নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

মঞ্জুর চৌধুরী

আমি ঝন্ঝা, আমি ঘূর্ণি, আমি পথ-সমূখে যাহা পাই যাই চূর্ণি’। আমি নৃত্য-পাগল ছন্দ, আমি আপনার তালে নেচে যাই, আমি মুক্ত জীবনানন্দ। আমি হাম্বার, আমি ছায়ানট, আমি হিন্দোল, আমি চল-চঞ্চল, ঠমকি’ ছমকি’ পথে যেতে যেতে চকিতে চমকি’ ফিং দিয়া দিই তিন দোল; আমি চপলা-চপল হিন্দোল। আমি তাই করি ভাই যখন চাহে এ মন যা, করি শত্রুর সাথে গলাগলি, ধরি মৃত্যুর সাথে পান্জা, আমি উন্মাদ, আমি ঝন্ঝা! আমি মহামারী আমি ভীতি এ ধরিত্রীর; আমি শাসন-ত্রাসন, সংহার আমি উষ্ন চির-অধীর! বল বীর - আমি চির উন্নত শির!

মঞ্জুর চৌধুরী › বিস্তারিত পোস্টঃ

ফেমিনিজম ও গোমুত্র

২১ শে মে, ২০২৫ রাত ২:২৯

কয়েকবছর আগে ইরানে একবার মেয়েদের হিজাব পরা চুল দেখানো ইত্যাদি অধিকার নিয়ে চরম আন্দোলন হয়েছিল। বিশ্বব্যাপী ছড়িয়ে পড়েছিল। হিজাবি মেয়েরাও পথে নেমে বলছিল "আমি হিজাব পরবো নাকি পরবো না সেটা আমার নিজের সিদ্ধান্ত হবে। তুমি জোর করার কে?"
ইসলামেও বিষয়টা সেভাবেই এসেছে। আপনি যা করবেন, সেটা ঈমান, নামাজ, রোজা, হজ্ব, যাকাত, সদকা, পোষাক, খাওয়াদাওয়া, প্রেম ভালবাসা ইত্যাদি যায় হোক, সবই মন থেকে করবেন। নাহলে সেটার যে মূল উদ্দেশ্য ও ফায়দা, হাসিল হবেনা। ইসলামেও ধর্মের ব্যাপারে জোর করতে নিষেধ করা হয়েছে। কারন জোর করলে মানুষ ধার্মিক হয়না, তবে মুনাফেক হয় এইটা নিশ্চিত। নবীজির (সঃ) মক্কার জীবনে ভীষণ অত্যাচার সহ্য করেই মুসলিমরা টিকে ছিলেন, তাই তাঁরা একেকজন কিংবদন্তি হয়ে আছেন। আর মদিনার জীবনে যখন মুসলিমরা রাষ্ট্র ক্ষমতায়, তখন অনেকেই মনের ইচ্ছার বিরুদ্ধে গিয়ে "মুসলিম" হয়েছিল, কিন্তু আমরা জানি ওরা পদে পদে মুসলিমদের বিরুদ্ধেই ষড়যন্ত্রে লিপ্ত ছিল। মদীনাতেই মুনাফেক সম্প্রদায়ের আবির্ভাব ঘটে।
তা ইরানের সেই আন্দোলনের একটা পর্যায়ে দেখা গেল একদল মহিলা কাপড় খুলে ন্যাংটা হয়ে প্রতিবাদ শুরু করে। এতে যেসব ভদ্রমহিলারা জেনুইনলি আন্দোলনে ছিলেন, তাঁরা ধাক্কা খেলেন। তাঁরা বলতে শুরু করেন "এতো লিমিট ক্রস হয়ে গেল! আমি এই দলের সাথে নেই।"
আন্দোলনটাও একটা সময়ে গতি হারিয়ে মুখ থুবড়ে পড়ে।
যেকোন সংগ্রামের ক্ষেত্রেই দেখবেন একটা সুন্দর ন্যায্য দাবি আদায়ের আন্দোলন হিসেবে শুরু হয়। তারপরে কিছু ফাতরা পোলাপান সেটাতে যুক্ত হয়। এক মন দুধ নষ্ট করতে যেমন এক ফোঁটা গোমূত্রই যথেষ্ট হয়, এসব পোলাপান হচ্ছে সেইসব গোমূত্র। এরা এসেই সব নষ্ট করতে।
আমাদের শাহবাগ আন্দোলনের কথাই ধরেন।
শুরুতে রাজাকারের ফাঁসির দাবিতে আন্দোলন ছিল সেটা। সব ধর্মের, সব শ্রেণীর মানুষ সেখানে যুক্ত হলেন। দেশসেরা শিল্পীরা এগিয়ে এলেন, এগিয়ে এলেন ক্রিকেটাররাও। গান বাজনার পাশাপাশি মাওলানারা কুরআন তেলাওয়াত করতেন, গীতা পাঠ হতো, ত্রিপিটক, বাইবেলও পাঠ হতো। যে লোকটা আওয়ামীলীগকে দেখতে পারতো না, সেও শাহবাগে গিয়ে উপলব্ধি করতো যে "জয় বাংলা" আমাদের মুক্তিযুদ্ধের স্লোগান, সেও গলা ফাটিয়ে বলতো "জয় বাংলা!"
এরপরেই কিছু গোমূত্র যুক্ত হলো। মানে ওরা শুরু থেকেই ছিল, কিন্তু নিজেদের কুৎসিত রূপটা বের করতে শুরু করে। ধীরে ধীরে ব্যাপারটা এমন হয়ে দাঁড়ালো যে আপনি মুসলিম হলে শাহবাগ সাপোর্ট করতে পারবেন না। রাজাকারের ফাঁসি দাবি করলে আপনাকে নাস্তিক হতে হবে।
আমার আল্লাহ, আমার কুরআন, আমার নবীকে (সঃ) নিয়ে যা তা বলবে, কিছু বলতে পারবো না। আমি তাহলে "রাজাকার" "ছাগু" হয়ে যাব।
মোল্লারাও এটারই ফায়দা তুললো। এটাকেই নিজেদের পক্ষে কাজে লাগিয়ে প্রচার করলো শাহবাগিরা আসলে ইসলাম ধর্মের বিরোধী।
এখন সাধারণ মানুষের ধারণা শাহবাগী মানেই "নাস্তিক।" এটার যে মূল উদ্দেশ্য ছিল, রাজাকারদের উপযুক্ত বিচার, সেটাই চাপা পড়ে গেল।
জুলাই আন্দোলনের পরবর্তীতেও আমরা তেমন দেখেছি। ফ্যাসিস্ট ফ্যাসিস্ট বলে ফ্যাসিস্টকে বিদায় করার পরে কিছু আগাছা এখন নিজেরাই ফ্যাসিজম শুরু করে দিয়েছে, রাজনৈতিক শো ডাউন শুরু করে দিয়েছে, শোনা যাচ্ছে তদবির-দুর্নীতি ইত্যাদি ঠিকই বহাল আছে, শুধু লেনেওয়ালা পাল্টেছে।

