নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
আমি ঝন্ঝা, আমি ঘূর্ণি, আমি পথ-সমূখে যাহা পাই যাই চূর্ণি’। আমি নৃত্য-পাগল ছন্দ, আমি আপনার তালে নেচে যাই, আমি মুক্ত জীবনানন্দ। আমি হাম্বার, আমি ছায়ানট, আমি হিন্দোল, আমি চল-চঞ্চল, ঠমকি’ ছমকি’ পথে যেতে যেতে চকিতে চমকি’ ফিং দিয়া দিই তিন দোল; আমি চপলা-চপল হিন্দোল। আমি তাই করি ভাই যখন চাহে এ মন যা, করি শত্রুর সাথে গলাগলি, ধরি মৃত্যুর সাথে পান্জা, আমি উন্মাদ, আমি ঝন্ঝা! আমি মহামারী আমি ভীতি এ ধরিত্রীর; আমি শাসন-ত্রাসন, সংহার আমি উষ্ন চির-অধীর! বল বীর - আমি চির উন্নত শির!
১৯৭১ সাল। চিটাগং।
এক ব্রাক্ষ্মন ভদ্রলোককে পাকিস্তান সেনাবাহিনী রাস্তায় আটকে ফেলে।
"আপকা নাম কেয়া হ্যায়?"
ওরা তাঁর নাম জানতে চায়। ভদ্রলোকের নামেই উনার ধর্মীয় পরিচয় প্রকাশ পাবে। তিনি কি বলবেন না বলবেন চিন্তায় পড়ে গেলেন। হিন্দু পরিচয় বেরিয়ে এলেইতো বুকভর্তি করে ফেলবে বুলেটে। পাকবাহিনী তখন ধুমায়ে হিন্দু মারায় ব্যস্ত।
তিনি কিছু বলার আগেই আজিজুর রহমান চৌধুরী সাহেব এগিয়ে এসে স্পষ্ট ইংলিশে সিপাহীদের জিজ্ঞেস করেন "কোন সমস্যা?"
উপমহাদেশে ব্রিটিশরা দুইশ বছর রাজত্ব করায় একটা লাভ হয়েছে এই যে ইংলিশ ভাষার কদর ওখানে এখনও সাংঘাতিক। অনর্গল ইংলিশে কথা বলা লোকজনকে এখনও আমজনতা সমীহের দৃষ্টিতে দেখে। তখনও দেখতো।
অর্ধশিক্ষিত পাকিস্তানী জওয়ানরা উর্দুতে বলে "উনার পরিচয় জানতে চাই।"
আজিজুর রহমান একজন সাচ্চা মুসলিম। উপরে আল্লাহ ছাড়া কারোর পরোয়া করেন না। উচ্চপদের সরকারি কর্মকর্তা। ঘুষ খান না, খেতেও দেন না। নিজে থাকেন ভাড়া বাড়িতে। বাইসাইকেল চালিয়ে অফিসে যান। তাঁর জুনিয়র অফিসাররাই নিজেদের বাড়িতে থাকে, গাড়িতে চেপে ঘুরে বেড়ায়। তাঁর চোখে চোখ রেখে কথা বলতে পারে না। তিনি সৎ, এইটাই তাঁর অহংকার। তিনি মিথ্যা বলেন না। কাপুরুষদের মিথ্যা বলার প্রয়োজন হয়। তিনি কাপুরুষ নন।
তিনি ইংলিশ চালিয়ে গেলেন।
"ইনি আমার ভাই। কেন? কোন অসুবিধা?"
প্রতিটা মানুষ আদম (আঃ) সন্তান, সেই সূত্রে তিনি সত্য কথাই বলেছেন। মিলিটারিদের কাছে সেটা ব্যাখ্যা করলেন না।
আর্মি জওয়ানরা একবার তাঁর দিকে তাকায়, একবার হিন্দু ভদ্রলোকটির দিকে। আজিজুর রহমানের গালভর্তি দাড়ি, শরীরে পাঞ্জাবি আর লুঙ্গি। বেড়িয়েছেনও মাত্রই মসজিদ থেকে জামাতে নামাজ পড়ে। ইনি যে মুসলিম, তাতে কোনই সন্দেহ নেই। তারউপর মুখ দিয়ে অনর্গল ইংলিশ কথাবার্তা বেরুচ্ছে। কথাবার্তার কনফিডেন্সে মনে হচ্ছে তিনি বড় সর কেউ।
অন্যদিকে সামনের লোকটিকে দেখেই বুঝা যাচ্ছে সে হিন্দু। অথচ মুসলিম লোকটি বলছে, ইনি তাঁর ভাই!
