নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
আমি ঝন্ঝা, আমি ঘূর্ণি, আমি পথ-সমূখে যাহা পাই যাই চূর্ণি’। আমি নৃত্য-পাগল ছন্দ, আমি আপনার তালে নেচে যাই, আমি মুক্ত জীবনানন্দ। আমি হাম্বার, আমি ছায়ানট, আমি হিন্দোল, আমি চল-চঞ্চল, ঠমকি’ ছমকি’ পথে যেতে যেতে চকিতে চমকি’ ফিং দিয়া দিই তিন দোল; আমি চপলা-চপল হিন্দোল। আমি তাই করি ভাই যখন চাহে এ মন যা, করি শত্রুর সাথে গলাগলি, ধরি মৃত্যুর সাথে পান্জা, আমি উন্মাদ, আমি ঝন্ঝা! আমি মহামারী আমি ভীতি এ ধরিত্রীর; আমি শাসন-ত্রাসন, সংহার আমি উষ্ন চির-অধীর! বল বীর - আমি চির উন্নত শির!
বহুল প্রচারিত বাণী আছে, বিপদের সময়ে মানুষের আসল চেহারা বেরিয়ে আসে। তা আমাদের চেহারা কেমন একটু চোখ বুলানো যাক।
সাধারণ জনতা দিয়েই শুরু করি।
যেমন ধরেন, প্রথমে যখন ভাইরাস ছড়ানো শুরু হলো, তখন প্রবাসী লোকজন অসুস্থ শরীরেই বাংলাদেশ ফিরতে শুরু করলেন। জ্বর আছে শরীরে, প্যারাসিটামল খেয়ে সেটা দাবিয়ে রাখলেন। ভাইরাল ফিভার হলে এতে যে আশেপাশের যাত্রীদের মধ্যে ভাইরাস ছড়ানোর সম্ভাবনা থাকে, এই সামান্য বোধশক্তি পর্যন্ত আমাদের নেই। নিজের সাথে আরও হাজারো মানুষের জীবনকে ঝুঁকিতে ফেলে আমরা এয়ারপোর্টে এসে প্লেনে উঠে গেলাম।
ঢাকা এয়ারপোর্টে পৌঁছার পরে যখন জিজ্ঞেস করা হয় কোন সর্দি কাশি বা জ্বর ছিল কিনা, আমরা দিব্যি মিথ্যা বলে দিলাম, "না নাই।"
ঠিকানা চাইলো, সেখানেও ভুল ঠিকানা দিয়ে বেরিয়ে গেলাম।
পরে যখন সরকার নড়েচড়ে বসলো, প্রবাসীদের লেখা ঠিকানায় লোক পাঠালো, সেখানে গিয়ে জানা গেল, ওরা সরকারকে "বেকুব" বানিয়েছে।
আহা কি আনন্দ!
বেকুবগুলি বুঝলোই না, বাস্তবে বেকুব হয়েছে সে নিজে, এবং এর ফল ভুগবে নিজের পরিবার, আত্মীয় স্বজন ও এলাকাবাসী হয়ে গোটা দেশ।
এরপরে যখন রোগ প্রকাশ হতে শুরু করলো, লোকজন এক হসপিটাল থেকে ঘুরে অন্য হসপিটালে গিয়ে চিকিৎসা পাচ্ছিল না, তখন রোগের উপসর্গ লুকিয়ে, মিথ্যা বলে হসপিটালে ভর্তি হতে শুরু করলেন। লাভ কিন্তু হলো না। এইভাবে ভর্তি হওয়া বেশির ভাগ রোগী পরের দিনই মারা গেলেন। মাঝে দিয়ে হসপিটালকে বোকা বানিয়ে ভর্তি হয়ে ডাক্তারদের অসুস্থ করে ফেললেন। ডাক্তাররা কোয়ারেন্টাইনে চলে গেলেন, হসপিটাল চিকিৎসক ও নার্স সঙ্কটে পড়ে গেল। সাধারণ রোগীরা বিপদে পড়লেন। তারচেয়ে বড় কথা, মিথ্যা বলে হসপিটালের মতন চরম সেনসিটিভ স্থানে ভর্তি/যাতায়াত করায়, সেখানে এই রোগটি ছড়ানো হয়েছে। যেখানে আমরা সবাই (হয়তো) এতদিনে ভাল করেই জানি, করোনা ভাইরাস যেকোন ছোট রোগের রোগীর জন্যও প্রাণঘাতী হয়ে দেখা দেয়। ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রীর শরীরে কোনই রোগ নেই, কেবল ওজন বেশি, এতেই বেচারা সরাসরি আইসিইউতে চলে গেছে। সেক্ষেত্রে আমাদের এই রকম বেয়াক্কেলামি, বেপরোয়া আচরণের ফলে হাজার খানেক সাধারণ মানুষও যদি মরে, তবুও এর শাস্তি আমাদের দেশে নেই। কারোর বিবেকে একটুও দাগ কাটবে না।
আরেকটা যন্ত্রনা দেখা দিল, সেটি হচ্ছে, লোকজন চিকিৎসা করতে আসছে ঠিকই, কিন্তু ঠিকানাও দিচ্ছে ভুল। ভয় এইটা যে যদি ওর করোনা ধরা পড়ে, তাহলেতো তাঁর বাড়িকে, পরিবারকে লকডাউন করা হবে। কালকেই পড়ালাম খবরে, এক উপজেলার বাসিন্দা যুবক নিজের ঠিকানা ভুল দিয়েছে। যথাযথ কর্তৃপক্ষ তার বাড়ি লকডাউন করতে গিয়ে দেখে এই কান্ড। পরে আসল ঠিকানা দেয়ায় সেই বাড়ি লক ডাউন করা হয়। ভাইয়েরা, আপনাদের এবং অন্যদের নিরাপত্তার খাতিরেই লকডাউন করা হচ্ছে। এতে আপনারা যেমন অন্য কাউকে রোগ দিতে পারবেন না, তেমনি অন্য কারোর থেকেও রোগ নিতে পারবেন না। দয়া করে এই ধরনের ফাইজলামি করবেন না। প্লিজ।
তারপরে আরেকটা খবর শুরু থেকেই আসতে লাগলো, এবং তা হচ্ছে, করোনা রোগী, বা করোনা সন্দেহের রোগীদের ও তাঁদের পরিবারের প্রতি আমাদের সমাজের বিমাতাসুলভ আচরণ। কারোর জ্বর হয়েছে, বা কাশছে শোনামাত্র তাঁর পুরো পরিবারকে সমাজচ্যুত ঘোষণা করা হচ্ছে। এক এম্বুলেন্স ড্রাইভার জ্বর নিয়ে বাড়িতে ফেরার কয়েক ঘন্টার মধ্যে স্বপরিবারে আত্মগোপনে যেতে হয়েছে। কবরস্থানে পর্যন্ত সাইনবোর্ড ঝুলিয়ে দেয়া হলো, এখানে কোন করোনা রোগীর দাফন হবে না। কেন ভাই? এই আচরণ করলে স্বাভাবিকভাবেই যার করোনা হয়েছে, সে লুকাবে। ফলে আপনার সাথে মিশবে, এবং আপনারও করোনা হবে। বরং এই বিষয়ে খোলামেলা আলোচনা হওয়া জরুরি। পাড়ায় পাড়ায় মহল্লায় মহল্লায় গণ সচেতনতার সাথে এমন সিদ্ধান্ত নেয়া উচিৎ যে যার পরিবারে করোনা হবে, তাঁকে কোয়ারেন্টিনে থাকতে হবে। তাঁর সংসারের যাবতীয় বাজার সদাই বা অন্যান্য প্রয়োজনীয় কাজগুলো এলাকাবাসী করে দিবে। খুব কঠিন কোন কাজ না। মাস্ক/গ্লাভস ইত্যাদি জড়িয়ে বাজার এনে বাড়ির দরজায় রেখে দিবে। টাকা আগে থেকেই রাখা থাকবে। বাজারকারী চলে যাবার পরে রোগী দরজা খুলে বাজার নিবেন। কেউ কারোর স্পর্শ নিলেন না। টাকা ধরার পরে সেই টাকা স্যানিটাইজ করে নিবে। আর দেশে যদি অনলাইন শপিংয়ের ব্যবস্থা থাকে, তাহলেতো কথাই নাই।
