নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

মঞ্জুর চৌধুরী

আমি ঝন্ঝা, আমি ঘূর্ণি, আমি পথ-সমূখে যাহা পাই যাই চূর্ণি’। আমি নৃত্য-পাগল ছন্দ, আমি আপনার তালে নেচে যাই, আমি মুক্ত জীবনানন্দ। আমি হাম্বার, আমি ছায়ানট, আমি হিন্দোল, আমি চল-চঞ্চল, ঠমকি’ ছমকি’ পথে যেতে যেতে চকিতে চমকি’ ফিং দিয়া দিই তিন দোল; আমি চপলা-চপল হিন্দোল। আমি তাই করি ভাই যখন চাহে এ মন যা, করি শত্রুর সাথে গলাগলি, ধরি মৃত্যুর সাথে পান্জা, আমি উন্মাদ, আমি ঝন্ঝা! আমি মহামারী আমি ভীতি এ ধরিত্রীর; আমি শাসন-ত্রাসন, সংহার আমি উষ্ন চির-অধীর! বল বীর - আমি চির উন্নত শির!

মঞ্জুর চৌধুরী › বিস্তারিত পোস্টঃ

বিশ্বের অতি অসভ্য ও বর্বর এই সম্প্রদায়ের সদস্য আমি? ছিঃ!

