নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

মারুফ হোসেন

Tsundoku

মারুফ হোসেন › বিস্তারিত পোস্টঃ

অনুমান - লরেন্স ব্লোক/মারুফ হোসেন

১৬ ই সেপ্টেম্বর, ২০১৬ দুপুর ১২:৩৭


অনুমান (The Ehrengraf Presumption)
মূলঃ লরেন্স ব্লোক
রুপান্তরঃ মারুফ হোসেন

‘তাহলে ব্যাপারটা দাঁড়াচ্ছে এমন,’ আলভিন গর্ট বলল। ‘আপনি চুক্তির ভিত্তিতে ক্রিমিনাল কেস নিয়ে কাজ করেন। এমনকি খুনের কেসও?’
‘বিশেষ করে খুনের কেস নিয়ে কাজ করি।’
‘ক্লায়েন্ট যদি বেকসুর খালাস পায় তাহলে আপনি ফি নেন। যদি সে দোষী প্রমাণিত হয়, তবে আপনি কোন ফি নেন না। শুধু খরচ বাদে, তাই তো?’
‘আপনার ধারনার প্রথম অংশটুকু সঠিক,’ মার্টিন অ্যারেনগ্রাফ বলল। খর্বাকায় উকিলের ঠোঁটে ঝুলে থাকা ক্ষীণ হাসিটা চোখ স্পর্শ করতে পারেনি। ‘আমি কি ভেঙে বলব?’
‘অবশ্যই, একেবারে খুঁটিনাটি সহ বলুন।’
‘আপনার শেষ পয়েন্টটা প্রথমে বলি। নিজের খরচ আমি নিজেই বহন করি এবং এগুলোর কোনও বিল ক্লায়েন্টের হাতে ধরিয়ে দেই না। আমার ফি-তেই সবকিছু অন্তর্ভুক্ত। একই চুক্তির আওতায়, ক্লায়েন্ট যদি দোষী প্রমাণিত হয়, তাহলে আমাকে কানাকড়ি ফি-ও দিতে হবে না।’
‘দারুণ তো।’
‘ব্যাপারটা অনন্য না হলেও একটু অদ্ভুত তো বটেই। আপনার বাকি কথা সত্যি। অর্থের বিনিময়ে চুক্তি ভিত্তিক কেস নেওয়া, কেস জিতলে মোটা অংকের টাকা নেওয়া কিংবা ক্লায়েন্টের লস হলে তার ভাগীদার হওয়া অ্যাটর্নিদের জন্য নতুন কিছু না। আমার নীতি একদম পরিষ্কার, নির্জলা। উপযুক্ত সেবা না পেলে ক্লায়েন্ট কেন পয়সা খরচ করবে? মি. গর্ট, আমার কথা-যে পরিমাণ টাকা খরচ করি, সেই মানের সেবা চাই। আর টাকা খরচ করতে আমার আপত্তি নেই।’
‘এবার ব্যাপারটা আমার কাছে পরিষ্কার।’ বলে শার্টের পকেট থেকে সিগারেট বের করে ধরাল গর্ট, ফুসফুস ভরে ধোঁয়া টেনে নিল।
জেলে থাকার অভিজ্ঞতা তার এই প্রথম। কয়েদীরা যে পকেটে ম্যাচ রাখতে পারে, তাদের নিজের কাপড় পরতে পারে, পকেটে টাকা রাখতে পারে আর আর হাতে ঘড়ি পড়ার অনুমতি পায় জেনে সে যারপরনাই বিস্মিত।
তবে স্ত্রীর খুনি হিসেবে প্রমাণিত হলে পরিস্থিতি পুরোপুরি বদলে যাবে। তাহলে ওকে ‘আসল’ জেলে যেতে হবে, আর সেখানকার নিয়ম-কানুন আরও বেশি কড়া। সে যাতে আত্মহত্যা করতে না পারে, সতর্কতাবশত ওর কোমর থেকে বেল্ট খুলে নেওয়া হয়েছে। ফিতাবিহীন জুতো পরে আছে বলে বাঁচোয়া, নাইলে ফিতাও খুলে নেয়া হতো। যাই হোক, অবস্থা আরও খারাপ হতে পারত।
অ্যারেনগ্রাফ ছোটখাট একটা মিরাকল ঘটাতে না পারলে, পরিস্থিতি আরও খারাপ হবে।
‘মাঝে মাঝে আমার ক্লায়েন্টরা আদালতের চেহারাও দেখে না,’ এখন অ্যারেনগ্রাফ কথা বলছে। ‘শুধু জেলের গরাদ থেকে না, ট্রায়ালে যাওয়ার আগেই ক্লায়েন্টকে বাঁচাতে পারলে আমি সবচেয়ে খুশি হই। তাই আপনাকে বুঝতে হবে, আমি ফি পাব কি পাব না সেটা আপনার খালাস হওয়া না হওয়া আর কেসের গতিপ্রকৃতির ওপর উপর নির্ভর করে। আপনাকে মুক্ত করবার জন্য আমি কতটুকু খাটা-খাটনি করলাম কিংবা আমার কত সময় লাগল, তার ওপর নির্ভর করে না। সহজ ভাষায়, যে মুহূর্ত থেকে আপনি আমাকে নিয়োগ দেবেন, তখন থেকেই আপনার ভবিষ্যৎ আমার আগ্রহের কেন্দ্রবিন্দুতে থাকবে। আর যে মুহূর্তে আপনি খালাস পাবেন এবং আপনার বিরুদ্ধে আনা সব চার্জ তুলে নেওয়া হবে, ঠিক তখন থেকে আমার ফি বকেয়া হবে এবং পুরো ফি পরিশোধ করতে আপনি বাধ্য বলে ধরা হবে।
‘আপনার ফি কত?’
‘এক লাখ ডলার।’ সহজ গলায় বলল মার্টিন।
আলভিন গর্ট টাকার অংকটা হিসেব করে নিল মনে মনে, তারপর চিন্তিত ভঙ্গিতে নড করল। সবাই জানে অ্যাটর্নিরা বিরাট অংকের ফি নেয়। আলভিন গর্ট ‘কেতাদুরস্ত’ পোশাক দেখলেই চিনতে পারে। আর এ মুহূর্তে অ্যারেনগ্রাফের পরনে যে পোশাক সেটাকে কেতাদুরস্তই বলা চলে। পরনে ব্রোঞ্জ রঙা, হাঙরের চামড়ার স্যুট। পালিশ করা জুতোজোড়া চকচক করছে। টাইটা খুব দামী। অ্যারেনগ্রাফের চুলে দক্ষ নাপিতের ছোঁয়া, সেই সাথে সুবিন্যস্ত গোঁফটা আরও দর্শনিয় করে তুলেছে তার মুখটাকে। এই ব্যক্তিত্ব যার, ছয় অংকের ফি সে হাঁকাতেই পারে।
