নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
আমি ঝন্ঝা, আমি ঘূর্ণি, আমি পথ-সমূখে যাহা পাই যাই চূর্ণি’। আমি নৃত্য-পাগল ছন্দ, আমি আপনার তালে নেচে যাই, আমি মুক্ত জীবনানন্দ। আমি হাম্বার, আমি ছায়ানট, আমি হিন্দোল, আমি চল-চঞ্চল, ঠমকি’ ছমকি’ পথে যেতে যেতে চকিতে চমকি’ ফিং দিয়া দিই তিন দোল; আমি চপলা-চপল হিন্দোল। আমি তাই করি ভাই যখন চাহে এ মন যা, করি শত্রুর সাথে গলাগলি, ধরি মৃত্যুর সাথে পান্জা, আমি উন্মাদ, আমি ঝন্ঝা! আমি মহামারী আমি ভীতি এ ধরিত্রীর; আমি শাসন-ত্রাসন, সংহার আমি উষ্ন চির-অধীর! বল বীর - আমি চির উন্নত শির!
রাজা রাম মোহন রায়কে নিয়ে গতকাল ফেসবুকে একটি পোস্ট শেয়ার করেছিলাম। তাঁর জন্মদিন ছিল, তাঁকে শ্রদ্ধাঞ্জলি দিতেই। তিনি ছিলেন ভারতের প্রথম আধুনিক মহাপুরুষ, এবং তাঁর কারণেই সতীদাহের মতন একটি চরম বর্বর প্রথা ভারতে লুপ্ত হয়, এটিতো ইতিহাসই আমাদের শেখায়। তারপরেও যারা ইতিহাসে দূর্বল, তাঁদের জ্ঞাতার্থে কিছু তথ্য দেই। তারপরে মূল প্রসঙ্গে যাব।
তার আগে ফেলা বলা যাক আমরা সাধারণ শব্দ "সতীদাহ" বললেও এর আওতায় চলে আসে সহমরণ, অনুমরন, সহসমাধি ইত্যাদি।
তা সতী কি আমরা সবাই জানি। সহমরণও একই কনসেপ্ট। এখানে স্ত্রী নিজের ইচ্ছায় স্বামীর সাথে চিতায় উঠে সতী হয়। এক ধর্মান্ধ আমাকে যুক্তি দিয়েছে "রোমিওর মৃত্যুতে জুলিয়েটের আত্মহত্যাকে আপনারা গ্লোরিফাই করেন, তাহলে সহমরণ হয়ে সতী হওয়াকে কেন বর্বরতা বলেন? হিপোক্রেট!"
এই যুক্তি শোনার পর আমার বিশ্বাস জন্মে গেছে যে ওরা নিয়মিত টয়লেটে যায় না, সব পায়খানা ওদের মাথায় উঠে এসেছে।
তা অনুমরন কনসেপ্টটা একটু বলি। ধরেন স্বামী মারা যাওয়ার সময়ে স্ত্রী গর্ভবতী ছিলেন। অথবা স্ত্রী বিদেশে ছিলেন। অথবা অন্য কোন কারনে স্বামীর চিতা জ্বালানোর সময়ে উপস্থিত ছিলেন না। এক্ষেত্রে স্ত্রী যখন তৈরী হবেন তখন স্বামীর কোন স্মৃতিচিহ্ন, থালাবাসন, জামা এমনকি হাতে লেখা চিঠি নিয়ে হলেও জ্বলন্ত চিতায় জীবিত উঠে যেতে হবে। ভোলা চামারের বউ, উদাসীয়া। ভোলা মারা যাবার সাত বছর পরে সে ১৮২২ সালের ৫ মে ভোলার ব্যবহৃত থালা নিয়ে সতী হয়। কোঙ্কন অঞ্চলের মেয়েরা স্বামীর অনুরূপ এক চালের মূর্তি গড়ে অনুমৃতা হত।
সহসমাধি কনসেপ্টটাও নাম থেকেই বুঝতে পারছেন, এর মানে হচ্ছে স্বামীর মৃত্যুর সাথে সাথে জীবিত কবরে চলে যাওয়া। মাটির গর্তে ঢুকে পাথর চাপা দিয়ে দেয়া। বিজয়নগরের লিঙ্গায়েৎ সম্প্রদায়ের মেয়েরা স্বামীর সঙ্গে সহসমাধিস্থ হত।
