![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
যা আছি তা নিয়ে সুখী, ভান নেওয়া অপ্রয়োজনীয়। ভালোলাগে জোৎস্নায় রাস্তায় হাটাহাটি, শীতের সকাল আর বন্ধুদের নিয়ে আড্ডা। নিজের ভুল স্বীকারে আপত্তি নেই কিন্তু অনুতপ্ত নই।
১.
বালিশে এখনো হার্ট বিট শোনা যাচ্ছে... ধুপ ধুপ ধুপ করে একটানা পাম্প করেছে রক্ত সে সৃষ্টির শুরু থেকে... নেই কোন তার ছুটি.. বিরামহীন ভাবে সে তার দায়িত্ব পালন করে চলছে জন্মলগ্ন থেকে... চুপচাপ গুনে যাচ্ছি আমি হার্টবিট এর সংখ্যা... আগের থেকে দ্রুত হচ্ছে না আস্তে হচ্ছে এটা নিয়ে একটু সন্দিহান এখন, তবে এটা বুঝতে পারছি উত্তেজনা কমছে অনেক... মাথা আবার ঠিক মতো কাজ করছে... আবার স্বাভাবিক হচ্ছি...
আমার পরিচয় ই দেওয়া হয়নি আমি অর্ণব.. আর এখন যে বালিশে শুয়ে আছি এটা আমার না... যে খাটে শুয়ে আছি বা যে ফ্লাটে রয়েছি কোনটাই আমার না... সব কিছুর মালিক আদনান এখন ফ্লোরে লাল সাগরের মাঝে শুয়ে আছে... বাম চোঁখ টা যেন গায়েব হয়ে গেছে তার... মনে হচ্ছে বিশাল এক ছিদ্র সেটা... আর সেখানে যেন একটা রক্তের ছোট পুকুর, তবে এখন সেটা জমাট বাধতে শুরু করছে... আচ্ছা এ রকম ছোট রক্ত ভরা ছিদ্র কে কি পুকুর বলা যায়? অবশ্যই না... তাহলে কি বলে এইটা কে? ধুর কি আসে যায়... যা ইচ্ছে হবে, কিছু আসে যায় না... টেবিলের উপর এম নাইন টা দেখা যাচ্ছে.. সাথে লাগানো ইটালিয়ান suppressor টা যেন এর আকার বিশাল করে দিয়েছে... কালো রঙের অস্ত্রটা suppressor এর কারনে কতটা ভয়ঙ্কর সাহায্য করে এটা আশাতীত... সাইলেন্সর থেকেও কাজের জিনিস এটা... একদম গায়েব করে দেয় প্রতিটি শব্দ বিশহাত দুর থেকেও বোঝা সম্ভব না গুলি করা হয়েছে... সামান্য শব্দও পাওয়া সম্ভব না....
বিছানা থেকে উঠে আগে টেবিলের উপর রাখা এম নাইন টা হাতে নিলাম.. ওয়াশরুমে যেতে হবে, পরিষ্কার হওয়া লাগবে... কোন রক্তের বিন্দু থাকা যাবে না শরীরে.. তবে আগে ডেডবডি টা চেক করার দরকার.. তাই সোজা আদনান এর কাছে চলে গেলাম... প্রতিশোধ নেওয়ার শান্তি প্রতিটিক্ষনে উপভোগ করছি.. অনুভব করছি মৃদু হাসি ফুটে উঠেছে ঠোঁটে.... জানি প্রয়োজন নেই তারপরও একবার পালস চেক করলাম আদনান এর... নেই বহু আগেই চলে গেছে ও নরকে... অনেক সময় হয়েছে এখন চলে যেতে হবে.... খুব স্বাভাবিকভাবেই হাটতে হবে রাস্তায় আর নিরাপদেই বাসায় যেতে হবে.. কারন এখনো তো অনেকজন বাকি,ধরা পরলে তো চলবে না... দ্রুত হাতে অথচ নিখুঁত ভাবে suppressor টা খুলে নিলাম, নাহলে যে সাথে রাখা সমস্যা... বেরিয়ে পরলাম রাস্তায়... বাসায় যেতে হবে যে....
২.
উত্তরা থানার ওসি মারুফ সাহেবের মাথায় বাজ পরলো যেন সকালে... একটা লাশ পাওয়া গেছে,চোখে একটা গুলি আর বুকে দুইটা... খুনি যেন মৃত্যু নিশ্চিত করতেই চোখে গুলি করছে..... বাসার মানুষদের ভাষ্যমতে সকালে বাড়ির মালিক হাজি ওসমান সাহেব, ফজরের সময় যখন নামাজ পরতে মসজিদে যাচ্ছিলেন তখন দেখতে পান ওই ফ্লাটের দরজা খোলা আর লাইট জ্বলছে... কৌতুহল বশত সে ফ্লাটে যায় আর আদনান এর মৃত লাশ দেখে.. পরে পুলিশকে খবর দেয়....
পুলিশের চাকরি খুন খারাপি নিয়েই কাজ... এইসব যদিও তার জন্য সমস্যা নয়... সমস্যাটা হচ্ছে গত দুই সপ্তাহে এইটা বাদেই এগারোটা খুন হয়েছে,আর প্রতিটি খুনের অস্ত্র একই... এম নাইন গান... তার ধারনা এইটাও একই অস্ত্র দিয়ে করা হয়েছে আর একই ব্যক্তি করেছে.. ময়না তদন্তে সব সিউর হওয়া যাবে... গত তিনদিন ধরে সে বিভিন্ন ক্লু সংগ্রহ করে কিছু সিদ্ধান্তে আসতে পেরেছে... সেগুলো হলো...
১. খুনি পেশাদার নয়... ব্যক্তিগত আক্রোশে করছে... অনেক গুলো খুনের ক্ষেত্রে সে অপরাধ সংঘটনের পর সে অপরাধ স্থানে বেশ কিছু সময় ছিলো... তবে সে ঠান্ডা মাথার লোক... প্রতিটি খুন যথেষ্ট প্লান মাফিক... ভিকটিমের সম্পর্কে যথেষ্ট তথ্য সে জানে..
২. খুনির যথেষ্ট টাকা আছে... কারন সে পেশাদার না হয়েও ভালো মানের অস্ত্র ব্যবহার করছে আর ভালো মানের সাইলেন্সর ব্যবহার করছে.. কারন কখনো কেউ কোন শব্দ শুনতে পায়নি... তার ধারনা ও বিশেষজ্ঞরা মত দিয়েছে, খুনি suppressor ব্যবহার করছে.. যেহেতু সে ব্যক্তিগত আক্রোশে কাজটা করছে অতএব সে এইসব ভালো জায়গা থেকে আনছে যথেষ্ঠ টাকা খরত করে... তার উপর বুলেট নষ্ট করতে দ্বিধা করছে না...
৩. সবথেকে প্রধান হলো, প্রতিটি খুনের শিকার যারা তারা একে অন্যের পরিচিত,আর এদের মধ্যে ছয়জন কিছুদিন আগে একটি রেপের আসামি ছিলো.. যথেষ্ট প্রমানের অভাবে খালাস পেয়ে গেছে তারা.. তার ধারনা বাকি কয়েকজন ও এর সাথে সংযুক্ত...
ওসি মারুফ অনুভব করতে পারছে এর সাথে নিশ্চিত ওই কেসটার সংযোগ আছে.. হাতে ফোনটা তুলে নিলো সে.. রেপ কেসটা সম্পর্কে জানা দরকার.. হয়তো ওইখানেই সব শুরু...
৩.
অর্নকের হাত পা খুব কাঁপছে,শরীরের যেন সমস্ত শক্তি গায়েব হয়ে যাচ্ছে... হৃদপিণ্ড খুব দ্রুত পাম্প করছে রক্ত শরীরের প্রতিটি শিরা - ধমনীতে... খুব উত্তেজনা অনুভব করছে সে... বর্তমানে সে উত্তরার চার নং সেক্টরের ১৯ নং রোডের মুখে দাড়িয়ে আছে.. সামনে রেলপথ দেখা যাচ্ছে... দ্রুতগতিতে একটা ট্রেন চলে গেলো.... হাত ঘড়ির দিকে তাকালো অর্ণব,কাটার রেডিয়ামে দেখাছে ১২টা তিন বাজে.. আধা ঘন্টা ধরে সে দাড়িয়ে আছে এইখানে.. কিছুক্ষণ পরে ঘড়ি তে তাকাচ্ছে সে... অন্তত বিশ সেকেন্ড পর পর সে ঘড়িতে তাকাচ্ছে.. আরো দশ মিনিট আগে নাঈমের যাওয়ার কথা এইখানে থেকে... নাঈম রাতে চলাফেরা করে সবসময়.. আর সাধারণত এই সময়ে ই বাসায় যায় নেশা করে...
এইসব তথ্য যদিও তারা জানার কথা না,তবে সে ওর সম্পর্ক অনেক কিছুই জানে... প্রতিটি ভিকটিমের সব কিছু জানে সে.... টাকা খরচ করলে সব জানা যায় আর এটা তো তথ্য... কোন কার্পণ্য করেনি সে জানার জন্য তাদের সম্পর্কে... প্রচুর অর্থ খরচ করছে সে এইসব জানার জন্য, টাকায় কথা বলে... উত্তেজনার মাঝেও মুচকি হাসি ফুটে উঠলো অর্ণবের ঠোঁটে....
রাস্তায় একটা রিক্সা থামলো, কালো মোটাসোটা ,লম্বা একটা লোক নামলো রিক্সা থেকে... টলতে টলতে সে তার বাসার দিকে হাটা শুরু করলো.... সে খেয়াল করলো না একটা লোক তার পিছু পিছু আসছে....
অর্ণব হাতে এম নাইন গানটা হাতে নিয়ে নিলো... শেষবারের মত একবার চেক করলো সব ঠিক আছে কি না... তার জানা মতে এই লোকটা সব থেকে বেশি বিপদজনক,হয়তো তার কাছেও অস্ত্র আছে... দ্রত পদক্ষেপে সে নাঈমের কাছে এগিয়ে চললো...
নেশার ঘোরে নাঈম কিছুই আলাপ পায়নি... হঠাৎ নাঈম অনুভব করলো বুকটা চিনচিন করে উঠলো... তাকালেই হয়তো দেখতো তার রক্তে বাতাস আর্দ্র হয়ে যাচ্ছে... কিন্তুু কিছু ভালোভাবে বোঝার আগেই নাঈমের মাথা গুড়িয়ে গেলো... তার মস্তিষ্কের শেষ শব্দটি ছিলো শুধু ধুপ করে ভারী একটা বস্তুর পরে যাবার...
৪.
