![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
লিখক শিক্ষাবিদ ও গবেষক
বিসমিল্লাহির রহমানির রহিম
দুঃখের বিষয় হল, মির্যা কাদিয়ানী সাহেব কর্তৃক লেখিত ঊর্দূভাষার বইগুলো পড়ার যোগ্যতা নেই বলে অধিকাংশ আহমদী "আহমদিয়ত" সম্পর্কে পুরোপুরি অন্ধকারে। তারা জানেই না মির্যার বইগুলোর কোথায় কিসব লিখা আছে!
প্রমাণস্বরূপ এ দেখুন মির্যা গোলাম আহমদ সাহেব নিজের বইতে এসব কী লিখে গেছেন! সত্যানুসন্ধানীবন্ধুরা তবেই "আহমদিয়ত" এর হাকিকত (রহস্য) পর্যন্ত অনায়াসে পৌঁছে যেতে পারবেন, ইনশাআল্লাহ ! [সম্পূর্ণ লিখাটির সত্যতা খতিয়ে দেখার জন্য স্কিনশট দ্রষ্টব্য]।
মির্যা সাহেবের বই থেকেঃ-
মির্যা গোলাম আহমদ কাদিয়ানী সাহেব নিজের বইতে '৭৩ ফেরকা' সম্পর্কে লিখেছেনঃ- تمہارے ہاتھ میں کیا ہے؟ بجز ان حدیثوں کے جو تہتر فرقوں نے بوٹی بوٹی کرکے باہم تقسیم کر رکہی ہیں ۔ رؤيت حق اور یقین کہاں ہے؟ اور دوسرے کے مکذوب ہو ۔
অর্থাৎ তোমাদের হাতে সেসব হাদীস ছাড়া আর কিবা আছে যেগুলো তিয়াত্তর (৭৩) ফেরকার লোকেরা টুকরো টুকরো করে ভাগ ভাটোয়ারা করে রেখেছে!? (এই তিয়াত্তর ফেরকার ভেতর) সত্য-দর্শন আর বিশ্বাস রইল কোথায়? (এরা তো) একে অন্য দ্বারা মিথ্যুক সাব্যস্ত হয়ে গেছে।" (রূহানী খাযায়েন খণ্ড নং ১৭ পৃষ্ঠা নং ৪৫৬)। স্কিনশট দেখুনঃ-
লক্ষণীয়, মির্যা সাহেবের এই কথা দ্বারা পরিস্কার বুঝা যাচ্ছে, তার 'আহমদিয়া জামাত' এর উত্থান হওয়ার আগেই তিয়াত্তর ফেরকা পূর্ণতা লাভ করে। সুতরাং তারটা আর যাইহোক ৭৩তম সংখ্যার বাহিরে।
তারপর মির্যা কাদিয়ানী সাহেব তার লিখনীর আরেক স্থানে লিখেছেনঃ- یہی زمانہ ہے جس میں ہزارہا بدعات اور بے شمار ناپاک رسومات اور ہریک قسم کے شرک خدا کی ذات اور صفات اور افعال میں اور گروہ در گروہ پلید مذہب جو تہتر تک پہنچ گئے پیدا ہو گئے اور اسلام جو بہشتی زندگی کا نمونہ لیے کر آیا تھا اس قدر ناپاکیوں سے بہر گیا جیسے ایک سٹری ہوئی اور پرنجاست زمین ہوتی ہے ۔
অর্থাৎ "এই যামানাতেই দল উপদলে (বিভক্ত) অপবিত্র দল(গুলো) যা তিয়াত্তর পর্যন্ত পৌঁছে গেছে তাদের মধ্যে হাজার হাজার বিদয়াত আর অগণিত অপবিত্র কুসংস্কার এবং খোদাতায়ালার জাত, গুণাবলী ও কর্মে প্রত্যেক ধরণের শিরিক সৃষ্টি হয়ে গেছে। যেই ইসলাম বেহেশতী জিন্দেগীর নমুনা নিয়ে এসেছিল সেটি এ পরিমাণ অপবিত্রতা দ্বারা ভরপুর হয়েগেছে, যেমন নাকি (এটি) দুর্গন্ধযুক্ত ও ভরপুর অপবিত্র ভূমি!" (রূহানী খাযায়েন খণ্ড নং ১৭ পৃষ্ঠা নং ২২৬) স্কিনশট দ্রষ্টব্যঃ--
খুব খেয়াল করুন, মির্যা কাদিয়ানীর সুস্পষ্ট বক্তব্যঃ "তিয়াত্তর (৭৩) সংখ্যায় পৌঁছে যাওয়া দলগুলোতে হাজার হাজার বিদয়াত আর প্রত্যেক প্রকারের শিরিক ... সৃষ্টি হয়ে গেছে!"
