নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

মঞ্জুর চৌধুরী

আমি ঝন্ঝা, আমি ঘূর্ণি, আমি পথ-সমূখে যাহা পাই যাই চূর্ণি’। আমি নৃত্য-পাগল ছন্দ, আমি আপনার তালে নেচে যাই, আমি মুক্ত জীবনানন্দ। আমি হাম্বার, আমি ছায়ানট, আমি হিন্দোল, আমি চল-চঞ্চল, ঠমকি’ ছমকি’ পথে যেতে যেতে চকিতে চমকি’ ফিং দিয়া দিই তিন দোল; আমি চপলা-চপল হিন্দোল। আমি তাই করি ভাই যখন চাহে এ মন যা, করি শত্রুর সাথে গলাগলি, ধরি মৃত্যুর সাথে পান্জা, আমি উন্মাদ, আমি ঝন্ঝা! আমি মহামারী আমি ভীতি এ ধরিত্রীর; আমি শাসন-ত্রাসন, সংহার আমি উষ্ন চির-অধীর! বল বীর - আমি চির উন্নত শির!

মঞ্জুর চৌধুরী › বিস্তারিত পোস্টঃ

বঙ্গবন্ধুর শেখানো বুলি

২৬ শে জুলাই, ২০২৪ রাত ১:০৫

আদর্শ বড় কঠিন জিনিস। একবার রক্তে ঢুকে গেলে তা দূর করা সম্ভব না।
উদাহরণ দেই।
আমি গাড়ি চালাচ্ছি। সামনের ট্রাফিক সিগন্যাল লাল। টেক্সাসে সিগন্যাল লাল থাকাবস্থায় ডানে মোড় নেয়া যায়। শুধু খেয়াল রাখতে হবে বাঁদিক থেকে কোন গাড়ি আসছে কিনা। যদি আসে, তবে ওটাকে যেতে দিতে হবে। এটাকে "Yield" বলে।
তো আমার ছেলেরা ছোটবেলা থেকেই ট্রাফিক সিগন্যাল বুঝে। স্কুলে ওদের শেখানো হয় লাল মানে "স্টপ।" এই ডানে মোড়া, অন্য গাড়িকে যেতে দেয়া ইত্যাদি জটিল নিয়ম ওদেরকে শেখানো হয়না।
তো আমি যখন সিগন্যালে লাল থাকাবস্থায় ডানে মোড় নেই, তখন পেছন থেকে দুই ভাই হাউকাউ শুরু করে দেয়, আমি কেন লাল থাকাবস্থায় গাড়ি চালালাম। আমারতো থামার কথা ছিল। আমি বাজে ড্রাইভার। ইত্যাদি ইত্যাদি।
এ এক মহা যন্ত্রনা!
একই ব্যাপার ঘটে যখন আদর্শ কোন বাচ্চা নিজের বাপকে চুরি করতে দেখে। "বাবা, তোমার বেতন কয়েক হাজার টাকা মাত্র, তুমি কোটি টাকার সম্পদ কিভাবে গড়লে?"
"ব্যবসা করে গড়েছি বাবা।"
"তাই? দেখাও তোমার ব্যবসার হিসাব নিকাশ। আমি দেখতে চাই।"
এদেশে পুত্রের যন্ত্রনায় বাপ ঘুষ খেতে পারেনা, চুরি করতে পারে না। স্বামী দুর্নীতি করে, স্ত্রী পুলিশকে ফোন করে জানিয়ে দিয়েছে - এমন বহু ঘটনা পশ্চিমা দেশে ঘটে। পুলিশ হয়তো কোন সিরিয়াল কিলারকে খুঁজছে। চেহারার বর্ণনা প্রকাশ করে পাবলিকের সাহায্য চেয়েছে - দেখা যায় ৯০% ফোন কল আসে মহিলাদের থেকে যাদের ধারণা তাঁদের স্বামীর সাথে সেই চেহারা গুনগত বৈশিষ্ট্য মিলে। হিলারি ক্লিন্টন ওর স্বামীর লাম্পট্য সমর্থন করেছিল বলে ট্রাম্পের বিপক্ষে ইলেকশন হেরে গেছে। চিন্তা করতে পারেন? যে ট্রাম্পের বিপক্ষে একটা কলাগাছ দাঁড়ালেও জিতে যাওয়ার কথা ছিল, সেখানে হিলারির দোষ ছিল সে কেমন নারী যে স্বামীর লাম্পট্য মেনে নেয়, সে মিথ্যা কথা বলে ইত্যাদি ইত্যাদি সব অভিযোগ যা কোন বাংলাদেশী শুনলে মাথা চুলকে ভাববে "এগুলো দোষ? কিভাবে?" ওরা আমাদের পলিটিশিয়ানদের দেখেই নাই। দেখলে স্তম্ভিত হয়ে যেত।
ছোটবেলা থেকেই আমাদের নবীজির (সঃ) আদর্শ যেমন আমরা শিখি। এর ফলে কেউ যখন তাঁর আদর্শকে টুইস্টেড করে ভুগিচুগি করার চেষ্টা করে, যেমন কোন সন্ত্রাসী সংগঠন, যারা ইসলামের নাম ভাঙ্গিয়ে সন্ত্রাসবাদ চালায়, গোটা বিশ্বের মুসলিমরা তখন ওদেরকে গালাগালি করে। ফাজিলের ফাজিল! নিরীহ মানুষ মারবি, আর তোরা আমাদের ইসলাম চেনাতে আসিস? দূর হ!