তেমনই বিশ্বজুড়ে ফেমিনিজম ইস্যু নিয়ে আন্দোলনেও যখন তখন গোমূত্র ঢুকে পড়ছে করছে। "ফেমিনিজমের" মূল বিষয় কি? আমি যতদূর জানি তা হচ্ছে, "একটা সমাজে একটি ছেলে শুধু ছেলে হিসেবে যেসব সুবিধা ভোগ করতে পারে, একটি মেয়ে যেন মেয়ে হিসেবেও সেইসব সুবিধা ভোগ করতে পারে।" That's it, খুবই সহজ ও সরল দাবি।
পরিবারে আমি ছেলে হিসেবে কেবল মুরগির রান খাব, আর আমার বোন গীলা কলিজি খেয়ে বড় হবে, তা চলতে পারে না।
আমি বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ালেখা করতে পারলে আমার বোনও যেন পারে। আমি স্কলারশিপ পেয়ে যদি বড় কোন বিশ্ববিদ্যালয়ে যেতে পারি, একটা মেয়েরও সেই অধিকার যেন থাকে। সমাজের দায়িত্ব ওর জন্য শিক্ষার উপযুক্ত ও নিরাপদ পরিবেশ তৈরী করা।
আমি যদি চাকরিতে কোন এক বিশেষ পদে একশো টাকা বেতন পাই, তাহলে একটি মেয়েও যেন আমার সমান যোগ্য হলে সেই একই পদে একশো টাকা বেতন পায়। মেয়ে বলে যেন ওকে কম বেতন না দেয়া হয়।
বাংলাদেশের একদল "সেলিব্রেটি" ইডিয়টকে ফেসবুকে আলাপ পারতে দেখেছিলাম যেখানে বেয়াক্কেলগুলি মেয়েদের প্রেগন্যান্সিকে "স্ক্যাম" বলেছিল। যতদূর মনে পড়ে ওদের কথাবার্তা ছিল এমন যে "একটা চাকরি নাও, তারপরে প্রেগন্যান্ট হয়ে যাও, তারপরে ঘরে বসে ছয়মাস বেতন পাও!"
এগুলির শিক্ষাগত যোগ্যতা কি জানতে আগ্রহী। মূর্খগুলির এমন ভাব ছিল যেন প্রেগন্যান্সি খুবই আরামের বিষয়। বিন্দুমাত্র শারীরিক যন্ত্রনা হয়না। এই ছাগলগুলিকে পেলে জিজ্ঞেস করতাম "কোন পুরুষ যদি ঠ্যাং ভেঙ্গে হসপিটালে বসে শর্ট বা লংটার্ম ডিজেবিলিটি ক্লেইম করে, তখন কি সেটা "স্ক্যাম" হবে?"
এদের "গুরুত্বপূর্ণ" আলোচনা পাবলিক শোনে। তারপরে কান্নাকাটি করে, "আমরা জাতি হিসেবে কেনু এত পিছিয়ে আছি? হুয়াই?"
উত্তর হচ্ছে দেশের আসল বুদ্ধিজীবীদের ফেলে তোমরা ফেসবুকার ইউটিউবারদের সেলিব্রেটি বানিয়ে ফলো করছো।

