নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
আমি ঝন্ঝা, আমি ঘূর্ণি, আমি পথ-সমূখে যাহা পাই যাই চূর্ণি’। আমি নৃত্য-পাগল ছন্দ, আমি আপনার তালে নেচে যাই, আমি মুক্ত জীবনানন্দ। আমি হাম্বার, আমি ছায়ানট, আমি হিন্দোল, আমি চল-চঞ্চল, ঠমকি’ ছমকি’ পথে যেতে যেতে চকিতে চমকি’ ফিং দিয়া দিই তিন দোল; আমি চপলা-চপল হিন্দোল। আমি তাই করি ভাই যখন চাহে এ মন যা, করি শত্রুর সাথে গলাগলি, ধরি মৃত্যুর সাথে পান্জা, আমি উন্মাদ, আমি ঝন্ঝা! আমি মহামারী আমি ভীতি এ ধরিত্রীর; আমি শাসন-ত্রাসন, সংহার আমি উষ্ন চির-অধীর! বল বীর - আমি চির উন্নত শির!
মনে করুন, আমি বিয়ে করেছি। দীর্ঘদিন প্রেম করে মেয়ের মন জয় করে পারিবারিক সম্মতিতে বিয়ে হয়েছে।
সংসার জীবন শুরুর পর প্রথম কিছুদিন ভাল কাটলো। এরপরে শুরু হলো ঝামেলা।
বৌ বলে আমি নাকি তাঁকে আগের মতন ভালবাসিনা। আমার অভিযোগ সে আমাকে বুঝেনা। ও শপিং করতে পছন্দ করে। আমার উপার্জন সীমিত। সে নিজের হাতখরচের জন্য চাকরি করতে চায়। আমি কনজারভেটিভ বাঙালি, বৌর চাকরি করা মেনে নিতে পারবো না। ও ক্যারিয়ার গড়তে চায়, আমি চাই সংসারী হতে। বাচ্চাকাচ্চা নিতে। এইসব টুটাফুটা ইস্যু নিয়ে প্রতিদিন ঘরে ঝগড়াঝাটি হচ্ছে। প্রতিদিনের অশান্তি। নানানভাবে আলোচনার টেবিলে বসা হয়েছে। নিজেরা একান্তে আলোচনা করেছি। পারিবারিকভাবে মধ্যস্থতারও চেষ্টা চলেছে। কিছুতেই কিছু লাভ হয়নি। আমরা কেউই কারোর দাবিতে এক চুল পরিমান ছাড় দিতে রাজি নই। ও ডিভোর্স চায়। আমি দিতে নারাজ। জোর জবরদস্তি করে তাঁকে ঘরে বেঁধে রেখেছি। ঝগড়া হলে চড় থাপ্পড় দেই। আমার সাথে শক্তিতে পেরে না উঠে সে ঘরের কোণে গিয়ে কাঁদে। এইভাবেই চলছে জীবন।
এখন আপনারা বলেন, এইটা কী কোন সুস্থ সংসার জীবনের বৈশিষ্ট্য?
এই কাজ করে আমি সুখী হতে পারবো? সে পারবে? আমাদের বাচ্চারা? আমাদের পরিবার? এই অসুস্থতায় কার লাভ হচ্ছে? কারোরই না। তবে ক্ষতি সবারই হচ্ছে।
এমন দৃশ্য অহরহ দেখা যায় না? পৃথিবীব্যাপী কোটি কোটি গল্প উপন্যাস লেখা হয়েছে এই দ্বন্দ্বের উপর ভিত্তি করে। লাখে লাখে সিনেমাও তৈরী হয়েছে। ভবিষ্যতেও হবে।
পারিবারিক উদাহরণ দিয়ে শুরু করলাম যাতে বুঝতে সহজ হয়।
এইবার উদাহরণটা রাজনৈতিক করা হোক। কন্টেক্স্ট একই থাকবে। পাত্র পাত্রী বদলে যাবে।
