নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

হাসির জগতে পৃথিবী লজ্জিত আর দুঃখের জগতে আমি লজ্জিত ।

মারুফ ৪০২

আমি স্বাধীনচেতা মানুষ রাখঢাক কম ,হাসতে ভালো লাগে হাসাইতে আরো মজা পাই । জীবনের লক্ষ্য আজো অস্পষ্ট ।

মারুফ ৪০২ › বিস্তারিত পোস্টঃ

ভয়াবহ অসঙ্গতি : বিয়ে করবেন কাকে??

০২ রা সেপ্টেম্বর, ২০১৫ বিকাল ৪:৩৯

ভয়াবহ অসঙ্গতি : বিয়ে করবেন কাকে ?
----মারুফ হোসেন,শিক্ষার্থী, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়।

ইদানীং আমি একটা ব্যপার বুঝতে পারছিনা, দেশের সব অসঙ্গতি কি শুধু আমার চোখেই ধরা পড়ে ? হয়ত না তবে বোধকরি আমাকে অন্যদের চেয়ে একটু বেশি ভাবিয়ে তোলে ফলশ্রুতিতে আমি খুব কষ্ট পায় এবং আমার বারংবার মনে হয় এটা এমন না হয়ে অন্যরকম হলে ভাল হতো ।

যাহোক এত ভণিতা না করে কি হয়েছে, সেটা চোখবুজে বলে ফেলাই শ্রেয় মনে করছি, কেঊ বেজার হলে আমার খুব খারাপ লাগবেনা তবে বোধকরি খুব ভালও লাগবেনা ? অতএব সকলেই একটু নিরপেক্ষ দৃষ্টিভঙ্গি নিয়ে এই বিষয়টিকে মূল্যায়ন করার চেষ্টা করবেন আশা করি ।

এই বিশ্ববিদ্যালয়ে পাঠ চুকিয়েছেন আমার এক পরিচিত বড় ভাই, আজ তিনার বাসায় যাওয়ার সেীভাগ্য হয়েছিল সেই সকালবেলা তারপর একে,একে অনেকগুলো অভিজ্ঞতার ঝুলি কাঁধে নিয়ে এই মাত্র আমার আবাসে ফিরলাম । ক্লান্ত শরীর, ক্লান্ত মন তবুও অন্তর ক্লান্ত নয় তাই আমার হৃদয়ই আমাকে বারংবার তাগিদ দিচ্ছে আমি যেন সবাইকে সতর্ক করি আজ আমি যে অসঙ্গতি নিজ অক্ষিতে গোচরীভুত করে এসেছি সেটি সম্পর্কে।

আমি যখন ঐ বড় ভাইয়ের বাসায় পদার্পণ করে বাসার কলিংবেলে চাপ দিলাম তখন ঐ ভাইয়া সহাস্যে দরজা খুলে দিলেন এবং আমাকে একরকম উষ্ণ অভ্যর্থনা জানালেন তারপর গেস্টরুম দেখিয়ে দিয়ে বললেন ভাইয়া এখানে বস, আমি আসছি। অতপর তিনি তিনার শোবার ঘরে গেলেন এবং একটু মৃদু স্মরে কাকে যেন বললেন “আম্মু এটা তুমি কি করছ? আমি না বললাম রান্না করতে যাও, অতিথি চলে এসেছে”।

অতপর একই ঢংএ কে যেন বললেন ”আব্বু গেস্টরুমে যে ছেলেটি এসেছে সে কি তোমার এলাকার ছোট ভাই? “ ............এই কণ্ঠটা কোন কোচি খুকির না তা স্পষ্ট ঠাহর করা গেল, তবে ষাটোর্ধ কোন বুড়ির কন্ঠও না তাও খুব ফর্সা বোঝা গেল । যাহোক ঐ বড় ভাই এবার ধমকের সাথে এই আব্বু বলনেওয়ালীকে জবাব দিলেন ”হ্যাঁ আমার এলাকার ছোট ভাই। তুমি তাড়াতাড়ি রান্না করতে যাও, আম্মু প্লিজ।”

