নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

\"নিশ্চয়ই তিনি (হযরত মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) আল্লাহর রাসূল এবং শেষনবী।\" - সূরা আহযাব : ৪০

NurunNabi

লিখক শিক্ষাবিদ ও গবেষক

NurunNabi › বিস্তারিত পোস্টঃ

বঙ্গবন্ধুর দৃষ্টিতে হিন্দুস্তানী ভন্ডনবী মির্যা কাদিয়ানীর জামাতে আহমদিয়া সম্প্রদায়

০৮ ই ডিসেম্বর, ২০১৮ রাত ১০:৪৬

কাদিয়ানী সম্প্রদায়ের দৃষ্টিতে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের অবস্থান


কাদিয়ানী সম্প্রদায় তাদের শতবার্ষিকী উপলক্ষ্যে শতবার্ষিকী স্মরণিকা (Centenary Souvenir) প্রকাশ করে

শত বার্ষিকী স্মরণিকা

প্রসঙ্গ-কথা : আহমদিয়া জামাত তথা কাদিয়ানী সম্প্রদায় ২০১৩ ঈসায়ী তাদের শতবার্ষিকী উদযাপন করে। এ উপলক্ষ্যে ৩১ ডিসেম্বর ২০১৪ ঈসায়ী তারা ঝকঝকে ছাপা ২৩২ পৃষ্ঠার শতবার্ষিকী স্মরণিকা (Centenary Souvenir) প্রকাশ করে। স্মরণিকাটির ১৪১ পৃষ্ঠায় একটি শিরোনাম দেখে বিস্মিত হলাম। শিরোনামটি ছিল এমন, ‘বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের দৃষ্টিতে আহমদী জামাত’। সেখানে ‘অসমাপ্ত আত্মজীবনী’র ২৪০-২৪১ পৃষ্ঠার উদ্ধৃতি দিয়ে এগার লাইন বক্তব্য লেখা হয়, যার সারাংশ হল : পাকিস্তানামলে পাঞ্জাবে কাদিয়ানী ও মুসলমানদের মাঝে এক সাম্প্রদায়িক দাঙ্গা হয়। তিনি এই দাঙ্গার নিন্দা ও সমালোচনা করেছেন।

অসমাপ্ত আত্মজীবনী মানবতার সবকপ্রাপ্ত যে কোনো ব্যক্তিই রাজপথের এমন দাঙ্গার বিরুদ্ধে কথা বলবে। সেখানে বঙ্গবন্ধুর মতো একজন নেতা এর প্রতিবাদ করবেন এটাই স্বাভাবিক। কিন্তু এর অর্থ এই নয় যে, তিনি কাদিয়ানী সম্প্রদায়ের দুষ্কৃতি সম্পর্কে অন্ধকারে ছিলেন। তাঁর খুব ভালোভাবেই জানা ছিল, পাকিস্তান আমলে বাঙালীরা যে সকল যুলুম-অত্যাচার ও অর্থনৈতিক বৈষম্যের শিকার হয়েছিল তার মূলে ছিল এই মুসলিম বিদ্বেষী কাদিয়ানী সম্প্রদায়। শুধু মুসলিম হওয়ার অপরাধে বাঙালীদেরকে তাদের অধিকার থেকে বঞ্চিত করা হয়। ১৯৭০ সালের যে নির্বাচনে বঙ্গবন্ধু বিপুল ভোটে বিজয়ী হন, সেই নির্বাচনের আগে এক বক্তৃতায় তিনি বলেন, ‘যদি আমি রাষ্ট্রীয় ক্ষমতা হাতে পাই তাহলে ডেপুটি চেয়ারম্যান (পরিকল্পনা) এম এম আহমদ কাদিয়ানীকে পূর্বপাকিস্তানের উপর অর্থনৈতিক যুলুম করার অপরাধে সেরেঙ্গা পাটম স্টেডিয়ামে ফাঁসির রশিতে ঝুলাব।’ (মাসিক ‘তরজুমানে আহলে সুন্নত’, খতমে নবুওত নম্বর, আগস্ট ও সেপ্টেম্বর সংখ্যা ১৯৭২ ঈসায়ী)

উল্লেখ্য এই এম এম আহমদ ছিলেন, ভন্ডনবী মির্যা গোলাম আহমদ কাদিয়ানীর পৌত্র। মানবতার শিক্ষা হল শত্রু ও যদি কোনো প্রতিকূল অবস্থায় সম্মুখিন হয় তাহলে তার পক্ষে ন্যায় সংগত অবস্থান নেয়া। কিন্তু তার অর্থ মোটেও এটা নয় যে, তার অপকর্ম ও প্রতারণাকে সমর্থণ দেয়া। বঙ্গবন্ধুর বক্তব্যটিও ঠিক এ অর্থে। কেননা কাদিয়ানীদের মুসলিম বিদ্ধেষী অপকর্মের ব্যাপারে তিনি সম্পূর্ণ সজাগ ছিলেন। নিচের উদ্ধৃটিই তার প্রমাণ।

