![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
আমি ঝন্ঝা, আমি ঘূর্ণি, আমি পথ-সমূখে যাহা পাই যাই চূর্ণি’। আমি নৃত্য-পাগল ছন্দ, আমি আপনার তালে নেচে যাই, আমি মুক্ত জীবনানন্দ। আমি হাম্বার, আমি ছায়ানট, আমি হিন্দোল, আমি চল-চঞ্চল, ঠমকি’ ছমকি’ পথে যেতে যেতে চকিতে চমকি’ ফিং দিয়া দিই তিন দোল; আমি চপলা-চপল হিন্দোল। আমি তাই করি ভাই যখন চাহে এ মন যা, করি শত্রুর সাথে গলাগলি, ধরি মৃত্যুর সাথে পান্জা, আমি উন্মাদ, আমি ঝন্ঝা! আমি মহামারী আমি ভীতি এ ধরিত্রীর; আমি শাসন-ত্রাসন, সংহার আমি উষ্ন চির-অধীর! বল বীর - আমি চির উন্নত শির!
স্থানীয় এক মেলায় বইয়ের স্টল দেয়া হয়েছে। লেখকদের মেলা বলা চলে। নিজেদের বই নিয়ে আমরা আড্ডা দিচ্ছি। সবাই পন্ডিত, বিজ্ঞ, ভারিক্কি সব আলাপ আলোচনা। আমিই বেচারা মূর্খ মানব।
সবার বইয়ের পসরা সাজানো। আমার মাত্র দুইকপি বাকি আছে। তাও এগুলো আগে থেকেই বিক্রি হয়ে গেছে। উনারা এসে নিয়ে যাবেন। মাছিও নাই যে মাছি তাড়িয়ে সময় কাটাবো।
তখন এক ভাইয়ের সাথে পরিচয় হলো। আমি নবীজির (সঃ) জীবনী লিখেছি শুনে তিনি বেশ অবাক হলেন। গায়ে জোব্বা নাই, চুল ছোট করে কাটা, গাল ভর্তি সুন্নতি দাড়ি অনুপস্থিত, এবং চোখে ডিজাইনার সানগ্লাস। আমাকে দেখে কোনমতেই "মাওলানা" মনে হয়না, তাই ধরেই নিয়েছেন আমি মন যা চায় তাই হয়তো লিখে ফেলেছি।
যখন বললাম বইয়ে প্রতিটা প্রকাশিত লাইনের পেছনে আমার বিস্তর গবেষণা আছে, তখন প্রশ্ন করলেন "কত বছর গবেষণা করেছেন?"
জন্ম থেকেই নবীর জীবনী শুনে/পড়ে এসেছি। লেখার জন্য অফিসিয়ালি আট-নয় বছর ঘাটাঘাটি করেছি।
তারপরে তিনি জানালেন, তিনিও বহু বই পড়েছেন। তিনি একজন ইসলামী "বিশিষ্ট চিন্তাবিদ।"
ভেবে দেখলাম, যে চিন্তা করে, তাকেইতো চিন্তাবিদ বলে। আমি যেমন চিন্তা করেও কি নিয়ে চিন্তা করা যায় সেটাই বের করতে পারিনা, তাই আজও বিশিষ্ট চিন্তাবিদ হতে পারলাম না।
যাক, একজন কাউকে পেলাম যার সাথে কিছুক্ষন কথা বলতে পারবো।
তিনি আমার বই তুলে নিলেন। প্রচ্ছদ, বাঁধাই ইত্যাদির প্রশংসা করলেন। তারপরে ভিতরের কন্টেন্ট নিয়ে আলোচনা শুরু করলেন।
আমি বললাম, আমি দেখানোর চেষ্টা করেছি নবীজি (সঃ) কতটা "মানব" ছিলেন, তাঁকে নিয়ে আমাদের মুসলিম সমাজে যত ভ্রান্ত ধারণা আছে, যেমন তিনি "নূরের তৈরী", "তাঁর ছায়া মাটিতে পরতো না" - ইত্যাদি ইত্যাদি ......"
চিন্তাবিদ আমাকে কথা এগোতে না দিয়ে থামিয়ে দিয়ে বললেন, "আপনি কি লিখেছেন? তিনি মাটি নাকি নূরের তৈরী?"
"অবশ্যই মাটির তৈরী। রক্ত মাংসের "মানুষ"।"
তিনি আমার বুকে আঙ্গুল দিয়ে বললেন, "আপনার হার্ট কি বলে?"
