নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

মারুফ হোসেন

Tsundoku

মারুফ হোসেন › বিস্তারিত পোস্টঃ

সেবা প্রকাশনীর রূপান্তর/অনুবাদ কড়চা

১৯ শে জুলাই, ২০১৬ সকাল ৭:৪৯

জ্ঞান হওয়ার পর থেকে বাড়িতে আর কিছু দেখি আর না দেখি, সব সময়ই অল্প-বিস্তর বই দেখে এসেছি। তাই পড়া কম হলেও বইয়ের প্রতি আলাদা একটা টান আছে। বইয়ের জন্য ভালোবাসার সিংহভাগের দখল নিয়ে আছে প্রজাপতির মনোগ্রামওয়ালা একটা প্রকাশনী। প্রজাপতির কথা বলার সাথে সাথেই নিশ্চয়ই সবাই বুঝে ফেলেছেন সেবা প্রকাশনীর কথা বলেছি। সেবার প্রতি এই গাঢ় ভালোবাসার কারণ হচ্ছে, হাফপ্যান্ট ছেড়ে প্যান্ট পরতে শুরু করেছি সেবার বই পড়তে পড়তে, স্কুল থেকে কলেজ, কলেজ থেকে ভার্সিটি ধরেছি সেবার বই পড়তে পড়তে। তাই সেবার জন্য কলিজায় আলাদা একটা টান বরাদ্দ থাকেই। এজন্য প্রিয় এই প্রকাশনীর দিকে যখন দেখি কেউ অহেতুক আঙুল তোলে, তখন কষ্ট লাগে।

একটা অভিযোগ অনেকের কাছ থেকে মাঝে মাঝেই শোনা যায় - সেবা প্রকাশনী বিশাল বিশাল বইয়ের অতি-সংক্ষিপ্ত রূপান্তর/অনুবাদ করে বইগুলোর সৌন্দর্য, মাধুর্য নষ্ট এবং বিকৃত করে ফেলেছে। সংক্ষিপ্ত অনুবাদ করে মূল বইয়ের এই বিকৃত অঙ্গহানি (তাহাদের মতে!) করার কারণে তারা প্রায়ই বুদ্ধিজীবী টাইপ গালাগালি দিয়া সেবার মায়রে বাপ কইরা দেয়! তো তাদের দলে যোগ দিয়া সেবার মায়রে বাপ কইরা দেয়ার আগে চলেন এই সংক্ষিপ্তকরণের কারণ, কাদের জন্য এই সংক্ষিপ্তকরণটা করা হয় ইত্যাদি দুই-একটা জিনিস জানার চেষ্টা করি।

আপনারা নিশ্চয়ই 'অ্যাব্রিজড' (Abridged) এবং 'আনঅ্যাব্রিজড' (Unabridged) অর্থাৎ 'সংক্ষেপিত' এবং 'অসংক্ষেপিত' টার্ম দুইটার সাথে পরিচিত।
এদের মধ্যে Abridgement বা সংক্ষেপকরণ প্রক্রিয়ার মানে হলো, কোন বই বা অন্য কোন সৃজনশীল কাজের উৎস বা মূলভাব বজায় রেখে সেই বই/কাজটাকে কাটছাঁট করে কমিয়ে আনা।

এখন এই সংক্ষেপকরণ প্রক্রিয়া কেন করা হয়, এর কারণটা জানা জরুরী।
একটা বইকে সংক্ষিপ্ত করার একটা কারণ হচ্ছে, বইটাকে আরও বেশি সাধারণ মানুষের কাছে পৌঁছে দেয়া।
আরেকটা কারণ হচ্ছে, বইটা যেন দ্রুত এবং সহজে পড়ে ফেলা যায়।

