নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
আমি ঝন্ঝা, আমি ঘূর্ণি, আমি পথ-সমূখে যাহা পাই যাই চূর্ণি’। আমি নৃত্য-পাগল ছন্দ, আমি আপনার তালে নেচে যাই, আমি মুক্ত জীবনানন্দ। আমি হাম্বার, আমি ছায়ানট, আমি হিন্দোল, আমি চল-চঞ্চল, ঠমকি’ ছমকি’ পথে যেতে যেতে চকিতে চমকি’ ফিং দিয়া দিই তিন দোল; আমি চপলা-চপল হিন্দোল। আমি তাই করি ভাই যখন চাহে এ মন যা, করি শত্রুর সাথে গলাগলি, ধরি মৃত্যুর সাথে পান্জা, আমি উন্মাদ, আমি ঝন্ঝা! আমি মহামারী আমি ভীতি এ ধরিত্রীর; আমি শাসন-ত্রাসন, সংহার আমি উষ্ন চির-অধীর! বল বীর - আমি চির উন্নত শির!
পবিত্র কুরআনের সবচেয়ে কঠিনতম নির্দেশ আল্লাহ সূরা নিসায় ১৩৫ নম্বর আয়াতে দিয়েছেন, তা হচ্ছে, ন্যায় প্রতিষ্ঠায় নিজের, বা নিজের বাবা মা বা অতি নিকটাত্মীয়ের বিরুদ্ধে গেলেও যেতে, তবু কোন রকম অন্যায়কে প্রশ্রয় না দিতে।
শুনে খুব সহজ মনে হলেও এটিই পৃথিবীর সবচেয়ে কঠিনতম কাজ। আমার ছেলে কোন অন্যায় করলে আমার পিতৃস্নেহ যেন ন্যায়ের পথে বাধা হয়ে না দাঁড়াতে পারে। আমার বাবা কোন অপরাধ করলেও যেন আমি তাঁর পক্ষ নিয়ে সেই অন্যায়কে ধামাচাপা দেয়ার চেষ্টা না করি। আমাকে মাথায় রাখতে হবে, আমাদের সবার মালিক একজন, দুনিয়ার সবাইকে ফাঁকি দিতে পারলেও সেই মালিকের কাছেই আমাদের একদিন ফিরে যেতে হবে। এর কোন ব্যতিক্রম নেই।
এই পর্যন্ত আশা করি বুঝতে কারোরই কোন সমস্যা হয়নি।
এখন ধরা যাক আমাদের বাবা মায়ের কোন অপরাধের কারনে সমাজে আমাদের কোন অসম্মান ঘটেছে। এক্ষেত্রে করণীয় কি? বাবা মাকে ত্যাজ্য করা?
অবশ্যই না। ছোটবেলায় আমাদেরও নানান কর্মকান্ডে তাঁদের মাথা হেঁট হয়েছে। তাঁরা কি তখন বাংলা সিনেমার "পাষান হৃদয় পিতার" মতন নাটকীয় কায়দায় আমাদের ত্যাজ্য করেছেন? না। নিজের কষ্ট, নিজের অভিমান, অপমান সামলানোর পাশাপাশি আমাদের বুঝিয়েছেন, পথে ফেরাবার চেষ্টা করেছেন। আমাদের জন্ম থেকে তাঁদের কবর পর্যন্ত তাঁদের জীবনের এইটাই লক্ষ্য ছিল আমরা যেন ভাল থাকি। কাজেই,
আমাদেরও তাঁদের প্রতি দায়িত্ব অসীম।
এখন ইসলাম অনুযায়ী পৃথিবীর সবচেয়ে বড় অপরাধ হচ্ছে "শিরক" - আল্লাহর সাথে কাউকে "শরিক" করা।
আমরা জানি আল্লাহই আমাদের সৃষ্টিকর্তা, লালনকর্তা, এবং আমার যাবতীয় সবকিছুর মালিক শুধুই তিনি একা। তাঁর সমকক্ষ কাউকে বসানোর চেষ্টা করাটাও শিরক।
যেকোন অপরাধের তুলনায় এই অপরাধটা অনেক অনেক বেশি গভীর। দুনিয়ার যেকোন অপরাধ হয়তো আল্লাহ ক্ষমা করবেন, কিন্তু শিরকের অপরাধের কোন ক্ষমা নেই।
এখন সেই অপরাধকে হাতে রেখেও আল্লাহ পবিত্র কুরআনের সূরা বনী ইসরাঈলে ২৩ নম্বর আয়াতে নির্দেশ দিয়েছেন, "তোমার পালনকর্তা আদেশ করেছেন যে, তাঁকে ছাড়া অন্য কারও এবাদত করো না এবং পিতা-মাতার সাথে সদ্ব-ব্যবহার কর। তাদের মধ্যে কেউ অথবা উভয়েই যদি তোমার জীবদ্দশায় বার্ধক্যে উপনীত হয়; তবে তাদেরকে ‘উহ’ শব্দটিও বলো না এবং তাদেরকে ধমক দিও না এবং বল তাদেরকে শিষ্ঠাচারপূর্ণ কথা।"
