নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
আমি ঝন্ঝা, আমি ঘূর্ণি, আমি পথ-সমূখে যাহা পাই যাই চূর্ণি’। আমি নৃত্য-পাগল ছন্দ, আমি আপনার তালে নেচে যাই, আমি মুক্ত জীবনানন্দ। আমি হাম্বার, আমি ছায়ানট, আমি হিন্দোল, আমি চল-চঞ্চল, ঠমকি’ ছমকি’ পথে যেতে যেতে চকিতে চমকি’ ফিং দিয়া দিই তিন দোল; আমি চপলা-চপল হিন্দোল। আমি তাই করি ভাই যখন চাহে এ মন যা, করি শত্রুর সাথে গলাগলি, ধরি মৃত্যুর সাথে পান্জা, আমি উন্মাদ, আমি ঝন্ঝা! আমি মহামারী আমি ভীতি এ ধরিত্রীর; আমি শাসন-ত্রাসন, সংহার আমি উষ্ন চির-অধীর! বল বীর - আমি চির উন্নত শির!
ইনবক্সে প্রায়ই একটা হাদিস পাচ্ছি, সেই হাদিস নিউজ ফিডেও ঘোরাঘুরি করতে দেখছি।
ইনবক্সে যারা যোগাযোগ করছেন, তাঁরা কনফিউজড, তাই ব্যাখ্যা চাইছেন।
নিউজ ফিডে যারা প্রচার করে বেড়াচ্ছে, তারা কনফিডেন্ট, এইসব ব্যাখ্যা বুখ্যার প্রয়োজন নেই তাদের।
হাদীসটি হচ্ছে, "রোগ সংক্রমণ, কুলক্ষণ, পেঁচা এবং সফর মাস বলতে কিছু নাই।”
হাদীসটি যে সহীহ, এতে সন্দেহ নেই, কারন সহীহ বুখারী গ্রন্থের ৫৭০৭ নম্বর হাদিস এটি। তাছাড়া ওয়াজ মাহফিল গরম করা হুজুর, ইউটিউব মাওলানারা এইসব প্রচার করে বেড়াচ্ছেন। প্রত্যেকের নামের আগে মুফতি, আলেম, শায়খ ইত্যাদি টাইটেল যুক্ত করা আছে। তারা কি আর ভুলভাল বলবেন?
সবার আগে একটি কথা বলি, সেটি হচ্ছে, এই হাদীসটি পড়ার সাথে সাথে আমার মাথায় আরও কিছু সহীহ হাদিস আসতে বাধ্য, যার একটি হচ্ছে, নবী (সঃ) স্পষ্ট নিষেধ করেছেন প্লেগ আক্রান্ত এলাকায় না যেতে, বা সেখানে থাকাবস্থায় প্লেগ আসলে, সেখান থেকে না বেরুতে।
কিংবা, উপরের সেই একই হাদিসের শেষে তিনি বলছেন, কুষ্ঠ রোগীদের থেকে সেভাবে দূরে সরে যেতে যেভাবে আমরা সিংহ দেখলে পালাই।
এই দুইটা হাদিসই আমরা মোটামুটি সবাই জানি, এবং এই দুইটিই সহীহ।
সাথে আরেকটি হাদিস যুক্ত করি, যেটি একটু অপ্রচলিত বলে অনেকেই হয়তো জানেন না, তবে এটিও মুসলিম শরীফের সহীহ হাদিস।
বনু সাকীফ গোত্র থেকে একদল প্রতিনিধি দল তাঁর কাছে বায়'আত দিতে রওনা হয়, এবং রাস্তায় একজনের কুষ্ঠ রোগ ধরা পড়ে। খবরটি তাঁর কাছে পৌঁছালে নবী (সঃ) লোকটিকে বাড়ি ফিরে যেতে বলেন, এবং বলে দেন যে তাঁর বায়'আত (হ্যান্ডশেকের মাধ্যমে শপথ/আনুগত্য গ্রহণ) গ্রহণ করা হয়ে গেছে।
এখন এইসব সহীহ হাদীসগুলোকে যদি উপরের হাদিসের পাশাপাশি রাখি, তাহলে বুঝবো যে প্রথম হাদীসটিতে "কিছু একটা" সমস্যা আছে, যা আমি বুঝতে পারছি না। ঠিক না? কারন নবী (সঃ) যদি বলেই থাকেন যে পৃথিবীতে সংক্রামক ব্যাধির অস্তিত্ব নেই, তাহলে বাকি হাদীসগুলোতে কেন তিনি সংক্রামক ব্যাধি থেকে নিজেকে রক্ষা করতে অমন কড়া এবং স্পষ্ট নির্দেশ দিবেন?
তাহলে সমস্যাটা কোথায়? কিভাবে সমাধানে পৌছাবো?
