নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

মঞ্জুর চৌধুরী

আমি ঝন্ঝা, আমি ঘূর্ণি, আমি পথ-সমূখে যাহা পাই যাই চূর্ণি’। আমি নৃত্য-পাগল ছন্দ, আমি আপনার তালে নেচে যাই, আমি মুক্ত জীবনানন্দ। আমি হাম্বার, আমি ছায়ানট, আমি হিন্দোল, আমি চল-চঞ্চল, ঠমকি’ ছমকি’ পথে যেতে যেতে চকিতে চমকি’ ফিং দিয়া দিই তিন দোল; আমি চপলা-চপল হিন্দোল। আমি তাই করি ভাই যখন চাহে এ মন যা, করি শত্রুর সাথে গলাগলি, ধরি মৃত্যুর সাথে পান্জা, আমি উন্মাদ, আমি ঝন্ঝা! আমি মহামারী আমি ভীতি এ ধরিত্রীর; আমি শাসন-ত্রাসন, সংহার আমি উষ্ন চির-অধীর! বল বীর - আমি চির উন্নত শির!

মঞ্জুর চৌধুরী › বিস্তারিত পোস্টঃ

সিলেটের বন্যা

২১ শে জুন, ২০২৪ রাত ১১:৪৪

যেকোন দেশের যেকোন অঞ্চলে বন্যা কখন হয়?
সাধারণ বুদ্ধি বলে, যখন পানি যাওয়ার রাস্তা থাকে না, তখন।
মানে পানি চলাচলের রাস্তা বন্ধ করে দিলেই পানি বাধাপ্রাপ্ত হয়ে আশেপাশের এলাকা প্লাবিত করে নিচের দিকে এগিয়ে যায়। রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের ভাষায়, "ঘুমন্ত নদী পাশ ফিরে," এতেই আশেপাশের বিস্তীর্ন অঞ্চল ভাসিয়ে দিয়ে যায়।
তা আমাদের সিলেটে গত দুই বছরে দুইটি ভয়াবহ বন্যার সৃষ্টি হয়েছে। এমনটা আগে হতো না। লোকে বলছে বৃষ্টির কারনে হয়েছে। কিন্তু বৃষ্টিতো আগেও ছিল, সিলেটের বৃষ্টি হাজার হাজার বছর ধরেই বিখ্যাত। একবার শুরু হলে থামাথামির নাম নেই। পাহাড়ি ঢল তখনও নামতো। তখনতো এমন বন্যা হতো না। তাহলে হঠাৎ এই ঘন ঘন বন্যার কারন কি?
এই প্রশ্নের উত্তরটাও সহজ।
আমাদের লোভ। আমাদের জিহ্বা বড় হয়ে গেছে, লাগামহীন হয়ে যাচ্ছে। এরই ফল এই বন্যা ও দুর্ভোগ।

যখন ছোট ছিলাম, সিলেট শহরেরই বহু স্থানে ছোট বড় পুকুর দেখে এসেছি। প্রশস্ত ও গভীর খাল (আমরা ডাকতাম "ছরা") ছিল। ড্রেনেজ সিস্টেম নিয়ে কমপ্লেন থাকলেও বহু স্থানে প্রশস্ত ড্রেনও ছিল। সিলেট বরাবরই পাহাড়ি এলাকা। উঁচু নিচু টিলায় ভরপুর। বৃষ্টি হলে উপর থেকে তীব্র বেগে পানি নিচের দিকে নেমে যেত। সেজন্য প্রতিটা এলাকায় ছোট বড় ছরা ছিল/আছে। এছাড়া পানির ওভারলোড নেয়ার জন্য অসংখ্য পুকুরতো ছিলই।
এখন শুনছি সব পুকুর গায়েব হয়ে গেছে। সেখানে উঠে দাঁড়িয়েছে আকাশ ছোঁয়া এপার্টমেন্ট কমপ্লেক্স, আধুনিক শপিং সেন্টার। ছরা দখল হচ্ছে যত্রতত্র। ড্রেনে ফেলা হয় পলিথিন ভর্তি বর্জ্য, ড্রেন যায় জ্যাম হয়ে, ফলে পানির প্রবাহ বা স্রোত যায় কমে। সেই পানি রাস্তা বেয়ে বাড়ি ঘরে উঠে আসে। নদীর নাব্যতা কমার ঘটনাওতো আজকের সমস্যা না। খনন করে এর নাব্যতা বৃদ্ধির ব্যাপারে আমাদের কি কি উদ্যোগ নেয়া হয়েছে? সাথে যুক্ত করেন নদীর তীর দখল করে বাড়ি ঘর মার্কেট নির্মাণ।