কোন বইয়ের অ্যাব্রিজড (Abridged) ভার্শন প্রকাশ করার সবচেয়ে বড় কারণটা হলো বিশ্ব সাহিত্যের ক্লাসিক বইগুলো যেন শিশু-কিশোররা খুব সহজে পড়তে পারে। বিশ্ব সাহিত্যের ক্লাসিক বইগুলোর ভাষা অত্যন্ত জটিল এবং বইগুলো সাইজেও বেশ বড়সড়। তাই এত কঠিন ভাষায় বিশাল বিশাল এ বইগুলো পড়া স্বাভাবিকভাবেই শিশু-কিশোরদের পক্ষে পড়া সম্ভব না। শিশু-কিশোররা যাতে এই ক্লাসিকগুলোর স্বাদ আস্বাদন করতে পারে, সেজন্য বইগুলোকে কেটেছেঁটে, সম্পাদনা করে ভাষা সহজবোধ্য কিশোরদের উপযোগী করে অ্যাব্রিজড বা সংক্ষিপ্ত সংস্করণে রূপান্তর করা হয়। বইগুলো বাচ্চাকাচ্চাদের জন্য করা হয় বলে অনেক ক্ষেত্রেই মূল বইয়ের কঠিন ভাষা বর্জন করে বাচ্চাদের উপযোগী সহজ ভাষা ব্যবহার করা হয়। যেমন, সেবা থেকে প্রকাশিত নিয়াজ মোরশেদ কর্তৃক রূপান্তরিত বঙ্কিমচন্দ্রের 'কপালকুণ্ডলা' বাংলা সাহিত্যের ক্লাসিকগুলোর Abridgement বা, সংক্ষেপকরণের একটি প্রকৃষ্ট উদাহরণ। এ বইয়ে নিয়াজ মোরশেদ কিন্তু বঙ্কিমের দাঁতভাঙা কঠিন ভাষা ব্যবহার করেননি, কিশোরদের উপযোগী ভাষা ব্যবহার করেছেন। বইয়ের আকারও কমে বনসাই সাইজের হয়ে গেছে কিশোরদের জন্য। তেমনি গত বছর, পল্টনে ভিক্টর হুগোর বাংলা অ্যাব্রিজড ভার্শন দেখলাম ১৫০ পৃষ্ঠার মতো, যেখানে মূল বইটা ৬০০ পৃষ্ঠার কাছাকাছি। এই সংক্ষেপকরণ প্রক্রিয়াটা শুধু বাংলাদেশে সেবাই করে না সাড়া বিশ্বেই শিশু-কিশোরদের উপযোগী সিংহভাগ ক্লাসিক বইয়ের অ্যাব্রিজড ভার্শন প্রকাশ করে থাকে, যেখানে অ্যাব্রিজড বই মূল বইয়ের অর্ধেক, এক-তৃতীয়াংশ, এমনকি এক-
চতুর্থাংশেও নেমে আসে।

এখন আসি সেবার কথায়। লক্ষ্য করলে দেখবেন, সেবা যেসব অতি-সংক্ষিপ্ত করে রূপান্তর/অনুবাদ করেছে তার শতকরা ৯৮ ভাগই (১০০ ভাগও হতে পারে।) কিশোর ক্লাসিক সিরিজের। তার মানে, এই বইগুলো আপনার-আমার মতো বুড়া ধাড়িদের জন্য না, শিশু-কিশোরদের জন্য। বাচ্চারা যেন বিশ্বসাহিত্যের অমূল্য এই রত্নগুলো সবচেয়ে কম দামে পড়তে পারে সেজন্য তাদের জন্যই এই বইগুলো রূপান্তর করেছে সেবা। এখন আপনি যদি এই বয়সে এসে কিশোরদের উপযোগী বই পড়তে যান এবং সেটা পড়ে অভিযোগও করেন যে, সেবা বইটার কিছুই রাখল না, দেশের অনুবাদ শিল্পটাই একেবারে ধ্বংস করে দিয়েছে, তাহলে ব্যাপারটা 'সালিশ মানি তালগাছ আমার' টাইপ হয়ে গেল। এজন্য, অতি-সংক্ষিপ্ত এই অনুবাদগুলো হাতে নিয়ে শাপ-শাপান্ত করার আগে আসেন বইটা হাতে নিয়ে উল্টেপাল্টে দেখে নিই বইটা কিশোর ক্লাসিক কি না এবং চিন্তা করি আমার বয়স কত আর আমার চাহিদা কী! আপনি অ্যাডাল্ট বয়সে আইসা সেবার কিশোরোপোযোগী বই হাতে নিবেন আর আশা করবেন সেই বই অ্যাডাল্টদের জন্যে লেখা, তা তো হয় না।

অনেক কথা বইলা ফেলছি, আর না। সো ফ্রান্স, সেবার মায়রে বাপ কইরা দেয়ার আগে আসেন মাথাটা একটু খাটাই।

