নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

মঞ্জুর চৌধুরী

আমি ঝন্ঝা, আমি ঘূর্ণি, আমি পথ-সমূখে যাহা পাই যাই চূর্ণি’। আমি নৃত্য-পাগল ছন্দ, আমি আপনার তালে নেচে যাই, আমি মুক্ত জীবনানন্দ। আমি হাম্বার, আমি ছায়ানট, আমি হিন্দোল, আমি চল-চঞ্চল, ঠমকি’ ছমকি’ পথে যেতে যেতে চকিতে চমকি’ ফিং দিয়া দিই তিন দোল; আমি চপলা-চপল হিন্দোল। আমি তাই করি ভাই যখন চাহে এ মন যা, করি শত্রুর সাথে গলাগলি, ধরি মৃত্যুর সাথে পান্জা, আমি উন্মাদ, আমি ঝন্ঝা! আমি মহামারী আমি ভীতি এ ধরিত্রীর; আমি শাসন-ত্রাসন, সংহার আমি উষ্ন চির-অধীর! বল বীর - আমি চির উন্নত শির!

মঞ্জুর চৌধুরী › বিস্তারিত পোস্টঃ

পলিটিক্যাল নাস্তিক ও ১৫ই অগাস্ট

১৪ ই আগস্ট, ২০২০ রাত ১১:১৭

যেকোন বিষয়ে অতি আনুষ্ঠানিকতা মূল বিষয়টাকে নষ্ট করে ফেলে।
যেমন আমাদের কুরবানীর ঈদের কথাই ধরা যাক। এর মূল উদ্দেশ্য ইব্রাহিম নবীর (সঃ) সুন্নত পালন, আল্লাহর নির্দেশে নিজের মনের পশুর গলায় ছুরি চালানো, ত্যাগের মাহাত্ম্যকে উদযাপন করা।
আমরা সেটাকে বানিয়ে দিলাম মাংস খাওয়ার মহোৎসবে।
ইসলাম যেখানে স্পষ্ট বলে দিয়েছে যে "হালাল অর্থে উপার্জিত সম্পদ ছাড়া কোন ইবাদতই কবুল হয়না" আমরা সেখানে বড় বড় পশু কোরবান করতে অসৎ উপায়ে হলেও টাকা উপার্জন করছি। যেকোন সরকারি প্রতিষ্ঠানে যান, পিওন থেকে শুরু করে বড় বড় অফিসার পর্যন্ত ঈদ উপলক্ষে আপনার থেকে বাড়তি ঘুষ নিবে। তাকওয়া বা আল্লাহর সন্তুষ্টির চেয়ে বড় হয়ে গেছে লোকজনের সাথে অসুস্থ প্রতিযোগিতা। পত্রিকায় খবর ছাপাই, কে কত লাখ টাকার গরু কোরবান দিচ্ছি। কম পয়সায় বড় গরু কেনা গেলে লোকজন প্রশংসা করেন, "ভাই জিতছেন!"
অথবা, ছোট গরুর জন্য বেশি দাম দিলে বলে, "ভাই ঠকছেন। এত ট্যাকায় মাত্র একটা বাছুর কিনলেন?"
অথচ জেতা বা ঠকা পুরোটাই নির্ভর করলে আল্লাহর কবুল করা, না করার উপর। যা বুঝার কোনই উপায় নাই। এবং এই কারণেই এই ধরনের কোন মন্তব্যই করা উচিৎ না।
ঈদ বিনোদনের দিকটাও দেখুন। একটা টিভিতে একটা অনুষ্ঠানেও ঈদ, ঈদ বিষয়ক কোন প্রসঙ্গই নেই। কমেডি নাটকের নামে ভাঁড়ামি, বস্তা পঁচা কিছু প্রেমকাহিনী, সস্তা আবেগী কিছু গল্প ইত্যাদি সবই দেখানো হবে। অথচ যে উপলক্ষ্যে এই অনুষ্ঠান, সেই উপলক্ষ্যকে প্রসঙ্গেই রাখবে না।
তা ঈদ দিয়ে উদাহরণ দিলাম, আপনি যেকোন উৎসবকে গণনায় ধরুন, তারপরে মিলিয়ে দেখুন। আমাদের উদযাপন থমকে আছে আনুষ্ঠানিকতায়। একুশে ফেব্রুয়ারি স্পেশাল কেক বানানোর রেসিপি প্রকাশ হয় জাতীয় পত্রিকায়। ভাষা শহীদদের স্মরণে শোক দিবসটি ফ্যাশনে রূপ নিয়েছে। বিভিন্ন ফ্যাশন হাউজ এই নিয়ে নানান প্রোডাক্ট লঞ্চ করে।
পহেলা বৈশাখেও আমরা একদিনের বাঙালি বনে যাই। আগের দিনও না, পরের দিনও না। পান্তা ইলিশ না খেলে আমি যেন বাঙালি হবো না। বাঙালি হওয়াটা কেবল এই খাদ্যপদে সীমাবদ্ধ হয়ে গেছে? এই শিখলে জীবনে?
স্বাধীনতা দিবস এবং বিজয় দিবসকে আমরা গুলিয়ে ফেলি। "ছাব্বিশে মার্চে তিরিশ লক্ষ্য শহীদের রক্তের বিনিময়ে আমরা একটি দেশ পেয়েছি" বা "ষোলোই ডিসেম্বর খুব যুদ্ধ হয়েছিল। এই দিনে পাকিস্তান বাহিনী আমাদের নিরীহ মানুষের উপর ঝাঁপিয়ে পড়েছিল" - এমন মন্তব্য টিভিতে বলতে দেখা যায়। আরও অনেক কিছু আছে। যেকোন অনুষ্ঠানকেই নিন। তেমনই পনেরো অগাস্ট, জাতীয় শোক দিবসও বাদ যায় না।
এক পাল ইতর, বদমাইশ, চাটুকার এই দিনে নিজের হাস্যোজ্জ্বল ছবি পোস্টারে ছাপিয়ে জাতির সাথে শোক দিবসের শুভেচ্ছা বিনিময় করে।
আরেকদল বিরিয়ানি উৎসব করে। কাঙ্গালী ভোজের খাবার কাঙ্গালদের খাওয়ানোর বদলে নিজেরা ভাগ বাটোয়ারা করে খায়। ক্যামেরায় ছবি তুলতে কিছু কাঙ্গালকে দেয়া হয়, এবং সেটাই শেষ। বিরিয়ানির প্যাকেটে বঙ্গবন্ধুর ছবি আঁকা থাকে, খাওয়া শেষে যার স্থান হয় আস্তাকুড়ে। আমি বলছি না সেই ছবিকে পূজা করতে, আমি বলছি জানিসই যখন প্যাকেট আস্তাকুঁড়ে ফেলা হবে, তাহলে তুই কোন আক্কেলে সেখানে ছবি ব্যবহার করিস? কেউ প্রিয়জনের ছবি টয়লেট পেপারে ছাপায়? এখানে তাহলে তোর আক্কেল কোই থাকে?
আরেকদল দোয়া মাহফিলের আয়োজন করে। খুব ভাব ভঙ্গি আর অ্যাকশনে মাহফিলে বসে। হাত আকাশে তুলে হেভি পোজে উপরওয়ালার দরবারে দোয়া চায়। ক্যামেরা সরে যেতেই সব শেষ।
আমি কি একটুও বানিয়ে বলছি? আমি নিজের চোখে এইসব ঘটতে দেখেছি। "ইডিট করা যায়" বলে চালাতে পারবেন না।