১৫ ই অক্টোবর, ২০১৯ সকাল ৯:১৭

সিরিয়ায় গৃহযুদ্ধ চলছে। গৃহযুদ্ধ মানে বুঝেন? সহজ ভাষায় ঘরের মানুষেরা যে যুদ্ধ করে, সেটাই গৃহ যুদ্ধ। অস্ত্র যেই তুলবে, নিজের ঘরের মানুষেরই ক্ষতি হবে। যেই মরবে, সেই আপন। এখানে গত ২০১১ সালের ১৫ই মার্চ তারিখ থেকে তাই ঘটছে। গুলি চালাচ্ছে আমার ভাই, গুলি খাচ্ছে আমার ভাই। বিধবা হচ্ছে আমার বোন, এতিম হচ্ছে আমার সন্তান, ভাতিজা, ভাতিজি। সন্তানহারা হচ্ছেন আমারই বাবা মা। সবাই আপন, কেউই পর নয়। বুঝতে পারছেন?
আলান নামের এক কুর্দি শিশুর লাশ সৈকতে ভেসে উঠেছিল, মনে আছে? গোটা বিশ্ব কেঁদেছিল। এটা সেই চার বছর আগের ঘটনা। এত সহজে ভুলার কথা নয়। সেই কান্না পর্যন্তই ছিল আমাদের দৌড়। বিশ্ব জনমত যাই বলুক না কেন, ক্ষমতায় গেলেই নেতাদের চেহারা পাল্টে যায়। আশা ছিল বাশার আল আসাদ ও আইসিসকে যদি কেউ থামাতে পারে, তাহলে পাগলা প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পই পারবে। দেখলাম, এই ক্ষেত্রে ট্রাম্পও স্মার্ট হয়ে গেল। সেও রাজনীতি শিখে ফেললো। ফলাফল, সংঘর্ষ চলছেই। রক্ত ঝরছে সিরিয়ায়, আমাদের নবীর সময়ের বিখ্যাত শাম অঞ্চলে। মানুষ মরছে ইয়েমেনে। যেই অঞ্চলের মানুষের ঈমানকে স্ট্যান্ডার্ড হিসেবে ঘোষণা দিয়েছিলেন আমাদের বিশ্ব নবী (সঃ)। ("The best of men are the men of Yemen, belief is Yemeni.")
এই সমস্যা সমাধানের আপাতত কোন পথ দেখছি না। সবাই রক্তপিপাসু হয়ে গেছে। কেউই মৃত্যু পর্যন্ত থামবে না। যুদ্ধ থামিয়ে সরে আসাকে তারা বরং নিজেদের কাপুরুষতা হিসেবে দেখছে। অথচ নিজের ঝগড়া না বাড়িয়ে রাগ হজম করে ফেলতে বরং বীরত্ব লাগে। যদি তারা বুঝতো!
আমাদের নবী (সঃ) মৃত্যুর আগে আগে একটা ভবিষ্যৎবাণী করে গিয়েছিলেন। তিনি বলেছিলেন, "একবার যখন আমার উম্মতের মধ্যে থেকে তরবারি কোষমুক্ত হবে, কেয়ামত পর্যন্ত তা আর ভিতরে ঢুকবে না।"
মানে হচ্ছে, একবার মুসলিমদের মধ্যে লড়াই শুরু হলে, কেয়ামত পর্যন্ত সেই লড়াই থামবে না। এই কারণেই, সেই সাহাবীদের আমল থেকেই আমরা দেখে আসছি, অন্য কোন শক্তির সাথে লড়াই করে মুসলিমদের যত না ক্ষতি হয়েছে, নিজেদের মধ্যে লড়াই করেই ক্ষতি হয়েছে কয়েকগুন বেশি। আমাদের খলিফা উসমান (রাঃ), আলী (আঃ) নিহত হলেন উগ্রপন্থী মুসলিমদের হাতে। নবীর (সঃ) প্রানপ্রিয় দৌহিত্র, ফাতিমা (রাঃ) তনয় হোসেন স্বপরিবারে নিহত হলেন আরেক গ্রূপ মুসলিমের হাতেই। ব্যাটেল অফ জামাল একদিকে আলী (রাঃ), হাসান, হোসেন, আম্মার (রাঃ), অন্যদিকে আয়েশা (রাঃ), তালহা, জুবেইরের মতন বড় বড় সাহাবী। আপনি কী একদলের মৃত্যুতে আরেকদলের হয়ে খুশি হতেন? তালহার মৃত্যদেহ দেখে আলী (রাঃ) হাহাকার করে কেঁদেছিলেন। তাঁর ভাই শহীদ হয়েছেন!
এই মহা সংকটে আমি আপনি হলে কী করতাম? কোন দলের পক্ষে থাকতাম?
হজরত আব্দুল্লাহ ইবনে উমার (রাঃ), যিনি ছিলেন আমাদের প্রিয় খলিফা উমারের সন্তান, এই সময়ে তিনি সহ আরও কিছু সিনিয়র সাহাবী বিচক্ষণ সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন। যখন অত্যুৎসাহী কোন মুসলিম এসে তাঁদের বলছিলেন, তুমি আলী বা আয়েশার পক্ষ না নিলে কোন পক্ষে অবস্থান নিচ্ছ?
উত্তর দিয়েছিলেন, "আমরা রাসূলুল্লাহর (সঃ) পক্ষের লোক।"
যাক সেইসব পুরানো দিনের কথা।
আমি বরং অন্য গল্প শোনাই।
রিফিউজিদের গল্প।
আমাদের শহরে প্রচুর সিরিয়ান রিফিউজিরা আসছেন। এদের সবাই মোটামুটি সম্ভ্রান্ত, শিক্ষিত, ভদ্র পরিবারের সন্তান। কেউ ডাক্তার, কেউ ইঞ্জিনিয়ার, কেউ প্রফেসর, কেউ বা ব্যবসায়ী। একজনকে দেখেছিলাম যে একটি রাস্তার দুই পাশেরই সব দোকানের মালিক ছিল। টাকার স্রোত কেমন ছিল কল্পনা করতে পারছেন? এই লোকটাই সম্পূর্ণ নিঃস্ব হয়ে দেশত্যাগে বাধ্য হলেন। এক দমকা হাওয়ায় তাঁর সাজানো বাগান তছনছ হয়ে গেল। নিজেরই ভাইয়ের ছোড়া মিসাইলে গুড়িয়ে গেল তিলে তিলে গড়া সংসার। এখন তিনি অন্যের করুনার উপর নির্ভরশীল। কোরবানির ঈদের সময়ে আমাদের দিকে তাকিয়ে থাকেন, যদি "দয়া" করে কিছু মাংস তাঁদের জন্য দান করি, তাহলে তিনি পরিবার নিয়ে বহুদিন পর একবেলা মাংস খেতে পারবেন।
রিফিউজি শিশুরা জানেই না তাঁদের সাথে এমন কেন হলো। তাঁদের মোটেও ইচ্ছা করেনা ঘিঞ্জি এলাকায় বাস করতে। দেশে তাঁদের বিরাট খোলামেলা বাড়ি ছিল। সামনের বাগানে ফুটবল খেলা হতো। স্কুল ছিল, স্কুলের বন্ধুবান্ধব ছিল। এখানে কতদিন তাঁদের থাকতে হবে? তাঁদের মোটেও ভাল লাগেনা।
এদেশে চাকরি পাওয়া কঠিন। আরবি ছাড়া অন্য কোন ভাষা তাঁরা জানেন না। মাতৃভাষা ছাড়া অন্য ভাষা শেখার প্রয়োজনও হয়নি। মাতৃভূমি ত্যাগ করার চিন্তা তাঁদের কল্পনাতেও ঠাঁই পায়নি। এই বয়সে এসে ইংলিশ শেখা সহজ কথা? তবু বাধ্য হয়ে শিখছেন। একজন ডাক্তার, একজন প্রফেসর কতদিন বা বাথরুমের কোমড আর মেঝে পরিষ্কারের কাজ করে যেতে পারেন? তাঁদের মানসিক যন্ত্রণার কথা বুঝতে পারছেন?
ওরা এই কারণেই বলে, "আমাদের দেশটাকে আগের মতন করে দাও, আমরা ফিরে যাই।"
এই দেশে পড়ে থাকার শখ তাঁদের নেই। কেউ শখ করে মাতৃভূমি ত্যাগ করেনা। ক্ষমতায় বাশার আল আসাদ রইলো, নাকি অন্য কেউ, তাঁদের পরোয়া নেই। তাঁরা এখনও নিজের দেশে ফেরার স্বপ্নে বিভোর। সময়ের সাথে সাথে সেই স্বপ্ন ফিকে হয়ে আসে। একদিন তাঁরা দিগন্তে মিলাবেন। তাঁদের সন্তানেরা চিরতরে বিচ্ছিন্ন হবেন নাড়ির বন্ধন থেকে। আহ প্রিয় মাতৃভূমি! আমরা তো এমন চাইনি!
সিরিয়ায় কেউ ভাল নেই। না সরকার সমর্থক আরবরা, না সাধারণ মানুষ, না কুর্দিরা, কেউই ভাল নেই। বুলেট ছুটলে কেউ না কেউ মরবেই। সবাই মানুষ। প্রতিদিন সেখানে লাশ পড়ছে। কারোর না কারোর বুক খালি হচ্ছে। কবে শেষ হবে এই মৃত্যুর তান্ডবলীলা, কেউ বলতে পারেনা। ক্ষমতা মানুষকে এতটাই অন্ধ করে দেয়।
অনুভব করুন তাঁদের কষ্টের কথা।