রাম মোহনের জন্মেরও এক হাজার বছর আগে থেকে ভারতে সতীদাহের ঘটনা ঘটতো। যদিও সব পরিবার এই চর্চা করতো না। কিন্তু ব্রিটিশরা আসার পরে এর হার অতিরিক্ত পরিমান বেড়ে যায়। গোটা ভারতীয় সমাজেই এই বর্বরতা ছড়িয়ে পড়ে। পাঞ্জাবে ছেলের সাথে মায়ের সহমরণের ঘটনার উল্লেখ পাওয়া যায়। উনাকে বলা হতো মা-সতী। ভাইয়ের সাথে বোনের সহমরণের ঘটনাও ঘটেছে সেই সময়ে। হ্যা, গোটা ভারতে এই সংখ্যা যতটা না ছিল, বাংলায়, যেখানে শিক্ষিতের সংখ্যা বেশি ছিল, দুর্ভাগ্যজনকভাবে সেখানেই এর প্রাধান্য বেশি ছিল। স্বপন বসু তাঁর “বাংলায় নবচেতনার ইতিহাস” বইতে বলেছেন: মেয়েরা সতী হলে কোনও কোনও ধনী পরিবার থেকে তখনকার সময় দুইশত টাকা অবধি সাম্মানিক জুটত। আর এই অর্থের লোভে ব্রাহ্মণরা মেয়েদের সতী হতে উৎসাহ দিত।"
সাধারণজ্ঞান আমাদের এই বলে যে বিধবা নারীকে লালন পালন করা খরচের ব্যাপার। সতী হলে ঝামেলা চুকে যায়। তাই একটা বিধবা মেয়ের আজীবন ভরণপোষণের হাত থেকে রেহাই পাওয়ার জন্য অথবা তার সম্পত্তি হস্তগত করার জন্য পরিবারের মধ্য থেকেই তাকে চিতায় উঠতে বাধ্য করা হত।
"১৮১৮ সালের শেষদিক। চন্দননগরের এক তরুণী ভাবী স্বামীর চিতায় আত্মাহুতি দেয়। বিয়ের আগেরদিন ছেলেটি কলেরায় মারা যায়। মেয়েটি জোর করে সতী হয়। এদিকে সেই ছেলের রক্ষিতারাও সতী হতে ইচ্ছুক। এখানে রীতিমতো প্রতিযোগিতা চললো যে কে প্রথমে সতী হবে? তার সাধ্বী স্ত্রী না রক্ষিতা। যদিও, সম্ভবত ১৮১৭ সালে ইংরেজ সরকার আইন করে রক্ষিতাদের সহমৃতা হওয়ার ব্যাপারে বিধিনিষেধ আরোপ করেছিল।
বাঙলায় সতীদাহর রমরমা চলছে। মেয়েদের পড়াশোনার বালাই নেই। চার বছরের শিশু থেকে একশ বছরের বৃদ্ধা অবধি ইচ্ছায় অনিচ্ছায় দেদার সতী হচ্ছে।"
এক্ষেত্রে লোকের চোখে দেবী হয়ে ওঠার লোভ যেমন আছে, তেমনই স্বামী মারা গেলে মেয়েটি ব্যভিচারিণী হবে, উচ্ছৃঙ্খল হবে সেই সন্দেহে সমাজ খুশিমনে তাদের মৃত্যুমুখে ঠেলে দিচ্ছিল।
সমস্যা হচ্ছে, ঘটনাটা কেবলই সনাতন ধর্মেই সীমাবদ্ধ ছিল না। মুসলিমরাও সতিদের সম্মানের চোখে দেখতো ও অনুষ্ঠানে অংশ নিত। কোনও কোনও মুসলমান মেয়ে স্বামীর সঙ্গে সহসমাধিস্থ হত। এম. মার্টিন সম্পাদিত The History Antiquities, Topography & Statistics of Eastern India বইটিতে মুসলমান মেয়েদেরও সতী হওয়ার ঘটনার তথ্য পাওয়া যায়। আপনার মাথায় আসতে পারে, এইটা কিভাবে সম্ভব? ইসলামেতো এমনটা নেই। মাথায় রাখতে হবে, এটিই ধর্মের উপর সমাজ সংস্কৃতির প্রভাব। এখনও যদি আমরা দেখি আমাদের বাংলাদেশী মুসলিমদেরই বহু রীতিনীতি অথেনটিক ইসলাম নয়, বরং কালচারালি ইনফ্লুয়েন্সড। এ ছাড়া এটাও মাথায় রাখতে হবে, তখন বহু মুসলিম অন্য ধর্ম থেকে কনভার্টেড হয়েছিলেন। সেই ধর্মের রীতিনীতি সাথে করে নিয়ে আসবেন সেটাইতো স্বাভাবিক। আমাদের এ যুগেওতো বোনেদের সম্পত্তি থেকে বঞ্চিত করা, বিয়েতে যৌতুক নেয়া, শ্বশুরবাড়ির খয়রাতি ইফতারি বা কুরবানীর পশু ইত্যাদি রীতি চর্চা হয়ে থাকে। সতীদাহ যদি রদ করা না হতো, তাহলে আমার মাকেও আমার বাবার সাথে কবর দেয়া হতো না, এর গ্যারান্টি কে দিবে?