‘টাকার অংক নিয়ে আমার সমস্যা নেই।’ গর্ট জানাল।
‘আমি তা জানি।’
‘স্বাধীনতার জন্য সানন্দে আপনাকে এক লাখ ডলার দিতে রাজি আছি। তবে ব্যর্থ হলে আপনি এক পয়সাও পাবেন না। ঠিক?’
‘একদম।’
গর্ট খুঁটিনাটিগুলো আবার খতিয়ে দেখল, তারপর আবার নড করল। ‘তাহলে আমার কোন আপত্তি নেই। তবে – ’
‘হ্যাঁ?’
আলভিন গর্টের চোখ দুটো উকিলকে মেপে নিল। গর্ট দ্রুত সিদ্ধান্ত নিতে অভ্যস্ত। এখনও তা-ই নিল।
‘আপনার আপত্তি থাকতে পারে,’ গর্ট আস্তে করে বলল। ‘একটা সমস্যা আছে।’
‘তা-ই?’
‘কাজটা করেছি আমি,’ নিচু স্বরে বোমাটা ফাটাল গর্ট। ‘আমি ওকে খুন করেছি।’
‘আপনার চিন্তাধারা বুঝতে পারছি,’ বলল মার্টিন অ্যারেনগ্রাফ। ‘আপনাকে নিশ্চয় প্রমাণের স্তূপ দেখানো হয়েছে। আর স্ত্রীর প্রতি দীর্ঘদিনের জমে থাকা ক্ষোভ সম্ভবত তাকে মৃত দেখতে চাওয়ার একটা প্রবণতা জন্ম দিয়েছে আপনার ভেতর। সেই সাথে শৈশব থেকে তৈরি হওয়া নানা ধরনের অপরাধবোধ জমা হয়েছে। এসবের সাথে আরেকটা ব্যাপার যোগ করুন-কারণ ছাড়া কোন ঘটনা ঘটে না। আপনি জেলে, খুনের অভিযোগে অভিযুক্ত; সেজন্য আপনার মনে এই ধারণা বদ্ধমূল হয়ে বসেছে যে, আপনি আসলেই খুন করেছেন নিজের স্ত্রীকে।’
‘কিন্তু খুনটা আমি সত্যিই করেছি।’
‘বাজে কথা। একদম বাজে কথা।’
‘কিন্তু আমি অকুস্থলে ছিলাম,’ গর্ট প্রতিবাদ করল। ‘আমি কোন গল্প ফাঁদিনি। ঈশ্বরের দোহাই দিয়ে বলছি, আমি পাগল নই। আপনি কি চাচ্ছেন আমাকে পাগল প্রমাণ করে সাজার হাত থেকে বাঁচাতে? তা হলে বলুন। দরকার পড়লে নাহয় মাঝ রাতে হিস্টিরিয়াগ্রস্তের মত চিৎকার করব নয়তো নগ্ন হয়ে সেলের এক কোণে বসে থাকব। ব্যাপারটা উপভোগ করব বলে মনে হয় না। তবে আপনি যদি এভাবে কেস সাজাতে চান, তাহলে নাহয় দাঁত চেপে কাজগুলো করে যাব। কিন্তু…’
‘বোকার মত কথা বলবেন না,’ বিরক্তিতে নাক কুঁচকাল মার্টিন। ‘আমি আপনাকে পাগলাগারদে ভর্তি করতে আসিনি, খালাস করতে এসেছি।’
‘বুঝলাম না,’ ভুরু কুঁচকাল গর্ট, চারদিকে তাকাল সতর্ক দৃষ্টিতে। ‘আপনি কি ভাবছেন জায়গাটায় আড়িপাতা যন্ত্র আছে?’ ফিসফিস করে জিজ্ঞেস করল।
‘স্বাভাবিকভাবে কথা বলতে পারেন। এই জেলে কোনও মাইক্রোফোন লুকিয়ে রাখা হয়নি। কাজটা শুধু অবৈধই নয়, এখানকার নীতি বিবর্জিতও বটে।’
‘আমি কিছুই বুঝতে পারছি না। দেখুন, জিনি’র পন্টিয়াক-এর হুডের নিচে ডিনামাইটটা আমিই রেখেছি। স্টার্টারের সাথে একটা ক্যাবল বেঁধে দিয়েছি। সব কিছু আমিই করেছি, যেন ও উড়ে যায়। এখন আপনি কীভাবে বলেন যে...’
‘মি. গর্ট,’ অ্যারেনগ্রাফ এক হাত তুলে তাকে থামতে ইশারা করল। ‘প্লিজ, মি. গর্ট।’
আলভিন গর্ট থেমে গেল।
‘মি. গর্ট,’ অ্যারেনগ্রাফ চালিয়ে গেল, ‘আমি নির্দোষদের রক্ষা করি আর দোষীদের রক্ষা করার দায়িত্বটা ছেড়ে দেই আমার চেয়ে চালাক মানুষের হাতে। আর এই কাজটা আমার কাছে সহজ মনে হয়, কারণ আমার সব ক্লায়েন্ট নির্দোষ। আপনি কি জানেন, আইনের একটা তত্ত্ব আছে?’
‘আইনের তত্ত্ব?’
‘নির্দোষিতার সম্ভাব্যতা।’
‘কীসের সম্ভাব্যতা? ও, দোষী প্রমাণিত হওয়ার আগে সবাই-ই নির্দোষ, তাই বলতে চাইছেন তো?’
‘অ্যাংলো-স্যাক্সন আইনের একটা মতবাদ। ফ্রেঞ্চরা নির্দোষিতা প্রমাণের আগ পর্যন্ত অভিযুক্তকে দোষী ধরে নেয়। তবে আমি, মি. গর্ট, নির্দোষিতার সম্ভাব্যতা বলতে আরেকটু বেশি কিছু বুঝি,’ অ্যারেনগ্রাফ টানটান হয়ে দাঁড়াল। ‘আমি একে অ্যারেনগ্রাফের অনুমান বা প্রবল সম্ভাবনা তত্ত্ব বলি।’
‘অ্যারেনগ্রাফের অনুমান বা প্রবল সম্ভাবনা তত্ত্ব?’
‘মার্টিন এইচ. অ্যারেনগ্রাফের সকল ক্লায়েন্ট,’ বলল অ্যারেনগ্রাফ, ‘অ্যারেনগ্রাফের দৃষ্টিতে নির্দোষ। এক্ষেত্রে অ্যারেনগ্রাফের দৃষ্টিভঙ্গিই চূড়ান্ত বিবেচ্য, ক্লায়েন্টের দৃষ্টিভঙ্গি নয়।’ ঠোঁট চেপে হাসল উকিল। ‘এখন, আমরা কি কাজের কথায় আসতে পারি?’