"১৯৭১ সালের মার্চ মাসে ঢাকায় ইয়াহইয়া খান ও বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবের আলোচনা চলাকালীন এম এম আহমদের (কাদিয়ানী) সন্দেহজনক গতিবিধি দেখে পূর্ব পাকিস্তানের শীর্ষস্থানীয় নেতাদের মধ্যে উদ্বেগ দেখা দিল। কারণ তিনি (কাদিয়ানী) অর্থনৈতিক বিষয়ের দায়িত্বপ্রাপ্ত কমিশনের ডেপুটি চেয়ারম্যান, রাষ্ট্রপতির অর্থনৈতিক উপদেষ্টা এবং পূর্ব পাকিস্তানের (বাংলাদেশ) দুর্যোগ কবলিত মানুষকে পুনর্বাসন সমন্বয় কমিটির চেয়ারম্যান ছিলেন। এ সুযোগে সর্বদায় পূর্ব পাকিস্তানকে (বাংলাদেশ) শোষণ ও অর্থনৈতিকভাবে বঞ্চিত করেছে।" (রেফারেন্স : জঙ্গ, ২৬ শে মার্চ ১৯৭১, পৃষ্ঠা ৮ কলাম ৫)

এম.এম আহমদ কাদিয়ানীসহ পাকিস্তান সরকারের সাথে সংশ্লিষ্ট কাদিয়ানী বিশ্বাসের অধিকারী শীর্ষ কর্মকর্তারা যখন এ দেশবাীসর উপর জুলুম-অত্যাচার করতে লাগল তখন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ভূমিকা কী ছিল তা আরও পরিস্কারভাবে সুরেস কাশ্মীরীর (প্রখ্যাত সাংবাদিক) কলমে দেখুন,

“শেখ মুজিবুর রহমান কাদিয়ানী সম্প্রদায়ের এ সকল কর্মকান্ড (জুলুম-অত্যাচার) অনুভব করেছিলেন এবং সজাগ হয়ে গিয়েছিলেন, তিনি এম.এম আহমদ কাদিয়ানীর জুলুম-অত্যাচারের বিরুদ্ধে জনসাধারণের সামনে স্পষ্টভাবে প্রতিবাদ করা শুরু করলেন এবং তৎক্ষণাত তার অব্যাহতি চাইলেন। এ প্রতিবাদ শুরু করা মাত্রই চৌধুরী জাফরুল্লাহ (পাকিস্তানের সাবেক বিদেশ মন্ত্রী এবং কাদিয়ানী নেতা) তার সাথে সাক্ষাৎ করতে (তাকে থামাতে) ঢাকায় গেলেন এবং দ্বিতীয় অথবা তৃতীয় দিন শেখ মুজিবের সাথে একান্তভাবে বসলেন”। (রেফারেন্স : আজমি ইসরাইল, এক আন্ডার গ্রাউন্ড খতরে কা তাজযিয়াহ, পৃষ্ঠা নং ২৩।)

ব্রিটিশ বিরোধী আন্দোলনে বঙ্গবন্ধু :

বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ব্রিটিশ-বিরোধী আন্দোলনের একজন নিষ্ঠাবান কর্মী ছিলেন। শুধু তাই নয় রাজনৈতিক অঙ্গনে তিনি যাদের শিষ্যত্ব গ্রহণ করে নিজেকে ধন্য মনে করতেন তারাও এ অঞ্চলের মানুষকে বৃটিশের বিরুদ্ধে জাগিয়ে তুলেছিলেন। ফলে বৃটিশ সাম্রাজ্যবাদ বিরোধী চেতনা তাঁর রাজনৈতিক উত্তরাধিকারসূত্রে পাওয়া সম্পদ। ১৯৪৭ সালের আগস্ট পর্যন্ত তিনি এ সম্পদ রক্ষা করেছেন। আত্মজীবনীর এক জায়গায় তিনি লিখেছেন ‘ইংরেজদের সাথেও আমাদের লড়তে হবে এই শিক্ষাও হাশিম সাহেব আমাদের দিচ্ছিলেন। আমাদেরও ইংরেজদের বিরুদ্ধে একটা জাতক্রোধ ছিল। হিটলারের ফ্যাসিস্ট নীতি আমরা সমর্থন করতাম না। তথাপি যেন ইংরেজদের পরাজিত হওয়ার খবর পেলেই একটু আনন্দ লাগত।’ (রেফারেন্স : অসমাপ্ত আত্মজীবনী, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান, পৃষ্ঠা নং ৩৫)