ঠিক এই কারনেই আমি রাজা রাম মোহন রায়ের মতন যুগপুরুষদের প্রতি কৃতজ্ঞ। হাজার বছরের অপসংস্কৃতি, সমাজের শক্তিশালী সংখ্যাগুরু ও ধর্মীয় গোঁড়া সম্প্রদায়ের বিরুদ্ধে গিয়ে অবলা অসহায় মেয়েগুলোর পক্ষে তিনি একা দাঁড়িয়েছিলেন। লোকে গালমন্দ করেছে, নাস্তিক বলেছে, তবু তিনি অনড় অবিচল ছিলেন বলেই আজকে ভারতবর্ষে কোটি কোটি মেয়ে তাঁর নিশ্বাস নিতে পারছে।
কিন্তু সমস্যা হচ্ছে আমার সেই পোস্টে কিছু ধর্মীয় উগ্রবাদী আক্রমন করে দাবি করছে সতীদাহ আসলে ইংরেজদের বাড়িয়ে চড়িয়ে বলা ইতিহাস, রাজা রাম মোহনকেও অনেক বেশি গ্লোরিফাই করে ওরা। বাস্তবে মুসলিমরা হিন্দু বিধবাদের তুলে নিয়ে গিয়ে ধর্ষণ করতো, তাই সেই অপমানের চাইতে তাঁরা স্বেচ্ছামৃত্যু গ্রহণ করতেন।
আবারও বলি, এমন যুক্তি শোনার পরে আমার কনফিডেন্স চলে এসেছে যে ওদের পাকস্থলীর গু মাথায় উঠে গেছে।
প্রথমত, রাম মোহন রায়ের নিজের বৌদিকেই "সমাজ" সতী করেছিল। তিনি তরুণ ছিলেন, এবং কিছুই করতে পারেন নাই।
উনার যদি মুসলিমদের বিরুদ্ধে চুলকানি থাকতোই, তাহলে তিনি সরাসরি আইন করতেন যে মুসলিমরা হিন্দু মেয়েদের তুলে নিয়ে যাচ্ছে, কাজেই এই ধর্ষকদের শাস্তি দাও! ব্রিটিশরা ঠগিদের দমন করে ফেলেছে, সেখানে ক্ষমতাচ্যুত মুসলিমদের দমন করা ওদের কাছে ওয়ানটু হওয়ার কথা। নাকি?
দ্বিতীয়ত, রাম মোহন রায়ের জন্ম, বেড়ে ওঠা, মৃত্যু সবই ব্রিটিশ আমলে। মুসলিমরা বহু আগেই ক্ষমতাচ্যুত হয়েছে। কাজেই "মুসলিমরা হিন্দু মেয়েদের তুলে নিয়ে ধর্ষণ করে ফেলতো, তাই সতী হয়েছে" - কনসেপ্টটাইতো খাপ খায় না। তাছাড়া বহু আগে, সম্রাট হুমায়ুন একবার এমনই এক সতী মেয়েকে চিতার আগুন থেকে উদ্ধার করে নিজের পালক মেয়ে ঘোষণা করে তাঁর প্রাণ রক্ষা করেন। এখানেও কি চাড্ডিরা বলবে যে মুসলিমদের হাত থেকে বাঁচতে হিন্দুরা সহমরণ করাচ্ছিল এবং বুলশিট?