আজিজুর রহমান তাড়া দিলেন, "আপনাদের কোন সমস্যা না থাকলে আমরা তাহলে যাই? দেরি হলে বাড়িতে টেনশন করবে।"
সিপাহীরা তাঁদের আর না ঘাটিয়ে যেতে দিলেন।
"আপলোগ যাইয়ে।"
হিন্দু লোকটি নিজের জীবন ফিরে পেয়ে দৌড়াতে চাইলেন। আজিজুর রহমান সেটা বুঝেই তাঁকে চাপা স্বরে বললেন দৌড়াবেন না। আমার পাশাপাশি নরমালভাবে হাঁটতে থাকুন। দৌড়ালেই গুলি করবে।
আর্মিরা আসলেই তাঁদের দিকে অনেকক্ষন তাকিয়েছিল। তবে কিছু করলো না।
আজিজুর রহমান চৌধুরী ছিলেন আমার বাবার বাবা, মানে আমার দাদা। হিন্দু ভদ্রলোকটি ছিলেন আমার বাবার বেস্ট ফ্রেন্ডের বাবা।
সেদিনের সেই পুণ্যের জন্যই কিনা জানিনা, আজিজুর রহমান চৌধুরীর বংশধররা বিশ্বের নানান প্রান্তে ছড়িয়ে আছে, এবং প্রত্যেকেই মোটামুটি খেয়ে পড়ে বাঁচতে পারছে। প্রত্যেকের জীবনেই নানান সময়ে নানান বিপদ আসে, এবং পাশ কাটিয়েও চলে যায়। তাঁরা চিন্তা করে, ঘটনা কি? হয়তো কোন একদিন আল্লাহর সৃষ্ট এক মানুষকে তাঁদের পূর্বপুরুষ বাঁচিয়েছিলেন বলেই আল্লাহ খুশি হয়ে তাঁর বংশধরদের এসব বিপদ আপদ থেকে রক্ষা করে চলেছেন।
আল্লাহ আমাদেরকে বহুবার বহু পরীক্ষা করবেন। পাশ করলে পুরস্কার যা পাব, তা কল্পনাও করতে পারবো না।
দেশের এই অরাজক পরিস্থিতিতে, মজলুমের পাশে দাঁড়ান। হিন্দু বাড়িতে হামলা হচ্ছে? লুট হচ্ছে? আপনার বাড়িতে তাঁদের আশ্রয় দিন। অথবা দল নিয়ে ওদের বাড়িতে অবস্থান করুন। নিশ্চিত করুন কারোর বাবারও যেন সাধ্য না হয় সে বাড়ির দিকে একটা ঢিল ছোড়ার। প্রতিবেশীর বিপদে এগিয়ে আসা প্রতিটা মুসলিমের জন্য ফরজ। আপনি আপনার দায়িত্ব পালন করবেন। বিনিময়ে হয়তো পঞ্চাশ বছর পরে আপনার নাতিও চিন্তা করে পাবে না কোন পুণ্যের জন্য তাঁর মালিক তাঁকে এত পুরস্কারে পুরস্কৃত করছেন।
০৮ ই আগস্ট, ২০২৪ রাত ৮:৫০
মঞ্জুর চৌধুরী বলেছেন: কেয়ামতের দিন বান্দা যখন নিজের পাপ পুণ্যের হিসাব নিয়ে আল্লাহর কাছে হাজির হবে, তখন পুণ্যের খাতায় এমন অনেক কিছু দেখবে যা সে অবাক হয়ে ভাববে এসবতো সে করেনি, তাহলে এগুলো যুক্ত হলো কিভাবে?