"হাওর" সিলেট অঞ্চলের প্রধানতম বৈশিষ্ট্য। হাওর হচ্ছে মূলত বিস্তীর্ণ নিম্নভূমি, যেখানে শুষ্ক মৌসুমে চাষাবাদ হয়, তারপরে বর্ষার সময়ে সেটাই পানির নিচে তলিয়ে যায়। দুই সপ্তাহ আগেও যেখানে ছিল দিগন্ত বিস্তৃত মাঠ, সেটাই তীরহারা উত্তাল সাগরে পরিণত হয়। নৌকা ছাড়া যাতায়াত সম্ভব হয়না। "পানিবন্দি" জীবন কাটে স্থানীয় বাসিন্দাদের। এই সময়েই রচিত হয় স্থানীয় বাউলদের কালজয়ী সব গান। হাসান রাজা, শাহ আব্দুল করিম থেকে শুরু করে দেশের বহু কালজয়ী বাউল এই হাওর অঞ্চলেরই সন্তান।
বাড়ির মেয়েরা নকশি কাঁথায় ফুটিয়ে তুলেন তাঁদের জীবনচিত্র। ওদেরকে সস্তায় ব্যবহার করে চড়া মূল্যে যা শহরের ও বিদেশের বাজারে বিক্রি করে আড়ংয়ের মতন প্রতিষ্ঠান।
একে ঠিক "বন্যা" বলা যায় না, কারন এটাই এর বৈশিষ্ট্য। বন্যা হচ্ছে যদি হাওর ছাপিয়ে পানি মানুষের বাড়ি ঘর ভাসিয়ে দিয়ে যায়, সেটা।
আমার নিজের গ্রামের বাড়িতেই আমি আগে বর্ষার সময়ে যেতাম। আমরা ভাটি অঞ্চলের সন্তান। বিয়ানীবাজারের আলীনগর গ্রাম। আমার বাপ দাদার জন্মভূমি, আব্বু চাইতেন সেই মাটির সাথে পরিচয় করিয়ে দিতে।
আমি যেতাম নৌভ্রমনের লোভে। হাইওয়ে থেকে নৌকায় চেপে "চৌধুরী-বাড়িতে" পৌঁছাতাম। আমাদের পুকুরের ঘাটের পাশে নৌকা এসে ভিড়তো। পুকুরের ধার ধরে চিকন রাস্তা ধরে হেঁটে বাগান এবং উঠোন পেরিয়ে বাড়ি। পেছনের মহিলাদের পরিত্যক্ত পুকুরটাও বন্যার পানি মুক্ত। বাড়িকে তখন দ্বীপের মতন মনে হতো। পূর্বপুরুষেরা সেভাবেই বাড়ি বানিয়েছেন। বন্যায় নিম্নাঞ্চল ডুবে যাবে, বাড়ি হবে উঁচু স্থানে।
যেকোন বাড়িতে যেতেই তখন নৌকার সাহায্য লাগতো। একটা মাঝি ঠিক করা থাকতো, সেই আমাদের খেয়াল রাখতো। কিছু দাদি, চাচা, ফুপুরা তখনও গ্রামে থাকতেন। তাঁদের বাড়িও দ্বীপের মতন থাকতো। ওদেরও শুধু বাড়ি না, পুকুর, গোয়াল ঘর ইত্যাদি সবই পানির লেভেলের উপরে থাকতো। এটাই সেই অঞ্চলের অতি সাধারণ দৃশ্য, এটাই ওদের জীবন ব্যবস্থা। ওদের বাড়িতে পানি না ওঠা পর্যন্ত ওদের এতে কিছুই আসে যায় না। তাঁরা এতেই অভ্যস্ত।
তাই দেখতাম এই মৌসুমে গ্রামের শিশুদের উদাম হয়ে সেই পানিতেই দিন রাত সাঁতার কাটতে। মাছ ধরতে। ওদের মনে অন্যরকম আনন্দ। আমাদের মতন শহরের ছেলেরা ওদের সেই আনন্দে হিংসের ভাগ বসাতো।
এখন যেটা হচ্ছে তা হচ্ছে লোকজনের বাড়িঘরের ভিতরে পানি ঢুকে যাচ্ছে। উঠানে খালি হাতে বড় বড় মাছ ধরা গেলেও সাপ ঢুকে যাচ্ছে বাড়িতে। বাড়ি ভেসে যাচ্ছে পানিতে। এটা মোটেই সাধারণ অবস্থা নয়।
তা সিলেটে হাওরের মাঝে দিয়ে একটি রাস্তা নির্মাণ করা হয়েছে। রাস্তা হলে যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নতি হয়। জনজীবন সহজ ও উন্নত হয়। সমস্যা হচ্ছে, এই রাস্তা পানির ন্যাচারাল প্রবাহে বাধা সৃষ্টি করেছে। হাওরের মানুষের যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নতি ঘটাতে হলে প্রচুর স্পিড বোট, লঞ্চ, স্টিমার ইত্যাদি নিয়োগ দেয়া প্রয়োজন। শুকনা মৌসুমে রাস্তা নির্মাণ করলে বর্ষায় এর ভয়াবহ পরিণতি ভোগ করতেই হয়।
বিদেশে এমন রাস্তা তৈরী হলে ওরা ব্রিজের মত করে তৈরী করে। যেমন আমাদের পদ্মা সেতুসহ যাবতীয় সেতু নির্মিত হয়েছে। নিচে পানির প্রবাহে কোনই বাধা নেই। একবার কল্পনা করেন, কেউ পদ্মা নদীর মাঝে মাটি ফেলে এপার ওপর একটা রাস্তা করে দিয়েছে এবং প্রমত্ত পদ্মার পানি প্রবাহের জন্য কেবল কয়েকটা ফুটা করে দিয়েছে। এত বিপুল পরিমান পানি মাত্র কয়েকটা ফুটা দিয়ে গেলে স্বাভাবিকভাবেই সমস্যা তৈরী হবে। এখানেও কি তাই হচ্ছে না?
যদি না হয়ে থাকে তাহলে কেন গত দুই বছরে পরপর দুইটা বড় বন্যা সৃষ্টি হলো? ইন্ডিয়া থেকে প্রচুর পানি আসছে, সেই পানিটাই নির্দিষ্ট পথ ধরে বঙ্গপসাগরে যেতে হবে। পারছে?

