নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
আমি ঝন্ঝা, আমি ঘূর্ণি, আমি পথ-সমূখে যাহা পাই যাই চূর্ণি’। আমি নৃত্য-পাগল ছন্দ, আমি আপনার তালে নেচে যাই, আমি মুক্ত জীবনানন্দ। আমি হাম্বার, আমি ছায়ানট, আমি হিন্দোল, আমি চল-চঞ্চল, ঠমকি’ ছমকি’ পথে যেতে যেতে চকিতে চমকি’ ফিং দিয়া দিই তিন দোল; আমি চপলা-চপল হিন্দোল। আমি তাই করি ভাই যখন চাহে এ মন যা, করি শত্রুর সাথে গলাগলি, ধরি মৃত্যুর সাথে পান্জা, আমি উন্মাদ, আমি ঝন্ঝা! আমি মহামারী আমি ভীতি এ ধরিত্রীর; আমি শাসন-ত্রাসন, সংহার আমি উষ্ন চির-অধীর! বল বীর - আমি চির উন্নত শির!
মৌলবাদীদের একটা ব্যাপার ভাল - সেটা হচ্ছে তারা নিজেদের ফিলোসফিতে কনসিস্ট্যান্ট।
যেমন ধরেন ধর্মান্ধতা। ধর্মের কোন কিছু না পড়ে, না বুঝে, এর ওর কাছ থেকে দুই চারটা বয়ান শুনে নিজের মাথা থেকে কিছু একটা বানিয়ে তারা উগ্রবাদী আচরণ করতে কখনই পিছপা হবেনা। আপনি বলেন "নবী (সঃ) নূরের তৈরী না, বরং তিনিও মানুষ" এতেই দেখবেন আপনাকে "গুস্তাখে রাসূল (সঃ)" ট্যাগ দিয়ে মাথা ফেলতে দৌড়ে আসবে।
অথবা বলুন, ঈদে মিলাদুন্নবী পালন করা ঠিক না। তাইলেই দেখবেন রাস্তাঘাটে আপনাকে চড় থাপ্পড় লাত্থি গুতা মারা শুরু করবে। ক্ষেত্র বিশেষে কোপ।
যে কারনে বলছি যে ওদের এই কন্সিস্টেন্সি আচরণটা ভাল - তা হচ্ছে, আপনি ওদের থেকে আগেভাগেই সাবধান হয়ে ওদের ব্লক করে দিতে পারবেন। আপনি জানেন ওরা পরিস্থিতি ভেদে নিজের জাত, বর্ণ, চেহারা ইত্যাদি বদলাবে না। ওদের পরিত্যাগ করতে চাইলে অতি সহজেই সেটা করতে পারবেন।
নিজেদের "প্রগতিশীল" দাবি করা কতিপয় মানুষ কিন্তু নিজের রঙ পাল্টাতে ওস্তাদ। যেই ফিলোসফিকে ওরা মৌলবাদ বলে গালাগালি করে, সেই একই ফলোসফি নিজেদের হৃদয়ে খোদাই করে লালন করে। সবচেয়ে লেটেস্ট উদাহরণ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ৬৯ সালের মেয়েদের একটি গ্রূপ ছবি। সেখানে স্লিভলেস ব্লাউজ পড়া নারীদের ছবি দিয়ে বর্তমানের কিছু হিজাব/বোরখা পরিহিতা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রীর ছবি দিয়ে প্রমোট করা হচ্ছে "আমরা পিছিয়ে যাচ্ছি।"
প্রথম কথা, এগিয়ে যাওয়া পিছিয়ে যাওয়া কী পোশাক নির্ভর, নাকি মানসিকতা নির্ভর?
এইটা ঠিক আমাদের পোশাক আমাদের মানসিকতা রিফ্ল্যাকট করে। কিন্তু সবসময়েই কী তাই? প্রিন্সেস ডায়ানা এবং মাদার তেরেসা - দুইজনের মধ্যে বলতে পারবেন কে পিছিয়ে আছেন?
একজন ন্যাংটো নারী, যে ক্লাস ফাইভ পাশও করেনি, সে বেশি অগ্রসর, নাকি নিউক্লিয়ার সায়েন্টিস্ট বিজ্ঞানী - যিনি হিজাব পড়েন - তিনি বেশি অগ্রসর?