তেমনই গত একযুগের বেশি সময় ধরে আওয়ামী সরকার বাংলাদেশে এক নতুন ধর্ম চালু করার চেষ্টা করেছিল, সেটা হচ্ছে মুক্তিযুদ্ধের চেতনা আর বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান।
এখন বাংলাদেশে জন্মালে, বাংলাদেশে থাকতে হলে আপনাকে অবশ্যই মুক্তিযুদ্ধের চেতনা লালন করতেই হবে। এখানে কোন ছাড় নেই। যে বলবে "তথাকথিত মুক্তিযুদ্ধ" বা "একাত্তরের গন্ডগোল" - সে রাজাকার। এখানে ইনবিন করার কোন অপশনই নাই।
তা সেই মুক্তিযুদ্ধের আদর্শের মধ্যেই চলে আসে দেশের সব মানুষ সমান, ন্যায় বিচার প্রতিষ্ঠা পাওয়া, বিচার বিভাগের স্বাধীনতা, দুর্নীতিমুক্ত সমাজ ইত্যাদি। যে অধিকার আদায়ে তিরিশ লাখ মানুষ মরে গেলেন, সেই অধিকারগুলো নিশ্চিত করা।
৭১এর আগের ও সেই সময়কার বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকেও অস্বীকার করার কোন উপায় নেই। উনার এক তর্জনীর ইশারায় কোটি মানুষ নিজের জীবনের মায়া ত্যাগ করে রাস্তায় মেশিনগানের সামনে ঝাঁপিয়ে পড়েছিল, এইটা ফ্যাক্ট। পরবর্তীতে এন্টি আওয়ামীলীগ হয়েছে এমন বহু মানুষ আছেন বা ছিলেন(মারা গেছেন), যারা একাত্তরে তাঁদের "মুজিব ভাইয়ের" জন্য শতবার মরতে রাজি ছিলেন। আমি ব্যক্তিগতভাবেই এমন বেশ কিছু মানুষকে চিনি।
হ্যা, স্বাধীনতা পরবর্তী রাষ্ট্রপ্রধান শেখ মুজিবুর রহমানকে নিয়ে আপনি আলোচনা সমালোচনা করতে পারেন। এইটা আপনার রাষ্ট্রীয় অধিকার। আপনি বলতেই পারেন রক্ষীবাহিনীর দৌরাত্ম, তাঁর নিজের ভাষায় "চাটার দলের" চরম দুর্নীতি, একনায়কতন্ত্র, বাকশাল, নিজের লোকেদের উপর কন্ট্রোল ধরে রাখতে না পারা বা আরও অনেক ক্ষেত্রে বঙ্গবন্ধুর দায় এড়ানোর উপায় নেই। তিনি যেহেতু রাষ্ট্রপ্রধান ছিলেন, তাঁর লোকেদের নিয়ন্ত্রণের দায়তো তাঁর উপরই থাকবে। কিন্তু সেই আলোচনা, সমালোচনা ইত্যাদি সবই হতে হবে সভ্য তরিকায়। সবচেয়ে বড় কথা, এইটাই গণতন্ত্র, এই অধিকারের জন্যই দেশ স্বাধীন হয়েছিল।