ইচ্ছা থাকলেই উপায় হয়। আমাদের এক বন্ধু নিজের পাড়ায় এমন একটা গ্রূপ তৈরী করেছে যে বৃদ্ধ বৃদ্ধাদের কারোর যদি বাজারে যেতে হয়, তাহলে তাঁরা ফেসবুকে বলে দিবেন। কোন একজন ভলান্টিয়ার, যে নিজের প্রয়োজনে সেদিন বাজারে যাবে, সে তাঁদের বাজারটাও করে দিবে। কারন এই রোগে সবচেয়ে ঝুঁকিতে আছেন বৃদ্ধ বৃদ্ধারা।
এখন অবশ্য তরুণ বৃদ্ধ শিশু সবাই ঝুঁকিতে আছে। নিয়মিতই বিভিন্ন বয়সীদের মৃত্যু সংবাদ পাচ্ছি।
ত্রাণের ব্যাপারে কিছু মন্তব্য করা যাক। ফার্স্ট হ্যান্ড এক্সপিরিয়েন্সড লোকজনের মুখ থেকে শোনা।
এক বান্ধবীর কাজের বুয়া যেখানেই ত্রাণ দেয়, সেখানেই হাজির হয়। ওর কয়েক মাসের জন্য যথেষ্ট চাল ডাল জমে গেছে, তারপরেও সে বারবার ছুটে যাচ্ছে। বরং অন্য কাউকে নেয়ার সুযোগ করে দিতে পারে। এই কথা বলতেই বুয়া বলল, না, ওরই ত্রাণ লাগবে। কারন বাড়তি ত্রাণ সামগ্রী সে বিক্রি করে কিছু টাকা কামাতে পারে। উল্লেখ্য, পুরো মাসের বেতন ওদের দেয়া হয়েছে।
ক্রিকেটার রুবেল ত্রাণ বিতরণের অভিজ্ঞতায় খুব অবাক হয়ে জানতে পারলো, দুস্থদের জন্য ত্রাণ নিতে আসা একজন নাকি একটি ভবনের মালিক। (প্রথমআলো)
আজকেই খবরে জানলাম, ফরিদপুরে আস্ত জেলায় মাত্র ১৬টি ভেন্টিলেটর আছে। এবং এই ১৬টির একটিও কাজ করেনা। সেই পাঁচ বছর আগে এগুলো আনা হয়। লোকবলের অভাবে চালানো হয়নি। এখন চালাতে গিয়ে দেখে একটিও কাজ করছে না। খুব বড় সর সুযোগ আছে সবকিছুর মতোই এখানেও কোটি টাকা লুটপাট হয়েছে।
আরেকটা সংবাদও নিশ্চই সবার নজরে আসছে। সরকারি পর্যায়ের ত্রাণগুলো উপজেলা চেয়ারম্যান, না হয় প্রভাবশালী কর্তৃপক্ষ মেরে দিচ্ছে। যার যার বাড়িতে বস্তা বস্তা ত্রাণের চাল উদ্ধার করছে পুলিশ। দুইদিন পরপর এমন সংবাদ এখন পাওয়া যাচ্ছে।
মোট কথা, এই মহাদুর্যোগের দিনেও, কাজের বুয়া থেকে শুরু করে গৃহকর্তা ও বাড়ির মালিক হয়ে উচ্চপর্যায়ের সরকারি কর্মচারী পর্যন্ত, আপনি কাউকেই বিশ্বাস করতে পারবেন না। আজীবন আমরা চুরি করে এসেছি, এখনও করছি, মরার পরেও দেখা যাবে আরেকজনের কাফন চুরি করে ফেলেছি। আমাদের রন্ধ্রে রন্ধ্রে দুর্নীতি, এখন খুব প্রকট হয়ে দেখা দিচ্ছে।
এখন মসজিদ বন্ধ ঘোষণা করেছে। সামনে আসছে শবে বরাত। তারপরেই রমজান। দেখা যাক "ধার্মিক" বাঙালি কেমন প্রতিক্রিয়া করে।
একটি ছবি শেয়ার করতে খুব মন চাইলো। ছবিটা আজকে আমাকে ফরওয়ার্ড করেছে তারেক। জাহিন ফাইজ নামের এক ছেলের প্রোফাইল থেকে নেয়া।