আধঘণ্টা পর। আলভিন গর্ট এখনও কটের এক কোণে বসে আছে। মার্টিন অ্যারেনগ্রাফ পায়চারি করছে খাঁচায় বন্দি সিংহের মতো, তর্জনি আর বুড়ো আঙুলের সাহায্যে ডলে ডলে গোঁফ মসৃণ করছে। বাম হাত ট্রাউজারের পকেটে। গর্ট সিগারেট ফুঁকছে। তার সিগারেট হলে, ক্লায়েন্টের মুখোমুখি দাঁড়াল অ্যারেনগ্রাফ।
‘প্রমাণগুলো সব মারাত্মক,’ স্বীকার করল। ‘আপনার চেহারার সাথে মিল আছে এমন এক লোককে ট্যাটারস্টল ডেমোলিশন সাপ্লাই থেকে ডিনামাইট ও ব্লাস্টিং ক্যাপ কিনতে দেখা গেছে। তা-ও আপনার স্ত্রীর মৃত্যুর দশদিন আগে। বিক্রির রসিদে আপনার স্বাক্ষরও পাওয়া গেছে। একজন ক্লার্ক আপনাকে নার্ভাস অবস্থায় দেখেছে বলে মনে করতে পারছে।’
‘নার্ভাস তো হবই,’ গর্ট স্বীকার করল। ‘আগে কখনও খুন করিনি।’
‘প্লিজ, মি. গর্ট। আপনি যদি খুন করার অপরাধ মেনে নিয়ে প্যাঁচার মতো মুখ করে বসে থাকতে চান, তো থাকুন। তবে আমাকে ওসব বাজে কথা শোনাতে আসবেন না। এখন আমি প্রমাণ নিয়ে ব্যস্ত। মাল বিক্রির রসিদে আপনার স্বাক্ষর পাওয়া গেছে, সাথে ফ্রি হিসেবে ক্লার্ক ব্যাটা চিনতে পেরেছে আপনাকে। লোকটা এমনকি আপনার পরনে কোন্ কাপড় ছিল সেটাও মনে রেখেছে। বেশিরভাগ খদ্দের ট্যালারস্টলে কাজের পোশাকে আসে, কিন্তু আপনার পরনে ছিল বার্গান্ডি ব্লেজার আর সাদা ফ্লানেলের ট্রাউযার। আর পায়ে ট্যাসেলের জুতো।’
‘আজকাল ট্যাসেলের জুতো ছাড়া অন্যকিছু পাওয়া যায় না।’
‘পাওয়া কঠিন। তবে অসম্ভব না। যাক গে, যতদূর বুঝলাম আপনার স্ত্রীর একজন প্রেমিক ছিল। মি. ব্যারি ল্যাটিমোর।’
‘ওই ল্যাটিমোর শুয়োরটা!’
‘আপনি সম্পর্কটার ব্যাপারে জানতেন এবং ব্যাপারটি মেনে নেননি।’
‘আমি ওদের ঘৃণা করতাম। ওদের দু’জনকে একসাথে গলাটিপে মারতে চেয়েছিলাম আমি। আমি…’
‘প্লিজ, মি. গর্ট। শান্ত হোন।’
‘আ..আমি দুঃখিত।’
অ্যারেনগ্রাফ দীর্ঘশ্বাস ফেলল, ‘আপনার বউ নিউ মেক্সিকোতে বোনের কাছে একটা চিঠিও লিখেছিলেন। তার কি নিউ মেক্সিকোতে আসলেই কোন বোন আছে?’
‘হ্যাঁ, গ্রেস নাম। সকোরোয় থাকে।’
‘আপনার স্ত্রী চিঠিটা মৃত্যুর চার দিন আগে পোস্ট করেছেন। ওতে লিখেছেন, ল্যাটিমোরের সাথে তার সম্পর্কের কথা আপনি জানতেন।’
‘এর কয়েক সপ্তাহ আগে থেকেই আমি জানতাম।’
‘আরও লিখেছেন, জীবন নিয়ে তিনি শঙ্কায় আছেন। “পরিস্থিতি দিন দিন আরও নাজুক হচ্ছে, কী করা উচিৎ কিছুই বুঝতে পারছি না। তুমি ওর রাগ সম্পর্কে জান। আমার ভয় হচ্ছে, ও যেকোন কিছু করে বসতে পারে। আমি নিজের নিরাপত্তা নিয়ে আতঙ্কে আছি। একদম অরক্ষিত অবস্থায় আছি!”’
‘হুম...গোখরার মতো অরক্ষিত।’ গর্ট বিড়বিড় করল।
‘কোনও সন্দেহ নেই। হাতের লেখাটা মিলিয়ে দেখতে চাই। আপনার স্ত্রীর হাতের লেখার নমুনা দরকার আমার।’
‘আপনি নিশ্চয়ই চিঠিটাকে জাল সন্দেহ করছেন না?’
‘জাল হতেও তো পারে, তাই না? হাতের লেখার নমুনা কোথায় পাওয়া যাবে সে ব্যাপারে নিশ্চয় সাহায্য পাব আপনার কাছ থেকে। এবার আসুন দেখি, আমাদের হাতে আর কী প্রমাণ আছে? স্ত্রীর মৃত্যুর চার পাঁচ ঘণ্টা আগে আপনাকে তার গাড়ির হুডে কিছু একটা করতে দেখেছে এক প্রতিবেশী।’
‘ড্যাম! ও ঠিকই দেখেছে। আমি…’
‘প্লিজ, মি. গর্ট। আমার সামনে পুরনো কাসুন্দি ঘাঁটবেন না।’
