নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

মারুফ হোসেন

Tsundoku

মারুফ হোসেন › বিস্তারিত পোস্টঃ

দূরদর্শন এবং ঝিঁ ঝিঁ পোকা (ক্রিকেট) সমাচার-১

২৪ শে মার্চ, ২০১৪ রাত ৯:৩৬

বাল্যকাল হইতেই 'দূরদর্শন' নাম্নীয় চৌকোনা একটা বাক্সের প্রতি ছিল সীমাহীন তীব্র কৌতুহল। ইহার ভিতরে মানব-মানবীরা কি সুন্দর করিয়া কথা বলিয়া হাসাহাসি করিত তাহা দেখিতাম আর মুগ্ধ হইয়া যাইতাম। আর ভাবিতাম-"আহা! আমিও যদি ইহার ভিতরে যাইতে পারিতাম কি মজাই না হইত।" আস্তে আস্তে শৈশব পার করিয়া কৈশোরে উপনীত হইলাম। তখন একটু একটু করিয়া বুঝিতে শিখিয়াছি ভদ্রলোকেরা ইহাকে আদর করিয়া 'টেলিভিশন' নামে অভিহিত করিয়া থাকেন।



কৈশোরে আরেকটা জিনিস নিয়া খুব মাতিয়াছিলাম, উহার নাম ক্রিকেট। কি চমৎকার করিয়া একজন ব্যাট নামের একটা কাঠের বস্তু নিয়া মাঠে নামে(পরে জানিয়াছিলাম তাহার নাম ব্যাটসম্যান)। আরেকজন বল নামের একটা গোলাকার বস্তু ব্যাটসম্যানের দিকে ছুঁড়িয়া মারিয়া তাহার পিছনের স্টাম্প নাম্নীয় তিনটা খাড়া দন্ড ভূপাতিত করিবার আপ্রাণ চেষ্টা করে(পরে আরও জানিয়াছিলাম তাহাকে বোলার বলে)। ব্যাটসম্যান বলটাকে ব্যাট সহযোগে ইচ্ছামত ঠ্যাঙায়, আর বাকি দশজন মানব সন্তান দৌড়াদৌড়ি করিয়া বলটাকে কুড়াইয়া বোলারের কাছে ফেরত পাঠায়(তাহারা ফিল্ডার)। এই আজব খেলার মাহাত্ম্যে একেবারে অভিভূত হইয়া গেলাম(আহা! মধু, মধু!)।



যাহা হউক, ক্রিকেট লইয়া মাতিলাম। দিবা নাই, রাত্রি নাই চব্বিশ ঘন্টা শুধুই ক্রিকেট আর ক্রিকেট। ক্রিকেট ছাড়া আর সকল শব্দ আমার কর্ণকুহরে পৌঁছাইতে ব্যর্থ হইয়া মাথা কুটিয়া মরিতে লাগিল। মজনু লাইলীর প্রেমে মজিল'র মত দশা হইয়াছে আমার। অবশ্য কৈশোরে পাড়ার জ্যেষ্ঠ ভ্রাতাদিগের রাজত্বে যাহা খেলিতাম তাহাকে ক্রিকেট খেলা বলা যায় না, উহাকে বলা যায় 'মুটেগিরি'। ভ্রাতাদিগের পিছনে পিছনে ব্যাট, বল, স্টাম্প প্রভৃতি সরঞ্জামাদি বহন করিয়া তাহাদের কষ্ট লাঘব করিয়া মুটের কাজ করিতাম। ইহার বদৌলতে মাঝে মাঝে ফিল্ডিং করিবার সুযোগ পাইতাম, এছাড়া বেশিরভাগ সময় মাঠের ধারে বসিয়া তাহাদের খেলা দেখিয়া আমোদিত হইয়া হাততালি দেওয়া ছাড়া আর কোন কাজ ছিল না। অবশ্য ইহাতেই আমরা কনিষ্ঠরা কৃতার্থ হইয়া যাইতাম(আমাদিগের জন্ম সার্থক)।



