নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

মঞ্জুর চৌধুরী

আমি ঝন্ঝা, আমি ঘূর্ণি, আমি পথ-সমূখে যাহা পাই যাই চূর্ণি’। আমি নৃত্য-পাগল ছন্দ, আমি আপনার তালে নেচে যাই, আমি মুক্ত জীবনানন্দ। আমি হাম্বার, আমি ছায়ানট, আমি হিন্দোল, আমি চল-চঞ্চল, ঠমকি’ ছমকি’ পথে যেতে যেতে চকিতে চমকি’ ফিং দিয়া দিই তিন দোল; আমি চপলা-চপল হিন্দোল। আমি তাই করি ভাই যখন চাহে এ মন যা, করি শত্রুর সাথে গলাগলি, ধরি মৃত্যুর সাথে পান্জা, আমি উন্মাদ, আমি ঝন্ঝা! আমি মহামারী আমি ভীতি এ ধরিত্রীর; আমি শাসন-ত্রাসন, সংহার আমি উষ্ন চির-অধীর! বল বীর - আমি চির উন্নত শির!

মঞ্জুর চৌধুরী › বিস্তারিত পোস্টঃ

ইব্রাহিম রাইসির মৃত্যু

২২ শে মে, ২০২৪ রাত ১:৩৫

ইরানের প্রেসিডেন্টের নিহত হওয়ার ঘটনা এই মুহূর্তে বিশ্বের সবচেয়ে আলোচিত বিষয়ের একটি।
ইজরায়েলের বিরুদ্ধে কিছুদিন আগেই রকেট হামলা চালানো, আমেরিকার সাথে বহু বছর ধরেই গন্ডগোল - এবং এখন হঠাৎ এই দুর্ঘটনা, তাই লোকে খানিকটা সন্দেহের চোখেতো দেখবেই।
বাঙালি অবশ্য এইসব সন্দেহ মন্দেহের ধার ধারে না। নিজ বাসার ড্রয়িংরুমে চা বা কফির কাপ হাতে নিয়ে ল্যাপটপেই সিদ্ধান্ত জানিয়ে দেয় "এতে আমেরিকা ও ইজরায়েলের হাত আছে!"
তা এমন বেকুব না হয়ে বরং খানিকটা বুদ্ধিমানের মতন আচরণ করা যাক।
প্রথমেই দেখা যাক ইরান কি বলছে?
ইরান আপাতত ইঙ্গিত দিচ্ছে "দুর্যোগপূর্ণ আবহাওয়ায় দুর্ঘটনা ঘটেছে।"
ইরানের নিজের প্রেসিডেন্ট নিহত হয়েছে, ইরানের নিজের শত্রু আমেরিকা-ইজরায়েল, ইরানের নিজ দেশেই দুর্ঘটনা ঘটেছে - এরপরেও ইরান তদন্ত করে প্রশ্নের উত্তর দিতে চাইছে, কিন্তু আমাদের ফেসবুক পন্ডিতদের জুড়ি মেলাই ভার।
এর আগেও একবার লেবাননে বিকট বিস্ফোরণ হয়েছিল। বাঙালি ফেসবুকাররা ঘোষণা দিয়ে দিল ইজরায়েলের হাত আছে। আমেরিকারও হাত আছে। এদিকে লেবানিজ সরকার জনতার কাছে মাফ চাইতে ব্যস্ত যে রাসায়নিক কেমিক্যালপূর্ণ জাহাজটি বহুদিন পড়ে থাকায় এই দুর্ঘটনা ঘটেছে। দায় ওদের নিজের সরকারের।
আমার কথা হচ্ছে, সবকিছুতে নন্দঘোষের ঘাড়ে দোষ চাপাতে চাপাতে একটা সময়ে যখন নন্দ ঘোষ আসলেই দোষ করবে, তখন পাবলিক উল্টা আমাদেরই বলবে যে "তোমাদেরইতো অভ্যাস ওর ঘাড়ে বেহুদা দোষ চাপানো। এইবারও নিশ্চই তেমনটাই করছো।"
ইজরায়েল যে বদমাইশ, সেটা প্রমান করতে ঘটনার অভাব নেই। যা ওরা করেনি, সেটা টানাটানির প্রয়োজন নেই।