‘স্যরি, আর হবে না মি. অ্যারেনগ্রাফ।’
‘হ্যাঁ। এবার আসুন ব্যাপারটা খতিয়ে দেখি। গ্যারেজে দু’টো গাড়ি ছিল, তাই না? আপনার বুইক আর আপনার বউয়ের পন্টিয়াক। আপনার গাড়ি বামপাশে আর আপনার স্ত্রীর গাড়ি ডানপাশে পার্ক করা ছিল।’
‘জিনি যাতে গাড়িটা সোজা বের করতে পারে সেজন্যে গাড়িটা ডানপাশে রাখত। বামপাশে পার্ক করা থাকলে, বের হবার সময় আঁকাবাঁকা পথে বের হতে হয়। জিনি বামপাশ দিয়ে বের হবার সময় প্রত্যেকবার লনের এক প্রান্তের ওপর গাড়ি তুলে দিত।’
‘আচ্ছা।’
‘কিছু মানুষ লন জিনিসটাকে পাত্তাই দেয় না,’ গর্ট বলল, ‘কারও কাছে আবার খুব গুরুত্বপূর্ণ।’
‘একেক মানুষ একেক রকম, মি. গর্ট। ভোর হওয়ার অল্প আগে মিসেস বোরল্যান্ড আপনাকে একবার দেখেছেন। কয়েক ঘণ্টা পর যখন বিস্ফোরণে আপনার স্ত্রী প্রাণ হারান, তখন আপনি নাস্তা সারছিলেন।’
‘টোস্টেড ইংলিশ কেক আর কফি দিয়ে। আগে জিনি আমাকে ডিম ভেজে দিত, কমলার জুসও বানিয়ে দিত। কিন্তু– ’
‘তিনি কি সাধারণত ওই সময়েই গাড়ি বের করতেন?’
‘না,’ জবাব দিল গর্ট। সোজা হয়ে বসে ভ্রূ কুঁচকাল। ‘অবশ্যই না। ড্যাম ইট, আগে এ কথাটা আমার আসেনি কেন? আমি ভেবেছিলাম ও দুপুর পর্যন্ত বাসায় বসে থাকবে। আমি ঘটনাস্থল থেকে অনেক দূরে থাকতে চেয়েছিলাম...’
‘মি. গর্ট... পুরোনো কাসুন্দি আবারও ঘাঁটছেন?’
‘ওহ, দুঃখিত। হঠাৎ করেই বিস্ফোরণের ধাক্কা টের পাই আর সেই সাথে প্রচণ্ড শব্দ। আপনাকে বলছি, মি. অ্যারেনগ্রাফ, আমি বুঝতেও পারিনি কীসের শব্দ!’
‘তা তো আপনার বুঝতে পারার কথাও নয়, কারণ আপনি কিছু করেননি।’
‘মানে...’
‘ভাবছি আপনার স্ত্রী ওই সময় বাইরে যাচ্ছিলেন কেন। উনি আপনাকে কিছু বলেননি?’
‘না। একটা ফোন এসেছিল আর...’
‘কার ফোন?’
গর্ট আবার ভ্রূ কুঁচকাল, ‘জানলে তো ভালোই হতো। কিন্তু বের হওয়ার ঠিক আগ মুহূর্তে কলটা পেয়েছিল। আমি ভাবছি ফোন কলটার সাথে ঘটনাটার কোন সম্পর্ক আছে কিনা।’
‘আমার কোনও সন্দেহ নেই যে আছে। আপনার স্ত্রীর উত্তরাধিকারী কে ছিল, মি. গর্ট? উনার সমস্ত অর্থ কে পাবে?’
‘টাকা?’ দাঁত বের করে হাসল গর্ট। ‘জিনি ফুটো পয়সার মালিক ছিল না। আমিই তার বৈধ উত্তরাধিকারী ছিলাম, যেমনটি ছিল ও আমার। কিন্তু শুধু আমারই টাকা ছিল। ও শুধু গয়না আর কাপড়চোপড় রেখে গেছে, সেগুলোও আমার টাকায় কেনা।’
‘কোনও ইনস্যুরেন্স?’
‘ঠিক আপনার ফি-র সমান,’ এবার হাঙরের মতো দাঁত বের করে হাসল গর্ট। ‘তবে সেই ইনস্যুরেন্সের এক পয়সাও চোখে দেখিনি আমি। পঞ্চাশ হাজার ডলার, দুর্ঘটনাজনিত মৃত্যুতে দ্বিগুণ ক্ষতিপূরণ। তাহলে দেখা যাচ্ছে, ক্ষতিপূরণের জন্য এক লাখ ডলার পাওনা আমি, আপনার ফি-র সমান। কিন্তু এর এক পয়সাও পাব না।’
‘অপরাধ থেকে কেউ অর্থনৈতিকভাবে লাভবান হতে পারে না,’ অ্যারেনগ্রাফ মন্তব্য করল। ‘তবে আপনাকে নির্দোষ প্রমাণ করা গেলে...’
গর্ট মাথা নাড়ল। ‘তাতে কিছু যায় আসে না। ব্যাপারটা মাত্র সেদিন জানতে পারলাম। আমি যখন ডিনামাইট কিনছিলাম, তখন জিনি ওর উত্তরাধিকার পরিবর্তন করছিল। পুরো এক লাখ ডলার ওই ছুঁচো ল্যাটিমোরের পকেটে যাচ্ছে।’
‘এবার,’ অ্যারেনগ্রাফ বলল, ‘খেলাটা জমে উঠছে।’

