নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
আমি ঝন্ঝা, আমি ঘূর্ণি, আমি পথ-সমূখে যাহা পাই যাই চূর্ণি’। আমি নৃত্য-পাগল ছন্দ, আমি আপনার তালে নেচে যাই, আমি মুক্ত জীবনানন্দ। আমি হাম্বার, আমি ছায়ানট, আমি হিন্দোল, আমি চল-চঞ্চল, ঠমকি’ ছমকি’ পথে যেতে যেতে চকিতে চমকি’ ফিং দিয়া দিই তিন দোল; আমি চপলা-চপল হিন্দোল। আমি তাই করি ভাই যখন চাহে এ মন যা, করি শত্রুর সাথে গলাগলি, ধরি মৃত্যুর সাথে পান্জা, আমি উন্মাদ, আমি ঝন্ঝা! আমি মহামারী আমি ভীতি এ ধরিত্রীর; আমি শাসন-ত্রাসন, সংহার আমি উষ্ন চির-অধীর! বল বীর - আমি চির উন্নত শির!
ইদানিং বিএনপির সময়ের "অপারেশন ক্লিন হার্ট" নিয়ে লোকজনের অনেক ধরনের কথা শুনছি। আমি একটু নিজের অভিজ্ঞতাও শেয়ার করি। লিখে রাখছি, কারন আমাদের দেশে ইতিহাস বিকৃতির একটা প্রবণতা সবসময়েই থাকে। যে দল ক্ষমতায় আসে, ওরা এবং ওদের চ্যালা চামচারা নিজেদের ইচ্ছামতন ইতিহাস বলতে পছন্দ করে। অথচ ইতিহাস হওয়া উচিত সত্য, পক্ষপাতহীন, যাতে আমরা তা থেকে শিক্ষা নিয়ে এগিয়ে যেতে পারি।
খুব সম্ভব ২০০২ এর দিকে হবে, সিলেট এমসি কলেজে পড়ি। ক্লাসে যাচ্ছি, পেছনের গেটে একটা অদ্ভুত পোস্টার দেখি। মূল কথা অনেকটা এরকম ছিল যে আপনার এলাকায় যদি কোন সন্ত্রাসী, দুষ্কৃতিকারী ইত্যাদি থেকে থাকে, তবে অমুক ফোন নম্বরে ওর বিস্তারিত জানিয়ে দিন। আপনার তথ্য গোপন রাখা হবে।
দেশ তখন ভয়াবহ সন্ত্রাসী কর্মকান্ডে ডুবে আছে। কালা জাহাঙ্গীর, সুব্রত বাইনরা তখন মোস্ট ওয়ান্টেড। মারামারি, কাটাকাটি, সন্ত্রাসী কর্মকান্ড, খুনাখুনি, চাঁদাবাজি ইত্যাদির খবরে পত্রিকা ভরপুর। আমরা ধরেই নিয়েছি এমনই চলবে। আমাদেরকেই মানিয়ে চলতে হবে।
তারপরে হঠাৎই একদিন দেখি সেনাবাহিনী রাস্তায় নেমে এসেছে। শুরু হয় ব্যাপক ধরপাকড়। এলাকার সন্ত্রাসী, নেতা, পাতিনেতা, যাদের ভয়ে তটস্থ থাকতো পাড়া মহল্লা, সবাই ধরা পড়তে শুরু করে। শুধু আওয়ামীলীগ না, বিএনপিরও সন্ত্রাসী, গুন্ডা, খুনি রাজনীতিবিদ ধরা পড়তে থাকে। পত্রিকা থেকে জানতে পারি, ওটারই নাম "অপারেশন ক্লিন হার্ট।"
তখন একজন সাধারণ মানুষ হিসেবে আমার বড় সুখের সময় চলছে। মিলিটারি রাস্তায়, কারোর বাপকে ওরা পরোয়া করছে না। ধরে ধরে নিয়ে যাচ্ছে। কেউ ট্রাফিক আইন ভঙ্গ করলেও কানে ধরে উঠবস করাচ্ছে। লোকজন কাগজ ছাড়া গাড়ি নিয়ে নামে না, লাইসেনস্ছাড়া গাড়ি চালায় না, রাস্তায় ট্রাফিক জ্যাম পর্যন্ত নেই।
তারপরে খবর আসতে শুরু করে যে এরেস্টেড হওয়া অনেকেই "হার্ট এটাকে" মারা যাচ্ছে। যারা দাপট দেখিয়ে বেড়াতো এবং ধরা খায়নি, ওরাও তখন ইঁদুরের মতন পালিয়ে পালিয়ে বেড়াচ্ছে। প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়াকে নাকি উনারই নেতাকর্মীরা চাপ দিচ্ছে এই অপারেশন বন্ধ করতে। কারন এলাকার পোলাপান ওদের হাতে পায়ে ধরছে। উনারা এলাকায় যেতে পারছেন না।
