নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

মঞ্জুর চৌধুরী

আমি ঝন্ঝা, আমি ঘূর্ণি, আমি পথ-সমূখে যাহা পাই যাই চূর্ণি’। আমি নৃত্য-পাগল ছন্দ, আমি আপনার তালে নেচে যাই, আমি মুক্ত জীবনানন্দ। আমি হাম্বার, আমি ছায়ানট, আমি হিন্দোল, আমি চল-চঞ্চল, ঠমকি’ ছমকি’ পথে যেতে যেতে চকিতে চমকি’ ফিং দিয়া দিই তিন দোল; আমি চপলা-চপল হিন্দোল। আমি তাই করি ভাই যখন চাহে এ মন যা, করি শত্রুর সাথে গলাগলি, ধরি মৃত্যুর সাথে পান্জা, আমি উন্মাদ, আমি ঝন্ঝা! আমি মহামারী আমি ভীতি এ ধরিত্রীর; আমি শাসন-ত্রাসন, সংহার আমি উষ্ন চির-অধীর! বল বীর - আমি চির উন্নত শির!

মঞ্জুর চৌধুরী › বিস্তারিত পোস্টঃ

এ কি যন্ত্রণা? এ কেমন বাংলাদেশ?

১৩ ই আগস্ট, ২০২৪ রাত ২:০১

১.
সে বহুকাল আগের কথা।
কলেজের সিঁড়ি বেয়ে নিচে নেমে আসছে এক কিশোর। হাতে ধরা বই। কাঁধের ব্যাগ বাদ দিয়ে এতগুলি বই হাতেই কেন ধরতে হলো তা নিয়ে ভাববার মতন বুদ্ধি তখনও ওর হয়নি।
বিপরীত দিক থেকে উচ্চগতিতে ছুটে আসা আরেক কিশোরের সাথে ওর মুখোমুখি সংঘর্ষ হয়। ধাক্কা খেয়ে প্রথম কিশোরের হাত থেকে বই মেঝেতে পড়ে যায়। দ্রুত কুড়াতে গিয়ে অন্য কিশোরের সাথে তার মাথা ঠুকাঠুকি হয়।
তারপরে দ্বিতীয় কিশোর প্রথম কিশোরকে "স্যরি" বলে। সে নিজেই ওকে বইগুলো তুলে দিতে সাহায্য করে। তারপরে বলে "আই এম ভেরি স্যরি। আমার ওভাবে ষাঁড়ের মতন দৌড়ে আসা উচিত হয়নি।"
প্রথম কিশোর বলে "না ঠিক আছে। আমারও উচিত ছিল বলদের মতন না হেটে একটু সাবধান থাকা।"
দ্বিতীয় কিশোর নিজের হাত বাড়িয়ে দিয়ে বলে, "ফ্রেন্ডস?"
প্রথম কিশোরও হাত এগিয়ে দেয়। "ফ্রেন্ডস।"
দ্বিতীয় কিশোর নিজের নাম বলতে যাবে এমন সময়ে স্কুলের বিখ্যাত বুলি সাদ এরশাদ এসে প্রথম কিশোরকে বলে, "কিরে হ্যান্ডসাম! আজকে যে তোমারে এত সৌন্দর্য্য লাগতেছে। সিনান করেছো?"
প্রথম কিশোর বলে, "যাঃ বদমাইশ! তোর বাড়িতে কি বাপ ভাই নেই?"
সাদ বলে, "বাপ ভাইতো আছে, কিন্তু তোর মতন তাগড়া জোয়ান নাই! আয়, আমার মনের সেই অভাব পূরণ করে দে!"
দ্বিতীয় কিশোর বলে, "অসভ্য! তুই কিশোরদের ইজ্জত করতে জানিস না? এ কারণেইতো তোর নিজেরও ইজ্জত নেই!"
সাদ তখন বলে, "আমার ড্যাডি বলেছে যা আমার কাছে নাই, তা যেন অন্যের কাছ থেকে লুটে নেই! তাইতো এখন তোদের ইজ্জত লুটবো! হুহুহাহা! এই, কে আছিস? ওদের তুলে নে!"
তারপরে দ্বিতীয় ছেলেটি ঝাঁপিয়ে পড়ে। তুমুল ঢিশুম ঢাসুম শুরু হয়ে যায়। কলেজ ক্যান্টিনের চেয়ার টেবিল ভাঙ্গে। তরকারিওয়ালার ট্রলি উল্টে পড়ে যায়। তুমুল ভাংচুরের পর অবশেষে সাদ ও তার সাঙ্গপাঙ্গ দৌড়ে পালায়।
প্রথম কিশোর তখন বলে, "আজ আপনি না থাকলে কি যে হতো! আপনাকে আবারও ধন্যবাদ।"
দ্বিতীয় কিশোর তখন শরীর থেকে ধূলি ঝাড়তে ঝাড়তে বলে, "উহু, দোস্তিমে নো স্যরি, নো থ্যাংক ইউ।"
প্রথম কিশোর অবাক হয়ে বলে, "আপনি হিন্দিও বলতে পারেন?"
দ্বিতীয় কিশোর বলে, "অফকোর্স হাম হিন্দি বোলতা হ্যায়। হিন্দি খুবই সহজ ল্যাঙ্গুয়েজ হ্যায়, তুমি চাইলে হাম তোমাকেও হিন্দি শিখিয়ে দেতা হ্যায়!"
প্রথম কিশোর খুশিতে বাকবাকুম করতে থাকে। ওর বুকে তোলপাড় উঠে। মনে হচ্ছে শরীরের প্রতিটা রক্তকোষে কেউ সুখের আগুন ধরিয়ে দিয়েছে। এ আগুনে ঝলসে যেতে এত সুখ! এর আগেতো ওর জীবনে এমনটা কখনই হয়নি। এই অনুভূতির নামই কি ভালবাসা? প্রেম?
"শোন...." প্রথম কিশোর বলে, "তোমার নাম কি?"
"জয়। আর তোমার?"
"তারেক।"

