নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
আমি ঝন্ঝা, আমি ঘূর্ণি, আমি পথ-সমূখে যাহা পাই যাই চূর্ণি’। আমি নৃত্য-পাগল ছন্দ, আমি আপনার তালে নেচে যাই, আমি মুক্ত জীবনানন্দ। আমি হাম্বার, আমি ছায়ানট, আমি হিন্দোল, আমি চল-চঞ্চল, ঠমকি’ ছমকি’ পথে যেতে যেতে চকিতে চমকি’ ফিং দিয়া দিই তিন দোল; আমি চপলা-চপল হিন্দোল। আমি তাই করি ভাই যখন চাহে এ মন যা, করি শত্রুর সাথে গলাগলি, ধরি মৃত্যুর সাথে পান্জা, আমি উন্মাদ, আমি ঝন্ঝা! আমি মহামারী আমি ভীতি এ ধরিত্রীর; আমি শাসন-ত্রাসন, সংহার আমি উষ্ন চির-অধীর! বল বীর - আমি চির উন্নত শির!
সিলেট আমার পৈতৃক নিবাস। আমার বাপ, দাদা এবং তাঁদের সাত পুরুষ আগের সবাই সিলেটেই জন্মেছেন। আমার জন্ম যদিও চিটাগং তবু শৈশব ও কৈশোরের একটা অতি গুরুত্বপূর্ণ সময় আমার সিলেটে কেটেছে। ৯২-২০০৩ বছরগুলোতে আমি সিলেটে বেড়ে উঠেছি।
আমাদের সিলেটের বৃষ্টি অতি বিখ্যাত, শুরু হলে টানা দুই তিনদিন পর্যন্ত চলার ক্ষমতা রাখে। স্বাভাবিক কারণেই শহরে "জলাবদ্ধতা" একটি অতি প্রাচীন সমস্যা। কিন্তু সেটা কিছু পরিচিত এলাকায়। যেমন উপশহর এলাকা পানির নিচে তলিয়ে যেত। কিংবা আমাদের রায়নগর এলাকারই কিছু রাস্তায় পানি জমতো। বৃষ্টি থামলে সেই পানি দুয়েক ঘন্টার মধ্যে নেমেও যেত।
এছাড়া আমার গ্রামের বাড়ি "ভাটি অঞ্চলে" ছিল। মানে বর্ষায় বিস্তীর্ণ এলাকা সমুদ্রে পাল্টে যেত। আমার দাদির বাড়ি ছিল উজান অঞ্চলে। তাঁদের এলাকায় এত পানি উঠতো না। তাই দেখা যেত বর্ষা আসতেই দাদি আমার আব্বু চাচা ফুপুদের নিয়ে বাপের বাড়ি নাইওর যেতেন। আমার বড় আব্বা (আব্বুর দাদা) বিরক্ত স্বরে বলতেন "উজান এলাকার মেয়েরা পানিকে এত ভয় পায় কেন?"