ইতিহাস বলে, এক ভারতীয় ব্যারিস্টার ভদ্রলোক টিকিট কেটে ট্রেনের ফার্স্ট ক্লাস কামরায় চড়ে যাচ্ছিলেন। সাউথ আফ্রিকায় এক শ্বেতাঙ্গ বর্ণবাদী বদমাইশ পুলিশ ডেকে সেই ভারতীয়কে ফুটপাথে ছুড়ে ফেলে। ভদ্রলোকটির নাম মোহনদাস গান্ধী। তিনি এই ঘটনার পর আন্দোলন গড়ে তোলেন, ব্রিটিশ সাম্রাজ্যে প্রতিটা নাগরিকের নাগরিক অধিকার নিশ্চিৎ করতে হবে। লন্ডনে বসবাসকারী এক শ্বেতাঙ্গ ব্রিটিশ যে নাগরিক সুযোগ সুবিধা পাবে, ভারতের গহীন গ্রামে রোদে পোড়া বাদামি চামড়ার এক গরিব কৃষকও সেই একই নাগরিক সুবিধা পাবে। রাষ্ট্রের চোখে সবাই সমান।
তিনি ভারতীয়দের মন থেকেও এই বৈষম্য দূর করার উদ্যোগ নিলেন। হরিজন সেবক সংঘ তৈরী করলেন। সমাজে অচ্ছুৎ সম্প্রদায়ের অধিকার আন্দোলন। নিজেই ঝাড়ু হাতে গণটয়লেট পরিষ্কার করতেন। শুধু প্রমান করতে যে ঈশ্বরের চোখে সবাই সমান। খোদ ভারতীয়রাই এই মহাত্মার মহানুভবতা মানতে পারেনি।
বলাই বাহুল্য, ব্রিটিশরাও তাঁর দাবিতে রাজি হয়নি। যে কারনে এককালে যে সাম্রাজ্যে কখনও সূর্য ডুবতো না, আজকে একটি পিচ্চি দেশ হয়ে ইউরোপের কোনায় পড়ে আছে।
আমাদের পূর্বপুরুষেরা তাঁদের উত্তরপুরুষদের সুস্থ, স্বাধীন ও উন্নত জীবনের জন্য আন্দোলন করে স্বাধীন পতাকা ছিনিয়ে এনেছেন। প্রথমে ভাগ হলো ভারত। পাকিস্তান তৈরিতে সবচেয়ে বড় অবদান ছিল কিন্তু বাঙালিদের। তাঁদের আন্দোলন, তাঁদের আত্মত্যাগ ইত্যাদির উপর ভিত্তি করে পাকিস্তান সৃষ্টি হলো। লাভ ম্যারেজ বলা চলে। এবং তারপরেই শুরু হলো ঠোকাঠুকি। ভাষা, সামাজিক, অর্থনৈতিক, রাজনৈতিক, সামরিক বৈষম্য ইত্যাদি নিয়ে প্রায়ই ঝগড়া হতে লাগলো। আমরা করলাম স্বাধীন, তোমরা রাজধানী করলে করাচি হয়ে ইসলামাবাদে। আমরা করলাম আন্দোলন, তোমরা রাষ্ট্রভাষা উর্দু সহ নানান ফাজলামি জুড়ে দিলা। আমরা করলাম ছয় দফা দাবি, তোমরা চালালে বুলেট। অবশেষে প্রতিদিনকার ঝগড়াঝাটি শেষে ১৯৭১ সালে আমাদের তালাক হয়ে গেল। ডার্টি ডিভোর্স। তুমি তোমার পথ দেখ, আমি আমার রাস্তা বুঝে নিব। ভবিষ্যতে কখনই যেন আমাদের একের পথ অন্যের পথে এসে না মেলে।
ডিসক্লেইমার, বাংলাদেশের স্বাধীনতা সংগ্রামকে স্বামী-স্ত্রীর দাম্পত্য দ্বন্দ্বের সাথে তুলনা করলাম যেন পাঠকের বুঝতে সুবিধা হয়, মুক্তিযুদ্ধকে খাটো করতে নয়। তারপরেও কিছু চেতনাবাজ সস্তা চেতনা দেখাতে উপরের প্যারা কোট করে ফাজলামি শুরু করে দিবে আমি নিশ্চিত। ওদের কাজই এইটা। ফ্যাসাদ তৈরী করা। অতিরিক্ত বিরক্তিকর।
