নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
আমি ঝন্ঝা, আমি ঘূর্ণি, আমি পথ-সমূখে যাহা পাই যাই চূর্ণি’। আমি নৃত্য-পাগল ছন্দ, আমি আপনার তালে নেচে যাই, আমি মুক্ত জীবনানন্দ। আমি হাম্বার, আমি ছায়ানট, আমি হিন্দোল, আমি চল-চঞ্চল, ঠমকি’ ছমকি’ পথে যেতে যেতে চকিতে চমকি’ ফিং দিয়া দিই তিন দোল; আমি চপলা-চপল হিন্দোল। আমি তাই করি ভাই যখন চাহে এ মন যা, করি শত্রুর সাথে গলাগলি, ধরি মৃত্যুর সাথে পান্জা, আমি উন্মাদ, আমি ঝন্ঝা! আমি মহামারী আমি ভীতি এ ধরিত্রীর; আমি শাসন-ত্রাসন, সংহার আমি উষ্ন চির-অধীর! বল বীর - আমি চির উন্নত শির!
একদা প্রত্যুষে ঘুম ভাঙার পরে মার্টিন স্করসিসির মনে হলো অনেক মাস্টারপিস বানানো হয়েছে, এইবারে একটা ম্যাগনাম ওপাস বানানো যাক। বয়স হয়ে গেছে, চুলের পাক ধরেছে কবে সেটাই স্মরণে নেই, সিলেটের বিখ্যাত মরমী কবি হাসন রাজা বলে গেছেন, "আয়না দিয়া চাইয়া দেখি পাকনা চুল আমার...." দুই দিনের দুনিয়া, কিছুতো বলা যায় না।
ফোন দিলেন যৌবনসখা রবার্ট ডি নিরো কে। দুই বন্ধু মিলে একদা কত মহাকাব্য রচনা করেছিলেন! আজ যদিও স্করসিসির হৃদয় জুড়ে আরেক ইতালিয়ানের বাস, নিওনার্দো ডি ক্যাপ্রিয়। কিন্তু তাই বলে সাবেক দুই স্বদেশীর পুরানো বন্ধুত্ব কখনই ভেঙ্গে যায়নি।
নিরো সাহেব অনেক রাত পর্যন্ত সুরা পান করে নিদ্রা দিয়েছিলেন। সুখের স্বপ্নও দেখছিলেন। তিনি দেখছিলেন....এই মুহূর্তে মনে পড়ছে না, তবে কিছু একটা সুখের স্বপ্নই যে ছিল, এই বিষয়ে তাঁর সন্দেহ নেই।
কাঁচা ঘুম ভেঙ্গে যাওয়ায় অতি বিরক্তির সাথে বললেন, "হ্যালো!"
স্করসিসি কর্কশ কণ্ঠস্বর কানে নিলেন না।
"দোস্ত কী করো?"
নিরো সাহেবের মেজাজ আরও খারাপ হলো। সকাল বেলা ঘুম ভাঙিয়ে কোন ছাগলে জানতে চায় কী করো? এসব কী ধরনের খাজুরা আলাপ? তিনি বললেন, "প্রস্রাব করার প্রস্তুতি নিচ্ছি। তুমি সাথে যাইতে চাও? আসো, দুই ভাই মিইল্যা মুইত্যা দ্যাশ ভাসায়া দেই!"
স্করসিসি বন্ধুর রসিকতায় হেসে দিলেন। তারপরে নিজের ফোন করার উদ্দেশ্য খুলে বললেন। নিরো সাহেবের চোখের ঘুম উড়ে গেল। তিনি ফোন কনফারেন্সে ডাকলেন আরেক সারথি জো পেসিকে।
পেসি সাহেব বদমেজাজি। গত রাতেই কয়েকজনের সাথে ঝগড়া করে শেষমেশ দুইজনের নাক ও আরেকজনের হাত ভেঙে নিজের বিছানায় গা এলিয়েছিলেন। কিন্তু রাগের উত্তাপে দুই চোখের পাতা এক করতে পারছিলেন না। দুই বন্ধুর ফোন পেয়ে তাই তিক্ত স্বরে বললেন, "কী হইছে? কিসের হেদায়েত দিতে এতো সকাল সকাল ফোন পারলা?"
দুই বন্ধু উদ্দেশ্য খুলে বললেন। পেসি সাহেবের মনের উত্তেজনা বাড়লো বই কমলো না। তবে এইবার ধনাত্মক দিকে। তিনিই প্রস্তাব করলেন জিমি হফা চরিত্রের জন্য আল পাচিনোর নাম।
ডি নিরো বললেন, "দোস্ত, ঐ হালায় করবো?"
পেসি বললেন, "করবো না মানে? তার বাপে করবো। ও ছাড়া ঐ চরিত্র ঐভাবে কেউ টাইনা তুলতে পারবো?"
কেউই দ্বিমত পোষণ করলো না।
পেসি বললেন, "তোমার মনে সন্দেহ জাগে ক্যালা?"
স্করসিসিই জবাব দিলেন, "না মানে, এর আগেও তো হালায় নিরো ভাইর লগে পর্দা সেয়ার করছিল, মাগার গড ফাদার বাদে কোনটাই তেমন হিট হয় নাইক্কা।"
পেসি বললেন, "তুমি একটাও ডিরেকসন দিছিলা মিয়া? তোমার ডিরেকসন পাইলে মুর্দাভি নাগিন ড্যান্স এক্সপ্রেশন দিবার পারে, তাইলে প্যাচাল পারো ক্যালা?"
