নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

মারুফ হোসেন

Tsundoku

মারুফ হোসেন › বিস্তারিত পোস্টঃ

স্ট্রেটমেয়ার সিন্ডিকেট : শিশু সাহিত্যের এক আলোকবর্তিকা

৩০ শে সেপ্টেম্বর, ২০১৬ সকাল ৯:৩৪


[শুধু বাচ্চাদের জন্য বই প্রকাশকারী সংস্থা স্ট্রেটমেয়ার সিন্ডিকেট-এর প্রতিষ্ঠাতা এডওয়ার্ড স্ট্রেটমেয়ার]

বাংলাদেশের প্রকাশনা জগতে সেবা প্রকাশনী এক উজ্জ্বল ব্যতিক্রমী পথিকৃতের নাম। স্বল্প মূল্যে মানসম্পন্ন বই উপহার দেয়ার ক্ষেত্রে সেবার বিকল্প এখনও দাঁড়াতে পারেনি বাংলাদেশে। বিশেষ করে শিশু-কিশোরদের সামনে বিশ্ব সাহিত্যের রুদ্ধ দুয়ার খুলে দেয়ার ক্ষেত্রে সেবার অবদান অনস্বীকার্য। এছাড়া বই পড়ুয়া পাঠকদের বিরাট একটা অংশের শৈশব রাঙিয়েছে তিন গোয়েন্দা সিরিজ। ষাট বছর ধরে নানা বাধাবিপত্তি অতিক্রম করে সেবা আজ এক মহীরুহের নাম। তবে এই ৬০ বছরের চলার পথটা যে খুব মসৃণ ছিল, তা বলা যাবে না। নানা সময়ে নানা বাধার সম্মুখীন হতে হয়েছে পাঠকপ্রিয় প্রকাশনীকে। অনেকে সেবার চটি বই সাইজের বইগুলো কাউকে পড়তে দেখলে সেবার পাঠককে ধুয়ে দিতে দ্বিধা করে না। আমার মতো যারা সেবার বই পড়ে বড় হয়েছে, তারা জীবনের কোন না কোন পর্যায়ে রুচিশীল মননের অধিকারী (!!!???) পাঠকদের কাছ থেকে খোঁচা হজম করেছে বই পড়ার জন্য। অনেক সময়ই শুনতে হয়েছে, ‘কী পড়িস এসব চটি বই! এইগুলো কোন বই নাকি!’ পাঠক হিসেবে আমরা যতটা না শুনেছি, এমনতরো কথা তারচে’ হাজারগুণ বেশি সহ্য করতে হয়েছে খোদ সেবা প্রকাশনী’কে।

[স্ট্রেটমেয়ার সিন্ডিকেটের জনপ্রিয় সাইন্স ফিকশন সিরিজ টম সুইফট]

তবে আজকের আলোচনা সেবা প্রকাশনীকে নিয়ে না। কিছুদিন আগে এক দারুণ ইন্টারেস্টিং তথ্য জানতে পারলাম নেটে একটা সিরিজের ব্যাপারে ঘাঁটতে গিয়ে। আমাদের দেশের সেবাই কিন্তু প্রথম এমন লাঞ্ছনা সহ্যকারী না। খোদ আমেরিকার মতো দেশে একই অপবাদ (কিংবা এরচেয়েও গুরুতর) সইতে হয়েছে আরেকটি প্রকাশনা সংস্থাকে। সংস্থাটার নাম—‘স্ট্রেটমেয়ার সিন্ডিকেট’।
মজার ব্যাপার হচ্ছে ‘তিন গোয়েন্দা’র মাদার সিরিজগুলোর একটি ‘হার্ডি বয়েজ’ সিরিজটার প্রকাশকও কিন্তু এই ‘স্ট্রেটমেয়ার সিন্ডিকেট’-ই। আরেকটি স্বল্পায়ু কিন্তু জনপ্রিয় সিরিজ ‘রোমহর্ষক’-এর মাদার সিরিজও এই ‘হার্ডি বয়েজ’।
শুধু ‘হার্ডি বয়েজ’-ই না, ‘স্ট্রেটমেয়ার সিন্ডিকেট’ টম সুইফট নামক চরিত্রকে প্রধান করে বাজাররে ছেড়েছে ৫টি ভিন্ন ভিন্ন জনপ্রিয় সায়েন্স ফিকশন সিরিজ। ‘ন্যান্সি ড্রু’, ‘ববসি টুইনস’, ‘রোভার বয়েজ’-এর মতো বিখ্যাত আরও অনেকগুলো সিরিজ প্রকাশ করেছে এ প্রকাশনী—সবই বাচ্চাদের জন্য।