তো যা বলছিলাম, একটি ব্যাপার তিন ক্ষেত্রেই লক্ষ্যণীয়। স্বামীটির সাথে, ব্রিটিশদের সাথে বা পাকিস্তানিদের সাথে কেবল কিছু বেসিক অধিকার ফুলফিল্ড হলেই সংসার করা যেত। সেই অধিকারগুলো দিতে চায়নি বলেই অশান্তি সৃষ্টি হয়েছে, পরবর্তীতে ডার্টি ডিভোর্স।
এইবার বলি "ইউনাইটেড স্টেটস অফ অ্যামেরিকা" কিভাবে কাজ করে। কখনও কী ভেবেছেন, পঞ্চাশটি আলাদা আলাদা রাষ্ট্র নিয়ে কিভাবে একটি দেশ সেই ১৭৭৬ সাল থেকে এখনও টিকে আছে? ব্রিটিশ সাম্রাজ্য লোপ পেল। সোভিয়েত ইউনিয়ন ডুবে গেল। টিকতে পারেনি মহাশক্তিশালী অটোম্যান সাম্রাজ্যও। অ্যামেরিকা এখনও অক্ষত আছে। কারন, এই দেশের নাগরিক অধিকার সবার জন্য সমান। সংবিধান সেটি নিশ্চিত করে।
হ্যা, এইটা সত্য অ্যামেরিকারও ইতিহাসে একবার গৃহযুদ্ধ বেঁধেছিল। আব্রাহাম লিংকন এই দেশের ইতিহাসে অমর হয়ে আছেন কেবল সেই দুঃসময়ে দেশের একতা ধরে রাখার কৃতিত্বেই। অন্যান্য সময়েও নানান আন্দোলন হয়েছে। কৃষ্ণাঙ্গরাতো এখনও তাঁদের সমান অধিকারের জন্য লড়ছে। কিন্তু দেশ ভাগ হবার মতন পরিস্থিতি কখনই সৃষ্টি হয়নি।
অ্যামেরিকার প্রতিটা রাষ্ট্রে আলাদা আলাদা করে সংবিধান আছে। আছে আলাদা আলাদা রাষ্ট্রীয় আইন। আবার সবগুলিকে ট্রাম্প (ডোনাল্ড ট্রাম্প না, এই ট্রাম্প হচ্ছে "টেক্কার" ট্রাম্প) করে ফেডারেল আইন। যেমন, কিছুদিন আগেও ম্যাসাচুসেটস ও ক্যালিফর্নিয়া রাষ্ট্রে সমকামী বিয়ে আইন চালু ছিল। টেক্সাস কনজারভেটিভ রাষ্ট্র। এখানে সমকামী বিয়ে আইন চালু করা সম্ভব না। তাই টেক্সান গে কাপলের বিয়ে করতে মন চাইলে তাঁরা যেখানে আইনত বাঁধা নেই, সেই রাষ্ট্রে গিয়ে বিয়ে করে টেক্সাসে ফেরত আসতো। অন্য রাষ্ট্রে বিয়ে হয়ে গেলে টেক্সাস সেই বিয়ে বাতিল করার অধিকার রাখে না। যখন এটি ফেডারেল আইন হয়ে গেল, তখন আর টেক্সাসের কোন ক্ষমতা থাকলো না কাউকে বিয়ে করা ঠ্যাকাতে। বুঝাতে পেরেছি?
যেমন আরেকটি উদাহরণ দেই। "খুনের শাস্তি মৃত্যুদন্ড" এই আইন টেক্সাসে চালু থাকলেও অনেক রাষ্ট্রেই কিন্তু নেই। কাজেই যে খুনি টেক্সাসে অপরাধের জন্য ফাঁসিতে ঝুলে যাচ্ছে, অন্য রাষ্ট্রে একই অপরাধ করে সরকারি খরচে আজীবন জেল খাটছে। আপনারা শুনলে অবাক হতে পারেন, গাঁজা অনেক রাষ্ট্রে লিগ্যাল, অনেক রাষ্ট্রে ধরা পড়লে চাকরি হারাবেন, সাথে জেলও আলাদা পাওনা। এদেশে প্রতিটা অঙ্গরাজ্য স্বাধীন, নিজেদের আইন আছে, গভর্নর আছে, স্টেট, কাউন্টি, সিটি সব চলে নিজস্ব নিয়মে। সবার মাথার উপরে কনস্টিটিউশন।