হ্যা, অবশ্যই মুসলিম শাসকরা অনেক নারী তুলে নিয়ে গিয়ে ধর্ষণ করেছে, ওদের হাত থেকে বাঁচতে জোহরের পথ অনেক মেয়েই বেছে নিয়েছে সত্য - কিন্তু মহাভারতে পান্ডবদের আরেক মা মাদ্রী তাহলে কেন সহমরণ বেছে নিয়ে সতী হলেন? সেখানেও কি মুসলিমরা আক্রমন করেছিল?
ওদের গাত্রদাহের কারন আমি বলেছি "আওরঙ্গজেব সতীদাহ ব্যান করেছিলেন" যেটা একটা ঐতিহাসিক ফ্যাক্ট, ১৬৬৩ সালে; এতেই গুমস্তিষ্কের ধর্মান্ধরা শুরু করলো "আপনি রাম মোহন রায় এবং আওরঙ্গজেবকে একই কাতারে নিয়ে এসেছেন!" বা "আপনি উগ্রপন্থী জঙ্গি, হিন্দু বিরোধী!"
মানে, সিরিয়াসলিই ওরা কি টয়লেটে যাওয়া বন্ধ করেছে?
প্রথমত, রাজা রাম মোহন রায় একজন ব্রাক্ষ্ম (একেশ্বরবাদী এবং মূর্তিপূজা বিরোধী), তিনি কোন মুসলিম নেতা নন। ব্রিটিশরাও কোন মুসলিম জাতি নয়, উল্টো ওরা মুসলিমদের থেকেই ক্ষমতা দখল করেছিল। আমি যার লেখা শেয়ার করেছি, উনিও সনাতন ধর্মের লোক। এখানে হিন্দুবিরোধী, জঙ্গি কিভাবে হয়ে গেলাম? সতীদাহের বিরুদ্ধে বলেছি বলে?
সহমরণকেও যারা গ্লোরিফাই করার চেষ্টা করছে, ওরা কি অস্বীকার করবে যে চিতার আগুন দেখে পিছিয়ে যাওয়া তরুণীদের "সমাজ" (নিজের আপন পিতা/কাকা/ভাই) চিতার দিকে ঠেলে দেয়নি? নেশাদ্রব্য খাইয়ে চিতায় তুলে দেয়নি? নাকি "উহা সহীহ ইতিহাস নহে" যুক্তিই আওড়াবে?
আর আমি যদি উগ্রপন্থী মুসলিমই হয়ে থাকি, তাহলে আমি কেন মাদ্রাসার শিশু বলাৎকারের ঘটনা নিয়ে সোচ্চার? কেন আমি রিজোর্ট হুজুর থেকে শুরু করে ইসলামের নামে সমাজে চলা যাবতীয় ফাত্রামির বিরুদ্ধে লেখালেখি করি? কালকে যদি কাদিয়ানীরা বা অমুসলিম কেউ ক্ষমতায় গিয়ে আইন পাশ করে যে আজকে থেকে মাদ্রাসায় শিশু বলাৎকারের শাস্তি হবে মৃত্যুদন্ড, যে ওটাকে জাস্টিফাই করার চেষ্টা করবে ওরও হবে একই শাস্তি এবং আজ থেকে মাজার পূজা, ভন্ড পীরাকি ইত্যাদি সব আইনত দন্ডনীয় - আমিতো সেটাকে স্বাগত জানাবো। জাস্টিফাই করার চেষ্টা করবো না। ঠিক এই কারণেই আমি ধর্মান্ধদের দেখতে পারিনা। যে ধর্মেরই হোক না কেন। কারন ওদের মাথা একদিকেই চলে। মানুষ খুনের ঘটনাকেও গ্লোরিফাই করে। কারন সুযোগ পেলে ওরাও একই কাজ করবে। ন্যায়কে ন্যায়, অন্যায়কে অন্যায় বলতে পারার কনসেপ্টই ওদের মাঝে নেই।
আমার কথা শেষ হলো। সতী নিয়ে আরও কিছু তথ্য যারা জানতে চান, নিচের লেখার অংশবিশেষ পড়তে পারেন।