[সিন্ডিকেটের আরেক জনপ্রিয় সিরিজ ন্যান্সি ড্রু]

স্ট্রেটমেয়ার সিন্ডিকেটের প্রতিষ্ঠাতা হচ্ছেন এডওয়ার্ড স্ট্রেটমেয়ার।
বিশ শতকের গোড়ার দিকে তার হাত ধরে প্রতিষ্ঠিত ‘স্ট্রেটমেয়ার সিন্ডিকেট’-ই প্রথম প্রকাশনা সংস্থা যারা প্রাপ্তবয়স্কদের ছেড়ে শুধু বাচ্চাদের জন্য বই প্রকাশ করে। সিন্ডিকেটটা ব্যাপক সাফল্য পায়। ১৯২২ সালে ৩৬০০০ শিশুর ওপর জরিপ চালিয়ে দেখা যায়, আমেরিকায় যত বাচ্চারা বই পড়ে তাদের বেশিরভাগের হাতেই থাকে ‘স্ট্রেটমেয়ার সিন্ডিকেট’-এর বই। মোটকথা ‘স্ট্রেটমেয়ার সিন্ডিকেট’-এর বইয়ে মোহাচ্ছন্ন হয়ে পড়ে বাচ্চারা। অনেকগুলো জনপ্রিয় সিরিজের প্রকাশক এই সিন্ডিকেট। বিশাকল এই কর্মযজ্ঞে কাজ করতেন অনেক লেখক, কাজের বিস্তৃতির কারণে একটা সিরিজের একটা বই কয়েকজন মিলে লিখতেন। একজন গল্পের আউটলাইন করতেন, আরেকজন, গল্পটা লিখতেন, এবং আরেকজন বইটা সম্পাদনা করতেন। প্রথম দিকে প্রকাশিত বইগুলোতে এডওয়ার্ডের নিজের নাম থাকত, কিন্তু দেখা গেল, ছদ্ম নামে প্রকাশিত বইগুলোর কাটতি বেশি। তাই সিন্ডিকেটের প্রকাশিত বেশিরভাগ বইয়ের লেখকের নামের জায়গায়ই থাকত ছদ্ম নাম। সিন্ডিকেটের প্রতিষ্ঠাতা এডওয়ার্ড স্ট্রেটমেয়ার গোস্ট রাইটার ভাড়া করে বিভিন্ন সিরিজের বই লেখাতেন। ধারণা করা হয় ‘রোভার বয়েজ’ এ সিন্ডিকেট কর্তৃক প্রকাশিত প্রথম সিরিজ। গত এক শতাব্দীতে এখন পর্যন্ত এ সিন্ডিকেট কমপক্ষে ১০০টি সিরিজ প্রকাশ করেছে। স্ট্রেটমেয়ার সিন্ডিকেটের জনপ্রিয়তা ও কাজের ব্যাপ্তি বোঝার জন্যে এই ছোট্ট পরিসংখ্যানটিই যথেষ্ট।
তবে তুমুল জনপ্রিয়তা সত্ত্বেও এ প্রকাশনীকে অনেক বিপত্তির সম্মুখীন হতে হয়। অনেক প্রভাবশালী শিক্ষিত ব্যক্তি ‘স্ট্রেটমেয়ার সিন্ডিকেট’-এর বইগুলোকে সহজভাবে নিতে পারেনি। শুরুর দিকে দশকের পর দশক ধরে লাইব্রেরীগুলো ‘স্ট্রেটমেয়ার সিন্ডিকেট’-এর বই রাখত না, ওদের প্রকাশিত বইগুলোকে ‘আবর্জনা’ মনে করত। ওদের সিরিজ বইগুলোকে শিক্ষিত সমাজে মনে করা হতো “মানসিক আলস্যের” কারণ। সিন্ডিকেটের সিরিজ বইগুলোক ‘ভালো সাহিত্যে’র প্রতি একটা শিশুর আগ্রহ এবং সুযোগ নষ্টের কারণ হিসেবে গণ্য করা হত।
জি. স্ট্যানলি নামের এক সাইকোলোজিস্ট ঘোষণা দেয়, সিন্ডিকেটের সিরিজ বইগুলো মেয়েদের জন্য খারাপ, কারণ বইগুলো মেয়েদের 'জীবন সম্পর্কে ভুল দৃষ্টিভঙ্গি’ প্রদান করে, যা তাদের ভবিষ্যতকে অতৃপ্তির মেঘে ঢেকে দেয়!’
এমনকি ১৯০১ সালে নিউ ইয়র্ক পাবলিক লাইব্রেরীতে ওদের বই নিষিদ্ধ করা হয়। কিন্তু কোন কিছুই এডওয়ার্ডকে দমাতে পারেনি। বইয়ের বিক্রিতেও কোন প্রভাব ফেলতে পারেনি। এতে বরং ওদের বইয়ের বিক্রি বেড়ে গিয়ে প্রায় তিনগুণ হয়ে যায়। ‘স্ট্রেটমেয়ার সিন্ডিকেট’-এর বই বিক্রি হয়েছে মিলিয়ন মিলিয়ন কপি। বইগুলো থেকে বানানো হয়েছে বোর্ড গেম আর টিভি সিরিজ-ও। জনপ্রিয়তার পারদ এতটাই চড়তে থাকে যে বিদেশের বিভিন্ন দেশেও ওদের বই প্রকাশ হতে শুরু করে। ১৯৩০ সালে জার্মানিতে প্রথমবার আমেরিকার বাইরে ‘স্ট্রেটমেয়ার সিন্ডিকেট’-এর কোনও সিরিজ রিপ্রিন্ট হয়। তাছাড়া অস্ট্রেলিয়া, ফ্রান্স, নরওয়ে, সুইডেন, ইংল্যান্ড প্রভৃতি দেশেও রিপ্রিন্ট হয় এ প্রকাশনীর বইগুলো।
আইজাক আসিমভ, স্টিভ ওজনিয়াক-এর মতো বেশ ক’জন বিখ্যাত মানুষ ‘টম সুইফট’কে নিজেদের ‘অনুপ্রেরণা’ হিসেবে উল্লেখ করেছেন।
শত বাধা ডিঙিয়ে স্ট্রেটমেয়ার টিকে গেছে, জায়গা করে নিয়েছে অগণিত শিশু-কিশোরদের মনে। প্রজন্মের পর প্রজন্ম ধরে রাঙিয়েছে শিশু-কিশোরদের মন। আনন্দের সাথে শিখতে অনুপ্রেরণা দিয়েছে শিশুদের, শিশু সাহিত্যের পথিকৃৎ হিসেবে কাজ করেছে।