একহাতে ময়না তদন্তের রিপোর্ট নিয়ে বসে আছি, আরেক হাতে জলন্ত গোল্ডলিপ... হু আমার ধারনাই সঠিক... খুনি একই ব্যক্তি,গত রাতে আরেকটা খুন হয়েছে ডেডবডি দেখেই বুঝতে পারছি এটা একই ব্যক্তির শিকার... আচ্ছা একটা নাম দিলে কেমন হয় খুনির? ধরি তার নাম মি.এক্স... না থাক বেশি ছেলেমানুষি হয়ে যায়... গল্পের বইয়ে মানায়.. বাস্তবে হাস্যকর এটা... সামনে তিন চারটা ফাইল পরে আছে... সব পড়া শেষ... হাতের সিগারেটে একটা বড় টান দিয়ে ফেলে দিলাম এ্যাসট্রে তে .. উপরের ফাইলটা রেপ কেসের,এর মধ্য নয় বার পড়া শেষ করছি তারপরও আবার হাতে নিলাম... এ ফাইলের সাথে আমার এই কেসটার সংযোগ আশা করেছিলাম... কিন্তুু না কোন সম্পর্ক নেই... যে ছয়জনের কথা বলা হয়েছে তারাই শুধু যুক্ত... তাদের বিরুদ্ধে আসলে বাদীপক্ষরা ই মামলা তুলে নিয়েছে... আসলে তারা ঠিক কাজ করছে... এদেশের আইন সব থেকে খারাপ... কেসটা চালালে তাদের নিজেদের ই ক্ষতি হতো....
হাতে আরেকটা সিগারেট জ্বলছে... কখন সিগারেট টা জ্বালানো হয়েছে ভেবে নিজেই কিছুটা অবাক.... ছোট ছোট কয়েকটা টান দিয়ে আবার ফাইলে চোখ দিলাম,আমার ধারণা শুধু ভুল হয়েছে কিছু কথায়... শেষ স্টেটমেন্ট অনুযায়ী ওই কেসের পরিবাররা এখন ইংলান্ডে থাকে... তাদের পরিচিত কেউ দেশে নেই... অর্থাৎ তারা কোনভাবেই সংযুক্ত না এই খুন গুলোর সাথে... সামনে একগাদা ফাইল পরে আছে... সব ভিকটিমের সম্পর্কে,তাদের ফাইলগুলো পড়ে আমি নিজেই অবাক... এরা তো দলবদ্ধ ডাকাত,খুনি, রেপিষ্ট... এক সাথে এত ক্রাইম কেউ করতে পারে না দেখলে বিশ্বাস করা সম্ভব না....মাঝে মাঝে এরা জেল খাটে... আবার ক্ষমতার জোড়ে ছাড়া পেয়েও গিয়েছে.. কি দেশ যে আমাদের ভাবছি আবার আমি .. বড় বড় অপরাধীরা গায়ে বাতাস লাগিয়ে ঘোরে আর নির্দোষীরা সাজা প্রাপ্ত হয়....
সিগারেট জ্বলে গিয়ে কখন যে আঙ্গুলে আগুন লাগলো বোঝাতে পারিনি... শুধু স্যাৎ করে আগুন টা লাগলো... আমি নিশ্চিত আজকে কপালে শনি আছে,যদি তিথি দেখতে পায় হাতে ফোসকা পরেছে... তিথি আমার বউ,তিন বছরের সংসার... তবে ওর কারনে সিগারেট খেতে পারি না আগের মত.... ঘুষ খাওয়া ও যেন মহা সমস্যা ওর কাছে,আরে বাবা পুলিশের চাকরি করি ঘুষ ছাড়া কিভাবে চলে?!!
তিথির সাথে কথা বলতে ইচ্ছে করছে... টেলিফোনের দিকে হাত দিলাম... তবে এখন বেশি কথা বলার দরকার আরিফের সাথে... নতুন কোন তথ্য পেয়েছে কি না জানা দরকার.. তাকে বলেছিলাম এদের সবাই সংযুক্ত এমন একটা কেসের সন্ধান করতে... জানার দরকার কতটা অগ্রগতি হয়েছে কাজের... কখন যে তিথিকে বাদ দিয়ে আরিফ কে কল দিলাম বুঝতে পারিনি... শুধু আরিফের গলা বোঝাচ্ছে আমি তাকে কল করেছি...
- হ্যালো
- ওসি মারুফ বলছি... নতুন কিছু তথ্য পাওয়া গিয়েছে?
- জ্বি স্যার দুইটা কেস পাওয়া গেছে... তার সাথে এরা সবাই সংযুক্ত...
- গুড... তারাতারি পাঠাও..
- অনেক আগেই পাঠিয়ে দিয়েছে... কিছুক্ষণের মধ্যে পাবেন আশাকরি...
বিদায় দিয়ে রেখে দিলাম আরিফের কল... অপেক্ষা করছি ফাইল দুটোর জন্য... হাতে তেমন কোন কাজ নেই... একটু আগে তিথির সাথে কথা বলার ইচ্ছেটা কোথায় যেন হারিয়ে গিয়েছে... সিগারেটের প্যাকেট থেকে একটা নিয়ে ধরিয়ে লম্বা টান দিচ্ছি.....
৫.
সামনে দুইটা ফাইল পরে আছে... যদিও পড়া শেষ দুইটাই.... একটা হলো ডাকাতি কেস... আরেক টা হচ্ছে মার্ডার কেস...
প্রথম কেস টা এর সাথে সংযুক্ত না এটা বলে দেওয়া যায়...এটা স্বর্ণের দোকান ডাকাতি, আর এ কেস এ সংযুক্ত ছিলো ১২ জন... আর কেসের কারনে এরা সবাই ছয়মাস জেল খাটছে.. আর বাদীপক্ষ ও তাদের সম্পত্তি ফেরত পেয়েছে ইন্সুরেন্স কম্পানি থেকে... তাছাড়া আমি অন্য একটা কারনে এ কেস যে সংযুক্ত না এটা বুঝতে পেরেছি... কারনটা হচ্ছে ১৩ নং খুনটা... নাঈম কখনো এ কেসের সাথে সংযুক্ত ছিলো না... সে তখন জেলে ছিলো... তাই প্রথমে ই এটা বাদ দেওয়া যায়...
আর আমার সর্বশেষ ক্লু হচ্ছে দ্বিতীয় কেসটা... কেসটা একটু আলাদা ই বটে... বাদীপক্ষের ভাষ্যমতে ১৬ জন জড়িত এ কেস এ... তারা একটা বাসায় ডাকাতি করে... ওই বাসায় ছিলো ছয়জন ব্যক্তি.. পরিবারের বড় ছেলে হাবিবুর রহমান,তার স্ত্রী আফরোজা তাবাসসুম...তার পিতা কাওসার হোসেন আর মা বেগম রুহানা.... আর ছিলো হাবিবুর রহমানের বড় বোন ও বোন জামাই... কথা হচ্ছে তারা নাকি ওই বাসায় ডাকাতির পর হাবিবুর রহমানের স্ত্রী,মা ও বড় বোন কে রেপ করার চেষ্টা করে... আর এ কারনে হাবিবুর রহমান, তার বাবা আর তার দুলাভাই আক্রমণ করে সন্ত্রাসীদের ফলস্বরূপ তারা গুলি বিদ্ধ হয়... হাবিবুর রহমান, তার বোন জামাই সেখানে মারা যায়... যদিও তাদের লাশ গুম করেছে তাদের লাশ... আর সন্ত্রাসীর রেপের পরে বাকি কয়জন কে মেরে ফেলে.... তবে সময়ের অভাবে আর মানুষজনের ভয়ে কাওসার সাহেবকে রেখেই তারা পালায়...
তেমন কোন প্রমাণ ছিলো না সন্ত্রাসীদের বিরুদ্ধে... শুধু ডেড স্টেটমেন্টের কারণে তারা ফেসে গিয়েছিল... কাওসার হোসেন অর্থাৎ পরিবারের কর্তা গুলি খাওয়ার পরও ছয় ঘন্টা বেঁচেছিলেন... ওই সময়ে সে মৃত্যুুর আগে স্টেটমেন্ট দেন... ডেড স্টেটমেন্ট খুব ভয়ঙ্কর জিনিস..." আমার ধারনা ছিলো কোন ব্যক্তি যদি এ রকম ক্ষেত্রে ডেড স্টেটমেন্ট দিয়ে যায় তাহলে আসামিদের ফাঁসি নিশ্চিত থাকে... কিন্তু আমাকে ভুল প্রমানিত করে এখানে দেখায়.. ডেড স্টেটমেন্ট কোন কাজের না ... তারা ক্ষমতার জোরে ছাড়া পেয়ে যায়... উকিলের ও জজ কে কিনে নেয় তারা... ফলস্বরূপ তারা ঘুরে বেড়াচ্ছিল...
একটা সিডি আছে ফাইলটার সাথে,ওই বাড়ির গেটের সিসিটিভির ভিডিও... ভিডিও টা আবারো ছাড়লাম... বারবার দেখলে হয়তো নতুন কিছু বের হয়ে যাবে... ভিডিও তে দেখা যাচ্ছে একজনের পর একজন বাড়ির ভিতরে যাচ্ছে... কিছুক্ষণ পরে ভিডিও ঝিরঝির... কারণ ক্যামেরাটা নষ্ট করে দিয়েছে যে ব্যক্তি শেষে বাড়িতে ঢুকছে....
অনেক কিছুই ক্লিয়ার এখন আমার কাছে... কে কে রয়েছে পরবর্তী টার্গেটে এখন আমি জানি... তিনজন বাকি আছে এখনো.. তাদের ট্রেস করলেই খুনিকে ধরা যাবে...দ্রুতগতিতে আরিফ কে ফোন দিয়ে বাকি তিনজনের সম্পর্ক দ্রুত জানার কথা বললাম... তাদের চোখে রাখার নির্দেশনা দিলাম...
ফোনটা রেখে আবার ফাইলে তাকালাম... তথ্য অনুযায়ী এক মাত্র পিতা কাওসার কে ই পাওয়া গেছে... যদিও সে ও মারা গিয়েছে.... বাকিদের লাশ গুম করে দিয়েছে সন্ত্রাসীরা.. একটা জিনিস এখন আমার কাছে ক্লিয়ার সেটা হচ্ছে খুনের মোটিভ... তবে কে খুন গুলো করছে এটা নিয়ে কিছুটা অবাক... কারন পুরো পরিবার মার্ডার হয়েছে... এখন হতে পারে আফরোজ তাবাসসুমের পরিবারের কেউ কারন হাবিবুর রহমানের দুলাভাইয়ের পরিবারে এরকম কাজ করার মত কেউ নেই... শুধু রয়েছে তার ৭০ র বেশি বয়সের পিতামাতা... আর তাবাসসুম এর পরিবারে রয়েছে দুই ভাই... একজন ১০ এ পরে আরেক বিবাহিত ও ছোটখাটো ধরনের ব্যবসা করে... অতএব এরা নয়.... কারন খুনি যে অর্থ খরচ করছে এটা তাদের পক্ষে সম্ভব না...
আচ্ছা... হাবিবুর রহমানের পরিবারের তো যথেষ্ট টাকা আছে... তাদের ব্যাংকের হিসাবটা নেওয়ার দরকার.. কে কে ওয়ারিশ এই অর্থের জানার প্রয়োজন... ফোনটা আবার হাতে তুলে নিলাম... ব্যাংকের সব হিসাব মিলানো দরকার... যত দ্রুত হবে তত ভালো হয়তো বেশি দেরি হলে আরো খুন হবে....
৬.
