![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
যা আছি তা নিয়ে সুখী, ভান নেওয়া অপ্রয়োজনীয়। ভালোলাগে জোৎস্নায় রাস্তায় হাটাহাটি, শীতের সকাল আর বন্ধুদের নিয়ে আড্ডা। নিজের ভুল স্বীকারে আপত্তি নেই কিন্তু অনুতপ্ত নই।
মাহমুদ আর আরিফ আমার পাশে বসে রয়েছে । হাতে এক কাপ চা আর গোল্ডলিপ সিগারেট। যদিও আরিফ সিগারেট খায় না। আগে সিগারেটের গন্ধটাও আরিফের সহ্য হত না। এখন অভ্যস্ত হয়ে গিয়েছে। অথবা বলা যায় আমরা তাকে অভ্যস্ত হতে বাধ্য করেছি। আরিফ চায়ে লম্বা চুমুক দিতে শুরু করলো। ভাবভঙ্গিতে মনে হচ্ছে খুব তাড়া আছে। কোথায় যেতে হবে কোন গুরুত্বপূর্ণ কাজে। ডানপাশে বসা মাহমুদ কথা বলতে শুরু করলো,
- আরিফ সিগারেট খাবি?
- দূরে গিয়া মর হারামি কোন জায়গার।
- তুই চা খাইয়া মর। এত তারাতারি চা খাচ্ছোস কেন?
- তোর এতে জ্বলে কেন ? আমার মন চায় তাই খাই। কোন সমস্যা?
- আরে হালার সমস্যা কি রে তানভীর বল তো ? কি রে তানভীর তোর সমস্যা কি হইলো আবার? ভ্যাবদা মাইরা বসে আছোস কেন? কথা বল ? আর সিগারেট দে, হালায় পুরোটা শ্যাষ কইরা দিছে রে।
মাহমুদের সমস্যা হচ্ছে হালা ছাড়া একেবারেই কথা বলে না। নিজের বাপরেও হালা সম্মোধন করতে বাদ রাখে নাই। তবে এ মূহুর্তে বুঝতে পারছি ওরা দুইটা তুমুল ঝগড়া শুরু করবে। করুক সেটা আমার সমস্যা না। সমস্যা হচ্ছে আমাকে তোদের ঝগড়ায় টানাটানি করোস কেন ভাই। নিতান্তই বাধ্য হয়ে উত্তর দিলাম মাহমুদ কে,
- আরিফের কোন সমস্যা নাই। চা ঠান্ডা হয়ে গেছে। তাই এক চুমুকে শেষ করলো । আর সিগারেট চাইতাছিস কি হিসাবে ? চারটা টানলি এই পনের মিনিটে। আমি মাত্র একটা। সো দূরে যা।
- এমন করোস কেন রে। খুব ক্ষিধা লাগছে সিগারেটটা শেয়ার কর না ভাই।
মাহমুদ করুন দৃষ্টিতে আমার দিকে তাকিয়ে আছে। আমি এই দৃষ্টি চিনি। বদমাশটার ইমোশনাল ব্লাকমেইল মার্কা দৃষ্টি। যা হালা তোরে দিতাছি না সিগারেট। মনে মনে বললেও সিগারেট টা এগিয়ে দিলাম ওর দিকে। গ্লোড লিপটা হাতে নিয়েই সুখটাই দিতে লাগলো মাহমুদ । যদিও ওর দিকে তাকিয়ে নেই। তারপরও বুঝতে পারছি। দীর্ঘ নয় বছর ধরে চিনি মাহমুদকে। তাই না দেখেও ওর কার্যকালাপ বুঝতে পারি। আরিফের সাথেও নয় বছরের বন্ধুত্ব। দুইজন আমার শুধু বন্ধু না জীবনের একটা অংশ।
- তানভীর, সামনের বাড়ির তিনতলার ওই ফ্লাটের দিকে বারবার তাকাস কেন? কেস কি? আরিফ কথাটা বললো। কোন উত্তর দিলাম না। তবে মাহমুদ চুপ থাকলো না। একগাল ধোঁয়া ছেড়ে বললো,