তো এখন পর্যন্ত যা ঘটনা জানা গেছে তা একটু বিশ্লেষণ করা যাক।

১. প্রয়াত প্রেসিডেন্ট ইব্রাহিম রাইসি যে হেলিকপ্টারে ছিলেন সেটি আমেরিকান কোম্পানি বেলের ২১২ মডেলের হেলিকপ্টার, তাও কোন বছরের জানেন? ১৯৭৯ সালের। আমার জন্মেরও বহু আগের। সাধারণত এত পুরানো মডেলের হেলিকপ্টারে যন্ত্রপাতি আউটডেটেড হয়ে থাকে, তারচেয়ে বড় কথা কয়েক বছর আগেই বেল ঘোষণা দিয়েছে ওরা আর এই মডেল বানাবেই না। কারন এটি নিরাপদ না। এবং আরও বড় পয়েন্ট হচ্ছে, আমেরিকার সাথে বহু যুগ ধরেই (ইরানে ইসলামী আন্দোলনের শুরু থেকেই) ইরানি সরকারের দ্বন্দ্ব থাকায় এইসব পার্টস লেনদেন ঘটছে না। ফলে সারাই, মেরামত ইত্যাদি সম্ভব হচ্ছেনা। চোর মার্কেট থেকে জিনিস কিনে চালাতে হচ্ছে।
এখন সবচেয়ে বড় প্রশ্ন এইটা উঠতে পারে যে কেন দেশের প্রেসিডেন্ট ৪৫ বছর পুরানো, আউটডেটেড একটি হেলিকপ্টারে চেপে উড়লেন? বেল ২১২ এর এর আগেও এক্সিডেন্টের বহু রেকর্ড আছে। কেন তিনি মিত্রদেশ রাশিয়ার আপডেটেড হেলিকপ্টার ব্যবহার করলেন না? ইরানেরতো পয়সার অভাব নেই। রাশান হেলিকপ্টার কেনার ব্যাপারে আমেরিকান নিষেধাজ্ঞা ম্যাটার করেনা।
ইরানের সাবেক পররাষ্ট্রমন্ত্রী অবশ্য আমেরিকাকে এই মৃত্যুর জন্য দায়ী করেছে। তাঁর অভিযোগ, আমেরিকা নিষেধাজ্ঞা না দিলে ওরা পার্টস কিনতে পারতো, তাহলে এই দুর্ঘটনা ঘটতো না। আবারও ঘুরায়ে ফিরায়ে এক প্রশ্ন, তাহলে রাশিয়ান হেলিকপ্টার কেন ব্যবহার করলো না?

২. কেউ কেউ বলছেন "দুর্যোগপূর্ণ আবহাওয়া বলা হয়েছে, অথচ ভিডিওতে দেখলাম আকাশ পরিষ্কার!"
খুবই ফাঁকা যুক্তি। দুর্যোগ মানেই যে কেবল ঝড় তুফান বৃষ্টি বাদলা এমনতো না। প্রচন্ড বায়ু বেগকেও আকাশে দুর্যোগ বলে। এবং কে কবে কোন জন্মে বাতাসকে চোখের দেখা দেখেছে? যতদূর জানি, স্কুল জীবনেও জলবায়ু চ্যাপ্টারে আমরা পড়েছিলাম যে পাহাড়ি অঞ্চলে বাতাস ধাক্কা খেয়ে গতি ও দিক অপ্রত্যাশিতভাবে পাল্টায়, যা অতি সহজে প্লেন/হেলিকপ্টারের নিয়ন্ত্রণ তছনছ করে দেয়। যার ফলে আমরা দেখি নেপালে প্রায়ই বিমান দুর্ঘটনা ঘটে।
জীবনে বহুবার এয়ার টার্বুলেন্সের মুখোমুখি হয়েছি। প্রতিবার বাইরে দেখার চেষ্টা করেছি ঘটনা কি। আকাশে সাদা মেঘ ছাড়া কিছুই দেখিনাই। এদিকে অত বিশাল প্লেনকে নিয়ে রীতিমতন ছেলে খেলা খেলছে বাতাস। এইসব দুর্যোগ সামলাতে যে শক্তিশালী টেকনোলজির বাহনের প্রয়োজন হয়, ৪৫ বছর পুরানো বাতিল হেলিকপ্টার এর ধারে কাছেও না।
দুর্যোগ যে ঘটেছে সেটা প্রমান ইরানিরাই দিয়েছেন। বাকি দুইটা হেলিকপ্টার একই সাক্ষ্য দিয়েছে (দুইটাই রাশান), দুর্যোগের কারনে উদ্ধারকাজও ব্যাহত হয়েছে। ইরানের রাষ্ট্রীয় টিভি ঘোষণা করেছে দুর্যোগপূর্ণ আবহাওয়ার কারনে তাঁদের প্রেসিডেন্টের বিমান বিদ্ধস্ত হয়েছে। কাজেই "ষড়যন্ত্র" থিওরি থেকে একটু বেরিয়ে আসুন।