লেখা ও তথ্যগুলো গালিব চৌধুরী ভাইয়ের পোস্ট থেকে সরাসরি মেরে দিয়েছি, যেখানে তিনি সোর্স হিসেবে ব্যবহার করেছেন:
সতীদাহ প্রথা ও রাজা রামমোহন রায় - মণিমেখলা মাইতি
নতুন ভারতের অগ্রদূত - মীনাক্ষীসিংহ
সহমরণের বিরুদ্ধে সংগ্রামের পথিকৃৎ রামমোহন - শঙ্কর রায়)
"সতী বা সমাজ তারা কেউ জানে না শাস্ত্রের বিধান, জানে না তারা পাপের ভাগীদার হচ্ছে না পুণ্যের ভাগীদার। রক্ষণশীল হিন্দুদের কাছে সতীদাহ হল শাস্ত্রীয় বিধি। মেয়েদের সপক্ষে কেউ নেই।
ইংরেজ প্রশাসক উইলিয়াম কেরী একটু সচেষ্ট হয়েছিলেন কিন্তু সাফল্য পাননি। পরে ১৮১৩ সালে সরকার জবরদস্তি করে মাদক খাইয়ে সতী হওয়া রুখতে পুলিশদেরকে নির্দেশ দেন।
এরপর ১৮১৫ সালে সতী হলে যেন পুলিশকে জানানো হয় এই মর্মে নির্দেশিকা দেওয়া হয়। কিন্তু সতীদাহ নিষিদ্ধ হওয়ার পরিবর্তে বাংলায় এই প্রথা হু হু করে বাড়তে থাকে।
১৮১৭ সাল নাগাদ এগিয়ে এলেন যুগপুরুষ রাজা #রামমোহন_রায়। সর্বপ্রথম কলম ধরলেন সতীদাহর বিপক্ষে। লিখলেন, ‘সহমরণ বিষয় প্রবর্ত্তক ও নিবর্ত্তকের সম্বাদ’। লেখাটি প্রকাশের সঙ্গে সঙ্গে সমাজে আলোড়ন পড়ে যায়। গোঁড়া সম্প্রদায় প্রতিবাদে মুখর।
#কালাচাঁদ_বসু-এর নির্দেশে কলকাতার ঘোষালবাগানের চতুষ্পাঠীর পরিচালক #কাশীনাথ_তর্কবাগীশ, রামমোহনের লেখার প্রত্যুত্তরে লিখলেন “বিধায়ক নিষেধকের সম্বাদ”।
ইংরেজ প্রশাসক হেস্টিংস, আমর্হাস্ট মনে মনে চাইলেও দেশীয় প্রথায় হস্তক্ষেপ হলে পাছে গণ্ডগোল হয় সেই ভয়ে তাঁরা আইন করে সতীদাহ রদের পথ মাড়াননি।
১৮২৮ সালের জুলাই মাসে শাসনকর্তা হয়ে এলেন #উইলিয়াম_বেন্টিঙ্ক। #বেন্টিঙ্ক কিন্তু নিরন্তর চেষ্টা চালাতে লাগলেন।
১৮৩০ সালের ১৭ জানুয়ারি সতীদাহ রদ নিবারণে পথে নামল রাজা #রাধাকান্ত_দেব, #হরিমোহন_ঠাকুর, #গোকুলনাথ_মল্লিক-এর নেতৃত্বে ‘ধর্মসভা’। এই সভা ইংল্যান্ডের প্রিভি কাউন্সিলে এই আইনের বিরুদ্ধে আপিল করতে ছয় মাসে উনিশটি সভা করে, প্রায় এগারোশ জনের সইসহ একটি আবেদনপত্র তৈরি করলেন।
যদিও #রামমোহন ও তাঁর অনুগামীরা সতীদাহ-বিরোধী জনমত গড়ে তোলার আগে এক হাজার বছরেরও বেশি সতীদাহ-প্রথাচালু ছিল, কিন্তু এটাও ঠিক যে অনেক পরিবারে এইপ্রথা মানা হত না।
