![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
লিখক শিক্ষাবিদ ও গবেষক
পবিত্র কুরআনে হযরত ঈসা (আ)-এর পুনঃ আগমনের দলিল
___
প্রশ্ন :- অসংখ্য সহীহ হাদীস দ্বারা পরিষ্কারভাবে বুঝা যায় যে, হযরত ঈসা (আ)-এর পুনঃ আগমন সত্য ও অকাট্যভাবে প্রমাণিত। তেমনি পবিত্র কুরআনেও এর সমর্থনে কোনো ইংগিত কিবা প্রমাণ আছে কিনা?
___
জবাব : জ্বী হ্যাঁ, অবশ্যই পবিত্র কুরআনেও হযরত ঈসা (আ)-কে সশরীরে জীবিত উঠিয়ে নেয়া এবং অচিরেই পৃথিবীতে পুনঃ আগমনের উপর সুস্পষ্ট ইংগিত ও প্রমাণ পাওয়া যায়। এজন্য পবিত্র কুরআনের সূরা আলে ইমরান, আয়াত নং ৪৬; ৪৮; ৫৫; সূরা নিসা, আয়াত নং ১৫৭; ১৫৮; ১৫৯; সূরা যুখরুফ, আয়াত নং ৬১ ইত্যাদি দেখা যেতে পারে।
কোনো কোনো ভাই হয়ত প্রশ্ন করতে পারেন যে, হযরত ঈসা (আ)-কে সশরীরে আকাশে তুলে নেয়ার উল্লেখ কুরআনের কোন আয়াতে আছে?
এমন প্রশ্নকারী যারা তাদের ভাবখানা বোধ হয় এমন যে, কুরআনে যা পরিষ্কার করে উল্লেখ নেই তা হাদীসে যতই পরিষ্কার করে উল্লেখ থাকুক-হবেনা! অথচ তাদের জানা থাকা উচিৎ ছিল যে, পবিত্র কুরানের আয়াতগুলোর কোনো কোনোটি সুস্পষ্ট আবার কোনো কোনোটি অস্পষ্ট। তাই পবিত্র কুরআনে যেসব বিষয় সংক্ষেপে কিংবা অস্পষ্টভাবে আলোচিত হয়েছে তা সুস্পষ্ট করতে পবিত্র হাদীসের মুখোমুখি হওয়া জুরুরী। কেননা পবিত্র কুরআনে বলা হয়েছে, "নিশ্চয় আমি এই কুরআন আপনার প্রতি নাযিল করেছি যাতে আপনি মানুষকে তা সুস্পষ্ট করে বুঝিয়ে দেন। দেখুন সূরা নামাল আয়াত ৪৪। এখন পবিত্র কুরআনেই যদি সব কিছু সুস্পষ্ট করে বলে দেয়া হয় তাহলে রাসূল (সা)-এর হাদীসের গুরুত্ব থাকে কিভাবে? কিংবা রাসূল (সা)-এর আগমনেরই দরকার কী? ভাবিয়ে দেখবেন কিনা?
এবার আসুন হাদীস শরীফে ঈসা (আ)-এর জীবিত থাকা ও পুনঃ আগমন বিষয়ে কিরূপ শব্দচয়নে এসেছে!
