্য। টিপু সুলতান, আকবর দ্য গ্রেট, বা আলিফ লায়লার রাজা বাদশাহরা যেমন সবসময়ে তলোয়ার নিয়ে ঘুরাফেরা করতেন, আমাদের শ্রদ্ধেয় শিক্ষক শিক্ষিকাগণও প্রত্যেকেই ক্লাসে আসতেন একেকটি বিশাল আকৃতির বেত নিয়ে। কারোর পছন্দ ছিল চিকন বেত, কারন তাতে ভিকটিমের শরীরে জ্বলুনি হয় বেশি। ওজনেও হালকা, কম পরিশ্রমে অধিক ফল পাওয়া যায়।
কারোর পছন্দ মোটা বেত। ওটা দেখেই ভিকটিমের কলিজা শুকিয়ে যেত, শুরুতেই সাইকোলজিক্যাল এডভান্টেজ পাওয়া যেত।
"জালি বেত" নামের একটি বেতও টিচারদের জগতে খুব জনপ্রিয় ছিল।
পড়া না পারলেই আমাদের শরীরে সপাং সপাং শব্দে বেত আছড়ে পড়তো। হাতের তালুতে, পিঠে, পায়ে, পাছায় কত জায়গায় যে বেতের বাড়ি পড়তো।
ক্লাস ফাইভে পড়ার সময়ে টিচারের মারের ভয়ে এক সহপাঠী প্যান্টে হাগু করে দিয়েছিল। গন্ধে পুরো রুম ভোঁ ভোঁ করছিল। দারুন মজা হয়েছিল সেদিন। বুয়া এসে পুরো ক্লাস পানি দিয়ে ধুলো, বেঞ্চ ধুলো - গন্ধ তবুও যায়না। সেদিন আর কোন ক্লাস হয়নি। সারাদিন খেলা! পায়খানা করা যুবক পুরো স্কুলে বিখ্যাত হয়ে গেল। যেই ওকে দেখে, আঙ্গুল তুলে বলে, "ও ক্লাসে হাগু করেছে। হিহিহি।"
ক্লাস এইটে ওঠার পর আরেকটা ছেলে ক্লাসে পায়খানা করার পরই কেবল তার সুখ্যাতিতে যতি চিহ্ন পড়েছিল।
আজকের লেখা অবশ্য ক্লাসে কে কবে পায়খানা করেছিল সেটা বলতে নয়। বরং একটি অতি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় নিয়ে আলোচনা করতে। আলোচনা এই কারণেই করা যে আমি এই বিষয়ে বিশেষজ্ঞ নই। কমেন্টে পাঠকদের ফিডব্যাক ছাড়া এই আলোচনা ফলপ্রসূ হবেনা।
এই ব্যাপারটা আপনারা কয়জন জানেন আমি জানিনা, আমাদের দেশে "অটিজম" বলতে আমরা যা বুঝি, বাস্তব জগতে অটিজমের বিভিন্ন পর্যায় আছে। কিছু অটিস্টিক শিশু সুস্থ শিশুদের মতন আচরণ করে, কিন্তু কেবল মনোবিজ্ঞানীরাই তাঁদের কিছু আচরণ থেকে বুঝে ফেলেন তাঁরা অটিস্টিক। কিছু অটিস্টিক শিশু পড়ালেখায় দুর্দান্ত হয়ে থাকে, কোন নির্দিষ্ট বিষয়কে একেবারে ভাজাভাজা করে ফেলতে পারে। আবার কিছু শিশুর ব্রেন প্রসেসই করতে পারেনা সিলেবাস। এটা দোষের কিছু না। মস্তিষ্কের নির্দিষ্ট অংশ নির্দিষ্ট কিছু কাজ করে থাকে। কারোর ব্রেনের ক্রিয়েটিভ অংশটি শাক্তিশালী বলে তাঁরা ক্রিয়েটিভ হয়ে থাকেন, আবার একই সাথে হয়তো তাঁদের অন্যান্য অংশগুলো ভোঁতা। ক্রিয়েটিভ লোকজনের সাথে কথা বলে দেখবেন, বুঝবেন তাঁরা আমাদের মতন সাধারণ স্বাভাবিক মানুষ হন না। তাঁদের চিন্তাধারা অন্যরকম, ভাবনা অন্যরকম। যা আপনার আমার কাছে অতি স্বাভাবিক, তাঁদের দৃষ্টিতে হয়তো সেটাই অতি অস্বাভাবিক। আবার তাঁদের কাছে স্বাভাবিক আচরণগুলো আমাদের দৃষ্টিতে weird.