২. এর পরের কয়েক দিন, কয়েক মাস, কয়েক বছর কলেজ ক্যাম্পাস জয়-তারেকের প্রেমের সাক্ষ্মী হয়। ওরা ক্লাসরুমে, বাগানে, পার্কে নাচতে নাচতে গান গায় "বন্ধু তোর বারাত নিয়া আমি যাবো" বা "আমাদের দেশটা স্বপ্নপুরী, মাম্মি মোদের দুই বুড়ি" - গানের শেষ পর্যায়ে ফুলে ফুলে টোকা খায়।
একদিন তারেক বলে, "অনেকতো বেলেল্লাপনা হলো, তুমি কবে সিরিয়াস হবে একটু বলতো! বাড়ি থেকে আমার বিয়ের চাপ দিচ্ছে।"
জয় বলে, "আমিতো তোমার ব্যাপারে সিরিয়াসই।"
তারেক অভিমান করে বলে, "তাই? তাহলে তোমার মাকে কবে আমার কথা বলবে?"
জয় বলে, "তুমিতো জানোই আমার মা কখনই তোমাকে আমার জীবন সঙ্গী হিসেবে মেনে নিবে না। আর আমি কি করে মায়ের বিরুদ্ধে যাই বলো?"
তারেক তখন ক্ষিপ্ত হয়ে বলে, "প্রেমের সময়ে এই কথা তোমার মনে ছিল না? এখন Momma's boy হতে এসেছো? যাও ব্রেকাপ!"
জয় অনেক বাধা দেয়ার চেষ্টা করে, কিন্তু তারেক ওর মায়ের কাছে ফিরে যায়।
তারেকের মা ছেলেকে দেখেই বুঝে ফেলেন যে উনার গাছের ফলে কেউ ফরমালিন মিশিয়েছে। তিনি বলেন, "এই ছেলে এই, কোথা থেকে মুখ কালা করে এসেছিস?"
"আমি ফর্সা ছিলাম কবে মা?"
"চুপ বেয়াদব কোথাকার! যা জানতে চাইছি সব খুলে বল!"
তারেক মায়ের সামনে সব খুলে বলে। সব শুনে মা বলেন "ঐ গোপালীর সাথে তুই প্রেম করেছিস? তুই জানিস না ওদের সাথে আমাদের কি সম্পর্ক?"
তারেক তখন কাঁদতে কাঁদতে বলে, "জানি মা। জানি! তবু প্রেমের জোয়ারে আমি ভেসে গিয়েছিলাম। আমি ভালবাসা দিয়ে ওকে আমার টিমে আনতে চেয়েছিলাম, কিন্তু ও আমার মনের সাথে ছিনিমিনি খেলেছে মা! ও একটা লম্পট! আমাকে এখন তুমি যার সাথেই বিয়ে দিবে, আমি খুশি মনে বিয়ে করবো মা!"
ওদিকে জয়ের বাড়িতেও একই ঝড় উঠে। "গোটা দুনিয়া ফেলে ঐ রাজাকারের বাচ্চার সাথে তুই প্রেম করলি?"
"কিন্তু মা, উনিতো সেক্টর কমান্ডার ছিলেন। নানাজান নিজে উনাকে বীর উত্তম পদক..."
জয়ের মা ওকে চটকানা মারতে মারতে বলে, "আমার কথার উপর কথা! তুই আমার চেয়ে বেশি জানিস? মাংসের বদলে তোকে কাঁঠাল খাওয়ানোটাই ভুল হয়েছে। এজন্য মাথায় বুদ্ধিশুদ্ধি কিছু খোলেনি।"
পাশ থেকে বাড়ির পুরানো বিশ্বস্ত চাকর বলে উঠে, "আপা, আপনি কিন্তু ওকে উত্তেজিত করছেন।"
জয়ের মা ওর পাছায় লাথি দিয়ে বলে উঠেন, "যা ভাগ! মা ছেলের মাঝখানে ফালতু বকবক করতে এসেছিস! তুই কে?"
বাকি চাকররা ওকে ঘাড় ধরে বের করে দেয়। এদিকে জয় তখন মায়ের ভয়ে গুটিশুটি মেরে বসেছে।
মা বলেন, "আমি তোকে ওর মায়ের চেয়েও ফর্সা একজনের সাথে বিয়ে দেব। ঐ বেটির অহংকার কি? ফরেনারদের মতন গোলাপি চামড়া? আমি তোকে আসল ফরেনারের সাথে বিয়ে দিব!"
"কিন্তু মা, আমি যে তারেককে মন দিয়ে বসেছি। ফরেনার মেয়েটার সাথে কি আমার বিয়ে টিকবে?"
মা তখন পায়ের স্যান্ডেল খুলে মারতে মারতে বলেন, "আবারও আমার মুখের উপর কথা? এত সাহস কই পাস্ তুই?"
"Sorry mommy, sorry!!!! আর কখনও তোমার বিরুদ্ধে কিছু বলবো না।"
অতঃপর তারেক ও জয়ের দুইজন আলাদা মেয়ের সাথে বিয়ে হয়ে যায়। দুইজনেরই বিয়েতে গান গাইতে আসে বিখ্যাত গাতক টাকলা পলক। ওরা গাইতে থাকে, "বন্ধু তোর বারাত নিয়া আমি যাবো।"
গানটা শুনে তারেক ও জয়ের চোখ দিয়ে টপটপ করে পানি ঝরতে থাকে। বেরসিক বরযাত্রীর কেউই শুনতে পায়নি এই অশ্রুর পেছনের কান্না।