আবার বোরখা পড়া ডাক্তার নারী, যার কাজই হচ্ছে মানুষের পেছনে কথা বলে বেড়ানো, এর ওর গীবত গাওয়া - সে বেশি অগ্রসর? নাকি সাধারণ গৃহিনী, যিনি পর্দা করেননা, কিন্তু কারোর সাতেও থাকেন না, পাঁচেও থাকেন না, উপকার ছাড়া কারোর কোন অপকার করেন না - সেই নারী বেশি অগ্রসর? কে বেশি প্রগতিশীল?
উত্তর আমাকে দিতে হবেনা। ওটা আপনি নিজে চিন্তাভাবনা করে বের করুন।
এইবার আসে দ্বিতীয় প্রশ্নে, নারীর পোশাকের স্বাধীনতা।
ধরুন, কোন নারী সাগরে গিয়ে বিকিনি পড়তে চায়। খুবই ভাল। আপনি বাঁধা দেয়ার কে? তাঁর স্বামী? ভাই? বাবা? না। আপনার যদি দেখতে ভাল না লাগে, তাকাবেন না। তাঁর বেহেস্তে যাওয়ার শখ নেই, সে উলঙ্গ হয়ে ঘুরে বেড়াতে চায়। আপনি তাঁকে বাধ্য করতে পারেন না।
ঠিক যেমনটা আপনি দাড়ি রাখছেন বলে কারোর অধিকার নেই সেই দাড়ি টান দিয়ে ছেঁড়ার বা ক্লিন সেভ করিয়ে দেয়ার। আপনার শখের দাড়ি - কারোর কিছু যাওয়া আসার কথা না। এই লজিকটা মানেনতো? এইটাই পোশাকের স্বাধীনতাতো?
তাহলে কেউ যদি বোরখা পড়তে চায়, তাঁর নিজের শরীর ঢেকে রাখতে চায় - তাহলে আপনি বাঁধা দেয়ার কে? তাঁরা বাবা? স্বামী? ভাই? কেউ হন? তাঁর ইচ্ছা সে বেহেস্তে যেতে চায়, তাঁর ইচ্ছা সে সেই পোশাক পড়বে - আপনি টু শব্দটি উচ্চারণ করার কে? এইখানে কেন নিজেদের হিপোক্রেট প্রমান করেন?
কিছুদিন আগে থাগস অফ হিন্দুস্তান সিনেমাটা দেখলাম। ক্যাটরিনা কাইফের একটি নাচ আছে, যেখানে তাঁকে এতটাই খোলামেলা পোশাক পড়ানো হয়েছিল যে আরেকটু হলে ন্যাংটাই করে ছাড়তো। মাথায় রাখুন, ১৭৯৫ সালের বাঈজীর চরিত্র ছিল তাঁর। আমরা ১৮০০ ১৯০০ শতকের বাইজির ছবিও যখন দেখি প্রত্যেককে দেখি ইয়া লম্বা ঘাগড়া লেহেঙ্গা পোশাকে। কিন্তু আরও অন্যান্য হাজারটা ভুলের মতন এই ফিল্মে ডিরেক্টর সাহেব ক্যাটরিনাকে ২০২০ সালের নাইটক্লাবের পোশাক পড়িয়ে সেটে নাচিয়েছেন। এই গর্ধবটা ভেবেছিল পাবলিক ন্যাংটা নায়িকা দেখে খুশি হয়ে সেটের ব্যাকড্রপে লাইট বাল্বের স্যান্ডেলিয়ারের মতন হাস্যকর সব ভুল ধরতে পারবেনা। ধরা খাওয়ায় উচিৎ শিক্ষা হয়েছে আশা করি।
পয়েন্ট হচ্ছে, নায়িকাদের কেন সবসময়ে এমন স্বল্প বসনায় পরিবেশন করা হয় কখনও ভেবেছেন? বরফের পাহাড়ে নাচানাচি হবে, নায়ক সোয়েটারের উপর জ্যাকেট, তার উপর মাফলার চড়িয়ে গানে ঠোঁট মেলাবে। এদিকে নায়িকাকে পাতলা কাপড়ের শাড়ি পড়িয়ে নাচাবে। কেন?
