নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

মারুফ হোসেন

Tsundoku

মারুফ হোসেন › বিস্তারিত পোস্টঃ

হোম, সুইট হোম!

২৫ শে মার্চ, ২০১৩ দুপুর ১:৪৭

বাড়ি এসেছি তিন দিন হয়ে গেছে, অথচ একদিন থাকার কথা ছিল। বাড়ির মায়া ছাড়াতে পারি না, তাই এখনো নগরজীবনে ফেরা হয়ে উঠেনি। গ্রামের মধুর আলস্য চুটিয়ে উপভোগ করছি। এই তিনদিন আড্ডা, ঘোরা আর খেলা নিয়েই আছি। শুক্রবার রাতে এসেই চরম একটা ঘুম দিলাম। আহা! এই ঘুমের জন্যই তো বারবার বাড়ি আসা। এত আরাম বাড়ি ছাড়া আর কই পাব। আমার মনে হয় জীবনে যারা গ্রামে যায়নি তাদের চেয়ে দুর্ভাগা আর কেউ নেই। অনেক ছেলে-মেয়েই আছে যারা বাংলাদেশে থাকে অথচ জীবনে কখনো গ্রামে যায়নি-কথাটা অনেকের কাছে অবিশ্বাস্য লাগলেও এটি কিন্তু মোটেও অবিশ্বাস্য না। আমি নিজে এমন বেশ কিছু ছেলে-মেয়ে দেখেছি যারা জানেনা ধানগাছ দেখতে কেমন, তাদের ধারণা ধানগাছের কাঠ দিয়ে তক্তা বানানো হয়।এদেরকে দেখলে হাসি পায়, গ্রাম সম্পর্কে এদের চিন্তা-ভাবনা শুনে আতংকিত হই ভবিষ্যত প্রজন্ম গ্রাম চিনবে তো? এদের নিয়ে দেশের সংস্কৃতিকর্মীদের চিন্তা করা উচিত, তাদের উচিত দেশের গ্রামীণ সংস্কৃতিকে আরো বেশি করে মানুষের সামনে তুলে ধরা।







দুপুরে নাদিম ফোন দিয়ে বলল-'বিকেলে বাসায় আয়।' আমি বললাম-'ঠিক আছে কাক্কু, তুমি রেডি থাইকো।' বিকেলে স্কুল মাঠে গিয়ে দেখি মিঠু, আবির, সাখা, ফরিদ ফুটবল খেলতে এসেছে। সবার সাথেই অনেকদিন পরে দেখা, তাই ঐখানেই আড্ডায় মেতে উঠলাম। নাদিমকে ফোন দিয়ে স্কুল মাঠে আসতে বললাম; শালা আইতাছি বইলা হাওয়া হইয়া গেল। প্লেয়ার শর্ট পড়ে যাওয়ায় মিঠুরা আমাকে নিয়ে টানাটানি লাগালো, আমি বললাম-'আমারে নিয়া টানাটানি করতাচস ক্যান, আমি কি ফুটবল খেলি নাকি? আমারে ছাইড়া দে।' কে শোনে কার কথা, ওরা টানাটানি করতেই লাগল-'দোস্ত, তোর খেলন লাগব না, খালি খাড়ায়া থাকবি।' কি আর করা অনুরোধের ঢেঁকি গিলতেই হল। আধা ঘন্টা খালি বলের পিছে পিছে দৌড়ানই সার হল, বলে লাথি আর দিতে পারলাম না। শেষমেষ বিরক্ত হয়ে উঠে পড়লাম। নাদিমরে ফোন দিয়া দিলাম ঝারি-'কিরে লাট সাহেবের নাতি, আজকা আসতে পারবি, নাকি পালকি পাঠামু?' ব্যাটা নাকি ঘুমায়া গেছিলো। ঝারিতে দেখলাম কাজ হইছে, জনাব দশ মিনিটের ভেতর হাজির। বাঙ্গালীরে সবসময় টাইটের উপর রাখতে হয়-শক্তের ভক্ত নরমের যম। ও আসার পরে কলেজ মাঠের দিকে একটা চক্কর দিলাম, তারপরে আবার স্কুল মাঠে এসে দেখি মিঠুদের খেলা শেষ। আমি ভেবে পাইনা শালারা ফুটবল খেলার জন্য এত্ত স্ট্যামিনা পায় কোথা থেকে, আমি তো দুই দৌড় দিয়েই শেষ। মাগরিবের আজানের পরে সবাই মিলে আয়রন ব্রিজে গেলাম। ব্রিজটা সড়িলের তৈরি,