এই দেশের সরকার নাগরিকদের ন্যায্য অধিকার নিয়ে কখনই ধানাই পানাই করেনা। হ্যা, আপনি যদি এখন দাবি করেন যে আপনাদের খুন করার লাইসেন্স দিতে হবে, যাকে তাকে যখন তখন খুন করতে পারবেন, কেউ কিছু বলতে পারবে না। কিংবা যে কেউ যার তার বাড়িতে চুরি ডাকাতি করার অধিকার রাখবে, তাহলে সরকার অবশ্যই সেটা মানবে না। দাবি পূরণের প্রধান শর্ত হচ্ছে "ন্যায্য" হতে হবে।
এখন যদি পরিস্থিতি এমন হতো যে মানুষ ন্যায্য দাবি করছে, যেমন ১৯৫০-৬০ এর দশকে কালোরা বর্ণবাদ বিরোধী আন্দোলন করেছেন, এবং সরকার সেই দাবি মেটাতে অপারগতা প্রকাশ করেছে, উল্টো জোর করে মিলিটারি দিয়ে দাবিয়ে রাখার চেষ্টা করছে - তাহলে নিশ্চিত থাকুন এই দেশ ভেঙে গুড়িয়ে যেত। সেই দুঃসময়ে কালোদের প্রতি কেমন বর্ণবাদী আচরণ করা হতো বলি। তাঁদের আলাদা রাস্তা ছিল, টয়লেট ছিল আলাদা, সাদাদের সাথে তাঁদের একই স্কুলে পড়ার অধিকার ছিল না। পাবলিক বাসে চড়ে বসলে কালোদের স্থান হতো পেছনের দিকে। যদি বাসে কোন সিট খালি না থাকতো, এবং সাদা কেউ তখন উঠতো, তখন কালোদের উঠে দাঁড়িয়ে নিজের সিট ছেড়ে দিতে হতো। সাদা লোকটা ষণ্ডা আকৃতির পুরুষ হলেও, কালো মানুষটি অতিশয় বৃদ্ধা হলেও একই নিয়ম। খুব বেশিদিন আগের কথা না। সেই সময়ের লোকেরা এখনও জীবিত।
স্বাভাবিকভাবেই কালোরা এই অন্যায় মেনে নেয়নি। তাঁরা আন্দোলন করেছেন। দেশের সংবিধান ছিল তাঁদের পক্ষে। তারপরেও সংখ্যাগুরু শ্বেতাঙ্গরা উল্টো তাঁদের অধিকারের বিরুদ্ধেই আন্দোলন করেছে। শ্বেতাঙ্গরা তাঁদের মানুষ হিসেবেই বিবেচনা করতো না। আলাবামা ইউনিভার্সিটির একটি ঘটনা বললে বুঝবেন কতটা ফাজলামি করেছে ওরা।
দুই কৃষ্ণাঙ্গ ছাত্র ছাত্রী যখন আলাবামা বিশ্ববিদ্যালয়ে ক্লাস করতে চায়, তখন জনতার পাশাপাশি রাষ্ট্রের গভর্নর স্বয়ং এসে অবস্থান ধর্মঘট পালন করে যাতে ঐ দুই "নিগ্রো রাকুন" ছাত্রছাত্রী বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রবেশ করতে না পারে। একবার চিন্তা করুন, বাংলাদেশে যদি কোন তৃতীয় লিঙ্গের মানুষ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়তে আসেন, এবং আমাদের প্রধানমন্ত্রী তাঁকে বাধা দিতে বিশ্ববিদ্যালয় গেটে এসে অবস্থান নেন, কেমন হবে দৃশ্যটা?