পর্দার ফাঁকে থেকে সকালে রোদটা যেন আছড়ে পরছে চোখ মুখে.... এতো মোটা পর্দা ও যদি রোদ না ঠেকতে পারে তাহলে কেন যে মানুষ এই পর্দা কিনে বুঝিনা... বামে পাশে তাকালাম... কেউ নেই পাশে, যেন কোন কালেই ছিলো না কেউ, হঠাৎ নিজেকে খুব শূন্য মনে হচ্ছে... মনে হচ্ছে বেঁচে থাকাটা আজ অর্থহীন.... স্বাভাবিকভাবেই খাট থেকে নামলাম,ফ্লোরে অসংখ্য সিগারেটের গোড়া পরে রয়েছে... কয়েক মাসের সিগারেট জমে জমে যেন ফ্লোর কালো হয়ে গেছে.... কিছুটা কেয়ারলেস ভাবে ওয়াশরুমের দিকে হাটা শুরু করলাম... দেয়ালে ঝোলানো ক্যালেন্ডার দেখাচ্ছে আজ মে এর ১২ তারিখ... আজকে তৃণার জন্মদিন ছিলো... আমাদের ম্যারেজ ডে ও বটে.. ওর জন্মদিনে বিয়ে করার প্লান তৃণার ই ছিলো... কত পাগলামী যে ছিলো ওর বলার মত না.. দাড়ি রাখতে পারবো না... চুল ছোট রাখতে হবে... সময়মতো বাসায় ফিরতে হবে আর কত কি....
অফিসে যাওয়ার পূর্বে সবসময় ওকে একটা কিস করে যেতে হতো... কোনদিন যদি তারাহুরোর কারনে না করতাম,তাহলে বাচ্চার মত সারাদিন কান্না করতে... একবার তার কান্না থামাতে কত কিছু করতে হয়েছিলো... তার পাগলামিতে আগে খুব বিরক্ত হলেও এখন খুব মিস করি... আসলেই মানুষ হারানোর পর জিনিসের মর্ম বোঝে....
আয়নার সামনে আজকে নিজেকে খুব অপরিচিত লাগছে.... লম্বা লম্বা চুল,দাড়ি - গোঁফের কারনে আসল চেহারা হারিয়ে গিয়েছে... কতদিন সেভ করিনি চুল কাটিনি হিসাব নেই... ফ্লোরে দিকে তাকালাম আবারো, খুব নোংরা অবস্থা...তৃর্ণা যদি দেখতো এই অবস্থা তাহলে খুব রাগ করতো.... কতদিন ওকে দেখি না... আজকাল ওর চেহারাটা ও মনে ঝাপসা হয়ে যাচ্ছে... আসলে প্রিয় মানুষের চেহারা আমরা খুব দ্রুত ভুলে যাই... অপ্রয়োজনীয় চেহারা আজীবন মনে রাখি...
সিগারেটের প্যাকেট থেকে একটা তুলে নিলাম, ভিতরে গাজাঁ ভরা আছে... আমার কিছু করা লাগেনি.... ড্রাইভার কে টাকা দিয়েছি ও এনে দিয়েছে.... জিনিসটায় খুব পিনিক আছে... কয়েকটান দিলে মাথায় কিছু থাকে না... সবকিছু কিছুসময়ের জন্য ভুলে যাওয়া যায়... আচ্ছা আজকে তো ওর জন্মদিন,এ উপলক্ষে কি আজকে খাওয়া ছেড়ে দেওয়া উচিত না? ও কখনো এইসব পছন্দ করতো না... ওর কারনে সিগারেট টা খাওয়া ছেড়ে দিয়েছিলাম.... আজকে ফ্লাট টা পরিষ্কার করলে কেমন হয়? চুল দাড়ি কেটে আবার স্বাভাবিকভাবে আজকে না হয় থাকি... হয়তো ও আমাকে দেখছে,অনুসরণ করছে প্রতিটি পদক্ষেপ...
ভাবতে ভাবতে কখন যে বারান্দায় চলে আসছি বলতে পারছি না .. অনেকদিন আসা হয়নি বারান্দায়,জায়গাটা ওর অনেক প্রিয় ছিলো... বিশাল বারান্দায় একগাদা ফুলের গাছ আর অর্কিড দেখা যাচ্ছে... যদিও সব মরে যাচ্ছে... বহুদিন পানি,যত্ন কিছুই পায়নি গাছগুলো... নির্জীব হয়ে যাচ্ছে সব... হাতের কখন সিগারেট জ্বালিয়েছি বুঝতে পারিনি... হঠাৎ নিজের কাছেই খারাপ লাগছে... তৃর্ণার প্রিয় জায়গাটাতে ওর অপছন্দের কাজ করছি! ...সিগারেট টা ফেলতে গিয়েও কেন যেন ফেললাম না... তার বদলে বড় বড় টান দিচ্ছি... আস্তে আস্তে বোধশক্তি কেমন যেন নিঃশেষ হয়ে যাচ্ছে....
৭.
হাতের খবরের কাগজ টা খুলেই মেজাজ টা গরম হয়ে গেল ওসি মারুফের... প্রথম পৃষ্টায় ই খুনের খবর গুলো রমরমা করে লিখছে... সাথে লিখেছে তদন্তটার দায়ীত্ব তার উপরে .... ভালো করে দ্বিতীয় বারের মত সে পড়লো লেখাটা... সেখানে যা লেখা হয়েছে তার সম্পর্কে তার সারমর্ম হচ্ছে সে এ কেসের তদন্ত করতে অক্ষম, তাকে সাসপেন্ড করা উচিত পুলিশ ফোর্স থেকে,ইত্যাদি ইত্যাদি ... দুই সপ্তাহে ১৩ টা খুন অথচ এখনো সে কিছুই করতে পারছে না...
মেজাজ টা গরম করে পেপার টা ছুড়ে মারলো সে... সাতসকালে এরকম নিউজ পড়লে কার মাথা ঠিক থাকে? সে কি কম চেষ্টা করছে? একদিকে তার তদন্ত করতে হয় আরেকদিকে পরিবার কে সামলাতে হয়... মানুষগুলো কখনো বোঝে না যে পুলিশরা একজন মানুষ.. এরা রোবট নয়... সারাদিন কাজ করার পর যখন রাতে একটু শুতে যায় তখন ও ঘুম বাদ দিয়ে ডিউটিতে যাওয়া লাগে... দেশে এতো ক্রাইম কিভাবে হয়! যদি পাঁচ ছয়টা কেস হতো তাহলে না সে নিজেকে মানিয়ে নিতে পারতো... প্রতিদিন নতুনভাবে বিশ ত্রিশটা কেস জমা হয়... আর সে সবের তদন্ত করতে করতে তাদের অবস্থা খারাপ.... এর পর আছে মক্কেলদের ঝামেলা,দালালদের ঝামেলা... রাজনৈতিক চাপ...
গত আধা ঘন্টা ধরে একটা লোক বসে আছে বসার রুমে... তার মতে তার নাকি কিসের কাজ আছে ওসি সাহেবের সাথে... ওখানে না গিয়েও বলতে পারছে ওসি মারুফ ওই লোকটা কেন আসছে এখানে... গতকাল রাজীব নামের একটা ছেলেকে ধরে আনছে পুলিশ... রাস্তায় মেয়েদের নাকি টিজ করছে সে... তার ইনফর্মার বলতে ওই ছেলেটা সবসময়ই এমন করে রাস্তায় মেয়েদের টিজ করে... নিশ্চিত ওই ছেলেটার কাজে আসলে...
বিরক্ত মুখে ওসি মারুফ বসার রুমে গেলো লোকটার সাথে কথা বলতে ... সে যে প্রচুর বিরক্ত এটা তার চোখ মুখে ফুটে উঠেছে... তাকে দেখে লোকটি দাড়িয়ে গেলো... মাঝ বয়সী লোক .. মাঝারি সাইজের,পেটে বিশাল আকৃতির ভূরি শোভা পাচ্ছে তার... ছোটখাটো একটা ড্রাম বলা যায় তাকে... ওসি মারুফের ইচ্ছে করছে ওই ভূরিতে একটা জোরেশোরে কিক দিতে....
- স্যার সালাইমালাইকুম
- সালাম যদি ঠিকমতো না দিতে পারেন তাহলে সালাম দিচ্ছেন কেন? কি জন্য আসছেন আপনি?
লোকটির থতমত খাওয়ার বদলে গালভরা হাসি দিয়ে বললো...
- স্যার আমি হারুন... ছোট খাটো একটা ব্যবসা করি... আর একটু আধটু রাজনীতি করি...
মারুফ সাহেব প্রচন্ড বিরক্ত বোধ করছে... সে কি করে এটা নিয়ে তার কোন দরকার নেই... শুধু শুধু কেন এ প্যাচাল দিচ্ছে সে? তার ইচ্ছে করছে থাপ্পড় দিয়ে লোকটার কানের পর্দা ফাটিয়ে দিতে... তারপরও স্বাভাবিকভাবে বললো সে...
- আপানার কাজটা কি বলুন
- স্যার তেমন কিছু না... একটু কুশলাদি বিনিময় করতে আসছি...
- শুধু কুশলাদি করতে বাসায় কেন? থানায় আসলেই পারতেন...
- আসলে স্যার... আপনার জন্য একটা উপহার ছিলো...
একথা বলে হারুন সাহেব তার পাশে রাখা ব্যাগ টা টেবিলের উপর তুলে দিলো... মারুফ সাহেব এক দৃষ্টি তে তাকিয়ে রইলো হারুনের দিকে.... সে বুঝতে পারছে এর মধ্যে কি আছে.. প্রচন্ড রাগ উঠলেও সে মাথা ঠান্ডা রাখছে অপেক্ষা করছে হারুনের আসল কথা শোনার জন্য....
- স্যার আসলেই একটা সমস্যায় পরে আপনার কাছে আসা... আপনি গতকাল রাজীব কে ধরে আনছেন... ও স্যার এমন না... সেই দিন একটু পাগলামি করছে... সাধারণত ও কখনো মেয়েদের বিরক্ত করেনা.. স্যার মাফ করে দেন ওকে... এবারের মত ছেড়ে দেন...
- প্রথম ও শেষ কথা বলে দেই একবারেই, ওকে ছাড়া যাবে না... আপনি যতই লাফালাফি করেন লাভ নেই... আপনি এখন আসতে পারেন...
এতোক্ষনে হারুনের মুখের হাসিটা চলে গেলো... তার বদলে সে চোখে কিছুটা বিরক্ত প্রকাশ করলো... সে জানতোই এভাবে কাজ হবে না... এ লোক মহা ত্যাড়া তার জানা আছে .. চুপচাপ সে মোবাইল টা বের করে সরাষ্ট্র মন্ত্রীকে কল দিলো... কয়েকটা কথা বলে সোজা ওসি মারুফের হাতে তুলে দিলো সে মোবাইল টা...
মোবাইল টা হাতে নিয়েই নম্বর টা দেখে নিলো এক পলক... তারপর কানে লাগালো,দুই মিনিট কথা বলে সে ফিরিয়ে দিলো মোবাইল টা হারুন কে...
- প্রথমে ভালোভাবে বলছিলাম আপনাকে শুনলেন না .... এখনতো ঠিকই ছেড়ে দিবেন... শুধু শুধু ঝামেলা করলেন,আর সম্পর্ক টা খারাপ করলেন... তারাতারি রাজীব কে ছেড়ে দেন... আশাকরি আবার নতুন ঝামেলা করবেন না...
- আচ্ছা দিচ্ছি... আপনি এখন যেতে পারেন.. আর আপনার উপহার টা আপনি নিয়ে যান....