পৃথিবীর সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ বিজ্ঞান মস্তিষ্কের একজন এলবার্ট আইনস্টাইন অটিস্টিক ছিলেন কিনা নিশ্চিত করে কেউ বলতে পারেননা, তবে তাঁর জীবনী পড়লে তাঁর মধ্যে অটিজমের অনেক নিশ্চিত চিহ্ন পাওয়া যায়। এছাড়া শিশুদের নানা ধরনের মেন্টাল প্রব্লেম হয়ে থাকে। Anxiety disorders, Attention-deficit/hyperactivity disorder (ADHD), Autism spectrum disorder (ASD), Eating disorders, Mood disorders, Schizophrenia ইত্যাদি। আমির খানের "তারে জামিন পার" সিনেমায় যেমন ডিস্লেক্সিয়া নিয়ে আলোচনা করা হয়েছিল। বুঝিয়ে দিয়েছিলেন কিভাবে তাঁদের কেস হ্যান্ডেল করতে হয়। বোর্ডিং স্কুলে পাঠিয়ে দেয়া, বা কড়া শাসন/মারধর করা কোন সমাধান না।
পৃথিবীর নামকরা কালজয়ী মহাপুরুষদের অনেকেই হয়তো মস্তিষ্কের নানান ব্যাধিতে আক্রান্ত ছিলেন। তাঁরা সেই ব্যাধিকেই শক্তিতে পরিণত করেছিলেন বলেই তাঁরা সর্বোচ্চ সফলতা অর্জন করেছিলেন। আমরা পড়ালেখা মুখস্ত করে করে ঠ্যালা ধাক্কা দিয়ে দিয়ে কোনরকমে টিকে আছি দুনিয়ায়।
তা যা বলছিলাম, উন্নতবিশ্বে এইসব "স্পেশাল" শিশুদের আগেভাগে শনাক্ত করে আগেভাগেই ট্রিটমেন্ট শুরু হয়। সাধারণ স্কুলে যেভাবে পড়ালেখা করানো হয়, তাঁদের জন্য সেখানে পড়ালেখা করা খুবই কষ্টকর হয়ে যায়। উদাহরণ দেই। আমার এক কলিগের এক ছেলের অটিজম আছে। পড়ালেখায় তুখোড়। কিন্তু সমস্যা হচ্ছে, সে খুবই চঞ্চল। ক্লাসে অন্যমনষ্ক থাকে। টিচার যদি বলেন, সবাই বই খুলো, তাঁর মস্তিষ্ক সেটা প্রসেস করেনা। সে হয়তো বাইরে তাকিয়ে থাকে, অথবা অন্য কোন কিছু করে। টিচারকে তখন বলতে হয়, "জনাথন, বই খুলো! অমুক পেজে যাও।"
সবাইকে হয়তো টিচার বললেন, "কালকে এইটা হোমওয়ার্ক করবে।"
সে অন্যমনষ্ক ছিল। সে ঢুকলো না। পরেরদিন হোমওয়ার্ক করে নিয়ে গেল না। বাংলাদেশ হলে মেরে ছাতু বানিয়ে দেয়া হতো, নাহলে ক্লাসের বাইরে পাঠিয়ে দেয়া হবে। এখানে ওর জন্য স্পেশাল স্কুলের ব্যবস্থা করা হবে। যেখানে একজন মনবিজ্ঞানী থাকবেন যিনি শিশু সাইকোলজিতে এক্সপার্ট। এই বিষয়ে হয় তাঁর পিএইচডি থাকে, অথবা মাস্টার্স ডিগ্রী পর্যন্ত পড়াশোনা থাকে। যাকে তাঁকে এই দায়িত্ব