নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
আমি ঝন্ঝা, আমি ঘূর্ণি, আমি পথ-সমূখে যাহা পাই যাই চূর্ণি’। আমি নৃত্য-পাগল ছন্দ, আমি আপনার তালে নেচে যাই, আমি মুক্ত জীবনানন্দ। আমি হাম্বার, আমি ছায়ানট, আমি হিন্দোল, আমি চল-চঞ্চল, ঠমকি’ ছমকি’ পথে যেতে যেতে চকিতে চমকি’ ফিং দিয়া দিই তিন দোল; আমি চপলা-চপল হিন্দোল। আমি তাই করি ভাই যখন চাহে এ মন যা, করি শত্রুর সাথে গলাগলি, ধরি মৃত্যুর সাথে পান্জা, আমি উন্মাদ, আমি ঝন্ঝা! আমি মহামারী আমি ভীতি এ ধরিত্রীর; আমি শাসন-ত্রাসন, সংহার আমি উষ্ন চির-অধীর! বল বীর - আমি চির উন্নত শির!
অ্যামেরিকায় এসে প্রথম কালচারাল শক খাই লস এঞ্জেলেস এয়ারপোর্ট থেকে বেরিয়েই। একটি দালানে সাইনবোর্ডে বড় বড় করে লেখা "জেন্টেলম্যান্স ক্লাব।" আমাদের দেশের যেটা "নিষিদ্ধ পল্লী।"
আমাদের নিষিদ্ধ পল্লীগুলোতে কেউ এইভাবে বিলবোর্ডে সাইন বোর্ডে লিখে লিখে দর্শকের দৃষ্টি আকর্ষণের চেষ্টা করেনা। এদেশ "প্রচারেই প্রসার" তত্বে বিশ্বাসী।
বুঝে গেলাম, এই দেশে বসবাসটা ইন্টারেস্টিং হতে চলেছে।
তারপরে শুরু হলো শকের পর শক। কোনটা ফেলে কোনটা বলবো গুছিয়ে উঠতে পারছি না।
তবে প্রথম ধাক্কা খেলাম নারী পুরুষের অবাধ চুম্বন দৃশ্যে। আমরা যেটা আগে শুধু স্টার মুভিজ এবং এইচবিওতে দেখতাম, তাও বড় কেউ সামনে বসা থাকলে রিমোট দিয়ে চ্যানেল পাল্টে দিতাম।
বলিউড সিনেমায় ইমরান হাশমি সাহেব বিপ্লব এনেছিলেন। চুম্বন দেবতা ছিলেন তিনি। প্রতিটা সিনেমাতেই প্রসাদ বিতরণ করতেন। এদেশে সবাই চুম্বন দেবতা। ইচ্ছেমতন প্রসাদ বিতরণ চলে। স্থান কাল পাত্র কেউ পরোয়া করেনা।
তবে নারী পুরুষের এই অবাধ চুম্বের চেয়েও বড় ধাক্কা খেয়েছিলাম পুরুষে পুরুষে চুম্বন ও হাত ধরাধরি করে হাঁটার দৃশ্য দেখে।
আমাদের পুরুষেরা তাঁদের পুরুষ বন্ধুদের হাতে হাত ধরে অবাধে হাঁটাহাঁটি করেন। কেউ কেউতো কাঁধে হাত দিয়ে চলেন। দৃশ্যটা সেখানে খুবই স্বাভাবিক।
আমার এক ব্রিটিশ দুলাভাই (সিলেটি, তবে ওখানেই জন্ম এবং বেড়ে ওঠা) জীবনে প্রথমবারের মতন ঢাকায় গিয়ে ভীষণ ধাক্কা খেয়েছিলেন। অতি লজ্জিত কণ্ঠে আমাকে বলেছিলেন, "এদেশে ছেলেরা এমন কেন? তোরা মেয়েদের হাত ধরে হাঁট, এভাবে ছেলে ছেলেতে মেলামেশা, ঘষাঘষি - কেউ খারাপ বলে না?"