কিন্তু ওভারঅল তাঁর যে আদর্শ, "সোনার বাংলা গড়ার" যে স্বপ্ন, তাঁর বক্তব্যের কিছু চৌম্বক অংশ, যেমন গরিব কৃষককে সম্মান করা, শিক্ষিত ছেলেরা যেন বৃদ্ধ বাপকে সাহায্য করে, চুরিচামারি না করে থেকে শুরু করে অন্যায়ের সামনে মাথা নত না করা, মৃত্যুর পরোয়া না করে আদর্শের জন্য লড়ে যাওয়া ইত্যাদি সব অসাধারন সব বাণী ও শিক্ষণীয় আদর্শ একটা জেনারেশনকে লাইনে নিয়ে আসার জন্য যথেষ্ট। আপনি আওয়ামীলীগকে যতই ঘৃণা করেন, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের বক্তব্যের এমন সব শিক্ষা আপনি কিছুতেই এড়িয়ে যেতে পারবেন না।

এখন সমস্যা হচ্ছে, আওয়ামীলীগ নিজেই সেই নীতি ও আদর্শের উপর নাই। পনেরো বছর ধরে ক্ষমতায় থেকে ক্ষমতা এখন ওদের পেয়ে বসেছে। এই সময়ে বহু চাটুকার লীগে যুক্ত হয়েছে কেবল সুবিধা ভোগের লালসায়। বঙ্গবন্ধুর নীতি আদর্শের সাথে ওদের দূর দূরান্ত পর্যন্ত কোন সম্পর্ক নেই। ছাত্রলীগ, যুবলীগ, শ্রমিকলীগ বা আওয়ামীলীগ - যে লীগের দিকেই তাকান, সবজায়গায় এখন শুধু লোভ আর লোভ। যুবলীগের নেতা কয়েকশো কোটি টাকার ক্যাসিনো ব্যবসা চালায়, চাঁদাবাজি, খুন ইত্যাদিতো খুবই কমন ঘটনা, প্রধানমন্ত্রীর খাস বান্দা পুলিশ প্রধান অবৈধ টাকায় গোটা দেশ কিনে ফেলে, অবৈধ টাকা বিদেশে পাচার হয়ে যায়, কোটি কোটি টাকার পাহাড়ের উপর বসে আয়েশি জীবন কাটায় সাধারণ সরকারি কর্মচারীর সন্তানেরা। মুখে শুধু "বঙ্গবন্ধু" "মুক্তিযুদ্ধের চেতনা" "সব দোষ বিএনপি-জামাত-শিবিরের" ইত্যাদি বুলি আওড়ালেই হলো। চাটুকারে ভরপুর। প্রধানমন্ত্রীর ভুল ধরতে যান, চাটার দল এমনভাবে তেড়ে আসবে যে প্রধানমন্ত্রীই আপনাকে তাঁর দুশমন ভেবে বসবে, এরপরে আপনার ভবিষ্যৎ ফি আমানিল্লাহ। এখানে অতি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হচ্ছে, আমাদের প্রধানমন্ত্রী ভাল করেই জানেন তাঁর বাবা কর্নেল ফারুককে ক্ষমা করে দিয়েছিলেন বলেই এক পর্যায়ে এই ফারুকের হাতেই তাঁর ও পরিবারের প্রাণ গিয়েছিল। তিনি সেই একই ভুল করেন না। তাই আমরা এই বাকস্বাধীনতা বা ইত্যাদি ইস্যুতে আওয়ামীলীগকে আল্ট্রা এগ্রেসিভ হিসেবে পাই। উনি সবাইকেই পটেনশিয়াল শত্রুজ্ঞান করেন। পঁচাত্তরে তিনি যে মেন্টাল ট্রমার মধ্য দিয়ে গিয়েছিলেন, তিনি কি কোন মানসিক রোগ বিশেষজ্ঞের সাথে পরামর্শ করেছিলেন? সেই মেন্টাল ট্রমা যে উনাকে বাকিটা জীবন সুস্থ স্বাভাবিক শান্তির জীবন দিবে না, সেটাইতো স্বাভাবিক। কেউ কি কখনও এই এঙ্গেল থেকে উনাকে দেখেছেন?