ভাল করে লক্ষ্য করুন, গোটা কাবা চত্ত্বর খালি। কেবল একজন মানুষ সেখানে সিজদাহ দিতে পারছে। কোন রাজা, মহারাজা, রাজপুত্র বা প্রেসিডেন্ট নয়, লোকটি একজন পরিচ্ছন্নতাকর্মী। সামান্য দুই পয়সা যার আয়। আল্লাহ এমন দুর্যোগে পৃথিবীর সব মানুষের কাছ থেকে তাঁর ঘর ছুঁয়ে সিজদাহ দেয়ার অধিকার কেড়ে নিলেও কেবলমাত্র এই পরিচ্ছন্নতাকর্মীকে এই সুযোগ করে দিয়েছেন। আল্লাহর চোখে আমি আপনি রাস্তার মেথর, বস্তির মানুষ থেকে শুরু করে প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প - কারোর সামাজিক স্ট্যাটাসের বিন্দু পরিমান মূল্য নেই। তিনি কেবল তাকওয়া দেখেন। এখনও যদি আমরা না বুঝি, তাহলে আমাদের মরে যাওয়াই ভাল।
২| ০৯ ই এপ্রিল, ২০২০ সকাল ৯:২২
রাফা বলেছেন: হায়রে বাঙালী-মৃত্যুর পুর্ব মুহুর্তেও শেষ চুরির সুযোগ ছাড়বেনা। এদের সবাইকে মেডিক্যালি করোনায় আক্রান্ত করে, একত্রে জড়ো করে কোয়ারেন্টাইনে রাখা উচিত। তারপরে টেলিকাস্ট করে প্রচার করা উচিত হবে কার কি অপরাধ।
কথা হইলো এই পোষ্ট কোনদিনই পড়বেনা একজন দুর্ণিতীবাজ বা বুয়ার মত ঐ ক্রিমিনালরা।সো, অব্যাহত থাকবে তাদের মিশন।
আমরা কতিপয় পড়বো আর দাত কিরমির করে গিলে ফেলবো।ধন্যবাদ।
৩| ০৯ ই এপ্রিল, ২০২০ সকাল ৯:৪১
অভি চৌধুরী বলেছেন: আমরা বড়ই অস্থির জাতি।
৪| ০৯ ই এপ্রিল, ২০২০ সকাল ১১:৫৭
সাইন বোর্ড বলেছেন: এসব অবস্থা থেকে উত্তরণের আপাতত কোন সুযোগ দেখছি না ।
৫| ০৯ ই এপ্রিল, ২০২০ সকাল ১১:৫৭
ক্ষুদ্র খাদেম বলেছেন:
সহজ একটা বিষয় আমরা সারা জীবনই এড়িয়ে গেছি, তার ফল যদি এখন ভোগ না করি তাহলে ভবিষ্যতে হয়ত আরও খারাপ কিছু আমাদের জন্যে অপেক্ষা করছে। আমরা নিজেরা বাচ্চাদের শিখাই প্রতিযোগিতা, শেখানো উচিত সহযোগিতা। এই ভাবটাই পরবর্তীতে বাকি সবকিছু নিয়ন্ত্রণ করে। এটা গোঁড়ার সমস্যা। অনেককাল আগে ব্রিটিশ রা বলেছিল, "বাঙ্গালিকে দিয়ে অনেক কিছু করানো গেলেও এদের লাইনে দাঁড় করানো যায় না"
৬| ০৯ ই এপ্রিল, ২০২০ দুপুর ১:৫২
রাজীব নুর বলেছেন: দান করবেন ভালো কথা কিন্তু নিজের প্রতিষ্ঠানের কর্মচারীরা বেতন পেলো কিনা একটু খোঁজ নিন।
৭| ০৯ ই এপ্রিল, ২০২০ বিকাল ৩:৪৪
নেওয়াজ আলি বলেছেন: আজ করোনা আক্রান্ত ১২২ জন। হে মাবুদ ক্ষমা করো
©somewhere in net ltd.
১| ০৯ ই এপ্রিল, ২০২০ সকাল ৭:৫৮
শুভবাদী রোদ বলেছেন: আমার মনে হয় না সেই বোধোদয় কোনোদিন ই ঘটবে। কারণ বেশিরভাগ মানুষই অকৃতজ্ঞ। মানুষকে বানানো ই হয়েছে এভাবে। তাই বেশিরভাগেরই কোনো পরিবর্তন হবে না।