মন্তব্য ৭ টি রেটিং +৬/-০

মন্তব্য (৭) মন্তব্য লিখুন

১| ১৯ শে জুলাই, ২০১৬ সকাল ৯:৫৩

শাহ আজিজ বলেছেন: বয়স ব্যাপার না , মনটা তারুন্যপূর্ণ থাকলেই হবে।

ক্লাস ৫ এ দস্যু বনহুর দিয়ে শুরু। স্কুলের টিফিন টাইমে বাইরে না গিয়ে ওই বই পড়তাম । দাতা বন্ধু নাসিম । আমরা হরিহর আত্মা । বাবা চলে গেলেন ৭এ থাকতেই। মুক্তিযুদ্ধের পর আমরা বেশ স্বাধীন । মা টাকা দিতেন আমি বই কিনতামৈ, সেবা প্রকাশনীর । গৃহ শিক্ষক বাড়িতেই থাকতেন আমি খাতার নিচে বৈ রেখে চুরি করে পড়তাম। ৯এ ভোল পালটাল ভারতীয় লেখকদের বৈ হাতে পেয়ে , শত শত বই বড় ভাইয়ের । কলেজে নতুন জীবন , নতুন পরিবেশ , হুমায়ুন পড়ে চমকিত হলাম , সাদত হাসান মানটো , কৃষন চন্দর , খুসওয়ান্ত সিং জাগিয়ে তুলল আমায়। প্রবাসে খুব একাকি ফিল করতাম বইয়ের অভাবে । ঢাকায় চিঠি দিলাম সেবার ২০ খানা বই পাঠাও অমুকের হাতে। সামারের ছুটিতে রাত জেগে বই পড়তাম পাশে লালপ্রাসাদের স্বপ্ন আর লু স্যুন রেখে। বইগুলো ক্রমে জুনিয়ার ছাত্রদের হাতে গায়েব হয়ে গেল।
আপনার শেষ কথাগুলো সঠিক কিন্তু বয়স্করা ওই বই পড়বে না তা কি করে হয়? পড়ার কোন শেষ নেই।
৭৭ সালে রাতে নিউমার্কেটের কাচাবাজারে বসে ফিগার ড্রইং করছি । পেছনে কেউ দাড়িয়ে আমায় দেখছেন। কিছু বাদে তিনি আমায় বললেন যেভাবে করছ সেভাবে হবে না। বলে কি এই লম্বা চশমা পরা লোকটি । আমি রেগে গিয়ে তাকে বললাম তাহলে আপনিই একে দিননা ! আমার সহপাঠী পড়ে আমায় বলল উনি সেই সেবার আনোয়ার হোসেন । লজ্জা পেলাম ।

১৯ শে জুলাই, ২০১৬ রাত ১০:২৩

মারুফ হোসেন বলেছেন: এভাবেই সেবা প্রজন্ম থেকে প্রজন্মান্তরে যোগসূত্র হয়ে আছে।

২| ১৯ শে জুলাই, ২০১৬ সকাল ৯:৫৬

আবুল হাসান নূরী বলেছেন: বইয়ের দামের কথাটাও বলা উচিত। সেবা প্রকাশনী বেশ স্বল্প দামে পাঠকদের কাছে বই পৌঁছে দেয়ার কারণেই বিশ্ব সাহিত্যের ক্লাসিক বইগুলো পড়ার সুযোগ পেয়েছেন অনেকে।

১৯ শে জুলাই, ২০১৬ রাত ১০:২৫

মারুফ হোসেন বলেছেন: বাচ্চারা যেন বিশ্বসাহিত্যের অমূল্য এই রত্নগুলো সবচেয়ে কম দামে পড়তে পারে সেজন্য তাদের জন্যই এই বইগুলো রূপান্তর করেছে সেবা।

৩| ১৯ শে জুলাই, ২০১৬ সন্ধ্যা ৭:৪৫

আবুহেনা মোঃ আশরাফুল ইসলাম বলেছেন: সহমত।

৪| ২০ শে জুলাই, ২০১৬ রাত ১:২২

আমি তুমি আমরা বলেছেন: ভাল বলেছেন।

৫| ২৯ শে মার্চ, ২০২০ বিকাল ৫:০৪

ইসিয়াক বলেছেন: চমৎকার লাগলো আপনার লেখা।
এক সময় প্রতিদিন নির্দিষ্ট বই এর দোকানে প্রতিদিন খোঁজ নিতাম সেবা প্রকাশনীর কোন নতুন বই বের হলো কিনা। বের হলেই কিনে ফেলতাম এবং পড়া শুরু করে দিতাম।
সুন্দর সেই দিনগুলি এখনো মনে দোলা দেয়।
শুভকামনা।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.