দুই সপ্তাহ তিন দিন বাদে মার্টিন অ্যারেনগ্রাফের অগোছালো অফিসে আরামদায়ক চেয়ারে বসে আছে আলভিন গর্ট। হাঁটুর ওপর সাবধানে একটা চেকবই রেখে চেক লিখছে। সে যে ফাউন্টেইন পেন ব্যবহার করছে, সেটার দাম পঁয়ষট্টি ডলার। চেক লেখা হচ্ছে উকিলের সার্ভিস চার্জ শোধ করার জন্য। যদিও এখন মনে হচ্ছে যে টাকার পরিমাণটা একটু বেশিই হয়ে যাচ্ছে, তবে ভালো কাজের মূল্য দিতে জানে সে।
‘এক লক্ষ ডলার,’ চেকের কালি শুকানোর জন্যে বাতাসে ঝাড়তে ঝাড়তে বলল। ‘আজকের তারিখ দিয়েছি, তবে দয়া করে সোমবারে টাকাটা ডিপোজিট করার আগ পর্যন্ত অপেক্ষা করবেন। আমার এজেন্টকে সিকিউরিটিগুলো বিক্রি করে টাকাটা আমার ফান্ডে ট্রান্সফার করে দিতে বলে দিয়েছি। আমি সাধারণত অ্যাকাউন্টে এত টাকা রাখি না।’
‘বুঝতে পেরেছি।’
‘ধন্যবাদ। তবে আপনি কীভাবে আমাকে গরাদের বাইরে নিয়ে এলেন, তা এখনও বুঝতে পারছি না।’
একটা হাসি উপহার দিল অ্যারেনগ্রাফ। ‘সবচেয়ে বড় বাধা ছিল আপনার নিজস্ব মনোভাব। আপনি সত্যি সত্যি স্ত্রীর মৃত্যুর জন্যে নিজেকে অপরাধী ভাবতেন, তাই না?’
‘কিন্তু...’
‘আহ, মাই ডিয়ার মি. গর্ট। দেখুন, আমি একেবারে নিশ্চিত ছিলাম যে আপনি নির্দোষ। অ্যারেনগ্রাফের অনুমান বা প্রবল সম্ভাবনা তত্ত্ব আমাকে আপনার নির্দোষিতা সম্পর্কে নিশ্চিত করেছে। আমার দরকার ছিল এমন একজনকে খুঁজে বের করা, কাজটা করার পিছনে যার যথেষ্ট মোটিভ আছে। আর তেমন একজন হচ্ছে মি. ব্যারি ল্যাটিমোর, আপনার স্ত্রীর প্রেমিক ও উত্তরাধিকারী। মি. ল্যাটিমোরের টাকার দরকার ছিল। তাছাড়া তার সাথে আপনার স্ত্রীর সম্পর্ক জটিল থেকে জটিলতর রূপ নিচ্ছিল।
‘পরিষ্কার বুঝতে পারছিলাম, লোক দেখিয়ে খুন করার মতো মানুষ আপনি নন। সবার সামনে ডিনামাইট কিনা, নিজের নামে বিক্রির রসিদে সই করা–এমন গর্দভের মতো কাজ আপনি কখনোই করবেন না, মি. গর্ট! আপনাকে ফাঁদে ফেলা দরকার ছিল এবং সেই কাজটিই করেছে ল্যাটিমোর।’
‘এবং তারপরই প্রমাণগুলো পেল পুলিশ,’ গর্ট বলল।
‘হ্যাঁ। আমি ওদের বলে দিয়েছিলাম কোথায় খুঁজতে হবে। আপনি নিশ্চয়ই ভেবেছিলেন এসব করেও পার পেয়ে যাওয়ার মতো যথেষ্ট বুদ্ধি রাখে ল্যাটিমোর, তাই না? কিন্তু না, আপনারটার মতোই বার্গান্ডি ব্লেজার আর সাদা ট্রাউযার পাওয়া গেছে তার ক্লজিটের একদম পিছনের দিকে। আর লোকটার ডেস্কের ড্রয়ারে আধ ডজন কাগজ পেয়েছে পুলিশ। ওগুলোতে আপনার সিগনেচার নকল করার জন্য প্র্যাকটিস করেছে সে। ব্যাটা আপনার নাক কাটার ব্যবস্থা প্রায় করে ফেলেছিল।’
‘অবিশ্বাস্য।’
‘এমনকি আপনার জুতোজোড়ার মতোই দু’পাটি জুতো পর্যন্ত যোগাড় করে ফেলেছিল! পুলিশ ওর ক্লজিটে তা-ও পেয়েছে। স্বাভাবিকভাবেই সে এই জুতোজোড়া আগে কখনও দেখেনি বলেছে। আর জ্যাকেট, ট্রাউযার কিংবা আপনার সিগনেচার নকল–সবগুলো অভিযোগ সে অস্বীকার করেছে।’
গর্টের চোখ অনিচ্ছা সত্ত্বেও অ্যারেনগ্রাফের জুতোর দিকে চলে গেল। ব্ল্যাক উইং টিপস পরে আছে উকিল। গায়ের স্যুটটা ছাইরঙা। মেরুন টাই, জামার বোতাম সোনার তৈরি। অ্যারেনগ্রাফের কেতাদুরস্ত পোশাক ও ব্যবহার ওর অফিসের বিশৃঙ্খল অবস্থার সাথে একেবারেই বেমানান।