আজ এরদোয়ান আড়াইশো কুর্দি মেরেছে। এই নিয়ে ফেসবুক সরগরম। কিন্তু আমার খুব ঘেন্না হচ্ছে। কারন আমি সেখানে কুর্দিদের জন্য কারোর ভালবাসা দেখছি না। শুধু রাজনীতি দেখছি। এই একটা জিনিস আমি জান প্রাণ দিয়ে ঘৃণা করি। এই যে এত মানুষ মরছে, সবতো রাজনৈতিক চালেরই শিকার।
বাংলাদেশে এরদোয়ান খুবই জনপ্রিয় একটি নাম। কেউ কেউ তাঁকে খলিফা বানিয়ে ফেলেন। কেউ ভাবেন দ্বীনের সাচ্চা সেবক হিসেবে। ভাই, এক মুসলিম আরেক মুসলিমের প্রাণ নিতে পারেনা। আমাদের উসমান (রাঃ) নিজের মৃত্যু হবে নিশ্চিত জেনেও বিদ্রোহীদের বিরুদ্ধে অস্ত্র ধারনের অনুমতি দেননি। কারন তিনি চাননি উম্মতের মধ্যে থেকে কোষমুক্ত হওয়া প্রথম তরবারিটি তাঁর হোক। নিজের হাতে নিজের ভাইয়ের হত্যার বদলে তিনি শতবার মরতে রাজি ছিলেন। শেষ পর্যন্ত তাই হলো। এরা হচ্ছেন খলিফা। আপনারা দয়া করে এরদোয়ানকে তাঁদের সাথে তুলনা করে তাঁদের অপমান করবেন না। আল্লাহর দোহাই! দ্বীন ইসলামের দোহাই!
তাঁর সমর্থকরা বলছে, "ভালোই হয়েছে। বেঈমান কুর্দিরা মরেছে। ওরা সিরিয়ানদের গৃহহীন করেছে, নির্বিচারে হত্যা করেছে। এখন তাঁদের জন্য স্থান খালি করতে ওদের মারা জায়েজ।"
আবারও বলি, এখানে গৃহযুদ্ধ হচ্ছে। দুই পক্ষ্যই আমাদের লোক। এখানে এরদোয়ান মোটেও বাহবাহ পাবার মতন কোন কাজ করেনি। অন্ধ প্রভুভক্তি বাদ দিয়ে একবার শুধু নিহত পরিবারগুলোর কথা মাথায় আনার চেষ্টা করুন। আজকে এরদোয়ান ওদের মারছে, কারন গতকাল আরবদের ওরা মেরেছিল, আবার আগামীকাল ওরাই আরবদের মারবে। রক্তের হোলি খেলা ততক্ষন বন্ধ হয়না যতখন না এক পক্ষ নিজের অস্ত্র গুটিয়ে ফেলে।
আরেকদল এই কারণেই কুর্দিদের জন্য ভালবাসা প্রদর্শন করছে, কারন এরদোয়ান তাঁদের মেরেছে। এরদোয়ান ছাড়া অন্য কেউ (ডোনাল্ড ট্রাম্প বা পুতিন হতে পারে) মারলে এই ভালবাসার দেখা পেতাম না। যেমনটা অন্যান্যদের বেলায় কখনই দেখিনি। এমন মানবতার কোন মানে হয়? মানুষের জীবনের বেলাতেও রাজনীতি?
ইমরান যেমন কাশ্মীরের জন্য কথা বলায় লোকে প্রশংসা ও নিন্দা জানাতে জানাতে মুখে ফেনা তুলে ফেলেছে, সেখানে মূল ফোকাস কাশ্মীর ছিল না, ছিল ইমরান। এখানেও এখন তাই। কুর্দি মরেছে ফোকাস না হয়ে হচ্ছে এরদোয়ান।
ভাইয়েরা, একবার শুধু এরদোয়ান ইমরান ইত্যাদি রাজনৈতিক ফোকাস বাদ দিয়ে খোলা মনে রিফিউজিদের গল্প শুনুন। জানুন যুদ্ধ কতটা ভয়াবহ হতে পারে। তাঁদের বাচ্চাদের স্থানে নিজের বাচ্চাদের কল্পনা করুন। তখন "আজকে বাংলার মুসলমানরা কোই?" টাইপ কথা বলে নিজেকে ছোট না করে আরও বড় কিছু নিয়ে ভাবতে শিখবেন। তখন উল্টো নিজেকে মানুষ হিসেবে ভাবতে অতি ক্ষুদ্র মনে হবে। মনে হবে বিশ্বের অতি অসভ্য ও বর্বর এই সম্প্রদায়ের সদস্য আমি? ছিঃ!