তিন মহারথী ফোনে যুক্ত করলেন আরেক দিগ্বিজয়ী বীর আল পাচিনোকে।
হলিউডের ইতিহাসের সর্বকালের সর্বসেরা ডিরেক্টর মার্টিন স্করসিসি। সর্বকালের সর্বসেরা অভিনেতার সংক্ষিপ্ততম তালিকার দুই অধিকারী রবার্ট ডি নিরো এবং আল পাচিনো, সহ অভিনেতা চরিত্রে নিঃসন্দেহে সর্বকালের সর্বসেরা পার্শ্ব অভিনেতা জো পেসি মিলে যে সিনেমা তৈরী করেছেন, তার নাম The Irishman.
খারাপ হবার কোন সুযোগ আছে? কথা কোন না ক্যান? আবার জিগাই, খারাপ হবার কোন সুযোগ আছে?
এটি মার্টিন স্করসিসির জীবনের সেরা সিনেমা?
মাথায় গুড ফেলাস, উল্ভস অফ ওয়াল স্ট্রীট, গ্যাংস অফ নিউ ইয়র্ক, ট্যাক্সি ড্রাইভার, রেজিং বুল ইত্যাদি সব নাম এসে ভিড় করবে। "দি ডিপার্টেড" এসে শুধু ঘ্যান ঘ্যান করবে না, বরং কান টেনে চিৎকার করে বলবে সেই সেরা। তারপরেও নিঃসঙ্কোচে বলা যায়, জ্বি জনাব। হলিউডের সর্বকালের সর্বসেরা স্টোরি টেলার এইবার নিজের আগের সব কীর্তিকে ছাড়িয়ে গেছেন। শুধু কোনভাবে যদি এইসব রথী মহারথীর ভিড়ে কোনভাবে জ্যাক নিকোলসন ও লিওনার্দো ডি ক্যাপ্রিওকে ফিট করা যেত, আর সাথে এক চিমটি ড্যানিয়েল ডে লুইস - তাইলে আর কোন চাহিদা ছিল না। কাহিনী আরও লম্বা হতো, তবে হতো না হয় দুই পার্টের সিনেমা। ক্ষতি কী? গ্যাংস অফ ওয়াসিপুর যেমন ছিল পাঁচ ঘন্টার, বা ওয়ান্স আপন আ টাইম ইন আমেরিকা চার ঘন্টার!
বছরের সেরা সিনেমা? জোকারের সাথে তীব্র লড়াই হবে, জোকারের সব আলো ওয়াকিন ফিনিক্স এবং টড ফিলিপ্সের উপর, এটা পুরোপুরি টিম ওয়ার্ক, তারপরেও আমার দৃষ্টিতে জোকার এগিয়ে থাকবে। কেন যেন জোকার একটি ঘোরের মধ্যে নিয়ে যেতে পারে, একটি ভিন্ন জগতে প্রবেশ করায়। তবে তাই বলে এটিও খুব বেশি পিছিয়ে নেই কিন্তু। চুল পরিমান ব্যবধান হবে। এর বেশি না।
প্রায় তিন ঘন্টা আঠারো মিনিটের সিনেমা, অথচ প্রতিটা দৃশ্য চিত্তাকর্ষক। কোন সুনিপুন মহাকাব্য লিখতে হলে লেখক অলংকরণ করেন, এতে শব্দ সংখ্যা, পৃষ্ঠা সংখ্যা বাড়ে, কিন্তু সাহিত্যপ্রেমী মাত্রই পড়ে আনন্দ পান, আঁজলা ভরে রস আস্বাদন করেন। স্করসিসিও তেমনভাবেই গল্পটিকে সাজিয়েছেন। প্রতিটা দৃশ্যে তাঁর সিগনেচার শট, প্রতিটা সংলাপে তাঁর কারিগরি। দারুন অভিজ্ঞতা!
সেই ট্রেলার মুক্তির পর থেকে অপেক্ষায় ছিলাম কবে ২৭ তারিখ আসবে, এবং নেটফ্লিক্সে দেখতে পারবো। এইভাবে ফার্স্ট ডে ফার্স্ট শো খুব বেশি সিনেমার ক্ষেত্রে করিনি।
সতর্কীকরন কেবল একটাই, একটানা তিন সাড়ে তিন ঘন্টা পূর্ণ মনোযোগে সিনেমা দেখার সময় থাকলে তবেই দেখতে বসুন। তাড়াহুড়া করলে মজা কম পাবেন।
২| ৩০ শে নভেম্বর, ২০১৯ সকাল ১১:০৩
রাজীব নুর বলেছেন: প্রথম পাতায় পরপর দুইটা পোষ্ট দিলেন?
এটা কি ২য় পর্ব?
৩| ৩০ শে নভেম্বর, ২০১৯ সকাল ১১:২২
স্বামী বিশুদ্ধানন্দ বলেছেন: ছবিটা দেখা শুরু করেছি, একবার শুরু করলে উঠতে মনে চায় না - এক কথায় অসাধারণ |
©somewhere in net ltd.
১| ৩০ শে নভেম্বর, ২০১৯ সকাল ১০:৪৮
এপোলো বলেছেন: কালকেই দেখেছিলাম মুভিটা। অসাধারন।