প্রিয় নেতাজি মরহুম আবুল হাশিম :

মরহুম আবুল হাশিম সাহেব ছিলেন মুসলিম লীগের একজন তুখোর নেতা। ১৯৪৩ সালে তিনি এ সংগঠনের সম্পাদক হিসেবে নির্বাচিত হন। এই হাশিম সাহেব তার কেমন গুরু ছিলেন তা বঙ্গবন্ধুর কলমে দেখুন ‘তাঁর (হাশিম সাহেব) সাথে ভিন্নমত হতে পারি। কিন্তু তাঁর কাছ থেকে যে রাজনীতির শিক্ষা পেয়েছিলাম সেটা তো ভোলা কষ্টকর। (অসমাপ্ত আত্মজীবনী, পৃ. ৮০) ফলে বৃটিশ খেদাও আন্দোলন তাঁর রাজনৈতিক উত্তরাধিকার সূত্রে পাওয়া কর্মসূচী এবং বৃটিশ বিরোধী চেতনা ছিল এ দেশের গণমানুষের চেতনা।

কাদিয়ানিদের নজিরবিহীন ব্রিটিশ দরদ :
পক্ষান্তরে কাদিয়ানী সম্প্রদায় ইংরেজ স্বার্থ রক্ষায় এক নির্ভেজাল তোষামোদকারী জামাত। বৃটিশ বিরোধী চেতনার ধারকদেরকে কথিত এই নবী কেমন অশ্লীল ভাষায় গালিগালাজ করেছে তার একটি নমুনা দেখুন : “কিছু আহম্মক ও নাদান লোক প্রশ্ন করে, এই সরকারের (বৃটিশ) সাথে লড়াই করা জায়েয আছে কী? স্মরণ রাখা দরকার এই প্রশ্ন ওদের চরম আহম্মকি। কারণ, যার অনুগ্রহের শোকর আদায় করা ফরয, ওয়াজিব, তার সাথে আবার লড়াই কীভাবে? আমি সত্য সত্য বলছি, অনুগ্রহকারীর (বৃটিশ সরকার) অকল্যাণ চাওয়া (লড়াই করা) একজন হারামী ও বদকার লোকের কাজ।" (রেফারেন্স : শাহাদাতুল কুরআন, পৃষ্ঠা নং ৮৪; রূহানী খাযায়েন ৬/৩৮০ মির্যা গোলাম আহমদ কাদিয়ানী কৃত।)

কাদিয়ানী জামাতের প্রতিষ্ঠাতা মির্যা কাদিয়ানীর ব্রিটিশ প্রীতি : নবুওতের মিথ্যা দাবিদার মির্যা গোলাম আহমদ কাদিয়ানী বৃটিশের বিরুদ্ধে লড়াইকারী বীর সন্তানদের বদকার ও হারামী বলে গালি দিতেন। তার বই থেকে আরো বহু প্রমাণ দেয়া যাবে। যাইহোক, এর পরিষ্কার অর্থ বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ও তার সকল রাজনৈতিক গুরু যাদের আন্দোলন-সংগ্রামে এ ভূখন্ড স্বাধীন হয়েছে এবং যে স্বাধীন ভূখন্ডে কাদিয়ানীরা 'কাদিয়ানী ধর্মমত' প্রচার করছে তাঁরা সবাই ‘হারামী’! এখন অতীতকে লুকিয়ে সেই হারামীদের বক্তব্যবাণী শতবার্ষিকী স্মরণিকায় প্রকাশ করে তাদের আনুকূল্য লাভের চেষ্টা নিতান্তই নীতিহীনতা আর জাতিকে বোকা বানানোর এক নোংরা প্রচেষ্টা নয় কি? এ ডিগবাজির ইতিহাস জানতে হবে।

লক্ষণীয় বিষয় হল, বঙ্গবন্ধু তার উদারতা দ্বারা যুলুমের প্রতিবাদ করে উৎকৃষ্ট এক দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছেন। তিনি বলেছেন, ‘তবে একমত না হওয়ার জন্য যে অন্যকে হত্যা করা হবে এটা যে ইসলাম পছন্দ করে না এবং একে অন্যায় মনে করা হয় এটুকু ধারণা আমার আছে। (অসমাপ্ত আত্মজীবনী, পৃষ্ঠা নং ২৪০) কিন্তু সেই উদারতা ও মহানুভবতা কি কাদিয়ানীরা দেখাতে পেরেছে?

