নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
আমি ঝন্ঝা, আমি ঘূর্ণি, আমি পথ-সমূখে যাহা পাই যাই চূর্ণি’। আমি নৃত্য-পাগল ছন্দ, আমি আপনার তালে নেচে যাই, আমি মুক্ত জীবনানন্দ। আমি হাম্বার, আমি ছায়ানট, আমি হিন্দোল, আমি চল-চঞ্চল, ঠমকি’ ছমকি’ পথে যেতে যেতে চকিতে চমকি’ ফিং দিয়া দিই তিন দোল; আমি চপলা-চপল হিন্দোল। আমি তাই করি ভাই যখন চাহে এ মন যা, করি শত্রুর সাথে গলাগলি, ধরি মৃত্যুর সাথে পান্জা, আমি উন্মাদ, আমি ঝন্ঝা! আমি মহামারী আমি ভীতি এ ধরিত্রীর; আমি শাসন-ত্রাসন, সংহার আমি উষ্ন চির-অধীর! বল বীর - আমি চির উন্নত শির!
"চকলেট" বাচ্চাদের জন্য অতি লোভনীয় খাবার। প্রথম ও একমাত্র বাচ্চা বলে ছেলেকে চকলেট আসক্ত হতে দিলাম। বাঁধা দেই নাই। একটা ললিপপ চোখের পলকে মাত্র কয়েক কামড়েই শেষ করে ফেলতে পারতো। সকালে নাস্তা করতো রুটির মধ্যে নাটিলার পুরু আস্তর দিয়ে। দুপুরে খাবার শেষে বসতো হারসিজ কিসেসের একটি আস্ত প্যাকেট নিয়ে। মুড়ির মতন একের পর এক চকলেট মুখে পুড়তো। পান খেয়ে মানুষ যেমন মুখ ভর্তি করে ফেলে লাল পিকে, ওর মুখ ভর্তি থাকতো চকলেটে। এমনই দুরবস্থা ছিল।
ফল যা হবার তাই হলো। দাঁতের অবস্থা একদমই দফা রফা। কিছু বুঝে ওঠার আগেই ক্ষয় হতে শুরু করে। এবং দাঁতে একবার ক্ষয় ধরলে কিছুতেই থামানো যায়না। তা আপনি যত দামি টুথপেস্ট ও ব্রাশ দিয়ে যতবারই দাঁত মাজুন না কেন।
ক্যাভিটি অতি দ্রুত মোটামুটি সব দাঁতেই ছড়িয়ে গেল। যে ছেলে হাসলে একসময়ে মুগ্ধতা ছড়াতো, অতি দ্রুত সেই হাসি ফোকলা হয়ে গেল।
ডেন্টিস্ট তাঁর দাঁত দেখে জিজ্ঞেস করলো এই অবস্থা হলো কিভাবে?
আমার চেহারা তখন গোবেচারা বৎসের মতন।
এক্সরে ধরে সামনা সামনি দেখালো যে ক্যাভিটি নার্ভের কতটা কাছাকাছি পৌঁছে গেছে।
দাঁতের ক্ষয় একবার নার্ভে ধরলে ব্যথায় রাতের ঘুম হারাম হয়ে যায়। এটাইতো ছিল আমাদের সবারই শৈশবের স্মৃতি।
একবার ব্যথা ধরলে আমরা প্যারাসিটামল (ব্যথানাশক হিসেবে এক নম্বর ওষুধ) খেয়ে ঘুম দিতাম। আমার ছেলের সমস্যা হচ্ছে, সে বাবা মায়ের হাতে ওষুধ খাবেনা। কিছুতেই না। জোর জবরদস্তি করে খাওয়াতে গেলে থু করে ফেলে দেয়।
সাধারণত দুধ দাঁত পড়তে শুরু করে ছয় বছর বয়স থেকেই। এগারো বছর পর্যন্ত এই ধারা চলে। ছেলের বয়স সাড়ে পাঁচ। কাজেই দীর্ঘ সময় অপেক্ষার সুযোগ নেই। আসল টেনশন, এই ক্যাভিটি মাড়ির ইনফেকশনে রূপ নিতে পারে। তখন যন্ত্রনা ও খরচ দুইই বাড়বে।