বাজারে চাঁদাবাজি নাই। কলেজে কেউ বুলি করতে পারছে না। এলাকার গুন্ডাপান্ডার আড্ডাবাজি বন্ধ। ইভটিজিংয়ের সাহস পর্যন্ত কারোর নেই। অনেকেই বলেন "মহা আতঙ্কের সময় ছিল।" বুঝে নিন কারা আতঙ্কিত ছিল।
হ্যা, ব্যাপক ধরপাকড় হয়েছে। আমার জানা মতে ১০০% ছিল পলিটিশিয়ান (বিএনপি-আওয়ামীলীগ দুইদলেরই)। আমার নিজের পরিচিত বহু সন্ত্রাসী ধরা খেয়েছে। তবু ধরে নিলাম আমার জানার বাইরে বহু নন পলিটিশিয়ান গ্রেফতার হয়েছিল। হয়তো ভাল মানুষ ছিলেন, কিন্তু প্রতিপক্ষ ফাঁসিয়ে দিতে সন্ত্রাসী হিসেবে তাঁর নাম দিয়ে দেয় (যেমনটা আওয়ামী আমলে "জঙ্গি" অপবাদে অনেককে গ্রেফতার করেছে) এবং "হার্ট এটাকে" তাঁদের মৃত্যু হয়। বিচার বহির্ভূত হত্যাকান্ডকে বাহবাহ দেয়ার কোন কারনই নেই। এর কন্সিকোয়েন্সটা একটু পরেই বলছি, তবে এইটা বলতেই হবে অপারেশন ক্লিনহার্ট চলাকালে আমাদের দেশের সন্ত্রাসী কর্মকান্ড একেবারেই বন্ধ হয়ে গিয়েছিল। সন্ত্রাসী নিজের জীবন বাঁচাতেই ব্যস্ত, সন্ত্রাসীগিরি করবে কখন?
আচ্ছা, এখানে একটা কথা স্পষ্ট করে বলা জরুরি, ছোটবেলা থেকেই বাংলাদেশ আর্মির প্রতি আমার ভীষণ দুর্বলতা ছিল। ভাটিয়ারীর পাহাড়ে "উন্নত মম শির" লেখাটার দিকে যেভাবে তাকিয়ে থাকতাম কোন প্রেমিক ওর প্রেমিকার দিকেও সেভাবে তাকায় না। ওদের ঐ ইউনিফর্ম আমাকে যেভাবে টানতো সেটার বর্ণনা আমি লিখে প্রকাশ করতে পারবো না। ভক্তদের কাছে রোনালদো-মেসি যা, বাংলাদেশ মিলিটারির প্রতিটা অফিসার আমার কাছে তা ছিল। দুর্নীতিতে নিমজ্জিত একটি দেশে একমাত্র ডিফেন্সই হয়তো ছিল করাপশনমুক্ত। অথবা দুর্নীতি থাকলেও, বাকিদের তুলনায় কিছুই ছিল না। তখন পর্যন্ত জীবনের একমাত্র লক্ষ্য এইচএসসি পাশ করেই বাংলাদেশ মিলিটারিতে সার্ভ করা। তাই অপারেশন ক্লিনহার্ট আমি হয়তো অন্যদৃষ্টিতে দেখেছি। তবে মোটমাট যা বললাম, তাই ঘটেছে। একটুও বাড়িয়ে বলি নাই।
অপারেশন ক্লিনহার্ট বন্ধ হওয়ার পরেই জন্ম হয় Rapid Action Team (বা এরকমই কিছু) বা সংক্ষেপে RAT, কিন্তু ইজ্জতের খাতিরে সাথে সাথেই নাম পাল্টে ওরা হয়ে যায় Rapid Action Battalion বা আমাদের আজকের RAB. আর্মি, পুলিশ, নৌ, বিমান, আনসার ভিডিপি সবাই মিলেই এই দল গঠন করে। হাতে মেশিনগান, কালো পোশাকে মাথায় ব্যান্ডেনা আর চোখে কালো সানগ্লাস পরা Bad Ass লোকজন। তরুণ বয়সে ওদেরকে ভালতো লাগবেই। তারউপর ডিফেন্সের প্রতি আমার ছিল দুর্বলতা।