ব্রিটিশ রাজত্ব শুরু হওয়ার পর থেকে এই মুত্যুর হার অস্বাভাবিক হারে বেড়ে যায়। একটি তত্থ্যানুসারে ১৮১৫ থেকে ১৮১৮ চার বছরে প্রায় আড়াই হাজার মেয়েকে স্বামীর সাথে পোড়ানো হয়েছিল। এমনই ছিল তৎকালীন #ব্রাহ্মণ্যবাদ-এর তান্ডব।
নিজের পরিবারেরই এই ঘটনা রামমোহনের মনে গভীর প্রভাব ফেলেছিল, যা পরে তাঁকে সতীদাহ-সহমরণ বিরোধী করে তোলে। তাঁর পিতার মৃত্যুর আট বছর পর ১৮১১ সালে রামমোহনের বড় ভাই জগন্মোহন রায়ের জীবনাবসান হয়।
#জগন্মোহন তখন এক তরতাজা যুবক। স্ত্রীও যুবতী। যুবতী স্ত্রী স্বামী ছাড়া থাকবে কিভাবে, এই অজুহাতে স্বামীর সাথে তাঁকেও পুড়িয়ে মারার ব্যবস্থা করা হয়।
রামমোহন তাঁর বৌদিকে বাঁচানোর আপ্রাণ চেষ্টা করেও ব্যর্থ হন। কেউ রামমোহন বা জগন্মোহনের স্ত্রীর পাশে দাঁড়াননি। বৌদির জ্যান্ত দগ্ধ হওয়ার দৃশ্য দেবর রামমোহনের মনে গভীর যাতনার জন্ম দেয়।
ঘটনা #পাঁচ:
১৮১৭-র শেষ দিক। শিব বাজারের কবিরাজ মারা গেলে তার দুই স্ত্রী সতী হওয়ার ইচ্ছে প্রকাশ করে। বড় বউ বছর তেইশের যুবতী। ছোট বউ সবে সতেরো।
পুলিশে খবর গেল। চব্বিশ পরগণার স্হানীয় পুলিশ ছুটে এসে বোঝাতে চেষ্টা করল। কিছু লাভ হল না।
#কালীঘাট-এর #গঙ্গাতীর-এ সহমরণের ব্যবস্থা হল। সতীদাহ হবে শুনে আশেপাশের এলাকায় কী হুড়োহুড়ি! মেয়েরা ছুটে এল সতীর পায়ের ধুলো নেবে। এ ধুলো যে নেয় সে পুণ্যবতী।
রামমোহন রায় তখন #মানিকতলা য়। খবর পেয়ে যাওয়ার ব্যবস্থা করলেন। মানিকতলা থেকে কালীঘাট যাওয়া সোজা নয়। দীর্ঘ পথ। তাছাড়া #চৌরঙ্গী র জঙ্গল আছে। সরু পথ। সে পথে দিনের বেলা বেহারারা যেতে ভয় পায়। রামমোহন ছুটছেন। রামমোহনকে দেখে স্হানীয় জনতার মধ্যে আলোড়ন পড়ে গেল।
তিনি সটান শ্মশানে গিয়ে মেয়ে দুটিকে বোঝালেন। সফল হলেন না। মেয়ে দুটি অনড়, তারা সতী হবেই। সতী হলে কত পুণ্য!
অঙ্গিরা মুণি বিধান দিয়ে গেছেন, যে স্ত্রী ঐ পতির জ্বলন্ত চিতাতে আরোহণ করে সে বশিষ্টর স্ত্রী অরুন্ধতীর সমান হয়ে স্বর্গারোহণ করে। আর যে স্ত্রী স্বামীর সঙ্গে স্বর্গে যায় সে মানুষের দেহে যত লোম আছে অর্থাৎ সাড়ে তিন কোটি বছর স্বর্গবাস করে।
সাপ সংগ্রহকারী যেমন নিজের শক্তির বলে গর্ত থেকে সাপ উদ্ধার করে তেমনই স্বামী মারা গেলে ওইরকম ক্ষমতার দ্বারা ঐ স্ত্রী স্বামীকে স্বর্গে নিয়ে সুখভোগ করে। আর যে স্ত্রী সহমৃতা হয় সে তিন কুলকে পবিত্র করে। পুণ্যলাভের এমন সুবর্ণসুযোগ ছাড়া চলে!