দেয়া হয়না। একজন থাকবেন যে বিভিন্ন পরিস্থিতিতে বিভিন্ন ছাত্রছাত্রীর অ্যাকশন রিয়েকশন লিপিবদ্ধ করতে থাকবেন, যাতে পরে ইভালুয়েট করতে পারেন। এদিকে তাঁদের পড়াশোনা চালাতে নিয়মিত শিক্ষক শিক্ষিকাতো আছেই। সম্পূর্ণ শিক্ষা ব্যবস্থা সরকারি খরচে ঘটে। বাবা মা চাইলে পয়সা খরচ করে প্রাইভেট স্কুলেও পাঠাতে পারেন। অ্যামেরিকান সরকারের একটি বড় বাজেট শিক্ষা দীক্ষায় খরচ হয়। আমরা শিক্ষা বাদে অনেক আজাইরা কাজে কোটি কোটি টাকা অপব্যয় করে থাকি।
এখানে একটি ব্যাপার কিন্তু বিশেষভাবে লক্ষ্যণীয়, এইসব স্পেশাল স্কুলের কোন ছাত্রছাত্রীই গাধাগর্ধব নয়। সবার ব্রেন একভাবে প্রসেস করতে পারেনা বলেই তাঁরা এখানে। তাঁদেরকে সিলেবাস বুঝাতে হবে তাঁদের ব্রেন যেভাবে প্রসেস করে সেভাবে। বেতের বাড়ি, কিংবা ক্লাস থেকে বের করে দেয়া সর্বক্ষেত্রে সমাধান নয়। "গাধা পিটিয়ে মানুষ করা" - একটি জঘন্য প্রবাদ, যা আমাদের বাংলাদেশে প্রচলিত।
আমি ইংলিশ মিডিয়াম থেকে ব্লু বার্ডে ভর্তি হয়েছিলাম। আমার আগের স্কুলগুলি ছিল সুপার প্রাইভেট। ক্লাসে ছাত্রছাত্রী কম ছিল, টিচাররা প্রতিটা ছাত্রছাত্রীরই বিশেষ খেয়াল রাখতে পারতেন। পড়া বুঝতে অসুবিধা হলে এক্সট্রা এটেনশন দিতে পারতেন। সহজেই আমার দূর্বলতা খুঁজে বের করে সেটা নিয়ে কাজ করতে পারতেন।
ব্লু বার্ডে গিয়ে মনে হলো আমাকে একুয়ারিয়াম থেকে তুলে কেউ সমুদ্রে ফেলে দিয়েছে।
ভর্তি হয়েই A সেকশনে সুযোগ পেয়েছিলাম। এক ক্লাসে ষাট শত্তুরজন ছাত্র ছাত্রী। শেষের দিকে বসলে সামনে বসে টিচার কী পড়াচ্ছেন শোনা যায় না। এ ওকে গুতাচ্ছে, সে তাঁকে ধাক্কা দিচ্ছে। পাশের সিটে এক ছেলে বইয়ের আড়ালে কমিক্স পড়ছে। কেউ একজন সকালে নাস্তায় উল্টাপাল্টা কিছু খেয়ে এসেছে, সমানে বায়ু দূষণ করে যাচ্ছে। অন্যান্য ছাত্ররা আমাকে এবং আমার সাথে ঐ দিনই ক্লাস শুরু করা আরেক ছেলেকে দেখিয়ে বলল, "এতদিন আমাদের ক্লাসে কেউ পা* দেয় নাই, এই দুইজন আসতেই অমন গন্ধ পাওয়া যাচ্ছে। এই দুইজনের একজনই পা*টা দিচ্ছে।"
এই পা* রহস্য সমাধানেও একজন অভিজ্ঞ এগিয়ে এলো। "অপু দশ কুড়ি, চিংড়ি মাছের চর্চরি" ধরনের একটা ছড়া সে আওড়াতে লাগলো, লটারি করে অপরাধী নির্ণয় করা হবে। ছড়াটা এখনও কিছুটা মনে আছে। "হাগিছে, লেদিছে, কাংলায় পাদিছে, ভা ভ্রু ভ্রাম!"
সবচেয়ে বড় সমস্যা, বাংলা পড়া কিছুই বুঝি না। পরের ক্লাসে আমিতো C সেকশনে যাবই। পাশ যে করেছিলাম এতেই নিজের মেধার উপর কনফিডেন্স বেড়ে গিয়েছিল।