‘আর আপনার স্ত্রীর বোন গ্রেসের কাছে পাঠানো চিঠিটার কথা আর কী বলব!’ অ্যারেনগ্রাফ ওর কথা চালিয়ে গেল। ‘চিঠিটা আসল। তবে সেটার যে ভিন্ন কোনও অর্থ থাকতে পারে, তা আগে পুলিশ কল্পনাও করতে পারেনি। জিনি যে লোককে ভয় পাচ্ছিলেন, সে লোকের নাম উল্লেখ করেননি একবারও। আরও একবার মনোযোগ দিয়ে পড়ার পর পরিষ্কার হলো যে, লোকটা ল্যাটিমোরও হতে পারে। আর তার পরই গ্রেসের কাছে লেখা আপনার স্ত্রীর আরেকটি চিঠি পাওয়া গেল। চিঠিটা তিনি মৃত্যুর আগের রাতে লিখেছিলেন, তাই পোস্ট করার সুযোগও পাননি। ওতে বোনকে উত্তরাধিকারী বদলানোর বিষয়টা জানিয়েছেন। তাছাড়া আপনি যে ল্যাটিমোরের সাথে তার সম্পর্কের ব্যাপারটা জেনে ফেলেছেন এবং জানার পর ল্যাটিমোর তার সাথে কেমন অবুঝ ও বিপজ্জনক আচরণ করছিল, সেটাও লিখেছেন। এ-ও লিখেছেন যে, ল্যাটিমোর তাকে খুন করার পরিকল্পনা করছে এমন একটা আভাস তিনি পেয়েছিলেন। আপনার স্ত্রী আবারও ইনস্যুরেন্স বদলানোর কথা লিখেছিলেন চিঠিতে, এবার গ্রেসকে উত্তরাধিকারী করে। আর কথাটা ল্যাটিমোরকেও জানিয়ে দিয়েছিলেন, যেন সে টাকার লোভে তাকে হত্যা না করে। কিন্তু তিনি যখন চিঠিটা লিখছিলেন, তখন গাড়িতে ডিনামাইট রাখতে প্রস্তুত হচ্ছিল ল্যাটিমোর।’
অ্যারেনগ্রাফ ব্যাখ্যা চালিয়ে গেল আর গর্ট বিস্ময়ে চোখ দুটো রসগোল্লার মতো বড় বড় করে তার দিকে তাকিয়ে রইল। ওর স্মৃতি কি তাহলে বিশ্বাসঘাতকতা করছে? জিনির মৃত্যু আর তার গ্রেপ্তার হওয়ার জোড়া আঘাত কি গর্টকে মিথ্যে স্মৃতি সাজাতে সাহায্য করেছে?
ড্যাম ইট! ওর স্পষ্ট মনে আছে ডিনামাইট কিনার কথা! জিনির পন্টিয়াকের হুডের নিচে ডিনামাইট বসানোর কথাও ওর স্পষ্ট মনে আছে! তাহলে কীভাবে...
অ্যারেনগ্রাফের অনুমান বা প্রবল সম্ভাবনা তত্ত্ব, ভাবল ও। অ্যারেনগ্রাফ যদি এই পদ্ধতিতে গর্টকে নির্দোষ ভাবতে পারে, তবে গর্ট কেন নিজেকে নির্দোষ ভাবতে পারছে না? কিন্তু ওই চিঠি, ওর সিগনেচার প্র্যাকটিস করার কাগজগুলো, জুতো, ট্রাউযার, বার্গান্ডি ব্লেজার...
‘মি. গর্ট? আপনি ঠিক আছেন তো?’
‘আমি ঠিক আছি।’ বলল গর্ট।
‘আপনাকে এক মুহূর্তের জন্য কেমন ফ্যাকাসে দেখাচ্ছিল। ক্লান্তির জন্য নিশ্চয়ই। পানি খাবেন এক গ্লাস?’
‘না দরকার নেই,’ গর্ট একটা সিগারেট ধরিয়ে বুক ভরে ধোঁয়া টেনে নিল। ‘আমি ঠিক আছি। জানেন কি, সবকিছু আমার কাছে পুরোপুরি পরিষ্কার হয়ে গিয়েছে। আপনার ফি-ও কিছুই মনে হচ্ছে না।’
‘তা-ই?’
‘সত্যি সত্যি খুন করে থাকলে, জিনি হত্যার থেকে কোনও ফায়দা লুটতে পারবে না ল্যাটিমোর। জিনি মনস্থির করেছিল গ্রেসকে উত্তরাধিকারী করবে। কিন্তু কোনও ডকুমেন্ট করেনি। তাই ওর ইনস্যুরেন্সের উত্তরাধিকারী হবে ওর এস্টেট। তার অর্থ হলো, টাকাগুলো এখন আমার। দারুণ, তাই না?’
‘দারুণ,’ তার হাত দুটো সজোরে ঘষল উকিল অ্যারেনগ্রাফ। ‘কিন্তু ডিম ফুটে বেরোনোর আগে মুরগির বাচ্চা নিয়ে সেই প্রবাদটার কথা নিশ্চয়ই জানেন, মি. গর্ট। মি. ল্যাটিমোর কিন্তু এখনও দোষী প্রমাণিত হননি।’
‘আপনি কি মনে করেন ওর বেঁচে যাওয়ার সুযোগ আছে?’
‘সেটা নির্ভর করে,’ আস্তে করে বলল মার্টিন অ্যারেনগ্রাফ। ‘ও কোন অ্যাটর্নির কাছে যাবে তার ওপর।’