আবার ফিরিয়া আসি টেলিভিশনে। কৌশোরকাল অতিক্রমকালে সারা গাঁ খুঁজিলে হাতে গুনিয়া দুইটা কি তিনটা টেলিভিশন পাওয়া যাইত। চ্যানেলও দেখিতে পাইতাম মাত্র দুইটা-'বিটিভি' ও ভারত মাতার 'দূরদর্শন'। বিটিভিতে সেই সময়ে মাসে দুইটা চলচ্চিত্র প্রচারিত হইত, আর মাঝে মাঝে বাংলাদেশের ক্রিকেট ও ফুটবল খেলা থাকিলে তাহা প্রচার করিত। তখন সারা গাঁয়ে সাজ সাজ রব পড়িয়া যাইত, মনে হইত গাঁয়ে বুঝিবা ঈদ লাগিয়াছে। যুবা হইতে বৃদ্ধ, ললনা হইতে শিশু, সবাই বসিয়া পরিতাম টেলিভিশন নাম্নীয় আশ্চর্য যন্ত্রের কেরামতি দেখিতে। ইহা যেন আলাদিনের চেরাগ, সুইচ টিপিলেই কোথা হইতে যেন রাজ্যের বিস্ময় আসিয়া হাজির হয়। বাংলাদেশ ক্রিকেট দলের খেলা থাকিলে তো কথাই ছিল না। সবাই মিলিয়া খেলা দেখিতাম টেলিভিশনে আর ধারাবিবরণী শ্রবণ করিতাম বাংলায় বেতারযন্ত্রে। টেলিভিশনে বিলেতি(ইংরিজি) ভাষায় ধারাবিবরণেে দিত বলিয়া উহার কন্ঠরোধ করিয়া বেতারে বাংলায় ধারাভাষ্য শ্রবণ করিতাম। আহা! কি যে মিষ্টি লাগিত বাংলায় ধারাভাষ্য শ্রবণ করিতে তাহা বলিয়া বুঝাইতে পারিব না।



তাহার পরে কাটিয়া গেল বেশ কিছুটা সময়। কৌশোর পার করিয়া তারুন্যে উপনীত হইব হইব করিতেছি, নতুন পাখা গজাইয়াছে। জ্যেষ্ঠ ভ্রাতাদিগকে সরাইয়া ঝিঁ ঝিঁ পোকা (ক্রিকেট) দলে তাহাদের স্থলাভিষিক্ত হইয়াছি, আর কে পায়! সবকিছু ভুলিয়া ক্রিকেটে মত্ত হইলাম। শয়নে-স্বপনে শুধুই ক্রিকেট আর ক্রিকেট। ক্রিকেট খাই, ক্রিকেট পড়ি, ক্রিকেট স্বপ্ন দেখি, ক্রিকেট নিঃশ্বাস লই ।



ক্রিকেট খেলিয়া আর টেলিভিশনে খেলা দেখিয়া সময় বেশ ভালই অতিবাহিত হইতেছিল। ঠিক সেই সময়ে একদিন শুনিলাম গাঁয়ে 'ডিশ' নামের এক বস্তুর আবির্ভাব হইয়াছে। মনে মনে ভাবিলাম-'লে বাবা! ইহা আবার কী? খায় না গায়ে দেয়?' ইহার ব্যাপারে অতীব আগ্রহী হইয়া তখনই ময়নাতদন্তে বাহির হইয়া পড়িলাম।অবশেষে স্বচক্ষে পর্যবেক্ষণ ও তদন্ত করিয়া জানিতে পারিলাম যে ইহা খায়ও না পড়েও না। ইহার কল্যাণে রাতারাতি টিভি চ্যানেল দুইটা হইতে বাড়িয়া প্রায় শ'খানেক হইয়া গিয়াছে। আমার তো দিশাহারা অবস্থা । বেশ কিছুক্ষণ টেলিভিশনের রিমোট নাড়িয়া-চাড়িয়া দেখিলাম দেশি-বিদেশী হরেক রকম চ্যানেল আছে। তাহার মাঝে কিছু খেলার চ্যানেলও আছে। চিন্তা করিলাম-যাক বাবা! এইবার আরো ভাল করিয়া খেলা উপভোগ করিতে পারিব (হায় কপাল)!

মন্তব্য ০ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (০) মন্তব্য লিখুন

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.