![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
আমি একজন স্টুডেন্ট তাই ভালো কিছু করতে চাই।
জনৈক খোন্দকার লুৎফর রহমানের সন্তান এই মতিউর রহমান নিজামী। তার জন্মস্খান হলো গ্রাম-মন্মথপুর সোনাতলা, পোঃ বেড়া, থানাঃ সাঁথিয়া, জেলাঃ পাবনা। তিনি ১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধে বাঙালি জাতির সর্বাধিক ভীতিকর ও শত্রু জামায়াতে ইসলামীর আমির, যিনি বর্তমানে যুদ্ধাপরাধের বিচারে জেলে আছেন। ১৯৭১ সালে আমাদের মুক্তিযুদ্ধ চলাকালে জামায়াতের এই নেতা বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধের বিরুদ্ধে তার যাবতীয় কর্মকাণ্ড অত্যন্ত উৎসাহ-উদ্যম ও নিষ্ঠার সঙ্গেই পরিচালনা করেন পাকিস্তানি শত্রু বাহিনীর সহায়তায়। মুক্তিযুদ্ধের সময় জামায়াতে ইসলামীর ছাত্র সংগঠন ইসলামী ছাত্র সংঘের, বর্তমানে যার নাম (ইসলামী ছাত্রশিবির, বাংলাদেশ) কেন্দ্রীয় কমিটির সভাপতি ছিলেন তিনি। তার প্রত্যক্ষ তত্ত্বাবধানে মুক্তিযুদ্ধকে প্রতিহত এবং মুক্তিযোদ্ধাদের নিমূর্ল করার জন্য আলবদর বাহিনী নামে এক ভয়াল সশস্ত্র বাহিনী গড়ে তোলেন। এই আলবদর বাহিনীর যিনি প্রধান ছিলেন তিনি আর কেউ নন নিজামী নামক মাওলানা সাহেবই। মাওলানা মতিউর রহমান নিজামীর বিরুদ্ধে প্রত্যক্ষ এবং পরোক্ষভাবে তার নিজ এলাকাবাসী হত্যা, লুটতরাজ, অগ্নিসংযোগ, ধর্ষণ, নির্যাতন ইত্যাদির অসংখ্য অভিযোগ রয়েছে যা আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইবুনালে প্রমাণিত। পাবনা জেলার বেড়া থানার বৃশালিখা গ্রামের আমিনুল ইসলাম ডাবলু তার পিতা মোহাম্মদ সোহরাব আলীকে নিজামীর নির্দেশে হত্যা করা হয়েছে। নিজামীর নির্দেশেই তাদের এলাকার প্রফুল্ল, পিতা নয়না প্রামাণিক, ভাদু, পিতা ক্ষিতীশ প্রামাণিক, মনু পিতা ফেলু প্রামাণিক এবং ষষ্ঠী প্রামাণিক, পিতা প্রফুল্ল প্রামাণিককে নির্মমভাবে গুলি করে হত্যা করা হয়েছে। ২৬ নভেম্বর জনৈক সাত্তার রাজাকারের সহযোগিতায় ধুলাউড়ি গ্রামে (পাবনা জেলায় সাঁথিয়া থানাধীন) পাকিস্তানি সৈন্যরা ৩০ জন মুক্তিযোদ্ধাকে এক রাতে হত্যা করে। মাওলানা মতিউর রহমান নিজামীর পরিকল্পনা ও নির্দেশ অনুযায়ী সাত্তার রাজাকার তার কার্যক্রম পরিচালনা করত। মাওলানা মতিউর রহমান নিজামী তার বক্তব্যে মুক্তিযুদ্ধকে প্রতিহত এবং মুক্তিযোদ্ধাদের সমূলে ধ্বংস করার নির্দেশ দেন। কোথায় কোথায় আওয়ামী লীগ ও মস্কোপন্থি ন্যাপ নেতাদের বাড়িঘর আছে, দোকান-পাট আছে তা চিহ্নিত করা হয়। মতিউর রহমান নিজামী মুক্তিযোদ্ধাদের ঘাঁটি ধ্বংস এবং আওয়ামী লীগ ও ন্যাশনাল আওয়ামী পার্টির নেতাদের শেষ করে ফেলার নির্দেশ জারি করেন এবং রাজাকার বাহিনীর সহযোগিতায় বৃশালিখা গ্রামটি পুরোপুরি অতর্কিত ভাবে ঘিরে ফেলা হয়, ব্যাপক গোলাগুলি চালানো হয়, নির্যাতন, লুটতরাজ এবং বাড়িঘরে অগ্নিসংযোগ প্রভৃতি ভয়াবহ এক ধ্বংসযজ্ঞ পরিচালনা করা হয়। মতিউর রহমান নিজামী তার নিজ গ্রামের বটেশ্বর সাহা নামক এক তরুণ মুক্তিযোদ্ধাকে বেয়নেট দিয়ে খুঁচিয়ে খুঁচিয়ে নির্মমভাবে হত্যা করে। সাঁথিয়া থানার মিরপুর গ্রামের মোহাম্মদ শাজাহান আলী, পিতা জামাল উদ্দিন যুদ্ধের সময় হঠাৎ রাজাকারদের হাতে ধরা পড়লে আরও কয়েকজন আটক মুক্তিযোদ্ধার সঙ্গে তার গলায়ও ছুরি চালানো হয়েছিল। একই সঙ্গে আটক অন্যদের জবাই করে হত্যা করতে সক্ষম হলেও শাজাহান আলী ঘটনাচক্রে বেঁচে যান। কিন্তু তার সহযোদ্ধা দারা, চাঁদ, মুসলেম উদ্দিন, আখতার উদ্দিন, শাজাহান প্রমুখদের বেয়নেট দিয়ে খুঁচিয়ে খুঁচিয়ে গরু জবাই করার লম্বা ও ধারালো ছুরির আঘাতে আঘাতে জবাই করে পৈশাচিকভাবে হত্যা করা হয়। সেদিন প্রায় ১০/১২ জন মুক্তিযোদ্ধাকে নিজামী নিজেই হত্যা করেছে। এই সমস্ত অপরাধ আদালতে সরকার পক্ষের আইনজীবীরা প্রমান করতে যথার্থ স্বাক্ষ্যাদি তুলে ধরতে সক্ষম হয়েছে, আশা করা যায় বিজ্ঞ আদালত এই খুনি দালাল আলবদর প্রধানের সর্বোচ্চ শাস্তি মৃতদণ্ড নিশ্চিত করবে। তাহলে ত্রিশ লক্ষ শহীদের আত্মা শান্তি পাবে। দেশ হবে কলংক মুক্ত। পাশাপাশি মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় আগামীর প্রজন্ম দেশকে এগিয়ে নিতে সাহস ও শক্তি পাবে।
©somewhere in net ltd.