কাদিয়ানী সম্প্রদায়ের প্রতিষ্ঠাতা তো তার মতের বিরোধিতা করে বৃটিশের বিরুদ্ধে লড়াই করার কথিত অপরাধে বঙ্গবন্ধু ও তাঁর সকল রাজনৈতিক গুরুকে ‘হারামী’ পর্যন্ত বলে দিয়েছে! স্বজাতির সাথে বেইমানী করে মির্যা কাদিয়ানী হালালী হলেন আর স্বজাতির সাথে ইমানদারী রক্ষা করে বঙ্গবন্ধু হারামী হয়ে গেলেন! বঙ্গবন্ধু ইংরেজদের ব্যাপারে প্রচন্ড ক্ষুব্ধ ছিলেন। বৃটিশ তাড়ানোর জন্য যে কেউ ডাক দিলে তার সাথে সংগ্রামে নেমে পড়তেন। তাঁর কলমে দেখুন ‘ইংরেজদের বিরুদ্ধেও আমার মনে বিরূপ ধারণা সৃষ্টি হল। ইংরেজদের এ দেশে থাকার অধিকার নেই। স্বাধীনতা আনতে হবে। আমিও সুভাষ বাবুর ভক্ত হতে শুরু করলাম’। (অসমাপ্ত আত্মজীবনী, পৃষ্ঠা নং ৯)

মির্যা কাদিয়ানীর শিক্ষা : আমার মতে বৃটিশ সরকারই কৃতজ্ঞতা, পূর্ণ আনুগত্য ও মর্যাদা পাবার যোগ্য। যার অধীনে নিরাপত্তার সাথে এই আসমানী কার্যক্রম চালাতে পারছি। (রেফারেন্স : মজমুআয়ে ইশতেহারাত খন্ড ২ পৃষ্ঠা নং ১০৩ মির্যা কাদিয়ানী কৃত) সুতরাং আমরা দোয়া করছি আল্লাহ তাআলা এই গভর্নমেন্টকে প্রত্যেক অনিষ্ট থেকে রক্ষা করুন এবং তার দুশমনদের লাঞ্ছনার সাথে পরাজিত করুন। খোদা তাআলা এ দয়াবান গভর্নমেন্টের শোকর করা আমাদের উপর এমনভাবে ফরয করেছেন যেমন তাঁর শোকর করা। (রেফারেন্স : শাহাদাতুল কুরআন পৃষ্ঠা নং ৮৪; রূহানী খাযায়েন খন্ড ৬ পৃষ্ঠা ৩৮০) এখানে মির্যা কাদিয়ানী সাহেব বৃটিশবিরোধী বীর সেনানীদের লাঞ্ছনাপরাজয়ের বদ-দোয়া করেছেন। আখেরাতে বৃটিশদের চেহারা নুরান্বিত হওয়ার দোয়া! অর্থাৎ দুনিয়াতে ওদের সাদা মুখ যেমন সুন্দর আখেরাতেও যেন তা নুরানী ও আলোকোজ্জ্বল হয়! (রেফারেন্স : শাহাদাতুল কুরআন ৯৬-৯৭; রূহানী খাযায়েন খন্ড ৬ পৃষ্ঠা ৩৯২-৩৯৩) লা-হাওলা ওয়ালা কুওয়াতা ইল্লা বিল্লাহ!