- কেস আর কিছু না মামা । ও নতুন সেঁকা খাইতে চায়। জীবনে তো এটাকাও প্রপোজ কখনো করবো না । পরে মাইয়ার বিয়ার দিন দেখবি ভেউ ভেউ কইরা কান্না করবো।
- ফালতু কথা বলিস না মাহমুদ।
আমি কথাটা না বলে পারলাম না। যদিও এ কথা বলার কোন মানে নাই। ওরা ভালো করেই বুঝতে পারছে গত দুই সপ্তাহ আমি কেন এখানে বসে আড্ডা দিচ্ছি। যদিও কিছু বলিনি ওদের। তবে বুঝে নিতে সময় লাগেনি মাহমুদ আর আরিফের। বুঝাটাই স্বাভাবিক। আমি যেমন ওদের চিনি ওরাও তো আমাকে চিনে। সামনের বাড়ির তিনতলার বারান্দায় একটি মেয়ে আসলো। চারদিকে ডানে বামে তাকিয়ে বারান্দায় রাখা একটা টুল জাতীয় কিছুতে বসলো। হাতে একটা মোটা বই। অদ্ভুত কোন কারনে এ মেয়েটাকে বই ছাড়া কখনো বারান্দায় আসতে দেখিনি। আজকে যেন বিকালের সূর্যের আলো সব মেয়েটার উপরে পরেছে।
- নাম কি রে ওর তানভীর ? কথাটা আরিফ বললো।
- রিয়া।
- কি কি জানিস বল ?
- না, আর কিছুই জানি না। শুধু নামটাই জানি। রাস্তায় ওর মা হবে সম্ভবত সেদিন রিয়া নাম ধরে ডেকেছিলো। ওখানে থেকেই নাম জানি।
- তোকে এত কিছু ব্যাখা করতে বলিনি। প্রপোজ কখন করবি?
- বাদ দে না এসব। কি দরকার ?
- মেয়ের সম্পর্কে খবর নেওয়া দরকার আগে। অনেকক্ষণ পর কথা বললো মাহমুদ। আমি চাইনা এবারেও তুই সেঁকা খাস। সো আজ থেকেই খবর নিচ্ছি। তুই বসে থাক আমি একটু আসতাছি। মাহমুদকে থামানোর চেষ্টা করলাম না। জানি এটা বৃথা। ও যা ভালো মনে করে তাই সবসময়ই করে। পুরো ব্যাপারটাই ওর উপর ছেড়ে দিলাম। দেখি কি করতে পারে।
আধাঘন্টা কোন খোঁজ নেই মাহমুদের। কে জানে ও আমাদের বসিয়ে রেখে কোথায় চলে গিয়েছে। তবে এক সময় ঠিকেই আসবে এটা জানি। একটার পর একটা সিগারেট ধরিয়ে যাচ্ছি। আরিফ বিরক্ত হলেও কিছু বললো না।
- তানভীর সিগারেট খাওয়া এই মূহুর্তে অফ কর। পাঁচটা সিগারেট টানলি এটুকু সময়ের মধ্য । এত টেনশনের কি আছে?
- আমি কোথায় টেনশন করছি? ফালতু কথা বলবি না।
কথাটা বললেও মনে জোড়া পাচ্ছি না। ভালো করেই জানি এ কথা ওকে বলা বৃথা। আর আরিফ ভালোভাবেই জানে আমার মনের অবস্থা। আমি হচ্ছি ঘরপোড়ো গরু। আমার কপালে সুখ সয় না। দেখা যাবে কয়েকদিন পর মেয়েটা কোন দূরে বাসা শিফট করবে। আমার ক্ষেত্রে এটা হলে আমি একটু অবাক হবো না। ঠাস করে গালে একটা থাপ্পড় এসে পড়লো। সাথে সাথে হাতের সিগারেটটিও কেউ কেড়ে নিলো। থাপ্পড় খাওয়ার পর মাথা সোজা করে দেখি মাহমুদ। আমার হাতের সিগারেট টান দিয়ে নিয়ে নিজেই টানতে শুরু করলো।
- তোর এত সিগারেট খাওয়া কেন লাগে? এই নে কাগজটা ধর।
- কি আছে এখানে?
