নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

\"নিশ্চয়ই তিনি (হযরত মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) আল্লাহর রাসূল এবং শেষনবী।\" - সূরা আহযাব : ৪০

NurunNabi

লিখক শিক্ষাবিদ ও গবেষক

NurunNabi › বিস্তারিত পোস্টঃ

নুযূলে ঈসা মাসীহ ও খতমে নবুওত

১৬ ই সেপ্টেম্বর, ২০১৭ রাত ১০:১৫

বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহিম।

কেয়ামতের পূর্বে শেষ যুগে মাসীহ ঈসা (আ) যদি আবার আগমন করেন তাহলে নবী মুহাম্মদ (সা) শেষনবী কিভাবে থাকেন? নবুওতের দাবিদার মির্যায়ী জামাতের কথিত নবী গোলাম আহমদ কাদিয়ানির অনুসারিরা প্রায়শই এধরণের আপত্তি উঠায়। এতে কম শিক্ষিত মানুষ ধাঁধাঁয় পড়ে যায়। দয়া করে এর জবাব দেবেন!

জবাব : আপনার প্রশ্নটির জবাব মির্যায়ীদের প্রথম অবস্থা থেকেই উলামায়ে ইসলাম দলিল এবং জ্ঞানগর্ভ যুক্তি দ্বারা দিয়ে আসছেন। যাদের চোখ দুটোই অন্ধ, কান উভয়টা কাটা তাদের ক্ষেত্রে সমুদয় দলিল প্রমাণ মূল্যহীন। যতই জবাব দেয়া হবে তাতে কোনো কাজ দেবেনা। তবুও আমরা জবাব দিয়েই যাব। যাদের তাকদিরে হিদায়াত থাকবে তারা নিশ্চয় লাভবান হবে!

এমন প্রশ্ন কিজন্য উত্থাপিত হয়?


উপরের প্রশ্নটি দু কারণে দেখা দেয়। (এক) প্রশ্নকারী 'শেষনবী' বলতে কাকে বুঝাবে এবং কেন বুঝাবে, তা তার জানা নেই। তাই যখন তাকে এরকম কোনো প্রশ্ন করা হয় তখনি সে দ্বিধাদ্বন্দ্বে পতিত হয়। (দুই) হযরত মাসীহ ঈসা (আ) যখন দুনিয়াতে আবার আগমন করবেন তখন কি তিনি পুনরায় নবুওত পাবেন, নাকি পূর্বে (বনী ইসরাইল আমলে) পাওয়া নবুওতের উপরই অধিষ্ঠিত থাকবেন? অর্থাৎ তিনি আগমন করার পর নতুন ভাবে আর কোনো ওহী বা নবুওত লাভ করবেন না। কারণ, নবুওতে মুহাম্মদির পরে নবুওতের দফতরে সীল লেগে গেছে। বর্তমানে সেই সীল ভাঙ্গবার ক্ষমতা কার আছে? কারো নেই। মুসলমানদের বিশ্বাস, মাসীহ ঈসা (আ) তিনি পূর্বে পাওয়া নবুওত -এর উপরই অধিষ্ঠিত থাকবেন। উম্মতে মুহাম্মদিয়ার যুগে মাসীহের উক্ত নবুওতের কার্যকারিতা স্থগিত থাকবে। যেহেতু শরীয়তে মুহাম্মদি দ্বারা শরীয়তে ঈসা রহিত। যাইহোক, এ জ্ঞানটুকু না থাকার কারণেই মির্যায়ীরা সহজ সরল মুসলমানদের প্রতারিত করতে সুযোগ পায়। আসলে এতে করে তাদের কুফুরি-ই অবিরাম বৃদ্ধি পাচ্ছে। আর সেজন্য রাব্বুল ইজ্জতের নিকট আমরা দোয়া করি, তিনি যেন এ মির্যায়ীদের হিদায়াত দিন।

হিজরী পঞ্চম শতাব্দীর শ্রেষ্ঠ মুফাসসির ইমাম যামাখসারী রহঃ এর জবানিতে মির্যায়ীদের উপরিউক্ত আপত্তির জবাব :

পবিত্র কুরানের বিশ্ববিখ্যাত মুফাসসির ইমাম যামাখসারী রহঃ (জন্ম - মৃত্যু : ৪৬৭-৫২৮ হিজরী) তিনি বহু বছর আগেই এধরণের প্রশ্নের উত্তর দিয়ে গেছেন। যাতে কোনো বিভ্রান্তকারি এধরণের ভ্রান্ত আপত্তি তুলে মুসলমানদের ঈমান নষ্ট করতে না পারে। নিচে 'তাফসীরে কাশশাফ' থেকে হুবহু আরবী উদ্ধৃতি তুলে ধরছি :تفسير الزمخشري الكشاف عن حقائق غوامض التنزيل ۔