ওসি মারুফ খুব ক্লান্ত অনুভব করছেন নিজেকে আজ... নিজের দূর্বলতা আজ হারে হারে টের পাচ্ছেন তিনি... ধীরগতিতে সে টেলিফোন টা হাতে তুলে নিলেন... সার্জেন্ট আরিফ কে কল দিতে হবে... রাজীবকে ছেড়ে দিতে বলতে হবে...আর কেসটার ব্যাপারে খবর নিতে হবে...
৮.
কিছু কিছু তথ্য সবসময়ই অজানা থেকে যায়.... কে জানতো যে ওই পরিবারের আরো লোক এখনো রয়েছে..... দুপুরে পাওয়া তথ্যগুলো আমাকে কিছুটা অবাক করেছে..... অনেক গুরুত্বপূর্ণ তথ্য গুলো বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই অজানা থাকে... তবে এতো গুরুত্বপূর্ণ একটা তথ্য আমি জানতে পারিনি,এটা সত্যিই আশ্চর্যজনক.... হাবিবুর রহমানের পরিবারের ছোট ছেলে অনিক ফিনল্যান্ডে পড়াশোনা রত ছিলো... তাদের পরিবারের মৃত্যুর সংবাদে সে দেশে আসে দু মাস আগে... বর্তমানে সে ই ওয়ারিশ আমার জানা মতে... আমার আরো আগেই খোঁজ নেওয়া উচিত ছিলো কে কেস করছে, কে বাদীপক্ষ? দেরিতে হলেও খবরটা পাওয়া গেছে এতেই আমি কিছু টা খুশি বর্তমানে... এখন ১৩ নং সেক্টরের ৪ নং রোডের ধুসর রঙের একটা বাড়িতে আমি দাড়িয়ে আছি... সিভিল ড্রেসের কারণে লোকজন তেমন করে তাকাচ্ছে না... পিছনে এক দোকানে বিরানি জাতীয় খাবার বিক্রি হচ্ছে, খাবারের গন্ধে খিদেটা জেগে উঠেছে... মন চাইছে আগে কিছু খেয়ে তারপর অনিকের সাথে দেখা করি... কিন্তুু দেরি হয়ে যাবে তাতে,সার্জেন্ট আরিফ যদিও অনিক কে বলছে আমি আসবো তারপরও কাজের ক্ষেত্রে আমার দেরি করা খুব অপছন্দ.... লিফটের সামনে দাড়িয়ে আছি আমি,লিফট যেন নিচে নামবে না পণ করেছে... টানা ঘড়ি ধরা আট মিনিট অপেক্ষার পর লিফট নিচে নামলো... চারনং ফ্লোরের সুইচ এ চাপ দিলাম... কিছুটা অস্থির অবস্থায় অনিকের ফ্লাটের কলিংবেলে কয়েক বার চাপ দিচ্ছি...
দরজা খুললো একটা অল্প বয়সী ছেলে... কত হবে বয়স বাইশ তেইশের বেশি কোন মতেই হবে না... আমার যদি ভুল না হয় এ ই অনিক...হাসি হাসি মুখ করার কয়েকবার বৃথা চেষ্টা করে হাল ছেড়ে দিলাম... কাঠখোট্টা স্বরে বললাম...
- আমি ওসি মারুফ বলছি... অনিক সাহেবের সাথে আমার দেখা করার কথা ছিলো আজকে...
- আমি অনিক... আসুন ভিতরে আসুন...
ঘরটা যেন একটা ছোটখাটো মিউজিয়াম বলা চলে... আসলে টাকা থাকলে সব হয়... এ রকম একটা রুম সাজাতে কত খরচ হবে? আমার পক্ষে সম্ভব নয় .. না হলেও দুই বছরের ইনকাম আমার... অনিকের কথার শব্দে খেলায় হলো সে কিছু বলছে...
- চা না কফি?
- ধন্যবাদ কিছুর দরকার নেই.. দুপুরের সময়ে এসব আমি খাই না ...
- সার্জেন্ট সাহেব বলছিলো আপনি নাকি আমার পরিবারের কেসটার সম্পর্কে জানতে চাচ্ছেন.. বলুন কি ভাবে সাহায্য করতে পারি?
যদিও মুখে বলছে সে এইসব তারপরও তার চোখ গভীর হতাশা প্রকাশ করছে... মনে হচ্ছে বাস্তবিক কোন আগ্রহই তার নেই আর.. শুধু শূন্যতা প্রকাশ করছে তার চোখজোড়া... আসলে তাকে দোষ দেওয়া যায় না... যে দেশ তার ভাই বোন পরিবারের খুনিদের শাস্তি দিতে পারেনি.. সে ক্ষেত্রে তার হতাশাই কাম্য... যদি আগ্রহী হতো তাহলেই বরং কিছুটা অবাক হতাম... সরাসরি কাজের কথাই বললাম তাকে ..
- আমার আপানাদের ব্যাংকের হিসাব ও লেনদেন টা দরকার... যদিও আমি অন্যভাবে এটা নিতে পারি তারপরও আপনার স্টেটমেন্ট কাজটা সহজ ও দ্রুত করে দিবে...
আশা করেছিলাম অনিক প্রশ্ন করবে কেন এটা দরকার আমার... কিন্তুু সে আমাকে অবাক করে বললো...
- দুই একদিনের মধ্যে পেয়ে যাবেন .. দুইদিন পর আপনি আপনার কোন লোক কে পাঠাবেন কষ্ট করে... আমি দিয়ে দিবো...
- আচ্ছা ধন্যবাদ... Anyway আপনি কতদিন থাকবেন দেশে?
- আর সাত দিন আছি আমি... টিকিট কাটা শেষ.. ফিনল্যান্ডে চলে যাবো... এদেশে যখন কেউ নেই তখন থাকার প্রয়োজন নেই...
- আচ্ছা আপনার স্ত্রী কিভাবে মারা যায়?
- ব্লাড ক্যান্সারে... খুব বেশি দেরিতে ধরা পরে... ফলে বাঁচানো সম্ভব হয়নি...
- আপনার সহযোগিতার জন্য ধন্যবাদ.. আমার যেতে হবে... আশাকরি বিরক্ত করিনি আপনাকে...
উত্তরে কিছু আশা করছিলাম অনিকের কাছে... সে শুধু চুপচাপ দাড়িয়ে গেলো... সোজাসাপটা বলা যায় বিদায় দিচ্ছে আমাকে... বাসা থেকে বের হয়ে সার্জেন্ট আরিফ কে কল দিলাম... অনিকের উপর নজর রাখার প্রয়োজন... এখন প্রধান সন্দেহভাজন সে... বিরানির দোকানের দিকে যাচ্ছি...দেখি দুপুরের জন্য কি কি খাবার রয়েছে সেখানে... প্রচন্ড ক্ষুধার্ত আমি এখন...
৯.
প্রচন্ড বাতাস হচ্ছে... যেন আমাকে উড়িয়ে নিতে চায়... লম্বা চুল গুলো বাতাসে যেন ডানা মেলে দিয়েছে... বাতাসে করে সে যেন অজানায় যেতে চায় আজ... আকাশটা খুব মেঘলা,খুব সম্ভাবনা আছে আজকে ঝড় হবার... ঝড় না হলেও ভারীবর্ষণ সিউর হবে এটা বলা যায় নিশ্চিন্তে.. আচ্ছা শেষ কবে বৃষ্টিতে ভিজেছিলাম? চারমাস আগে না আরো আগে? কি আসে যায়.. তৃণা খুব পছন্দ করতে বৃষ্টি তে ভিজতে... বৃষ্টিতে ভিজতে ভিজতে কতবার যে কিস করলো.... ও বলতো নাকি এটা আলাদা ফিলিংস... নিজের অজান্তে কখন যে ঠোঁটের উপর হাত চলে গেলো বুঝতে পারিনি... তখন কিছুটা বিরক্ত হলেও এখন কেন এত মিস করছি ওকে? হু, পাখি চলে যায় রেখে যায় তার পালক.... আচ্ছা কে বলেছিলো এ কথাটা? মনে পরছে না...
হাতের ঘড়িতে রাত দশটা দেখাচ্ছে... ঢাকা শহরে এটা কোন রাতই না... সবাই জেগে থাকে... দোকানিরা দোকানে বসে ঝিমায়... ঘুমে তাদের চোখ ঘোলা হয়ে আসে.... চারপাশের সব আট নয়তলা বিল্ডিং... মোটামুটি সব ফ্লাটেই আলো জ্বলছে... রাত টা সবথেকে ভালো প্রেমিক প্রেমিকার জন্য... চুপিচুপি সারারাত ফোনে কথা বলার প্রস্তুতি চলে তাদের এই সময়ের... সব কিছু গুছিয়ে রেখে ফোনটা হাতে নিয়ে অপেক্ষায় থাকে তারা, কখন শুরু হবে কথা বলা... অপেক্ষা করার হয়তো মজাই আলাদা... কিসের একটা আকর্ষণ তখন যেন থাকে.... আচ্ছা তৃণা কি আমার জন্য অপেক্ষা করছে এভাবে উপরে বসে ? অবশ্যই করছে... আমার জন্য ও সবসময়ই অপেক্ষা করবে আমি জানি...
আমার গন্তব্যে পৌঁছে গিয়েছি... ঘড়িতে এখন সময় দেখাচ্ছে দশটা পনের .... কি দ্রুত না সময় হারিয়ে যাচ্ছে... হয়তো সময়ের সাথে আমিও খুব দ্রুত হারিয়ে যাবো...কারন মানুষের জন্মই হচ্ছে সময়ের সাথে হারিয়ে যাবার জন্য... সিঁড়ি বেয়ে উঠে আসলাম তিনতলায়... ভাগ্য কিছুটা প্রসন্ন আজ,কারন কেউ আলাদা ভাবে নজর দেয়নি... সিড়ির সোজা একটা দরজা দেখা যাচ্ছে , এটাই আমার গন্তব্য.... কলিংবেল নেই ফ্লাটে কারণ চারবার টিপ দিয়েও সাড়াশব্দ পাইনি.. দরজার কয়েকবার জোরেশোরে টোকা দেওয়ার পর চব্বিশ পঁচিশ বছরের একটা ছেলে দরজা খুলে দিলো.. কিছুটা যেন ভয় আর আতঙ্ক প্রকাশিত হচ্ছে তার চোখজোড়াতে... এ বয়সটা ভয়ের বয়স না তো... প্রচন্ড সাহস থাকে মনে,কোন বাধাকেই বাধা মনে হয় না... সবকিছু যেন তুচ্ছ আর দূর্বল মনে হয়... আচ্ছা কিসের ভয় এটা, মৃত্যুভয়? হয়তো অনুভব করতে পারছে মৃত্যু খুব কাছাকাছি চলে এসেছে...সে কিছু প্রশ্ন করার আগেই প্রশ্ন করলাম, আশিক ভাই আছে? কিছুনা বলে সে দরজা খুলে দিলো... আচ্ছা ছেলেটার নাম কি যেন, হুসাইন? হ্যাঁ এটাই হবে...
- বাম পাশের রুমের যান... পাবেন তাকে...
কোন কথা না বলে ভিতরে চলে আসলাম.... ড্রাগ ডিলারদের বাসা.. ভয় কম থাকে এদের,অবশ্য বেশি ভয় থাকলে এ ব্যবসা করতে পারে না... ছেলেটা এ ব্যবসার অযোগ্য কারণ আমাকে ওদের ক্লায়েন্ট ভেবেছে, বোকা ছেলে...ডান পাশের একটা রুমে চলে গেলো সে... দুইটাকেই শেষ করা লাগবে, দুইজনই জড়িত ছিলো... রক্ত উত্তেজনার টগবগিয়ে উঠছে....