>> সহীহ বুখারী মুসলিমে এসেছে, শপথ খোদাতায়ালার যার হাতে আমার প্রাণ, নিশ্চয় অচিরেই ইবনে মরিয়ম তোমাদের মাঝে একজন ন্যায়পরায়ণ শাসক হিসেবে নাযিল হবেন। (বুখারী কিতাবুল আম্বিয়া, হাদিস নং ৩২৬৪)।
>> ঈসা ইবনে মরিয়ম আকাশ থেকে নাযিল হবেন। দেখুন ইমাম বয়হাক্বী সংকলিত 'আল আসমা ওয়াছ ছিফাত' ২/৩৩১; হাদীস নং ৮৯৫। হাদীসের মান, সহীহ।
>> অত:পর ঈসা ইবনে মরিয়ম আকাশ থেকে নাযিল হবেন। ইমাম আবুবকর আহমদ ইবনে আমর আল বাজ্জার (মৃত ২৯২ হিজরী) সংকলিত 'মুসনাদে বাজ্জার' ১৭/৯৬; হাদীস নং ৯৬৪২। হাদীসের মান সহীহ, বর্ণনাকারীদের ভেতর 'আলী ইবনে আল মুনযির' ব্যতীত সবাই বুখারী ও মুসলিমের রাবী।
>> ঈসা ইবনে মরিয়ম আকাশ থেকে ('আফীক' নামক পাহাড়ের উপর) নাযিল হবেন। দেখুন, ইমাম ইবনে আসাকির সংকলিত 'তারিখে দামেস্ক' - খন্ড নং ৪৭ পৃষ্ঠা নং ৫০৪-৫ ; প্রকাশনী বৈরুত লেবানন।
>> ঈসা ইবনে মরিয়ম (আ) আকাশ থেকে নাযিল হবেন। দেখুন কাঞ্জুল উম্মাল - খন্ড ১৪ পৃষ্ঠা ৬১৮-১৯; রেওয়ায়েত নাম্বার ৩৯৭২৬)।
>> মির্যা কাদিয়ানী খোদ নিজেও মাসীহ দাবী করার পূর্বে ১৮৯১ সালের আগ পর্যন্ত বিশ্বাস করতেন, ঈসা ইবনে মরিয়ম (আ) তিনি আকাশ থেকে অবতরণ করবেন। মির্যার কিতাবে লিখা আছে - صحيح مسلم کی حديث میں جو یہ لفظ موجود ہے کہ حضرت مسیح جب آسمان سے اتریں گے تو ان کا لباس زرد رنگ کا ہوگا. অর্থাৎ সহীহ মুসলিম শরীফের হাদীসে এই শব্দটি বিদ্যমান রয়েছে যে, হযরত মাসীহ (ঈসা) যখন আকাশ থেকে অবতরণ করবেন তখন তাঁর পরিধানের পোশাক হলুদবর্ণের হবে। (দেখুন, রূহানী খাযায়েন, ৩/১৪২) এখানে সূক্ষ্মভাবে চিন্তা করলে বুঝা যায় যে, কাদিয়ানিদের পক্ষ হতে হযরত ঈসা (আ)-কে মৃত বলে আখ্যা দেয়ার সকল প্রচেষ্টা মূলত খ্রিষ্টানদের রদ (খন্ডন) করার উদ্দেশ্যে ছিলনা, বরং মির্যা কাদিয়ানির মাসীহিয়তকে প্রতিষ্ঠা করার উদ্দেশ্যেই ছিল। অন্যথা মির্যা কাদিয়ানী সেই নিজেকে মাসীহ ঈসা, ইমাম মাহদী এবং নবী দাবী করার আগে ১৮৬৫ সাল থেকে ১৮৯১ সাল পর্যন্ত দীর্ঘ ২৬ বছর যাবত ইসলামের পক্ষে বহু লেখালেখি করলেন, বারাহীনে আহমদিয়া (খন্ড ১-৪) লিখলেন কিন্তু কখনো তো ঈসা (আ)-কে মৃত বলে আখ্যা দেননি! ১৮৮১ সাল থেকে ১৮৯১ সাল পর্যন্ত দীর্ঘ ১০ বছর নিজেকে মুজাদ্দিদ দাবি করতেন। কিন্তু সেই সময়টিতেও তিনি ঈসা (আ)-কে মৃত বলেননি। পরবর্তীতে ঈসা (আ)-কে মৃত আখ্যা দেয়ার জন্য উঠেপড়ে লাগলেন। পবিত্র কুরআনের ৩০ টি আয়াত দিয়েও ঈসাকে মৃত প্রমাণ করার জোর চেষ্টা চালালেন। ভেবেচিন্তে অবাক হলাম যে, পবিত্র কুরআনের এই ৩০ আয়াত মির্যা সাহেবের মুজাদ্দিদ দাবীর ভেতরকার ১৮৮১-১৮৯১ সালের মধ্যে কুরআনের ভেতর কি ছিলনা? তখন কিজন্য তার মনে হলনা যে, ঈসা (আ) জীবিত নন, বরং মৃত? সুতরাং অংক সোজা, নিজের উদ্দেশ্য পাকা করতেই তিনি আসল ঈসাকে মুর্দা আখ্যা দিতে চেষ্টা চালিয়ে ছিলেন!