- খুললেই তো দেখতে পারবি। ধর হারামি। বহু কষ্ট রিয়ার নম্বর জোগাড় করছি। এবার যদি প্রপোজ না করোস এরে তাহলে তোর কপালে শনি আছে। নে এখন কল দে।
- এখন কেন? রাতে দেই?
- সময় নষ্ট করিস না। এই মূহুর্তে কল দিয়ে কোন কথা বলবি না। চুপচাপ কথা শুনে যাবি। পরবর্তী কাজ হচ্ছে রাত বারোটার আগে বা এগারোটার দিকে কল দিয়ে প্রশ্ন করবি এই নম্বরের সাথে আপনার কথা হয়েছে কি না। দুই এক মিনিট কথা বলবি। দুই একদিন পর কল দিয়ে সরি বলবি। বলবি পুরো ব্যপারটা ভুল বোঝাবুঝি। ব্লা ব্লা ব্লা.... পারবি না?
- না, পারবো না।
- মর গিয়া তুই। কাগজে ফেসবুক আইডি ও আছে। এটায় ট্রাই কর? বহু কষ্টে সংগ্রহ করছি। পুরো এক হাজার টাকা ঘুষ দিয়ে এসব কালেক্ট করছি। সো আর জ্বালাইস না।
ফেসবুক আইডির কথা বলাতে একটু আগ্রহী হচ্ছি। এবার কিছুটা লাইনে আসা যায়। কল দিয়ে বিরক্ত করা আমার ক্যাটাগরিতে পরে না। সুতরাং এই কাজ আমি কখনো করতে রাজি না। তবে মাহমুদ যখন এত ঝামেলা করে আনছে এসব। এবার চুপচাপ দেখে যাওয়া বোকামি। একটু পর পর আড় চোখে তাকিয়ে দেখছি রিয়া কে। সরাসরি দেখার সাহস নেই তা না। কেন যেন ইচ্ছে করে না। আড় চোখে দেখতেই ভালো লাগে। আর ভালো লাগাটাও খুব অদ্ভুত। কোন কিছু ভালো লাগতে সত্যিকারের কোন কারণ থাকতে হয় না। ভালো লাগাটা মন থেকে আসে। যুক্তি দিয়ে নয়। ভালো লাগে এ কারনেই হয়তোবা বারান্দায় রিয়ার বসে থাকা দেখতে আমি এখানে প্রতিদিন আসি। আরিফ হাত একটা ধাক্কা দিয়ে বললো,
- লোকটা কে রে? আচরণ সন্দেহজনক! আরে রাস্তায় না তোর ভালোবাসার মানুষের বাসার বারান্দায় তাকা।
তাকালাম আমি ওর কথা শুনে। রিয়ার পাশে খুব ক্লোজভাবে একটা লোক বসে রয়েছে। বুকের বাম পাশে শক্তিশালী একটা যন্ত্রণা কয়েক মূহুর্তের জন্য অনুভব করলাম।তাকিয়ে আছি লোকটার দিকে। লোকটার ভাবভঙ্গি সুবিধার মনে হচ্ছে না। মনে হচ্ছে না ভাই বা অন্য নরমাল আত্মীয় হবে। কোন কথা না বলে চুপচাপ তাকিয়ে আছি তাদের দিকে । কতক্ষণ তাকিয়ে ছিলাম বলতে পারছি না। এক সময় লোকটা রিয়াকে নিয়ে রুমে প্রবেশ করলো। এতক্ষণ আরিফ আর মাহমুদ কোন কথা বলেনি। কি হচ্ছে সেখানে এটা তাদের বুঝতেও অসুবিধা হয়নি। আকাশ অন্ধকার হয়ে