এই ফাজলামি বন্ধ করতে প্রেসিডেন্ট কেনেডি ফেডারেল অফিসিয়ালদের পাঠান। মিলিটারির ব্যাকআপে কৃষ্ণাঙ্গ ছাত্রছাত্রীরা সেদিন বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রবেশ করতে পেরেছিলেন। প্রেসিডেন্ট কেনেডি একজন শ্বেতাঙ্গ, ফেডারেল ট্রুপ্সরা ছিলেন শ্বেতাঙ্গ, অন্যায় আবদারকারী সংখ্যাগুরু জনতা ছিল শ্বেতাঙ্গ, তারপরেও সাংবিধানিক নাগরিক অধিকার ("all men are created equal") নিশ্চিত করতেই প্রেসিডেন্ট সেই পদক্ষেপ নিয়েছিলেন। যদি তিনি সেদিন ন্যায় বিচার নিশ্চিত করতে কঠোর না হতেন, আজকে অ্যামেরিকার ম্যাপের বুকেও ছুরি চলতো।
তাহলে বুঝতে পারছেনতো যে যেকোন দেশের নাগরিক অধিকার কতটা জরুরি ও গুরুত্বপূর্ণ এলিমেন্ট? যখন দেখবেন কেউ অধিকার নিয়ে আন্দোলন করছে, আপনি তাঁদের সাথে আলোচনার টেবিলে না বসে যদি জোর জবরদস্তি করেন, তাহলে কারোর জন্যই সেটি সুখের হবেনা। ইতিহাস সাক্ষী, কোন দেশই তাদের জনগনের উপর জোর খাটিয়ে তাদের ধরে রাখতে সক্ষম হয়নি।
কাশ্মীরের ইস্যুটি এখন তাই হয়ে দাঁড়িয়েছে। কাশ্মীর নিয়ে পক্ষে বিপক্ষে কথা বলা বাঙালির কে কয়জন কাশ্মীরির সাথে আলোচনা করেছে আমি জানিনা, তবে ওদের সাথে কথা না বলে, ওদের পয়েন্ট অফ ভিউ থেকে না দেখে, কেবল এক তরফা মিডিয়া ও পাক/ভারত সরকারের কথার উপর ভিত্তি করে ফতোয়া জারি করা আমার মনে হয় আহাম্মকি সিদ্ধান্ত। এই কাজটাই একাত্তুরে অনেক দেশ আমাদের বিরুদ্ধে করেছিল। পাক সরকার নিজেদের কূটনৈতিক চালে বিশ্বের অনেক বাঘা বাঘা রাষ্ট্রকে নিজেদের হাতে রেখেছিল স্রেফ নিজের ভার্সন শুনিয়ে।
"গাদ্দার বাঙালিরা ভারতের সাথে মিলে আমাদের দেশ ভাঙার চক্রান্ত করছে। শেখ মুজিব র'র এজেন্ট। ব্লা ব্লা ব্লা, হুর হুর দাবাং দাবাং!"
এখন ভারতীয়রা বলে, "কাশ্মীরিরা জঙ্গি, সন্ত্রাসী, পাকিস্তানের সাথে মিলে দেশ ভাঙার চেষ্টা করছে।........"
পার্থক্য আছে কোন? মিল খুঁজে পাচ্ছেন দুইজনের কথায়?
কাশ্মীরে বর্তমানে তিন ধরনের মানুষ বাস করেন। এক দল ইন্ডিয়ার সাথে থাকতে চায়। একদল চায় পাকিস্তানের সাথে থাকতে। এবং আরেকদল চাইছে ইন্ডিয়া পাকিস্তান বাদ, তাঁদের আলাদা করে দিতে। তাঁরা নিজেরা নিজেদের মতন ডাল ভাত খেয়ে জীবন কাটিয়ে দিবে। তৃতীয় দলের সংখ্যা একটু বেশি পাবেন।
কেন?
কাশ্মীরে গেলেই দেখবেন, ভারত পাকিস্তান অধিকৃত এলাকায় যেখানে সেখানে আর্মি চেকপোস্ট। যাকে তাকে যখন তখন থামিয়ে চেকিং চলে। যাকে তাকে যখন তখন উঠিয়ে নিয়ে যায়। "গুম" করে ফেলা হয়। জঙ্গি সন্দেহে গুলি করে মারা হয়।
এদিকে জঙ্গিরাও সাধারণ মানুষ মেরে সরকারকে ম্যাসেজ দিতে চায়। যত বেশি সাধারনের রক্ত বইবে, সরকার ততই টালমাটাল হবে।
ঘুরিয়ে ফিরিয়ে এই মুহূর্তে কাশ্মীরি জনসাধারণ সবদিক দিয়েই মার খাওয়া জাতি। সম্প্রতি ভারত সরকার তাঁদের "রাজ্যের" মর্যাদা কেড়ে নিয়েছে। এই নিয়ে তাঁরা ক্ষোভ প্রকাশ করলে তাঁদের মিলিটারি দিয়ে দাবানো হচ্ছে।
দেশ স্বাধীনের সময়ে কাশ্মীরের রাজাকে ভারত সরকার কথা দিয়েছিল কাশ্মীরের জনতা সিদ্ধান্ত নিবে যে তাঁরা কী তাঁদের সাথে থাকবে, নাকি আলাদা রাষ্ট্র হয়ে যাবে; সেই ভোটের অধিকার তাঁদের দেয়া হবে। ভারতে অন্তর্ভুক্তির পর অতি অবশ্যই স্বভাবসুলভভাবে ভারতীয় পলিটিশিয়ানরা নিজেদের কথা রাখেনি। কথা দিয়ে কথা না রাখার বেইমানি বিশ্বজুড়ে সব পলিটিশিয়ানরাই করে থাকেন। ভারত ব্যতিক্রম হবে কেন? তাঁদের এই কনফিডেন্স নেই যে কাশ্মীর তাঁদের সাথে থাকতে রাজি হবে। কেন এত আত্মবিশ্বাসের অভাব? তোমরা কী আচরণ করো তাঁদের সাথে?