তো যা বলছিলাম, নারীদের প্রতি বৈষম্য পৃথিবীর সব দেশে সব সমাজেই চলছে। এমনকি লাউড মাউথ আমেরিকাতেও এই বৈষম্য চোখে পড়ার মতন। ডোনাল্ড ট্রাম্পের মতন একটা কনভিক্টেড আসামি দুই দুইবার প্রেসিডেন্ট হয়ে গেল, প্রধান কারন ছিল ওর বিপরীতে দুই দুইটা নারী ক্যান্ডিডেট ছিল। আমেরিকা এখনও মহিলা প্রেসিডেন্টের জন্য তৈরী না।
আমেরিকায় নারীদের ভোটাধিকার, সম্পত্তির উত্তরাধিকার ইত্যাদি বহু কিছু বহু আন্দোলন ও পরিশ্রমের ফলে এসেছে। তবু এদের সমাজে এখনও বহু পুরুষ আছে যারা মহিলা বসের অধীনে কাজ করতে চায় না। এমন ঘটনা প্রায়ই শোনা যায়, মহিলা পাইলট প্লেন চালাচ্ছে শুনে যাত্রীরা ফ্লাইট ক্যান্সেল করে পরের কোন ফ্লাইট নিয়েছে। আমাদের দেশে বহু বছর নারী প্রধানমন্ত্রী থাকলেও সামাজিক অবস্থা এখনও বহুদূর যাওয়ার আছে। পারিবারিক ও সামাজিকভাবে সঠিক শিক্ষা, সমাজে বিভিন্ন ক্ষেত্রে বিভিন্ন নারীর সফলতা, পারিবারিক পর্যায়ে মেয়েদের অধিকার নিশ্চিতকরণ যাতে সামাজিক পর্যায়ে আপনাতেই সেটা নিশ্চিত হয় ইত্যাদি সবকিছুই এই অধিকার প্রতিষ্ঠায় ভূমিকা রাখবে। যা রাখবে না তা হচ্ছে উগ্র সাজ আর পোশাকে পথে নেমে বেহুদা গলা ফাটিয়ে চিল্লাফাল্লা করলে। হয়তো সমাজের ইতর শ্রেণীর পুরুষদের বিরুদ্ধে দাঁড়াতেই এমন drastic পদক্ষেপ, কিন্তু এর ফলে সমাজের বহু নারীই নিজেকে সেসব মেয়েদের থেকে আলাদা করে ফেলবে। ফেসবুকে, সোশ্যাল মিডিয়ায় লেখালেখি করবে যে "এরা আমাকে রিপ্রেজেন্ট করে না। আমি ওদের অন্তর্ভুক্ত নই!"