উল্লেখ্য, সহীহ মুসলিম শরীফের হাদীসে 'আসমান' শব্দটির উল্লেখ নেই। তা সত্ত্বেও হযরত ঈসা (আ) চতুর্থ আসমানে আছেন মর্মে কিরকম জোরালো বিশ্বাস থাকলে মির্যা সাহেব সহীহ মুসলিমের উদ্ধৃতিতে "ঈসা আকাশ থেকে নাযিল হবেন" এভাবে লিখে যেতে পারলেন! কাজেই, ঈসা (আ)-কে আকাশে সশরীরে উঠিয়ে নেয়ার উল্লেখ সুস্পষ্টভাবে কুরআনের কোন আয়াতে উল্লেখ আছে, এইরূপ প্রশ্ন করা অজ্ঞতা আর নির্বুদ্ধিতার পরিচয় বৈ কিছুনা। এমন ব্যক্তিকে যদি পাল্টা প্রশ্ন করা হয় যে, নামায যে দৈনিক পাঁচ ওয়াক্ত আদায় করা ফরজ তার উল্লেখ কুরআনের কোন আয়াতে আছে- তাহলে সে এর জবাবে কী বলবে?
প্রিয় পাঠক! এখানে পবিত্র কুরআনের সূরা আলে ইমরান, আয়াত নং ৪৬ নিয়ে আলোচনা করব, ইনশাআল্লাহ। আল্লাহতালা ইরশাদ করেন, "সে (ঈসা) দোলনায় থাকা অবস্থায় (যেমন) মানুষের সাথে কথা বলবে, পরিণত বয়সেও (তেমনিভাবে) কথা বলবে এবং সে হবে নেককার মানুষদের একজন।" (০৩:৪৬)।
____
# তাফসীর - আলোচ্য আয়াতে হযরত ঈসা (আ)-এর একটি অবস্থা বর্ণনা প্রসঙ্গে বলা হয়েছে যে, তিনি শৈশবে যে বয়সে কোনো শিশু কথা বলতে সক্ষম হয়না, তখনই তিনি মানুষের সাথে কথা বলবেন। এখানে তার পরেই আবার বলা হচ্ছে যে, যখন তিনি প্রৌঢ় বয়সের হবেন তখনো মানুষের সাথে কথা বলবেন।
উল্লেখ্য, বিখ্যাত অভিধানবেত্তা ইবনে মানযূর আল আফ্রিকী (মৃত- ৭১১ হিজরী) তার বিখ্যাত "লিসানুল আরব" অভিধানগ্রন্থে 'আল-মুহকিম' (আরবি : المحكم) অভিধানের উদ্ধৃতিতে 'কাহল' এর সংজ্ঞায় লিখেছেন যে, هو من أربع و ثلاثين إلى إحدى و خمسين "অর্থাৎ 'কাহল' বলতে ৩৪ হতে ৫১ বছর বয়সের ব্যক্তিকে বুঝাবে।" তবে কেউ কেউ অন্যটিও বলেছেন।
যাইহোক, এখানে প্রণিধানযোগ্য বিষয় এই যে, শৈশবে কথা বলা নিঃসন্দেহে একটি অলৌকিক ব্যাপার। যার উল্লেখ এক্ষেত্রে সমীচীন হয়েছে। কিন্তু প্রৌঢ় বয়সে কথা বলা কোনো অলৌকিক ব্যাপার নয়। মুমিন, কাফের, পণ্ডিত, মূর্খ সবাই এ বয়সে কথা বলে। কাজেই এক্ষেত্রে বিশেষ গুণ হিসেবে এটা উল্লেখ করার অর্থ কী? জ্ঞানীদের ভাবিয়ে তুলবে কিনা?