অতঃপর অপারেশন টেবিলে শুতেই হলো বেচারাকে। যেহেতু সে এখনও শিশু, তাই এনেস্থেশিয়া দিয়ে অজ্ঞান করে সব দাঁতের উপর কাজ করবে ডাক্তার। মানে হচ্ছে ডেন্টিস্টের বিলের সাথে যুক্ত হচ্ছে হসপিটালের বিল। এদেশের চিকিৎসার খরচ সম্পর্কে যাদের মোটামুটি ধারণা আছে তাঁরা বুঝতেই পারছেন বছরের শুরুতেই খেলাম বিরাট ধরা।
আমেরিকার ঐতিহাসিক দিনে, যখন নতুন প্রেসিডেন্ট শপথ গ্রহণ করছেন, আমার বাচ্চা তখন প্রথমবারের মতন সার্জারি টেবিলে শুয়ে।
যতটা ভয়ংকর অভিজ্ঞতা হবে ভেবেছিলাম মোটেও তেমন হলো না।
শুরু থেকেই নার্সরা তাঁদের রোগী বুঝে নিল। এদেশের শিশুদের ডাক্তার, নার্স বা স্কুল টিচারদের একটি ব্যাপার আমার খুব ভাল লাগে। ওরা শিশুদের সাথে শিশু হয়ে মিশে। স্কুলে যখন ওকে নামিয়ে দিতে যাই, এমনভাবে ওকে অভ্যর্থনা করে যেন ও বিরাট কোন সুপারস্টার, স্কুলে ওর পদধূলি দেয়ার ঘটনায় টিচারদের আনন্দের শেষ নেই। শুধু আমার বাচ্চাই না, সব বাচ্চাকেই দেখি একই এনার্জির সাথে টিচাররা (যুবতী যারা শুধু তাঁরা। বয়স্ক টিচাররা অনেকটাই রোবটিক) গ্রহণ করছে। সকালবেলা খুব কম শিশুরই মন মেজাজ ঠিক থাকার কথা স্কুলে যাবার ব্যাপারে। তাঁরা ওদের এই ডিপ্রেশন মুহূর্তেই দূর করে দেন নাচতে নাচতে। যেন স্কুল অতি আনন্দের জায়গা। এখানে আমরা ফূর্তি করবো, আনন্দ করবো। আমার মা এবং শ্বাশুড়ি, যারা নিজেরাও দেশে স্কুলের হেডমিস্ট্রেস ছিলেন, তাঁরা টিচারদের এমন আচরণে অবাক হয়ে যান। আমার বৌ বলে তাঁদের স্কুল কলেজে যেতে ভয় করতো কেবলমাত্র টিচারদের শাস্তির ভয়েই। আমাদের দেশে যে টিচার যত কড়া, ছাত্র ছাত্রীরা যাদের নামে থরথর করে কাঁপে, সেই টিচার ততই গর্বিত হন। বাবা মায়েদেরও ধারণা সেই টিচার বুঝিবা ততই ভাল। আমাদের দেশে স্কুল কলেজ মাদ্রাসা সব জায়গাতেই শিশু মানুষ করার একটাই ফর্মুলা, মাইর! এর উপর যেন কোন ওষুধ নাই।
এদেশে চাইল্ড এডুকেশনের উপর আলাদা ডিগ্রি আছে। মাস্টার্স পর্যায়ের পড়াশোনা আছে তাতে। আইটি, ফাইন্যান্স, একাউন্টিং পড়তে যে খরচ, একই খরচ এখানেও। গ্র্যাজুয়েট হতে হতে স্টুডেন্ট লোন হিসেবে অনেক টাকা দেনা হয়ে যায়। যাদের প্যাশন আরও বেশি, তাঁরা চাইল্ড সাইকোলজির উপর পিএইচডি করে ফেলেন। তাঁদের জীবনের লক্ষ্যই থাকে কোমলমতি শিশুদের শিক্ষকতা করা। তাঁদের ধৈর্য্য থাকে অপরিসীম। শিশুদের প্রতি ভালবাসা থাকে তুলনাহীন। আমাদের দেশে কিন্তু "চাইল্ড এডুকেশন" বলে কোন সাবজেক্টই নেই। বড়দেরই সাইকোলজির কোন দাম নেই, চাইল্ড সাইকোলজি নিয়ে ভাববার সময় কার আছে? মানুষ গড়ার কারিগর যারা, স্কুলের শিক্ষক শিক্ষিকাদের কতজন শিশুদের ভালবেসে চাকরিতে যোগ দেন? কয়জন শিশুদের সাথে শিশু হয়ে মেশেন?
