নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
আমি ঝন্ঝা, আমি ঘূর্ণি, আমি পথ-সমূখে যাহা পাই যাই চূর্ণি’। আমি নৃত্য-পাগল ছন্দ, আমি আপনার তালে নেচে যাই, আমি মুক্ত জীবনানন্দ। আমি হাম্বার, আমি ছায়ানট, আমি হিন্দোল, আমি চল-চঞ্চল, ঠমকি’ ছমকি’ পথে যেতে যেতে চকিতে চমকি’ ফিং দিয়া দিই তিন দোল; আমি চপলা-চপল হিন্দোল। আমি তাই করি ভাই যখন চাহে এ মন যা, করি শত্রুর সাথে গলাগলি, ধরি মৃত্যুর সাথে পান্জা, আমি উন্মাদ, আমি ঝন্ঝা! আমি মহামারী আমি ভীতি এ ধরিত্রীর; আমি শাসন-ত্রাসন, সংহার আমি উষ্ন চির-অধীর! বল বীর - আমি চির উন্নত শির!
একটা মহাগুরুত্বপূর্ণ ব্যাপার নিয়ে আলাপ করা যাক।
বন্যায় অনেকেই চোখ বন্ধ করে ভারতের দিকে আঙ্গুল তুলছেন। আবার অনেকেই অদ্ভুত কারণেই ওদেরকে ডিফেন্ড করছেন।
আমার অভ্যাসমতন আমি সত্যিটা তুলে ধরার চেষ্টা করছি।
প্রথম আলোর থেকে কোট করলে, কুমিল্লা জেলার ওপর দিয়ে প্রবাহিত গোমতী নদী ও ফেনী জেলার ওপর দিয়ে প্রবাহিত মুহুরী নদীর উজানে ভারতের ত্রিপুরা রাজ্যে একাধিক বাঁধ দিয়েছে দেশটির সরকার। সেখানে আছে ব্যারেজও। এসব বাঁধ ও ব্যারেজের কোনোটি পানি সংরক্ষণের জন্য, কোনোটি বিদ্যুৎ উৎপাদনের জন্য কিংবা কৃষিকাজের জন্য।
যেহেতু জুন মাসে বর্ষা মৌসুম শুরু হয়েছে, তাই ১৮ আগস্টের আগেই এসব ড্যাম ও ব্যারাজ পানিতে পূর্ণ ছিল। ১৯ আগস্ট সকাল ৯টার পর থেকে শুরু করে ২০ আগস্ট সকাল ৯টা পর্যন্ত মাত্র ২৪ ঘণ্টার মধ্যে ত্রিপুরা রাজ্যের বিভিন্ন স্থানে গড়ে ২০০ থেকে ৪০০ মিলিমিটার পর্যন্ত বৃষ্টিপাতের কারণে ত্রিপুরা রাজ্যের সব ড্যাম ও ব্যারাজের পানি ধারণক্ষমতার সীমায় পৌঁছে যায় এবং ২০ আগস্ট রাতে হঠাৎ করেই বেশির ভাগ ড্যাম ও ব্যারাজের গেট খুলে দেয় ত্রিপুরা রাজ্য কর্তৃপক্ষ।
ত্রিপুরা রাজ্য কর্তৃপক্ষ কিংবা ভারত সরকার ভাটি অঞ্চলে অবস্থিত বাংলাদেশ সরকারকে ড্যাম ও ব্যারাজের গেট খুলে দেওয়া সম্পর্কে আগে থেকে কোনো রকম তথ্য দেয়নি বা দিতে ব্যর্থ হয়।
তাহলে দেখা যাচ্ছে,
১. ইন্ডিয়া আগে থেকেই পানি জমিয়ে রেখেছে। ওরা সময় সুযোগ বুঝে ধীরে ধীরে ছাড়লে ওদেরও পানি জমতো না এবং এই হঠাৎ বন্যার সৃষ্টি হতো না।
২. ওদের ওখানে অতিবৃষ্টি হচ্ছে, ওদের আবহাওয়া অফিসই জানিয়েছিল। ওদের ভাল করেই জানার কথা এই বৃষ্টির ফলে ওদের বাঁধগুলোর পানি বিপদসীমা অতিক্রম করবে, এবং গেইট খুলতে হতে পারে। এ নিয়ে বাংলাদেশের সাথে ওদের যোগাযোগ করা উচিত ছিল।
৩. বাঁধের গেইট খুলে দেয়ার আগে একটা সতর্কবাণী পাঠাতেই পারতো। আমাদের লোকেরা নিরাপদ স্থানে সরার সুযোগ পেত।
কাজেই আমাদের প্রতিবেশী পানি অস্ত্রের সাহায্যে আমার দেশের মানুষকে খুন করেছে। এতে কোন এক্সকিউজ নাই।