গিয়েছে বহু আগেই। দোকানের লাইট কখন জ্বালানো হয়েছে বুঝতেই পারিনি। হাত ঘড়ির দিকে তাকালাম। সাড়ে আটটা বাজে। ওদের বাড়ির গেটের দিকে তাকিয়ে রয়েছি। অপেক্ষা করছি কখন লোকটা বাসায় থেকে বের হবে। আমার মনের কথাটা আরিফ মাহমুদ ও বুঝতে পেরেছে। তাই হয়তো ওরাও অপেক্ষা করছে। যদিও আমরা তিনজনই বুঝতে পারছি ওখানে কি হয়েছে। তবে নিশ্চিত হতে চাইছি। অপেক্ষার প্রহর যেন শেষ হয় না। প্রায় রাত এগারোটার দিকে লোকটা বাসা থেকে বের হলো। রিয়া গেট পর্যন্ত এগিয়ে দিতে নিচে নেমে এসেছে। কোন যানবাহন এখানে নেই। তাই হয়তো লোকটা রিয়াকে বিদায় দিয়ে রিক্সার উদ্যেশ্যে সামনে এগিয়ে যেতে থাকলো। আমরা তিনজনই একসাথে উঠে দাড়ালাম। হাটতে শুরু করলাম তার পিছনে পিছনে। তবে গতি যথেষ্ট বেশি। উদ্যেশ্য লোকটার সাথে কথা বলা। মাহমুদ ডাক দিলো লোকটাকে।
- হ্যালো ভাই একটু দাড়াবেন ? লোকটার কয়েক মূহুর্ত লাগলো বুঝতে যে কথা তাকে উদ্যেশ্য করে বলা হয়েছে। দাড়িয়ে গেল সে। ঘুরে আমাদের দিকে তাকিয়ে বললো,
- জ্বি ভাই কিছু বলবেন?
- ইয়ে আসলে just কিউরিয়াস আমরা। আপনাকে আগে কখনো দেখিনি তো। তো আপনি এখানে ঠিক....?
- ও আচ্ছা! ভাই আসলে ব্যাপারটা হচ্ছে আমি আমার শশুর বাড়িতে এসেছিলাম। আমার ওয়াইফ কিছুদিন ধরে এখানে রয়েছে তো।
- ও আচ্ছা ভাই। যাই হোক আপনি কি রিয়ার হাজবেন্ড?
- হ্যাঁ। আপনারা কি রিয়া কে চিনেন?
- না, তেমন না। একই এলাকায় থাকি এটুকু। আচ্ছা ভাই ভালো থাকবেন আমাদের যেতে হবে এখন।
লোকটাকে সেই সময়েই বিদায় দিয়ে হাটছি আমরা। কখন হাটতে শুরু করছি জানি না। আর কতক্ষণ ধরে হাটছি সেটাও সঠিক বলা যাচ্ছে না। হাত ঘড়িটা অনেকক্ষণ আগে ছুড়ে নর্দমায় ফেলে দিয়েছিলাম। তাই সময়টা ঠিক বলা যাচ্ছে না। যদিও ওদের মোবাইলে চাইলেই সময়টা দেখা যায়। তবে জানতে ইচ্ছে করছে না। আজ আকাশের চাঁদটা বিশাল। হলদে সাদা এক আলো দিয়ে যাচ্ছে আমাদের আলোহীন অন্ধকার রাস্তায়। কোন কথা হচ্ছে না আমাদের তিন জনের। আবছায়া অন্ধকারে চেহারা দেখা যাচ্ছে না। অস্পষ্ট আর ঝাপসা সব। শুধু দুইটি ঠোঁটে সিগারেট জলন্ত আগুন দেখা যাচ্ছে। লাল রঙের দুটো ক্ষুদ্র আগুন।
(সমাপ্ত)
©somewhere in net ltd.