আমরা মজা করে আয়রন ব্রিজ বলি। ব্রিজটা আড্ডা দেওয়ার জন্য দুর্দান্ত জায়গা, চারপাশে ধানক্ষেত, সেখান থেকে প্রবল বাতাস আসে। সেই বাতাসে শরীরের ভেতর পর্যন্ত ঠান্ডা হয়ে যায়। আমরা ব্রিজে বসার কিছুক্ষণের মাঝেই শাতিল এলো। আড্ডা দিতে দিতে এক্সময় মিঠু বলল-'চল রায়পুরা থেকে ঘুরে আসি, শামসুর রাহমানের বাড়ি আছে। এছাড়া খুব সুন্দর নদীও আছে। তোরা গেলে আমি আপাকে বলে রাখব, খাওয়া-দাওয়াও হেব্বি হইব।'(ওর বোনের বাড়ি রায়পুরা)। একথা শুনে আমি লাফিয়ে উঠলাম-'ল, যাই।' কিন্তু অন্যরা গাঁই-গুঁই করতে লাগল; শেষমেষ জনমতের অভাবে আর যাওয়া হল না, ট্যুর ক্যানসেল। অবশ্য ট্যুর ক্যানসেল হওয়াটা আমাদের জন্য কোন নতুন ঘটনা না, ক্যান্সেল না হলেই বরং অবাক হতাম। কারণ এ পর্যন্ত আমাদের বেশিরভাগ ট্যুরই ক্যানসেল হয়ে গেছে। গতবার তো জাফলঙের বাসে এক পা দিয়েও নাদিম শালার জন্য সিলেট থেকে ফিরে আসতে হয়েছিল। সেবার আর বন্ধুরা মিলে স্বপ্নের জাফলং ভ্রমণ হয়নি। এর পর থেকে কোন ট্যুর নিয়ে আর উচ্চাশা করি না। প্রায় আড়াই ঘন্টা চাপার জোরে দেশ উদ্ধার থেকে শুরু করে বন্ধুদের প্রেম উদ্ধার-সবই করলাম; এরপর বাড়ি যাওয়ার জন্য উঠলাম। আবার সেই অন্ধকার রাতে চাঁদের আলোয় বাড়ির পথে হাঁটা দিলাম। আবার সেই পুরনো সুখের অসাধারণ অনুভূতি। চাঁদের আলো গায়ে মাখতে মাখতে বাড়ি ফিরলাম।





রাতে প্রচুর খেলাম, প্রচন্ড ক্ষিদে পেয়েছিল। খাওয়ার পরে আমি টিউবওয়েলে হাত ধুই। আজও টিউবওয়েল থেকে হাত ধুয়ে ফিরছিলাম, তখনই একটা দৃশ্যে চোখ আটকে গেলো। বাড়ির পিছনে যে রেইন্ট্রি গাছটা আছে তার ফাঁক গলে নরম চাঁদের আলো এসে ভিজিয়ে দিচ্ছে সমস্ত উঠোন। খুব অসাআধারণ কোন দৃশ্য না, কিন্তু তখনকার পরিস্থিতির বিবেচনায় দৃশ্যটা আমার চোখে অসাধারন হয়ে ধরা দিল। পুরো দৃশ্যটা দেখে বুকের ভেতরে চিন চিনে সুখের ব্যাথা অনুভব করতে লাগলাম। নারিকেল গাছের পাতার ফাঁক দিয়ে যখন নরম-স্নিগ্ধ জোছনা এসে পুরো পৃথীবি ভাসিয়ে নিয়ে যাচ্ছিল তখন সবকিছুর প্রতি-ই কেমন যেন মায়া মায়া লাগছিল। অপার্থিব স্নিগ্ধ চাঁদের আলোয় অনেকক্ষণ জোছনা-স্নান করলাম। আগেও অনেকবার জোছনা-স্নান করেছি কিন্তু আজকের মত উপভোগ করিনি কখনোই। এ বিশ্বব্রহ্মান্ডে মনে হয় চাঁদের আলোর চেয়ে মায়াবী, স্নিগ্ধ আর স্বর্গীয় কোন কিছু নেই। সমগ্র প্রাণিজগতের মধ্যে একমাত্র মানুষের পক্ষেই সম্ভব মায়াবী এ সৌন্দর্য মন-প্রাণ দিয়ে উপভোগ করা। মানুষ হিসেবে পৃথীবিতে পাঠানোর জন্য সৃষ্টিকর্তার প্রতি আমি কৃতঞ্জ। কিন্তু মাঝে মাঝে আফসোস হয় মস্ত এ পৃথীবিটার অরায় সব সৌন্দর্যই আমি দেখতেপাব না বলে। হুমায়ূন স্যার এক সাক্ষাতকারে মানুষের স্বল্প আয়ু নিয়ে আফসোস করেছিলেন। তিনি বলেছিলেন একটা সাধারণ কচ্ছপ গড়ে ২০০-৩০০ বছর বাঁচে, অথচ সৃষ্টির সেরা জীব মানুষ কিনা মাত্র ৭০-৮০ বছর বাঁচে। একজন মানুষ এই অপরূপা পৃথীবির রূপ-রস-সৌন্দর্য উপভোগ করার জন্য এত কম সময় কেন পাবে? সত্যি-ই তো কি এওন ক্ষতি হত যদি এমন মানুষ ১০০-১৫০ বছর বাঁচত? যাহোক আমার যা আছে তা নিয়েই আমি সন্তুষ্ট হতে চাই। এমনও তো হতে পারত মানুষ না হয়ে আমি তো পশু-পাখিও হতে পারতাম, তখন কেমন হত? তখন তো আমি এমন একটা সুইট হোম পেতাম না, এমন করে চাঁদের আলোতে জোছনা-স্নান করতে পারতাম না। থাক বাবা, নাই মামার চেয়ে কানা মামা ভালো। এইবার ঘুম যাই, শান্তির ঘুম, যেই ঘুমের জন্য এত কাহিনী।



(১৫ মার্চ, ২০১৩)

মন্তব্য ০ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (০) মন্তব্য লিখুন

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.