পক্ষান্তরে এ দেশবাসীর উপর ইংরেজ সাম্রাজ্যবাদীদের যুলুম-অত্যাচার ও বঙ্গবন্ধুর অনুভূতি তাঁর লেখায়, ‘ইংরেজের কথা হল বাংলার মানুষ যদি মরে তো মরুক, যুদ্ধের সাহায্য আগে। যুদ্ধের সরঞ্জাম প্রথম স্থান পাবে। ট্রেনে অস্ত্র যাবে। যুদ্ধ করে ইংরেজ, আর না খেয়ে মরে বাঙালি; যে বাঙালির কোনো কিছুরই অভাব ছিল না। ইস্টইন্ডিয়া কোম্পানি যখন বাংলাদেশ দখল করে মীর জাফরের বিশ্বাসঘাতকতায়, তখন বাংলার এত সম্পদ ছিল যে, একজন মুর্শিদাবাদের ব্যবসায়ী গোটা বিলাত শহর কিনতে পারত। সেই বাংলাদেশের এই দুরাবস্থা চোখে দেখেছি যে, মা মরে পরে আছে, ছোট বাচ্চা সেই মরা মা’র দুধ চাটছে। কুকুর ও মানুষ একসাথে ডাস্টবিন থেকে কিছু খাবারের জন্য কাড়াকাড়ি করছে। ছেলে-মেয়েদের রাস্তায় ফেলে দিয়ে মা কোথায় পালিয়ে গেছে। পেটের দায়ে নিজের ছেলে-মেয়েকে বিক্রি করতে চেষ্টা করছে। কেউ কিনতেও রাজি হয় নাই। বাড়ির দুয়ারে এসে চিৎকার করছে, মা বাঁচাও, কিছু খেতে দাও, মরে তো গেলাম, আর পারি না, একটু ফেন দাও। এই কথা বলতে বলতে ঐ বাড়ির দুয়ারের কাছেই পড়ে মরে গেছে। আমরা কী করব? হোস্টেলে যা বাঁচে দুপুর ও রাতে বুভুক্ষুদের বসিয়ে ভাগ করে দেই। কিন্তু কী হবে এতে’? (রেফারেন্স : অসমাপ্ত আত্মজীবনী, পৃষ্ঠা ১৮) এ হল ইংরেজদের শোষণ-নিপীড়নের সামান্য চিত্র, অথচ কাদিয়ানী সম্প্রদায়ের প্রতিষ্ঠাতা মির্যা কাদিয়ানী বলেছেন : “বৃটিশ সরকারের আনুগত্য করার অর্থ হল আল্লাহর ইবাদত করা। (রেফারেন্স : রূহানী খাযায়েন খন্ড ৬ পৃষ্ঠা ৩৮১; শাহাদাতুল কুরআন পৃষ্ঠা নং ৮৫)

অন্যত্র মির্যা কাদিয়ানী আরো বলেছেন, অর্থাৎ বৃটিশ সরকারের অবাধ্যতা আল্লাহ, রাসূল ও ইসলামের অবাধ্যতা। (রেফারেন্স : রূহানী খাযায়েন খন্ড ৬ পৃষ্ঠা নং ৩৮১) বিবেকের কেমন পতন হলে একজন মানুষের কলম থেকে এসব কথা বের হতে পারে।

মুসলমানদের সাথে বৃটিশ সরকারের জঙ্গলী আচরণ বঙ্গবন্ধুর কলমে দেখুন!

‘সিপাহি বিদ্রোহ এবং ওহাবী আন্দোলনের ইতিহাসও আমার জানা ছিল। কেমন করে ব্রিটিশরাজ মুসলমানদের কাছ থেকে ক্ষমতা কেড়ে নিয়েছিল, কী করে রাতারাতি মুসলমানদের সর্বস্বান্ত করে হিন্দুদের সাহায্য করেছিল। মুসলমানরা ব্যবসা-বাণিজ্য, জমিদারি , সিপাহির চাকরি থেকে কীভাবে বিতাড়িত হল। মুসলমানদের স্থান হিন্দুদের দ্বারা পূরণ করতে শুরু করেছিল ইংরেজরা। কেন? মুসলমানরা কিছুদিন পূর্বেও দেশ শাসন করেছে তাই ইংরেজকে গ্রহণ করতে পারে নাই। সুযোগ পেলেই বিদ্রোহ করত। ওহাবী আন্দোলন কী করে শুরু করেছিল হাজার হাজার বাঙালি মুজাহিদরা? বাংলাদেশ থেকে সমস্ত ভারতবর্ষ পায়ে হেঁটে সীমান্ত প্রদেশে যেয়ে জেহাদে শরীক হয়েছিল। তিতুমীরের জেহাদ, হাজী শরীয়াতুল্লাহর ফরায়েজি আন্দোলন সম্বন্ধে আলোচনা করেই আমি পাকিস্তান আন্দোলনের ইতিহাস বলতাম। ভীষণভাবে হিন্দু বেনিয়া ও জমিদারদের আক্রমণ করতাম এর কারণও যথেষ্ট ছিল’। (রেফারেন্স : অসমাপ্ত আত্মজীবনী, পৃষ্ঠা ২২-২৩)

পক্ষান্তরে মির্যা গোলাম আহমদ কাদিয়ানীর শিক্ষা হল : 'বৃটিশ সরকারের বিজয়ের জন্য প্রত্যেক সৌভাগ্যবান মুসলামানের দোয়া করা উচিত। কেননা তারা আমাদের উপর দয়াবান। আমাদের মাথার উপর বৃটিশ সরকারের অনেক অনুগ্রহ। যে মুসলমান এই সরকারের ব্যাপারে বিদ্বেষ রাখে সে চরম জাহেল, চরম নাদান ও চরম নালায়েক। যদি আমরা এই সরকারের শুকরিয়া আদায় না করি তাহলে আমরা খোদা তাআলারও না-শোকর।' (রেফারেন্স : ইযালায়ে আওহাম পৃষ্ঠা নং ৫১০; রূহানী খাযায়েন খন্ড ৩ পৃষ্ঠা ৩৭৩)