فإن قلت: كيف كان آخر الأنبياء وعيسى ينزل في آخر الزمان؟ قلت: معنى كونه آخر الأنبياء أنه لا ينبأ أحد بعده، وعيسى ممن نبئ قبله، وحين ينزل ينزل عاملا على شريعة محمد، مصليا إلى قبلته، كأنه بعض أمّته. تفسیر کشاف ، جلد 3 صفحہ 545

অনুবাদ :- যদি তুমি প্রশ্ন কর যে, ঈসা (আ) আখেরি যামায় নাযিল হবেন তখন নবী মুহাম্মদ আখেরুল আম্বিয়া বা শেষনবী হন কিভাবে? আমি [ইমাম যামাখসরী] প্রতিউত্তরে বলি, তিনি আখেরুল আম্বিয়া বা শেষনবী হবার অর্থ এই যে, তাঁর পরে অন্য আর কাউকে নবুওত দেয়া হবেনা। অথচ ঈসা (আ)-কে তাঁর পূর্বেই নবুওত দেয়া হয়েছে। আর তিনি যখন (আকাশ থেকে) অবতরণ করবেন তখন তিনি মুহাম্মদ (সা)-এর শরীয়তের উপর একজন আমলকারী এবং তাঁর কেবলার দিকে ফিরে সালাত আদায়কারী হয়ে অবতরণ করবেন। যেমন নাকি তিনিও অপরাপর উম্মতের ন্যায় একজন উম্মত। [রেফারেন্স : তাফসীরে কাশশাফ, খন্ড নং ৩; পৃষ্ঠা নং ৫৪৫]।

ইমাম যামাখসারী রহঃ তিনি সময়ের দিক থেকে নববী যামানার খুব নিকটবর্তী একজন পূর্বসূরি মুসলিম স্কলার। প্রজ্ঞা আর নির্ভরযোগ্যতার দিক থেকে বর্তমান দুনিয়ার কেউ তাঁর সমকক্ষ হতে পারেনা। তিনি পঞ্চম শতাব্দীর বিখ্যাত একজন ইসলামি গবেষক ও নির্ভরযোগ্য তাফসিরকারক।

আজ থেকে ৯১০ বছর আগের উম্মতের এ শ্রেষ্ঠ স্কলার ও পবিত্র কুরান বিশেষজ্ঞ ইমাম যামাখসারী এ ধরণের জটিলতর বহু প্রশ্নের পরিষ্কার সমাধান দিয়ে গেছেন। সুতরাং বর্তমানে তাঁর বিপরীতে যাদের আকিদা ও বিশ্বাস এবং যারা ঈসা (আ)-এর অবতরণ বিষয়ে জট পাকায়, প্রিয়নবী মুহাম্মদে আরাবী (সা) 'শেষনবী' হওয়াকে অস্বীকার করার সুযোগ খোঁজতে জনমনে বিভ্রান্তি সৃষ্টি করছে, তাদের তাবৎ চক্রান্ত দুর্বল এবং পরিত্যাজ্য।

মজার ব্যাপার হল, কাদিয়ানী জামাতের কথিত (ভণ্ড)নবী মির্যা গোলাম নিজেও নবী মুহাম্মদ (সা)-কে তার একটি বইতে সূরা আহযাবের ৪০ নং আয়াতের অনুবাদ করতে গিয়ে ঊর্দূতে পরিষ্কার ভাবে লিখে গেছেন : '....উও রাসূলুল্লাহ হে আওর খতম করনে ওয়ালা হে নবীউঁ কা' (...তিনি আল্লাহ'র রাসূল এবং নবীগণের সমাপ্তকারী)। মির্যা গোলাম আহমদ কাদিয়ানী রচিত 'ইযালাতুল আওহাম' খণ্ড নং ৩ এবং পৃষ্ঠা নং ৫১১ দ্রষ্টব্য। তো মির্যা সাহেব এখানে মুহাম্মদ (সা)-কে পরিষ্কার ভাবে 'শেষনবী' বুঝাতে চেয়েছেন কিনা? দয়া করে এবার তাকেও ফতুয়া লাগান!!