যাই হোক, সিলেটের ভৌগলিক ব্যাপারটা বুঝালাম। মানে জলাবদ্ধতা আমাদের জন্য স্বাভাবিক ঘটনা ছিল।
ছিল বলছি, কারন সেটা এখন আর নেই। এখন নিয়মিতই "বন্যা" হচ্ছে। আমার মনে পড়েনা আমার দীর্ঘ এগারো বছর সিলেট অবস্থানকালে আমি এমন নিয়মিত বন্যা পরিস্থিতি দেখেছি। শহরে লোকজন কোরবানি দিতে পারছে না, ঈদগাহে জামাতে নামাজ বন্ধ, এলাকার মসজিদে পড়ার নির্দেশ দেয়া হচ্ছে, বাড়ির ভিতরে মাচা বানিয়ে লোকজন পানি থেকে বাঁচার চেষ্টা করছেন - এমন ভয়াবহ অবস্থা তখন ছিল না।
আমি সিলেটে নাই, থাকলে আরও স্পেসিফিক্যালি বলতে পারতাম।
কিন্তু প্রধান কারন হিসেবে অবশ্যই চিহ্নিত করা যায় হাওরের উপর দিয়ে রাস্তা নির্মাণ। ব্রিজ, কালভার্ট নয়, আস্ত রাস্তা তৈরী করে দেয়া হয়েছে, ফলে পানির ফ্লো নষ্ট হয়ে যাচ্ছে, সেই পানিই দুপাশে উপচে পড়ে আস্ত সিলেটকে ডুবিয়ে দিচ্ছে।
আমি আমেরিকায় রিয়েল্টর ব্যবসায় আছি। কোন জমি কেনার সময়ে যদি সেখানে endangered species এর অস্তিত্ব পাওয়া যায়, তবে সেই জমিতে যা খুশি তাই করা যায় না। প্রকৃতির সাথে টাল্টিবাল্টি করার নিয়ম এদেশে নেই। বললে অনেকে বিশ্বাস করবেন না, কিন্তু আমেরিকায় এমন অনেক বড় শহরের উপশহরে নিয়মিতই বনের হরিণ চলে আসে। বব ক্যাট (বন্য বিড়াল) এসে ব্যাকিয়ার্ডে ঝিমোয়। ফ্লোরিডায় এলিগেটর বাড়িতে ঢুকে যায়। টেক্সাসে সাপ অতি নিয়মিত অতিথি। আমার কাজিনের ক্যালিফর্নিয়ার বাসার ব্যাকিয়ার্ডে মাউন্টেন লায়ন বসে থাকে। ওদেরকে মারার হুকুম নেই। বিশেষ কর্মকর্তা থাকেন, ওদেরকে খবর দিলে তাঁরা এসে নিয়ে যান। প্রকৃতির ভারসাম্য রক্ষায় এদের প্রত্যেকের ভূমিকা থাকে। আমাদের কল্যানেই ওদেরকে আমাদের প্রয়োজন।
আমরা রাসেলস ভাইপারের যন্ত্রনায় অতিষ্ঠ হয়ে গেছি। কিন্তু ভেবে দেখেছি কেন হঠাৎ রাসেলস ভাইপার এত বেড়ে গেছে? কেন সিলেটে এত বন্যা হচ্ছে? উত্তর একটাই, প্রকৃতির বিরুদ্ধে যাওয়ার ধৃষ্টতা।
নদী-হাওর ইত্যাদি ভরাট করলে যেমন বন্যা হয়, তেমনি সাপ, বেজি, শিয়াল ইত্যাদি মেরে ফেললেও প্রকৃতিতে ভারসাম্য নষ্ট হয়। বেজি, শিয়াল ইত্যাদিতো সাপ খায়ই, এমনকি এমন বহু সাপ আছে যারা এমনিতে নির্বিষ, কিন্তু বিষধর সাপ খেয়ে ফেলে। এরা আমাদের বন্ধু। কিন্তু আমরা গণহারে এদের হত্যা করতে করতে এখন শত্রু সাপের সংখ্যা বাড়িয়ে ফেলেছি।
উন্নয়ন করতে করতে আমরা নদী/হাওর মেরে ফেলছি, তারপরে বন্যা বন্যা বলে কাঁদছি।