আমি তখন মজা পেয়ে বললাম, "আরে না। আমাদের এখানেতো এক ছেলে বন্ধু যদি আরেক ছেলে বন্ধুর বাড়িতে রাত কাটাতে চায়, এক বিছানায় শুতে চায়, আমাদের প্যারেন্টসরা হাসিমুখে রাজি হন।"
দুলাভাই চোয়াল ঝুলিয়ে বললেন, "আস্তাগফিরুল্লাহ!"
তো সেটা ছিল হাসি ঠাট্টা। কিন্তু এখানে ব্যাপারটা সিরিয়াস। ক্যালিফোর্নিয়ায় এ দৃশ্য অহরহ দেখা যেত। আমাকেও একবার একজন ছেলে জিজ্ঞেস করেছিল আমার কাজ কয়টায় শেষ হবে। সে এলাকায় (ডালাস) নতুন এসেছে। আমি কী তাঁকে ঘুরিয়ে ফিরিয়ে দেখাতে পারবো কিনা।
যদিও কাজ মাত্র আধঘন্টা পরেই শেষ হচ্ছিল, তারপরেও চোখমুখ শক্ত করে বলছিলাম "আমি মাত্রই কাজেই এসেছি। এবং আমিও এলাকায় নতুন, কিছুই চিনিনা। স্যরি।"
ছেলেটা উৎফুল্ল স্বরে বলেছিল, "তাহলেতো আরও ভাল! দুইজনে মিলে আবিষ্কার করবো। খুব মজা হবে!"
কাস্টমার। দুর্ব্যবহার করা যায় না। তাই আমি যান্ত্রিক স্বরে বলেছিলাম, "দুঃখিত। কাজ শেষে আমার পড়াশোনা আছে। পরীক্ষা চলছে। আমাকে পড়তে হবে।"
ছেলেটা বুঝতে পেরেছিল আমার আগ্রহ নেই। মর্মাহত হয়েছিল বোধয়। মেয়েরা কেন অবলীলায় ছেলেদের কুসুম হৃদয় ভেঙ্গে দেয় সেটা সেদিন বুঝতে পেরেছিলাম।
যাই হোক, আগে টেক্সাসে কম দেখা গেলেও এখন চোখ সওয়া হয়ে গেছে। আমার নিজেরই বেশ কিছু বন্ধুবান্ধব আছেন সমকামী। হোমোফোবিয়া কেটে গেছে বহু আগেই। ওরা কিভাবে জীবন কাটায় সে ব্যাপারে আমার নাক গলানোর বিন্দুমাত্র আগ্রহ নেই।
কিন্তু ভিতরে ভিতরে আমরাতো এখনও বাঙালি প্যারেন্টসই রয়ে গেছি।
আমাদের এক বান্ধবী তাঁর চার বছরের ছেলেকে প্রতিদিন এই বুলি মুখস্ত করায়, "বাবা তুই নিজের জন্য একটা মাইয়া জোগাড় করবি। সাদা হোক, কালা হোক, ইন্ডিয়ান হোক, চাইনিজ হোক - কোনই সমস্যা নাই। আমার একটাই কন্ডিশন, আল্লাহর ওয়াস্তে তুই নিজের জন্য একটা মাইয়া জোগাড় করবি।"
কী দারুণভাবে আমাদের মায়েদের ডিমান্ড বদলে গেল।
একটা সময়ে আমাদের বাংলাদেশী মায়েরাই (এখনও) পুত্রবধূ বাছাইয়ে কত নখরা যে করতো। এই মেয়ের নাক খাড়া, ঐ মেয়ের বোচা, এই মেয়ের চোখ টানা, ঐ মেয়ের বুজা - আর রং শ্যামলা হলেতো কথাই নাই। এখন সবাই লাইনে ফিরেছে। "মেয়ে হলেই হলো।"
