![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
এতো দিন বাংলা ব্লগ পড়তাম কিন্তু কোনো দিন লিখার চেস্টা করিনি। ১ বার চেস্টা করেই দেখি.......
আজান্তা ভারতের মহারাষ্ট্র প্রদেশের আওরাঙ্গাবাদ জেলায়। আওরাঙ্গাবাদ কে মহারাষ্ট্রের পর্যটন রাজধানী হিসেবেই দেখানো হয়। এই জেলায় আছে আজান্তা, ইল্লরা, দউলাতাবাদ দুর্গ( debgiri fort), অরঙ্গজেব এর কবর, ছোট তাজমহল, পান চাক্কি প্রভৃতি দর্শনীও স্থান। ধর্মপ্রাণ মুসলিম দের জন্য এই শহরের বড় আকর্ষণ হল এখানে হুযুর মুহাম্মাদ (সঃ) এর জামা মুবারাক দেখার সৌভাগ্য হয় বছরে ১ দিন।
যাই হোক এখন আসি আজান্তার কথায়। গত মাসে কিছু কাজের জন্য যাওয়া হয়েছিল আওরাঙ্গাবাদ শহরে। ১৬ ও ২৩ সেপ্টেম্বর ২ দিন ব্যবহার করছি ঘুরার কাজে।
সকাল ০৮।০০ টা
আগে থেকে গাড়ি বলে রাখা ছিল। সময় মতই নিচে এসে ফোন করল। মিনিট ১৫ পরে নামলাম আমরা ৭ জন। উদ্দেশ্য আজান্তা গুহা। আওরাঙ্গাবাদ শহর থেকে প্রায় ১১০ কিলোমিটার দূরে। কাছাকাছি ১ টা রেল স্টেশন আছে নাম জালগাঁও। সেখান থেকে প্রায় ৬০ কিলোমিটার। প্রথমেই আমরা চা খাবার জন্য থামলাম শহরের ১ বিখ্যাত চা এর দোকানের সামনে। আওরাঙ্গাবাদ এ চা বানানো টা একটু আলাদা দেখলাম। এরা চা পাতি পানিতে না ফুটিয়ে দুধে ফুটায় যেটা আমাদের দেশে সচরাচর দোকান গুলোতে দেখা যায়না। যাই হোক সবুজ ও গাছে ঘেরা রাস্তা এবং সকালের সুন্দর রোদ মন ভাল করে দেয় এই বিষয়টা আরও এক বার প্রমানিত করে আমরা রাস্তা পাড়ি দিতে থাকলাম।
যেতে যেতে আপনাদের কে আজান্তার ইতিহাসটা জানাইঃ
অজন্তা গুহা প্রায় ৩০ টি গুহার সমষ্টি। শিলা কাটা নির্মাণশৈলী বৌদ্ধ গুহা গুলো তৈরিতে সময় লেগেছিল প্রায় ৯০০ বছর খ্রিস্টপূর্ব ২য় শতাব্দী থেকে ৬০০/৭০০ খ্রিস্টাব্দ পর্জন্ত।দক্ষিন এশিয়া উপমহাদেশের গুহা চিত্র হিসাবে আজান্তা ১ টি বিশেষ উদাহরণ এবং ইউনেস্কো বিশ্ব ঐতিহ্যবাহী স্থান হয়েছে এর সম্মান অর্জন করেছে।
এই এলাকাটা আগে প্রচন্ডভাবে জঙ্গলে ঢাকা ছিল, এবং পরে ঘটনাক্রমে ১৮১৯ সালে এক ব্রিটিশ অফিসার শিকার করতে মাদ্রাস থেকে আসে এবং ১ টা বাঘের পিছু নিয়ে আবিস্কার করে এই গুহা। পরবর্তীতে পরবর্তীতে হায়দারাবাদ এর ততকালিন নিজাম এর আর্থিক সহায়তায় এই সব গুহা বর্তমান অবস্থায় নিয়ে আসা হয়। এখনও কিছু গুহা দেখা যায় যেগুলোর কাজ অসমাপ্ত অবস্থায় আছে। জানা যায়, কেবল মাটি বের করে গুহা গুলোকে পরিস্কার করতে সে সময় ৩৫ বছর সময় লেগেছিল।
