নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

মারুফ হোসেন

Tsundoku

মারুফ হোসেন › বিস্তারিত পোস্টঃ

সিলেটের চিরকুট

১৭ ই সেপ্টেম্বর, ২০১৬ সকাল ৭:০১


টাইটেলটা ধার করেছি বন্ধুর কাছ থেকে। অনেক ভেবেচিন্তেও এরচেয়ে উপযুক্ত টাইটেল পাইনি এ লেখার জন্য। এজন্য বন্ধুর দেয়া টাইটেলই ধার নিলাম অগত্যা।
যাকগে, কয়েক পদের ভ্রমণকারী আছে জগতে। কেউ কেউ হুটহাট বেরিয়ে পড়তে পারে, কেউ কেউ বের হওয়ার আগে সময়, টাকা-পয়সার হিসাব ইত্যাদি সব ধরনের হিসেব মিলিয়ে তারপর বেড়াতে বের হয়। আমি হলাম দ্বিতীয় পদের ভ্রমণকারী। বহু হিসাবনিকাশ করে তারপর ঘুরতে বের হই। তবে এবারের সিলেট ট্যুর ছিল পুরাই হিসেবের বাইরে। হুট করে বন্ধু বলল, চল সিলেট ঘুইরা দেই! আমি বলি, ২ সপ্তাহ পর। বন্ধু বলে, না, এখনই। এমন ফ্যাসাদে পড়লাম! পকেটও গড়ের মাঠ। এদিকে বন্ধুরা সবাই যাবে। ট্রেনের টিকেটও কিনে ফেলেছে। এই ট্যুর মিস করা যায় নাকি! এর আগে বান্দরবান ট্যুর মিস করেছি অর্থাভাবে। তাই ধারকর্জ করে আমিও শামিল হয়ে গেলাম তীর্থযাত্রায়।
আগস্টের ১০ তারিখ রাত ৯টা ৪৫-এ আমাদের ট্রেন। তো সন্ধ্যায় তল্পিতল্পা গুছিয়ে প্রথমে টিএসসি, তারপর সেখান থেকে সবাই মিলে কমলাপুর হাজির। আমরা মোট ১২ জন। সিলেটের টিকিট পাইনি, তাই শ্রীমঙ্গলের টিকিট কাটা হয়েছে। ট্রেনে যখন সবাই চিল্লাফাল্লা করে জমিয়ে বসেছে, আমি তখনও খোলস ছেড়ে বেরিয়ে আসিনি, তাই চুপচাপ চোখ বুজে তন্দ্রা উপভোগ করতে করতে ট্রেন জার্নিটা কাটিয়ে দিলাম। শ্রীমঙ্গলে পৌঁছতে পৌঁছতে রাত তিনটা বেজে গেল।
স্টেশন থেকে আমাদের জন্য যে হোটেল ঠিক করা ছিল, ওখানে হেঁটে যেতে মিনিট দশেক লাগে। রাত তিনটার সুনসান পরিবেশ আমাদের ১০ তরুণ-তরুণীর হইহুল্লোড়ে সরগরম হয়ে উঠল। হৈহৈ করতে করতে হোটেলে হাজির হলাম দিগ্বিজয়ীর মতো। হোটেলের নাম স্কাইপার্ক, চেহারা-সুরতও ভালো লাগল।