তো আমার ছেলেও মন্টিসোরিতে যাওয়া শুরুর পরে থেকে মাশাল্লাহ নিজের ক্লাসের মেয়ে মহলে তাঁর ডিমান্ড ভালই। বয়সের তুলনায় একটু লম্বা হওয়ায়, প্রায়ই তাঁকে তাঁর চেয়ে এক বছরের বড় গ্রূপের সাথে মেশানো হয়। দেখা যায় সে কিছু কথা কুতিয়ে কাতিয়ে বলতে পারলেও তাঁর সহপাঠীরা বেশ পটর পটর করে কথা বলতে পারে।
আগের স্কুলে দুই আরব কন্যার প্রতিযোগিতার কাহিনীতো বলেছিলাম। কথা উঠায় আবারও সংক্ষেপে মনে করিয়ে দেই।
একজন আমাকে "ড্যাডি" বলে ডাকতো, তো আরেকজন আমার বৌয়ের সাথে ফটো তুলতো। দুইটা বাচ্চাই দেখতে পুতুলের মতন। ছেলে ক্লাসে গেলেই "হাই রিসালাত" বলে দুইজনই ছুটে আসতো তাঁর জ্যাকেট খুলে হ্যাঙ্গারে ঝুলিয়ে রাখার জন্য। তাঁর সাথেই দুইজনে খেলতে আগ্রহী।নিজেদের মধ্যে কম্পিটিশন।
এদিকে যাকে নিয়ে এত আগ্রহ, সে একেবারে অ্যাংরি ইয়াং ম্যান ভাব নিয়ে ঘুরে বেড়ায়। নিজের মনে খেলে। পাত্তা টাত্তা দেয় না। খুব সম্ভব বাঙালি এক মেয়েকে ভালবেসে বসে আছে।
যাই হোক, আগের স্কুলের এক টিচারের অসভ্যতায় স্কুল পরিবর্তন করে নতুন স্কুলে দেয়ার পরে এখানেও দেখলাম দুই একজন জুটে গেছে।
ছেলেকে নিতে যাবার সময়ে এক মেয়ে নিজে থেকেই এগিয়ে এসে পরিচিত হলো।
"হ্যালো আমার নাম লিডিয়া, আমি আর রিসালাত এক সাথে খেলি। আজকে আমরা দুইজন দোলনায় চরেছি।"
আমি আবার শ্বশুর হিসেবে ভীষণ দিল দরিয়া। ছেলের পছন্দই আমার পছন্দ। ছেলের না পছন্দও আমার পছন্দ। ওর ক্লাসের প্রতিটা মেয়েকে আমি তাই পুত্রবধূর চোখে দেখি।
আমার বৌ এইসবে খুবই মজা পায়। দেশে আমার শ্বাশুড়ীকে ফোনে শোনায়। ওপাশ থেকেও সবাই আনন্দ পায়।
লিডিয়া তারপর খুবই নির্বিকার স্বরে বললো, "আমার ফিফ্থ বার্থডেতে আমার বাবা মা বিয়ে করবে।"
আমার বৌ আমার দিকে হা করে তাকিয়ে রইলো। বেচারি মাত্রই আরেকটা কালচারাল শক খেলো। ওয়েলকাম টু অ্যামেরিকা।
"ওহ দারুন!" জেনুইন খুশি গলায় বললাম, "তুমি কী একসাইটেড লিডিয়া?"
সে জানালো "ইয়েস আই অ্যাম।"
তারপর লিডিয়াকে জিজ্ঞেস করলাম, "তোমার কী রিসালাতের সাথে খেলতে ভাল লাগে?"