মন্তব্য ৬ টি রেটিং +৫/-০

মন্তব্য (৬) মন্তব্য লিখুন

১| ১৫ ই অক্টোবর, ২০১৯ সকাল ১১:১৯

নতুন বলেছেন: যারা মানুষ হত্যা সমথ`ন করে তারাতো নিজেরাই মানুষ না।

মানুষ হত্যায় যদি কারুর কস্ট না লাগে তাকে আমি মানুষ মনে করিনা।

বত`মানে সৌদি,তুরস্কের এই সব হত্যা নিয়ে মুসলমানদের মাঝে খুব বেশি আলোচনা নেই। যেহেতু সৌদি করেছে তাই সেটা তারা চেপে যায়। :(

২| ১৫ ই অক্টোবর, ২০১৯ সকাল ১১:৪৭

সাইন বোর্ড বলেছেন: মানবতা বলে মনে হয় পৃথিবীতে আর কিছু থাকছে না ।

৩| ১৫ ই অক্টোবর, ২০১৯ রাত ৮:০২

রাজীব নুর বলেছেন: সব কিছুর মধ্যে আপনি ধর্ম কেন টেনে আনেন বলেন তো??

১৫ ই অক্টোবর, ২০১৯ রাত ৮:৩৬

মঞ্জুর চৌধুরী বলেছেন: ইসলাম কোথায় এপ্লিকেবল না সেটা বলতে পারেন? ইসলাম এসেছেই জীবনের প্রতিটা ক্ষেত্রে, খাওয়া, ঘুমানো থেকে শুরু করে পায়খানা পর্যন্ত কিভাবে কী করতে হবে সেটার নির্দেশনা নিয়ে। এই কারণেই জীবনের প্রতিটা ক্ষেত্রে ধর্ম চলে আসে, যা সঠিক পথ দেখায়।

৪| ১৯ শে অক্টোবর, ২০১৯ রাত ২:৫৫

গরল বলেছেন: সবাই নিজেদের আগে মুসলমান পরে মানুষ হিসাবে চিন্তা করে তাই এই অবস্থা, আগে মানুষ পরে মুসলমান ভাবলে সমস্যা মিটে যেত।

৫| ১৯ শে অক্টোবর, ২০১৯ ভোর ৫:৪৭

স্বামী বিশুদ্ধানন্দ বলেছেন: নিজের সুবিধার জন্য যে যার মতো ধর্মকে কাস্টমাইজ করার কারণে বিভেদ, দলাদলি, হত্যা ও অত্যাচারের মতো ঘটনার জন্ম হয় | আপনি যতগুলো বর্বরতার বর্ণনা দিলেন, সবগুলোর মূল কারণই হচ্ছে ক্ষমতা ও বিত্তের জন্য সীমাহীন লোভ | আর এই সকল স্বৈরাচারীদের সমর্থনকারীরা হচ্ছে যুক্তি ও বিবেক বর্জিত কিছু সংখ্যক অন্ধ অনুসারী |

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.