এবার ঐ ভাইয়া ফিরে এলেন আমাকে সঙ্গ দিতে। কিন্তু আমার মনে বারংবার তাদের ঘরের ভিতরের ঐ অদ্ভুত সংলাপ নাড়া দিচ্ছিল, আমি উনার সাথে স্বাচ্ছন্দ্যে কথা বলতে পারছিলামনা শুধু ভাবছিলাম, কোন শিক্ষিত ছেলে কি নিজ মাকে এমন ধমকাতে পারেন ! আবার একই সঙ্গে ভাবছিলাম ভাইয়ার আম্মু তো এক অসাধারণ আম্মু, একেবারে রত্নগর্ভা আম্মু, এরকম বুড়ো ছেলেকে এখনও বিয়ে না দিয়ে কলুর বলদ হয়ে রান্না করে খাওয়াচ্ছেন ।

যাহোক তখন আমি ঐ বাসায় ভাইয়ার আম্মুকে দেখতে উদগ্রিব হয়ে উঠলাম এবং বারবার এদিক সেদিক উঁকি দিতে লাগলাম, কিন্তু আশ্চর্য্যের বিষয় হল এ বাসায় আমি কোন বয়স্কা নারীকে খুঁজে পেলামনা, খুব ভাল করে লক্ষ্য করলাম রান্না ঘরে ( যেটাকে আপনারা বলেন কিচেন রুম) একজন ভাবী স্টাইলের বড় আপু রান্নার কাজে ব্যস্ত আর ভাইয়ার শোবার ঘরে তিন থেকে চার বছর বয়সের একটা ছেলে কিছু খেলনা নিয়ে খেলছে, আর কি জানি হুনু,হুনু স্টাইলের একটা আগা-মাথাহীন গান গাচ্ছে । খানিক পরে ছেলেটা আমাদের সামনে আসল,আমার তো তখন ব্রেন আউট হওয়ার অবস্থা ! তাহলে ভাইয়া আম্মু বলে সম্বোধন করল কাকে ? আর কেইবা ভাইয়াকে আব্বু বলে সম্বোধন করল? আর এই ছেলেটাই বা কার ?

এবার আমি আর নিজেকে ধরে রাখতে পারলামনা, মনের ভিতর যে প্রশ্নগুলো বারবার উশখুশ করছিল বেরিয়ে আসার জন্য, সে প্রশ্নগুলো এবার আমার মনের অজান্তেই ঐ ভাইয়ার সামনে আছাড় খেয়ে পড়ল । তখন সরাসরি আমি ভাইয়াকে আহাম্মকের ন্যায় প্রশ্ন করে বসলাম ’ভাইয়া আপনার আম্মু কি এখানে আপনাদের সাথে থাকেন ?“ ভাইয়া আমার পক্ষ থেকে এমন প্রশ্ন আশা করেননি তা তিনার মুখের ভাব দেখেই বোঝা গেল । কিন্তু প্রশ্ন যেহেতু করা হয়েছে অতএব উত্তর একটা দিতেই হল উনাকে। ভাইয়া তখন একেবারে অপ্রস্তুত অবস্থায় বললেন না’তো, আমি আবারও আগবাড়িয়ে আর একটা প্রশ্ন করে বসলাম ”তাহলে আপনি কাকে আম্মু বললেন ?

এমন প্রশ্নবাণে বিদ্ধ হয়ে উনি’তো মৃতপ্রায় হয়ে গেলেন, তারপর যা শুনালেন তাতে আমার আর এ ধরায় একদন্ড বেঁচে থাকার প্রবৃত্তি রইলনা। এবার ভাইয়া স্ববিস্তারে যা বললেন তার হুবহু কার্বন কপি ঠিক এরকম