সুলাইমান (আঃ) নবীর একটি ঘটনা বলি। আপনারা সবাই জানেন, তবু প্রসঙ্গ উঠায় বলতে চাইছি।
দুই মহিলা এক শিশুর উপর দাবি নিয়ে সুলায়মান (আঃ) নবীর পিতা হজরত দাউদের (আঃ) দরবারে এলেন। দুইজনই এই শিশুর মাতৃত্ব দাবি করছেন। দাউদ (আঃ) নবীর কপালে চিন্তার ভাজ। তিনি বুঝতে পারছেন না এই সমস্যা কিভাবে সমাধান করবেন। তরুণ সুলাইমান (আঃ) সাথে সাথে বললেন, "এতো খুবই সহজ ব্যাপার। শিশুটাকে কেটে দুইভাগ করে দুই মহিলাকে দিয়ে দাও। আরতো কিছু করার নেই।"
সাথে সাথে এক মহিলা আঁতকে উঠে বললেন, "না না! দয়া করে এই কাজটি করবেন না। আমার বাচ্চার দরকার নেই। ওকে এই মহিলার হাতেই তুলে দিন।"
বলেই তিনি কাঁদতে শুরু করলেন।
অপর মহিলা বিজয়ী হাসি হাসছেন। এইতো দারুন বিচার করেছে প্রিন্স সুলাইমান (আঃ)। আহা! ধন্য!
সুলাইমান (আঃ) সেই শিশুটিকে কোলে তুলে যেই মহিলা নিষেধ করেছেন সেই মহিলার হাতেই তুলে দিয়ে বললেন, "তুমিই এর আসল মা। নিজের সন্তানের প্রাণ রক্ষার জন্য এত বড় কুরবানী দিতে রাজি হলে। যদি শিশুটি তোমার না হতো, তাহলে তাঁর মৃত্যুতে তোমার কিছুই যেত আসতো না। এই মহিলার মতন তোমার অধিকার তুমি ছাড়তে না।"
কাশ্মীরে আরও রক্তপাত হবে। অতীতেও হয়েছে, ভবিষ্যতেও হবে। গায়ের জোরে তাঁদের ধরে রাখতে চাইছে দুই দেশ। জনতার জন্য এতটুকু ভালবাসা থাকলে বহু আগেই তাঁদের অধিকার নিশ্চিত করতো, নাহয় স্বাধীন করে দিত। সুলাইমান (আঃ) নবীর ঘটনার সেই মায়ের মতন। এই জেদই প্রমান করে কাশ্মীরিদের প্রতি ভারত পাকিস্তানের কোন ভালবাসা নেই। কাশ্মীর ইস্যুতে ইমরান মোদী সব এক। তাদের আছে কেবল স্বার্থ, জেদ ও লোভ।
কাশ্মীরের কথা বাদ যাক। আপনারা কী জানেন, একই অসভ্যতা আমরা আমাদের পার্বত্যাঞ্চলের আদিবাসীদের সাথেও করে আসছি? পাহাড়িরা আমাদের বিশ্বাস করেনা। আমরা তাঁদের জায়গা জমি দখল করি, তাঁদের মেয়েদের রেপ করি, গ্রেপ্তার হয়রানি ইত্যাদি সেখানে দৈনন্দিন ঘটনা। ওরা গরিব, তারপরেও তাঁদের বাড়িঘর পুড়িয়ে গৃহহীন করা হয়। উচ্ছেদ চলে নির্বিচারে। জ্বি, জাতি হিসেবে আমরা বাঙালিরাও কম বদমাইশ না। আমাদের যেহেতু তাঁদের উপর ক্ষমতা আছে, আমরা সেটার অপব্যবহার করতে পিছপা হচ্ছিনা।
এখন এর সমাধান কী?