তাই এই প্রশ্নের উত্তরে নির্ভরযোগ্য তাফসীরের কিতাবে লিখা আছে যে, এখানে প্রৌঢ় বয়সের কথাবার্তার উল্লেখ একটি স্বতন্ত্র ও বিশেষ গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ের প্রতি ইঙ্গিতস্বরূপ করা হয়েছে। তা এই যে, ইসলামী ও কুরআনী বিশ্বাস অনুযায়ী হযরত ঈসা (আ)-কে জীবিতাবস্থায় আকাশে তুলে নেয়া হয়েছে। বিভিন্ন রেওয়ায়েত দ্বারা প্রমাণিত রয়েছে যে, আকাশে তুলে নেয়ার সময় তার বয়স প্রায় ত্রিশ-তেত্রিশের মাঝামাঝি ছিল। অর্থাৎ তিনি যৌবনের প্রারম্ভিককালে উত্তোলিত হয়েছেন। অত:পর প্রৌঢ় বয়স, যাকে আরবীতে 'কাহল/কুহল' বলা হয়; তিনি এ জগতে সেই বয়স পাননি।
কাজেই প্রৌঢ় বয়সে মানুষের সাথে তাঁর কথা বলা তখনই সম্ভব, যখন তিনি আবার এ জগতে প্রত্যাবর্তন করবেন। পবিত্র কুরআনে মূলত এ দিকেই ইঙ্গিত করে "পরিণত বয়সেও (তেমনিভাবে) তিনি মানুষের সাথে কথা বলবেন" এ কথাই বুঝানো উদ্দেশ্য। নতুবা এভাবে বলার কোনো দরকার ছিলনা। যেহেতু প্রৌঢ় বয়সে কথা বলতে পারা কোনো অলৌকিক ব্যাপার নয়, বরং সাধারণ একটা ব্যাপার। (দেখুন, তাফসীরে বয়ানুল কুরআন, কৃত হাকীমুল উম্মত থানভী রহঃ এবং মা'আরেফুল কুরআন, কৃত মুফতি শফী রহঃ)। অনুরূপ একই তাফসীর পাওয়া যায় সর্বাধিক উল্লেখযোগ্য কিতাব তাফসীরে ইবনে কাসীরেও।
মির্যা কাদিয়ানী কর্তৃক স্বীকৃত যুগ ইমাম, মুহাদ্দিস ও মুফাসসিরের কিতাব "তাফসীরে তাবারী" এর ভেতর ইমাম ইবনে জারীর আত তাবারী (রহঃ) লিখেছেন- আমাকে ইউনুছ বর্ণনা করেছেন, তিনি বলেন আমাকে ইবনে ওহাব বলেছেন, তিনি বলেন আমি ইবনে যায়েদ থেকে শুনেছি তিনি বলেন, আল্লাহতালার এই কথার অর্থ হল, قد كلمهم عيسى في المهد و سيكلمهم إذا قتل الدجال و هو يومئذٍ كهل.
অর্থাৎ ঈসা (আ) দোলনাতে মানুষের সাথে কথা বলবেন, (তেমনিভাবে) তিনি অচিরেই মানুষের সাথে কথা বলবেন যখন দাজ্জালকে হত্যা করবেন আর তখন তিনি প্রৌঢ় বয়সে পরিণত হবেন। (তাফসীরে তাবারী, ইবনে জারীর রহঃ)।
এই একই তাফসীর রয়েছে ইমাম ফখরুদ্দীন রাজী রহঃ রচিত "তাফসীরে কাবীর" এর মধ্যে। তিনি হিজরী তৃতীয় শতাব্দীর সর্বশ্রেষ্ঠ তাফসীরকারক ইমাম হুসাইন ইবনে ফদ্বল আল বাজালী রহঃ (মৃত : ২৮২ হিজরী) এর উদ্ধৃতিতে লিখেছেন, أن المراد بقوله و كهلا ان يكون كهلا بعد ان ينزل من السماء في آخر الزمان و يكلم الناس و يقتل الدجال و قال الحسين بن الفضل : و في هذه الآية نص في أنه عليه الصلاة والسلام سينزل إلي الأرض. تفسير الكبير لإمام الرازي
অর্থাৎ "আয়াতের উদ্দেশ্য হল, ঈসা (আ) তিনি শেষ যামানাতে আকাশ থেকে অবতরণকরার পরে প্রৌঢ় হওয়া। (তখন) তিনি মানুষের সাথে (প্রৌঢ় লোকদের মত জ্ঞানীসূলভ, মেধা সম্পন্ন প্রাঞ্জল ও বিশুদ্ধভাবে) কথা বলবেন এবং দাজ্জালকে হত্যা করবেন। তিনি বলেন, এই আয়াতে ঈসা (আ) পৃথিবীতে অচিরেই নাযিল হওয়ার ব্যাপারে নস তথা প্রমাণ রয়েছে।" (ইমাম রাজী রচিত, তাফসীরে কাবীর দ্রষ্টব্য)। আশাকরি চিন্তাশীলবন্ধুদের জন্য প্রকৃত ব্যাপারটি বুঝতে এতটুকুই যথেষ্ট হবে, ইনশাআল্লাহ । ওয়াসসালাম।
লেখক, প্রিন্সিপাল নূরুন্নবী। ইমেইল : [email protected]
আমার ওয়েব সাইট : এখানে ক্লিক করুন
©somewhere in net ltd.