অথচ এই দিনে আওয়ামীলীগের উচিৎ ছিল "শোক" যাপন করা। আওয়ামীলীগের উচিৎ ছিল নিজেদের বিগত বছরের কর্মকান্ডের সঠিক মূল্যায়ন করা, তারা কী বঙ্গবন্ধুর আদর্শের উপর আছে, কি নেই। এক দশকের বেশি ক্ষমতায় থেকেও মানুষের মাঝে বঙ্গবন্ধুকে পৌঁছে দিতে কেন আওয়ামিলীগ ব্যর্থ হচ্ছে, এই বিষয়টা নিয়ে গবেষণা করা। তারপরে ঘটনার মূলে গিয়ে তা সমূলে উৎপাটন করা।
"নিরাপদ সড়ক চাই আন্দোলনে" লুঙ্গি গায়ে মাথায় হেলমেট পরে এক পাল জানোয়ার ঝাঁপিয়ে পড়েছিল আমাদের কোমলমতি শিশুদের উপর। বিদ্যামন্দিরে ফুটেছিল ককটেল এবং ভাংচুর হয়েছিল। বঙ্গবন্ধু বেঁচে থাকতে কি এসব হতে দিতেন? যদি দিতেন, তাহলে ঠিকই আছে। যদি না দিতেন, তবে কেন দোষীদের বিচার হলো না?
কেন বাংলাদেশে কোন হত্যারই বিচার হয়না? কেন বাংলাদেশের এক থানার সিরিয়াল কিলার ওসি দেড়শো ক্রস ফায়ারে দুইশ চারজন মানুষ হত্যার পরেও পার পেয়ে যায়?
কেন আমাদের দেশে করোনা পরিস্থিতিতেও লোকজন ভুয়া সার্টিফিকেটের ব্যবসা করার সাহস করে?
কেন জনপ্রতিনিধি ত্রাণ চুরি করে?
কেন আমাদের দেশে তৃণমূল পর্যায় থেকে দুর্নীতি দূর হয়নি?
কেন আজও সৎ সরকারি কর্মকর্তাদের বদলি করে দেয়া হয়? কেন আমাদের একটি সরকারি প্রতিষ্ঠানও বুকে হাত দিয়ে দুর্নীতিমুক্ত ঘোষণা করতে পারে না?
এইসব যদি বঙ্গবন্ধুর আদর্শ হয়ে থাকে, তাহলে কিছু বলার নাই। আর যদি না হয়ে থাকে, তবে এইসব প্রশ্নের উত্তর দিতেই হবে। আওয়ামীলীগ কারোর উপর দোষারোপ করতে পারবে না। এখন সরকারি দল, বিরোধী দল সবই তারা।
আমার অতি ঘনিষ্ট আত্মীয় সারাজীবন পার্টি পলিটিক্স করেছেন। মাঠ পর্যায়ে কাজ করেছেন। লোকজন তাঁকে ভালই চেনে। এলাকায় তিনি একজন ত্যাগী ব্যক্তিত্ব। যখনই মানুষ তাঁকে ডেকেছে, পেয়েছে। তাঁর ক্ষমতায় তিনি যেটুকু পেরেছেন, করেছেন। তিনি জনতার সেবার উদ্দেশ্যেই ওয়ার্ড কমিশনার পদপ্রার্থী হয়েছিলেন। আওয়ামীলীগের এক জ্যেষ্ঠ্য সদস্য নমিনেশনের জন্য তাঁর কাছে ঘুষ চেয়েছেন। তিনি মাঠ পর্যায়ে কাজ করা কর্মী। পার্টির আদর্শ বুকে লালন করেন। তিনি টাকা নিয়ে নমিনেশন কিনবেন কেন? এতো পার্টির আদর্শের বিরুদ্ধে যাওয়া। তিনি প্রতিবাদ করেন। এবং অবশ্যই ঘুষ দিতে রাজি হননা। তাঁকে নমিনেশন না দিয়ে অন্যকে দেয়া হয়। তিনি স্বতন্ত্রপ্রার্থী হন। পার্টি থেকে প্রচার করা হয় তিনি বিদ্রোহী প্রার্থী।
এই চলছে স্বাধীনতার অর্ধ শতাব্দী পরে বাংলাদেশে। বঙ্গবন্ধুর রাজনৈতিক দলে! কেন? কারন, আমরা জাতীয় শোক দিবসে হাস্যোজ্বল মুখে জাতির সাথে শুভেচ্ছা বিনিময় করি। আমরা বিরিয়ানি উৎসব করি। ডিজে পার্টি করি। আমরা মিলাদ মাহফিল করি। আমরা সবই করি, কেবল যে লোকটাকে এদিন স্বপরিবারে হত্যা করা হয়েছিল, তাঁর আদর্শের প্রতি সম্মান জানাই না।