শুরু থেকেই RAB ছিল অপারেশন ক্লিনহার্টেরই "প্রেজেন্ট কন্টিনিউয়াস টেন্স।" ব্যাপক ধরপাকড়, তারপর কিছুদিন পরেই ওদের মৃত্যুর খবর। তবে আর্মি থেকে ওদের স্ক্রিপ্ট রাইটার একটু উন্নত। "সন্ত্রাসী অমুককে গ্রেফতার করে ওর দেয়া তথ্য অনুযায়ী অস্ত্র উদ্ধারে গেলে আগে থেকেই ওঁৎপেতে থাকা সন্ত্রাসীরা আইন শৃঙ্খলারক্ষাকারী বাহিনীকে লক্ষ্য করে গুলি চালায়। RABও পাল্টা গুলি চালায়। এসময়ে আসামি পালানোর চেষ্টা করলে "ক্রসফায়ারে" ওর মৃত্যু হয়।"
এইভাবেই আমাদের অভিধানে একটি নতুন শব্দ যুক্ত হয়, "ক্রসফায়ার।"
প্রথমদিকে মনে হতো, ভালইতো। যারা মরছে ওদের আগে থেকেই থানায় মামলা ছিল। কেউ রেপের আসামি, কেউ সন্ত্রাসী, কেউ খুনি। পুলিশ গ্রেফতার করতো না। গ্রেফতার করলে প্রভাব খাটিয়ে ছাড়া পেয়ে যেত। ওদের আলাদা করে বিচারের কিছু নেই। এইভাবে ক্রসফায়ারে মরছে, শহরের আবর্জনা সাফ হচ্ছে।
প্রতিবার একই কাহিনী। RAB এ আর কোন লেখক হয়তো ছিল না। একই কাহিনী বারবার চালিয়ে গেছে। নতুন কাহিনী বানাতে পারেনি।
তারপরে ধীরে ধীরে বোধোদয় হয় যে এমন যদি হয়, কারোর নামে মিথ্যা মামলা আছে, অথচ RAB নিয়ে মেরে ফেলেছে, তখন? কাজটাতো ঠিক না। ওদেরকে বিচার করার দায়িত্ব আদালতের। আদালত যদি ফাঁসি দেয়, দিবে। নিরপরাধ হলে ছেড়ে দিবে। RAB কেন ক্রসফায়ার করবে?
সেই "ক্রসফায়ার" আজকে আমাদের দেশের অনেক বড় মাথা ব্যথার নাম। এর অপব্যবহার করে সরকার বহু খুনকে জায়েজ করেছে। বহু সিরিয়াল কিলার RAB/পুলিশের পোশাকে খুন করার লাইসেন্স পেয়েছে। জনতার প্রতিবাদে আমেরিকান পুলিশ যেমন পোশাকে ক্যামেরা লাগাতে বাধ্য হয়েছে যাতে ওরা খেয়াল খুশি মতন কালো মানুষদের মেরে ফেলতে না পারে, সুষ্ঠু তদন্তের মাধ্যমে ন্যায় বিচারের ব্যবস্থা হয়েছে, আমাদের দেশেও তেমনটা দরকার। আইনকে কেউই হাতে তুলে নিতে পারবে না। সবাই আইনের নিচে কাজ করবে। এটা নিশ্চিত না করলে বাংলাদেশ জীবনেও মাথা তুলে দাঁড়াতে পারবে না।
২০ শে আগস্ট, ২০২৪ রাত ৮:১৫
মঞ্জুর চৌধুরী বলেছেন: আপনার বাপকে, মাকে, গোটা গুষ্ঠীকে কেউ খুন করে ফেলেছে, ওকে জেলে রেখে জনতার ট্যাক্সের টাকায় খাইয়ে দাইয়ে চিকিৎসা দিয়ে পালবেন? এমন আব্লামি আবদারকে কি সুশীলতা বলে?
২| ২০ শে আগস্ট, ২০২৪ সকাল ৯:২৩
রাসেল ০০৭ বলেছেন: অপারেশন ক্লিনহার্ট 2.0 দরকার ।
র্যাব শুরুর দিকে ভালো ইমেজেই ছিলো ।
বিএনপি সরকারের শেষ দিকে এসে ইমেজ হারাতে থাকে।
স্বৈরাচারী আমলে এসে পুরাই দলীয় ক্যাডার বাহিনীতে পরিণত হয় ।
২০ শে আগস্ট, ২০২৪ রাত ৮:১৫
মঞ্জুর চৌধুরী বলেছেন: ১০০% সত্য বলেছেন।
©somewhere in net ltd.
১| ২০ শে আগস্ট, ২০২৪ সকাল ৭:৫৮
কামাল১৮ বলেছেন: বিচার বহির্ভূত হত্যা খারাপ এমন কি বিচার করেও হত্যা খারাপ।যেটা পৃথিবীর বহু দেশে নাই।