হাজী শরীয়াতুল্লাহ, মীর নিসার আলী তিতুমীর ও বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের মত ব্যক্তিত্বদের আন্দোলন-সংগ্রাম যদি আমাদের জাতীয় ইতিহাসের অংশ হয়ে থাকে তাহলে তাদের সম্পর্কে যারা কটূক্তি করেছে, জাহেল নাদান, না-লায়েক বলে গালি দিয়েছে তারা কখনই আমাদের আনুকূল্য পেতে পারেনা। জাতি হিসেবে এ অঙ্গিকারটুকু যদি আমরা না করতে পারি, তাহলে তাদের অবদানকে অবমূল্যায়ন করা হবে। সাথে সাথে কাদিয়ানী সম্প্রদায়ের চেতনা আর উপমহাদেশের মুসলমানদের চেতনা দুই মেরুর দুই পথ, যা কখনই মিলিত হতে পারে না। কারণ কাদিয়ানীরা লুটেরাদের সাথে, দস্যু ও জালিমদের সাথে। বঙ্গবন্ধুর লেখায় তাও ফুটে উঠেছে, ‘কিন্তু ইংরেজ সবকিছু লুট করেই নিয়ে গিয়েছে ভারতবর্ষ থেকে।'

লর্ড স্থানীয় লোকেরাই এই লুটের প্রধান কর্ণধার ছিলেন।’ (অসমাপ্ত আত্মজীবনী, পৃষ্ঠা ৫৯) মুসলমানদের ইজ্জত-আব্রু, সম্মান, সম্পদ সবকিছু লুণ্ঠন করে মুসলমানদেরকে দুর্ভিক্ষের জাঁতায় যে বৃটিশ সরকার পিষ্ট করেছে তাকে মির্যা গোলাম আহমদ কাদিয়ানী আল্লাহর রহমত ও তাঁর বড় নিয়ামত বলে আখ্যা দিয়েছেন, যা মহান আল্লাহর সাথেও এক ধরনের উপহাস। আল্লাহর রহমত যে হবে সে এমন জালিম ও লুণ্ঠনকারী হবে কেন?

এবার মির্যা কাদিয়ানীর বক্তব্য দেখুন, “প্রশংসিত (এই বৃটিশ) সরকারকে আল্লাহর নিয়ামত মনে করবেন। আল্লাহর অন্য নিয়ামতের মত এই নিয়ামতের শুকরিয়া আদায় করবেন। পক্ষান্তরে পাঞ্জাবের মুসলমানরা যদি এই সরকারকে নিজেদের জন্য বড় রহমত ও বিশাল নিয়ামত মনে না করে তাহলে তারা অকৃতজ্ঞ হবে।" (রেফারেন্স : বারাহীনে আহমদিয়াহ খন্ড ১ পৃষ্ঠা ১৪০; রূহানী খাযায়েন খন্ড ১ পৃষ্ঠা ১৪০) সুতরাং আমার সিদ্ধান্ত, যা আমি বারবার প্রকাশ করি, এটাই যে, ইসলামের দুইটি অংশ :

১. খোদাতাআলার আনুগত্য করা

২. এই সরকারের আনুগত্য করা।... সুতরাং যদি আমরা বৃটিশ গভর্নমেন্টের নাফরমানী করি তাহলে ইসলামের এবং খোদা ও রাসূলের নাফরমানী করছি।’ (রেফারেন্স : শাহাদাতুল কুরআন পৃষ্ঠা ৮৪-৮৫; রূহানী খাযায়েন খন্ড ৬ পৃষ্ঠা ৩৮০-৩৮১) এই হল কাদিয়ানীদের পরিচয়। এবার কাদিয়ানিদের কথিত নবী মির্যা গোলাম আহমদ কাদিয়ানীর এই কথাগুলো তারই লেখনীর স্কিনশট থেকে দেখুন (মির্যা কাদিয়ানীর লেখিত ৮৪ টি বইয়ের সমষ্টি ২৩ খন্ডে প্রকাশিত 'রূহানী খাযায়েন' থেকে নিম্নরূপ)।