মেয়েদের "অধিকার" কিভাবে প্রতিষ্ঠিত হবে জানেন? যে যার অবস্থান থেকে সফল হয়ে দেখান। আপনি যদি স্কুলের ছাত্রী হন, তাহলে এমনভাবে পড়ুন যাতে আপনার চেয়ে ভাল রেজাল্ট কেউ করতে না পারে। আপনি যদি খেলোয়াড় হন, তাহলে এমনভাবে খেলুন যেন পুরুষ খেলোয়াড়রাও আপনার কাছে হারার ভয়ে খেলতে ভয় পায়। চাকরির ক্ষেত্রে এমনভাবে সফল হন যেন লোকে বলার সুযোগ না পায় "ওতো বসের সাথে শুয়ে শুয়ে প্রমোশন পেয়েছে।"
আর যদি গৃহিনী হয়ে থাকেন, ঘর সংসার করেন, তাহলে সন্তানদের এমনভাবে মানুষ করুন যাতে লোকে আপনাকে "রত্নগর্ভা" বলে।
রাস্তায় নেমে কাপড় খুলে ন্যাংটা হলে সাময়িক এটেনশন হয়তো পাবেন, সাময়িক ভাইরাল হবেন, কিন্তু লোকে দুইদিন পরে আপনাকে চিনবে না।
ইরানের আন্দোলনে উন্মুক্তবক্ষা একটা নারীকেও পাবলিক মনে রাখেনি, কিন্তু নাসার আকাশচারী সুনিতা উইলিয়ামসকে ঠিকই গোটা বিশ্ব চিনে। হুমায়ূন আহমেদ দেশব্যাপী যতটা বিখ্যাত, তাঁর "ক্লাস টু পাশ" মা আয়েশা ফয়েজও ততটাই বিখ্যাত। তাঁর মৃত্যুতে পত্রিকার শিরোনাম এটা ছিল না যে "লেখক হুমায়ূন আহমেদ, জাফর ইকবাল ও আহসান হাবিবের মা ইন্তেকাল করেছেন।" তাঁর মৃত্যু সংবাদ তাঁর নামেই ছাপা হয়েছিল। এইটাকে বলে সফলতা। উনাকে রাস্তায় নেমে চিল্লাফাল্লা করতে হয়নি।
দুধকে পবিত্র রাখতে যেমন নিশ্চিত করতে হয় এতে গোমূত্রের একটা ফোঁটাও যেন না পড়ে, যেকোন আন্দোলনের ক্ষেত্রেও তাই।

মন্তব্য ৩ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (৩) মন্তব্য লিখুন

১| ২১ শে মে, ২০২৫ রাত ৩:৩৩

এইচ এন নার্গিস বলেছেন: ভালো লিখেছেন ।

২১ শে মে, ২০২৫ ভোর ৪:০৪

মঞ্জুর চৌধুরী বলেছেন: ধন্যবাদ

২| ২১ শে মে, ২০২৫ ভোর ৫:১২

শ্রাবণধারা বলেছেন: আসলে কী জানেন, ফেমিনিজম শব্দটার পাশে "গোমূত্র" না লিখে আপনার নামের পাশেই "গোমূত্র" লিখলে সেটা অনেক বেশি অর্থবহ এবং মানানসই হতো।

ফেমিনিজম বিষয়টা কী, সেটা জানতে চাইলে অ-আ-ক-খ হিসেবে বেগম রোকেয়ার রচনাবলী দিয়ে শুরু করতে পারেন। অনলাইনেই পাবেন। তাঁর লেখা মতিচুর গ্রন্থের “স্ত্রীজাতির অবনতি” প্রবন্ধটি দিয়ে শুরু করুন। পাশাপাশি, পাশ্চাত্ত্যে নারীদের অধিকার আদায়ের দাবিগুলো কেমন ছিল তা জানতে গুগলে একটু খোঁজ করুন।

এইগুলো জানার পরে না হয়, বাংলাদেশের একজন নারী কীভাবে সুনীতা উইলিয়ামস হতে পারে এ বিষয়ে নিয়ে একটা পোস্ট দিলেন।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.