এখন আসি আমাদের কি কি করা উচিত ছিল। কোথাও চুরি ডাকাতি হলে যেমন চোর ডাকাতের সাথে পুলিশের কাজে ফাঁকি দেয়াকেও দোষারোপ করা হয়, এক্ষেত্রেও আমাদের কালপ্রিট হচ্ছে আমাদেরই আবহাওয়া অধিদপ্তর।
আবারও প্রথম আলোর থেকে কোট করলাম "আবহাওয়ার পূর্বাভাসবিজ্ঞানের তাত্ত্বিক ও ব্যবহারিক অভূতপূর্ব উন্নতির ফলে বর্তমানে ৩ থেকে ১৫ দিন পূর্বের আবহাওয়া পূর্বাভাস করা যায় অনেক নিখুঁতভাবে। ৩ দিন আগে থেকে শতকরা ৯০ ভাগ নিশ্চয়তাসহকারে আবহাওয়ার পূর্বাভাস দেওয়া যায়।
এ সপ্তাহে যে বাংলাদেশ ও ত্রিপুরা রাজ্যের ওপর রেকর্ড পরিমাণ বৃষ্টি হলো, তার পূর্বাভাস ১০ দিন পূর্বে দেওয়া সম্ভব ছিল।
বাংলাদেশের মানুষকে ভারী বৃষ্টির এই পূর্বাভাস জানাতে ব্যর্থতার জন্য পুরোপুরি দায়ী বাংলাদেশ আবহাওয়া অধিদপ্তর। কেন বাংলাদেশ আবহাওয়া অধিদপ্তর এই পূর্বাভাস দিতে ব্যর্থ হলো, সেই ব্যাখ্যা বাংলাদেশ আবহাওয়া অধিদপ্তরের আবহাওয়াবিদদের কাছে জানতে চাওয়া উচিত বাংলাদেশ সরকার ও গণমাধ্যমকর্মীদের।"
আমার কথা হচ্ছে, আমাদের দেশের সরকারি অফিসে কি অশ্বডিম্ব পাড়ার জন্য কাজ দেয়া হয়? যার কাজই আবহাওয়ার পূর্বাভাস নিয়ে, সে কেন জানালো না? ওদের কি দায়িত্ব ছিল না আগেই জানানো যে "এইবার রেকর্ড পরিমান বৃষ্টি হবে, এর ফলে ইন্ডিয়ার বাঁধের গেইট খুলে দিতে পারে, সাথে ওদের পাহাড়ি ঢল নামবে, সব মিলিয়ে একটি বন্যা পরিস্থিতির সৃষ্টি হবে। এখনই সতর্ক হোন।"
নতুন সরকার কতটুকু সতর্ক হতে পারতো না পারতো সেটা পরের ব্যাপার, তোরাতো আগে জানাবি। ইন্ডিয়ার সাথে যোগাযোগ করে বলবি "আপনারা জানেন কিনা জানিনা, আপনাদের ওখানে রেকর্ড পরিমান বৃষ্টি হবে। আপনারা কি বাঁধ ও ব্যারেজের গেইট খুলে দিবেন? তাহলে আমাদের জানাবেন, আমরা আমাদের লোকজনকে নিরাপদ স্থানে সরিয়ে নিব।"
এতে বন্যা হতো ঠিকই, কিন্তু জানের তেমন ক্ষতি হতো না।
একটি সমস্যা যা অতি সহজেই সমাধান করা যেত।
কিন্তু কোটা আন্দোলনে যেমন আমাদের পুরানো সরকার শক্তির প্রয়োগ দেখিয়ে নিজের বারোটা বাজিয়েছে, তেমনই এইবার আবহাওয়া অধিদপ্তর নড়াচড়া না করে দেশের মানুষের বারোটা বাজিয়েছে।
আশা করি দেশের সবার মাথায় থাকবে যে ইন্ডিয়া আমাদের কেমন জানেমান জানে জিগার দোস্ত! কাজেই নিজেদেরই সচেতন হতে হবে।
এই বিপদ কেটে গেলে আমরা যেন নদী, খাল, বিল ইত্যাদি সব জলাশয় পুনরুদ্ধার করি। মরে যাওয়া বা ভরাট হয়ে যাওয়া জলাশয়গুলো পুনর্খনন করি। কচুরিপানা থেকে শুরু করে নোংরা আবর্জনার কারনে যেসব খাল বা নদীর পানি বদ্ধ হয়ে আছে, আমরা যেন সব জঞ্জাল পরিষ্কার করে ফেলি। এগুলি যত আগে যত প্রায়োরিটির সাথে এড্রেস করা হবে, বন্যা পরিস্থিতি তত সহজে সামাল দেয়া যাবে।
প্রতিবছর বন্যা হচ্ছে, মানুষ মরছে, আর কত?
©somewhere in net ltd.