অগত্যা রামমোহন নির্দেশ দিলেন মেয়েদের চিতায় বেঁধে তার উপর ডালপালা চাপিয়ে আগুন ধরালে চলবে না। চিতায় আগে অগ্নিসংযোগ হবে। তারপর মেয়ে দুটি স্বেচ্ছায় উঠবে।
কোনও জবরদস্তি চলবে না। প্রস্তাবটি উপস্থিত পণ্ডিতবর্গের ঠিক পছন্দ হল না। অনিচ্ছা সত্ত্বেও তারা রাজি হল। রামমোহনের মনে আশা যদি মেয়ে দুটো শেষ মুহূর্তে ভয় পেয়ে বেঁকে বসে। কিন্তু রামমোহন অবাক হয়ে দেখলেন বড় বউটি নির্বিকার চিত্তে উঠে গেল চিতায়। তার দেখাদেখি ছোট বউ। চারিদিকে উল্লাস, ঢাকঢোলের শব্দ।
মাথা নীচু করে মানিকতলা ফিরে এলেন রামমোহন রায়।
১৮২৯ সালের ৪ ডিসেম্বর সতীদাহ বন্ধের আইন পাশ হয়। লর্ড বেটিঙ্কের নির্দেশে আইন করে সতীদাহ বন্ধ হয়। রামমোহন এক যুগান্তকারী ইতিহাসের স্রষ্টা হয়ে জাতির জীবনে চিরস্মরণীয় হয়ে ওঠেন।
কিন্তু সনাতন ধর্মধ্বজীরা এই আইনের বিরোধিতা করে ইংল্যান্ডের প্রিভি কাউন্সিলে আবেদন করেন। ‘#নাস্তিক’ রামমোহনের এত বড় জয় তাঁদের কাছে মনে হল ধর্মের পরাজয়।
কিন্তু তিনি স্বাধীন ও যুক্তিবাদী চিন্তাধারার পক্ষে ছিলেন। রামমোহন রায় সমাজের সমস্ত অপমান, উপহাস উপেক্ষা করে দৃঢ়চেতা হয়ে নিজ লক্ষ্যে অটল থেকেছেন। তাই কেবল সতীদাহ নিবারণের উদ্দেশ্যে যুক্তি সাজিয়েই রামমোহন ক্ষান্ত হননি। বরঙ এই সতীদাহ প্রথা বন্ধে আইনের প্রতিটি ধাপে ধাপে আর স্বজাতির গোঁড়া প্রভাবশালী ধর্মান্ধদের বিরুদ্ধে লড়াই করে গেছেন।
রামমোহন তাঁর দ্বিতীয় সম্বাদের সমাপ্তিতে, এই পুরুষতান্ত্রিক সমাজে স্ত্রীজাতিকে যে প্রতিনিয়ত দুঃসহ যন্ত্রণা ও লাঞ্চনার মুখোমুখি হতে হয় তার বিবরণ ও প্রতিবাদ তুলে ধরেছেন। রামমোহন প্রতিষ্ঠিত "আত্মীয় সভায়" শুধু সতীদাহ প্রথা রদ নয়, বাল্য বিবাহ, জাতপাত দূরীকরণ, যৌতুক প্রথার বিলোপ, প্রভৃতিও আলোচিত হতো।
এইসব ঘটনবলীর সাপেক্ষেই হয়তো ঈশ্বরবিশ্বাসী হয়েও #রবীন্দ্রনাথ পরবর্তীকালে বলেছিলেন, ‘‘ধর্মের মোহ মানুষকে নির্জীব করে রাখে। তার বুদ্ধিকে নিরর্থক জড় অভ্যাসের নাগপাশে অস্থিতে-মজ্জাতে নির্দিষ্ট করে ফেলে।’’
আজ শনিবার অর্থাৎ #২২_মে, রাজা রামমোহন রায়ের #জন্মদিন। কিন্তু দুর্ভাগ্যজনক হলেও সত্য যে, উনবিংশ শতাব্দীর বাঙলাতে রামমোহন যে মুক্ত চিন্তাচেতনার আলো জ্বেলে দিয়ে গিয়েছিলেন, সেই আলো আজ আবার কেমন যেন স্তিমিত, ম্রিয়মান দেখাচ্ছে।"
২৮ শে মে, ২০২৪ রাত ১১:৩১
মঞ্জুর চৌধুরী বলেছেন: জ্বি।
©somewhere in net ltd.
১| ২৪ শে মে, ২০২৪ সন্ধ্যা ৭:১৩
কামাল১৮ বলেছেন: রাজা রামমোহন রায় প্রথম আধুনিক বাঙ্গালী।