C তে গিয়েও নিস্তার নেই। পড়া না পারলে বেতের বাড়ি। হাতে, পিঠে, পাছায়। এক স্যার ছিলেন, এসেই আমাদের গরু ছাগলের মতন পেটাতেন। ছাত্রছাত্রীরা তাঁর নাম দিয়েছিল "পাগলা স্যার।"
তিনি পেটানো শুরু করলে অন্যরা হাসিমুখে সিলেটিতে বলতো, "পাগলায় ছলছে।" (পাগল ক্ষেপেছে)
এটা শুনে স্যার আরও পেটাতেন।
স্যার বেশিদিন স্কুলে টিকেননি। এতদিন পরে স্যারের প্রতি কোন রাগও নেই। আল্লাহ ওনাকে ভাল রাখুন। পয়েন্ট হচ্ছে, অনেক কারণেই ছাত্রছাত্রীরা পড়া লেখায় ভাল না করতে পারে। আমাদের দেশে সেটা আইডেন্টিফাই না করে, আমরা শুরু করে দেই মারধর। মানসিক টর্চার। শুধু টিচারদের কথা বলে লাভ নেই। আমাদের মা বাবারাই সাপোর্ট করেন না। অন্যের ছেলে ভাল রেজাল্ট করলে আমরা বলি, "ওর পা ধুয়ে পানি খা।"
কেউ কেউ আরেকটু বাড়িয়ে বলেন, "ওর গু খা। তাইলে যদি তোর মাথায় কিছু পড়াশোনা ঢোকে!"
মেয়ে পড়ালেখা না পারলে আমরা বলি, "দাঁড়া, তোকে এখুনি রিক্সাওয়ালার সাথে বিয়ে দিয়ে দিব। শুধুশুধু সময় আর পয়সা নষ্ট করছি তোর পেছনে।"
আমার বৌ শৈশবে এই কারণেই জানপ্রাণ দিয়ে পড়ালেখা করতো যাতে কোন রিক্সাওয়ালার সাথে তাঁর বিয়ে না হয়।
তাঁর বড় বোন একবার আমার শ্বাশুড়ীকে রিকোয়েস্ট করেছিল, "আম্মু, আমার বিয়ে কোন বাদামওয়ালার সাথে দিও। আমি তাইলে বাদাম খেতে পারবো।"
আমার মামাতো ভাই ছোটবেলায় খুব বেশি বেশি সাইকেল চালাতো। কারন মামী বলতো, "বড় হলেতো রিকশা চালাবি।"
সে জবাবে বলেছিল, "তাহলে একটা ছোট রিকশা কিনে দাও, এখন থেকেই প্র্যাকটিস করি।"
সে ধরেই নিয়েছিল তাঁর ভবিষ্যৎ রিক্সার প্যাডেল টেনেই কাটবে।
ভিকারুন্নেসার মেয়েটির আত্মহত্যার ঘটনায় এইসব ব্যাপার মনে পড়ে গেল। আমাদের দেশের শিক্ষকরা মানসিক সাপোর্টের পরিবর্তে অনেক সময়ে মানসিক টর্চার করে থাকেন। মনে করেন, এতে অপমানিত হয়ে হয়তো সে শুধরে যাবে। কিন্তু ফর্মুলা কাজ না করলে এর পরিণতি যে ভয়ংকরতম হবে, সেটা কী কেউ ভাবেন কখনও?
মেয়েটি পরীক্ষায় নকল করেছে। আমি আশা করছিনা বাংলাদেশের টিচাররা নকলের কারন খুঁজে বের করার চেষ্টা নিবেন। তাঁরা ধরেই নিবেন মেয়েটি বদমাইশ, পড়ালেখায় ফাঁকিবাজ, তাই নকল করে পাশ করার চেষ্টা নিয়েছে। এবং এর সমাধান হচ্ছে, বাবা মাকেও অপমান করা। এবং সেটাও মেয়েটির সামনেই।
স্কুলের ডিসিপ্লিন ভঙ্গ করায় আপনি টিসি দিয়ে দিন। কোনই সমস্যা নাই। কিন্তু পেপারে পড়লাম, মেয়েটির বাবা মা কে ডেকে এনে কঠিনতম অপমান করা হয়েছে।
বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে এই আচরণ খুবই বিশ্বাসযোগ্য। এইটা আশা করাও উচিৎ না যে টিচাররা বুঝতে পারবেন যে এই বয়সী বাচ্চাদের মানসিকতা খুবই সংবেদনশীল থাকে। সামান্য কিছুতেই তাঁরা অনেক বেশি রিয়েক্ট করে। এইটা আমি আশাও করিনা আমাদের দেশের স্কুলের শিক্ষক শিক্ষিকাদের কারোর চাইল্ড এডুকেশনের ওপর ডিগ্রি আছে। আচ্ছা, চাইল্ড এডুকেশনের উপর ডিগ্রি কী আমাদের দেশের কোন বিশ্ববিদ্যালয় অফার করে?
বাঙালি হিসেবে আমরা ছোট বড় অপরাধে অন্যকে অপমান করতে খুবই স্বচ্ছন্দ বোধ করি।
তখন রিটেইলে কাজ করতাম। এক ছেলে চুরি করতে গিয়ে ধরা পড়েছিল। বেশ বড় এমাউন্টের টাকা। ম্যানেজার যেভাবে তার সাথে কথা বলছিল, শুনে অবাক হচ্ছিলাম। "জেন্টেলম্যান" "স্যার" ইত্যাদি সম্মানসূচক সম্বোধন। পুলিশি মামলা পর্যন্ত হলো। কিন্তু ছেলেটিকে একবারও অপমান করা হলো না। তাঁর বাবা মাকে ডাকাডাকিতো বহুদূর।
আরেকবার আমার এক আপু বলেছিল তাঁর দোকানে এক বাঙালি টিনেজ মেয়ে কসমেটিক্স চুরি করতে গিয়ে ধরা খেয়েছিল। বয়স কম হওয়ায় ম্যানেজার পুলিশি মামলা করতে চায়নি, তবে মাকে ডেকে এনে সাবধান করতে চেয়েছিল এইজন্য যে ভবিষ্যতে এমন করলে পুলিশি মামলা হবে। সেটা তাঁর জীবন, ক্যারিয়ার তছনছ করে দিতে যথেষ্ট।
বাঙালি মা এসেই অপমানে লাল হয়ে মেয়েটিকে চড় মারা শুরু করলেন। সাদা চামড়ার ম্যানেজার উল্টো মেয়েটিকে বাঁচাতে তাঁকে আড়াল করে বললেন, "ম্যাম, আপনি শান্ত হন, এখানে এমন কিছুই হয়নি যে তাঁকে আপনি তাঁকে মারধর করবেন।"
বাচ্চাকে মারধর করা এদেশে ভয়াবহ অপরাধ। মানসিক টর্চার/এবিউজ করাও আপনাকে ক্রিমিনাল বানিয়ে দিবে। বেশিরভাগ সিরিয়াল কিলার, সাইকো, অথবা অপরাধীর ব্যাকগ্রাউন্ড গবেষণায় ধরা পড়ে তাদের শৈশবে তাদের উপর মানসিক অত্যাচার করা হতো।
আজকে গুছিয়ে লিখতে পারছি না। দুঃখিত। যা বলতে চাইছি, তাও বোঝাতে পারছি না। মনটা বিক্ষিপ্ত। অকালে কারোর মৃত্যু মেনে নিতে কষ্ট হয়। অপরিচিত হলেও খারাপ লাগে খুব। আহারে। মেয়েটির বাবা মা এখন উপলব্ধি করছেন সম্মানের চেয়েও সন্তানের মূল্য অনেক বেশি। কিন্তু সন্তানকেতো আর ফিরে পাবার উপায় নেই। কত স্বপ্ন, কত আশা সব নষ্ট হয়ে গেল।
স্কুলের শিক্ষকরা কী নিজেদের ভুল বুঝতে পারছেন? মেয়েটিতো হারিয়েই গেল। কেউ কী নিশ্চিত করতে পারবেন এমন ঘটনা আর কখনই ঘটবে না?