এখন প্রথম হাদীসটির একটু গভীরে গিয়ে নাড়াচাড়া করা যাক। পুরো হাদীসটি এমন, আবু হুরায়রা বর্ণিত,
وَقَالَ عَفَّانُ حَدَّثَنَا سَلِيمُ بْنُ حَيَّانَ، حَدَّثَنَا سَعِيدُ بْنُ مِينَاءَ، قَالَ سَمِعْتُ أَبَا هُرَيْرَةَ، يَقُولُ قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم " لاَ عَدْوَى وَلاَ طِيَرَةَ وَلاَ هَامَةَ وَلاَ صَفَرَ، وَفِرَّ مِنَ الْمَجْذُومِ كَمَا تَفِرُّ مِنَ الأَسَدِ
Allah's Messenger (ﷺ) said, '(There is) no 'Adwa (no contagious disease is conveyed without Allah's permission). nor is there any bad omen (from birds), nor is there any Hamah, nor is there any bad omen in the month of Safar, and one should run away from the leper as one runs away from a lion.''
"রোগ সংক্রমণ, কুলক্ষণ, পেঁচা এবং সফর মাস বলতে কিছু নাই এবং কুষ্ঠরোগী দেখামাত্র তাঁর থেকে সেভাবে দূরে পালিয়ে যাওয়া উচিৎ যেভাবে কেউ সিংহ দেখলে পালায়।"
হাদীসটির বিষয়গুলো লক্ষ্য করা যাক, সংক্ৰমণ, কুলক্ষণ, পেঁচা এবং সফর মাসে সফর; চারটার মধ্যে শেষের তিনটা উপাদানই স্পষ্ট কুসংস্কার। মানে আমার হাতে ধরা দুধের গ্লাস উল্টে গেলে পরিচিত কেউ যাবে, বেরুবার সময়ে কোথাও বাঁধা পেলে একটু বসে তারপরে বের হওয়া, সামনে দিয়ে কালো বিড়ালের হেঁটে যাওয়া ইত্যাদি যাবতীয় কুসংস্কারকে যারা বিশ্বাস করেন "কুলক্ষণ" হিসেবে, নবী (সঃ) বলছেন, এইসবই বোগাস। পেঁচার ডাক মানেই অশুভ কিছু ঘটতে চলেছে, এই বিশ্বাস তখনকার জাহিল আরবদেরও ছিল, এই যুগের বাঙালিদেরও আছে; লোকজন এই কারনে প্যাঁচা হত্যা করে, বাড়ির আশেপাশে দেখলে তাড়িয়ে দেয়, অথচ আল্লাহর সৃষ্ট অত্যন্ত সুন্দর এবং অনেক উপকারী পাখি এই প্যাঁচা। এমন চরম ফালতু বিশ্বাসকেও আল্লাহর রাসূল উড়িয়ে দিয়ে বলেছেন, এর কোনই ভিত্তি নেই।
আরবদের আরেকটি বিশ্বাস ছিল এই যে আরবি ক্যালেন্ডারের "সফর" মাসে সফরে বের হওয়া উচিৎ না, এতে অমঙ্গল হয়। একই বিশ্বাস আমাদের এখনও আছে, যেমন শনিবারে কোন শুভ কাজ করা যাবেনা, বা শুক্রবার ছাড়া সপ্তাহের বাকি কোন দিনে কোন শুভ কাজ করলে আল্লাহর বরকত থাকবে না, ইত্যাদি। একদল লোক গোটা মহররম মাসকেই শোকের মাস ঘোষণা দিয়ে বসে, এই মাসে বিয়ে বা আনন্দময় কোন অনুষ্ঠানই করেনা। সবই ফালতু কুসংস্কার, তাই নবী (সঃ) বলেছেন এইসবে বিশ্বাস না করতে।
তার মানে, কমন সেন্স বলে, "সংক্রামক ব্যাধির" ব্যাপারেও নিশ্চই কোন বিশ্বাস আরবদের ছিল বা আছে, যে কারনে নবী (সঃ) এই কথাটা বলেছেন। একটি সহজ উদাহরণ দেই। আমাদের দেশে বন্ধ্যা নারীদের অনেক অনুষ্ঠানে অশুভ বিবেচনা করা হয়। ধরা হয়ে থাকে, ও যেহেতু বন্ধ্যা, ওর উপস্থিতিতে অন্যান্য মেয়েরাও বন্ধ্যা হয়ে যাবে। ব্যাপারটা মোটেই তা নয়। এই সুপারন্যাচারালি "সংক্রামক রোগ" বলতে কিছু নেই। বরং, ফিজিক্যালি সংক্রামক রোগ, যেমন কুষ্ঠ, যেটা সম্পর্কে একই হাদিসের শেষে তিনি সাবধান করেছেন, সেটার অস্তিত্ব আছে। বুঝাতে পেরেছি?