এবার অ্যারেনগ্রাফের পরনে নেভি ব্লু স্যুট। তার শার্ট সব সময়ের মতোই সাদা রঙের। পায়ে কালো জুতো, গলায় রাজকীয় নীল টাই। নেকটাইটা অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্যাডমন সোসাইটির। অবশ্য তার সদস্য নয় মি. অ্যারেনগ্রাফ। এই টাইটা অন্য একটা কেসের স্যুভেনির। এই টাই বিশেষ বিশেষ শুভ উপলক্ষ্যে পরে সে।
যেমন এখন জেলে ব্যারি পিয়ার্স ল্যাটিমোরের সাথে দেখা করতে এসেছে।
‘আমি নির্দোষ,’ ল্যাটিমোর বলল। ‘কিন্তু ব্যাপার হলো, কেউ আমার কথা বিশ্বাস করবে, সে আশাও করি না। আমার বিরুদ্ধে অসংখ্য প্রমাণ পাওয়া গেছে।’
‘কোনটাই কিন্তু নিরেট নয়।’
‘হ্যাঁ। কিন্তু ওগুলো একজন মানুষকে ফাঁসির দড়িতে লটকানোর জন্যে যথেষ্ট, তাই না?’ চিন্তাটা করেই ভয়ে কুঁকড়ে উঠল ল্যাটিমোর। ‘আমি জিনিকে ভালবাসতাম। ওকে বিয়ে করতে চেয়েছিলাম। ওকে খুন করার কথা কল্পনাও করতে পারিনা।’
‘আপনাকে বিশ্বাস করি আমি।’
‘বিশ্বাস করেন?’
অ্যারেনগ্রাফ শান্তভাবে নড করল। ‘নিশ্চয়ই বিশ্বাস করি,’ বলল সে। ‘নইলে তো এখানে আসতামই না। শুধু ফল পেলেই ফি নিই আমি, মি. ল্যাটিমোর। যদি আপনাকে খালাস করতে না পারি, এক পয়সাও নেব না।’
‘ব্যাপারটা অদ্ভুত না?’
‘হ্যাঁ।’
‘আমার ব্যক্তিগত উকিল মনে করে, আপনাকে নিয়োগ করে পাগলামি করেছি আমি। সে কয়েকজন ক্রিমিনাল ল-ইয়্যারের কথা জানিয়েছিল আমাকে। কিন্তু আপনার ব্যাপারে আমি জানি। জানি যে আপনি ফল এনে দেন। আর যেহেতু আমি নির্দোষ, তাই চাই এমন কেউ আমার হয়ে লড়ুক, যে আমাকে মুক্ত করতে আগ্রহী।’
‘আমার ফি অনেক চড়া, মি. ল্যাটিমোর।’
‘আমি ধনী নই।’
‘আপনি এক লাখ ডলার ইনস্যুরেন্সের উত্তরাধিকারী।’
‘কিন্তু টাকাটা আমি সংগ্রহ করতে পারছি না।’
‘নিজেকে নিরপরাধ প্রমাণ করতে পারলে পারবেন।’
‘ও,’ বলল ল্যাটিমোর।
‘আমি ব্যর্থ হলে আপনাকে এক পয়সাও দিতে হবে না।’
‘তাহলে আমার জেতার সম্ভাবনা অনেক বেশি, তাই না?’
‘তাই তো মনে হয়,’ অ্যারেনগ্রাফ জবাব দিল। ‘এবার আমরা শুরু করি? নিশ্চিতভাবে আপনাকে ফাঁদে ফেলা হয়েছে, মি. ল্যাটিমোর। ওই ব্লেজার আর ট্রাউযারগুলো নিক থেকে আপনার ক্লজিটে আসেনি। জুতোগুলো আপনাআপনি হেঁটে সেখানে যায়নি। মিসেস গর্টের কাছে লেখা চিঠি দু’টো। একটা পোস্ট করা হয়েছে আর অন্যটা পোস্ট করা হয়নি, নিশ্চয়ই ষড়যন্ত্রের অংশ। কেউ একজন সুপরিকল্পিতভাবে প্রথমে মি. গর্ট এবং পরে আপনাকে ফাঁসিয়েছে। চলুন ভেবে দেখি কার মোটিভ থাকতে পারে।’
‘গর্ট,’ হড়বড় করে বলল ল্যাটিমোর।
‘আমার তা মনে হয় না।’
‘ও ছাড়া আর কে হবে? জিনিকে খুনের পিছনে ওর কারণ ছিল। আর ও আমাকে ঘৃণা করত। তাই ও ছাড়া আর কে...’
‘মি. ল্যাটিমোর, আমার মনে হয় সেটা সম্ভব না। আপনি জানেন, মি. গর্টও আমার ক্লায়েন্ট ছিলেন।’
‘ও, হ্যাঁ, আমি ভুলেই গিয়েছিলাম।’
‘আর আমি ব্যক্তিগতভাবে বিশ্বাস করি তিনি নিরপরাধ।’
‘হুম।’
‘ঠিক যেমন আপনার নির্দোষিতার ব্যাপারে বিশ্বাস করি।’
‘হুম।’
‘তাহলে আর কে হতে পারে? মিসেস গর্ট কি আর কারও সাথে সম্পর্কে জড়িত ছিলেন? তার কি অন্য কোনও প্রেমিক ছিল? অথবা মি. গর্টের কোন প্রেমিকা আছে, যার রাগ ছিল মি. গর্ট আর তার স্ত্রী–দুজনের ওপরেই?’ অ্যারেনগ্রাফ গোঁফের প্রান্ত সমান করল। ‘অথবা সম্ভবত, শুধুই একটা সম্ভাবনা, মিসেস গর্ট নিজেই করেছিলেন একটা সুবিস্তৃত ষড়যন্ত্র?’
‘জিনি?’
‘অসম্ভব কিছু না। তবে আত্মহত্যার সম্ভাবনাটা বাদ দেয়া যায়। চলুন মনে করি...শুধুই মনে করি...মিসেস গর্ট নিজের স্বামীকে হত্যা করে আপনাকে ফাঁসানোর পরিকল্পনা করেছিলেন।’
‘এ কাজ কেন করবে ও?’
‘আমি জানি না। কিন্তু ধরুন, পরিকল্পনাটা করেছিলেন তিনি। ধরুন, তিনি স্বামীকে তার গাড়ি চালাতে বলতেন এবং সে অনুসারে ডিনামাইটের ব্যবস্থাও করেছিলেন। যখন তিনি তাড়াহুড়ো করে বাড়ি ফিরে গেলেন, ভুলে গেলেন ডিনামাইটের কথা। আর ফিরে এসে যখন ইগনিশনে চাবি ঢুকিয়ে স্টার্ট দিলেন… নাটকীয়ভাবে পুরো ঘটনাটা বুমেরাং হয়ে ফিরে এল তার কাছে।’
‘কিন্তু আমি বিশ্বাস করতে পারছি না যে...’
‘মি. ল্যাটিমোর,’ অ্যারেনগ্রাফ কোমল স্বরে বলল। ‘আমরা তাই বিশ্বাস করি যা আমাদেরকে প্রশান্তি এনে দেয়, তাই না? আমাদের উদ্দেশ্য হলো আপনাকে নির্দোষ প্রমাণ করা। আর সেজন্য যা যা করা দরকার, আমি করব’
‘কিন্তু আপনি আমার নির্দোষিতা সম্পর্কে এত নিশ্চিত হচ্ছেন কীভাবে?’
মার্টিন অ্যারেনগ্রাফ নির্মল একটা হাসি উপহার দিল। বলল, ‘মি. ল্যাটিমোর, আপনাকে আমার একটা নীতি সম্পর্কে বলার অনুমতি দিন। আমার একটা নীতি আছে। আদর করে আমি সেটাকে বলি অ্যারেনগ্রাফের অনুমান বা প্রবল সম্ভাবনা তত্ত্ব।’