“আর বলোনা ভাই, বলাও যায়না সহ্য করাও যায়না, এ যেন গন্ধম ফল গিলতেও পারিনা আবার চিবাতেও পারিনা, গলায় আটকে আছে, তুমি শুনে ফেলেছ তাই বলছি । আমরা দুই’জন (মানে তোমার ভাবী আর আমি) একই সাথে, একই সেশনে, একই ডিপার্টমেন্টে ভর্ত হয়েছিলাম সেই একুশ শতকের প্রথম প্রহরে তোমাদের বিশ্ববিদ্যালয়ে তারপর কিছুদিন বন্ধুত্বের অভিনয়, কিছুদিন ছলনা, কিছুদিন মান-অভিমান এভাবেই একদিন উভয়ই উভয়ের কাছে আসা, অতপর দুজন শুধুই দুজনার, যাহোক একদিন চাকরি একটা পাইলাম অতিকষ্টে, তারপর কাউকে না জানিয়েই শুভকাজটা প্রায় অশুভভাবেই একা,একা সেরে ফেললাম । আমরা ক্যাম্পাস জীবনে উভয়ই উভয়কে নাম ধরে ডাকতাম আর তুই,তুমরি করতাম যাতে কউ সন্দেহ না করে সবাই যেন ভাবে যে আমরা শুধুই দুজন দুজনার খুব ভালোবন্ধু, বিয়ের পরও সেই অভ্যাসটা আমরা ত্যাগ করতে পারিনি অর্থাৎ সেই নাম ধরে ডাকা আর তুই তুমরিই চলছিল অবলীলায়। তারপর একদিন আমাদের ঘর আলোকিত করে এল এই মানিক রতন ( পাশে খেলতে থাকা ছেলেটাকে দেখিয়ে) সব ঠিকঠাক চলছিল কিন্তু গোল বাঁধল যখন ওর কথা ফুটল । ও কথা বলতে শিখেই আমাদের উভয়কেই নাম ধরে ডাকে আর তুই তুমরি করে । ওর আর কি দোষ আমাদের কাছ থেকেই শিখেছে এই অদ্ভুত আচরণ । সন্তানের কাছে আব্বু-আম্মু ডাক শুনতে কত মধুর লাগে কিন্তু আমার সন্তান আমাকে নাম ধরে ডাকে এ কষ্ট কোথায় রাখব ভাই? আর কাকেই বা বলব? তাই অগত্যা আমরা এখন দুজন দুজনাকে আব্বু-আম্মু বলে ডাকি যাতে ছেলেটা আমাদেরকে অন্তত আব্বু-আম্মু বলতে শেখে ।”

এতদশ্রবণে আমি’তো কিংকর্তব্যবিমূঢ়! কি বলব কোন ভাষা খুঁজে পেলামনা। ভাইয়া তখন মনে হল যেন বেশ হালকা হলেন, উনার মুখের ভাবেই তা স্পষ্ট ঠাহর করা গেল। মনে হল উনি যেন আমার মত কাউকে খুঁজছিলেন এতদিন ,যাকে উনি এই কষ্টের কথাগুলো বলতে পারেন, নিজেও একটু হালকা হতে পারেন।

যাহোক আমাদের এই গোপন বৈঠকের খবর কিভাবে জানি রন্ধনশালায় রন্ধনরতা ভাবীর কর্ণগোচর হল, তখন তিনি রান্না ফেলে সিংহীর ন্যায় হুংকার দিতে দিতে আমার নাকের ডগায় এসে আচমকা যাত্রা বিরতি করলেন তারপর ভাইয়ের নাম ধরে বললেন “ তুই এতক্ষণ কি বলেছিস আমি সব শুনেছি, সব আমার দোষ তাই না ? তুই’ তো বেশি তুই-তুমরি করিস আগেও করতিস, এখনও করিস, এখন সব দোষ আমার তাই না ? তোর জন্য আমি এখনও একটা চাকরি পাইনি, আমার সব স্বপ্ন তুই ধুলিস্যাৎ করে দিছিস”। ইতা্ইত্যাদি আরও অনেক পাওয়া না পাওয়ার বেদনা, কষ্টের বিশাল পশরা আমার সামনে এই মহিয়সী ভাবী সাহেবা উগরে দিলেন অতিক্ষিপ্রতার সাথে এবং ক্ষণকাল পরেই আবার পুনরায় রন্ধনশালার দিকে পাড়ি জমালেন সম্ভবত আমার উদরের শান্তি-তুষ্টি কামনায় । তখন আমার মনে হল এরা সম্ভবত আমার অপেক্ষায় এতদিন বসে ছিলেন, কারণ উপযুক্ত শ্রোতা না পেলে তো আর সব কথা বলা যায়না, আর শিক্ষিত মানুষ আসলে উলুবনে মুক্তা ছড়াতে সবসময়ই কুণ্ঠাবোধ করেন।
আমি এবার একা একা চুপ করে নিজ আত্মার সাথে কথোপকথন করলাম ঠিক এরকম” কাককে যতই বিদেশ ঘুরিয়ে আনা হোক সে আসলে কাকই থাকে”। জা

