নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
আমি ঝন্ঝা, আমি ঘূর্ণি, আমি পথ-সমূখে যাহা পাই যাই চূর্ণি’। আমি নৃত্য-পাগল ছন্দ, আমি আপনার তালে নেচে যাই, আমি মুক্ত জীবনানন্দ। আমি হাম্বার, আমি ছায়ানট, আমি হিন্দোল, আমি চল-চঞ্চল, ঠমকি’ ছমকি’ পথে যেতে যেতে চকিতে চমকি’ ফিং দিয়া দিই তিন দোল; আমি চপলা-চপল হিন্দোল। আমি তাই করি ভাই যখন চাহে এ মন যা, করি শত্রুর সাথে গলাগলি, ধরি মৃত্যুর সাথে পান্জা, আমি উন্মাদ, আমি ঝন্ঝা! আমি মহামারী আমি ভীতি এ ধরিত্রীর; আমি শাসন-ত্রাসন, সংহার আমি উষ্ন চির-অধীর! বল বীর - আমি চির উন্নত শির!
আমার বাচ্চাদের স্কুলে বা আমাদের অফিসে "ক্রিসমাস" অনেকটাই সেকুলার স্টাইলে পালিত হয়। মানে এটি একটি উৎসব, যেখানে খাওয়া দাওয়া হবে, গিফট আদান প্রদান হবে, খেলাধুলা হবে, আনন্দ হবে। যেমনটা থ্যাংকস গিভিং বা অন্যান্য ন্যাশনাল হলিডে পালন করা হয়ে থাকে।
তবে ক্রিসমাসে আনন্দটাকে আরেকটু বাড়িয়ে তোলা হয়। যেমন এই বছর আমার বড় ছেলের স্কুল থেকে ওদেরকে বৃদ্ধাশ্রমে গিফট দিতে নিয়ে গিয়েছিল। অসহায় বৃদ্ধ বৃদ্ধারা, যাদের হয়তো কেউ খোঁজ নেয়না, একটি স্কুলের বাচ্চারা ওদের জন্য সুন্দর সুন্দর গিফট নিয়ে এসেছে, এতেই ওদের শেষ জীবনের কয়েকটা মুহূর্ত ঝলমল করে ওঠে।
ক্রিসমাসে গির্জায় প্রার্থনায় যাওয়াটা মূলত খ্রিস্টানদের ব্যাপার, আপনার ইচ্ছা হলে যেতে পারেন। ওরা মোটেই মাইন্ড করবে না।
স্বাভাবিক কারণেই ক্রিসমাস আমার বাচ্চাদের কাছেও একটি উৎসবের দিন। কারন ওদের স্কুল ছুটি থাকে, বন্ধুবান্ধবরাও ফুর্তিতে থাকে, বাজারে, অফিসে সব জায়গায় উৎসব উৎসব একটা ভাব। এইদিনে ওদের মন খারাপ করে থাকারতো কোন কারন নেই।
হ্যা, মুসলিম হিসেবে আমাদের একটা সীমাবদ্ধতা আছে। যদিও "জিসাস ক্রাইস্ট" আমাদেরও নবী, আমরাও উনাকে ভালবাসি, ইনফ্যাক্ট, উনার নাম উচ্চারণ করলে "সালাম" (আলাইহিসালাম) পেশ না করলে আমাদের গুনাহ হয়। উনার মা ম্যারিকে (মরিয়ম) আমাদের ধর্ম অনুযায়ী ইতিহাসের সবচেয়ে পবিত্রতম নারীর সম্মান দেয়া হয়, কুরআনে আস্ত একটা চ্যাপ্টারই আছে তাঁর নামে। এই সম্মান আমাদের প্রিয়তম নবীজির (সঃ) মা আমিনারও নাই।
সবই ঠিক আছে, কিন্তু "ক্রিসমাস" উৎসবে আমাদের সীমারেখাটা অবশ্যই মাথায় রাখতে হবে।
তাহলে এই "উৎসব" আমরা কিভাবে পালন করবো যাতে আমাদের বাচ্চাদেরও মন ভাল থাকে, এবং ইসলামেরও নিয়মের বরখেলাপ না হয়?