[রহস্য পত্রিকা, জুলাই ২০১৬ সংখ্যায় প্রকাশিত]

মন্তব্য ৮ টি রেটিং +৫/-০

মন্তব্য (৮) মন্তব্য লিখুন

১| ১৬ ই সেপ্টেম্বর, ২০১৬ দুপুর ১:২৯

বিদ্রোহী ভৃগু বলেছেন: বড়ই ত্যাদর এটর্নি ;)

গাছেরও খায় তলারও কুড়ায় =p~ =p~

+++

১৬ ই সেপ্টেম্বর, ২০১৬ বিকাল ৫:৩৫

মারুফ হোসেন বলেছেন: ভয়াবহ উকিল। খাবি যখন সবই খা। :D

২| ১৬ ই সেপ্টেম্বর, ২০১৬ বিকাল ৪:২৮

গেম চেঞ্জার বলেছেন: হাঃ হাঃ হাঃ :-B এই না হলে উকিল!! ল্যয়ার < লায়ার!!!!!!!

১৬ ই সেপ্টেম্বর, ২০১৬ বিকাল ৫:৩৭

মারুফ হোসেন বলেছেন: উকিল বাপজি ঘোড়েল মাল! B-)

৩| ১৭ ই সেপ্টেম্বর, ২০১৬ সকাল ১১:১০

হাসান মাহবুব বলেছেন: দারুণ থিম। সুন্দর অনুবাদ।

১৭ ই সেপ্টেম্বর, ২০১৬ দুপুর ২:২১

মারুফ হোসেন বলেছেন: ধন্যবাদ। :)

৪| ২৬ শে অক্টোবর, ২০১৬ সন্ধ্যা ৬:৪০

পুলহ বলেছেন: শেষটা একটু এবরাপ্ট মনে হলো, আদারওয়াইজ ভালো লেগেছে।
শুভকামনা ভাই!

৩১ শে অক্টোবর, ২০১৬ দুপুর ২:২০

মারুফ হোসেন বলেছেন: ধন্যবাদ। :)

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.