হাতের ব্যাগটাকে হঠাৎ খুব ভারী লাগছে... ব্যাগের চেইন টা খুলে এম নাইন টা বের করলাম... suppressor লাগনো হয়েছে অনেক আগেই... কারণ আজকে হাতে বেশি সময় পাবো না আগেই জানা আছে, কারণ আজকে দুজনকে শেষ করবো একসাথে... তাই আগেই সব কিছু চেক করে রেখেছিলাম....এখন কাজ শেষ করার পালা....
১০.
ওসি মারুফের মেজাজ ভয়াবহ ধরনের খারাপ.. এত নজর রাখার কথা বললো সে অথচ তারা যেন কেয়ার করে না... পুলিশের লোক কত অলস সে অন্যদের থেকে কম বোঝে না... নিজের উপর কিছুক্ষণ খিস্তিখেউর করতে করতে মার্ডার প্লেসে আসলো মারুফ... দুই রুমে দুইটা লাশ পরে আছে... অসংখ্য নেশা সামগ্রী পুলিশ তল্লাশি চালিয়ে বের করছে... ফেন্সিডিল, ইয়াবা,গাঁজা ভরা এখানে... চিন্তিত মুখে লাশ দুইটার কাছে গেলো ওসি মারুফ... নিজের উপর কিছুটা বিরক্ত... এখনো ধরতে পারছে না খুনি কে... যদিও প্রধান সন্দেহের তালিকায় অনিক... তার উপর নজর রাখা লোক বললো সে এদিকেই আসিনি... সে যদি না করে খুন তাহলে কে করছে এইসব? তাহলে কি ভাড়া করা লোক কাজটা করছে? হতে পারে কিন্তুু ভাড়া করা লোক এরকম কাছে থেকে গুলি করবে না... বাসায় এসেও কাজ করবে না... কারন এতে ধরা পড়ার বিশাল সুযোগ আছে.. আর যে হারে বুলেট খরচ করছে এমনতো কোন পেশাদার খুনি করে না...
এম নাইনের পুরো পনেরটি বুলেট ই খরচ করছে খুনি.. অল্প বয়সী ছেলেটার লাশের দিকে তাকালো মারুফ,গা গুলিয়ে উঠলো তার... পিছনে থেকে কন্ঠনালীতে গুলি করা হয়েছে... কন্ঠনালী ছিড়ে বেরিয়ে আসছে, ভয়াবহ লাগছে দেখতে.. অন্য জনের লাশের কাছে গিয়ে মাথার দিকে তাকালো সে... মাথার উপরের অংশ যেন কোন কালেই ছিলো না, প্রচন্ড আক্রোশে খুনি যেন অসংখ্য গুলি করছে.. ছিন্নভিন্ন হয়ে গিয়েছে মাথাটা....যা দেখার দেখা হয়ে গিয়েছে তার,কিছুটা তড়িঘড়ি করেই বাসা থেকে বের হয়ে আসলো ওসি মারুফ... তার দম বন্ধ হয়ে আসছিলো সেখানে.... নিচে নেমেই সার্জেন্ট আরিফ কে ডাক দিলো সে...
- আরিফ ভাই, বাসায় যে কয়জন যাতায়াত করছে তাদের ভিডিও করা হয়েছে?
- জ্বি করা হয়েছে... তবে একটা সমস্যা স্যার...
আরিফের কথা এখনো শেষ হয়নি তাই ওসি মারুফ সপ্রশ্ন চোখে তাকিয়ে রইলো আরিফের দিকে...
- ৩৪ জন এ বাসায় যাতায়াত করছে এ বাসার যারা থাকে সেসব লোক ব্যতীত... সন্দেহভাজনদের সংখ্যা একটু বেশি হয়ে যাচ্ছে...
- প্রতিজনের একটা ষ্টিল পিকচার নিয়ে প্রতি বাসার মানুষদের সাথে কথা বলেন... তাদের বাসায়ও মানুষ যাতায়াত করছে... তাদের পরিচিত মানুষদের বাদ দিলে সংখ্যা কমবে অনেক কমে যাবে আশা করি... আর তারপর যাদের সংখ্যা কমবে তাদের প্রতি জনের সম্পর্ক খোঁজ নেন... আজকের মধ্যেই সব তথ্য আমি চাই... আর ১৬ নং ভিকটিমের দিকে কড়া নজর রাখেন.. দ্বিগুণ করে দেন লোক ওখানে,কারন সে শেষ টার্গেট.. এবারে মিস হলে আর সম্ভব না ও হতে পারে খুনি কে ধরা...আর হ্যাঁ আজকে আর খুনি তাকে খুন করবে না, আগামীকালের সম্ভাবনা বেশি... তারপরও কড়া নজর রাখবেন..আর যে কয়জন যাতায়াত করবে ওই ভিকটিমের বাসায় তাদের সাথে ভিডিও এর লোকজনের সাথে মিলাবেন... চেহারা মিললে সাথে সাথে আটক চাই....
লাশের ব্যাপারে আরো কিছু নির্দেশনা দ্রুত দিয়ে কিছুক্ষণ পর ওসি মারুফ গাড়ি তে উঠে বসলেন .. জাল গুটিয়ে আনছেন তিনি, খুনি এবার ধরা পড়বেই...একটা সিগারেট ধরিয়ে নিলেন সে... উত্তেজনায় তার শরীরের রক্ত টগবগ করে ফুটছে... যদিও তার চেহারায় কিছু প্রকাশ পাচ্ছে না... পাথরে খোদাই করা মুখ যেন, অনূভুতির লেশমাত্র নেই সেখানে....
১১.
ঝিরঝিরে বৃষ্টি হচ্ছে... বর্তমানের অবস্থান একটি চা এর দোকানে, আকাশ যেন উন্মাদ আজ... ভয়ানক রুপ নিয়ে অপেক্ষা করছে সে... প্রচন্ড ঝড়ে লন্ডভন্ড করছে চায় আজ সে প্রকৃতিকে যেন... চায়ের কাপের দিকে তাকিয়ে আছি আমি... শেষ হচ্ছে না যেন আমার অপেক্ষার মুহূর্তগুলো.... বিলটা দিয়ে উঠে দাড়ালাম .. অনেক গুলো লোক বসে আছে দোকানে, বৃষ্টি থামার প্রতিক্ষায় অধীর আগ্রহে রয়েছে তারা...
বের হয়ে আসলাম দোকান থেকে... রেললাইনের উপর দিয়ে হাটা ধরলাম... এখন গন্তব্য এয়ারপোর্ট রেলওয়ে ষ্টেশন...আমার পাওয়া তথ্য বলছে ১৬ নং ভিকটিম নীরব ,পালাচ্ছে সে...শেষ করতে হবে তাকে সময় থাকতেই... আকাশ অঝোরে কান্না করছে যেন... মৃত্যুকে যেন স্বাগত জানাচ্ছে মনে হয়...
১২.
ওসি মারুফ তার ল্যাপটপের সামনে বসে আছে...বিভিন্ন কেসের ভিডিও আর প্রয়োজনীয় ডাটা চেক করছেন খুব দ্রুততার সাথে... হঠাৎ তার কাজে ব্যাঘাত ঘটানোর জন্য যেন তার মোবাইলটা বেজে উঠলো.. হাতে নিয়ে দেখলো সে... সার্জেন্ট আরিফের কল... রিসিভ করে কথা বললে সে.... কিছু কথা শুনে ভুরু কুঁচকে গেলো তার... তারাতারি রেডি হচ্ছে সে... মাথায় একগুচ্ছ চিন্তা ভাবনা ঘুরছে তার... নীরব পালাচ্ছে খুন হবার ভয়ে... পালানোটাই স্বাভাবিক,কিন্তুু তার এ কাজ তো প্লান ভেস্তে দিবে... যাওয়ার পথে খুন না হলেই হয়... আর সে যদি খুন হয় তাহলে তার কোন আশা নেই খুনি কে ধরার... সো যেভাবেই হোক সবসময়ই চোঁখে রাখতে হবে...
বাসা থেকে বের হবার পূর্বে মারুফ তিথির পিছনে এসে দাঁড়ালো... রান্না করছে তিথি ... কিছুক্ষণ একদৃষ্টি তে তাকিয়ে রইলো সে... ভাবছে তার স্ত্রী কে সে একেবারেই সময় দিচ্ছে না.. অন্যায় হচ্ছে তিথির প্রতি.. মেয়েটা তাকে অনেক ভালোবাসে,আর ভালোবাসার চোখ অন্ধ...একারণে তার চোখে কখনো মারুফের ভুল-ত্রুটিগুলো দেখতে পায় না... পায়না সে দেখতে তার প্রতি অবিচারগুলো .... এই চোখের কাছে অন্যায়গুলো ন্যায় মনে হয়... মন তখন বলে এটাই স্বাভাবিক আর এটাই হওয়া উচিত....
তিথিকে বিদায় দিয়ে বের হয়ে গেলো মারুফ... তার ধারণা নীরব পালাতে পারবে না... ও খুন হবে খুব দ্রুতই... তাই যত তারাতারি তার কাছে যাওয়া যায় ততই ভালো....যদিও এখনো বেশ সম্ভাবনা আছে তারপরও তার মনে হচ্ছে খুনিকে ধরার বিশাল একটি সম্ভাবনা নষ্ট হয়ে যাচ্ছে....
১৩.
অনেকক্ষন বসে আছি রেলস্টেশনে মনে হচ্ছে... যদিও আমার ভাঙা ঘড়িতে বলছে মাত্র ছয় মিনিট হয়েছে....চুপিসারে আসতে গিয়ে এ অবস্থা এটার...এক জায়গায় বাড়ি খেয়ে ভেঙে গিয়েছে..... প্রচন্ড ভয় লাগছে, বৃষ্টির কারণে মানুষজনও নেই... খালি মনে হচ্ছে এদিকটায় নেই... এদিকে আলো কম তাই বসে আছি... কারণ আলো থাকলেই আমার চেহারা বোঝা যাবে আর আমাকে চিনে ফেলবে সে...
নিজেরই অবাক লাগছে কিভাবে সবাই কে খুন করলো সে? আর কেই বা সে? অন্য কোন গ্রুপ? হওয়ার সম্ভাবনা আছে... কিন্তুু বাসায় এসে কিভাবে খুন করে? না এ অন্য কেউ, আর আমি মরতে চাই না... চুরি ডাকাতি করে ওদের সাথে অনেক কষ্টে বেঁচে ছিলাম... ওরা ঠিকমতো ভাগ ও দিতো না আমাকে, আর করলাম ও এইসব চারমাস ধরে... টাকা কত গুরুত্বপূর্ণ বেঁচে থাকার জন্য এটা আমি কারো থেকে কম বুঝি না... টাকা জীবন বাঁচাতে পারে আবার জীবন কেড়ে নিতে পারে... আসলেই কি আজব একটা জিনিস....