রূহানী খাযায়েন খন্ড ৬ পৃষ্ঠা ৩৮০


বস্তুত বৃটিশবিরোধী লড়াই ও সংগ্রামকে বন্দুকের নল দিয়ে দমানো যাবে নানা এমন একটি সিদ্ধান্তে যখন বৃটিশ সরকার পৌঁছল, তখন ধূর্ত ইংরেজ এ দেশের সাম্রাজ্যবাদ-বিরোধী চেতনাকে দমন করার জন্য একটি এজেন্ট-চক্র গড়ে তোলার চিন্তা করল। আর এর জন্য তারা খুঁজে পেল মির্যা গোলাম আহমদ কাদিয়ানীকে (জন্ম ১৮৩৯ ঈসায়ী, মৃত্যু ১৯০৮ ঈসায়ী)। এতে কোনরূপ অস্পষ্টতা নেই। স্বয়ং মির্জা কাদিয়ানী নিজের ব্যাপারে লেখেন, “আমি (বৃটিশের) নিজেদের লাগানো চারাগাছ ।’ (রেফারেন্স : মজমু'আয়ে ইশতেহারাত খন্ড ৩ পৃষ্ঠা ২১)

মির্যা সাহেব আরও বলেন “আমার বক্তব্যে ইংরেজ সরকারের বিরুদ্ধে একটি শব্দও থাকবে না এবং আমরা এই সরকারের প্রতি কৃতজ্ঞ।” (পয়গামে সুলহে পৃষ্ঠা ৬৩; রূহানী খাযায়েন খন্ড ১৫ পৃষ্ঠা ১৫৫) মির্যা সাহেব আরো লেখেন, “আমি এমন কোনো কিতাব লেখিনি যে কিতাবে (ইংরেজ) গভর্নমেন্টের ওয়াফাদারির ব্যাপারে উৎসাহ না দিয়েছি। তারপর বলেন, গভর্নমেন্টের আনন্দকে নিজের আনন্দ আর তার দুঃখকে নিজের দুঃখ, তার উন্নতিকে নিজের উন্নতি আর তার অবনতিকে নিজের অবনতি মনে করতে চাই। (মির্যা কাদিয়ানীর ছেলে মির্যা বশিরুদ্দীন মাহমুদের জুমার খুতবা থেকে সংগৃহীত; রোযনামা ‘আলফজল’, কাদিয়ান, জিলদ ৪, শুমারা ৭০, পৃষ্ঠা ৭-৯, তাং ৬ মার্চ ১৯১৭ ঈসায়ী) অথচ বঙ্গবন্ধুর বক্তব্য হল, ইংরেজদের পরাজিত হওয়ার খবর পেলেই একটু আনন্দ লাগত। (অসমাপ্ত আত্মজীবনী- ৩৫ ) এই হল মূল রহস্য।

বৃটিশই বিদ্রোহের জ্বলন্ত আগুনকে নেভানোর জন্য মির্যা সাহেবকে ব্যবহার করেছিল, যা তিনি নিজেই স্বীকার করেছেন এই বলে যে, ‘আমি বৃটিশ সরকারের লাগানো চারাগাছ’। ফলে বৃটিশ সরকারের যুলুম-অত্যাচারের শিকার মজলুম দেশবাসী ও স্বাধীনতার বীর সেনানীরা যখন এই শ্রেণির লোকের কাছ থেকে হারামী, বদকার, না-লায়েক, নাদান প্রভৃতি গালি-গালাজ শোনে তখন বুঝতে বাকি থাকে না যে, এ শুধু নেমক হালালীর এক নোংরা চেষ্টা মাত্র। এদেশের সকল মুসলমানের দৃঢ়বিশ্বাস বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান মুসলমান ছিলেন এবং কোনো কাদিয়ানীর হাতে বায়াআত গ্রহণ করেননি। এদিকে কাদিয়ানীদের সুস্পষ্ট বক্তব্য যারা মির্যার হাতে বায়াআত গ্রহণ করেনি শুধু তারাই কাফের নয় বরং যারা মির্যা গোলাম আহমদ কাদিয়ানীর নামও শুনে নাই তারাও কাফের। নিচের উদ্ধৃতিটি দেখুন:

“যে সকল মুসলমান হয়রত মসীহে মওউদের (মির্যা গোলাম আহমদ কাদিয়ানী) বায়াআতের মধ্যে শামিল হয়নি, হযরত মসীহে মওউদে নামও শুনেনি তারা কাফের, ইসলামের সীমানা থেকে বাহিরে, এটাই আমার বিশ্বাস।” (রেফারেন্স : আইনায়ে সাদাকাত, মির্যা মাহমুদ আহমদ, কাদিয়ানের খলীফা, পৃষ্ঠা ৩৫)

পরিষ্কার যে, কাদিয়ানী সম্প্রদায় বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে মুসলমান নয় বরং কাফের মনে করে। এই হল তাদের আসল চেহারা এবং চরম বিশ্বাস। কিন্তু এ সকল বিশ্বাস লুকিয়ে এখন স্মারক গ্রন্থে বঙ্গবন্ধুর নাম ভাঙ্গিয়ে খাওয়া মুনাফেকী নয় কি? এই দেখুন কিভাবে বঙ্গবন্ধুর নাম ভাঙ্গিয়ে তারা খেতে বসেছিল!