মন্তব্য ৬ টি রেটিং +২/-০

মন্তব্য (৬) মন্তব্য লিখুন

১| ৩০ শে সেপ্টেম্বর, ২০১৬ দুপুর ১:৪৫

তানভীর আকন্দ বলেছেন: চমৎকার লেখা...

৩০ শে সেপ্টেম্বর, ২০১৬ বিকাল ৪:৩৭

মারুফ হোসেন বলেছেন: ধন্যবাদ। :)

২| ০২ রা অক্টোবর, ২০১৬ সকাল ১১:৫১

হাসান মাহবুব বলেছেন: ভালো লাগলো জেনে।

০৩ রা অক্টোবর, ২০১৬ বিকাল ৫:০৭

মারুফ হোসেন বলেছেন: :)

৩| ২১ শে অক্টোবর, ২০১৬ বিকাল ৩:০৩

পুলহ বলেছেন: আপনার লেখা তারাশংকরের উপন্যাসের পাঠ প্রতিক্রিয়া পড়ে আপনার লেখার সাথে প্রথম পরিচয় আমার। আপনি প্রচুর পড়েন সেটা আপনার গোছানো লেখার ভঙ্গি দেখে অনুমান করা যায়।
এ পোস্টটিও খুব ভালো লাগলো, একেবারেই জানতাম না স্ট্রেটমেয়ার সিন্ডিকেট সম্পর্কে।
আপনার অনুমানের অনুবাদ প্রিয় তালিকায় যুক্ত করে রেখেছি, আশা করছি খুব শিগগিরই পড়ে পাঠ প্রতিক্রিয়া জানতে পারবো।
শুভকামনা !

২৩ শে অক্টোবর, ২০১৬ সন্ধ্যা ৭:৩৩

মারুফ হোসেন বলেছেন: আমি অনেক পড়ি—এমন ধারণা আপনার উদার মনের পরিচায়ক। আসলে আমি মৌসুমি পাঠক—অনেক অনেক পড়া তো দূরের কথা, টুকটাক পড়াশোনাও করে উঠতে পারি না রাজ্যের আলসেমির কারণে।
যাকগে, অনেক অনেক ধন্যবাদ কমপ্লিমেন্টটার জন্য। :)

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.