জানিনা এই দম্পতি আমার এই তীর্যক অভিব্যক্তি শুনে ফেলেছেন কিনা? এবার আমি ভাইয়াকে বললাম “ আচ্ছা ভাইয়া মাস্টার ব্লাস্টার শচীনের চেয়ে তার স্ত্রী অন্জলি পাঁচ বছরের জৈষ্ঠ, তারপর বিখ্যাত পপ তারকা ম্যাডোনা কিছুদিন আগে তার চেয়ে কমপক্ষে বয়সে পনের বছরের ছোটেএক ছোকরার সাথে বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হয়েছেন তাই বলে এরা কি স্ত্রীকে মা সম্বোধন করে নাকি? এছাড়াও আরও অনেক নজির আছে এই পৃথিবীতে আপনাদের মত সমবয়সী পারিবারিক জীবনের তারা সবাই কি আপনাদের মত এই নিকৃষ্টতাকে বেছে নিয়েছে নাকি ? মোটেওনা। মানবতার দূত বিশ্বমানব হযরত মুহাম্মদ (সঃ) এর উদাহরণ এখানে পেশ করলামনা , কারণ এরা হয়ত বিষয়টা অন্যদিকে ঘোরনোর চেষ্টা করতে পারে । অতপর বললাম তাহলে আপনারা এটা করছেন কেন?জানেন ইসলামী শরীয়ত অনুযায়ী এই স্ত্রী আপনার জন্য এখন পুরো নিষিদ্ধ হয়ে গেছে ।”

এতদশ্রবণে ভাইয়ার চোখ তো এবার চড়কগাছ, বললেন তাহলে আমি এখন কি করতে পারি ? আমার কাছেও তখন তাৎক্ষণিক কোন সলুশন ছিলনা তাই বললাম নো টেনশন নাকে তৈল দিয়ে ঘুমান, যা হবার তাতো হইছেই এখন এত হতাশ হওয়ার কিছু নেই। যাহোক ভাইয়া এবার একটু শান্ত হলেন এবং মনের অজান্তেই উদাস দৃষ্টিতে জানালার গ্রিলগুলোর দিকে তাকিয়ে একেবারে অন্যমনস্ক হয়ে বললেন ”আসলে বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে এই সমবয়সী বিয়েটা আইন করে আজীবনের তরে বন্ধ করা উচিত ।” তখন আমি ভয়ে ভয়ে নাসিকা কুঞ্জিত করে বললাম আগে হুশ ওঠেনি আপনার এখন হাই,হাই করছেন কেন? অল্পবয়সে বেশি বুঝলে তার কপালে বহুত জ্বালা, এখন ঠেলা টের পাচ্ছেনতো বান্ধবী বিয়ে করার কি স্বাদ! ক্যাম্পাসের প্রতিটা ধূলিকনা আপনাদেরকে চিনে, অন্যায় তো আর কম করেননি জীবনে এ আপনাদের পাপের প্রায়শ্চিত্ত্ব ।“

অতপর ভক্ষণের সময় হল, আপ্যায়ণের আইটেমগুলো অনেক ভালোই ছিল, আমি তো একেবারে উদর পূর্তি করে এলুম পূর্ণমাত্রায়। তবে উনাদের কষ্টের ম্মৃতি আমাকে এখনও তাড়িয়ে বেড়াচ্ছে।

মন্তব্য ০ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (০) মন্তব্য লিখুন

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.