এখন দয়া করে মূর্খের মতন যা শুনবেন তাই বিশ্বাস করে নিজের ও অন্যের ক্ষতির কারন হবেন না। প্লিজ লাগে। গোটা বিশ্বে এখন মারাত্মকভাবে সংক্রামক ব্যাধি ছড়িয়ে গেছে, বৈজ্ঞানিকভাবে প্রমাণিত যে ভাইরাস অতি দ্রুত ছড়ায়, কুরআন-হাদিসের কোথাও এই নিয়ে কোন দ্বিমত নেই, আল্লাহর ওয়াস্তে রাসূলের হাদিসের ভুল ব্যাখ্যা বুঝে লাফাতে লাফাতে এই রোগ ছড়াতে সাহায্য করবেন না। দশ দিনের ছুটির দিনে মাওয়া ফেরি ঘাটের ভিডিও দৃশ্য দেখে মানসিক ট্রমায় চলে গেছি। এরপরেও যদি বাংলাদেশে করোনা না ছড়ায়, সেটি হবে আল্লাহর মিরাকেল। চাঁদ দ্বিখন্ডিত হওয়া, পাহাড় ফেটে উট বেরিয়ে আসা, লোহিত সাগরের পানি সরে গিয়ে রাস্তা তৈরী হওয়া, কিংবা মৃত মানুষের জীবিত হয়ে উঠার চাইতে এটি কোন অংশে কম হবে না। হে মুমিন মুসলমান, তোমরা তোমাদের রবের সামনে এখনই সিজদাহয় নত হও। যে কান্ড ঘটিয়ে দিয়েছো, তিনি ছাড়া কেউ নেই বাঁচাবার।
আমার দৃষ্টিতে মুসলিমদের জন্য অন্যতম বড় আজাব হচ্ছে মূর্খ মিথ্যুকদের আলেম বনে যাওয়া। আমাদের দেশের মানুষেরা বহু যুগ ধরেই এই আজাবে পতিত। আল্লাহ যেন আমাদের এইসব মূর্খ, মিথ্যুক, বাটপার, ধর্মব্যবসায়ীদের হাত থেকে দ্রুত উদ্ধার করেন। তিনি যেন আমাদের সঠিক জ্ঞান দান করেন, সিরাতুল মুস্তাকিমে পরিচালিত করেন।
আমিন!
২| ২৭ শে মার্চ, ২০২০ রাত ১:০৮
নতুন বলেছেন: কমন সেন্স ব্যবহার করতে ধমে` নিষেধ আছে। বিশ্বাস করতে বলেছে, যে যত বেশি অন্ধ বিশ্বাসী সে তত বেশি ধামিক।
বোখারী শরিফের হাদিসকে ১০০% সত্য বলে বিশ্বাস করে সবাই যদিও সেটা অযৌক্তিক হয় তবুও ধামিকেরা প্রশ্ন করবেনা। এই রকমের শিক্ষাই ধম বত`মানে দিয়ে যাচ্ছে।
সমস্যা এই খানেই ।
৩| ২৭ শে মার্চ, ২০২০ দুপুর ১:০৬
রাজীব নুর বলেছেন: 'ওরে মাওলানা, মসজিদ ঘরে আল্লাহ থাকে না।' মাতাল রাজ্জাক দেওয়ানের একটি জনপ্রিয় গান।
কিন্তু 'বাঙ্গালীর খাসলত' বলতে একটা কথা আছে।
যতই বলুক, আল্লাহ সর্বত্র বিরাজমান, সে নমাজ পড়তে মসজিদে ঢুকবেই। দরকারে, আগে-পরে ঘুষ খাবে, গরিবের হক মারবে, জেনা করবে...। 'আল্লাহর ঘর' মসজিদে যাইতেই হবে। শুক্রবারে তো কথাই নাই!
সুন্নত আদায়ে বাংলার মুসলাম যতটা উৎসাহী, কোরানের বাণী মানতে ততটা না। নইলে ৯০ শতাংশ মুসলমানের দেশে এত লুটপাট, রাহাজানি, অন্যায়- অবিচার, মিথ্যাচার, দুর্নীতি, খুন-গুম-ধর্ষণ কেমনে হয়!
নমাজ পড়েন। দোয়া করেন। যত খুশি ততবার। এইটা আপনার বিশ্বাস ও রুচি। কিন্তু মহাদুর্যোগে দায়িত্বশীল হোন। নিজেকে, পরিবার ও প্রতিবেশীকে ঝুঁকিমুক্ত রাখুন। সোশ্যাল ডিস্টেন্সিং করোনাকালে জরুরি।
সবাই সচেতন হোন, নিরাপদ থাকুন। আমিন।
২৮ শে মার্চ, ২০২০ সকাল ১০:৫৫
মঞ্জুর চৌধুরী বলেছেন: ঠিক বলেছেন।
©somewhere in net ltd.
১| ২৭ শে মার্চ, ২০২০ রাত ১২:৫৬
নেওয়াজ আলি বলেছেন: আল্লাহ কবে যে এই সব মিথ্যাবাদী ভন্ড ধর্ম ব্যবসাই হতে দেশকে মুক্ত করবে।