স্কিনশট দ্রষ্টব্য

কাদিয়ানীধর্মের বিশ্বাসানুযায়ী বঙ্গবন্ধুর জন্য মাগফিরাতের দোয়া করাও জায়েজ না। নিচের উদ্ধৃতিটি দেখুন!

প্রশ্ন: আহমদী জামাতের অন্তভূৃক্ত নয় (কাদিয়ানী নয়) এমন কোনো ব্যক্তির জন্য মৃত্যুর সংবাদ পেয়ে এ কথা বলা কি জায়েয যে, আল্লাহ্ তাকে মাফ করেন এবং জান্নাত নসিব করেন?

জবাব: আহমদী নয় এমন ব্যক্তির কুফরী সুস্পষ্টভাবে প্রমাাণিত। আর কাফেরদের জন্য ক্ষমার দোয়া করা জায়েয নয়। (আল ফজল, কাদিয়ান, ৭ইং ফেব্রুয়ারী ১৯২১ইং, ভলিয়ম ৮/৫৯)

কি বিস্ময়কর কপটতা মাগফিরাতের দোয়া করা যার জন্য হারাম করলেন, তার বক্তব্য দিয়ে রাজনৈতিক স্বার্থোদ্ধার !!


কুরআনের সাথে কি অবমাননাকর আচরণ ! কুরআনের উপর পূর্ণ ঈমান এনেও তারা মুসলামন হতে পারল না, কাফেরই থেকে গেল। তাহলে কুরআন কি হেদায়েত ও নাজাতের জন্য যথেষ্ট নয়?

যারা কুরআনকে এভাবে অসম্পূর্ণ বলতে চায় তাদের ব্যাপারে এ উম্মতের নতুন করে ভাবা উচিৎ। কুরআনকে যারা এভাবে অবমাননা করল তারা ইসালাম ও মুসলিম উম্মার জন্য কতটা বিষতুল্য তা নিয়ে কালক্ষেপণ না করে এখনই সিদ্ধান্ত নেয়া উচিৎ। হিন্দুরা, খ্রীষ্টানরা আমাদের প্রতিবেশী হিসেবে যুগযুগ ধরে বসবাস করছে তারা কেউই বঙ্গবন্ধুকে কাফের মনে করে না। কিন্তু কাদিয়ানী সম্প্রদায় বঙ্গবন্ধুকে অ-আহমদী হিসেবে কাফের মনে করে এটাই দেশবাসিকে উদ্বিগ্ন করেছে। জন্মলগ্ন থেকেই মুসলিম জাতির সাথে ষড়যন্ত্র ও বিশ্বাসঘাতকতার ঘোলাটে ইতিহাস কাদিয়াানীদের রয়েছে। তারা বৃটিশ সরকার থেকে নিয়ে স্যার জাফরুল্লাহ (পাকিস্তানের সাবেক বিদেশ-মন্ত্রী) পর্ব শেষ করে এখন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ঘরে হাজির হয়েছে। সুতরাং এই জাতি ও জাতির নেতৃবৃন্দের সতর্ক হওয়া দরকার, যারা আজ আনুকূল্য পেতে চেষ্টা করছে, তাদের আসল পরিচয় কী এবং এই জাতি ও জাতির বীর সন্তানদের ব্যাপারে তাদের প্রকৃত বিশ্বাস কত নোংরা এবং ইতিহাস কত জঘন্য?

সম্পূর্ণ লিখাটির ডকুমেন্ট ও বিস্তারিত তথ্যের জন্য এখানে ক্লিক করুন

মূল: মাওলানা আব্দুল মজিদ, ঢাকা

লিখক, প্রিন্সিপাল নূরুন্নবী (এম. এ)

আমার ফেইসবুক পেইজ এখানে

মন্তব্য ১ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (১) মন্তব্য লিখুন

১| ১২ ই ডিসেম্বর, ২০১৮ সন্ধ্যা ৬:৫৯

NurunNabi বলেছেন: কে মুসলমান আর কে কাফের তা শুধমাত্র আল্লাহ জানেন - একটি চটকদারবুলী Click This Link

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.