খুব ভয় করছে... ভারীবর্ষণ হচ্ছে এখন..ইস কেউ যদি থাকতো এই ভয়ের সময়ে... কেউ যদি একটু সময় পাশে বসে থাকতো... আকাশে অনেক বজ্রপাত হচ্ছে... কিছুক্ষণ পর পর তীব্র আলোতে অনেক দুর পর্যন্ত পরিষ্কার হয়ে যাচ্ছে...বিদ্যুতের আলোতে দেখা যাচ্ছে একটা লোক মাথা নিচু করে রেললাইনের উপর দিয়ে হেটে আসছে... যাক কেউ অন্তত সময় দিতে পারবে ..বড্ড একা লাগছিলো... কাছে চলে আসছে সে প্রায়... অপেক্ষা করছি কখন সে এখনে এসে বসবে... ঢাকার রেলস্টেশনগুলো ভালো আছে বসার জায়গা, ছাউনি আর ফ্যান লাইট কোনটারই কম নেই... আচ্ছা অন্য সব এলাকায় ও কি এরকম? জানি না... ঢাকার বাহিরে কখনো যাইনি... কি একটা জীবন আমার,বন্দী জানোয়ারের মত...
লোকটি ষ্টেশনে উঠলো,রেললাইন ছেড়ে... উঠে উল্টোদিকে হাটতে শুরু করলো... কিছুটা আশাহত হয়ে তাকিয়ে আছি তার দিকে, এভাবে চলে যাবে? না যায়নি সে,কিছুটা দূরে গিয়ে মাথার পানি ঝাড়ছে সে আর ব্যাগ খুলে কি যেন করছে... খুব গুরুত্বপূর্ণ কিছু যেন করছে সে,আর এমনভাবে কাজটা করছে আমি দেখতেও পাচ্ছি না... তার কান্ডকারখানায় কিছুটা অবাক হয়ে অপেক্ষা করছি এখন ট্রেনের জন্য.. যেই ট্রেনটি আগে পাবো সেটায় উঠে যাবো... আগে কমলাপুর যাবো,এরপর যেদিকে দুচোখ যায়... আর জীবনেও আসবো না এখানে,বেঁচে থাকার অনেক ইচ্ছে আমার...
চোঁখের কোনায় থেকে অনুভব করছি কেউ দ্রুত পায়ে এগিয়ে আসছে এদিকে... তাকালাম সেদিকে...হুম ওই লোকটাই আসছে হয়তো কাউন্টারে যাবে... রাস্তা দিয়ে আসলেই পারতো..কেন যে রেললাইনে হাটলো সে বৃষ্টির মধ্যে.... কাউন্টারের দিকে না গিয়ে লোকটা এদিকে আসতে শুরু করলো... হয়তোবা এখানে বসবে... অধীর আগ্রহে অপেক্ষা করছি তার জন্য... আচ্ছা তার হাতে লম্বা ওটা কি? আজব লাগছে দেখতে জিনিসটা, আবার পরিচিত পরিচত মনে হচ্ছে..... কি হতে পারে ওটা? দ্রুত ভেবে যাচ্ছি... কেন যেন মনে হচ্ছে এটা জানা খুব দরকার তাই ভেবেই যাচ্ছি...
১৪.
ওসি মারুফ,সার্জেন্ট আরিফ আর কিছু পুলিশ রেলষ্টেশনে দাড়িয়ে আছে... সামনে নীরবের লাশটা পরে আছে... ওসি মারুফ তার মাথা চেপে ধরে আছে... প্রচন্ড মাথাব্যাথা হচ্ছে তার... কাউকে একটু বলা যেত মাথাব্যথার ওষুধ দিতে? সে অবস্থা ও নেই... এতো দ্রুতগতিতে হয়ে গেলো সব... পুলিশের লোক পিছে ফলো করে আসতে আসতে দশ মিনিট দেরি হয়েছে, এতেই এ অবস্থা!! কিভাবে সম্ভব? কিসের এত লিংক খুনির?
- আরিফ ভাই লাশের ব্যবস্থা করেন... আমার ভালো লাগছে না... আমি বাসায় গেলাম... এখানে আর কিছু করার নেই..
**********
ওসি মারুফ বাসায় এসে তার ল্যাপটপ নিয়ে বসে পড়লেই... কেসটার সাথে সম্পর্কিত ফাইল এ গেলেন... কয়েক টা ভিডিও রয়েছে সেখানে... যদিও শতবারের মত দেখা শেষ প্রতিটি ভিডিও তারপরও সে আবার চালু করলো ভিডিও গুলো... একটার পর একটা ভিডিও দেখাচ্ছে পর্দায়...
হঠাৎ ওসি মারুফ একটু চমকে উঠলো... শেষ ভিডিওটা আবার চালু করলো সে... এটা বাসায় যে ১৬ জন গিয়েছিলো তাদের ভিডিওচিত্র... হ্যাঁ ওসি মারুফ সঠিকই হিসাব করছে... এখানে আসলে ১৭ জড়িত রয়েছে... যে ক্যামেরাটা নষ্ট করছে সে না শেষ ব্যক্তি... আরো একজনকে দেখা যাচ্ছে সামান্য একটু মুখ দেখা যাচ্ছে তার.. ওসি মারুফ মনিটরে কাছে চলে আসলো চেহারাটা দেখার জন্য... হুম চেনা যাচ্ছে লোকটিকে .. দাগী আসামি, এর নাম জলিল শেখ... তাহলে এখনো খুনিকে ধরার সম্ভাবনা আছে...!!!
তারহুরো করে মারুফ আরিফ কে কল দিয়ে কিছু নির্দেশনা দিলো... দ্রুত ট্রাক করতে বললো সে আর যত তারাতারি সম্ভব তাকে জানতে বললো... আর ভরসা করতে পারছে না সে অন্যকারো উপরে... এবার নিজেই লক্ষ রাখবে জলিল শেখের উপর...
**************
বসা থেকে উঠতে গিয়ে পাশে রাখা ফাইলগুলো পড়ে গেলো... কিছুটা বিরক্ত হচ্ছি একাজে জন্য... কাজ বাড়লো আবার ভালো লাগে না... ফাইলের কাগজগুলো ঠিকমতো রাখছি এমন সময় একটা ছবিতে চোখ আটকে গেলো... এ ভিকটিম না... তবে কোথায় যেন দেখছি রিসেন্টলি... ছবিটি হাতে নিয়েই ভিডিও গুলো দেখছি... হঠাৎ করেই যেন একটা চেহারায় আটকে গেলো দৃষ্টি.. ভিডিওটাকে থামিয়ে ছবিটার সাথে মিলাচ্ছি... হুম এই তাহলে খুনি? মোটিভ পাওয়া যাচ্ছে... সব যুক্তি মিলে যাচ্ছে... চুল দাড়ি গুলো চেহারা পরিবর্তন করে দিয়েছে এই কারণেই চিনতে এতো দেরী হলো.... যাক খুনি চিন্হিত হয়েছে... এখন শুধু ফাঁদ দিয়ে ধরতে হবে হাতেনাতে.... মোবাইলটা হাতে নিলাম অনেক কাজ এখন হাতে... শেষবারের জন্য কিছু ইনফরমেশন যোগার করার দরকার... খুনির বিরুদ্ধে খুব কাজে দিবে... আর ফাঁদ পাতা নিয়েও কথা বলা লাগবে ....
১৫.
গত দেড় ঘন্টা ধরে বসে আছি সোফাতে... ময়লা এতো জমেছে যে সোফার আসল রং হারিয়ে গিয়েছে.. চারপাশে তাকালাম যদিও আর দেখার নতুন কিছু নেই... ফ্লোর কালো হয়ে গিয়েছে ময়লাতে... দেয়ালে ঝোলানো ঘড়িটা থেমে রয়েছে... স্তব্ধ হয়ে থাকা ঘড়িতে দেখাচ্ছে দুই সাতাশ বাজে... কে জানে এটা কোন দিনের দুইটা সাতাশ... খাটের উপর শুয়ে রয়েছে পায়ের উপর পা তুলে দাদা... আমার বড় ভাই হাবিবুর রহমান অর্নক... কিছুক্ষণ পর পর পা নাড়াচ্ছে আর হাতের জ্বলন্ত সিগারেট টানছে.... বুক সেলফের দিকে তাকালাম... একরাশি বই শোভা পাচ্ছে সেখানে... প্রচুর ধুলাবালি জমে রয়েছে সেখানে... বইগুলো তৃনা ভাবীর সখের ছিলো... প্রচুর পড়তো বই সে...হঠাৎ দাদা কথা বলে উঠলো...
- অনিক
- হু দাদা
- তোর ফ্লাইট কবে? কতদিন আছিস আর?
- এক সপ্তাহ আছি আর...
- হু... তারাতারি চলে যা... এদেশে থাকা এতদিন থাকা তোর উচিত হয়নি... এদেশে থাকা নিরাপদ না...
- তুমি যদি আমার সাথে আসতে রাজি হতে তাহলে তো আরো আগেই যেতে পারতাম...
- সম্ভব না রে.... সবকিছুর বদলা নিতে হবে যে...
- বদলা তো নেওয়া হয়েছে তোমার এখন চলো? তোমার ভিসা,পাসপোর্টর সব কাজ আমি করে রেখেছি... টিকিট ও কাটা শেষ... এখন তো যেতে পারি তো আমরা...
- কিসের শেষ? এখনো একজন বাকি আছে... জলিল শেখ, ওকে দোযখে পাঠানো লাগবে আগে...
- তারপর কি যাবে তুমি?
- জানি না... হয়তো এবার না সফল হতে পারি... ওকে ট্রাক করতে এখনো সমস্যা হচ্ছে... কোন খোঁজ নেই... একজন ইনফর্মার হয়তো ওর খোঁজ পেয়েছিলো কোনভাবে,কিন্তুু ওর আর খোঁজ নেই... হয়তো ওকে মেরে ফেলছে....
- দাদা অনেক হয়েছে এবার থামো... বললাম আমি...
কোন উত্তর দিলো না আর দাদা... চুপচাপ হয়ে গেলো সে.... বুক সেল্ফের দিকে গেলাম... বাম পাশের রাখা একটা বই তুলে নিলাম... অযত্নে অবহেলায় বইগুলোর অবস্থা করুন... দাদার দিকে তাকালাম আবার.. প্রশ্ন করলাম...
- ভাবী, মা আর দুলাভাইই,আপার কারো কোন খোঁজ পেয়েছো কি?
- না... খুনিগুলো খুব চালাক... একেকটা লাশ একেক জায়গায় ফেলেছে... পাইনি কারো লাশের সন্ধান এখনো... কম চেষ্টা করিনি কিন্তুু হলোনা কিছুই....
- ও.... ছোট করে উত্তর দিলাম আমি... অনেক আগে থেকেই জানি পাবোনা তাদের লাশটিও... অনেক বড় দেশটা...
দাদা পুলিশ সন্দেহ করছে .. আমাকে সবসময় নজর রাখছে তারা... আমার ধারনা শুধু তোমাকেই খুঁজে বের করতেই তারা আমাকে লক্ষ করছে....
তাকিয়ে রয়েছি দাদার দিকে... কোন চিন্তা নেই তার মুখে... পুলিশের কাজ নিয়ে সে যেন ভাবছে না....
- অনিক...
- হু দাদা
- একটা বিয়ে করে ফেলিস... সংসারি হ... একবার সব শেষ হয়েছে দেখে কি আবার শুরু করতে দোষ আছে? জীবনের এখনো সব বাকি তোর.... বাবা মা বেঁচে থাকলে তোকে এই কথাই বলতো....