গুহার দেয়ালের চিত্র গুলোতে বর্ণনা করা হয়েছে গৌতম বুদ্ধের জীবনের এবং বুদ্ধ ধর্মের বিভিন্ন কাহিনি।গুহা গুলোর পাশেই ১ টা ঝর্ণা আশে যেখান থেকে কোন এক সময় নদী সৃষ্টি হয়েছিল। ধারনা করা হয় এই নদীর কারনে এখানে যে সভ্যতা শুরু হয়েছিল তার নাম আজান্তা। অনেকে আজান্তা কে “যা জানা নাই” এভাবেও বর্ণনা করেছেন।
সকাল ১১।০০ টা
পৌঁছে গেলাম আজান্তা গুহার নিচে। পর্যটন স্থান হিসেবে জায়গাটার খ্যাতির কারনে বেশ একটা জমজমাট ভাব আছে। অনেক ফেরিওয়ালা পাওয়া গেল বিভিন্ন পাথরের জিনিসপত্র(বেশিরভাগই মেয়েদের গয়না) বিক্রি করছে। একটা ছোটখাটো নাস্তা পর্ব সেরে আমরা এগোলাম। পরিবেশবাদী একটা পদক্ষেপ নজরে এলো। গাড়ি পারকিং এর জায়গা থেকে প্রায় ৫ কিলোমিটার দূরে গুহা গুলো। র এই দূরত্ব আপনাকে নিয়ে যাবে এক টি ব্যাটারি চালিত বাস। এবার আসুন জানাই গুহা গুলোর ভিতরের অবস্থা আর এর নিরমান কৌশল ঃ-
ঝাও স্পিঙ্ক(২০০৬) অনুযায়ী, প্রথম পর্ব সময়কালে ছিল গুহা নম্বর ৯,১০,১২,১৩,১৫ নির্মাণ করা হয় খ্রিস্টপূর্ব ১০০ থেকে ২০০ এর মধ্যে। সে সময় নিয়মিত পুজা-আরচনা ও বিভিন্ন অনুষ্ঠানের প্রমান পাওয়া যায়। পরবর্তীতে ৫ম শতাব্দী অবধি এই গুহা গুলো ছিল পরিত্যক্ত, সম্ভবত কারণ, ধারনা করা হয় এই সকল অঞ্চল প্রধানত হিন্দু ধর্ম অধ্যুষিত হয়েছিল।
দ্বিতীয় বা মহায়ানা কালে ৫ম শঅতাব্দির শুরুতে বৃহত্তর বৌদ্ধ ঐতিহ্য ভারতের আধিপত্য বিস্তার করে, যা বাকি গুহা গুলোর নির্মাণকাল হিসেবে প্রমাণিত হয়।্য।এ সময়ে আঁকা বিভিন্ন চিত্রকর্ম এবং ভাস্কর্য মাধ্যমে বুদ্ধ ধর্ম সম্পর্কে জানা যায়। সে সময় এর রাজবংশের ও সামাজিক উৎকর্ষ এবং প্রতিপত্তি চিত্রিত হয়েছিল এই সব গুহার দেয়ালে। যদিও বিভিন্ন মতভেদ আছে, ধারনা করা হয় ৪৮০ খ্রিষ্টাব্দে সম্রাট হারিসেনা ভাকাতাকা বা তার বংশক্রম এর রাজত্বের সময় কিছু গুহা মন্দির ছিল যা একটি আশ্রয়স্থল হিসেবেই ব্যবহার হতো। এবং আজান্তার অবস্থান একটি ভালো আশ্রয়স্থল হিসেবে ব্যবহার হতে পারতো।