সে সরল মনেই জবাব দিল, "হ্যা। কিন্তু মাঝে মাঝে ও ডাইপারে হাগু করে দেয়। তখন ভাল লাগেনা। হাগুতে অনেক গন্ধ।"
আমি হো হো করে হেসে দিলাম।
আহারে আমার ছেলের প্রেম কাহিনী! গার্লফ্রেন্ডের সামনে ইজ্জতের মারামারি।
২| ২০ শে মার্চ, ২০১৯ সকাল ১০:১৬
বিদ্রোহী ভৃগু বলেছেন: হা হা হা
শেষমেষ ইজ্জতের বারোটা বাজায় দিল পুত্রবধু
৩| ২০ শে মার্চ, ২০১৯ সকাল ১০:২৩
পবিত্র হোসাইন বলেছেন: আপনার গল্পে ছোট ছোট অনেক স্মৃতি মনে পরে গেল ।
৪| ২০ শে মার্চ, ২০১৯ সকাল ১১:৪৩
হাসান রাজু বলেছেন: ই-স্কুল থাইক্যা হাইগগা আইছে । এইডাও কালচারাল শক । এই বাংলায় এই কাম করলে তারে ক্ষ্যাপাইতে ক্ষ্যাপাইতে স্কুল বদলাইতে বাধ্য করত।
৫| ২০ শে মার্চ, ২০১৯ দুপুর ১:২৭
রাজীব নুর বলেছেন: আমেরিকা বড় মজার দেশ।
এবার মৃত্যুর পর আল্লাহ যদি আমাকে আবার পৃথিবীতে পাঠান তাহলে আল্লাহকে অনুরোধ করবো আমাকে যেন আমেরিকায় পাঠান।
৬| ২০ শে মার্চ, ২০১৯ দুপুর ২:২৪
জাহিদ অনিক বলেছেন: হা হা হা। দারুণ অভিজ্ঞতা শেয়ার। ভালো লাগছে পড়তে
৭| ২০ শে মার্চ, ২০১৯ দুপুর ২:৫৩
আকতার আর হোসাইন বলেছেন: হাহাহা... এ কেমন কালচারাল শকড.
৮| ২০ শে মার্চ, ২০১৯ বিকাল ৪:০১
মোঃ মাইদুল সরকার বলেছেন:
এই না হলে আমেরিকা।
৯| ২০ শে মার্চ, ২০১৯ বিকাল ৪:১০
মাহমুদুর রহমান বলেছেন: বিয়ে-শাদীর ব্যাপারে এইসব বাংলাদেশ একসময় দেখা হতো।এখন আর এসব কেউ দেখে না।
১০| ২০ শে মার্চ, ২০১৯ বিকাল ৫:২১
নীল আকাশ বলেছেন: কি যে দিন কাল পড়েছে?
এদের রুচি এতই নীচে কিভাবে নামল সেটা আসলেই চিন্তার ব্যাপার!
একটা ছেলে আরেকটা ছেলের দেহে কি দেখে আগ্রহ পায় আল্লাহ মালুম??
আপনার এইবারে লেখাটা বেশ মজাদার হয়েছে। বেশ কয়েকবার পড়লাম।
ধন্যবাদ আপনার এক্সপেরিয়েন্স শেয়ার করার জন্য!!
১১| ২১ শে মার্চ, ২০১৯ রাত ১২:৩৬
রাফা বলেছেন: বিব্রত হোতে হয় স্কুলে যখন বিশেষ বেলুন ও অন্যান্য পদ্ধতি শিক্ষা দেওয়া হয়।এটাই হলো সাবধানতা। মজা করে লিখলেও মেয়ে থাকলে বিব্রত হোতে হয়।
ধন্যবাদ,ম.চৌধুরি।
১২| ২১ শে মার্চ, ২০১৯ দুপুর ১২:৪৭
কিশোর মাইনু বলেছেন: হা হা হা,
হাসতে হাসতে পেট ব্যাথা হইয়া গেল।
এত পুত্রবধু দিয়ে করবেন কি?!?!?
আপনার পুত্র সাম্লাতে পারবে এতগুলো?!?!?
১৩| ২১ শে মার্চ, ২০১৯ বিকাল ৪:২৮
গরল বলেছেন: আমি প্রথম শক খেয়েছিলাম যখন জন্মদিনের দাওয়াত খাওয়ার পর দেখি চাঁদা তুলছে খাওয়ার বিল পরিশোধের জন্য।
©somewhere in net ltd.
১| ২০ শে মার্চ, ২০১৯ সকাল ১০:১৬
আমি মুক্তা বলেছেন: চমৎকার কালচারাল শক! ভালো লাগলো লেখা।