তাই এতেও পরিস্কার হয়ে গেল যে, তার প্রবর্তিত 'আহমদিয়া জামাত' অন্ততপক্ষে তিয়াত্তর (৭৩) সংখ্যার ভেতরে নেই, বরং বাহিরে। ফলে তারা নিজেরই অজান্তে উম্মতে মুহাম্মদিয়ার গণ্ডি থেকে পুরোপুরি বিচ্ছিন্ন। কেননা এই উম্মতের ফেরকাগুলো ৭৩ সংখ্যাকেও ছাড়িয়ে যাবে এমন কোনো হাদীস কেউ দেখাতে পারবেনা।
সম্পর্কিত আলোচনাঃ-
কাদিয়ানী সম্প্রদায়ের উত্থান সম্পর্কে যাদের ন্যূনতম ধারণা আছে তারা জানেন যে, এদের উত্থান হয় ১৮৮৯ সালের ২৩-ই মার্চ পাকিস্তানের লুধিয়ানে এক কনফারেন্সের মাধ্যমে। মির্যা গোলাম আহমদ কাদিয়ানী সাহেব সে সময় লোকজনের কাজ থেকে প্রথম বাইয়াত নেন। ১৮৮০ সাল থেকে 'মুজাদ্দিদ' দাবিদার মির্যা সাহেব কিন্তু তখনও 'মুজাদ্দিদ' দাবীর উপর-ই বহাল ছিলেন। যদিও তার বছর তিনেক পর-ই ইমাম মাহদী এবং মাছীলে ঈসা ইত্যাদি দাবীগুলো পর্যায়ক্রমে আগে বাড়তে থাকে। যারা বাইয়াত নেন তারা কিন্তু বাইয়াত নিয়েছিলেন তাকে স্রেফ একজন 'মুজাদ্দিদ' মনে করেই; ইমাম মাহদী কিবা 'নবী' মনে করে নয়। তাদেরই পরবর্তী প্রজন্ম আজকে বংশ পরম্পরায় 'আহমদী'!
অপর দিকে 'এই উম্মতে মুহাম্মদিয়া দল উপদলে নানা অপবিত্র দলে বিভক্ত হয়ে তিয়াত্তর (৭৩) ফেরকায় পৌঁছে গেছে' বলে উল্লিখিত উক্তিটি তিনি করেছিলেন ১৯শতকের আগস্ট মাসে। এবার তার উক্ত দীর্ঘ বক্তব্য হতে যেই কয়েকটা বিষয় বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য তা নিচে তুলে ধরছি। যেমনঃ-
(১) মির্যা সাহেবের বক্তব্য দ্বারা সুস্পষ্ট হয়ে গেল যে, তার প্রবর্তিত নতুন 'আহমদিয়া জামাত' নামের দলটির উত্থান হওয়ার বহু পূর্বেই উম্মতে মুহাম্মদিয়া ৭৩ ফেরকায় পৌঁছে গেছে।
(২) মির্যা সাহেবের 'আহমদিয়া জামাত' উক্ত ৭৩ ফেরকার বাহিরে নতুন আরেকটি দল। অন্যভাবে বলতে গেলে তার দলটি বড়জোর ৭৪তম ফেরকায় পর্যবসিত।
(৩) মির্যা সাহেবের বক্তব্যের আরেকটি অংশ হচ্ছে, ৭৩ ফেরকার সবাই অপবিত্র। এরা সবাই হাজার হাজার বিদয়াত এবং শিরিকে আবর্তিত। কোনো একটাও সত্য-দর্শন আর সঠিক বিশ্বাসের উপর নেই (বললেন, মির্যা সাহেব)। যাইহোক তারপর চলুন, এ সম্পর্কে রাসূল (সাঃ)-এর হাদীসটি কী বলে জেনে নিই।
আলোচ্য তিয়াত্তর (৭৩) ফেরকা'র হাদীসঃ-
উম্মতে মুহাম্মদিয়া (নিজেদের ঈমান আকিদাগত পদস্খলন হেতু) ৭৩ ফেরকায় বিভক্ত হয়ে যাবে যা রাসূল (সাঃ) এর হাদীস থেকে পাওয়া যায়। হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে আমর (রাঃ) হতে তিরমিযী শরীফে বর্ণিত আছে, রাসূল (সাঃ) ইরশাদ করেছেনঃ وَإِنَّ بني إسرائيل تَفَرَّقَتْ عَلَى ثِنْتَيْنِ وَسَبْعِينَ مِلَّةً، وَتَفْتَرِقُ أُمَّتِي عَلَى ثَلاَثٍ وَسَبْعِينَ مِلَّةً ،كُلُّهُمْ فِي النَّارِ إِلاَّ مِلَّةً وَاحِدَةً، قَالُوا: وَمَنْ هِيَ يَا رَسُولَ اللهِ؟ قَالَ: مَا أَنَا عَلَيْهِ وَأَصْحَابِي
