নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

মঞ্জুর চৌধুরী

আমি ঝন্ঝা, আমি ঘূর্ণি, আমি পথ-সমূখে যাহা পাই যাই চূর্ণি’। আমি নৃত্য-পাগল ছন্দ, আমি আপনার তালে নেচে যাই, আমি মুক্ত জীবনানন্দ। আমি হাম্বার, আমি ছায়ানট, আমি হিন্দোল, আমি চল-চঞ্চল, ঠমকি’ ছমকি’ পথে যেতে যেতে চকিতে চমকি’ ফিং দিয়া দিই তিন দোল; আমি চপলা-চপল হিন্দোল। আমি তাই করি ভাই যখন চাহে এ মন যা, করি শত্রুর সাথে গলাগলি, ধরি মৃত্যুর সাথে পান্জা, আমি উন্মাদ, আমি ঝন্ঝা! আমি মহামারী আমি ভীতি এ ধরিত্রীর; আমি শাসন-ত্রাসন, সংহার আমি উষ্ন চির-অধীর! বল বীর - আমি চির উন্নত শির!

মঞ্জুর চৌধুরী › বিস্তারিত পোস্টঃ

শিক্ষকের মর্যাদা/অমর্যাদা?

২৯ শে আগস্ট, ২০২৪ রাত ১১:২৪

দেশে হঠাৎ করেই স্কুল, কলেজ ইউনিভার্সিটিগুলো থেকে শিক্ষক/প্রিন্সিপাল/হেডমাস্টারদের জোর করে পদত্যাগে বাধ্য করা হচ্ছে। তা এ নিয়ে কিছু কথা বলা যাক।
আমার জীবনের একটা বড় অংশ কেটেছে সিলেটের ব্লুবার্ড হাই স্কুলে। আমাদের প্রিন্সিপাল টিচারের নাম ছিল রাবেয়া খান আহমেদ। ভদ্রমহিলা তাঁর দলবল নিয়ে একটা সাধারণ স্কুলকে সিলেটের সেরা স্কুলে পরিণত করেছিলেন। ব্লুবার্ডের ছাত্রছাত্রী হিসেবে আমাদের গর্ব আর অহংকার ছিল ব্যাপক। বৃত্তিপরীক্ষা ও এসএসসি রেজাল্টে ব্লুবার্ডের রেজাল্ট ছিল ঈর্ষণীয়।
তো আমাদের প্রিন্সিপাল টিচার ছিলেন ডিসিপ্লিনের ডিব্বা। মিলিটারি না হয়েও ভদ্রমহিলা মিলিটারি কায়দায় স্কুল চালাতেন। ইউনিফর্ম ঠিকঠাকভাবে না পড়লে, সাদা জুতার বদলে অন্য রংয়ের জুতা পরলে, ছেলেদের চুল সামান্য একটু লম্বা হলেই কঠিন শাস্তি নেমে আসতো। বিকালবেলা শহরের মার্কেটে একটা ছেলে সিগারেট খেয়েছিল, সেটা প্রিন্সিপাল টিচার দেখে ফেলায় পরেরদিন এসেম্বলিতে কেয়ামত নামায় ফেলেছিলেন। টহল দিতে উনি যখন যে রাস্তা দিয়ে হেঁটে যেতেন আমরা রীতিমতন ঠ্যাকায় না পড়লে সেই রাস্তা মাড়াতাম না। তাহলেই বুঝেন, পড়া শিখে না আসলে বা হোমওয়ার্ক না করলে কি ঘটনা ঘটতো!
তা এই টিচারকে যে আমরা যমের মতন ভয় পেতাম কথাটাতো বুঝতে কোন অসুবিধা হচ্ছেনা, নাকি?
সাথে এও জেনে রাখুন, উনাকে মায়ের মতোই শ্রদ্ধা করতাম, ভালবাসতাম। মা যেমন আমাদের ভালোর জন্যই বকাঝকা করেন, আমরা জানতাম আমাদের রাবেয়া টিচারও তাই, ব্লুবার্ড স্কুলের প্রতিটা শিক্ষক শিক্ষিকাও তাই, এমনকি আমাদের স্কুলের সবচেয়ে ভয়ংকর টিচার, লেজেন্ডারি কেমেস্ট্রি মাস্টার মিরা টিচারও তাই। কলেজে গিয়ে অস্ত্র ধরে সন্ত্রাসী হয়েছে, এমন গুন্ডা ছেলেও মিরা টিচারকে রাস্তায় দেখলে ছুটে এসে পা ছুঁয়ে সালাম করতো, আশীর্বাদ নিত। উনার মৃত্যু সংবাদ যেদিন শুনি, বাচ্চাদের মতন কেঁদেছিলাম।
আমাদের টিচারদের আমরা ভালবাসতাম। তাঁদের সম্মানের জন্য জীবন দিতেও পারতাম। মোটেই বাড়িয়ে বলছি না, আসলেই তাই।
তাই স্টুডেন্টদের বিক্ষোভে ব্লুবার্ডের latest প্রিন্সিপাল টিচারের পদত্যাগ এবং একটা স্যারকে দৌড়ানি দিতে দেখে ভীষণ খটকা জেগেছিল। দুই টিচারের কাউকেই চিনলাম না।
স্কুল ছেড়েছি আজকে তেইশ বছর হয়ে গেছে, স্মৃতিশক্তি কি ধোঁকা দিচ্ছে? এমনতো হওয়ার কথা না। আজও বিজন স্যার, সাঈদ স্যাররা সামনে এসে দাঁড়ালে ঠিকই চিনতে পারবো।
পুরানো বন্ধুবান্ধবদের কেউও চিনতে পারেনি।
পরে খোঁজ নিয়ে জানলাম এই মহিলা দলীয় প্রভাবে নিয়োগ পাওয়া।