তখন ওকে বলা হবে সেই এক পুণ্যের কারনে যত কল্যাণ হয়েছে, সবগুলোরই ভাগ ওকে দেয়া হয়েছে।
মানে ধরেন আপনি কাউকে চাকরি পেতে সাহায্য করেছেন। সেই চাকরি পেয়ে ওর অবস্থার পরিবর্তন হয়েছে। সে মানুষের বিপদে এগিয়ে আসতে পারছে, সাহায্য করতে পারছে। এর ফলে যাবতীয় পুন্য আপনাকেও দেয়া হবে।
২| ০৮ ই আগস্ট, ২০২৪ সকাল ৮:৪৭
অগ্নিবেশ বলেছেন: হিন্দু হওয়ার অপরাধে এক মুসলমান তাকে আটকে রাখে, আরেক মুসলমান সেই হিন্দুটিকে উদ্ধার করে হিরো বনে যায়। সেই হিন্দুটি তারপর ইসলামের উদারতা দেখে ইসলাম কবুল করে নেয়। গরু কি গাছে ওঠে?
৩| ০৮ ই আগস্ট, ২০২৪ সকাল ৯:২৬
ধুলো মেঘ বলেছেন: অগ্নিবেশ, আপনাদের জাতের সবাই কি রামছাগল? লেখক কি বলল, আর আপনি সেখান থেকে কি খুঁজে বের করলেন?
০৮ ই আগস্ট, ২০২৪ রাত ৮:৫১
মঞ্জুর চৌধুরী বলেছেন: হাহাহা, উত্তরটা ভাল দিয়েছেন।
৪| ০৮ ই আগস্ট, ২০২৪ সকাল ১০:২০
অগ্নিবেশ বলেছেন: মেঘ বালিকা ভাই, হ আমার জাতের হগলে রামছাগল। আর আপনার জাত হইল মুসলমান, আপনাগো কাছে কাহারো নিস্তার নাই।
০৮ ই আগস্ট, ২০২৪ রাত ৮:৫২
মঞ্জুর চৌধুরী বলেছেন: তুমি হালা কমেন্টই করেছো এমন যে তোমাকে রাম ছাগল ছাড়া অন্য কিছু মনে হচ্ছে না।
৫| ০৮ ই আগস্ট, ২০২৪ সকাল ১১:০৮
জ্যাক স্মিথ বলেছেন: আচ্ছা পাকিস্তানি মুসলিম সেনাদের হিন্দুদের প্রতি এত আক্রোশ ছিলো কেন? মুক্তিযুদ্ধ যারা করেছে তাদের বেশিরভাগই তো ছিলো মুসলিম জনগণ।
০৮ ই আগস্ট, ২০২৪ রাত ৮:৫৩
মঞ্জুর চৌধুরী বলেছেন: প্রথমদিকে পাক জেনারেলরা ওদের আর্মিদের বুঝিয়েছে যে মুক্তিযুদ্ধ আসে ইন্ডিয়ার ষড়যন্ত্র, এবং বাঙালি জাতটা হচ্ছে আধা হিন্দু জাত। এরা পাকিস্তান থেকে ভেঙ্গে গিয়ে ভারতের সাথে যুক্ত হতে আগ্রহী, এবং এর পেছনে হিন্দুরা কলকাঠি নাড়ছে।
৬| ০৮ ই আগস্ট, ২০২৪ দুপুর ১২:৪৮
পবন সরকার বলেছেন: পাকাস্তানি খান সেবাদের ধারণা ছিল ভারতের কারণেই বাঙালিরা আন্দোলনে নেমেছে।
০৮ ই আগস্ট, ২০২৪ রাত ৮:৫৪
মঞ্জুর চৌধুরী বলেছেন: ঠিক।
©somewhere in net ltd.
১| ০৮ ই আগস্ট, ২০২৪ রাত ৩:৩৪
শ্রাবণধারা বলেছেন: যে ঘটনাটি উল্লেখ করেছেন সেটি একটি সুন্দর ঘটনা। এই ধরনের কাজ ৭১ সালে অনেক মানুষ করেছে এবং এই ২০২৪ সালেও করে থাকেন।
এর মধ্যে আপনার দাদার কিছু পুণ্য হয়ে থাকতে পারে। কিন্তু সেই পূন্যের ফল যে এভাবে বংশ পরম্পরায় প্রবাহিত হয়ে আপনাদের বিপদ আপদ থেকে রক্ষা করে চলেছে এটা জেনে বড়ই আশ্চর্য হলাম!