স্পিঙ্ক এর মতে হরিসেনা রাজবংশের পতনের পরই গুহাগুলো পরিত্যক্ত হয়েছে।তারপর গুহাগুলো বাতিল করে দেওয়া হয় এবং ধীরে ধীরে বিস্মৃত হয়ে যায় মধ্যস্থ শতাব্দী সময়কালের মধ্যে। স্থানীয় জনগন ও এই সব গুহা ব্যবহার ছেড়ে দেয়।
২৮ এপ্রিল ১৮১৯ সালে, মাদ্রাজ প্রেসিডেন্সীর এক ব্রিটিশ অফিসার, জন স্মিথ শিকার এর সময় বাঘ গুহা মন্দির (গুহা নং ১০) এর ভিতরে ঢুকে। আর এভাবেই আজান্তা নতুন ভাবে আবিস্কার হয় ।এই আবিষ্কারের পর অজন্তা গুহা হয়ে ওঠে বিক্ষাত। এর হৃদয়গ্রাহী আর্কিটেকচারের জন্য , ঐতিহাসিক আর্টওয়ার্ক, এবং দীর্ঘ ইতিহাস পৃথিবীর সামনে উন্মুক্ত হয়।
একটি পাহরের খণ্ড কেটে কেটে তৈরি করা হয়েছিল এই গুহা। কাটার জন্য ব্যবহার করা হয় ছেনি হাতুড়ি। এর দেয়ালের চিত্র গুলো ন্যাচারাল আর্টের অনেক বড় উদাহরণ। এমনকি 3d ছবি এবং হলওগ্রাফিক ছবিরও দেখা মিলে ১ নম্বর গুহাতে। ২৮ টি গুহার প্রায় সবগুলোতেই ন্যাচারাল প্লাস্টার ব্যবহার করা হয়েছিল। ছবি আঁকার জন্য ব্যবহার হয়েছিল বিভিন্ন পাতা আর গাছের রস। প্লাস্টার এর উপকরণ ছিল মুলতানি মাটি, ভুষি, আঠা, গোবর ইত্যাদি।
বিকাল ০৪।৩০ টা
এতক্ষণ সময় কিভাবে পার হয়ে গেলো টের ই পাইনি। এক বার ঝর্ণাটা দেখবো বলে নিচে গেলাম। ৩০০০ বছর ধরে বইছে এমন পানির ধারা............ আখন প্রায় মৃত অবস্থায় এই ঝর্ণা প্রমাণ করে তার অতীত।
বিকাল ০৫।৩০ টা
আর এক দফা চা নাস্তা সেরে বসা পড়লাম গাড়িতে, উদ্দেশ্য আওরাঙ্গাবাদ। ফিরতি পথে খাবারটা ছিল অসাধারণ। পাঞ্জাবীরা(একটি পাঞ্জাবী হোটেলে খেয়েছিলাম) ভেজিটেবলটা ভালই রাঁধে........ক্ষুধা টা মনে হয় একটু বেশীই ছিল।
পিছনে পরে থাকল ৩হাজার বছরের পুরনো সভ্যতা। আমরা এগিয়ে চললাম ২০১২ এর দিকে। মনে একটা প্রশ্ন থেকে গেল। হাজার বসর আগে যদি নির্মাণকলা আর চিত্রকলার এত সূক্ষ্ম ও বিজ্ঞানিক বিশ্লেষণ আমরা করে থাকতে পারি তবে আজ কেন প্রযুক্তির জন্য পশ্চিমে তাকিয়ে থাকি?
২| ০৪ ঠা নভেম্বর, ২০১২ রাত ১০:০২
মুহাম্মাদ মারুফ বলেছেন: ধন্যবাদ আপনাকে। ছবি গুলো আমার নিজেরই করা। কিছুটা চেষ্টা করছি। দোয়া রাখবেন।
©somewhere in net ltd.
১|
০৪ ঠা নভেম্বর, ২০১২ রাত ১২:০৯
আরিফ রুবেল বলেছেন: লেখাতা সুন্দর হয়েছে, ছবিগুলো তার থেকেও সুন্দর হয়েছে। কার তোলা ? অনেক পাঁকা হাতের কাজ মনে হচ্ছে !

নিয়মিত পোস্টে করে যান, অনুসরণে নিলাম
ব্লগে স্বাগতম, হ্যাপ্পি ব্লগিং