আমরা যারা "মুক্তিযুদ্ধের আদর্শে" বেড়ে উঠেছি, আমরা যখন দেখি আমাদের দেশের সম্পদ লুট করে ফেলছে কোন সরকারি কর্মচারী, আমাদের ক্ষোভ হয়।
প্রধানমন্ত্রীর কাছের লোকজন কোটি কোটি টাকা বিদেশে পাচার করে দেশে ডলার সঙ্কট তৈরী করে, আমরা ক্ষুব্ধ হই।
নকল সার্টিফিকেট দেখিয়ে দুর্নীতি করে সরকারি চাকরি বাগিয়ে নেয় কোন চিটার বাটপার কেউ - তখনও আমরা ক্ষুব্ধ হই।
অধিকার দাবিতে গণতান্ত্রিক উপায়ে আমরা পথে নেমে দাবি জানাই। আরও ক্ষুব্ধ হই যখন কেউ উল্টো আমাদেরকে বলে "যারা সামান্য চাকরির জন্য নিজেদের রাজাকার দাবি করে, ওরা চাকরি পেলে কি দুর্নীতি করবে বুঝে নিন।" এই গু-খেকোদের মুখ থেকে এই কথা বের হয় না যে মুক্তিযুদ্ধের ভুয়া সার্টিফিকেট দেখিয়ে যে চাকরি বাগিয়ে নিবে, ও কি করবে? পঞ্চাশ হাজারের বেশি ভুয়া সার্টিফিকেটধারী মুক্তিযোদ্ধা আছে, এইটাতো ফ্যাক্ট। ওদের দুইটা করেও নাতি যদি চাকরিতে যায় সংখ্যাটা হবে এক লাখ। গু-খেকোদের মস্তিষ্কে গু ভরা বলে ওদের মাথায় ভয়াবহতা আন্দাজে আসেনা।

এদিকে প্রধানমন্ত্রী ও তাঁর কাছের লোকজন এই নিরীহ দাবি/আন্দোলনকে পঁচাত্তরের ঘাতকদের কর্মকান্ডের সাথে গুলিয়ে ফেলে অতিরিক্ত আগ্রাসী হয়ে দমননীতি বেছে নেয়। আমাদের বিস্মিত করে আমাদেরই দেশের পুলিশ ও সরকারি দলের লোকজন রাস্তায় গুলি করে মারে। আমাদের মাথায় ঢুকে না, যে সমস্যা মাত্র কয়েক ঘন্টার আলোচনা অতি সহজেই সমাধান সম্ভব, সেটাকে এত নৃশংস মোড় দেয়ার মানে কি? কিন্তু একজন যেই মুহূর্তে আমরা "ট্রমাটাইজড" রাষ্ট্রপ্রধানকে দৃশ্যপটে আনবো, তখনই সব সমীকরণ মিলে যায়।
আমি লিখে দিতে পারি, কালকে ৭৫ এর মতন কোন দুর্ঘটনা ঘটলে ওবায়দুল কাদের, আরেফিন, পলক সবাই সেই ভূমিকা নিবে যেটা খন্দকার মোশতাক নিয়েছিল। বঙ্গবন্ধু শহিদ তাজউদ্দীন আহমেদকে দল থেকে বহিষ্কার করেছিলেন। একই ভুল আমাদের মাননীয় প্রধানমন্ত্রীও করছেন না তো?

যাই হোক, দেশের এই মহাবিপর্যয়ে আমাদের মাথায় আসে বঙ্গবন্ধুর শেখানো বুলি "রক্ত যখন দিয়েছি রক্ত আরও দেব, এ দেশের মানুষকে মুক্ত করে ছাড়ব ইনশাআল্লাহ।" অথবা "কিসের বৈঠক বসবো? কার সঙ্গে বসবো? যারা আমার মানুষের বুকের রক্ত নিয়েছে, তাদের সঙ্গে বসবো?"
ঐ যে উপরে বলেছিলাম, আমার ছেলেদের যন্ত্রনায় আমি দুইনম্বরি কিছু করতে পারিনা। ট্রাফিক আইন মেনে চলতে হয়। ঘুষ দুর্নীতি এড়িয়ে চলতে হয়।
আমাদের আফসোস! আমাদের সরকার আমাদের যন্ত্রনায় উল্টো আমাদেরকেই চুপ করিয়ে দেয়।

মন্তব্য ২ টি রেটিং +২/-০

মন্তব্য (২) মন্তব্য লিখুন

১| ২৬ শে জুলাই, ২০২৪ রাত ৩:২১

রিফাত হোসেন বলেছেন: তখনকার গ্রামের মানুষ ১৯৭১ কে মুক্তিযুদ্ধ, স্বাধীনতার সংগ্রাম, সংগ্রাম, গন্ডগোল, কারফিউ বিভিন্ন নামেই বলে। এখন গন্ডগোল বললেই সে স্বাধীনতা বিরোধী নয়। স্বাধীনতার সংগ্রাম শব্দটি আমার কাছে ভাল লাগে।

২| ২৬ শে জুলাই, ২০২৪ ভোর ৪:২৯

মহাজাগতিক চিন্তা বলেছেন: আদর্শ শব্দটির মর্মবুঝা আজ-কাল অনেক কঠিন হয়ে পড়েছে।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.