শেখ হাসিনা মাঝে মাঝে কঠিন কথা শোনান। একবার তিনি বলেছিলেন, "তখন আপনারা কোথায় ছিলেন যখন আমার বাবার লাশ সারাদিন সিঁড়িতে পড়েছিল?"
প্রধানমন্ত্রীর উচিৎ এই একটি প্রশ্ন প্রতিটা চাটুকারকে সকালে একবার, বিকালে একবার এবং রাতে একবার করে করা।
বাঙালির ইতিহাস বেঈমানির ইতিহাস। এতে গর্বিত হবার কোনই এলিমেন্ট নেই। সেই সিরাজুদ্দৌলার সময় থেকেই ধরা যাক, কেবল মীরজাফরইতো বেঈমানি করেনি। ওর আরও সাঙ্গ পাঙ্গ ছিল। পলাশী থেকে পালিয়ে আসা পরাজিত নবাব যখন সৈন্য একত্র করতে চাইলেন, তখন সেই সৈন্যরা কি করেছিল জানেন নিশ্চই? বাধ্য হয়ে সিরাজ পালিয়ে যান। ক্ষুধার্ত সিরাজ যখন খাবারের জন্য নৌকা ভেড়ান, তখন তামসা নামের এক জনৈক ফকির নবাবের নাগরা দেখে সিরাজকে চেনে এবং রাজমহলের ফৌজদারকে খবর পাঠিয়ে সিরাজকে ধরিয়ে দেয়। বেঈমানিতো জনতাও করেছিল। ক্লাইভ যখন মুর্শিদাবাদ আসে, তখন ইংরেজকে দেখতে যে উৎসুক জনতা ভিড় করেছিল, তারা সামান্য নুড়ি পাথর ছুড়ে মারলেও ইংরেজরা সেদিন ধূলিস্যাৎ হতো। কিন্তু তারা পরাজিত নবাবের তামাশা দেখতে ভিড় করেছিল। দুইশো বছর গোলামী কেন ওদের প্রাপ্য না একটু বুঝাতে পারবেন? একাত্তুরেও বেঈমানি করেছে রাজাকার আল বদর বাহিনী, স্বাধীনতার পরেও চলেছে এই বেঈমানি। পঁচাত্তরে সেই বেঈমানিরই ধারাবাহিকতা ঘটেছে। এবং ইন্টারেস্টিং ব্যাপার হচ্ছে, আওয়ামীগের নিজেদের মধ্যেই এখন ওরা মিশে গেছে।
আমি কোন কালেই আওয়ামীগের ভক্ত ছিলাম না। পারিবারিকভাবেই বাংলাদেশের মোটামুটি সব পলিটিকাল দলের কাছ থেকেই ভয়ংকর তিক্ত অভিজ্ঞতা আছে। আমি বেঁচে থাকতে আমার মনে হয় না জীবনেও বাংলাদেশী কোন পলিটিকাল পার্টিকে আমি সমর্থন করতে পারবো। হ্যা, কিছু পার্টির কিছু ত্যাগী নেতাকে অবশ্যই সম্মান করি। কিন্তু তাঁদের আস্ত গোষ্ঠীতে যে সমস্যা আছে, সেটা কিছুতেই মেনে নিতে পারিনা।
আমার কথা ভিন্ন। আমি পলিটিকাল নাস্তিক বলতে পারেন। একদম তসলিমা পর্যায়ের। ক্যানভাসকেও তাই আমরা সেটাই রেখেছি। রাজনীতিমুক্ত।
কিন্তু গত এক দশকেই বাংলাদেশের একটি জেনারেশন যারা আওয়ামীলীগের নানান কর্মকান্ডে ওদের ঘৃণা করতে শিখেছে, এর দায় কেবলমাত্র এইসব গজিয়ে উঠা আগাছা ও পার্টির ভিতরের ভাইরাসদের। ওদের বিরুদ্ধে কিছু বললেই আপনি জামাত বিনপি। আপনি স্বাধীনতার শত্রু। ওদের কাছে দেশপ্রেমী কেবলমাত্র "সহমত ভাইয়েরা।"
আসেন, ওদের চেতনা গিলে একটা লম্বা ঘুম দেই।