ঠিক করা ছিলো আমাদের মাইক্রো চলে আসবে ছ'টার ভেতরেই। আমরা এর মাঝে ফ্রেশ ট্রেশ হয়ে যাবো। হিসেবে হোটেলে থাকা হবে ঘন্টা তিনেক। দুটো পাশাপাশি রুম নেয়া ছিলো। প্রথম ঝামেলা বাঁধলো যখন রিসেপশন থেকে বলা হলো চারজনের বেশি একরুমে থাকা চলবে না। এই নিয়ে তাকে বোঝানোর বহু চেষ্টা করা হলো যে ভাইজান আমরা তো ঘুমাইতে আসি নাই। ফ্রেশ হয়েই একটু পরে চেকআউট করবো। কিন্তু ভাই তো ভাই! তিনি অনড়। নেওয়া হলো আরেকটা রুম। এইবার ভাইয়ের নতুন ফরমান, ছেলে মেয়ে পাশাপাশি রুমে থাকা যাবে না। মেয়েরা থাকবে নিচতলায় ছেলেরা চারতলায়। এইবার বিরক্তির সীমা ছাড়ালো। একবার সবাই ঠিক করলাম, টাকা পয়সা জাহান্নামে যাক, এই কচুর হোটেলে উঠবোই না। অ্যাডভান্সের টাকা চুলায় যাক। শেষমেষ ফর্ম ফিলাপ করতে যেয়ে ব্যাটাকে জিজ্ঞেস করেই ফেললাম, ‘আপনাদের এতো নিয়ম এইটা রুম বুকিং এর সময়ে বলা যায় না?’ উত্তরে সিলোটি ভাই বললেন, ‘ফোনে কি এতো কথা বলা যায় নাকি বলেন?’! সাথে আরও লেজ জুড়ে দিলেন আমাদের বন্ধু সোহাগ ঢাকায় বসে বুকিং দেওয়ার সময়ে বলেছেন তিনি তার ফ্যামিলি মেম্বারদের নিয়ে থাকবেন। চোখ পাকিয়ে করে ওর দিকে তাকানোর পরের জবাব, ‘আমার ফ্রেন্ডরা তো আমার ফ্যামিলি-ই, তাই না?’!
হোটেল স্কাইপার্ক সম্পর্কে রিভিউঃ ব্যবহার খুব খারাপ, চামার বংশের স্টাফ দিয়ে রিসিপশনের সাইড দেখা হয়। পরেরবার কেউ থাকতে গেলে আমার তরফ থেকে দুইটা চড় দিয়ে আইসেন। নিজের তরফ থেকে আপনি এমনিতেই দিবেন, আমার ওইটা বলে দেয়া লাগবে না।
যুদ্ধজয় করে আমরা যখন অবশেষে রুমে চেকইন করতে পারলাম তখন সাড়ে চারটা। সকাল সাড়ে ছয়টার দিকে চেক আউট করে বের হয়ে এলাম। নাস্তা করতে করতে খবর পেলাম, মাইক্রো চলে এসেছে। হৈহৈ করে নাস্তা শেষ করে মাইক্রোতে চেপে বসলাম লাউয়াছড়ার উদ্দেশ্যে।
লাউয়াছড়ার গেট খোলে সকাল ৯টায়, আমরা ৯টার আগেই হাজির। তখনও ফরেস্ট গার্ডরা আসেনি, তাই সাবধানে ভয়ে ভয়ে ভিতরে ঢুকলাম। ছিনতাকারির উৎপাত আছে নাকি। তাছাড়া কেউ ট্রেইলচ্যুত হলে তাকে খুঁজে পাওয়াও মুশকিল। একগাদা আল্লাহর বান্দার সাথে বের হয়েছিলাম। ভিতরে ঢুকেই ফটোসেশনের ধুম পড়ে গেল একেকজনের। সবাই এক পা আগাই তো দুই পা পিছাই দেখতে দেখতে। জঙ্গলের ভিতর রেল লাইন দেখে একেকজনের সে কী ন্যাকামি! যেন আগে কখনও রেল লাইন দেখেনি। ন্যাকামি দেখতে ভালোই লাগছিল। যত ভিতরের দিকে যাই, রাস্তা তত সরু হয়। গাছপালা, ঝোপঝাড় যেন গিলে খাবে। ঘণ্টা দেড়েক সেই গাছগাছালির ভেতর প্রকৃতির কোলে কাটিয়ে মাধবকুণ্ডের পথ ধরলাম।