বলাবাহুল্য, উক্ত আয়াতের যে অনুবাদ মির্যা গোলাম সাহেব তার বইতে করে গেছেন তার বিপরীত অর্থ করে থাকেন বর্তমান দুনিয়ার বেশির ভাগ কাদিয়ানী /মির্যায়ী। যা আমি আমার দীর্ঘদিনের অবিজ্ঞতা থেকে বলছি। এতে তারা দুটো বিষয় পরিষ্কার করতে চায়। তার একটি হচ্ছে মির্যা গোলামের উক্ত অনুবাদ ভুল ছিল, আর অপরটি হচ্ছে মুহাম্মদ (সা) শেষনবী নন। (নাউজুবিল্লা)। গভীর ভাবে চিন্তা করলে বলতে দ্বিধা থাকেনা যে, এ মির্যায়ীরা নবী মুহাম্মদ (সা)-কে 'শেষনবী' অস্বীকার করায় ইসলাম থেকে যেমন বেরিয়ে যায়, তেমনি তাদেরই কথিত নবী মির্যা গোলামের কৃত অনুবাদ ভুল আখ্যা দিয়ে প্রকারান্তরে তারা মির্যায়ীধর্ম থেকেও Out হয়ে যায়। তার মানে এরা দু'কূলহারা এক অবোধ সম্প্রদায়। আশাকরি মির্যায়ী বন্ধুরা কথাগুলো নিরপেক্ষতার সাথে ভেবে দেখবেন।

একটি কথা বলে রাখতে চাই যে, বর্তমানে নবী মুহাম্মদ (সা)-কে 'সর্বশেষ' নবী অস্বীকারকারী গোষ্ঠীর অন্যতম 'কাদিয়ানী জামাত'। এদের আরো কিছু পরিচয় আছে। এরা বর্তমানে নিজেদের 'আহমদি' পরিচয় দেয়। কারণ এরা যাকে নবী হিসেবে বিশ্বাস করে তার নাম মির্যা গোলাম আহমদ। এ গোলাম আহমদ ১৮৩৮ সালে ভারতের পাঞ্জাব প্রদেশে গুরুদাসপুর জেলার 'কাদিয়ান' নামক গ্রামে মির্যা পরিবারে জন্ম নেয়। এদের আরেক পরিচয় মির্যায়ী জামাত। বাংলাদেশে এরা নিজেদের প্রকৃত পরিচয় এবং ভয়ংকর মতাদর্শ গোপন রাখতে ও সাধারণ মুসলমানদের প্রতারিত করতে নিজেদের দলের নাম দিয়েছে - আহমদিয়া মুসলিম জামা'আত। এদের একটি চরিত্র হল, এরা প্রথম সাক্ষাতে নিজেদের আসল মতবাদগুলো প্রকাশ করতে চায়না। অত্যন্ত ধূর্ত প্রকৃতি স্বভাবের। আর স্ববিরোধী কথাবার্তায় বড্ড পারঙ্গম। যা আমার বহুদিনের অবিজ্ঞতার ফল। এ নিয়ে আগামী কোনো এক সময় লেখব, ইনশাআল্লাহ।

(ইসলাম বনাম কাদিয়ানি মতবাদ পড়তে এখানে → http://www.markajomar.com/?p=3343 ক্লিক করুন)

তারপর 'বাহায়ী জামাত'। এরা আরেকজনকে 'নবী' বিশ্বাস করে। তার নাম - মির্যা হোসাইন আলী নূরী। সে ১৮১৭ সালে ইরানে জন্ম গ্রহণ করে ১৮৯২ সালের ২৯-শে মে প্যালেস্টাইনের 'বাহজী' অঞ্চলে মৃত্যুবরণ করেন। বর্তমানে তার কবর ইসরাইলের 'হাইফা' শহরে। কাদিয়ানী জামাতের ন্যায় 'বাহায়ী জামাত'র অনুসারীও পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে ছড়িয়ে ছিটিয়ে আছে। মুসলিম দুনিয়ার সকল ইসলামি বিশেষজ্ঞ ও মুফতিয়ানে কেরামের সর্বসম্মত ফতুয়া মতে উক্ত জামাত দুটির অনুসারীরা ইসলাম থেকে খারিজ এবং স্বতন্ত্র দুটো ধর্মের অনুসারী। যারা তাদের কাফির জানবেনা তাদের ঈমানও নিরাপদ নয়। সবাই তাদের ভ্রান্তি থেকে সচেতন থাকুন এবং অপর মুসলমান ভাইদের সচেতন করুন!! আল্লাহু আ'লাম। আশাকরি বুঝতে পেরেছেন। ইমাম যামাখসারী রহঃ এর কিতাবের স্কিনকপি নিম্নরূপ


লেখক, NurunNabi।

তাকমিল : দারুলউলুম আল হোসাইনিয়া ওলামাবাজার, সোনাগাজি ফেনী। ইমেইল : [email protected]

মন্তব্য ১ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (১) মন্তব্য লিখুন

১| ২৩ শে সেপ্টেম্বর, ২০১৭ রাত ১:৩১

NurunNabi বলেছেন: Click This Link

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.