৩.
সময় এগোতে থাকে। পদ্মা, মেঘনা, গোমতী, যমুনার পানি বঙ্গোপসাগরকে ভারী করে তোলে। তিস্তা মরে যায়। পদ্মার উপর দিয়ে ব্রিজ গড়ে উঠে এপার ওপারকে এক করে ফেলে। ঢাকার রাস্তায় চলতে শুরু করে মেট্রো রেল।
একদিন জনতার ক্রোধের আগুনে পুড়ে জয়ের মাকে দেশ ছেড়ে পালাতে হয়।
তারেক বহু আগেই দেশত্যাগী। ওর মা আন্ডারটেকারের মতন কফিনের ডালা ভেঙ্গে উঠে এসে বলেন "বিসমিল্লাহির রহমানির রাহিম। এনশাল্লা, আমরা আবার গদিতে বসবো।"
কিন্তু সেই একই পাবলিক ক্ষিপ্ত হয়ে উনাকেও দেশ থেকে খেদানোর হুমকি দেয়।
তারেক দেশে ফেরার টিকেট কেটেও ক্যানসেল করে। পাবলিকের হাতে ধরা খেলে পেছন দিক যে লাল হয়ে যাবে, তাতো সেও বুঝতে পারছে।
এমন সময়ে তারেকের মোবাইল ফোনে একটা কল আসে। ডিসপ্লে আননোন নাম্বার দেখালেও এই নাম্বারটা তারেকের বুকের গভীরে খোদাই করা আছে। এতদিন লাগলো এই কল আসতে? কত যুগ? কত মাস কত মিনিট ধরে সে অপেক্ষা করেছে।
সে ফোন রিসিভ করে।
ওপাশ থেকে কোন শব্দ আসেনা।
তারেক বলে, "হ্যালো বলার প্রয়োজন নেই, আমি তোমাকে তোমার নিঃশ্বাসের শব্দে চিনতে পারি।"
কাঁপা কাঁপা কণ্ঠে জয় বলে, "কেমন আছো?"
তারেক কোন জবাব দিতে পারেনা। কত দিনের অভিমান জমা হয়ে আছে! অথচ মুখ ফুটে কিছু বেরুচ্ছে না। এতদিন পর ওর কথা মনে পড়লো? এতদিন পর?
"আমি আছি আগের মতোই। তোমার খবর বলো।"
দুই বন্ধুর কিশোরবেলার প্রেম আবার জেগে ওঠে। সেই কলেজ ক্যাম্পাসে, ক্যান্টিনে, বুড়িগঙ্গার বুকে নৌকায়, লিটনের ফ্ল্যাটে.....কত স্মৃতি, কত সুখানুভূতি!
তারেক বলল "এমন কেন হলো?"
জয় বলে "আমরা কি আগের মতন আবারও এক হয়ে যেতে পারি না?"

টিভিতে তখন নিউজ ভেসে উঠে, ঢাকা শহরে এলাকাবাসী ডাকাত ধরেছে। সারারাত ধরে ডান্স করাচ্ছে, "দুষ্টু কোকিল ডাকে রে কুকুকুকু।"
জয় এবং তারেক কল্পনায় দেখতে পায় পাবলিক ওদেরকে দিয়েও সারারাত ননস্টপ ডান্স করাচ্ছে। সাথে গানও গাওয়াচ্ছে। এ কি যন্ত্রণা? এ কেমন বাংলাদেশ?

মন্তব্য ০ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (০) মন্তব্য লিখুন

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.