[লাউয়াছড়ায় তোলা এই ছবিটা পুরো ট্যুরে আমার ফেভারিট ছবি। শুধু এই ছবির জন্যই এই লেখাটা।]

[লাউয়াছড়ায় আমরা কজন]

[রেলগাড়ি কু ঝিক ঝিক]


আরও ঘণ্টাখানেক পর হাজির হলাম মাধবকুণ্ডে। ঠিক যতটা উৎসাহ নিয়ে গিয়েছিলাম, ততটা বিতৃষ্ণা নিয়ে ফিরে এলাম সেখান থেকে। বিস্কিট, চিপস, পানির বোতল, ময়লার অভয়ারণ্য যেন মাধবকুণ্ড। এর মাঝে আমরা আবার জাতি হিসেবে আমাদের ক্রিয়েটিভিটি দেখাতে নিচে পাথরের ভেতর সিমেন্টের মৎস্যকন্যার বীভৎস ভার্সন, হাঁসের মতন দেখতে পেঙ্গুইন, বেড়াল সাইজের হাতি, ঘাড়ভাঙ্গা কুমির বানিয়ে রেখে দিয়েছি। প্রপাতের নিচে শ’খানেক মানুষ প্যান্ট শার্ট পাড়ে রেখে লুঙ্গি আর লাক্স সাবান হাতে নিয়ে গোসলে নেমে যাচ্ছে, গা মেজে মেজে গোসল করছে। পানির দিকে ময়লা কাদায় তাকানো যায় না। বিশ মিনিটের ভেতর আমাদের মাধবকুন্ড দর্শন শেষ করে মাইক্রোতে চেপে বসলাম। এবারের গন্তব্য সিলেট।
সিলেটের পথে চা বাগান দেখে নেমে পড়লাম। ঝটপট ফটো সেশন সেরে নিয়ে আবার রওনা হলাম। সিলেট পৌঁছুলাম সন্ধ্যা ৬টার দিকে। এখানে হোটেল আগেই ঠিক করা ছিল, কোন সমস্যা হয়নি। সারা রাত চলল আড্ডাবাজি।
পরদিন ভোরে ঘুমে ঢুলুঢুলু চোখে আগে ঠিক করে রাখা লেগুনায় চড়ে ছুটলাম রাতারগুলের উদ্দেশ্যে। লেগুনায় বসে চেঁচামেচি করে গান গেয়ে সাতসকালেই জমিয়ে তুললাম। ঘণ্টা দেড়েক লেগুনাযাত্রার পর হাজির হলাম দেশের একমাত্র সোয়াম্প ফরেস্ট রাতারগুলে। ২টা নৌকা ঠিক করে উঠে বসলাম। নিচে পানি উপরে ঘন গাছপালার ছাউনি, আর মাঝে নৌকায় আমরা। প্রকৃতির কোলে কাটিয়ে দিলাম দেড় ঘণ্টার মতো। রাতারগুলের মাঝখানে আছে একটা ওয়াচ টাওয়ার, সেখান থেকে বহুদূর পর্যন্ত চোখ যায়।



[পাখির চোখে রাতারগুল। ওয়াচ টাওয়ার থেকে তোলা ছবি]


প্রকৃতির অপূর্ব রূপ সুধা পান করে এরপর ছুটলাম বিছানাকান্দির উদ্দেশ্যে। ভাঙাচোরা রাস্তায় ঝাঁকি খেতে জাম ভর্তা হয়ে গোয়াইনঘাট পার হয়ে বিছানাকান্দি যাবার জন্য নদীর পারে এসে হাজির হলা ঘণ্টা দুয়েক জার্নির পরে। রাস্তায় ভারতের পাহাড়গুলো থেকে নেমে আসা রূপোলী ফিতের মতো ঝরনাগুলো দেখেছি আর সবাই আহা উঁহু করেছি প্রকৃতির অপার সৌন্দর্যে। ভারত ঘুরতে যাওয়ার ইচ্ছেটাও তীব্র হয়ে উঠেছে এ ট্যুরের পর থেকেই। যাহোক, বিছানাকান্দি যাওয়ার জন্য যে নদী পারি দিতে হয় (নামটা ভুলে গেছি) সেটার তীরে এসে থামলাম। সেখানেই দুপুরের ভুরিভোজ সেরে নৌকা ঠিক করে নেমে পড়লাম মিশন বিছানাকান্দিতে।

[বিছানাকান্দির পথে]

প্রায় ১ ঘণ্টা নৌকাভ্রমণের পর এসে হাজির হলাম বাংলাদেশ-ভারত বর্ডারের কাছে বিছানাকান্দিতে। এসে দেখি প্রকৃতি তার মোহনীয় সৌন্দর্যের ডালি সাজিয়ে বসেছে আমাদের স্বাগতম জানাতে। ঠাণ্ডা পানির স্পর্শে শরীর-মন জুড়িয়ে গেল। হৈহৈ করতে করতে সবাই নেমে গেল পানিতে গোসল করতে। আমি সবার জিনিসপত্র কাধে নিয়ে কুলি হয়ে ঘুরি আর পায়ের নিচে ঠাণ্ডা, কোমল পানির স্পর্শে শিহরিত হই। মাঝখানে পানির বেশ স্রোত, তাই সাবধানে থাকা ভালো। সাঁতার না জানলে মাঝে না যাওয়াই ভালো। আমরা যেদিন গিয়েছিলাম, তার আগের দিনই বুয়েটের দুই ছাত্র পানির তীব্র স্রোতে ভেসে গিয়েছিল। যাকগে, ঘণ্টা দুয়েক বিছনাকান্দির কোমল, শীতল, স্নিগ্ধ পরিবেশে কাটিয়ে ফেরার পথ ধরলাম।