সমাধান কি? সব বাড়ি ঘর রাস্তা ভেঙ্গে ফেলা? না। ভেঙ্গে ফেললে কোটি কোটি টাকার শ্রাদ্ধই হবে। বরং ইংলিশে আমরা যেটাকে বলি damage control, সেটাই করতে হবে। যা হওয়ার হয়ে গেছে, এখন বুদ্ধি বের করতে হবে কিভাবে এর সমাধান করা যায়। যেমন,
শহরে ড্রেনেজ সিস্টেমের উন্নতি করতেই হবে। গভীর, প্রশস্ত, ঢাকনাওয়ালা ড্রেনের বিকল্প নেই। ঢাকনাওয়ালা এই কারণেই অনেক সময়েই গভীর সুপ্রশস্ত ড্রেনে মানুষ, গাড়ি ইত্যাদি পড়ে গিয়ে ব্যাপক দুর্ঘটনার সৃষ্টি করে। সেসব এড়াতেই হবে।
নদী-খাল ইত্যাদি দখলমুক্ত করতে হবে। ওদের মাথার উপর প্রভাবশালীদের হাত থাকে, সেই প্রভাবশালীদের হাত থেকে সিলেটকে বাঁচাতে হবে। সিলেট কারোর বাপ দাদার সম্পদ না, সিলেট আমার আপনার আমাদের ভূমি। নদী বাঁচলে সিলেট বাঁচবে।
সরকারি উদ্যোগে পুকুর, দীঘি ইত্যাদি খনন করতে হবে, নির্দিষ্ট কিছু অঞ্চল রাখতে হবে যেখানে অতিরিক্ত বৃষ্টির পানি জমা হবে। এমনিতেও আমাদের নিজেদের ভবিষ্যতের জন্যও মিঠা পানির রিজার্ভ বেশি বেশি রাখা প্রয়োজন।
পুকুর/দীঘি ভরাটের ব্যাপারে কঠোর নির্দেশনা থাকতে হবে। প্রাচীন পুকুর/দীঘিগুলো চাইলেই যেন যে কেউ ভরাট করে ফেলতে না পারে, সে ব্যাপারে সরকারকে কঠোর হতে হবে। পয়সা লাগলে মালিকরা মাছ চাষ করুক, মুক্তা চাষ করুক, তবু জলাশয় ভরাট করতে পারবে না।
খাল/বিল/পুকুরে ময়লা আবর্জনা ফেলে পানির গতিপথ রোধ করা যাবেনা। ধরা পড়লে মোটা জরিমানা গুনতে হবে। বিদেশেতো তাই হয়। এই আমরাই বিদেশে আইনের ভয়ে বেতের মতন সিধা থাকি। তাহলে নিজের দেশে এমন বেত্তমিজ অসভ্য হয়ে যাই কেন? আইনের প্রয়োগ নেই কেন?

যে শাহী ঈদগায় হাজার হাজার মানুষ জামাতে নামাজ পড়তো, সিজদা থেকে উঠে সালাম ফিরিয়ে দাঁড়িয়ে চারপাশে অবাক হয়ে দেখতাম মানুষ আর মানুষ, সেখানে নাকি এবছর একশো লোকেরও জামাত হয়নি। ভাবা যায়?
শহরের হসপিটালে ঢুকে পড়েছে বন্যার পানি। লোকজন নিজের বাড়ির উঠানে কোরবানি দিতে পারছে না।
এসব মেনে নেয়া সম্ভব?

মন্তব্য ০ টি রেটিং +১/-০

মন্তব্য (০) মন্তব্য লিখুন

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.