মন্তব্য ৯ টি রেটিং +৩/-০

মন্তব্য (৯) মন্তব্য লিখুন

১| ০৫ ই ডিসেম্বর, ২০১৮ ভোর ৫:৫৯

স্বপ্নীল ফিরোজ বলেছেন:

স্কুলের প্রিন্সিপাল ও আরো বেশ কজনের ফাঁসি হওয়া উচিত ।
কসাই হবার আর শিক্ষক হবার যোগ্যতা এক রকম না। এরা কসাই হবার যোগ্যতা নিয়ে শিক্ষক সেজে বসে আছে।

২| ০৫ ই ডিসেম্বর, ২০১৮ সকাল ৭:২৬

রাজীব নুর বলেছেন: এখানে দোষ শুধু শিক্ষিকা বা প্রিন্সিপালের নয়।
রাগের মাথায় একটা বলে দিলেই হবে না।
লজিক বলে একটা কথা আছে। আবেগ দিয়ে কবিতা লেখা যায় সিদ্দ্বান্ত নেওয়া ঠিক হবে।

৩| ০৫ ই ডিসেম্বর, ২০১৮ সকাল ৮:০০

মোহাম্মদ সাজ্জাদ হোসেন বলেছেন: কোন ক্ষমা নেই। দুঃ‌খিত আ‌মি ক্ষমা কর‌তে পার‌ছি না। শিক্ষ‌কের কাজ আর কসাই‌য়ের কাজ এক নয়। উনারা যোগ্যতায় কসাই‌য়ের চে‌য়েও নিম্নতর। তা‌দের অ‌তি‌রিক্ত অহমিকা আমা‌কে ব্য‌থিত ক‌রে‌ছে। উনা‌দের ক‌ঠোর শা‌স্তি এক প্রাপ্য হ‌য়ে গে‌ছে। উনা‌দের‌কে শা‌স্তি দেয়া এখন দেশ ও সমা‌জের কর্তব্য হ‌য়ে গে‌ছে।

৪| ০৫ ই ডিসেম্বর, ২০১৮ সকাল ৮:৪৩

মোঃ খুরশীদ আলম বলেছেন: ধর্মীয় শিক্ষার অনুশীলন হতে আমরা যতো দূরে ছিটকে পড়ছি ততই এইসব সমস্যা জোড়ালো হচ্ছে। তাই ধর্মীয় শিক্ষার অনুশীলন বাধ্যতামূলক করা উচিত বলে মনে করি।

৫| ০৫ ই ডিসেম্বর, ২০১৮ সকাল ৯:৫২

আর্কিওপটেরিক্স বলেছেন: পড়লাম

৬| ০৫ ই ডিসেম্বর, ২০১৮ দুপুর ১২:০৬

মোস্তফা সোহেল বলেছেন: খুব সুন্দর করে লিখেছেন।
আমাদের দেশের এই প্রেক্ষাপট হয়তো এত সহজেই পরিবর্তন হবে না।

৭| ০৫ ই ডিসেম্বর, ২০১৮ বিকাল ৩:০১

সামিউল ইসলাম বাবু বলেছেন: এই কবিতা পোষ্ট করেছিলাম তাই অনেকে বিভিন্ন কথা বলেছিলেন। ঘুরে অাসতে পারেন অামার ব্লগটি...


ধর্ষণে কাতর বাংলাদেশ

৮| ০৫ ই ডিসেম্বর, ২০১৮ বিকাল ৫:১৭

রাজীব নুর বলেছেন: জরুরি ভিত্তিতে ছেলেমেয়ের ওপর থেকে কোচিং সেন্টার, প্রাইভেট পড়া আর পরীক্ষার চাপ কমানো হোক।

৯| ০৯ ই ডিসেম্বর, ২০১৮ বিকাল ৪:৪১

কবির নাঈম দোদুল বলেছেন: অরিত্রির এ বিষয়টি এত বেশি আলোচিত কেন হয়েছে, সে কারণ আলোচনা করে আমি একটি ব্লগ লিখেছিলাম। ব্লগটি আমার ব্লগ সাইট মুক্ত রসুই থেকে পড়ে আসে পারেন, এখানে যান পড়তে। চায়লে আমার পোস্টগুলোও দেখে আসতে পারেন।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.