দলীয় সমর্থন কোন ব্যাপার না। রাবেয়া টিচারও বঙ্গবন্ধুর বিশেষ ভক্ত ছিলেন। একবার স্পোর্টসে "যেমন খুশি তেমন সাজো" প্রতিযোগিতায় একটা বড় আপু বঙ্গবন্ধুর ঘোড়ার আন্ডার সাজ (মুজিব কোট ছাড়া কিছুই হয়নি, পাঞ্জাবি থেকে শুরু করে মাথার চুল, গোঁফ কোনটাই তাঁর ধারেকাছেও ছিল না) নিয়েও ফার্স্ট প্রাইজ জিতে গিয়েছিল আমাদের তখনকার প্রিন্সিপাল টিচারের কারণেই।
কিন্তু সমস্যা ছিল এই যে এই প্রিন্সিপাল নাকি দলবল নিয়ে দুর্নীতি করেছেন। সাধারণ শিক্ষকদের সাথে চাকরবাকর মতন আচরণ করেছেন (টিচারদেরই দেয়া ভাষণে জানলাম), স্কুলের নানান প্রজেক্ট থেকে টাকা খেয়েছেন, ছাত্রছাত্রীদের প্রতিও জুলুম করেছেন এবং উনার সবচেয়ে বড় অপরাধ, সিলেটের এককালের সেরাদের সেরা স্কুলটিকে রেজাল্টের দিক দিয়ে ৪/৫/৬ নম্বরে নামিয়ে এনেছেন। আমার সাথে পড়ালেখা করেছে এক মেয়ে, সে নিজেই নিজের মেয়েকে ব্লুবার্ডে পড়তে দেয়নি, কারন লেখাপড়ার মান এতটাই নাকি নেমে গেছে।
তাহলে দেখা যাচ্ছে, ছাত্রছাত্রীরা বেহুদা কারনে উনাকে বিদায় করেনি।
কমন সেন্সও একই কথাই বলে, স্কুলের এতগুলি শিক্ষক, অনেকেই সিনিয়র আছেন, তাঁদের কারোর বিরুদ্ধেই কেউ কোন টু শব্দ করলো না, স্পেসিফিক এই টিচার এবং উনার সাঙ্গপাঙ্গদের বিরুদ্ধেই কেন খেপলো সবাই?
আপনি ক্ষমতায় থাকলে, ক্ষমতার অপব্যবহার করলে, একটা সময়ে যখন সেই ক্ষমতা যাবে, তখনতো এর ফল ভোগ করতেই হবে।
তো যা বলছিলাম, সোশ্যাল মিডিয়ায় লোকজন শিক্ষকের মর্যাদা নিয়ে অনেক হাহাকার করছেন। আমি যদি ব্লুবার্ডেরই উদাহরণ ধরি, গণিত শিক্ষককে কিছু বদমাইশ দৌড়ানি দিয়েছে ঠিকই, উনাকে বাঁচিয়েছেও একই স্কুলেরই সাধারণ ছাত্ররাই। একটি রিক্সায় তুলে দিয়ে উনাকে নিরাপদে পার করে দিয়েছে।
আর প্রিন্সিপাল টিচারের ঘর ঘেরাও করে উনাকে পদত্যাগে বাধ্য করাতে ঠিক কোথায় "মর্যাদাহানী" ঘটেছে? উনাকে গালাগালি করা হয়েছে? চড় থাপ্পড়? জামা ধরে টানাটানি? জুতার মালা পরানো? উনি যে শিক্ষার্থীদের হকের টাকা মেরেছেন, ওদের ভবিষ্যৎ নষ্ট করেছেন, জীবনের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ সময়টা, যখন আমাদের ভবিষৎ জীবনের ফাউন্ডেশন তৈরী হয়, সেটা বরবাদ করে দিয়েছেন, এর বিনিময়ে সামান্য চিৎকার চ্যাচ্যামেচি শোনা কি খুব বেশিই হয়ে গেছে? উনার কি উচিত ছিল না কুকর্ম করার আগেই এর পরিণতি নিয়ে ভাবা?
আমার মা, শ্বশুর শ্বাশুড়ি সবাই শিক্ষকতা পেশার সাথে যুক্ত। তিনজনই প্রিন্সিপাল হিসেবেই রিটায়ার করেছেন। কিন্তু সেসব চোরদের জায়গায় উনাদের কল্পনা করতে পারছি না। কারন উনারা ওদের মতন দুর্নীতি করেন নাই। শিশুদের জীবন বরবাদ করে নাই। অভিভাবকরা উনাদের হাতে নিজেদের সবচেয়ে বড় সম্পদকে তুলে দিয়ে যে আস্থার পরিচয় দিয়েছেন, সেটার সাথে বেইমানি করেন নাই। উনাদের ছাত্রছাত্রীরা এখনও উনাদের ভালমন্দের খোঁজ নেয়। হঠাৎ দেখা হয়ে গেলে সম্মান করে।
যদি আমার মা বাবাও চোর হতো, তাহলে এই যে এখনকার চোরগুলিকে যে অপমানের মধ্য দিয়ে যেতে হচ্ছে, ওদের অবস্থানে বসিয়ে কল্পনা করে দুঃখ প্রকাশ করতে পারতাম।
আমি বরং আমাকে ওদের ভিক্টিমের অবস্থানে বসিয়ে দেখি আর আফসোস করি, আহারে! ওদের এত বড় ক্ষতি করে ফেলল!
শিক্ষকের কি তখনই মর্যাদা পাওয়া উচিত না যখন সে আসলেই শিক্ষকের (নৈতিক থেকে শুরু করে যাবতীয় শিক্ষার গুরু) ভূমিকা পালন করবে? যে চোর, ধান্দাবাজ, দুর্নীতিবাজ, ও কি সম্মানের দাবিদার?