- হবেনা আর দাদা.... আমি আর কাউকে আমার জীবনে গ্রহণ করতে পারবো না...
- তোর যা ইচ্ছে...তবে যদি আমার শেষ ইচ্ছে জানতে চাস তাহলে এটাই আমার ইচ্ছে শুনে রাখিস...
চুপচাপ তাকিয়ে আছি ফ্লোরের দিকে... উত্তর দেবার কিছু নেই.... আমার সব শেষ,নতুন কাউকে দরকার নেই আর জীবনে... শেষ আছে এই আমার ভাই... তবে সে কতদিন থাকবে এটি নিয়ে চিন্তিত... উঠে দাড়ালাম আমি.. বেশিক্ষণ থাকা উচিত হবেনা.... পুলিশের কথা ভাবা লাগবে.... দাদাকে বিদায় দিেয় বের হয়ে আসলাম আমি.... আজকে মনটা বিষন্নতার মাঝে ডুবে গিয়েছে... রাস্তায় ল্যাম্প পোষ্টের দিকে তাকালাম.... বিষন্ন এক হলুদ আভা যেন ছড়াচ্ছে সেখানে থেকে...
১৬.
কিছুটা চিন্তিত এখন... বর্তমানের অবস্থান শেষ টার্গেটের যে তার বাসার সামনে... যদিও তেমন কোন কারণ নেই এখানে আসার, কারণ ১৭ নং ব্যাক্তি জলিল শেখের কোন সন্ধান পাওয়া যাচ্ছে না... মনে হচ্ছে সে হয়তো পলাতক অথবা অলরেডি ডেড... তবে ডেড হওয়ার সম্ভাবনা কিছুটা কম মনে হচ্ছে কারণ দুইজন তার সন্ধান করতে গিয়ে নিখোঁজ... তাদের জন্য কিছুটা চিন্তিত বোধ করছি... নিখোঁজ হওয়া ইনফর্মার নিষাদের সাথে আমি গতকাল ও কথা বলছিলাম..ওকে বলছিলাম বাসায় গিয়ে দেখতে কোন নতুন তথ্য পাওয়া যায় কিনা জলিলের সম্পর্ক... হয়তো কিছু সে জানতে পারছিলো আর সেই তথ্য ধরে হয়তোবা সে জলিলের কাছে পৌছে গিয়েছিল... তারপরও হয়তো ওকে আটকিয়ে রেখেছে অথবা খুন করেছে তার অবস্থান গোপণ রাখার জন্য.. মনে মনে দোয়া করছি দ্বিতীয়টা যেন না ঘটে...
হাতের মোবাইলের দিকে তাকালাম... জলিলের বাসায় যাচ্ছি এটা কাউকে বলে রাখার দরকার... সার্জেন্ট আরিফ কে বলা যেতে পারে.... এখন প্রতি মূহুর্ত একজন আরেকজন কে জানানো দরকার... নিরাপত্তার অভাব অনুভব করছি.....
- হ্যালো আরিফ
- জ্বি মারুফ স্যার
- আমি জলিলের বাসায় যাচ্ছি... দেখি কিছু পাই কিনা
- আচ্ছা স্যার
- এক ঘন্টা পরে আবার যোগাযোগ করবো... যদি না করতে পারি তাহলে বুঝবে কোন সমস্যায় পরছি ... দ্রুত ফোর্স নিয়ে চলে আসবে....
মোবাইলটা পকেটে রেখে দিলাম... সিড়ি ধাপগুলো পার করে জলিল শেখের রুমের দরজার সামনে দাড়ালাম... দরজা লক করা,কিন্তুু এ দরজা চাবি দিয়ে বাহিরে থেকেও খোলা যায়.. পকেট হাতরিয়ে মাষ্টার কি বের করে নিলাম.. সহজেই দরজাটা খুলে গেলো,তবে এতো সহজে খুলবে আশাকরিনি.... তবে এখন আর এটা নিয়ে ভাবার সময় নেই... দ্রুত ঘরে ঢুকলাম... অন্ধকার রুম.. কিছুই বোঝা যাচ্ছে না.... হাতের লাইট টা এদিক ওদিক মারলাম রুমের লাইট জ্বালানোর সুইচ খুঁজতে... পেয়ে ও গেলাম তবে কপাল খারাপ কারেন্টের সংযোগ বিচ্ছিন্ন করা... সম্ভবত মেইন সুইচ বন্ধ করা...
তিনটা রুমের দরজা দেখা যাচ্ছে আমার হাতের টর্চলাইটের আলোতে... ডানে বায়ে তাকাতে গিয়ে ফ্লোরে কিছু একটা চোখে পরলো... কালো কালো দাগ দেখা যাচ্ছে... মনে হচ্ছে কিছু একটা কোন জাগয়া থেকে গড়িয়ে এখানে এসেছে... বুঝতে খুব অসুবিধা হচ্ছে না এটা রক্ত ব্যতীত কিছুনা... হ্যান্ডগান টা বের করে নিলাম... রক্তগুলো আসছে সোজা সামনের দরজা থেকে...
সতর্কতার সাথে দরজা খুলে ভিতরে লাইট মারলাম... লাইটের আলোতে বুঝতে কোন অসুবিধা হচ্ছে না যে তিনটা লোক ওখানে পরে আছে... সম্পূর্ণ রুম একবার দেখে সোজা ওখানে চলে গেলাম... যা ভেবেছি দুইজন আমার লোক.,তৃতীয় ব্যাক্তি অপরিচিত হয়তোবা এ হাবিবুর রহমানের ইনফর্মার... বোঝা যাচ্ছে এরা সবাই মৃত কারণ লাশের গন্ধ বাসায় আসার পর থেকেই টের পেয়েছি... তারপরও পালস্ টেক করলাম... সবাই মৃত... কিছুটা মন খারাপ লাগছে... অন্য রুমগুলোতে একবার দেখার দরকার দ্রুত...
হঠাৎ অনুভব করলাম পিছনে কেউ এসে দাড়িয়েছে... উফ!! বড্ড ভুল হয়ে গিয়েছে আগে রুমগুলোতে একবার দেখে নেওয়া উচিত ছিলো... ঘুরে তাকালাম,লাইট মারতেই অনুভব করলাম ডানদিকে কিছু একটা জোরালো ধাক্কা দিয়েছে... সোজা হয়ে আমার অস্ত্রটার দিকে হাত বাড়ানোর সময় আবার একটা ধাক্কা অনুভব করলাম বুকে.... চারদিকটা অন্ধকার হয়ে আসছে...
হয়তো মরে যাচ্ছি আমি.... তিথি কে কখনো বলা হলোনা কতটা ভালোবাসি তাকে, ওর মুখটা ভাসছে এখন... অনেক কষ্ট করে তাকালাম সামনের দিকে, জলিল শেখ দাড়িয়ে আছে.... হাতে একটা অস্ত্র দেখা যাচ্ছে... অস্ত্রে সাইলেন্সার ও লাগানো রয়েছে... বুঝতে অসুবিধা হচ্ছেনা এই তিনজনকে সে খুন করছে তার অবস্থান গোপণ করার জন্য... হয়তো আমিও একই কারনে মরতে যাচ্ছি.... ধীরে ধীরে চোখ বুজে আসছে.... নিকষ অন্ধকারে ডেকে যাচ্ছে সব....
১৭.
গত আটদিন ধরে ফ্লাটের মধ্যে আছি.... বহু আগেই সার্কিট ব্রেকার অফ করে রাখছি... অনেক সময় অন্ধকারে থাকার ফলে এখন খুব অসুবিধা হচ্ছেনা এখানে.... খাবার প্রতিদিন একজন দিয়ে যায়... দরজায় নির্দিষ্ট ভাবে দুইবার এরপর তিনবার ধাক্কা দেওয়ার পর দরজা খুলে দেই.... এটা আমার সতর্কতা... অন্য কেউ আসলে এমনিতে সহজে যেন বুঝতে পারি... সতর্ক হতে পারি যেন...
ওসি ঠান্ডা হয়ে পরে আছে ফ্লোরে... এখনো টিকে আছে সে, তবে যতটুকু মনে হচ্ছে বেশি সময় বাঁচবে না...বুলেট নষ্ট করলাম না,ধীরেসুস্থে মরুক ও....কষ্ট দিয়ে মারার মধ্যে আনন্দ আছে..... তার পাশে আরো তিনটা লাশ পরে আছে...আমার বুঝতে অসুবিধা হয়নি এদের দুইজন পুলিশের আরেকজন অজ্ঞাত খুনির লোক যে আমার সম্পূর্ণ টিম খুন করেছে...
কিছুটা আফসোস লাগছে মরা লোকগুলোর জন্য,জ্ঞানের ঘাটতি ছিলো ওদের পড়াশোনা করলে বুঝতো কিভাবে নিজের নিরাপত্তা দিতে হয়... সব কয়টা মূর্খ ছিলো, ফলে মরছে...তবে আমার ক্ষেত্রে এমন হবেনা বেশ ভালোভাবেই জানি... এতো সহজে পার পেতে দিচ্ছিনা তাকে.... এবার তাকে শেষ করবো আমি...জলিল শেখ এতো সহজ বান্দা নয়...এটা সে জানে না....
মুচকি হাসি দিয়ে ওসির কাছের মোবাইল,অস্ত্র আর যা যা ছিলো সব সরিয়ে নিলাম ...তবে মোবাইলটা পকেটে রেখে দিলাম.... আর গুলি নষ্ট করার দরকার নেই তার প্রতি কিছুক্ষণ পরে সে এমনিতেই মরবে... তবে অস্ত্র,মোবাইল সরিয়ে নিচ্ছি সতর্কতার জন্য... সতর্ক থাকা ভালো,সতর্কতার জন্য এখনো টিকে আছি আমি....এখন অপেক্ষা কখন আসবে ও.. ও শেষ না হওয়া পর্যন্ত অন্য কোথাও যাচ্ছি না আমি,আমার দলের লোক মারার জন্য শেষ করতে হবে... প্রতিশোধ না নিয়ে যাচ্ছিনা আমি... খাটে গিয়ে বসলাম... চারদিক একেবারেই ঠান্ডা,অপেক্ষায় আছি আমি...ক্লান্তিহীন এক অপেক্ষা....
১৮.
জলিল শেখের কোন খোঁজ এখনো পাচ্ছি না... চারদিন হয়ে গিয়েছে অথচ কেউ কিছু জানাতে পারছে না... এখন নিজেই যাবো জলিল শেখের বাসায়,মনে হচ্ছে ওখানে কোন তথ্য পাবো... তবে ওখানে যাওয়া নিরাপদ মনে হচ্ছে না... কিন্তুু আর অপেক্ষা করতে পারছিনা তাই আধা ঘন্টা আগে রওয়ানা দিয়েছি বাসা থেকে... সাবধানে গাড়ি চালিয়ে চলে আসলাম জলিল শেখের বাসার সামনে, রাত নয়টা বিশ বাজে.... জলিল শেখের বাসা তিনতলা,দুইতলার 2B নম্বর ফ্লাট টি তার.. তার সম্পর্কে খুব বেশি জানিনা তবে যেটুকু জানি তার মাধ্যমে বলা যায় প্রচন্ড সতর্ক লোক সে... তবে যতই সতর্ক থাকুক না কেন আমার হাতে মরতে তাকে হবেই... অনেক পাপ করেছে সে,তার ফল ভোগ করতে হবে তো...