সিলেটের পথ যখন ধরলাম, তখন শেষ বিকেল। সূর্য পশ্চিম আকাশে হেলে পড়েছে, আকাশটা আবির দিয়ে রাঙিয়ে দিয়েছে। কিছুক্ষণ পর সূর্য ডুবে গিয়ে রূপোলী থালার মতো চাঁদ উঠল আকাশে। সবাই সারাদিনের পরিশ্রমে, হইহুল্লোড়ে ঝরা ফুলের মতো নেতিয়ে পড়েছি, তবুও ঘুমে ঢুলুঢুলু চোখে মুগ্ধ হয়ে চাঁদের দিকে তাকিয়ে থাকি আমরা ক’জন। সমগ্র চরাচর যেন ভেসে যাবে দুধসাদা চাঁদের আলোয়। যাবার সময় যে লেগুনার ঝাঁকি অসহ্য লাগছিল, ফিরতি পথে সেই লেগুনার ঝাঁকিই আবার মধুর মতো লাগছিল। ফিরতি পথের মধুময় যাত্রা যেন চোখের নিমেষে শেষ হয়ে গেল, হাওয়াই মিষ্টির মতো। সাড়ে ৮টার দিকে হোটেলে ফিরলাম। সবাই তখন পরদিন জাফলং, শাস্ট আর সিলেট শহর ঘোরার প্রস্তুতি নিচ্ছে, আর ভাগ্যের ফেরে জরুরি কাজে ঢাকার বাস ধরতে হলো আমাকে।
আমার সিলেট ভ্রমণ এখানেই সাঙ্গ হয়, বন্ধুরা ফিরে পরের দিন। সিলেট ট্যুরে যাওয়ার আগে ভাবতেও পারিনি, এতটা রঙিন হবে এ ট্যুর। এ ট্যুর থেকে ফিরে এসেছি নতুন মানুষ হয়ে। এমন ট্যুর যেন ফিরে আসে বার বার।



[কৃতজ্ঞতাঃ আগেই বলেছি টাইটেল ধার করেছি বন্ধুর কাছ থেকে। স্কাইপার্ক হোটেলের অংশটুকুর জন্যও বন্ধু শামার কাছে কৃতজ্ঞ।

মন্তব্য ১০ টি রেটিং +২/-০

মন্তব্য (১০) মন্তব্য লিখুন

১| ১৭ ই সেপ্টেম্বর, ২০১৬ সকাল ৭:২৫

চাঁদগাজী বলেছেন:



সুন্দর সিলেটটাকে পলুশানে ভরাবেন না, দুরে থাকুন!

১৭ ই সেপ্টেম্বর, ২০১৬ সকাল ৭:৩০

মারুফ হোসেন বলেছেন: সিলেটকে জাদুঘরে ঢুকিয়ে রাখুন, এক্কেবারে নিরাপদ:)

২| ১৭ ই সেপ্টেম্বর, ২০১৬ সকাল ৭:৩৬

চাঁদগাজী বলেছেন:


পায়খানা করে বুড়িগংগা ভরাট করেছেন, তুরাগ নদী দখল করেছেন, এখন দেশের ইকো এলাকায় গিয়ে গারবেজ ফেলছেন! দুরে থাকেন।

১৭ ই সেপ্টেম্বর, ২০১৬ সকাল ৭:৪৩

মারুফ হোসেন বলেছেন: জ্বি ভাই। আপনার মতো মহাপুরুষ হতে পারলাম না। আফসোস! :)

৩| ১৭ ই সেপ্টেম্বর, ২০১৬ সকাল ৯:১৬

মাদিহা মৌ বলেছেন: ভালো লিখেছেন। তবে ছবি অনেক কম দিয়েছেন …

১৭ ই সেপ্টেম্বর, ২০১৬ সকাল ১০:০১

মারুফ হোসেন বলেছেন: ধন্যবাদ, আপু। আসলে আমি ছবি তুলতে খুব একটা আগ্রহী না, তাই খুব কম তুলেছি, এজন্য কমই দিয়েছি। :)

৪| ১৭ ই সেপ্টেম্বর, ২০১৬ সকাল ৯:২৬

মো:সাব্বির হোসাইন বলেছেন:

লাউয়াছড়া খুব সুন্দর একটা জায়গা। আমি ও গিয়েছিলাম।

ভালো টাইটেল। ছবি গুলো ও ভালো লেগেছে।

১৭ ই সেপ্টেম্বর, ২০১৬ সকাল ৯:৩৯

মারুফ হোসেন বলেছেন: লাউয়াছড়া আর বিছানাকান্দি আমার খুব পছন্দ হয়েছে। ধন্যবাদ। :)

৫| ১৭ ই সেপ্টেম্বর, ২০১৬ সন্ধ্যা ৭:৫২

আন্ধার রাত বলেছেন: আমি জীবনেও (এখন পর্যন্ত ) লাউয়াছড়া আর বিছনাকান্দিতে যাইনি। অথচ আমি সিলেট শহরেই...ছবির জন্য ধন্যবাদ।

১৭ ই সেপ্টেম্বর, ২০১৬ রাত ৮:৩৭

মারুফ হোসেন বলেছেন: এমনই হয়! বাড়ির গরুতে বাড়ির ঘাস খায় না। স্বাগতম। :)

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.