আমার মনে হয় সোশ্যাল মিডিয়ার লোকজনের একটু জেনে বুঝে দুঃখিত হওয়া উচিত। জালিমের প্রতি সহানুভূতি দেখানোর আগে মজলুমের প্রতি জুলুমের মাত্রাটা দেখে নিন। হজ্বে গিয়ে শয়তানকে পাথর মারার সময়ে যদি আপনি বলেন "হজ্বের পক্ষে ছিলাম, কিন্তু একজন বুজুর্গকে পাথর মারার পক্ষে নই। দেশে আইন, আদালত আছে। জেল হোক। বেন্ধে রেখে পাথর মারা কেন?" এমন মন্তব্য করলে চলবে?

মন্তব্য ১০ টি রেটিং +১/-০

মন্তব্য (১০) মন্তব্য লিখুন

১| ৩০ শে আগস্ট, ২০২৪ রাত ১:০৪

প্রহররাজা বলেছেন: Click This Link

২| ৩০ শে আগস্ট, ২০২৪ রাত ১:২৬

কামাল১৮ বলেছেন: স্কুল কলেজে রাজনীতি ডুকে এই সর্বনাশ হয়েছে।ছাত্ররা উপদেষ্টা হয়ে সর্নাশের ষোলকলা পূর্ণ করেছে।

৩০ শে আগস্ট, ২০২৪ রাত ২:৫০

মঞ্জুর চৌধুরী বলেছেন: ভাই, স্বৈরাচারের এমন নির্লজ্জ দালালি একটু কম করলে হয় না?