"আইটেম সং" সবসময়ে নায়িকাকে খোলামেলা হতে হবে। কোন নায়কের আইটেম সং থাকে না। আর যদি থাকেও, তাহলেও তাঁর সাথে আশেপাশে এক্সট্রারা বিবস্ত্র অবস্থাতেই নাচবে। কোন নায়িকা যদি আপত্তি করে, তাহলে এই প্রগতিশীলরা বাণী শুনাবেন, "তোমার শরীর কেন ঢেকে রাখতে হবে? স্মার্ট হও, দেখিয়ে দাও পৃথিবীকে তুমি কারোর পরোয়া করো না। ইত্যাদি ইত্যাদি।"
মেয়েও তখন ভাবতে শুরু করবে ন্যাংটা না হলে বুঝিবা স্মার্ট হওয়া যাবে না।
হলিউডে কিছুদিন আগেও কিছু নায়িকা ন্যুড সীনে অভিনয়ে বাধ্য করা নিয়ে আপত্তি তুলেছিল। ইচ্ছের বিরুদ্ধে তাঁদের কেন ন্যুড হতে হবে? খুবই ভ্যালিড পয়েন্ট। কেউ অবশ্য তেমন নড়াচড়া করেনি। মিটু মুভমেন্ট নিয়ে সবাই ব্যস্ত ছিল। তবে একদিন হয়তো কেউ আপত্তি করবে।
অনেক আগে একবার কোথায় যেন পড়েছিলাম, খুব সম্ভব এভানেসেন্সের এমি লি এক সাক্ষাৎকারে "তুমি কেন অন্যান্যদের মতন খোলামেলা হও না?" প্রশ্নে বলেছিল, "আমি খোলামেলা পোশাক পড়লে লোকে আমার চামড়া দেখবে, গানে মনোযোগ দিবে কখন?"
পয়েন্টটা বুঝতে পারছেন?
আপনি খোলামেলা হলে আপনার মাথায় কী চলছে, আপনার চিন্তা ভাবনা নিয়ে আমরা পুরুষেরা বিন্দুমাত্র মাথা ঘামাবো না। আমরা শরীর দেখায় মনোযোগ দেব।
আপনি নিজেকে সুন্দরভাবে উপস্থাপন করলে (পর্দা/বোরখা ছাড়াও সুন্দরভাবে উপস্থাপন করা যায়, চাকরির ইন্টারভিউর সময়ে সবাই সুন্দরভাবেই উপস্থিত হয়) আপনার মন মানসিকতায় ফোকাস করতে পারবো।
মাথায় রাখুন, প্রগতিশীলতা আমাদের মস্তিষ্কে। বোরখা পড়ুন কী বিকিনি, মাথাকে স্বচ্ছ রাখার চেষ্টা করুন।
আর যারা নিজেদের প্রগতিশীল দাবি করেন, ভণ্ডামি ত্যাগ করুন। একটি ফিলোসফিতে কনসিস্ট্যান্ট হন। তাহলে নিজেও ভাল থাকবেন, অন্যকেও ভাল রাখবেন।
যদি কারোর মনে আঘাত দিয়ে থাকি, তাহলে বুঝে নিবেন নিশ্চই আপনার মধ্যে এই হিপোক্রেসি স্বভাব আছে, যে কারনে খারাপ লেগেছে। আমাকে গালাগালি করতে চাইলে করতে পারেন, তবুও নিজেকে শুধরান।
২| ০২ রা মার্চ, ২০১৯ সকাল ৭:৩২
রাজীব নুর বলেছেন: মৌলবাদীদের মাথায় ধর্ম বাসা বেঁধেছে তাই তারা অন্ধকারে আছে। এই ভূত তাদের মাথা থেকে কখনও বের হবে না।
৩| ০২ রা মার্চ, ২০১৯ বিকাল ৪:০৭
মাহমুদুর রহমান বলেছেন: মৌলবাদ হলে ধর্মের মূলের সাথে যার সম্পর্ক যেমনটা সম্পর্ক শিকড়ের সঙ্গে একটি গাছের।যারা অন্ধবিশ্বাস করে তাঁদেরও আমি খারাপ বলবো না।তবে এই বিশ্বাস যেন মূর্খতায় সঙ্গে না মিশে যায়।
©somewhere in net ltd.
১| ০২ রা মার্চ, ২০১৯ ভোর ৪:০৯
রাফা বলেছেন: শুধু প্রগতিশীলরা মুখোশের আড়ালে মুখ লুকিয়ে রাখেনা ।মৌলবাদিরা কতটা বিপদজনক আপনার ধারনাতেও নেই।থাকলে এই লেখাতে উল্লেখ থাকা উচিত ছিলো।
বাস্তব অভিজ্ঞতা থেকে বলছি ,মৌলবাদিরা যখন কাউকে টার্গেট করে তখন শতভাগ প্রগতিশীলতার পোষাক গায়ে চড়ায়।আচার ব্যাবহারে প্রগতিশীলদের চাইতে অধিকতর প্রগতিশীল হয়ে যায়।হিপোক্রেসিতে কেউ কারো চাইতে কম যায়না।
ধন্যবাদ,ম.চৌধুরি।