অর্থাৎ বনী ইসরাইল সম্প্রদায় বায়াত্তর ফেরকায় বিভক্ত হয়েছিল আর আমার উম্মত অচিরেই তিয়াত্তর ফেরকায় (দল) বিভক্ত হয়ে যাবে। এদের একটি মাত্র দল ছাড়া অন্যান্য সবাই জাহান্নামী। তখন (সাহাবায়ে কেরামের পক্ষ হতে) জিজ্ঞাসা করা হল, ওই জান্নাতী দল কারা? উত্তরে তিনি (সাঃ) বললেন, মা আনা আলাইহি ওয়া আসহাবী তথা আমি এবং আমার সাহাবীগণ যেই মত ও পথে আছি এই মত ও পথের অবলম্বনকারীগণ-ই (ওই জান্নাতী দল)।" হাদীসের মানঃ হাসান ও সহীহ।
হাদীসের সারঃ-
দীর্ঘ হাদীসের আলোকে যা বুঝা গেল তা হচ্ছে, উম্মতে মুহাম্মদিয়া দুঃখজনকভাবে (আকিদাগত দিক থেকে) আস্তে আস্তে লাইনচ্যূত হতে হতে মোট ৭৩ ফেরকায় পৌঁছে যাবে। এদের মধ্যে একটিমাত্র দল জান্নাতী হবে। হাদীসে এদলটির পরিচয়ও দেয়া হয়েছে।
প্রসঙ্গতঃ ফেরকা (উপদল) এক জিনিস আর 'মানহাজ' (কতেক বৈধ ব্যতিক্রম নিয়মের অনুসরণ) আরেক জিনিস। যেমন, দেওবন্দি, আহলে হাদিস, বেরলবি কিবা সালাফি ইত্যাদি এগুলো একেকটা 'মানহাজ' কিন্তু ফেরকা নয়। কেননা ইসলামের শাখাগত কিছু বিষয়ে এদের মাঝে মতপার্থক্য থাকলেও তবে মৌলিক বিষয়ে এরা সবাই অভিন্ন তথা আহলে সুন্নাহ'র অন্তর্ভুক্ত।
পক্ষান্তরে ইসলামের মৌলিক বিশ্বাসে মতপার্থক্য দ্বারাই "ফেরকা" সৃষ্টি হয়। যেমন - শীয়া ইছনা আশারিয়া বা রাফেজি, খারেজি, মু'তাজিলা, কাদরিয়া, মুজাচ্ছিমা, মুশাব্বিয়া ইত্যাদি। কিন্তু কাদিয়ানী সম্প্রদায় ফেরকা থেকেও খারিজ। তার কারণ এরা ইসলামে-ই নেই। যেহেতু এদের কালেমার অন্তর্নিহিত মর্মার্থ ভিন্ন। এদের নবীও ভিন্ন সংক্ষেপে।
মির্যা সাহেবের প্রবর্তিত 'আহমদিয়া জামাত' ও রাসূল (সাঃ) এর হাদীসের শিক্ষাঃ-
মির্যা সাহেবের বক্তব্য প্রমাণ করে যে, তার 'আহমদিয়া জামাত' অনেকটা 'বাহায়ী জামাত' এর অবিকল একটি পৃথক সংখ্যালঘু ধর্মীয়গোষ্ঠী । এরা কোনোভাবেই উম্মতে মুহাম্মদিয়ার অন্তর্ভুক্ত নয়। কারণ উম্মতে মুহাম্মদিয়ার ছোটবড় ফেরকাগুলো রাসূল (সাঃ) এর ফরমান অনুসারে তিয়াত্তর (৭৩) ফেরকা'র বাহিরে যাবেনা। অধিকন্তু মির্যা সাহেবের স্বীকারোক্তিও 'আহমদিয়া জামাত' ৭৩ ফেরকার বাহিরে ৭৪তম আরেকটি নতুন ধর্মীয় সম্প্রদায়। যাদের কালেমার অন্তর্নিহিত মর্মার্থ ভিন্ন। যাদের নবীও ভিন্ন। যাদের বিশ্বাস, কাদিয়ানে অনুষ্ঠিত 'জলসা' একটি ছায়া-হজ্ব! এমনকি যারা টাকার বিনিময়ে নিজেদের লোকদের দুনিয়াতেই "জান্নাতী মাক্ববারা" এর মাধ্যমে জান্নাত পেয়ে দেয়ার ঠিকাদারী নিয়ে বসে থাকে। (নাউযুবিল্লা)।
সুতরাং কোনো কাদিয়ানীর জন্য উচিত হবেনা, ৭৩ ফেরকার হাদীস উল্লেখপূর্বক নিজেদের ৭৩তম দলের অন্তর্ভুক্ত বলে গণ্য করতে চাওয়া। নচেৎ মির্যা গোলাম আহমদ কাদিয়ানী সাহেব ৭৩তম (মুক্তিপ্রাপ্ত) দলটিসহ সব কয়টি ফেরকা সম্পর্কে যা যা লিখে গেছেন, প্রথমে তা মিথ্যা এবং বানোয়াট বলে প্রত্যাখ্যান করতে হবে। তার আগে নয়। আল্লাহ তায়ালা আমাদের সকল আহমদীবন্ধুকে পবিত্র মন নিয়ে বিষয়গুলো অনুধাবন করার তাওফিক দিন। আমীন।
লেখক প্রিন্সিপাল নূরুন্নবী
©somewhere in net ltd.