৩| ৩০ শে আগস্ট, ২০২৪ রাত ২:০৯

প্রহররাজা বলেছেন: দেশে এখন ২ টা দল, আওয়ামী লীগ আর এন্টি আওয়ামী লীগ। এন্টি আওয়ামী লীগ হলো: সুশীল, নিরপেক্ষ, এনজিও মালিক, বিএনপি, জামাত, বাম, নারীবাদি, গান্জুট্টি, মেধাবী, জংলী -এসব মিলিয়ে।

৩০ শে আগস্ট, ২০২৪ রাত ২:৫১

মঞ্জুর চৌধুরী বলেছেন: আওয়ামীলীগ গত ১৭ বছরে যা করেছে, সাধারণ মানুষকে এন্টি আওয়ামীলীগ বানানোর পিছনে ওদের অবদানকে অস্বীকার করবেন কিভাবে?

৪| ৩০ শে আগস্ট, ২০২৪ ভোর ৬:৩৬

কামাল১৮ বলেছেন: ছোট্ট একটা মন্তব্য।তারো যথাযথ উত্তর দিতে সমস্যা।

৫| ৩০ শে আগস্ট, ২০২৪ সকাল ১০:১৫

প্রহররাজা বলেছেন: লেখক বলেছেন: আওয়ামীলীগ গত ১৭ বছরে যা করেছে, সাধারণ মানুষকে এন্টি আওয়ামীলীগ বানানোর পিছনে ওদের অবদানকে অস্বীকার করবেন কিভাবে?[/sb
১৭ বছরের আগে কোন আমলে মুক্ত ভাবে ছিলেন? এখনো কি ৫ অগাষ্টের পরের হামলা, পুড়িয়ে মারা নিয়ে কথা বলতে পারবেন? সেনা তত্তাবধানে ছাত্র-জনতা লেলিয়ে লুটপাট মারামারি এখনো চলছে।

৬| ৩০ শে আগস্ট, ২০২৪ সকাল ১০:১৯

প্রহররাজা বলেছেন: লেখক বলেছেন: আওয়ামীলীগ গত ১৭ বছরে যা করেছে, সাধারণ মানুষকে এন্টি আওয়ামীলীগ বানানোর পিছনে ওদের অবদানকে অস্বীকার করবেন কিভাবে?
লীগ কি আকাশ থেকে পড়সে? জনগন থেকে উঠে আসছে।যেমন দেশের মানুষ তেমন দেশের সরকার।

১৭ বছরের আগে কোন আমলে মুক্ত ভাবে ছিলেন? এখনো কি ৫ অগাষ্টের পরের হামলা, পুড়িয়ে মারা নিয়ে কথা বলতে পারবেন? সেনা তত্তাবধানে ছাত্র-জনতা লেলিয়ে লুটপাট মারামারি পদত্যাগ করানো এখনো চলছে।

৭| ৩০ শে আগস্ট, ২০২৪ সকাল ১০:৩৬

আলামিন১০৪ বলেছেন: বাংলাদেশের শিক্ষা ব্যবস্থার আমুল পরিবর্তন দরকার। দেশের সবচেয়ে মেধাবীরা যারা ভালো পড়াতে পারবে তাঁদেরই কেবল শিক্ষকতা পেশায় আসা উচিত। আমার স্কুল, কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয় জীবনের শিক্ষকদের জ্ঞান ও শিক্ষা দান পদ্ধতির দৈন্য দেখেছি।
শিক্ষকদের উচ্চ বেতন আর বিদেশে প্রশিক্ষণ দরকার। তা না পারলে অন্ততঃ সারাদেশের শিক্ষকদের মধ্য মধ্য হতে শেষ্ঠ শিক্ষকদের খুজে বের করে অনলাইন প্লাটফরমে সহায়ক পাঠদান কর্মসূচী চালু করা উচিত।

৮| ৩০ শে আগস্ট, ২০২৪ বিকাল ৫:১৭

সাড়ে চুয়াত্তর বলেছেন: এখনকার অনেক পুরুষ শিক্ষকের চরিত্রও খারাপ। এরা টিনএজ মেয়েদের (সেভেন, এইট, নাইন, টেনে পড়া মেয়ে) ব্যক্তিগত বিষয়ে নাক গলাতে চায়, গোয়েন্দাগিরি করতে চায়। একটা মেয়ে কেন আরেকটা ছেলের সাথে কথা বলল বা মেসেজ পাঠালো এগুলি নিয়ে মেয়েদেরকে ভয় দেখায়, ব্ল্যাক মেইল করে। একা রুমে ডেকে শাসায়। কারণ হল শিক্ষক নিজেই চরিত্রহীন। মেয়েগুলিকে ব্ল্যাক মেইল করে সুযোগ নিতে চায়। আমাদের সময়ে অনেক শিক্ষককে
আমরা ভয় পেলেও তারা নীতিবান ছিলেন, তাই শ্রদ্ধাও করতাম।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.