মানে হচ্ছে, যদি বাবা মা শিরকের সাথেও জড়িত থাকেন, বা আপনাকে নির্দেশ দেন শিরক করতে, তবে যেন আমরা শিরক না করি, কিন্তু এমন ঘৃণ্য অপরাধ সত্বেও বাবা মায়ের প্রতি "উহ" শব্দটিও উচ্চারণ না করি।
আমাদের জীবনে এমন অনেক সময়ই উপস্থিত হবে যখন আমরা আবিষ্কার করবো যে আমাদের বাবা মায়েদের আমরা যেমনটা দেখে এসেছি, বাস্তবে হয়তো তাঁরা তেমনটা নন। আমরা ভুলে যাই তাঁরাও মানুষ, তাঁরাও ভুল ভ্রান্তি অপরাধ করে থাকেন। তাঁদের মানবিক দিকগুলো আমাদের দৃষ্টিতে আসতেই তাঁদের প্রতি আমাদের আজন্ম লালিত মোহ একটি বড়সড় ধাক্কা খায়। তখন অনেকেই এমন আচরণ করে বসেন যাতে ক্ষতিই বৃদ্ধি পায় কেবল, কমে না। এতে তাঁরা মানসিক আঘাত পান, সন্তানও চরম মানসিক নিপীড়নের মধ্য দিয়ে যায়। সাজানো বাগানের মতন পরিবার নিমিষেই ধ্বংস হয়ে যায়। পৃথিবীকে তখন মিথ্যা মনে হয়।
এমন পরিস্থিতে পড়লে তাহলে আমরা কি করবো?
উত্তরটা আমাদের রাব্বুল আলামিন স্বয়ং দিয়েছেন ঠিক পরের আয়াতেই, "তাদের সামনে ভালবাসার সাথে, নম্রভাবে মাথা নত করে দাও এবং বলঃ হে পালনকর্তা, তাদের উভয়ের প্রতি রহম কর, যেমন তারা আমাকে শৈশবকালে লালন-পালন করেছেন।"
আল্লাহ বলছেন যে তাঁদের নির্দেশ মতন অপরাধ কর্মে না জড়াতে। আল্লাহ নির্দেশ দিচ্ছেন সেটার বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করতে, ওদের শাস্তি প্রাপ্য হলে সেটাও নিশ্চিত করতে, কিন্তু বাবা মায়ের সাথে সীমাতিক্রম না করতে। তাঁদেরকে তাঁদের অপরাধ ধরিয়ে দিতে হবে, অনুভব করাতে হবে, অনুশোচনা করাতে হবে, কিন্তু কোন অবস্থাতেই তাঁদের সাথে দুর্ব্যবহার করা যাবেনা। আল্লাহর কাছে দোয়া করতে হবে একটি শিশুকে তাঁর মা-বাবা যেভাবে সব ধরনের অনিষ্টতা থেকে আগলে রাখেন, ক্ষুদ্রাতি ক্ষুদ্র বিষয়েও থাকে তাঁদের সতর্ক দৃষ্টি। যেমন গোসলের জন্য পানি গরম করা হয়েছে। সেই পানি বাচ্চাকে ছোঁয়ার আগে নিজে পরীক্ষা করে নেয়া এতে শিশু কষ্ট পাবে কিনা, তেমনই অতি ক্ষুদ্র বিষয়েও যেভাবে মা বাবার নজর থাকে, আল্লাহ যেন আমাদের বাবা মাকে ঠিক সেভাবে সব ধরনের অনিষ্টতা থেকে আগলে রাখেন। বান্দা চাইলেই আল্লাহ তাঁর বান্দাকে ডাকাত দলের সর্দার থেকে অলি আউলিয়ার সম্মান এনে দিতে পারেন। বান্দা যেন নিজের কৃতকর্মের জন্য অনুতপ্ত হয়, সেই দোয়াটাই আল্লাহর কাছে করতে হবে। বার বার, অনন্তকাল।
আমরা যেন ভুলে না যাই, আমাদের জন্য বেহেস্তের সবচেয়ে সহজতম সড়কের নাম হচ্ছে আমাদের বাবা-মা।
আমরা যেন ভুলে না যাই তাঁদের মৃত্যুর মাধ্যমে আমাদের বেহেস্তে যাওয়ার সবচেয়ে প্রশস্ত দরজাটি চিরদিনের জন্য বন্ধ হয়ে যায়।
©somewhere in net ltd.
১| ০৯ ই জুলাই, ২০২৪ রাত ১:২২
ঢাকার লোক বলেছেন: হে আল্লাহ, যাদের বাবা মা জীবিত আছেন তারা যেন তাদের সেবা যত্ন করে জান্নাত হাসিল করতে পারেন সেই তৌফিক তাদের দিন।