আল্লাহ নিজেই সূরা মায়িদাতে নির্দেশ দিয়েছেন আমাদের আহলে কিতাবী প্রতিবেশীদের (ইহুদি ও খ্রিষ্টান) সাথে সদ্ব্যবহার করতে। নিজের বাড়িতে ওদের নিমন্ত্রণ করতে, ওরা নিমন্ত্রণ করলে যেতে, ওদের সাথে এক টেবিলে বসে খেতে। ওদের খাদ্য (কোশার মিট) আমাদের জন্য হালাল।
আল্লাহ নির্দেশ দিয়েছেন, অভুক্তের জন্য খাবারের ব্যবস্থা করতে। মানুষটি মুসলিম হলেতো কথাই নাই, অমুসলিম হলেও খাওয়াতে হবে। যদিও আফসোসের সাথে বলতে হচ্ছে আমরা আল্লাহর এই নির্দেশনাকে আমলেই নেই না, অথচ এই আয়াতটি নাজেল হয়েছিল যখন সালাতের, রোজার, হজ্বের, পর্দার নির্দেশও নাজেল হয়নি। ক্ষুধা কারোর জাত ধর্ম বয়স বিবেচনা করে আসে না, এবং আল্লাহ কঠিন নির্দেশনা দিয়েছেন সামর্থ্য থাকলে অবশ্যই আমরা যেন ওদের খাবারের ব্যবস্থা করি, এতিম শিশুদের দেখভাল করি।
আমাদের সমাজে প্রচলন আছে, খাওয়া শেষে যা বাঁচবে, যাকে আমরা উচ্ছিষ্ট বলি, সেটা ফেলে দেয়ার পরিবর্তে গরিব ফকির মিসকীনকে দান করি। বিষয়টা আসলে এমন হওয়ার কথা ছিল যে ওদের খাওয়ানোর উদ্দেশ্যেই ফ্রেশ খাবার তৈরী করতে হবে, এমন খাবার যা আমরা নিজেরা খাই বা তারচেয়েও ভাল কিছু। হয়তো আমি কোলেস্টেরলের জন্য গরুর মাংস খাইনা, কিন্তু ওদের জন্য গোমাংস পরিবেশন করতেই পারি, ওদেরতো সেই সমস্যা নেই।
কথা প্রসঙ্গে একটা মজার অভিজ্ঞতার কথা বলি।
সাউথ ডালাসের মসজিদটা নিতান্তই গরিব মসজিদ, তবু হোমলেসদের (ওরা বলে "প্রতিবেশী") জন্য ওদের আয়োজন থাকে। সপ্তাহে একদিন ভরপেট খাওয়ানোর চেষ্টা করে।
এদিকে আমাদের মসজিদ, মানে ইয়াসির কাদির কারনে দুনিয়াখ্যাত EPIC (East Plano Islamic Center) মসজিদ হচ্ছে পয়সাওয়ালাদের মসজিদ। আলহামদুলিল্লাহ! ফান্ড রেইজিংয়ে টাকা চাইতেই লাখ লাখ ডলার এসে হাজির হয়। Epic তখন নিজের দায়িত্ব পালন করতে আশেপাশের অন্যান্য মসজিদকেও সাহায্য করে থাকে।
তা ওরা একবার সাউথ ডালাসের মসজিদে সাহায্য করলো। হোমলেসদের একবেলা খাওয়ানো।
বলতে না বলতেই ট্রের পর ট্রে বিরিয়ানি চলে গেল সাউথ ডালাস মসজিদে। কারন আরব বা উপমহাদেশীয় মুসলিম - আমাদের কাছে ডেলিকেসি হচ্ছে বিরিয়ানি।
এদিকে হোমলেসদের সবাই আমেরিকান, ওরা বার্গার, পিৎজা, ফ্রাইড চিকেন খাওয়া লোকজন। ওদের জন্য ডেলিকেসি হচ্ছে স্টেক। বিরিয়ানি ওদের পেটে হজম হয়না।
দেখা গেল বেচারারা পোলাও ঝেড়েঝেড়ে শুধু মাংস খাচ্ছে। প্রচুর পোলাও সেদিন নষ্ট হয়েছিল। সাউথ ডালাসের লোকজন লজ্জায় এপিকের লোকজনকে বলেও না, কারন এত শখ করে দিয়েছে! আবার এত খাবার ফেলতে ওদেরও মন খারাপ হয়।
পরে আমি গিয়ে এপিকের ট্রেজারারকে বলেছিলাম ওদেরকে বিরিয়ানি না খাইয়ে সেটা খাওয়াতে যেটা ওরা খায়।
কাজেই সবসময়ে আমার নিজের পছন্দের খাবারই যে হতে হবে, এমনও না, ওদের নিজেদের পছন্দের খাবার হওয়াটাই বেশি জরুরি।
হ্যা, আমি তাই বলে মদ, শূকর ইত্যাদি দিয়ে দিব না। আমাকে হালাল খাবারই সার্ভ করতে হবে।
তাহলে কুরআনের নির্দেশনা অনুযায়ী এই দাঁড়ালো যে, আমাদের প্রতিবেশীরা যেন নিরাপদে ও আনন্দে তাঁদের ধর্মীয় উৎসব পালন করতে পারে, আমি আমার সামর্থ্যানুযায়ী সেটা নিশ্চিত করবো। আমি বাড়িতে ক্রিসমাস ট্রি সাজালাম কিনা (অনেক খ্রিস্টানই সাজায় না, এ নিয়ে পরে লিখবো একদিন ইন শা আল্লাহ), আমার বাড়িতে আলোকসজ্জা করলাম কিনা, "মেরি ক্রিসমাস" বললাম নাকি "হ্যাপি হলিডেজ" বললাম - তাতে ওদের কিছুই আসে যায় না।
কিন্তু, ওদের অভুক্ত পরিবারের পাতে খাবার তুলে দিলে, ওদের গরিব শিশুদের খেলনা বিতরণ করলে, ওদের সাথে এক টেবিলে বসে খাওয়া দাওয়া করলে - ওদের মনটা খুশিতে ভরে উঠবে। সেটাই ওদের জন্য আসল আনন্দ।
আর ওদের আনন্দ পেতে দেখলে আমাদের শিশুরাও আনন্দিত হবে, বুঝবে ইসলাম কি, মুসলিম কারা এবং নিজের ধর্ম নিয়ে সে গর্বিত হবে।
২| ২৪ শে ডিসেম্বর, ২০২৪ সকাল ১০:৫৭
রাজীব নুর বলেছেন: একজন লেখককে হতে হয় নিরপেক্ষ।
আপনি নিরপেক্ষ নন।
©somewhere in net ltd.
১| ২৪ শে ডিসেম্বর, ২০২৪ সকাল ১০:২৫
কালো যাদুকর বলেছেন: পরলাম। মুল কথা হল প্রতিবেশীকে সাহায্য করা।
আমাদের মসজিদের ইমাম বলেছেন "মেরি ফক্রিসমাস " বলা যাবে না। গিফট আদান প্রদান করা যাবে না। কাজেই এগুলো না করেও প্রতিবেশীদের সাথে ভাল সম্পর্ক বজায় রাখার চেষ্টা করছি আপাতত।