নার্সদের ক্ষেত্রেও একই ঘটনা।
যে ছেলে আমাদের হাতে ওষুধ খায় না, সে কেন সোনামুখ করে নার্সদের হাতে তিতা ওষুধ খেয়ে ফেলে? রহস্যটা সেদিন টের পেলাম। ট্রিকটা শিখলাম। যদিও বাড়িতে এপ্লাই করার পরেও কাজে দিল না। সেটার কারনও ভিন্ন। ও জানে যে আমরা ওর সাথে "ট্রিক" করছি। তাই ফাঁদে পা দেয়নি।
যাই হোক।
অপারেশনের আগে নার্স এসে বলে গেলেন তাঁরা কি কি করতে চলেছেন। আমার কোন প্রশ্ন আছে কিনা।
একটু পরে এনেস্থেশিয়ান এলেন। তিনি কি কি করতে যাচ্ছেন সেটা বিস্তারিত বললেন। তিনিও জানতে চাইলেন আমার কোন প্রশ্ন আছে কিনা।
ডাক্তারের ক্ষেত্রেও ঘটনা এক। সবাই নিজের নিজের কাজ আগে থেকেই জানিয়ে দেন। প্রশ্ন থাকলে জিজ্ঞেস করে আশ্বস্ত হই।
বাচ্চা অপারেশনে যাবে, সে যেন রিল্যাক্সড হয় এজন্য তাঁর পছন্দের সিনেমা ছেড়ে দিল। অপারেশনের সময়ে আমি যেন বোর্ড না হই, সেজন্য কফি, কোক ইত্যাদি কিছু খাবো কিনা জিজ্ঞেস করে গেলেন। হসপিটাল না, যেন কোন হোটেলে গেছি।
এদেশের নিয়মই এই। কাস্টমার সার্ভিস হচ্ছে নাম্বার ওয়ান প্রায়োরিটি। আলাদা সার্ভে হয়, যেখানে হাসপাতাল কর্মচারীদের আচার আচরণের উপর প্রশ্ন থাকে। আমার কোন অভিযোগ থাকলে আমি যেন নির্দ্বিধায় জানাই। এইসব অভিযোগের ভিত্তিতে তদন্ত হয়। আমাদের দেশের তিন সদস্যের তদন্ত কমিটি না, এদের রিপোর্ট বাস্তবেই সূর্যের মুখ দেখে। অভিযোগের ভিত্তিতে কারোর চাকরি থাকে, কারোর চলে যায়।
বাচ্চাদের মা যখন প্রেগনেন্ট ছিল, তখন ফ্রী কিছু "ক্লাস" অফার করতো হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ। ওসব ক্লাসে ঠিকঠাক মতন নোট নিলে আমি নিজেই ম্যাটারনিটি ডিপার্টমেন্টে খন্ডকালীন নার্সের দায়িত্ব পালন করতে পারবো। এতই তথ্যবহুল সেসব ক্লাস। নলেজ ইজ পাওয়ার।
আমাদের দেশে অবশ্য এমনটা করলে হিতে বিপরীত হবার সম্ভাবনাও আছে। স্বল্প বিদ্যার লোকজন তখন ডাক্তারের উপরই ডাক্তারি ফলাতে শুরু করে দিবে।
আজকে হাতে কিছু সময় পেয়েছি বলে ব্যক্তিগত কিছু অভিজ্ঞতা শেয়ার করলাম। কারোর কাজে এসে গেলে আলহামদুলিল্লাহ। বিশেষ করে যারা ডেন্টিস্ট, যারা হাসপাতালে কর্তৃপক্ষের দায়িত্ব পালন করেন, যারা স্কুলে শিক্ষকতা করেন, তাঁরা নিজেদের পেশায় এসব এপ্লাই করতে পারেন।
আর সাধারণ পাঠকের জন্য ঘটনার সারমর্ম হচ্ছে, শিশুদের চকলেট, চিনি, মিষ্টি ইত্যাদি থেকে দূরে রাখুন। নিয়মিত দাঁত ব্রাশ করান, দিনে দুইবারও যথেষ্ট নয়। বছরে দুইবার ডেন্টিস্টের কাছে গিয়ে পরিবারের প্রতিটা সদস্যের দাঁতের ডিপ ক্লিন করার অভ্যাস গড়ে তুলুন। দাঁতের যত্ন আমরা কেউই নেই না। জাতিগতভাবে এই অভ্যাস আমাদের গড়ে উঠেনি। চিকিৎসা ব্যয়, আয়ের স্বল্পতা, নিত্য প্রয়োজনীয় দ্রব্যমূল্যের লাগামছাড়া উর্দ্ধগতি, সঠিক সচেতনতার অভাব ইত্যাদি হাজারো কারন আছে। অথচ দাঁতের সমস্যাই অনেক সময়ে অনেক বড় রোগ সৃষ্টি করতে পারে। ক্যাভিটি থেকে মাড়ির ক্ষত হয়ে জিহ্বা ও মুখ গহ্বরের ক্যান্সার পর্যন্ত হয় দাঁতের সঠিক যত্ন না নেয়ার কারনে। ক্যাভিটি ধরা পড়লে অতি দ্রুত ব্যবস্থা নিন। সেটাকে বড় হতে দিলে একসময়ে রুট ক্যানাল থেকে শুরু করে আরও জটিল সমস্যায় মোড় নিবে। দাঁত হারানো কোন কাজের কথা না। রোগ পোষাতো অবশ্যই না।
ডিসক্লেইমার: কোন ডেন্টিস্টের থেকে পয়সা নিয়ে এই পোস্ট করিনি। নিজের অভিজ্ঞতা শেয়ার করা।
পরিশিষ্টঃ অপারেশন শেষে আমার ছেলে নতুন দাঁত নিয়ে বেরিয়ে এসেছে। ডাক্তার ভাল কাজ করেছে। দাঁতের ক্ষয় বন্ধ করেছে। খরচ উসুল। আমি ওর জায়গায় থাকলে সারাদিন দাঁত ক্যালাতাম। কারনে অকারনে হাসতাম। এত দিগদারি গেল যে দাঁতের পেছনে, সেটা দেখাবো না?
©somewhere in net ltd.
১| ০২ রা ফেব্রুয়ারি, ২০২১ দুপুর ১:৫১
ইমরান আশফাক বলেছেন: ভাল পোষ্ট, উপকৃত হলাম।