৩. হেলিকপ্টারের পাইলটের প্রধান কাজ হচ্ছে যখনই আকাশে যান্ত্রিক সমস্যায় পড়বে, তখন সেটাকে বাতাসে ভাসিয়ে রাখবে। এরপর সাহায্যের জন্য সিগন্যাল পাঠাবে। সমস্যা হচ্ছে, ইরান বলছে ওরা কোন সিগন্যালই পায়নি। আবারও দোষ যাচ্ছে বেল ২১২'র আউটডেটেড টেকনোলজির হেলিকপ্টারের ঘাড়ে। ইরান ধারণা করছে, পাইলট হয়তো সিগন্যাল পাঠিয়েছিল - কিন্তু নষ্ট হেলিকপ্টারের কারনে সেটা সম্ভব হয়নি।

৪. একদল লোক উল্লাস করছেন, ইসলামের দুশমন মরেছে বলে! সবাই সুন্নি। শুধু শিয়া বলেই নয়, ওদের যুক্তি সিরিয়ায় যে হারে মানুষ মরেছে ও গৃহহীন হয়েছে, তাতে ওর প্রত্যক্ষ হাত ছিল। সিরিয়ান রিফিউজিদের করুণাবস্থা আমার নিজের চোখে দেখা। বেশ কিছু সিরিয়ান রিফিউজি আমাদের ডালাস শহরেই বাস করেন। মায়া লাগে ওদের এতিম অসহায় নিঃস্ব শিশুদের জন্য, বিধবাদের জন্য, গোটা পরিবার হারানো পুরুষদের জন্য।
আবার একই সাথে আমেরিকার এক কট্টরপন্থী সিনেটর এক্স একাউন্টে কোন রাখঢাক না করেই উল্লাস করে বলেছে যে একজন সন্ত্রাসীর মৃত্যু ঘটেছে। ওকে কেউ মিস করবে না।
ইজরায়েলও খুশি, কারন ওদের শত্রু হিট উইকেটে আউট হয়ে গেছে।
আবার অন্যদিকে অনেকে শুধু এই কারণেই আফসোস করছেন যে ইজরায়েলকে যথোচিত জবাব দেয়ার মতন একজন নেতার মৃত্যু ঘটেছে।
ইরানিদের মনোভাব জানার কোন উপায় নেই। উল্লাস বা নেগেটিভ কোন মন্তব্য করলেই ওদেরকে এরেস্ট করা হবে।

৫. আপনি পছন্দ করেন বা না করেন, ইরান বিশ্ব রাজনীতির দাবা খেলায় অতি শক্তিশালী ও প্রভাবশালী একটি ঘুঁটি। ওদের নেতার এমন মৃত্যুতে একটা এক জটিল সিচ্যুয়েশনে পড়ে গেছে। শুধু রাজনৈতিকই না, অর্থনৈতিক প্রভাবও পড়তে পারে আগামী কয়েকটা দিনের পদক্ষেপে। সময়টা খুবই সেনসিটিভ।

মন্তব্য ৫ টি রেটিং +১/-০

মন্তব্য (৫) মন্তব্য লিখুন

১| ২২ শে মে, ২০২৪ সকাল ৭:৩১

জুন বলেছেন: আমি পেপারে একটু আগে দেখলাম রাইসির মৃত্যুতে নাকি খামেনীরই হাত আছে। তার উদ্দেশ্য নিজের ছেলেকে ক্ষমতায় বসানো। কারন ছেলে দ্বিতীয় অবস্থানে। রাইসি ফাস্ট। আল্লাহ মালুম কার হাত আছে মোসাদ না সিআই এ? আবার শুনলাম তার জানাজায় হাজার হাজার ইরানীর ঢল। ওইদিকে মাহশা আমিনীর মৃত্যুর জন্য দায়ী রাইসিকে অপছন্দ করে প্রগতিশীল ইরানীরা। কি যে একটা অবস্থা সারা দুনিয়ার।

২২ শে মে, ২০২৪ সকাল ১০:৩৭

মঞ্জুর চৌধুরী বলেছেন: ঠিক, অনেক কিছুই হতে পারে।

২| ২২ শে মে, ২০২৪ সকাল ৭:৫০

কামাল১৮ বলেছেন: অনুসন্ধানে অনেক কিছু বেরিয়ে আসবে।যদি নিরপেক্ষ অনুসন্ধান করা হয়।

৩| ২২ শে মে, ২০২৪ বিকাল ৪:৫৩

শাহ আজিজ বলেছেন: এসব ঘটনা অজানা থেকে যাবে । কেউ যদি বেচে থাকত তবে সে বড় সাক্ষী হত । প্রচণ্ড মেঘের মধ্যে হারিয়ে গেছে হেলিকপ্টারটি ।সন্ত্রাসীদের বিলিয়ন ডলারের অস্ত্রের যোগান দেয় দেশটি কিন্তু নিজের জন্য ভাল কপটার কিনতে অক্ষম ।

২২ শে মে, ২০২৪ রাত ১০:০০

মঞ্জুর চৌধুরী বলেছেন: এই যুগে কোন শক্তিশালি দেশ সন্ত্রাসী নয়?

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.