আমি বললাম, "আমার হার্ট মাটির তৈরী বলে বলেই লিখেছি।"
বুঝলাম এই বিশিষ্ট চিন্তাবিদ চিন্তা ভাবনা করে বিশ্বাস করেন যে আমাদের নবী (সঃ) নূরের তৈরী, তাঁর ছায়া মাটিতে পড়তো না, তাঁর গায়ে মশা মাছি ইত্যাদি বসত না, তাঁর মাথার উপর সর্বদা মেঘ ছায়া দিত ইত্যাদি ইত্যাদি। তাই এরা আমার বই/যুক্তি/প্রমান ইত্যাদিকে বাতিল বলে গণ্যতো করেনই, আমাকে "রাসূলকে (সঃ) অপমান করা গোস্তাখ" হিসেবেও বিবেচনা করেন।
তিনি আমার বই হাতে নিয়ে কথা বলছিলেন, দুই খন্ডই, বুঝা যাচ্ছিল তিনি আমার বই কিনতে চান। সংগ্রহে রাখার মতই বই।
কথোপকথনের এক পর্যায়ে দেখলাম তিনি বই দুইটি নামিয়ে যথাস্থানে রেখে দিয়েছেন। ওসব ফিতনা ছড়ানো বই কিনতে তিনি আগ্রহী নন। ওসবে তাঁর ঈমান নষ্ট হয়ে যেতে পারে।
যে কারনে লেখাটা শুরু করেছি, তা হচ্ছে, আমাদের দেশে এমন ঘটনা খুবই কমন। বিশ্বব্যাপী মুসলিমদের স্পষ্ট দুইটি ভাগ আছে, শিয়া এবং সুন্নি। সুন্নিদের মধ্যেও নানান ভাগ, যারা বিশ্বাস করে নবী মাটির তৈরী, আমাদের মতোই রক্তমাংসের মানুষ, যার খিধা লাগতো, খাবার খেতেন, তৃষ্ণা পেলে পানি খেতেন, যুদ্ধে আহত হতেন, পাথরের আঘাতে শরীর ক্ষত হতো, শরীরে মরুভূমির রোদ পড়লে তাঁরও কষ্ট হতো ইত্যাদি ইত্যাদি।
আরেক দল আলিফ লায়লায় বিশ্বাসী। তিনি নূরের তৈরী, তাঁর শরীরে রোদ পড়তো না, একটি মেঘ তাঁকে ছায়া দিয়ে যেত, তাঁর ছায়া মাটিতে পড়তো না, তাঁর শরীরে মশা মাছি বসতো না ইত্যাদি ইত্যাদি।
প্রথম পক্ষ মনে করে দ্বিতীয় পক্ষ "ব্ল্যাসফেমি" করছে, আর দ্বিতীয় পক্ষ প্রথম পক্ষকে মনে করে "গোস্তাখে রাসূল!" আমাদের দেশে "আলেম" পর্যায়ে এ নিয়ে কাদা ছুড়াছুড়ির ঘটনা ঘটে।
এই বিষয়টা আমি আমেরিকান খ্রিষ্টানদের মধ্যেও দেখেছি।
কিছুদিন আগে ক্যাথলিক পোপ মারা গেছেন। আমাদের ধর্মে যেমন "খলিফা", ক্যাথলিকদের কাছে পোপের সম্মান তাঁর চেয়েও বেশি।
খ্রিষ্টীয় জাতি ছাড়াও বিশ্বব্যাপী শোক বয়ে গেল। আরব বিশ্ব থেকেও শোক জানানো হলো। তিনি ছিলেন জেনুইন ভদ্রলোক। মানবতার পূজারী। বিশ্বব্যাপী এমনকি ফিলিস্তিনি নিপীড়িতের পাশে স্পষ্ট অবস্থান নিতে দ্বিতীয়বার ভাবেননি। ইজরায়েলকে বহুবার অনাচার, অন্যায়, অত্যাচার বন্ধের আহ্বান করেছেন।
অন্যদিকে উনার মৃত্যুর পোস্টের নিচে বহু আমেরিকান খ্রিষ্টানকে দেখলাম কমেন্ট করতে "জাহান্নামে যা!" "দাজ্জালের চর!" "ফেতনাবাজ!" মানে, হুবহু এইসব কমেন্ট না, তবে এইসব কমেন্টের খ্রিষ্টীয় ভার্সন। কেউ কেউ আরও বড় খ্রিষ্টান স্কলার, বাইবেল কোট করে প্রমান করে দিচ্ছে লোকটা কত বড় "খ্রিষ্টান-মুনাফেক" ছিলেন, তিনি কিভাবে বাইবেলের বিপরীতে গিয়ে কাজ করেছেন। তিনি পোপ হওয়ার যোগ্যই ছিলেন না। ইত্যাদি ইত্যাদি।
শুধু মুসলিমদের মধ্যেই না, এমন ধর্মীয় চেতনায় চেতিত ধার্মিক সব ধর্মের ভিতরেই আছে। ধর্মীয় গোড়ামি আর এক্সট্রিমিজম এদেরকে রীতিমতন অমানুষের পর্যায়ে নামিয়ে আনে।
২| ০১ লা মে, ২০২৫ রাত ১২:৩৯
এইচ এন নার্গিস বলেছেন: সত্যি কথা বলেছেন । দুই শ্রেণির মানুষ আছে ,এক শ্রেণী বিজ্ঞ্যান সম্মত যুক্তি দিয়ে কথা বলে যুক্তি সম্পন্ন এবং বিশ্বাস করতে বা শুনতে ভালো লাগে আর এক শ্রেণীর মানুষ আছে যারা গোঁজামিল দিয়ে যুক্তি ছাড়া এমন কথা বার্তা বলে তখন অনেক মানুষ কনফিউজ হয়ে যায় । ভালো লিখেছেন ।
©somewhere in net ltd.
১|
০১ লা মে, ২০২৫ রাত ১২:১৬
আইজ্যাক আসিমভ্ বলেছেন: আপনিও তো কম চেতিত নন। সুন্দর একটা বই লিখলেন সেটা নিয়ে কোন আলোচনা না করে কে কি বললো সেটা নিয়ে মাথা ঘামিয়ে মুসলিম বিশ্ব থেকে খ্রীষ্টধর্ম পর্যন্ত রেখাপাত করে গেলেন।