ঝিরিঝিরি বৃষ্টি হচ্ছে,আকাশের দিকে তাকিয়ে কিছু বোঝা যাচ্ছে না একরাশি অন্ধকার ছাড়া... ভাগ্যটা নিয়ে আজ নিজের হাসি পাচ্ছে...ভালোই হতো যদি ওইদিন মরে যেতাম কিন্তুু মরলাম না,প্রতিশোধ নিতে পারি তার জন্য আল্লাহ যেন বাঁচিয়ে রাখলো আমাকে....
গুলি খাওয়ার পর সেখানেই অজ্ঞান হয়ে যাই... পরে যখন জ্ঞান ফিরে আসে তখন বুঝতে পারি একটা মাইক্রোবাসে রয়েছে.... ভালো করে কিছু বোঝার আগেই অনুভব করি শক্ত পিচের রাস্তায় ছুড়ে ফেলে দিয়ে মাইক্রোটা চলে গিয়েছে... উঠে বসে সাহায্য চাওয়ার বা চিৎকার করার মত কোন শক্তি ছিলোনা আমার... যখন মেনে নিয়েছি মারা যাচ্ছি এখানেই, তখন একটা গাড়ি এসে থামলো...
ভাগ্য ভালো নাকি খারাপ বলবো? যে রাতে পুরো পরিবার হারালাম সে রাতে সামান্যের জন্য বেঁচে গেলাম একজন অপরিচিত মানুষের জন্য... পনের দিন হাসপাতালে থেকে আসলাম যখন ফিরে তখন বুঝলাম বাকি কিছু নেই, সব শেষ হয়ে গিয়েছে... আর এইদেশের আইনও কিছু করতে পারবে না ওদের... তারপরও আশায় ছিলাম, কিন্তুু না... জামিন পেয়ে গেলো তারা...
বুঝতে অসুবিধা হলোনা আমি যদি সাক্ষী দেই তাহলেও কিছু আসবে যাবে না... পরিকল্পনা নিলাম প্রতিশোধ নিবো... টাকার অভাবে ছিলো না... টাকা খরচ করতে কার্পণ্য ও করিনি... দুইহাতে টাকা খরচ করছে শোধ নেওয়ার জন্য... হয়তো প্রতিশোধ নিয়ে নিচ্ছি কিন্তুু এরপর কি করবো? কি করার আছে আর?
না এখন এসব ভাবার সময় না... এম নাইন রাখা ব্যাগটা তুলে নিলাম... মানুষজনের উপস্থিতির দিকে কয়েকবার নজর দিয়ে নেমে পরলাম... রাস্তায় আর দাড়িয়ে সময় নষ্ট করার প্রয়োজন দেখছি না,তাই সোজা চলে আসলাম জলিল শেখের ফ্লাটে... দরজা লক করা... তবে এটা কোন সমস্যা না... এম নাইন টা বের করে বেশ কয়েকবার গুলি করার পর দরজা খুলতে সক্ষম হয়েছি... suppressor এর কারণ যদিও গুলির শব্দ হয়নি তবে লকটা নষ্ট করার শব্দ কম হয়নি... কেউ চলে আসতে পার তাই একটু তারাহুরো করেই ঢুকে গেলাম ফ্লাটে... অন্ধকার সব,লাইট জ্বালানো যাবে না, কারণ কেউ খেয়াল করতে পারে...ব্যাগ থেকে টর্চলাইট বের করে এদিকে ওদিকে মারলাম, সবগুলো দরজা বন্ধ...
ফ্লোরে লাইট মেরে কিছু কালো জাতীয় লেগে থাকতে দেখলাম... এগুলো সোজা যে দরজাটা রয়েছে সেখানে থেকে আসছে.. চলে গেলাম সে রুমে, তিনটা মানুষ শুয়ে আছে সেখানে আর একজন দেয়াল হেলান দিয়ে বসে আছে... বুঝতে তেমন অসুবিধা হচ্ছেনা মৃত এরা... দুইজন কে চিনতে পারছি এখানকার একজন আমার ইনফর্মার, আরেকজন যে দেয়ালে হেলান দিয়ে বসে আছে সে ওসি মারুফ...আমার খুনের কেস গুলো নিেয় বেশ ভালো তদন্ত করছে সে...
দ্রুতগতিতে মাথায় চিন্তা বইছে... তারা যেহেতু এখানে এঅবস্হায় আছে অতএব জলিল শেখ এখানেই রয়েছে দ্রুত একবার সম্পূর্ণ রুমে আলো ঘুরিয়ে আনলাম না এই রুমে নেই... তারাতারি এম নাইন টা ব্যাগ থেকে বের করে হাতটি নিয়ে ঘুরে দাড়ালাম... চর্টলাইটটা সোজা জলিলের মুখে গিয়ে পরেছে, হাতে একটা অস্ত্র শোভা পাচ্ছে সেখানে.. আমার দিকে তাক করা সেটা...
বুঝতে কোন অসুবিধা হচ্ছেনা যে আমি গুলি করার আগেই সে আমাকে গুলি করতে পারবে,তারপরও শেষ চেষ্টা করতে তাক করার চেষ্টা করলাম..না পারলাম না, আগেই প্রথম একটা ধাক্কা অনুভব করলাম বুকে...সাথে সাথেই আরেকটা তারপর আবার.... ফ্লোরে পরে গিয়েছি আমি,হাতের অস্ত্রটা শেষ বারের মত তাক করতে গিয়ে আবিষ্কার করলাম নেই সেটা হাতে....
চোখের কোনা দিকে তাকিয়ে দেখছি জলিল শেখ আমার পাশে এসে দাড়িয়েছে... হা হা করে উচ্চ স্বরে হাসছে সে, এবার সোজা তাকালাম তার দিকে কিছু একটা বলছে সে তবে শুনতে পাচ্ছি না কিছুই...জগৎটা যেন শব্দহীন হয়ে গিয়েছে.... তাক করলো সে তার হ্যান্ড গান আমার দিকে,ঠিক চোখের দিকে তাকিয়ে আছে অস্ত্রের নল টি... দেখতে পাচ্ছে তার আঙুলটি ট্রিগারের উপর প্রেশার দিচ্ছে ....
১৯.
প্রচন্ড হাসির শব্দের জ্ঞান ফিরে আসলো আমার... অনেক কষ্টে চোখ খুললাম,সামনে জলিল শেখ দাড়িয়ে আছে..হাতের অস্ত্রটা ফ্লোরে পরে থাকা একজন ব্যক্তির দিকে তাক করা ... ফ্লোরে পরে থাকা একটি টর্চলাইটে রুমটা অনেকটা আলোকিত আর সেই আলোতে বোঝা যাচ্ছে শুয়ে থাকা ব্যক্তিটি অর্নক... জলিল শেখ অযথা কথা বলছে আগের কথা নিয়ে...
তাকিয়ে আছি আমি জলিল শেখের দিকে ... একেকপর এক গুলি করলো সে অর্নকের মাথা লক্ষ করে... শান্ত হয়ে গেলো চিরদিনের জন্য অর্নক... হলো না তার প্রতিশোধ নেওয়া আর...
অস্ত্রের দিকে হাত দিতে গিয়ে খেয়াল হলো সেটা নেই... মোবাইল বা ওয়াকিটকি কোনটাই নেই সাথে... সব নিয়ে গিয়েছে জলিল শেখ... সে যদি একটু পর খেয়াল করে এখনো টিকে আছি আমি তাহলে আমাকে আবার গুলি করবে... কি করা যায় ভাবছি এমন সময় চোখে বাঁধলো ডান পাশে সামান্য দূরে একটি লম্বা নল লাগানো অস্ত্র... বুঝতে পারলাম এটা অর্নকের suppressor লাগানো এম নাইন... সিদ্ধান্ত নিতে দেরী করলাম না... ঝাপিয়ে পরলাম অস্ত্রটার উপরে সমস্ত শক্তি নিয়ে...
সারা শরীর অবশ হয়ে যাচ্ছে এই সামান্য পরিশ্রমের জন্য... তবে জলিল শেখ টের পেয়েছে ঘুরে তাকালো সে আমার দিকে তবে এখন সে দেরী করেছে... মাথা লক্ষ করে গুলি করে দিলাম সেফটি উঠিয়ে দিয়ে... নিখুঁত লক্ষে গুলিটা লাগলো, ধপ করে পরলো সে ফ্লোরের উপরে...
উত্তেজনার হাঁপাচ্ছি আমি...দুইটা গুলি আমার গায়ে বিদ্ধ হয়েছে একটি কাঁধে, আরেকটি হার্টের কাছাকাছি... তবে সেটা হার্টে লাগেনি বুঝতে পারছি...যদি লাগতো এই ত্রিশ মিনিট জীবিত থাকতাম না... জলিল বুঝতে পেরেছিলো আমার হার্টে লাগেনি তারপরও আবার গুলি করেনি আবার কারণ ও হয়তো চেয়েছিলো আমি রক্ত ক্ষরণে মারা যাই... এটা আরো যন্ত্রণা হবে আমার জন্য, একারনেই সে একাজ করছে... তবে সেটা ছিলো মস্ত বড় ভুল আর ভুলের কারণ তার জীবন দিয়ে মাশুল দেওয়া লাগলো...
কোনমতে উঠে দাড়ালাম দেয়াল ধরে... প্রচন্ড দূর্বলতায় শরীর কাঁপছে... অনেক রক্তক্ষরণ হয়েছে... কিভাবে জানি না... কোনমতে আমার মোবাইলটা বের করে নিলাম জলিলের পকেট থেকে,মোবাইলটা ওর পকেটে আশা করিনি তবে ভাগ্য বড্ড প্রসন্ন এখন... কোনমতে সার্জেন্ট আরিফকে কল দিলাম... অল্প কথায় কোনভাবে বোঝালাম পরিস্থিতি...
দেয়াল আবার হেলান দিয়ে বসে আছি এখন,অপেক্ষা করছি পুলিশের আসার জন্য... পাঁচ ছয় মিনিটের মধ্যে আসতে পারবে তারা বেশ ভালোভাবেই জানি... হয়তো বেঁচে যাচ্ছি এ যাত্রায়...
২০.
পরিশিষ্টঃ ওসি মারুফ বেঁচে যান তবে খুনি কে ধরা নিয়ে মিডিয়াতে খুব একটা তোলাপাড় হয়নি... বড় আজব মিডিয়া যখন তিনি চেষ্টা করছিলেন ধরার খুনিকে তখন বিশাল বদনাম,আর যখন ধরলেন কোন প্রতিক্রিয়া নেই...শুধু মিডিয়ার সাধারণ একটা প্রতিবেদনে প্রকাশ পেয়েছিলো নিউজটা " ১৭ খুনের পর পুলিশের গুলিতে মৃত হাবিবুর রহমান "
বর্তমানে তিনি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছেন... তার স্ত্রীকে সারাক্ষণই দেখা যায় তার পাশে রয়েছে.... বিছানাতে শুয়ে থাকা মারুফ সাহেব ভাবেন,হয়তো যতটুকু সম্মান পাওয়া তার উচিত ছিলো কেসটা সলভ করার জন্য ততটা হয়তো তিনি পাননি তবে কি হয়েছে তার স্ত্রীতো তার পাশে রয়েছে....এটাই বা কম কিসে?
( সমাপ্ত)
©somewhere in net ltd.