কোটি কোটি টাকা ব্যয়ে যে রাস্তা নির্মিত হয়, এত বড় বড় ইঞ্জিনিয়ার যে প্রজেক্টে কাজ করেন, একটা সাধারণ বিবেক বুদ্ধিমান মানুষও কি সেইসব প্রজেক্টে থাকে না যে অতি সাধারণ বুদ্ধি খাটিয়ে বলতে পারবে যে হাওয়রের উপর দিয়ে এমন রাস্তা নির্মাণ একটি আত্মঘাতী সিদ্ধান্ত? নাকি "একটি প্রজেক্ট থেকে এত কোটি টাকা আসবে" - শুধুমাত্র এই লোভেই কোটি মানুষের জীবন নিয়ে ছিনিমিনি খেলতে ওদের বিবেকে এতটুকু বাধে না? বিসিএস কর্মকর্তাদের ঘুষ দুর্নীতির প্রমান দুইদিন পরপর ফেসবুকে আসছে, ওদেরকে চর্যাপদের পান্ডুলিপি কত সালে আবিষ্কৃত হয়েছে বা মেঘনা নদীর শাখা নদীগুলোর নাম মুখস্ত না করিয়ে "নীতি-নৈতিকতা" বা "এথিক্স" ইত্যাদি কোর্স করানো কি ফলপ্রসূ না? কেউ কেউ হয়তো বলবেন এথিক্স কোর্স করানো হয়। তা কী ঘোড়ার আন্ডার কোর্স করে সেটাতো ওদের কাজেই প্রমাণিত।
২| ২১ শে জুন, ২০২৪ বিকাল ৩:১১
শায়মা বলেছেন: প্রকৃতিকেই শত্রু বানিয়ে ফেলছি আমরা।
৩| ২১ শে জুন, ২০২৪ বিকাল ৩:৫৮
মনিরা সুলতানা বলেছেন: প্রকৃতি আমাদের বাঁচিয়ে রেখেছি , আমরা নিজেদের প্রয়োজনে তার ক্ষতি করছি।
৪| ২২ শে জুন, ২০২৪ সকাল ১১:১৮
নিমো বলেছেন: আমি আমেরিকায় রিয়েল্টর ব্যবসায় আছি। কোন জমি কেনার সময়ে যদি সেখানে endangered species এর অস্তিত্ব পাওয়া যায়, তবে সেই জমিতে যা খুশি তাই করা যায় না। প্রকৃতির সাথে টাল্টিবাল্টি করার নিয়ম এদেশে নেই। বললে অনেকে বিশ্বাস করবেন না, কিন্তু আমেরিকায় এমন অনেক বড় শহরের উপশহরে নিয়মিতই বনের হরিণ চলে আসে। বব ক্যাট (বন্য বিড়াল) এসে ব্যাকিয়ার্ডে ঝিমোয়। ফ্লোরিডায় এলিগেটর বাড়িতে ঢুকে যায়। টেক্সাসে সাপ অতি নিয়মিত অতিথি। আমার কাজিনের ক্যালিফর্নিয়ার বাসার ব্যাকিয়ার্ডে মাউন্টেন লায়ন বসে থাকে। ওদেরকে মারার হুকুম নেই। বিশেষ কর্মকর্তা থাকেন, ওদেরকে খবর দিলে তাঁরা এসে নিয়ে যান।
ঐ দেশের আদিবাসীদের অবস্থা কী ভাইজান ? বনের হরিণ, বব ক্যাট (বন্য বিড়াল), এলিগেটর, সাপ,মাউন্টেন লায়নের তুলনায় নিশ্চয়ই endangered না, কী বলেন !
৫| ২২ শে জুন, ২০২৪ রাত ১১:৩০
মৌরি হক দোলা বলেছেন: উন্নয়নের পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া! দুঃখজনক।
©somewhere in net ltd.
১| ২১ শে জুন, ২০২৪ সকাল ১১:২৫
নতুন বলেছেন: পৃথিবি থেকে মানুষ প্রজাতীকে আজ সরিয়ে নিলে আগামী কয়কশত বছরে আবারো সবুজ, সতেজ হয়ে উঠবে।
মানুষ পৃথিবির বুকে যে ক্ষত করছে তা সারিয়ে উঠতে কস্ট হচ্ছে, এই ভাবে চলতে থাকলে আমরা হয়তো Point of no return পার করে ফেলবো তখন কোন চেস্টাই আর ঐ ক্ষত সারাতে পারবেনা।
দেশের সকল প্রজেক্টের আগে কত ধান্দা হবে সেটা গুনে রাখে মানুষ, প্রকৃতির তো পরে মানুষের ক্ষতি ভাবনাও মাথায় রাখে না।