মিলিটারি?
না। মিলিটারি কোন অবস্থাতেই কোন সুস্থ রাষ্ট্রের সমাধান হতে পারেনা।
তাঁদের সাথে আলোচনায় বসুন। শুনুন কেন তাঁরা বিচার দিচ্ছে? তাঁদের অঞ্চলে সরকারি উদ্যোগে ডেভেলপমেন্ট নেই? স্কুল কলেজ বা ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠান নেই? তাহলে ব্যবস্থা করুন যাতে তাঁদের জীবন উন্নত হয়। তাঁদের বাচ্চাদের জন্য ভাল স্কুলের ব্যবস্থা করুন। তাঁদের অর্থনৈতিক অবকাঠামো যেন সুগঠিত হয়, সেই উদ্যোগ নিন। উন্নয়ন কেবল ঢাকামুখী না করে দেশের আনাচে কানাচে ছড়িয়ে দিন। তাঁদের প্রতি জুলুম জবরদস্তি করা হচ্ছে? তাহলে একই মিলিটারি ব্যবহার করুন জুলুমকারীদের বিরুদ্ধে। অত্যাচারী বাঙালি হলেও, নিপীড়িত পাহাড়ি হলেও ন্যায় বিচার নিশ্চিত করুন। মনে রাখবেন, গণভবনে বাসকারী মানুষটি বাংলাদেশের উপর যে অধিকার রাখে, পার্বত্য চট্টগ্রামের গহীন গ্রামে জন্ম নেয়া উপজাতি শিশুটিও এই দেশের উপর একই অধিকার রাখে। তাঁদের কেন "উপজাতি" "পাহাড়ি" ডেকে আমরা আলাদা করার চেষ্টা করি? কেন তাঁরা আমার আপনার মতন "বাংলাদেশী" না? তাঁদের অধিকার নিশ্চিত করুন। না পারলে মানসিক প্রস্তুতি নিন, একদিন ওরা আমাদের থেকে আলাদা হয়ে যাবে। জ্বি, "ডার্টি ডিভোর্স" ঠ্যাকাতে চাইলে, বাংলাদেশকে টিকিয়ে রাখতে চাইলে, মানচিত্র অক্ষত রাখতে চাইলে এর প্রতিটি কোণের প্রতিটা জনগনের অধিকার নিশ্চিত করতেই হবে।
পাকিস্তানিরা আমাদের সাথে যা করেছে, যে কারনে এখনও তাদের গালাগালি করি; আমরাও একই কাজ পাহাড়ি জনগনের সাথে করি কোন লজিকে? আপনার মন কাশ্মীরিদের জন্য কাঁদে? তবে নিজের পাহাড়ি ভাই বোনদের জন্যও দুফোটা অশ্রু ফেলুন।
২| ০৭ ই আগস্ট, ২০১৯ বিকাল ৫:০৯
ঢাবিয়ান বলেছেন: @ হাসান কালবৈশাখী, আপনার সংজ্ঞানুযায়ীতো ১৯৭১ এর মুক্তিযোদ্ধারাও তাহলে জঙ্গী ছিল।
৩| ০৭ ই আগস্ট, ২০১৯ রাত ৮:৪২
রাজীব নুর বলেছেন: কাশ্মীরের জন্য আমার মন মোটেও কাঁদে না। আমার দেশের লোকজন ভালো নেই। চারিদিকে ডেংগু।
৪| ০৭ ই আগস্ট, ২০১৯ রাত ৮:৫০
অন্তরা রহমান বলেছেন: তুখোড় পোস্ট। শেষের দিকে উপজাতি ও পাহাড়ি প্রসঙ্গ টেনে আনায় আপনাকে সশ্রদ্ধ সালাম।
©somewhere in net ltd.
১| ০৭ ই আগস্ট, ২০১৯ সকাল ৮:১৪
হাসান কালবৈশাখী বলেছেন:
সবাই কাষ্মিরের ভারতীয় অংশের জন্য কাদে।
কিন্তু কাষ্মিরের পাকিস্তানের অংশের কি অবস্থা?
সেই কাস্মিরের উত্তরে ২টি বড় অংশ বিক্রি করে দেয়া হয়েছে চীনের কাছে। বাকি অংশে কোন টুরিজম নেই, শিক্ষা নেই অর্থনীতি নেই। আছে শুধু জংগী ব্রিডিং গ্রাউন্ড।