বলতে পারেন, যদি পলিটিক্যাল নাস্তিক হয়েই থাকি, তবে কেন হঠাৎ বঙ্গবন্ধুকে নিয়ে পোস্ট দিলাম? উত্তরটা হচ্ছে, তাঁকে একটি নির্দিষ্ট দলে সীমাবদ্ধ রাখাটাই সবচেয়ে বড় পলিটিক্স। তিনি যদি বাংলাদেশের রাষ্ট্রপিতা হয়ে থাকেন, তবে সবারই উচিৎ তাঁকে সেইভাবেই দেখা।

মন্তব্য ৬ টি রেটিং +৩/-০

মন্তব্য (৬) মন্তব্য লিখুন

১| ১৪ ই আগস্ট, ২০২০ রাত ১১:৩৬

আকন বিডি বলেছেন: যুগের দাবিতো লোক দেখানো।এই করেইতো চলছে।এর বিরুদ্ধে কিছু বললে রাজাকার, দেশ বিরোধী এগুলা পাইতে হয়। সাহেদতো লোক দেখাইয়া এতো কিছু করছে। সেখানে অন্য কিছু পাব্লিক খাবে না।

১৭ ই আগস্ট, ২০২০ রাত ৯:০১

মঞ্জুর চৌধুরী বলেছেন: :(

২| ১৫ ই আগস্ট, ২০২০ রাত ১২:৫৪

রাজীব নুর বলেছেন: সত্যিকার শোক পালন করেন দুজন। শেখ হাসিনা এবং শেখ রেহানা। বাকি সবাই লোক দেখানো।

১৭ ই আগস্ট, ২০২০ রাত ৯:০১

মঞ্জুর চৌধুরী বলেছেন: ঠিক বলেছেন।

৩| ১৫ ই আগস্ট, ২০২০ রাত ১:১৯

নুরুলইসলা০৬০৪ বলেছেন: ইব্রাহীম নবীর সুন্নত টাই আমরা পালন করি তার ধর্ম টাকে ঘৃনা করি।সত্যি কি বিচিত্র

১৭ ই আগস্ট, ২০২০ রাত ৯:০১

মঞ্জুর চৌধুরী বলেছেন: :(

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.